#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৭
#লেখক_দিগন্ত
স্বর্ণার অতীতের ঘটনাগুলো শুনে বৃষ্টি এবং সূর্য দুজনেই মর্মাহত হয়৷ সূর্যর চোখে তো জলই চলে আসে। কেমন ভাই সে যে নিজের বোনের ভালো খারাপের কোন খবর নেয়নি? নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হয় সূর্যর।
স্বর্ণাও কান্না অব্যাহত রাখে।কান্নারত অবস্থাতেই গোঙাতে গোঙাতে বলে,
-“আমার সেইসময় নিজেকেই অপ*রাধী মনে হতো।বারবার মনে হতো সিরাজের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী…এইরকম সময়েই প্রিয়া প্রতিদিন আমায় ফোন করত…ও আমায় প্রতিদিন ফোন করে এটাই বলত, আমার সুখে থাকার কোন অধিকার নেই আমাকেও কষ্ট পেতে হবে।তার ভাই আমার জন্যই নাকি মা*রা গেছে।এই অপরাধবোধ থেকে আমি নে*শা করতে শুরু করি এমনকি নিজের ক্ষ*তি করার চেষ্টা করি, অনেকবার আত্ম*হ*ত্যারও চেষ্টা করেছি…একসময় প্রিয়ার কথা শুনতে শুনতে নিজের প্রতি ঘৃণা বেড়ে যায়।একদিন আমার ঘরে একটি ছেলে ঢুকে বলল প্রিয়া নাকি তাকে পাঠিয়েছে আমার ক্ষ*তি করার জন্য।আমি সেদিন ছেলেটিকে কিছু বলার আগেই সে আমার উপর ঝা*পিয়ে পড়ে আর তখনই আব্বু,ভাইয়া সবাই চলে আসে।সবাই আমার দিকেই আঙুল তোলে, নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা আর আপনজনদের উপর অভিমান করেই আমি সেদিন মিথ্যা বলি যে…”
স্বর্ণার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হয়না।সে ফুপিয়ে কেঁদেই চলে।বৃষ্টি স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা রাজের কি খবর? তার সাথে কি আর তোমার দেখা হয়নি?”
রাজের নামটা শুনেই স্বর্ণার অস্বস্তিবোধ হতে থাকে।মনে পড়ে যায় সেই মায়াবী চোখের ঝলমলে ছেলেটার কথা।
স্বর্ণা কিছুটা থমকে থেকে বলে,
-“রাজের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল সিরাজের মৃ*ত্যুর তিন দিন পরে।রাজ ততদিনে চিঠির ব্যাপারে সব জেনে ফেলেছিল।সেদিন রাজ এসে আমায় বলেছিল আমি কি চিঠি প্রেরককেই ভালোবেসেছিলাম রাজকে কি এতটুকুও ভালোবাসিনি?”
বৃষ্টি অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি বলেছিলে তুমি সেদিন?”
-“আমি সেদিন স্পষ্ট করে রাজকে বলি, আমি চিঠি প্রেরক সিরাজকেই ভালোবাসি।রাজ শুধু আমার ভুল ছিল।রাজের চোখ সেদিন জলে ছলমল করেছিল।কোন কথা না বলে সে চলে যায়।এরপর আমি আর ওর কোন খোঁজ জানি না।একবার শুনেছিলাম স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশ চলে গিয়েছে।অনেক ভালো গানের গলা ছিল ওর।হয়তো এতদিনে অনেক ভালো গায়ক হয়ে গেছে।”
স্বর্ণার মুখে সব কথা শুনে বৃষ্টি আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে প্রিয়ার রুমের দিকে ছুটে যায়।প্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে বলে,
-“প্রিয়া আমি সব জেনে গেছি।তোমার জন্য আমার খুবই খারাপ লাগছে।জানি তুমি তোমার মা এবং ভাইকে কখনো ফেরত পাবে না কিন্তু দেখ স্বর্ণার তো এখানে কোন দোষ নেই।সে তো আর ইচ্ছে করে তোমার ভাইকে কষ্ট দিতে চায়নি।তোমার ভাই তার মনের কথা প্রকাশ করতে পারেনি।কিন্তু তবুও বিনা কারণে স্বর্ণা অনেক কষ্ট পেয়েছে।তুমি প্লিজ ওকে আর কষ্ট দিওনা।”
বৃষ্টির কথা শুনে গগণবিহারী হাসি হেসে প্রিয়া বলে,
-“কি বলছ স্বর্ণাকে আর কষ্ট দেবনা? কেন দেবনা কষ্ট? একশোবার দেব হাজারবার দেব।ঐ মেয়েটার জন্য আমার ভাইয়াকে আমি হারিয়েছি।ও আমার ভাইয়ের ভালোবাসাকে দাম দেয়নি কিন্তু ওকে বাঁচানোর জন্য আমার ভাই অকালমৃত্যু বরণ করেছে।যার শোক সামলাতে না পেরে আমার আম্মুও মারা গেছে।তুমি কি ভাবছ এতকিছু আমি এত সহজে ভুলে যাব? তুমি আমার কষ্টটা বুঝবে না বৃষ্টি।যে হারায় শুধু সেই বোঝে।শুধুমাত্র স্বর্ণাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই আমি সূর্যর ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম।তারপর যখন দেখলাম সূর্য হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন সোহেলকে।আমি এত সহজে আমার উদ্দ্যেশ্য থেকে সরব না।”
বৃষ্টি প্রিয়াকে বোঝানোর জন্য বলে,
-“দেখো জন্ম মৃত্যু এগুলো কিছুই আমাদের হাতে নেই সবটাই আল্লাহর ইচ্ছা হয়।আর অকালমৃত্যু বলে কিছু হয়না যার আয়ু যতটুকু সে ততদিনই বাঁচে।আমিও তো নিজের বাবা মাকে হারিয়েছি।আর স্বর্ণা কিন্তু আদতেও তোমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ি নয়।তাই এসব মিথ্যা প্রতিশো*ধের কথা ভুলে যাও।আল্লাহর কাছে তোমার ভাই আর আম্মুর জন্য দোয়া কর সেটা বেশি কার্যকর হবে।”
প্রিয়া রেগে গিয়ে বলে,
-“আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।স্বর্ণাকে শান্তিতে থাকতে দেব না আমি।ওর জীবনটা একেবারে জাহান্নামে পরিণত করে দেব।”
-“আমি থাকতে কিছুতেই সেটা হতে দেবো না।স্বর্ণার ঢাল হয়ে দাঁড়াব আমি।”
____________
নিউইয়র্কের একটি বিলাসবহুল হোটেলে অপেক্ষায় আছে বহু মানুষ।তাদের অপেক্ষার কারণ বিখ্যাত রকস্টার রাজ চৌধুরী।নিউইয়র্কে বেশ নাম কামিয়েছেন তিনি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ চৌধুরী এসে উপস্থিত হন।তাকে দেখে হাজার হাজার তরুণীর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।সবাই তার গানের সুরে,তার অপরূপ রূপে মুগ্ধ।রাজ চৌধুরী কয়েকটা ইংরেজি গান বলার পর সবাইকে তার নিজের মাতৃভাষার একটি গান শোনায়,
“যাদুরে যাদুরে এ কেমন ভালোবাসা
বুকটা করে খা খা আমার
অন্তর হারায় দিশা
দূরের মানুষ হইয়া গেলা
বুকে রাইখা প্রেমের নেশা।”
গানের মানেটা উপস্থিত কেউ বুঝতে না পারলেও গানের আবেগটা সবার বোধগম্য হয়।যে আবেগ দিয়ে রাজ চৌধুরী গানটা গেয়েছে তা সত্যি মনোমুগ্ধকর।গানটা শুনে অনেকের চোখেই জল চলে আসে।গান শেষ করে রাজ চৌধুরী সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম।সেই ভালোবাসার অনুভূতি থেকেই গানটা বলেছি।আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি।তাই সেই দুঃখে আমি নিজের দেশ ছেড়ে এই দেশে চলে এসেছিলাম।তারপর আর কখনো দেশে ফিরিনি।কিন্তু এবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজের দেশে ফিরে যাবার।এটাই হয়তো নিউইয়র্কে আমার লাস্ট শো।আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”
কথাটা বলে নিজের দামী গাড়িতে করে বেরিয়ে আসে রাজ চৌধুরী।তার উদ্দ্যেশ্য এখান থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে গিয়ে ফ্লাইটে ওঠা।নিজের দেশের বাতাসের ঘ্রাণ নিতে যে তার বড্ড ইচ্ছে করছে।
______________
স্বর্ণার মন কেন জানিনা আজ বেশ ভালো।তার বারবার মনে হচ্ছে তার সাথে ভালো কিছু হতে যাচ্ছে।হারানো কোন কাছের মানুষকে ফিরে পেতে চলেছে।কিন্তু তার এমন মনে হওয়ার কারণ কি সে কোনভাবেই সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না।
বৃষ্টি এসে স্বর্ণার পাশে বসে।প্রিয়ার ভয়ে স্বর্ণাকে একা রাখতেও তার বড্ড ভয় লাগে।
স্বর্ণা বৃষ্টিকে তার মনে তৈরি হওয়া ভালোলাগার কথা জানায়।বৃষ্টি মজা করে বলে,
-“তোমার ভালোবাসার কেউ হয়তো আসছে।”
ভালোবাসা শব্দটা শুনে স্বর্ণার মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।সে মলিন গেসে বলে,
-“ভালোবাসা জিনিসটা আমার জন্য নয় বৃষ্টি ভাবি।জীবনে আর যাই পাই না কেন ভালোবাসা কখনো পাবো বলে মনে হয়না।”
স্বর্ণার এমন কথা শুনে বৃষ্টি বলে,
-“আল্লাহর ইচ্ছাতেই পৃথিবীতে সব হয়।তিনি চাইলে সব হয়।তাছাড়া তোমাকেও তো সুখী হতে হবে।জীবনটা সুন্দরভাবে গোছাতে হবে।হাত ধরার জন্য একটা সঙ্গীর খুব প্রয়োজন মানুষের।আমার মনে হয় তুমিও জীবনে এমন কোন মানুষ পাবে যে তোমাকে ভালোবাসবে।তাছাড়া তোমার বিয়ের বয়সও তো পেড়িয়ে যাচ্ছে।বিয়ে তো করতে হবে তাইনা?”
বিয়ের কথা শুনে স্বর্ণা রাগ দেখিয়ে বলে,
-“আমি কখনো বিয়ে করবো না।এই নিয়ে প্লিজ কথা বলো না।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে আর রাগ করতে হবে না।কাল আমরা দুজনে একটু বাইরে বেড়াতে যাব কিন্তু।এখানে এসেছি থেকে দেখছি তুমি ঘরেবন্দি হয়ে আছো।একটু বাইরে ঘুরতে চলো।দেখবে মন মেজাজ সব ফুরফুরে হয়ে যাবে।”
স্বর্ণা সায় জানায়।
__________
অবশেষে রাজ চৌধুরী বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে।মাতৃভূমির বাতাসে শ্বাস নিয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি খুঁজে পায় সে।রাজ চৌধুরী বলে,
-“আবার ফিরে এলাম নিজের দেশে।একদিন সবকিছু হারিয়ে অভিমান করে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।অবশেষে সব অভিমান চুকিয়ে ফিরে এলাম।দেখি এই দেশ আমাকে এবার কিছু দিতে পারে নাকি আবার প্রাপ্তির খাতা শূন্যই থেকে যায়।”
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৮
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি ফোনে চিত্রার সাথে কথা বলছিল।সে চিত্রাকে বলে,
-“আজ আমি আমার ননদ স্বর্ণার সাথে ঘুরতে যাব।তুইও চলে আয় না।সবাই মিলে একসাথে ঘুরব।”
-“নারে আমি যেতে পারব না।তোকে আমার একটা চাচাতো ভাইয়ের কথা বলেছিলাম না যে কয়েক বছর আগে বিদেশে চলে গিয়েছিল সে আজ আবার দেশে ফিরছে।”
-“ও আচ্ছা তোর সেই গায়ক ভাই। কি যেন নাম ছিল…রাজ তাইনা?”
-“হুম।আচ্ছা আমি রাখছি তুই তো জানিস চাচা চাচি কয়েক বছর আগে একটা দূর্ঘটনায় মা’রা গেছে।সেই দুঃখে রাজ ভাইয়া চলে গিয়েছিল।এখন তো এইদেশে আমরা ছাড়া তার আর কোন আত্মীয় নেই।তাই আমাদের এখানেই আসবে।তোরা মজা করিস।”
______________
বৃষ্টি আর স্বর্ণা বেড়িয়ে পড়ে একটু ঘোরাঘুরি করতে।সূর্যও আছে তাদের সাথে।সারা রাস্তায় সূর্য বৃষ্টির দিকে বারবার তাকায়।যেটাতে বৃষ্টি খুবই বিব্রতবোধ করে।সে বিড়বিড় করে বলে,
-“এই লোকটা এভাবে আমায় দেখছে কেন কোন কাজ নেই নাকি? আজ শুক্রবার তাই অফিস বন্ধ।উফ আজকে বেড়ানোটাই ভুল হয়ে গেছে।”
সূর্য বৃষ্টির মনোভাব বুঝতে পারে।সূর্য মুচকি হেসে বলে,
-“আমরা তো স্বামী স্ত্রী এভাবে আলাদা বসা উচিৎ হয়নি।আচ্ছা স্বর্ণা ফিরে আসার সময় তুই নাহয় সামনে বসিস আমি পেছনে বসব।”
বৃষ্টি হচকচিয়ে বলে,
-“আমার আপনার পাশে বসার কোন ইচ্ছে নেই।স্বর্ণা তুমি কিন্তু আমার পাশেই বসবে।”
স্বর্ণা এসব কাণ্ড দেখে না হেসে আর পারেনা।নিজের ভাই আর ভাবির এমন খুনশুটি তার খুব ভালো লাগছিল।সূর্য জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা তোমরা কোথায় যেতে চাও বলো ড্রাইভার সত্যিই খুব কনফিউজড।”
স্বর্ণা বলে,
-“যেখানে খুশি নিয়ে চলো আমার কোন আপত্তি নেই।”
বৃষ্টি ভেবে বলে,
-“মিরপুর চিড়িয়াখানায় চলুন।”
-“চিড়িয়াখানায় কেন? ঘোরার কি আর কোন যায়গা নেই?”
সূর্যর কথাটা শুনে বৃষ্টি মুখ ফুলিয়ে বলে,
-“আমার ইচ্ছে করছে তাই।শুনেছি চিড়িয়াখানায় ক্যাঙারুর দুটো বাচ্চা হয়েছে।আমি কখনো বাচ্চা ক্যাঙারু দেখিনি তাই দেখতে চাই।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে তাই চলো।”
তারা সবাই চিড়িয়াখানায় যায় এবং কয়েক ঘন্টা সেখানেই অতিবাহিত করে।বৃষ্টি সূর্যকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা এই চিড়িয়াখানায় সবথেকে কিউট প্রাণী কোনটি বলুন তো।”
-“তুমি।”
-“কি!!!!! আপনার আমাকে প্রাণী মনে হয়?”
-“হ্যাঁ।কেন তুমি কি প্রাণী নও? নাকি তুমি কোন এলিয়েন।এই পৃথিবীতে যারা বসবাস করে সবাই তো প্রাণী।সেই হিসেবে দেখতে গেলে তুমিও প্রাণী,আমিও প্রাণী।”
-“আমি এনিমেলের কথা বলছিলাম।”
-“ও আমার তো সব এনিমেলই ভালো লেগেছে।তবে সিংহটা একটু বেশিই কিউট।”
-“আপনার আবার সিংহ পছন্দ? আমার তো মনে হয়েছিল আপনি বা*দর পছন্দ করবেন।”
-“কি বললে তুমি?”
-“কিছু না চলুন এখন।স্বর্ণা যে কোথায় গেল ওকে তো কোথাও দেখছি না।”
-“হ্যাঁ তাইতো।স্বর্ণাকে তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না।দাঁড়াও ওকে একটা ফোন করে দেখি।যা চঞ্চল মেয়ে একটুও শান্ত থাকে না।”
স্বর্ণা হরিণ দেখছিল।হরিণের মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে তার খুব ভালো লাগে।এই চোখের দিকে তাকিয়ে তার রাজের কথা মনে পড়ে যায়।রাজের চোখও এমন মায়াবী ছিল।রাজের কথা ভাবতে না চেয়েও কেন যে বারবার তার কথা ভাবে সেটা স্বর্ণা বুঝতে পারে না।স্বর্ণা যতই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুক রাজ কেবলমাত্র তার একটা ভ্রম, সিরাজই তার আসল ভালোবাসা কিন্তু তার মন মানতে চায়না।কতদিন রাজকে দেখেনি সে।রাজ এখন কোথায় আছে কেমন আছে সেটাও জানেনা।
হঠাৎ সূর্যর ফোনকলে স্বর্ণার ধ্যান ভাঙে।সে ফোনটা রিসিভ করতেই সূর্য বলে,
-“কোথায় তুই স্বর্ণা? আশেপাশে কোথাও তো তোকে দেখছি না।”
-“আমি তোদের থেকে একটু দূরে আছি।ভাবলাম তোদের একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে দেওয়া উচিৎ।আমি আসছি।”
-“তাড়াতাড়ি আয় আমাদের যেতে হবে।”
স্বর্ণা বৃষ্টি আর সূর্যর কাছে যায়।এরপর তারা সবাই মিলে চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে আসে।বৃষ্টি এবার স্বর্ণাকে বলে,
-“এরপর কোথায় যাবে বলো।এবার কিন্তু যেখানে খুশি বললে হবে না তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানেই যাব আমরা।”
স্বর্ণার মন চাইছিল একবার তার ভার্সিটিতে ঘুরতে যেতে।কত সুন্দর সুন্দর স্মৃতি জড়িয়ে আছে।তাই স্বর্ণা বলে,
-“চলো তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
সূর্য স্বর্ণার কথা শুনে বলে,
-“এটা তো তোর ভার্সিটি তাইনা? তুই আবার কেন যেতে চাইছিস সেখানে?”
-“পুরাতন স্মৃতিগুলো হাতছানি দিচ্ছে।খুব করে ডাকছে আমায়।তাই ইচ্ছে করছে একবার যেতে।”
-“তোমার কষ্ট হবে না তো স্বর্ণা? ওখানে তো তোমার ভালো স্মৃতির পাশাপাশি কিছু দুঃখের স্মৃতিও আছে যা তোমার কষ্টের কারণ।”(প্রিয়া)
-“আমার কোন অসুবিধা হবে না।চলো না যাই।”
বৃষ্টি আর সূর্য শেষপর্যন্ত রাজি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে।স্বর্ণার মন ছটফট করতে থাকে কত দ্রুত পৌঁছাতে পারবে সেই নিয়ে।
___________
অবশেষে সবাই পৌঁছে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।গাড়ি থেকে নেমে নিজের পুরাতন ক্যাম্পাসে পা রেখে স্বর্ণার মনে আনন্দের দোলা বয়ে যায়।এখানেই কত সুন্দর সুন্দর স্মৃতি আছে তার, বন্ধুদের সাথে আড্ডা হাসি,খুনশুটি।আবার কত বেদনাদায়ক স্মৃতিও আছে।রাজের কথা আজ আবারো মনে পড়ে যায় স্বর্ণার।স্বর্ণা বুঝতে পারছে না বারবার কেন তার রাজের কথাই মনে পড়ছে।সে তো জানত সে সিরাজকেই পছন্দ করতো।কিন্তু মনের অজান্তে সে এই বছরে রাজের কথাই ভেবেছে।রাজের সাথে কা*টানো মুহুর্তগুলো যদিও খুব কম ছিল কিন্তু সেগুলো যেন তার জীবনের সুন্দর স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।
তাহলে কি স্বর্ণার মন রাজকেই ভালোবেসেছে? সিরাজ কি স্বর্ণার মস্তিষ্কে চাপিয়ে দেওয়া ভালোবাসা? মন আর মস্তিষ্কের এই লড়াইয়ে কে জয়ী হবে সেটা স্বর্ণা জানে না।মস্তিষ্ক সিরাজকে ভুলতে চায়না কিন্তু মন চায় রাজের কথা ভাবতে।
স্বর্ণা এগিয়ে যায় একটু।অবচেতন মনে হাটতে হাটতে হঠাৎ কারো সাথে প্রবল বেগে ধা*ক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয় স্বর্ণা।তখনই তাকে ধরে নেয় কেউ একজন।
স্বর্ণা মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে মাস্ক পরিহিত একটি ছেলে তাকে ধরে আছে।স্বর্ণার নজর যায় ছেলেটির চোখের দিকে।সেই মায়াবী চোখ যার কথা সে আজও ভুলতে পারেনি।এই মায়াবী চোখের অধিকারী মানুষটাকে স্বর্ণা খুব ভালো করেই চেনে।
স্বর্ণা অস্ফুটস্বরে বলে,
-“রাজ….”
মুখ থেকে মাস্ক নামিয়ে দেয় রাজ।স্বর্ণার দিকে এতক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল সে।হুশ ফিরতেই চোখ নামিয়ে বলে,
-“অনেকদিন পর দেখা হলো।কেমন আছেন আপনি?”
রাজের মুখে আপনি ডাক শুনে স্বর্ণার কেন জানিনা খুব খারাপ লাগছিল।স্বর্ণা সিরাজের জন্য অনুশোচনার জন্যই তার প্রতি মায়াকে ভালোবাসা ভেবেছিল স্বর্ণা।হাজার হোক ছেলেটা তাকে চিঠি দিত, যেই চিঠি তার মন জয় করেছিল আবার ছেলেটা তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিয়েছে।
স্বর্ণা অবশ্য জানে রাজ তার উপর খুব রাগ করে আছে।স্বর্ণাও দুচোখ ভরে দেখে নেয় রাজকে।বেহা’য়া মন যেন কিছুই মানতে চাইছিল না।স্বর্ণা রাজকে বলে,
-“আমি ভালো আছি।আপনি হঠাৎ এখানে?”
রাজ মুচকি হেসে বলে,
-“অনেকদিন পর এলাম পুরানো স্মৃতি হাতড়াতে।”
স্বর্ণাও আনমনে বলে দেয়,
-“আমিও।”
রাজ তখন বলে,
-“আচ্ছা আমি আসছি এখন।”
কথাটা বলেই রাজ চলে যায়।একবারের জন্যেও পিছনে ফিরে তাকায় না কারণ তাকালে যে সে দূর্বল হয়ে যাবে।এদিকে স্বর্ণা তখনও রাজের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে ছিল।
(চলবে)