বিবাহ বন্ধন পর্ব-৭+৮

0
873

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৭
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি আর সূর্য একসাথে বাড়িতে ফিরে আসে।সালমা আক্তার তাদেরকে ফিরে আসতে দেখে প্রশ্ন করে,
-“আরশি কি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে নি? কোথায় সে?”

বৃষ্টি সামান্য হেসে বলে,
-“আপনার কি তা জানা আদৌ জরুরি? যাকে এতবছর ধরে চেনেন তাকে ভুল বুঝতে তো এক মিনিটও সময় নেননি।সামান্য কয়েকটা ছবি দেখেই অবিশ্বাস করে নিলেন।আপনার ছেলের কথা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু আপনি কিভাবে এরকম একটা কাজ করলেন? এতকিছুর পরেও আরশি ভাবি এই বাড়িতে ফিরে আসবে আপনি এটাই মনে করেন?”

সালমা আক্তার বৃষ্টির এমন কথা শুনে রেগে যান।তিনি রাগী ভাষায় বলেন,
-“তুমি এই বাড়ির নতুন বউ।এত উঁচু গলায় কথা বলা তোমায় মানায় না।আরশিকে আমি এত ভালোবাসি জন্যই তার উপর এত রাগ হয়েছিল।কারণ আমরা যাদের ভালোবাসি বিশ্বাস করি তাদের থেকে পাওয়া সামান্য আঘাত আমাদের রাগিয়ে তোলে।”

-“তাহলে আপনি কি করে ভাবছেন আপনার ছেলের দেওয়া এত আঘাত সহ্য করার পরেও আরশি ভাবি আবার ফিরে আসবে? আরশি ভাবি এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে সে নির্দোষ কিন্তু সে এটাও জানিয়েছে এই বাড়িতে সে আর ফিরতে চায়না।আর না চায় আপনার গুণধর ছেলের সাথে সংসার করতে।”

সালমা আক্তার উৎকন্ঠা নিয়ে বলেন,
-“তার মানে আরশি সত্যিই নির্দোষ? অথচ আমি মেয়েটাকে ভুল বুঝে কত কথা শোনালাম।আমি এক্ষুনি যাব ওকে ফিরিয়ে আনতে।আমি জানি আমি গেলে ও ঠিকই ফিরে আসবে।”

তন্মধ্যে সোহেল বাড়িতে ফিরে আসে।সালমা আক্তার তাকে আসতে দেখে বলে,
-“তুই একা এলি কেন? আরশিকে নিয়ে আসতে পারিস নি?”

সোহেল তার মাকে রাগ দেখিয়ে বলে,
-“আমি অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আরশি ফিরে আসেনি।এখন তুমি কি চাও আমি ওর পা ধরে ওকে ফিরিয়ে আনি? সেটা হবে না।ও চলে গেছে যাক।ওরকম জেদি মেয়ের সাথে সংসার করার আমার দরকার নেই।পৃথিবীতে মেয়ের এত অভাব পড়েনি।আমি কালই ওকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেব।তখন ওর শিক্ষা হবে।”

সোহেলের কথা শুনে সালমা আক্তারের রাগ মাথায় উঠে যায়।তিনি সোহেলের গালে সপা*টে একটা চ*ড় মে*রে বলেন,
-“মুখ সামলে কথা বল।তোর ভাগ্য অনেক ভালো ছিল যে আরশির মতো একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েছিলি।কিন্তু ঐ যে কথায় আছেনা দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য কেউ দেয়না।তুই ডিভোর্স দিতে চাইছিস তো।দিয়ে দে ডিভোর্স।মেয়েটাকে এই কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দে।আসলে দোষ তো আমারই তোর মতো একটা লম্প*টের সাথে আরশির মতো একটা মেয়েকে বিয়ে দেওয়াই আমার ভুল ছিল।তুই আরশির যোগ্যই না।”

কথাটা বলে সালমা আক্তার হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যান।আলামিন ইসলাম এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন।এবার তিনি এগিয়ে এসে সোহেলকে উদ্দ্যশ্য করে বলেন,
-“তোমার ব্যাপারে অনেক কথাই আমার কানে এসেছিল।তুমি বিয়ের পরেও অনেক মেয়ের সাথে অবৈ*ধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিলে।এতদিন তোমার মা এবং আরশির জন্য আমি চুপ ছিলাম।কিন্তু আজ আর নয়।তুমি সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছ।আমি তোমার বাবা তোমায় আদেশ করছি এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও আর যতদিন না পর্যন্ত নিজেকে শোধরাতে পাচ্ছ ততদিন এই বাড়িতে আসার দুঃসাহস করবে না।”

-“আব্বু,,,”

-“আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা।”

পুরো ঘটনাটা দেখে সূর্য তাজ্জব বনে যায়।তার মনেও ভয় কাজ করতে থাকে।ভবিষ্যতে বৃষ্টিকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য তারও কি পরিণতি হবে? বৃষ্টি সূর্যকে কোন চিন্তায় এভাবে বিভোর থাকতে দেখে, সহজেই আন্দাজ করে নেয় সে কি ভাবছে।তাই সূর্যকে ভয় দেখানোর জন্য সে বলে,
-“আর কয়েকদিন পর আপনারো হয়তো এরকম পরিস্থিতিই হবে।”

সূর্য কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়।তবে তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ছিল।
__________________
আরশি এককাপড়ে তার বাপের বাড়িতে চলে যায়।আরশিকে দেখে তার বাবা আকরাম হোসেন বিরক্ত হন।ছোটবেলা থেকেই মেয়ের প্রতি তার অনীহা।তিনি মনে করেন মেয়ে সন্তানেরা সংসারের বোঝা ছাড়া কিছু নয়।তাইতো নিজের ছেলে আদনানকে আদরে মানুষ করলেও আরশিকে মানুষ করেছেন অবহেলায়।আরশির খুব ইচ্ছে ছিল অনেকদূর পড়াশোনা করার।কিন্তু ইন্টার পাশ করতেই তিনি আরশির বিয়ে দিয়ে দেন।

আরশি এসে তার বাবাকে সালাম দিলে আকরাম হোসেন খুবই বিরক্তির সাথে বলেন,
-“তুমি হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে চলে এলে কেন? আর এভাবে একা এসেছ কেন তোমার স্বামী কোথায়?”

আরশি জানে তার বাবা যদি সব জানতে পারে তাহলে তাকেই বলবে সোহেলের সাথে মানিয়ে চলতে।হয়তো জোরপূর্বক পাঠিয়ে দেবেন ঐ বাড়িতে।কিন্তু আরশি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে আর কখনো সোহেলের জীবনে ফিরে যাবেনা।তাই সে বলে,
-“আব্বু আসলে সোহেলের কিছু জরুরি কাজ থাকায় ও আসতে পারেনি।তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছিল তাই আমি এসেছি তোমাদের দেখতে।আম্মু,ভাইয়া ওরা কোথায়?”

আকরাম হোসেন তুমি গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলেন,
-“তোমার মা রান্না করছে আর আদনান গেছে একটা ইন্টারভিউ দিতে।”

আরশি চলে যায় রান্নাঘরে।আরশির মা সাহেরা তখন রান্নাবান্নায় ব্যস্ত ছিল।আরশিকে দেখে তিনি খুবই খুশি হন।আজ কত দিন পর নিজের মেয়েকে দেখে তাকে বুকে জড়িয়ে নেন।আরশি নিজের মায়ের বুকে মাথা রেখেই কেঁদে দেয়।আর কত অভিনয় করবে সে? তাই এবার মায়ের সামনেই নিজের সব দুঃখ মেলে ধরে।

সাহেরা মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখেই বুঝতে পারে তার মেয়ের সাথেও নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হয়েছে।মায়ের জন্য তার মেয়ের এই কান্না যে কতটা বেদনার সেটা শুধুমাত্র এক মাই উপলব্ধি করতে পারে।

সাহেরা বুকে প্রচণ্ড উৎকন্ঠা নিয়ে আরশিকে জিজ্ঞাসা করেন,
-“কি হয়েছে আরশি? তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?”

আরশি তার মাকে সব ঘটনা খুলে বলে।সব শুনে সাহেরা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।মেয়ের সাথে তিনিও কাঁদতে থাকেন।কত আশা করে নিজের বোনের ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলেন আর তারাই কিনা আরশিকে এত অবজ্ঞা এত অপমান করল।

দুঃখের পাশাপাশি নিজের স্বামীর ভয়েও তদস্থ হয়ে যান তিনি।কারণ সাহেরা খুব ভালো করেই জানে আরশির বাবা কখনো আরশির এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।এতকিছুর পরেও তিনি বলবেন আপোষ করে নিতে।সাহেরা বরাবরই চুপচাপ,শান্তশিষ্ট,স্বামীর মুখের উপর কিছু বলেন না।তাই হয়তো নিজের মেয়ের জন্যও কিছু করতে পারবেন না।কিন্তু চিনি আর চান না যে তার মেয়ে আবার সোহেলের কাছে ফিরে যাক।এখন তার একমাত্র ভাবনা কি করে সবকিছু সামলাবেন তিনি?
___________________
বৃষ্টি সালমা আক্তারের রুমে গিয়ে দেখে তিনি মুখে আঁচল চেপে কাঁদছেন।সালমা আক্তারকে এভাবে কাঁদতে দেখে বৃষ্টির খুবই খারাপ লাগে।সে সালমা আক্তারের পাশে গিয়ে বসে।

বৃষ্টি বলে,
-“এভাবে কাঁদবেন না।কাঁদলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যায়না।”

সালমা আক্তার এতক্ষণ একা ছিলেন তাই নিজের মনের দুঃখ প্রকাশ করতে পারেন নি।এখন বৃষ্টিকে পাশে পেয়ে যেন ভরসা পান তিনি।তাই নিজের মনের সব চাপা দুঃখ প্রকাশ করতে থাকেন।

-“জানো বৃষ্টি আমার ভাগ্য সবসময় আমাকে ঠকিয়েছে।অনেক ছোটবেলায় নিজের মাকে হারিয়েছি তারপর আমরা দুই বোন কত কষ্ট করে সৎ মায়ের কর অত্যা*চার সহ্য করে বড় হয়েছি।আমাদের দুই বোনের সম্পর্ক কত ভালো ছিল সবসময়।আমরা ছোটবেলা থেকে আনন্দ,দুঃখ সবকিছু ভাগ করে বড় হয়েছি।সাহেরা আমার ছোট বোন আমার কত আদরের।তাইতো ওর মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করে এনেছিলাম।আমার বোনটাকে কথা দিয়েছিলাম যে আরশিকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখব কিন্তু আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।আজ সাহেরা আমায় ফোন করে কত কথা বলল।ও তো এটা বলতেও দ্বিধা করল না যে আমি একটা খারাপ মা নিজের সন্তানকে শিক্ষা দিতে পারিনি।আমার এরজন্য ওর উপর কোন রাগ নেই।নিজের তিন ছেলে-মেয়েকে আমি হয়তো সত্যি ঠিকভাবে মানুষ করতে পারিনি।”

সালমার কথাটা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়।সে তো জানে সূর্যরা দুই ভাই।তাহলে কি সূর্যর আরো একটা বোন আছে? তাহলে এখনো সে তাকে দেখল না কেন কোথায় সে? নিজের কৌতুহলকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বৃষ্টি সালমাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আপনার কি আরো একটা মেয়ে আছে? কোথায় সে?”

মেয়ের কথা শুনতেই সালমা আক্তারের বুক ভারী হয়ে আসে।যে যন্ত্রণা এতদিন বুকে চেপে রেখেছেন তা নিমেষেই মেলে ধরেন তিনি বৃষ্টির সামনে,
-“হ্যাঁ আমার একটা মেয়েও আছে।
আমার ছোট মেয়ে স্বর্ণা।যে আজ বেঁচে থেকেও আমাদের কাছে মৃত।”
(চলবে)

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৮
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সালমা আক্তারের কথাটা শুনে ভীষণ অবাক হয়।সালমা আক্তারও বুঝতে পারেন আবেগের বশে একটা ভুল কথা বলে ফেলেছেন তিনি।বৃষ্টি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি এমন হয়েছিল যে আপনার মেয়ে স্বর্ণা আজ আপনাদের এতটা পর হয়ে গেছে?”

সালমা আক্তার কিছু বলার আগেই আলামিন ইসলাম সেখানে চলে আসেন।যার কারণে সালমা আক্তার কিছু বলতে পারেন না।আলামিন ইসলাম বৃষ্টিকে বলেন,
-“তুমি এখন নিজের রুমে যাও বৃষ্টি।অনেক রাত হয়েছে তোমার ঘুমানো প্রয়োজন।”

বৃষ্টি চুপচাপ নিজের রুমের দিকে চলে যায়।আলামিন ইসলাম সালমা আক্তারকে সতর্ক করে বলেন,
-“এরপর থেকে ভেবেচিন্তে কথা বলবে।আমি চাইনা ভয়ঙ্কর অতীত আবার সামনে আসুক।”

বৃষ্টি আনমনে শোফায় বসে সালমা আক্তারের কথাই ভাবছিল।এরমধ্যে সূর্য রুমে চলে আসে।সূর্যকে দেখে বৃষ্টি জিজ্ঞাসা করে,
-“আপনার নাকি একটা বোনও আছে।আপনার বোন স্বর্ণার ব্যাপারে আমি জানতে চাই।”

-“এত কৌতুহলী হওয়া ভালো না।এই বাড়িতে স্বর্ণাও নাম নেওয়াও মানা।আশা করি আপনি আর কখনো আমাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।”

বৃষ্টি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।তার মনে হয় এখন চুপ থাকাটাই শ্রেয়।তবে বৃষ্টি ঠিক করে নিয়েছে যে করেই হোক সে স্বর্ণার সম্পর্কে সব খোঁজখবর নিয়েই ছাড়বে।
______________________
সকাল সকাল আকরাম হোসেনের চিৎকারে আরশি ড্রইং রুমে চলে আসে।আরশিকে দেখে আকরাম হোসেনের সব রাগ গিয়ে পড়ে আরশির উপর।আরশির গালে সজোরে একটা চ*ড় বসিয়ে তিনি বলেন,
-“কি এটা? ডিভোর্স পেপারস! আমি কাল তোমায় হঠাৎ করে আসতে দেখেই সন্দেহ করেছিলাম নিশ্চয়ই কোন সমস্যা করে এসেছ।আমার ভাবনাই তাহলে সত্য হলো।তোমার সাহস কি করে হলো কাউকে কিছু না জানিয়ে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেওয়ার।”

আরশি কিছুই বলতে পারেনা।আরশিকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আকরাম হোসেন আরো রেগে যান।

-“চুপ করে আছ কেন উত্তর দাও।তোমার স্বামী তোমায় ডিভোর্স পেপারস কেন পাঠিয়েছে? কি করেছ তুমি?”

-“সবসময় সবকিছুর জন্য মেয়েদেরকে দোষী ভাবা ঠিক নয়।আরশি কোন কিছুই করেনি।সব সোহেলের দোষ।সে বিবাহিত হয়ে পর’কিয়ায় লিপ্ত ছিল।”

আরশির বড় ভাই আদনানের কথা শুনে আকরাম হোসেন বলেন,
-“তুমি কখন এলে?”

-“আমি এক্ষুনি এসেছি।না এসে কোন উপায় ছিল না আব্বু।কাল রাতে আম্মু ফোনে আমায় সবকিছু বলেছে যে আরশির সাথে কি কি হয়েছে।এসব শুনে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি তাই চলে এলাম।”

আকরাম হোসেন গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন,
-“এসব ব্যাপারে তোমার জড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই।আমি সবকিছু সামলে নিতে পারব।পুরুষ মানুষদের এরকম সামান্য কিছু দো’ষ থাকতেই পারে তারজন্য ডিভোর্স কোন সমাধান নয়।আরশির উচিৎ ছিল সোহেলের মন জুগিয়ে চলা।আরশিরও এখানে খামতি আছে কোন নারী ভালো হলে তার স্বামী কখনো অন্য নারীর দিকে চোখ দেয়না।”

নিজের বাবার কথা শুনে আরশির চোখে জল চলে আসে।বাবারা যেখানে সন্তানের ভরসাস্থল সেখানে নিজের বাবার মুখের এমন কথা আরশির ব্যথিত হৃদয়কে আরো ভেঙে দিচ্ছে।আদনান তার বাবার কথায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলে,
-“তুমি এমন কথা কিভাবে বলতে পারলে আব্বু? আরশি তো তোমার নিজের মেয়ে।”

-“নিজের মেয়ে জন্যই বলছি।ডিভোর্সি মেয়েদের সমাজে কিরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।দো*ষ যারই হোক মানুষ তো আরশিকেই কথা শোনাবে।আমাদেরকেও ওর জন্য অনেক কথা শুনতে হবে।আমাদের তো সমাজের সাথে মানিয়ে চলতে হয়।”

-“সমাজের জন্য নিজের মেয়েকে তুমি আবার ঐ কা*পুরুষের সাথে সংসার করতে বলবে।”

আকরাম হোসেন এবার আদনানের উপরেও রেগে যান।তিনি বলেন,
-“আমার মুখের উপর আর একটাও কথা বলবে না।আমি এখনই সোহেলকে ফোন করছি ও এসে নিয়ে যাক আরশিকে।আমি কোন ডিভোর্সি মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারব না।”

-“আপনাকে কারো দায়িত্ব নিতে হবে না আমার মেয়ের দায়িত্ব আমি নেব।”

নিজের স্ত্রীর মুখে এরকম কথা শুনে আকরাম হোসেন ভীষণই অবাক হন।এত বছরের বিবাহিত জীবনে সাহেরা তার মুখের উপর কোন কথা বলেনি আর আজ কিনা সেই এত বড় কথাটা কত অনায়াসেই বলে ফেলল।কথাটা তার ঠিক হজম হয়না।তিনি তা*চ্ছিল্যের স্বরে বলেন,
-“তুমি কিভাবে দায়িত্ব নেবে? কি ক্ষমতা আছে তোমার?”

-“একজন মা তার সন্তানের খুশির জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে।এটাই একজন মায়ের ক্ষমতা।”

কারো হাত তালির আওয়াজে সবাই চমকে যায়।আরশি দরজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
-“বৃষ্টি তুমি!”

বৃষ্টি বলে,
-“হ্যাঁ আমি।তোমার খোঁজ নিতে শাশুমার সাথে তোমার বাড়িতে এলাম।নাহলে তো এতকিছু জানতেই পারতাম না।একদম ঠিক সময়ে এসেছি।”

সালমা আক্তার সাহেরার হাত ধরে কেঁদেই ফেলে,
-“ক্ষমা করিস আমায় সাহেরা।আমি তোর মেয়েকে সুখী রাখতে পারিনি।”

আকরাম হোসেন সালমা আক্তারকে বলেন,
-“ভালো হয়েছে আপনারা এসেছেন।আপনাদের বাড়ির বউকে ফিরিয়ে নিয়ে যান।আমি চাইনা আমার মেয়ের গায়ে ডিভোর্সি মেয়ের তকমা লাগুক এতে আমার সম্মানহানি হবে।”

আরশি এতক্ষণে মুখ খোলে,
-“আমি আর ঐ বাড়িতে ফিরে যাবোনা।সোহেলের সাথে সংসার করার কোন ইচ্ছে এমনিতেও আমার ছিলনা।এখন ও যখন ডিভোর্স পেপারস পাঠিয়েছে তখন তো এই সম্পর্কের শেষটা নিশ্চিত হয়েই গেছে।আমি এখন শান্তিতে বাকিটা জীবন কা*টাতে চাই।আমার আর কারো প্রয়োজন নেই।”

বৃষ্টি বলে,
-“তুমি একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ আরশি ভাবি।তোমায় কারো কথা ভাবতে হবে না তুমি শুধু নিজের কথা ভাবো।”

-“আমি বুঝতে পেরেছি তোর ছোট জাই তোর মাথায় এসব কুবুদ্ধি দিয়েছে।নাহলে এতদিন তো কোন সমস্যা ছিলনা আজ হঠাৎ এই মেয়ের আসার পর তুই কেন ডিভোর্স দিতে চাইছিস।শোন আরশি অন্যের কথায় নিজের জীবনটা নষ্ট করবি না।”

আকরাম হোসেনের কথাটা শুনে আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“আরশি আমার জীবন নষ্ট করেনি বরং আমায় জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক পথ দেখিয়েছে।আর আমিও এখন এই পথে চলব।”

বৃষ্টি আরশিকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-“তুমি চলো আমার বাবার বাড়িতে।এই বাড়িতে তোমায় এত অপমান সহ্য করে থাকতে হবে না।আমি আমার বাবাকে চিনি তিনি তোমাকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবে।”

আরশি বৃষ্টির দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায়।বৃষ্টির কথায় আকরাম হোসেন ক্ষে*পে গিয়ে বলেন,
-“আমার মেয়েকে তুমি এভাবে নিয়ে যেতে পারো না।”

বৃষ্টি হেসে বলে,
-“যেই বাবা নিজের মেয়ের দুঃসময়ে ভরসা হতে পারে না সে বাবা হওয়ার যোগ্য না।জন্ম দিলেই যে বাবা হওয়া যায়না সেটা আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”

বৃষ্টি আরশিকে বলে তার সাথে যেতে।আরশি তার মা-ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে বৃষ্টি আর সালমা আক্তারের সাথে চলে আসে।

বৃষ্টি আরশিকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে যায়।বৃষ্টি তার বাবা বরকত হোসেনকে বলে,
-“আমি চলে যাওয়ায় তুমি খুব আফসোস করছিলে না।এই নাও তোমাকে আরেকটা মেয়ে এনে দিলাম।আরশি ভাবির যাওয়ার আর কোন যায়গা নেই।তুমি মেয়েটাকে একটু আশ্রয় দিতে পারবে।”

বরকত হোসেন মেয়ের এমন কথায় হেসে ফেলেন।তিনি বলেন,
-“কি যে বলিস না তুই।আমি কেন পারবোনা? আরশিকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবে।ও যতদিন থাকতে চায় এখানে থাকুক।”

আরশি বৃষ্টিকে বলে,
-“তুমি আমার জন্য যা করলে তাতে ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করতে চাইনা।আমি আজীবন তোমার উপর কৃতজ্ঞ থাকব।”

-“এসব কি বলছ তুমি? আমরা কিন্তু এখন থেকে বন্ধু।বন্ধুরাই তো বন্ধুদের সাহায্য করবে।আর একটা কথা মনে রেখো তোমাকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।তুমি আবার ভার্সিটিতে পড়া শুরু করে দাও।তোমাকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।”
____________________
আরশিকে নিজের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বৃষ্টি সালমা আক্তারকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল।রাস্তায় জ্যামে তাদের গাড়ি আটকে যায়।ড্রাইভার বলে,
-“সামনে কারা যেন মা*রামারি করছে।”

বৃষ্টি গাড়ি থেকে নামে।একজন মেয়ে একা কয়েকজন গু*ণ্ডার সাথে মা*রামারি করছিল।আর তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলছিল,
-“আর নিবি সাধারণ মানুষের থেকে চাঁদা? তোদের চাঁদাবাজির কারণে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।তোদের সবাইকে আজ আমি এমন শিক্ষা দেব যে ভবিষ্যতে আর এমন কিছু করবি না।”

বৃষ্টি তো পুরো অবাক হয়ে যায় একটা মেয়েকে এভাবে এতগুলো ছেলের সাথে মা*রামারি করতে দেখে।সালমা আক্তারও গাড়ি থেকে নেমে এসে বলেন,
-“বৌমা এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন কি হয়েছে?”

-“সামনে দেখুন শাশুমা একটা মেয়ে কতগুলো ছেলের সাথে লড়ছে।”

সালমা আক্তারের চোখ যায় মেয়েটার দিকে।তাকে দেখেই সালমা আক্তারের চোখে জল চলে আসে।তিনি বলে ওঠেন,
-“স্বর্ণা….”
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে