বিবাহ বন্ধন পর্ব-৩+৪

0
1025

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৩
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সূর্যর পিছন পিছন তার রুমে চলে যায়।সূর্য বৃষ্টিকে আসতে দেখে বলে,
-“আপনার কি একটুও লজ্জা নেই? সবার সামনে কিসব বলছিলেন?”

বৃষ্টি গুটি গুটি পায়ে সূর্যর কাছে চলে যায়।সূর্যর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।বৃষ্টি সূর্যর এইরকম অবস্থা দেখে হেসেই ফেলে।বৃষ্টি মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,
-“আমার মুখ বন্দু*কের গু*লির থেকেও বেশি ভয়ানক।যখন আমার মুখ থেকে কথা বের হয় সেটা আশেপাশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।তাই ভালো হবে আপনি আমাকে দিয়ে যত কম কথা বলাবেন।”

সূর্যর উত্তরের কোন অপেক্ষা না করে বৃষ্টি চলে যায় নিজের মতো।সূর্য একপলক বৃষ্টির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এই মেয়েটাকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারবো আমার জন্য সেটা ততই ভালো।”
____________________
বৃষ্টি নিজের রুমে বসে তার বান্ধবী চিত্রার সাথে কথা বলছিল।একটা মানুষ তার পরিবারের কাছে যেই বিষয়টা বলতে পারে না বন্ধুদের কাছে খুব সহজেই সেটা প্রকাশ করে ফেলে।বৃষ্টিও ব্যতিক্রম নয়।চিত্রাকে বৃষ্টি তার আর সূর্যর ব্যাপারে সব কথাই বলে।

সব শুনে বৃষ্টি মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-“কি হবে তাহলে এবার? তোর বর অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে।তাহলে তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।”

চিত্রার কথা শুনে বৃষ্টি হেসেই দেয়।চিত্রা বৃষ্টিকে অকারণে এভাবে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
-“আমি কিন্তু সিরিয়াস।তুই এভাবে হাসছিল কেন?”

-“আরে ধুর আমি ঐ হাবাগোবা সূর্যকে নিয়ে কিছু ভাবছি না।আমি তো ডিভোর্স নিয়েই ভাবছি।ডিভোর্স নিয়েই বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে আমার।”

-“কিন্তু তাও আমার মনে একটা কথা শুধু বারবার উঁকি দিচ্ছে।”

-“কি কথা?”

-“আচ্ছা ঐ প্রিয়া মেয়েটা এমন কি সুন্দর যে তোর মতো একটা সুন্দরী বউ থাকতেও সূর্য তাকে নিয়ে পড়ে আছে।”

-“সত্যিই তো।আমি তো ব্যাপারটা ভেবে দেখিনি।স্কুল,কলেজ,ভার্সিটিতে আমি সব ছেলেদের ক্রাশ ছিলাম।সেখানে এই ছেলে আমাকে বউ হিসেবে পেয়েও নিজের প্রেমিকার কথা ভাবছে।তাহলে ওর প্রেমিকা কি আমার থেকেও সুন্দর? আমার তো দেখতেই হচ্ছে এই প্রিয়াকে।”

-“আমিও আছি তোর সাথে।আমরা দুজনে মিলে প্রিয়ার সাথে দেখা করবো চল।”

-“আচ্ছা দাড়া আগে আমি ঐ প্রিয়ার ঠিকানাটা জোগাড় করি।”
_______________
বৃষ্টি আর চিত্রা অনেকক্ষণ ধরে একটি রেস্টুরেন্টে এসে বসে আছে।বৃষ্টি বসে বসে নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করছে কিভাবে বাবার সাথে কথা বলার ছলে সূর্যর ফোনটা নিয়ে প্রিয়ার নাম্বার যোগাযোগ করে নিল সে।তারপর প্রিয়াকে ফোন করে তার সাথে দেখা করতে চাইল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সামনে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ায়।মেয়েটির পরনে সালোয়ার কামিজ, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা, দেখতে খুব একটা সুন্দরী বলা যায়না তবে উচ্চতায় সে বৃষ্টির থেকে কিছুটা লম্বা।মেয়েটি তাদের টেবিলের সামনে এসে বলে,
-“তোমাদের মধ্যে কারো নাম কি বৃষ্টি?”

বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলে,
-“হ্যাঁ আমার নাম বৃষ্টি।”

মেয়েটি বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে,
-“আমি প্রিয়া।সূর্যর গার্লফ্রেন্ড।”

-“ও তুমি সেই প্রিইইইইয়া।এসো আমার পাশে বসো।”

-“কি চাও তুমি? আমাকে নিশ্চয়ই টাকা দিতে চাও।তারপর টাকা দিয়ে বলবে তোমার স্বামীর জীবন থেকে যেন দূরে সরে যাই।শোন আমি কিন্তু,,,,”

-“আরে দাড়াও দাড়াও।আমি কোন দুঃখে তোমাকে টাকা দেব? পারলে তুমি আমায় টাকা দাও তোমার বয়ফ্রেন্ডকে তোমার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।২০ লাখ টাকা দিলেই আমি চলে যাব।”

বৃষ্টির কথাটা শুনে প্রিয়া বিষম খায়।সে তো ভেবে রেখেছিল বৃষ্টির কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যাবে।সূর্যর চেয়ে আরো কত ভালো ছেলে পেয়ে যাবে।অন্তত একটা বিয়ে করা সেকেন্ড হ্যান্ড ছেলের সাথে সে সংসার করতে চায়না।আর এই মেয়ে তো তার কাছেই টাকা চাইছে।

চিত্রা বৃষ্টির কানে ফিসফিস করে বলে,
-“এই মেয়েটাকে তো কোন দিক থেকেই তোর থেকে বেশি সুন্দরী মনে হচ্ছেনা।সূর্য কি দেখে ওকে পছন্দ করল?”

-“দাড়া আমি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখি।”

বৃষ্টি উঠে গিয়ে প্রিয়াকে বলে,
-“এই মেয়ে দেখি তোমার নাকটা কেমন।”

প্রিয়া বৃষ্টির কথা শুনে থতমত খেয়ে বলে,
-“কি বলসো এসব?”

-“আরে বইন তোমার নাক,চোখ,মুখ,কান সব দেখব।তোমার কানে তো ময়লা,নাকটাও বোচা,চোখও তো গরুর মতো বড়সড়।মুখটা হাসের মতো চ্যাপ্টা।সূর্য কি দেখে তোমায় পছন্দ করল?”

বৃষ্টির মুখে এসব কথা শুনে প্রিয়া অপমানিত বোধ করে।বৃষ্টির মুখে পানি ছুড়ে বলে,
-“এই মেয়ে তোমার এত সাহস আমায় ডেকে এনে অপমান করো।”

বৃষ্টিও এটা ভালোভাবে নেয়না।সেও প্রিয়ার মুখে এক জগ পানি ছোড়ে।প্রিয়া রাগে গজগজ করতে করতেই এগিয়ে আসে।দুজন একে অপরের চুল ধরে টানাটানি করতে থাকে।রেস্টুরেন্টের সব লোকেরা দাড়িয়ে থেকে তাদের এইসব কাণ্ড দেখতে থাকে।কয়েকজন তো ভিডিও করতেও শুরু করে।বৃষ্টি আর প্রিয়ার সেদিকে কোন হুশ নেই তারা ঝগড়া মা*রামারি চালিয়ে যায়।প্রিয়া বলে,
-“এই মেয়ে তুই কি নিজেকে বিশ্বসুন্দরী ভাবছিস।ধলা বিলাই একটা।”

বৃষ্টিও বলে,
-“তুই কি? তোকে তো দেখে ফ*কিন্নি মনে হয়।”

চিত্রা এগিয়ে এসে তাদের ঝগড়া থামানোর বৃথা চেষ্টা করে।বৃষ্টি চিত্রাকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলে,
-“এই মেয়ে আমার সৌন্দর্যর দিকে আঙুল তুলেছে।একে আমি ছাড়ব না।”

রেস্টুরেন্টের মালিক এসে তাদের দুজনকে বের হয়ে যেতে বলে।বৃষ্টি আর প্রিয়া বাইরে এসেও ঝগড়া চালিয়ে যায়।

চিত্রা বাধ্য হয়ে বৃষ্টিকে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায় সেখান থেকে।বৃষ্টিকে নিয়ে সূর্যদের বাড়িতে যায় চিত্রা।

সালমা আক্তার বৃষ্টির দিকে একনজর তাকিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলেন,
-“তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো বৌমা? চুলগুলো কেমন উসকোখুসকো,শাড়িটাও এলোমেলো,হাতে আ*চড়ের দাগ।এই অবস্থা কি করে হলো?”

বৃষ্টি জানে যা ঘটনা ঘটলো তাতে প্রিয়া নিশ্চয়ই সূর্যকে সব জানাবে।তখন সূর্য যাতে তাকে কিছু বলতে না পারে তাই আগেভাগেই বলে,
-“আমার বান্ধবীদের সাথে ঝামেলা।আপনার ছেলেকে ডাকলাম সাহায্যের জন্য সে তো গেলোই না।”

সালমা আক্তার রাগ দেখিয়ে বলেন,
-“সূর্যর এই গা-ছাড়া ভাব আমার একদম ভালো লাগে না।এখন বিয়ে হয়ে গেছে কোথায় নিজের স্ত্রীকে বাঁচাতে যাবে তা না ঘরে বসে আছে।আমি দেখছি দাড়াও।আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।”

সালমা আক্তার সূর্যর ঘরের দিকে ছুটে যান।

সূর্য তখন প্রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলছিল।প্রিয়া ন্যাকাকান্না করে বলছিল,
-“তোমার বউ আজ আমায় রেস্টুরেন্টে সবার সামনে মে*রেছে।আমায় কত অপমান করল।বলল তোমার জীবন থেকে সরে যেতে।তুমি কিছু বলবে না?”

-“কি বললে? আমি দেখছি দাড়াও।আমি আগেই বুঝতে পারছিলাম সব বৃষ্টির অভিনয়।আসলে ও আমার সাথে সংসার করতে চায়।”

সালম আক্তার সূর্যর ঘরে এসে বলে,
-“ছি সূর্য ছি! তোর বউকে তার বান্ধবীরা মে*রে বাজে অবস্থা করে দিচ্ছে আর তুই অভিনয় বলছিস।তোর বাবা এসব শুনলে কি হবে ভেবে দেখেছিস? চল এক্ষুনি নিচে চল তোর বউকে সামলা।”

সূর্য বুঝতে পারে বৃষ্টি আবার তার চাল চেলেছে।সূর্য বিড়বিড় করে বলে,
-“এই মেয়েটা তো দেখছি খুব ভালো অভিনেত্রী।একে তো অস্কার দেওয়া উচিত।”

বৃষ্টি নিচে চিত্রাকে বলছিল,
-“জানিস চিত্রা আমি তো ভাবছি বিদেশে গিয়ে হলিউড মুভিতে কাজ করব।যা ভালো অভিনয় করি না।”

চিত্রাও তাল মিলিয়ে বলে,
-“সত্যি বৃষ্টি আজ তুই পুরো ফা*টিয়ে দিয়েছিস।”

সূর্য নিচে এসে বলে,
-“তার মানে সব আপনার নাটক? আপনি আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে চান।তাহলে এত নাটক করছিলেন কেন?”

বৃষ্টি মুখ বাকিয়ে বলে,
-“আপনার সাথে সংসার করতে আমার বয়েই গেছে।কিন্তু সংসার না করলেও আপনাকে জ্ব*লাতে আমার কিন্তু ভালোই লাগে।”
(চলবে)

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৪
#লেখক_দিগন্ত
নতুন একটি দিন শুরু হয়।বৃষ্টি আজ বেশ সকাল সকালই ঘুম থেকে ওঠে।তারপর সুন্দরভাবে সেজে চলে যায় রান্নাঘরে।

বৃষ্টিকে এভাবে সেজে রান্নাঘরে আসতে দেখে আরশি ঠাট্টা করে বলে,
-“তুমি রান্নাঘরে এরকম সেজে এসেছ কেন? তোমাকে নতুন বউ কম নায়িকা বেশি মনে হচ্ছে।যতই সাজো সেই তো রান্নাঘরের আগুনে পু’ড়তেই হবে।”

বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে,
-“তুমিও তো সাজতে পারো ভাবী।সাজলে তোমাকেও সুন্দর লাগবে।”

বৃষ্টির এমন কথায় আরশি আর কিছু বলতে পারেনা।কোথায় ভেবেছিল মেয়েটাকে জ’ব্দ করবে তা না এই মেয়েই তাকে কথার জালে ফাসিয়ে দিল।

বৃষ্টি আর কথা না বলে আরশির হাতে হাতে সাহায্য করে দিতে থাকে।
__________________
মর্জিনা বেগমের সাথে ফোনে কথা বলছিল বৃষ্টি।মর্জিনা বেগম বৃষ্টিকে বলে,
-“আজ তুই তোর স্বামীকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসবি।”

বৃষ্টি আমতা আমতা করে বলে,
-“ওনার তো অনেক কাজ থাকতে পারে দাদি।আমি এখন কিভাবে ওনাকে যাওয়ার কথা বলব?”

-“আমি কোন কথা শুনতে চাই না।তোর বাবাকে বাজার করতে পাঠিয়ে দিয়েছি।তোর খালা আজ এসেছে।তোর বিয়েতে তো আসতে পারেনি, হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেল।বলেছে নিজের হাতে তোদের রান্না করে খাওয়াবে।তোর খালা তোকে কত ভালোবাসে।তার এই আবদার তুই পূরণ করবি না?”

খালার কথাটা শুনেই বৃষ্টির কেমন লাগতে শুরু করে।মায়ের মৃত্যুর পর খালার কাছ থেকেই তো মায়ের ভালোবাসা পেয়েছিল।এতদিন পর খালা এসেছে তাও আবার এমন আবদার নিয়ে।বৃষ্টি তাই আর না করতে পারে না।সে মর্জিনা বেগমকে বলে,
-“আচ্ছা দাদি।আমরা যাব।

সূর্য অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বাইরে যাচ্ছিল।বৃষ্টির কথা শুনে সূর্য তাকে বলে,
-“কোথায় যাওয়ার কথা বলছেন?”

বৃষ্টি তৎক্ষনাৎ ফোনটা কে*টে দিয়ে বলে,
-“দাদি আজ আমাকে আর আপনাকে আমাদেরও বাড়িতে যেতে বলেছে।আমার খালা এসেছে।”

সূর্য অজুহাত দেখিয়ে বলে,
-“আমার অনেক কাজ আছে।আমি যেতে পারব না।তাছাড়া আপনার বাড়িতে যাওয়ার কোন ইচ্ছেও আমার নেই।”

-“আমার কি খুব ইচ্ছে আছে নাকি আপনাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার? আমার আব্বুর এত কষ্ট করে উপার্জিত টাকা আপনাকে খাইয়ে ধ্বং*স করানোর।শুধুমাত্র খালার জন্যই রাজি হয়েছি।আমি আপনার কোন কথা শুনব না।আপনাকে যেতেই হবে।”

-“আমি যেতে পারব না।”

-“আপনাকে আমি নিয়ে যাবোই।এটা আমার চ্যালেঞ্জ।”
__________________
সূর্য বিকেলে অফিস থেকে ফিরে আসে।বৃষ্টি আবার সূর্যর সামনে এসে বলে,
-“আপনি কি যাবেন না?”

-“না।”

-“আচ্ছা বেশ।যাওয়ার দরকার নেই।এই নিন কফি খান।আরশি ভাবি অনেক সুন্দর কফি বানায় খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।”

সূর্য বৃষ্টির হাত থেকে কফি নিয়ে খেতে শুরু করে।বৃষ্টি সূর্যকে কফি খেতে দেখে মুচকি হাসে।মনে মনে বলে,
-“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কিভাবে বা*কাতে হয় সেটা আমার খুব ভালোভাবেই জানা আছে।আপনি যখন সোজা রাস্তায় যাবেন না তখন এভাবে বাকা রাস্তাতেই তো আপনাকে নিয়ে যেতে হবে।”

কফিটা খাওয়ার পর থেকে সূর্য দূর্বল অনুভব করতে থাকে।হঠাৎ করে তার খুব ঘুম পায়।সূর্যর ব্যাপারটা কেমন জানি লাগে।যেখানে কফি খেয়ে ঘুম উড়ে যাওয়ার কথা সেখানে কফি খেয়ে সূর্যর ঘুম পাচ্ছে! খুব বেশিক্ষণ জাগ্রত থাকতে পারে না সূর্য।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের জগতে প্রবেশ করে।

বৃষ্টি সূর্যকে ঘুমাতে দেখে বলে,
-“আমি সিদরাতুল মুনতাহা বৃষ্টি।আমি যা বলি তা করেই দেখাই।চলুন এখন নিজের সাময়িক শ্বশুরবাড়িতে।আপনিই বোধহয় ইতিহাসে প্রথম জামাই যে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বশুরবাড়ি যাবে।হি হি হি।”

বৃষ্টি সূর্যকে নিয়ে বাইরে চলে যায়।ভাগ্য ভালো তার শাশুড়ী আর আরশি এখন বাড়িতে নেই।নাহলে সূর্যকে এভাবে নিয়ে যেতে দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করত।বৃষ্টি সূর্যকে গাড়িতে তুলে নিজেও উঠে বসে।তারপর ড্রাইভারকে বলে ড্রাইভ করতে।

ঘন্টাখানেকের ব্যবধানে তারা পৌঁছে যায় বৃষ্টির বাবার বাড়িতে।বৃষ্টি সূর্যর মুখে কয়েক ফোটা পানি ছিটিয়ে বলে,
-“এই যে মিস্টার সূর্য উঠে পড়ুন আমরা চলে এসেছি।”

সূর্যর ঘুম ভেঙে যায়।আড়চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনি কফিতে কিছু মিশিয়েছিলেন নিশ্চয়ই? আর কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে?”

-“আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি।উঠুন এবার ভেতরে চলুন।”

-“কাজটা কিন্তু ঠিক করলেন না।আমি যাব না।”

-“আমি সবসময় ঠিক কাজই করি।আর কি বললেন যাবেন না? আপনি যদি না আসেন আমি কিন্তু তাহলে আপনার বাবাকে এক্ষুনি ফোন করে আপনার আর প্রিয়ার ব্যাপারে সব বলে দেব।”

-“সবসময় এত ব্ল্যাকমেইল করেন কেন?”

-“আপনি যদি বাধ্য ছেলের মতো আমার সব কথা শুনতেন তাহলে তো আমায় এমন করতে হতো না।যাইহোক এই নিন ধরুন এটা মিষ্টির প্যাকেট।প্রথমবার খালি হাতে তো যাওয়া যায়না।আপনার সম্মান নাই থাকতে পারে আমার আছে।আর শুনে রাখুন আমার পরিবারের কেউ যাতে আমাদের ব্যাপারে কিছু না জানে।আমরা এমনভাবে অভিনয় করব যেন আমাদের সুখী দম্পতি ভাবে।”

-“এসব অভিনয় করে কি হবে? একদিন তো সবাই সব সত্যটা জেনেই যাবে, যে আমরা কেউই এই সম্পর্কে খুশি নেই।আমরা সাময়িকভাবে বিবাহবন্ধ আবদ্ধ হয়েছি ঠিকই কিন্তু এই সম্পর্কটা তো চিরস্থায়ী নয়।”

-“আপনাকে সেসব ভাবতে হবে না।পরের ব্যাপারে পরে ভাবা যাবে।”

বৃষ্টি আর সূর্য একসাথে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।তাদের আসতে দেখে বরকত হোসেন খুবই আনন্দিত হন।তিনি এগিয়ে এসে বলেন,
-“তোমরা এসে গেছ।এসো ভেতরে এসো।”

মর্জিনা বেগম আর বৃষ্টির খালা লুবনা খাতুনও চলে আসে।বৃষ্টি তার খালাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।লুবনা খাতুন অভিমান করে বলেন,
-“ছোটবেলায় তো খুব খালা খালা করতি আর বড় হতেই খালাকে পর করে দিলি? তুই বিয়ে করে নিলি আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?”

বরকত হোসেন বলেন,
-“সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে কিছু বলার সময় বা সুযোগ কোনটাই পাইনি।আমরা তো আর জানতাম না তুমি এত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসবে।”

লুবনা খাতুন সূর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এই বুঝি তোর জামাই বৃষ্টি।”

বৃষ্টি হ্যাঁ বলে।লুবনা খাতুন তখন এগিয়ে এসে বলেন,
-“বাহ তোর জামাই তো বেশ হ্যান্ডসাম।তোমার নাম কি?”

-“সূর্য।”

-“খুব সুন্দর নাম।বৃষ্টির সাথে খুব ভালো মানিয়েছে।দোয়া করি তোমাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক।”

কথাটা শুনে সূর্য একবার আড়চোখে বৃষ্টির দিকে তাকায়।বৃষ্টির কোন ভাবান্তর নেই।সে তার দাদির সাথে গল্পে মজে আছে।
__________________
রাত ৮ টায় সবাই ডিনারের টেবিলে বসে পড়ে।সূর্য তেমন কিছু খাচ্ছিল না।লুবনা খাতুন সূর্যকে এভাবে কম খেতে দেখে বলে,
-“লজ্জা পাচ্ছো কেন সূর্য? তুমি এই বাড়ির নতুন জামাই।আজ যদি আপা বেঁচে থাকত তাহলে কত খুশি হতো।আপা অনেক সুন্দর রান্না করতে পারত জানো।আপার রান্না একবার যে খেত সেই মুগ্ধ হয়ে যেত।আমি তো বেশি ভালো রান্না করতে পারি না।তাই হয়তো তুমি তৃপ্তি করে খেতে পাচ্ছনা।”

সূর্য বলে,
-“না রান্না খুব সুন্দর হয়েছে।আমি তো বেশি খেতে পারিনা তাই….”

সূর্য কথা বলায় ব্যস্ত ছিল তখনই বৃষ্টি সূর্যর প্লেটে বেশি করে পোলায়,গোস্ত আর মাছ তুলে দিয়ে বলে,
-“রান্না খুব ভালো হয়েছে খালা।সূর্য একটু লাজুক তো।সূর্য খেয়ে নাও লজ্জা পেওনা।”

কথাটা যেন একটু হুম*কির সুরেই বলে বৃষ্টি।সূর্য ভয়ে ভয়ে সবটা খেয়ে নেয়।

বেশি খাওয়ার কারণে সূর্য ভালোভাবে নড়তেও পারছিল না।বৃষ্টি রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে সূর্য।বৃষ্টি ভিতরে এসে ভ্রু কুচকে বলে,
-“এভাবে শুয়ে আছেন কেন? আমি কোথায় থাকব?”

সূর্য কোন উত্তর দেয়না।বৃষ্টি তখন সূর্যকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সূর্যর ফোন বেজে ওঠে।প্রিয়ার ফোনকল।সূর্য ফোনটা রিসিভ করতেই প্রিয়া বলে,
-“তুমি কোথায় সূর্য? আমার তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে।প্লিজ তুমি চলে এসো।”

-“এত রাতে? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? ভুলে যেওনা আমি এখন বিবাহিত।”

প্রিয়া ন্যাকাকান্না করে বলে,
-“এখন নিজের বউকে পেয়ে আমায় ভুলে গেলে সূর্য? আমার যে তোমার খুব প্রয়োজন।”

সূর্য ফোনটা কে*টে যায়।ফোনটা স্পিকারে থাকায় বৃষ্টি সব শুনতে পেয়েছে।তাই সে সূর্যকে বলে,
-“কেমন বয়ফ্রেন্ড আপনি? আপনার গার্লফ্রেন্ডের সমস্যা হয়েছে আর আপনি বসে আছেন।”

-“তাহলে কি আমার এখন যাওয়া উচিৎ?”

-“হ্যাঁ অবশ্যই যাওয়া উচিৎ।চলুন আমি আপনাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।”

বৃষ্টির কথা শুনে সূর্যর অবাকের সীমা ছাড়িয়ে যায়।অন্য কোন মেয়ে হলে বোধহয় নিজের স্বামীকে এত রাতে কিছুতেই প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যেতে দিতনা।আর সেখানে বৃষ্টি নিযে তাকে যেতে বলছে।

সূর্য বৃষ্টির সাথে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি কিভাবে আপনাকে যেতে দিচ্ছি।আসলে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই আপনার উপর।আমি তো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় আছি।”

বৃষ্টির কথাটা শুনে সূর্যর কেন জানি খুব একটা ভালো লাগেনা।বৃষ্টি তাদের মেইন ডোর খুলতে যাবে তখনই পেছন থেকে কেউ বলে ওঠে,
-“এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে