বিবাহ বন্ধন পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
1317

#বিবাহ_বন্ধন
#অন্তিম_পর্ব
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টিরা আমেরিকা থেকে ফিরে আসে। আজ চিত্রা আদনানের বিয়ে।এই উপলক্ষ্যে সাজ সাজ রব।

স্বর্ণা এবং রাজও সিলেট থেকে ফিরে এসেছে।চিত্রা বৃষ্টিকে দেখে মুখ বাকিয়ে বলে,
-“এতদিনে তোর আসার সময় হলো? কাল আমার গায়ে হলুদ হলো৷অথচ তুই এলি না।যা তোর সাথে কথা নেই।”

বৃষ্টি বলে,
-“বেশ করেছি।তুই তো আমার বিয়েতে আসিস নি পর্যন্ত।আমি তো তবু আজ আসলাম।যাইহোক আজ আর এসব নিয়ে কথা বলব না।আজকের দিনটা ভালো করে মজা করব।আমার বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা।”

চিত্রার কাছ থেকে বৃষ্টি জানতে পারে আরশিকে তার বাবা আবার নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়েছে।নিজের কাজের জন্য তিনি অনুতপ্ত।এখন আরশি নিজের ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে অনেক আনন্দে আছে।

বৃষ্টির খুব ভালো লাগে কথাটা শুনে।সময় অতিবাহিত হতে থাকে।চিত্রাকে বউ সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

বৃষ্টি এসে বলে,
-“তোর বর এসে গেছে।”

চিত্রা খুবই আনন্দিত হয়।কিছুক্ষণের মধ্যে চিত্রাকে নিয়ে আসা হয় আদনানের পাশে।আদনানের সাথে চিত্রার বিয়ে সম্পন্ন হয়।তারাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
~~~~~~~~~~
সোহেল আরশিদের বাড়িতে এসে বসে আসে।সে এখন চায় আরশিকে আবার নিজের কাছে ফিরে পেতে।

আরশির বাবা আকরাম সোহেলকে সোজাসুজি বলে দেয়,
-“আমার মেয়েকে তুমি অনেক কষ্ট দিয়েছ।প্রথমে যদিওবা আমি চেয়েছিলাম আমার মেয়ে আবার তোমার কাছে ফিরে যাক কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি যারা ভালোবাসার মূল্য দিতে পারে না তাদের কাছে থাকার কোন মানে নেই।”

-“আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি।আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি।”

-“শুনেছি তুমি আরেকটা বিয়ে করেছিলে সেই মেয়েটার কি হবে?”

-“ঐটা কোন বিয়ে ছিলনা।আমি শুধু বৃষ্টির উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রিয়াকে বিয়ে করেছিলাম।আমি প্রয়োজনে আবার ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেব তবুও আমি আরশিকে ফেরত চাই।”

হঠাৎ আরশি সেখানে চলে আসে এবং সোহেলকে বলে,
-“বাহ সোহেল বাহ।তুমি কি মেয়েদের জীবনকে ছেলেখেলা মনে করেছ? যখন ইচ্ছে বিয়ে করবে আবার যখন ইচ্ছে ডিভোর্স দিয়ে দেবে! হাস্যকর।আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল তোমাকে বিয়ে করা।তোমার মতো ছেলে যারা বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্কের অপমান করে তাদের বিয়ে করাই উচিৎ নয়।বিবাহ বন্ধন একটি পবিত্র বন্ধন।কিন্তু এটা টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব শুধু একজনের নয়,দুজনকেই সমান চেষ্টা করতে হয়।আর আমাদের সম্পর্কটা তো শুধু আমার ধৈর্যের জন্য টিকে ছিল, তুমি তো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করোনি।আর এখন ডিভোর্স হওয়ার পর সবকিছু শেষ হওয়ার পর এসেছ আমাকে ফিরিয়ে নিতে।তোমায় ভালোয় ভালোয় বলছি চলে যাও এই বাড়ি থেকে।”

আরশি নিজের রুমে চলে যায়।আকরাম সোহেলকে বলে,
-“আমার মেয়ে যা চায় তাই হবে।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার মেয়েকে আবার বিয়ে দেব।আমার বন্ধুর একটা ছেলে আছে যে সবকিছু জেনেও আরশিকে বিয়ে করতে চায়।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার সাথেই আরশির বিয়ে দেব।তাহলে আমার মেয়েটা সুখী হবে।কারণ সঠিক মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেই কেবল মানুষ সুখী হতে পারে।”

সোহেল বুঝতে পারে তাদের বোঝানোর কোন উপায় নেই।তাই নিরাশ হয়ে সে ফিরে আসে।দাঁত থাকলে দাঁতের মূল্য না দিলে এরকমই হয়।
~~~~~~~
দেখতে দেখতে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে।প্রকৃতিতে এখন নেমে এসেছে বর্ষাকাল।বৃষ্টির মন আজকাল খুব ভালো থাকে।বৃষ্টি যে তার খুবই প্রিয়।সময় পেলেই ছাঁদে চলে যায় বৃষ্টিতে ভেজার উদ্দ্যেশ্যে।যদিওবা এর কারণে অনেকবার সূর্যর বকাও শুনতে হয়েছে।কিন্তু বৃষ্টি তো বৃষ্টিই।সে যেটা ভালো মনে করে সেটাই করে।যার ফলস্বরূপ মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আজ সকাল থেকেই বৃষ্টির শরীরটা ঠিক লাগছে না।কয়েকবার বমি করেছে,মাথাটাও ব্যাথা করছে।বৃষ্টি ভয় পাচ্ছে তার কোন অসুখ করে নি তো।

বৃষ্টি চলে যায় সালমা আক্তারের কাছে।তাকে গিয়ে নিজের পরিস্থিতির কথা জানায়।সব শুনে সালমা আক্তার বলেন,
-“ভয় পাচ্ছো কেন পাগলী? আমার তো মনে হয় খুশির খবর আসছে।”

-“খুশির খবর মানে?”

-“তুমি মা হতে চলেছ।”

কথাটা শুনে বৃষ্টি খুশি হবে না অবাক বুঝতে পারছে না।সন্দেহ দূর করার জন্য প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে পরীক্ষা করে নেয় বৃষ্টি।যার ফলাফল আসে…
~~~~~~~
রাতে সূর্য যখন ফিরে আসে তখন দেখে বৃষ্টি মনমরা হয়ে বসে আসে।বৃষ্টিকে এভাবে বসে দেখতে সূর্য বলে,
-“কি হয়েছে বৃষ্টি?”

বৃষ্টি বলে,
-“আজ সকাল থেকে আমার বমি বমি ভাব আর মাথাব্যাথা ছিল।মাকে সব বলার পর তিনি বললেন আমি হয়তো প্রেগন্যান্ট।প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম কিন্তু…..”

-“কোন ব্যাপার না বৃষ্টি।খুব শীঘ্রই তোমার মা হওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

সূর্যর কথা শুনে বৃষ্টি খিলখিল করে হাসতে থাকে।বৃষ্টিকে এভাবে হাসতে দেখে সূর্য ভ্রু কুচকায়।

-“আরে বুদ্ধু তুমি বাবা হতে চলেছ।আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য একটু একটিং করলাম।”

বৃষ্টির কথাটা শুনে সূর্য দ্বিগুণ খুশি হয়ে লাফিয়ে ওঠে।বৃষ্টিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
-“আজ আমি খুব হ্যাপি বৃষ্টি।আমি বাবা হতে চলেছি।তুমি মা হতে চলেছ।এর থেকে খুশির খবর আর হয়না।”

-“কি করছেন নামান আমাকে।বাবু ব্যাথা পাবে তো।”

সূর্য তড়িঘড়ি করে বৃষ্টিকে নামায়।এরপর তাকে খুব যত্ন করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।তারপর বৃষ্টির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
-“তুমি আজ আমাকে যে খুশির খবর দিয়েছ সেটা আমি বলে বোঝাতে পারব না।তুমি আরাম করো।খুব সুন্দরভাবে আমাদের সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে এসো।”

বৃষ্টি ও সূর্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে তাদের সন্তানের জন্য।
~~~~~~~~
দেখতে দেখতে নয়মাস পেরিয়ে গেছে।বৃষ্টি এখন হাসপাতালে ভর্তি।ভিতরে তার সিজার চলছে।সূর্য পায়চারি করে চলেছে কোন খুশির খবর শোনার জন্য।সালমা আক্তার,স্বর্ণা,রাজ ওরাও এসেছে।স্বর্ণা নিজেও এখন চার মাসের প্রেগন্যান্ট।

কিছুক্ষণ পর একজন ডাক্তার এসে বলে,
-“কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার ইসলাম।আপনার মেয়ে হয়েছে।”

মেয়ে হওয়ার খুশিতে সূর্য খুবই আনন্দিত হয়।কারণ মেয়েরা তো বাবার বেশি আদরের হয়।প্রতিদিনই তো বৃষ্টির সাথে তার এই নিয়ে তর্ক হতো।বৃষ্টি বলতো ছেলে হবে আর সূর্য বলতো মেয়ে।শেষ অব্দি সূর্যর ইচ্ছাই পূরণ হলো।

একজন নার্স এসে সূর্যর মেয়েকে তার কোলে তুলে দেয়।সূর্য তার ছোট্ট রাজকন্যাকে কোলে তুলে বলে,
-“আমার মেয়ে সৃষ্টি।”

স্বর্ণা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“সৃষ্টি মানে কি ভাইয়া?”

-“আরে আমি আর বৃষ্টি মিলে তো জন্মের আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম আমাদের সন্তানের নাম আমাদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখব।সূর্য+বৃষ্টি=সৃষ্টি।”

-“ও এইবার বুঝলাম।”

সবাই সূর্যর মেয়েকে খুশি হয়।খুব সুন্দর ফুটফুটে একটি মেয়ে হয়েছে।দেখতে একেবারে বৃষ্টির মতোই।চোখগুলো হয়েছে সূর্যর মতো।

বৃষ্টি তার মেয়েকে দেখে খুব খুশি হয়।সূর্য বৃষ্টিকে বলে,
-“দেখলে তো আমাদের মেয়েই হয়েছে।”

-“হুম।আল্লাহ যা চান তাই হয়।আমাদের মেয়েকে যেন ভালোভাবে মানুষ করতে পারি এটাই এখন চাই।”

সূর্য হাসে।তাদের মেয়েকে দেখার জন্য চিত্রা,আদনান,আরশি এবং তার স্বামীও আসে।কয়েকমাস আগেই আরশি তার বাবার বন্ধুর ছেলেকে বিয়ে করেছে।

এইবারে ভালো মানুষকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে আরশি।তার স্বামী তাকে অনেক ভালোবাসে এবং শ্বশুরবাড়ির সবাইও খুব ভালো।

আরশি সৃষ্টিকে কোলে নিয়ে বলে,
-“মেয়েটা একেবারে বৃষ্টির মতোই দেখতে হয়েছে।আশা করি বিড় হয়ে বৃষ্টির মতোই প্রতিবাদী,পরোপকারী আর ভালো মনের মানুষ হবে।”

বৃষ্টি হেসে বলে,
-“আমি চাই আমার মেয়ে আমার থেকেও ভালো মানুষ হোক।সাথে সূর্যর মতোও সহজ সরলও যেন হয়।”

সূর্য বৃষ্টির দিকে তাকায়।দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে।

সূর্য আর বৃষ্টির এই পথচলা ছিল অন্যান্য দম্পতিদের থেকে আলাদা।বাসর রাতে খুব হাস্যকর ঘটনার মাধ্যমে তাদের জীবন শুরু হয়।তারপর অনেক সময় পর তাদের মাঝে বন্ধন হয়।বিবাহ হলেই কেউ বন্ধনে জড়ায় না।বিয়ের পর ধীরে ধীরে বন্ধন গিড়ে তুলতে হয়।এভাবে বিবাহবন্ধনে জড়িয়ে সুখের জীবন অতিবাহিত করে সূর্য এবং বৃষ্টি।
~~~~সমাপ্ত~~~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে