#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_২১(ধামাকাদার পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি স্বর্ণাকে অনেক বোঝায় রাজের ব্যাপারটা নিয়ে।কিন্তু স্বর্ণা কিছু বুঝতেই চায়না তার একটাই কথা সে রাজকে বিয়ে করবেনা।একসময় বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে বলে,
-“আমি খুব ভালো করেই জানি কোন অসুখ হলে কোন ওষুধ দিতে হয়।তোমাকে এতক্ষণ অনেক বোঝালাম কিন্তু তুমি তো দেখছি নাছোড়বান্দা।ভাঙবে তবু ম*চ*কাবে না।এবার তাই আমাকে দাবার গুটির সেরা চালটাই চালতে হবে।”
বৃষ্টির এরকম কথা স্বর্ণা বুঝতে পারে না।বৃষ্টি স্বর্ণাকে চোখ পাকিয়ে বলে,
-“দেখো কে এসেছে।ইনিই এখন তোমায় সাইজ করতে পারবে।”
কথাটা বলে বৃষ্টি দৌড়ে পালিয়ে যায়।স্বর্ণা ভীষণ অবাক হয় বৃষ্টির এমন ব্যবহারে।বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর কেউ স্বর্ণার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।স্বর্ণা খুব ঘাবড়ে যায় ব্যাপারটায়।পেছনে ফিরে রাজকে দেখে তার অবাকের সীমা ছাড়িয়ে যায়।
রাজ স্বর্ণার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।স্বর্ণা পিছনের দিকে পিছাতে থাকে আর বলে,
-“একদম আমার কাছে আসবেন না আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”
রাজ স্বর্ণার কাছে চলে এসে তার মুখ চে*পে ধরে বলে,
-“করো চিৎকার দেখি কার কান অব্দি তোমার চিৎকারের শব্দ যায় ”
স্বর্ণা রাজের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছ*ট*ফ*ট করতে থাকে।রাজ স্বর্ণাকে ধমক দিয়ে চুপ হতে বলে।স্বর্ণা তখন নিজের শক্তি ব্যবহার করে রাজকে একটা ঘু*ষি মে*রে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
স্বর্ণা ঘু*ষিতে রাজের নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।স্বর্ণা রাজের এরকম অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি ফাস্ট এইড বস নিয়ে আসে।
স্বর্ণা যখন রাজকে ফাস্ট এইড করে দিচ্ছিল তখন রাজ স্বর্ণার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল।স্বর্ণার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল রাজকে নিজের এত কাছে দেখে।রাজের অবস্থাও একইরকম।
রাজ তার প্রতি স্বর্ণার এমন কেয়ার দেখে মিটিমিটি হাসে।স্বর্ণা চোখ পাকিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-“এভাবে হাসছেন কেন? হাসার মতো হয়েছা টা কি।”
-“তুমি জানো তোমার এই সামান্য কেয়ারগুলো আমার কত ভালো লাগছে স্বর্ণা?”
স্বর্ণা চুপচাপ উঠে যেতে নেয় তখন রাজ তার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
-“এভাবে আর কতদিন পালাবে আমার থেকে? আমি খুব ক্লান্ত জানো।আমি জানিনা তুমি আমায় ভালোবাসো নাকি ঐ সিরাজকে কিন্তু আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।বিদেশে অনেক সুন্দরী মেয়েকে দেখেছি তবে কারো প্রতি আমার সেরকম অনুভূতি জন্মায় নি যেমনটা তোমার প্রতি আছে।তুমি কেন আমাকে বুঝতে চাওনা স্বর্ণা? তুমি নিশ্চয়ই আমার ভালোবাসাকে কখনো উপলব্ধি করোনি আমাকে নিজের ভুল ভেবেছ।আমি তোমাকে এতটাই ভালোবাসি যে তোমাকে পাওয়ার জন্য এতগুলো বছর যাবৎ অপেক্ষা করেছি।আমার খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন জানো যেদিন আমি জানতে পেরেছিলাম তুমি আমায় ভালোবাসো না।সেদিন আমার মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা বুঝি শুধু আমায় কষ্টই দেবে।নিজের মা-বাবাকে হারানোর পর তোমাকে নিয়ে সুন্দর করে বাঁচব ভেবেছিলাম।তোমাকে অবশ্য এসব বলে কোন লাভ নেই।কারণ তুমি স্বার্থপর।নিজের স্বার্থ ছাড়া তুমি কিছুই বোঝো না।তুমি সিরাজকে যে ভালোবাসো না এটা অস্বীকার করতে পারবে? না পারলেও এটাই সত্যি। সিরাজকে তুমি শুধু নিজের অনুশোচনার জন্য ভুলতে পারোনি।”
-“আপনি খুব জানেন আমার মনের কথা?”
-“তোমার মনের কথা আমি জানিনা।জানতে পারলে তো হয়েই যেত।যাক সেসব কথা।তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে না চাও তাহলে…আমিও আর তোমাকে জোর করবো না।ভালো থেকো আর সারাজীবন সিরাজের মায়াতেই থেকো।আমি তো কষ্টে ছিলাম কষ্টেই থাকব।”
রাজ চলে যেতে ধরবে তখন স্বর্ণা তাকে আটকিয়ে বলে,
-“কোথায় যাচ্ছ তুমি? আমি শুনেছিলাম মেয়েরা একটি বেশি ওভার থিংকিং করে বাট এখন মনে হচ্ছে ছেলেরা দুই লাইন বেশি বোঝে। অন্য ছেলেদের কথা বলতে পারব না কিন্তু তুমি বেশিই বোঝো।এর আগে আমার ভালোবাসি না শুনে আমেরিকা চলে গেলে, এখন আবার বিয়ে করব না শুনে সু*ই*সা*ই*ড করতে যাচ্ছ।”
রাজ চমকায়।চকিত হয়ে স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“তুমি কিভাবে বুঝলে?”
স্বর্ণা রাজের পকেট থেকে ঘু*মের ওষুধ বের করে নিয়ে বলে, “এই ভাবে।”
রাজ বলে,
-“তুমি আমায় বিয়ে না করলে আমাকে অন্তত শান্তিতে ম*রতে দাও।”
-“শান্তিতে ম*রো পরে আগে আমায় বিয়েটা করে নাও।আর আমার সামনে কখনো এভাবে ম*রার কথা বলবে না।আমিই ম*রবো তোমার জা*লায়।”
-“তার মানে তুমি বিয়েতে রাজি?”
-“হুম।”
রাজ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।স্বর্ণাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরাতে থাকে।স্বর্ণা নামাতে বললে নামিয়ে দেয়।তারপর ড্রয়িংরুমে গিয়ে সবাইকে খুশির খবরটা দেয় যে স্বর্ণা বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।সবাই খুশি হয়।বিশেষ করে সালমা আক্তার।খুশিতে তিনি সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।আলামিন ইসলাম আর চিত্রার বাবা মিলে বিয়ের বিষয়ে কথাবার্তা বলেন।রাজ অনেকদিন অপেক্ষা করেছে এই দিনটার জন্য তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করতে চায়।সেইজন্য আপাতত নেক্সট সপ্তাহে তাদের আকদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বর্ণার কানের কাছে এসে রাজ বলে,
-“আর মাত্র এক সপ্তাহ দেন আমি চিরকালের মতো তোমাকে নিজের করে নেবো।অনেক পালিয়েছ আর পারবে না।”
রাজ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।বৃষ্টিই তো তাকে আইডিয়াটা দিয়েছিল ঘুমের ওষুধ রাখতে এবং যেকোনভাবে স্বর্ণাকে দেখাতে।বৃষ্টি খুব ভালো করেই জানতো রাজকে স্বর্ণা কতটা ভালোবাসে।তাই এরকমটা হলে স্বর্ণা আর কিছুতেই না বলতে পারবে না।
সূর্যও ততক্ষণে অফিস থেকে ফিরে এসেছিল এবং সে পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করে।সূর্য বুঝতে পেরে গেছে বৃষ্টি প্রতিদিন রাজের সাথেই কথা বলত।
সূর্য খুব অনুতপ্ত হয় গতরাতের খারাপ ব্যবহারের জন্য।বৃষ্টির কাছে এসে বলে,
-“সরি।”
বৃষ্টি বলে,
-“আমাকে এভাবে সরি বলার কারণ?”
-“কাল রাতে..”
-“পাস্ট ইজ পাস্ট।আপনার মতো বোকা মানুষের কথায় আমি মন খারাপ করবো কেন?”
-“আমি বোকা মানুষ?”
-“না ব্যাডা মানুষ।”
-“ঝগড়া না করলে ভালো লাগেনা তাইনা?”
বৃষ্টি মুখ বাঁকায়।সূর্য মনে মনে বলে,
-“অনেক হয়েছে বৃষ্টি এবার আমি আর তোমাকে ছাড়ছি না।আমাকে অপমানিত করার ফল তোমাকে পেতেই হবে।”
বিয়ের কথাবার্তা বলে চিত্রার পরিবারের সবাই চলে যায়।রাজের এখন আর ইচ্ছে ছিলনা এভাবে যাওয়ার।কতদিন পর চিত্রাকে কাছে পেলো।তাই যত তাড়াতাড়ি পারে তাকে নিজের করে নিতে ততই ভালো।
_________
এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায়।স্বর্ণা আর রাজের আকদের দিন চলে আসে।আপাতত পারিবারিক কিছু লোকের উপস্থিতিতেই আকদ হবে।
স্বর্ণা-রাজ দুজনেই খুব খুশি।তাদের ভালোবাসা এতদিনে পূর্ণতা পাবে।
বৃষ্টি বুদ্ধিমতী তাই এত স্বাভাবিকতা সে ঠিক মেনে নিতে পারছিল না।বিশেষ করে প্রিয়ার ব্যাপারটা।স্বর্ণা রাজের বিয়ের কথা শুনেও প্রিয়া কোন রিয়্যাক্ট করে নি।স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু যেন মেনে নিয়েছে।স্বর্ণাকে অভিনন্দনও জানিয়েছে এখন বাড়ির বড় বউ হিসেবে অতিথিদের জন্য রান্নাবান্না করছে।বৃষ্টির মনে হয় প্রিয়া কোন ঝামেলা করতে পারে তাই স্বর্ণাকে সাবধান করে রাখে এই ব্যাপারে।
দুপুরে প্রিয়া হঠাৎ স্বর্ণার রুমে চলে আসে।তারপর স্বর্ণাকে নিজের হাতে গহনা পরিয়ে দিতে দিতে বলে,
-“আমার ভাইটা বুঝি ওপারে খুব কষ্টে আছে তোমাকে ছাড়া।আমার ভাইয়ের এই কষ্ট আমি বোন হিসেবে কিভাবে মেনে নেব বলো?”
স্বর্ণা ভয় পেয়ে যায় প্রিয়ার কথায়।স্বর্ণা কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রিয়া স্বর্ণার মুখে কিছু স্প্রে করে তাকে অজ্ঞান করে দেয়।তারপর চুপিসারে কয়েকজন লোক ডেকে স্বর্ণাকে একটি বস্তায় ভড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।বিয়ের বাড়িতে অনেক জিনিস আনা নেওয়া করা হচ্ছিল তাই কেউ সন্দেহ করেনা।
প্রিয়া বলতে থাকে,
-“তোমাকে আমি সুখী হতে দেবো না স্বর্ণা।তুমি যদি আমার ভাইয়ের না হও তাহলে অন্য কারো হবে না।”
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_২২
#লেখক_দিগন্ত
স্বর্ণাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় প্রিয়া।এদিকে কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি স্বর্ণার রুমে এসে তাকে দেখতে না পেয়ে বিচলিত হয়ে যায়।বৃষ্টির সন্দেহ হয় প্রিয়ার উপর কারণ সর্বশেষ প্রিয়াকেই সে স্বর্ণার রুমের দিকে আসতে এসেছিল।তখন ব্যস্ততার কারণে ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়নি বৃষ্টি।এখন তার খুব ভয় হতে থাকে যে প্রিয়া আবার স্বর্ণার কোন ক্ষতি না করে দেয়।
_________
স্বর্ণাকে নিয়ে নিজেদের পুরাতন বাসায় এসেছে প্রিয়া।স্বর্ণার জ্ঞান তখনো ফেরেনি।স্বর্ণার এই অবস্থা দেখে প্রিয়ার তো খুব আনন্দ হয়।প্রিয়া নিজের ভাই সিরাজের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“দেখ ভাইয়া আমি তোর স্বর্ণাকে তোর কাছে এনেছি।তুই তো স্বর্ণাকে খুব ভালোবাসিস তাইনা? স্বর্ণাকে ছাড়া নিশ্চয়ই খুব কষ্টে আছিস।এখন আমি স্বর্ণাকে তোর কাছে পাঠিয়ে দেব।”
স্বর্ণার জ্ঞান ফিরে আসে।প্রিয়া তার হাত পা বেধে রেখেছিল বিধায় স্বর্ণা পালাতে চেয়েও পারছিল না।প্রিয়া স্বর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমার পালানোর আর কোন পথ নেই স্বর্ণা।তোমার জন্য আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি, আমার ভাই এত কষ্ট পেয়েছে।সেখানে তুমি সুখে থাকবে সেটা তো হতে পারে না।”
স্বর্ণার খুব রাগ হয় প্রিয়ার উপর।এতদিন মেয়েটার জন্য দয়া হলেও এখন মনে হয় সে বেশি বেশি করছে।স্বর্ণা প্রিয়াকে বলে,
-“তুমি কিন্তু ভুল করছ প্রিয়া।আমাকে এভাবে আটকে রেখে কি লাভ পাচ্ছ বলো তুমি? আমি জানি তোমার ভাইয়ের সাথে যেটা হয়েছে ঠিক হয়নি। তাই বলে এসবের দায়ভার তুমি আমাকে তো দিতে পারোনা।আমিও আগে তোমার মতো ভাবতাম যে সিরাজের সাথে যা হয়েছে তার জন্য আমি দায়ী।কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি এসবে আমার তেমন কোন দোষ ছিলনা।মানুষ মাত্রই তো ভুল হয় আমিও তোমার ভাইকে চিনতে পারিনি।আমাকে বাঁচানোর জন্য তোমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, আমি তো তাকে মা*রিনি।তাহলে আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে প্রিয়া?”
-“চুপ আর একটা কথাও না।আমার ভাই তোকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন দিয়েছে আর তুই সেই জীবন অন্য একজনের সাথে কা*টাবি এটা হতে পারে না।আমি সেটা হতে দেব না।”
-“তুমি ঠিক নেই প্রিয়া।তুমি পাগল হয়ে গেছ।তুমি একটা সা*ইকো।”
-“হ্যাঁ আমি তাই।আর মাত্র কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর।তারপর তোকে আমার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেব।কোন চিন্তা করিস না বেশি কষ্ট দেব না তোকে।শেষবারের মতো মন ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নে।”
_________
স্বর্ণাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা এই খবরটা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে।পাত্রপক্ষের সবাই বিয়েতে এসে এসব কথা শুনে অবাক হয়।অনেকে বলতে শুরু করে বিয়ে করতে চায়নি জন্য স্বর্ণা পালিয়ে গেছে।
রাজকে এসব কথা প্রভাবিত করে না কারণ রাজ খুব ভালো করেই জানে স্বর্ণা তাকে ছেড়ে এভাবে চলে যেতে পারে না।বৃষ্টি সূর্যর সাথে কথা বলে এই বিষয় নিয়ে।
সূর্য বৃষ্টির কথা শুনে এবং সেও বৃষ্টির সাথে একমত হয় যে প্রিয়াই রয়েছে এসবের পেছনে।তারা দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় স্বর্ণার কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই তাকে বাঁচিয়ে নেবে।
বৃষ্টি সূর্যকে প্রশ্ন করে,
-“আপনি তো প্রিয়াকে অনেকদিন থেকে চেনেন।আপনার কি মনে হয় প্রিয়া স্বর্ণাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে?”
সূর্য আন্দাজ করে বলে,
-“হয়তো প্রিয়াদের আগের বাড়িতে নিয়ে গেছে।প্রিয়া একবার আমায় বলেছিল তাদের পুরাতন বাড়ি নাকি পরিত্যক্ত হয়ে আছে।সেখানে সেরকম কেউ যাওয়া আসা করেনা আর বাড়িটা
নাকি ফাকা জায়গায়।”
-“আপনি কি প্রিয়ার ঐ বাড়ির ঠিকানা জানেন?”
-“শুনেছিলাম নাম।এলাকার নাম জানলেও বাড়ির এক্সাক ঠিকানাটা জানি না।এখান থেকে কিছুটা দূরে ছোট্ট একটা গলির ভেতরে কোথাও একটা প্রিয়াদের পুরাতন বাড়ি।”
-“আমাদের এখনই সেই গলিতে যেতে হবে চলুন।”
সূর্য আর বৃষ্টি একসাথে যেতে নেয় তখন রাজ তাদের সামনে চলে আসে।রাজ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে,
-“কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?”
-“স্বর্ণাকে খুঁজতে।”(সূর্য)
-“আমিও যেতে চাই আপনাদের সাথে।চলুন।”
সূর্য,বৃষ্টি আর এবং রাজ একসাথে বেরিয়ে আসে স্বর্ণাকে খোঁজার জন্য।রাজের খুব টেনশন হয় স্বর্ণার জন্য।একবার হারিয়ে ফিরে পেয়েছে তাই আর হারাতে চায়না।
________
প্রিয়া একটা বালিশ হাতে নিয়ে হাসছিল।আজ এই বালিশ চা*পা দিয়েই স্বর্ণাকে মে*রে ফেলার পরিকল্পনা করছে প্রিয়া।
প্রিয়ার উদ্দ্যেশ্য বুঝতে পারে স্বর্ণা।সে বাঁচার জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু কোনভাবেই বা*ধা অবস্থা থেকে মুক্তি পায়না।প্রিয়া স্বর্ণার এই অবস্থা দেখে অট্টহাসি হেসে বলে,
-“এত ভয় পাচ্ছো কেন স্বর্ণা? ম*রার ভয় পাচ্ছ।একদিন তো সবাইকে ম*রতে হবে।আজ নাহয় তুমি…হা হা হা”
-“প্লিজ প্রিয়া আমাকে যেতে দাও।আমি ম*রতে চাইনা প্লিজ।”
-“চুপ আর একটা কথাও না।তোমার শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে।এখন বাজে বিকেল ৩ঃ৪৪ আজ বিকেল ঠিক ৪ টার সময় তোমাকে মে*রে ফেলব আমি।কেন জানো? কারণ আমার ভাইও বিকেল ৪ টার সময় মা*রা গেছিল।তাই আমি চাই তুমিও এই সময়ে ম*রে যাও।”
প্রিয়ার কথা শুনে স্বর্ণার বাঁচার ক্ষীণ আশাও চলে যায়।তার মনে হয় আজ আর কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না।আজই বোধহয় পৃথিবীতে তার শেষ দিন।স্বর্ণা রাজের কথাই ভাবে।রাজের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও রাজ।আজ আবার আমার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে।আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম চিরকালের মতো তোমার হয়ে যাব কিন্তু আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না।আর বোধহয় আমাদের দেখা হবে না।”
এদিকে রাজ দ্রুত স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছিল।সূর্যর থেকে প্রিয়ার পুরাতন বাড়ির ঠিকানা সে পেয়েছে।রাজ স্বর্ণার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“তুমি চিন্তা করোনা স্বর্ণা আমি এসে গেছি।তোমার কোন ক্ষতিই আমি হতে দেবো না।”
শেষ অব্দি প্রিয়ার বাড়ির গলিতে পৌঁছে যায় তারা।গাড়ি থেকে নেমে পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে থাকে রাজ এবং সূর্য।সবার কাছে প্রিয়ার ঠিকানা জানতে চায় কিন্তু কেউ বলতে পারে না।কারণ প্রিয়ারা অনেক আগে এখান থেকে চলে গেছে।
এদিকে বৃষ্টি পুলিশকে অনেক আগেই ফোন করে এই ঠিকানাটা জানিয়েছে।তারাও আসছে এখন।
অবশেষে রাজ এখন বৃদ্ধা মহিলাকে প্রিয়ার কথা বললে তিনি চিনতে পারেন।বৃদ্ধা মহিলাটি প্রিয়াদের বাড়ি দেখিয়ে দেয়।তখন রাজ,সূর্য,বৃষ্টি সবাই সেদিকেই যায়।
প্রিয়া মুচকি হেসে বলে,
-“৪ টা বাজতে আর মাত্র ১০ সেকেন্ড বাকি।আমি এবার তোমাকে মে*রে ফেলব।পরপারে আমার ভাইয়ের সাথে ভালো থেকো।”
কথাটা বলে শেষ করেই প্রিয়া বালিশটা নিয়ে গিয়ে স্বর্ণার মুখে চেপে ধরে।স্বর্ণা নিঃশ্বাস নিতে না পেরে বাঁচার জন্য ছটফট করতে থাকে।একসময় ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয় স্বর্ণা।রাজের কথাই ভাবতে থাকে সে।স্বর্ণা ভেবেই নেয় তার জীবন এখনই হয়তো থমকে যাবে।
ঠিক তখনই রাজ ছুটে এসে প্রিয়াকে স্বর্ণার থেকে আলাদা করে।স্বর্ণার মুখ থেকে বালিশ সরতেই সে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে থাকে।রাজ বলে,
-“কোন চিন্তা করো না স্বর্ণা।আমি এসে গেছি।”
বৃষ্টি পুলিশদের নিয়ে ভেতরে চলে আসে।কয়েকজন মহিলা পুলিশ এসে প্রিয়াকে গ্রেফতার করে।বৃষ্টি প্রিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“তুমি এতটা নিচে নামবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি প্রিয়া।মিথ্যা প্রতিশোধের নেশায় কত নিচে নামলে।এখন যাও গিয়ে নিজের পাপের শাস্তি ভোগ করো।যেই ভাইয়ের জন্য এতকিছু করলে সে নিশ্চয়ই এসবের জন্য কখনো তোমায় ক্ষমা করবে না।যেই স্বর্ণাকে বাঁচানোর জন্য তোমার ভাই নিজের জীবন দিয়ে দিল তুমি কিনা তাকেই মা*রতে যাচ্ছিলে।”
পুলিশ প্রিয়াকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
_____
সবাই ফিরে আসে।এরপর বৃষ্টি স্বর্ণাকে আবার নিজের হাতে সাজিয়ে দেয় এবং বলে,
-“কোন চিন্তা করো না স্বর্ণা।সব বিপদ চলে গেছে।এখন সবকিছু ঠিকঠাক হবে।”
স্বর্ণাকে নিয়ে গিয়ে রাজের পাশে বসানি হয়।কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে।”কবুল” বলার মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় স্বর্ণা+রাজ 💖
(চলবে)