#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০৩
#লেখনিতেঃনুসরাত
এভাবেই চলছিলো ওদের জীবন একে অপরকে ছাড়া।কেউ ই এই জীবনে সুখী ছিলোনা।আরাফের সেই ক্ষমতা ছিলোনা আবার মায়ার জীবনে ফিরে আসার।আসতে চাইলেও কি মায়া দিবে আসতে?কি নির্মমভাবে সেদিন শতশত অপমান করে মায়াকে নিজের থেকে দূরে সরিয়েছিলো।চাইলেই কি মায়া পারবে ভুলতে সেই অপমান গুলো?এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরাফ।ওর মায়াপরীকে ও হারিয়ে ফেলেছে।আর কখনো ফিরে পাবেনা।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় আরাফ।
অন্যদিকে মায়ার আজ মনটা খারাপ।জীবন টা সত্যি বদলে গেছে।মাঝেমাঝে ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগে। মায়া জানে ওর ভাই ওর মা-বাবা ওর জন্য কষ্ট পায়।কিন্তু জেনেও কোনো লাভ নেই।মায়া পারেনা ওর আগের জীবনে ফিরে আসতে।যখন ই চেষ্টা করে তখন ই দুটো দিনের কথা মনে পড়ে যায় প্রথমত আরাফের সাথে প্রথম দেখা আর দ্বিতীয়ত ওদের বিচ্ছেদের দিন।ওর চাঞ্চল্যতার জন্যইতো আরাফ ওর প্রেমে পড়েছিলো।আর এই চাঞ্চল্যতা আর পাগলামির জন্যইতো ওকে ছেড়ে দিয়েছিলো!তাই সেই চাঞ্চল্যভাব ই ওর জীবনে কাল হয়ে দাড়িয়েছে।না ও চঞ্চল থাকতো না ওর জীবনে আরাফ নামের কোনো মানুষ আসতো আর না ওকে ভেঙে দিয়ে চলে যেতো।এসব ভেবেই আর আগের জীবনে ফিরে আসতে পারেনা মায়া।আজও মায়ার মনে পড়ে সেই বিচ্ছেদের দিনের কথা।চাইলেও ভুলতে পারেনা মায়া সেই দিনটি।
“আই নিড আ ব্রেকাপ!”
এই একটি কথা মায়ার জীবনে তোলপাড় আনার জন্য যথেষ্ট ছিলো।নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলোনা মায়া।ওর আরফু হ্যা ওর আরফু ওকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে?কিন্তু কেনো কি দোষ ওর?৬ টা মাস সহ্য করে গেছে না আর পারবেনা।ওর সব প্রশ্নের জবাব চাই ই চাই!তাই মুখ ফুটিয়ে মায়া বলে,
“তোমার মাথা ঠিক আছে তো?কিসব আবোলতাবোল বলছো?”
“আমার মাথা ঠিক ই আছে।তোমার মাথা ঠিক নেই।নিজেকে ঠিক করো অনেক ছেলে পেয়ে যাবে”
“কিন্তু আমিতো শুধু তোমাকে চাই আরফু”
“ওহ প্লিজ স্টপ ইওর ননসেন্স।আমি আর তোমাকে চাইনা”
“কিন্তু কেনো?কি দোষ আমার?আমার সাথে কেনো এমন করছো?৬ টা মাস ধরে তোমার অবহেলা সহ্য করে যাচ্ছি।আর কত এমন করবে?”
“কারণ আমি তোমার সাথে আর থাকতে চাচ্ছিনা।তোমার দোষ?তোমার কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার না আমি সেদিন এই রেস্টুরেন্টে আসতাম না তোমাকে দেখতাম আর না তোমার এই সুন্দর চেহেরার প্রেমে পড়তাম।আমি এখন বুঝে গেছি সবটা মোহ ছিলো তোমার এই সুন্দর চেহেরার মায়ায় পড়েছিলাম আর কিছুনা।সময়ের সাথে সবটা কেটে গেছে।আমি তো জানতাম না এই চঞ্চলতার মাত্রা আর পাগলামির মাত্রা তার সীমা ছাড়িয়ে যাবে।আমাকে পাগল বানিয়ে দিবে।আরফু এইটা করোনা।আরফু ঐটা করোনা।এই মেয়ে তোমার দিকে কেনো তাকাবে?ঐ মেয়ে কেনো তাকাবে?মেয়েদের সাথে কথা বলবানা।বোনদের সাথে কথা বলবানা।বন্ধুদের সাথে এত আড্ডা দিবানা।আমার সাথে সবসময় কথা বলবা প্রতিদিন দেখা করবা।আমাকে এইখানে ঘুরতে নিয়ে যাও ঐখানে ঘুরতে নিয়ে যাও।জাস্ট রিডিকুলাস!মানে কি চাওটা কি?সারাদিন ২৪ ঘন্টা তোমাকেই দিয়ে দেই?আমার জীবনে আর কোনো মানুষ নেই?নাকি তোমার মতো চাও?নিজের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস ভুলে যাই?একদিন দেখা না করলে হাত কাটাকাটি ধমকি দেয়া আমি জাস্ট আর পারছিনা!তোমার পাগলামিগুলা আগে ভালো লাগতো কিন্তু পরিমিত পাগলামি এরকম মানুষ খুন করার পাগলামি না মায়া!তুমি আমায় কখনো ভালোই বাসোনি বাসলে এত পাগলামি করতে না তুমি জাস্ট একটা পাগল সাইকো আর কিছুনা।নিজের ট্রিটমেন্ট করাও মিস মায়া রহমান! ৬ টা মাস ধরে চেষ্টা করে আসছি তুমি যেনো আমার লাইফ থেকে নিজ ইচ্ছায় চলে যাও কিন্তু না তুমিতো যাচ্ছোইনা এত অবহেলার পরও বেহায়ার মতো পড়ে আছো।তাই আমার ই আজ এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।আমি আর পারবোনা আমি তোমাকে আর আমার লাইফে চাইনা!” একদমে সব বলে নিশ্বাস নিয়ে থামলো আরাফ।
আরাফের এসব কথাবার্তা শুনে মায়া ঐখানেই ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে।চোখের সামনে ঘোলাটে দেখছে।টপটপ করে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝোর বৃষ্টি! এই বৃষ্টি আকাশের নয় এই বৃষ্টি চোখের!চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে থামছেনা।বহু কষ্টে মায়া আরাফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
” পি পি প্লিজ আরাফ এভাবে বলোনা।দেখো এটা কি মজা করার বি বিষয়?আমিতো তোমায় ভালোবাসি তাইনা?তুমিওতো বা বাসো আর আমাকে বিয়েওতো করবে বলেছো।বিয়ে করে তুমি আমাকে পড়াবে।তাহলে?” হেচকি উঠে গেছে কাদতে কাদতে।
“আমি মোটেও মজা করছিনা।আ’ম সিরিয়াস।আর ভালোবাসতাম কিনা জানিনা।কিন্তু এখন আমি শিওর আমি তোমাকে ভালোবাসিনা আর কখনো একটা সাইকোকে আমি ভালোবাসতে পারিনা পারবো ও না”
“আমি জানি তুমি আমাকে রাগাতে চাও তাইনা?এভাবে বলোনা প্লিজ।আমার কষ্ট হচ্ছে”
“তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।তুমি যথেষ্ট সুন্দরী আমি গেলে হাজারটে ছেলে পেয়ে যাবে”
“আমার লাগবেনা হাজারটে ছেলে।শুধু তোমাকে চাই”
“এই জনমে আমাকে আর পাবেনা।নাকি আমার বাবার টাকার জন্য আমাকে ছাড়তে চাচ্ছোনা?”
“আরাফ!” হতবাক হয়ে চিল্লিয়ে।
“ও আসল কথা বলায় এখন চিল্লানি বের হচ্ছে?তা আমার চেয়েও অনেক বড়লোক ছেলে পেয়ে যাবে সমস্যা নেই।আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।আমি মায়া নামের কোনো কালো ছায়াকে আমার জীবনে আর চাইনা।এখন আমি আসি বাই ফরএভার!” বলেই চলে যেতে নেয় আর মায়া ওর পা দুটো ধরে ফেলে ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
“প্লিজ আরফু আমাকে ছেড়ে যেয়োনা।আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবোনা।আমাকে একটা সুযোগ দাও আমি নিজেকে সুধরে নিবো।আর কখনো অমন করবোনা যেটা তুমি চাওনা।”
“সরি আই কান্ট!আমার পা ছাড়ো” আস্তে সুরে বলে।
“না আরফু প্লিজ!হাউ মাচ আই লাভ ইউ,ইউ নো না?” কান্নাজড়িত কন্ঠে।
“ইয়েস ইয়েস আই নো দিস ইজ জাস্ট আ সাইকোনেস হোয়াট ইউ হ্যাভ কল্ড লাভ নাও!লিভ মাই লেগস মায়া!”
“আমি তোমার পা দুটো ধরছি প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিয়োনা”
“তুমি কি বেহায়া বেশরমের থেকে এখন সেল্ফরেস্পেক্টলেস ও হয়ে গেছো?ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধ নেই তোমার মাঝে?আমাকে ছাড়ো নয়তো আমি!”
আরাফকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“নয়তো কি?”
“নয়তো আমি সুইসাইড করবো তারপর দেখি কিভাবে তুমি আমাকে পাও”
এই কথা শুনে মায়া ওর পা ছেড়ে দেয়।আর আরাফ হনহনিয়ে চলে যায়।যাওয়ার আগে বলে যায়,
“আই হেইট ইউ মায়া।আই জাস্ট হেইট ইউ!এখন থেকে আমি তোমাকে চিনিনা আর না তুমি আমাকে বাই ফরএভার!”
আর পিছনে ফিরে তাকায়নি আরাফ।মায়া ওর যাওয়ার পানেই তাকিয়ে ছিলো।রেস্টুরেন্টের প্রতিটা কাপল ওদের দেখছিলো।মায়াকে এই অবস্থায় দেখে উনারাই উঠিয়ে নিয়ে ওর হুশে আনায় তারপর মায়া সেখান থেকে আস্তে আস্তে হাটতে থাকে রাস্তায়।কিছুক্ষণ হাটার পর বৃষ্টি নামতে শুরু করে।ধীরে ধীরে পথঘাট জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে।দু একটা রিক্সা পথে ঘাটে দেখা মিলছিলো।মায়া হাটু গেরে বসে পড়ে রাস্তায় দুহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেদে উঠে।ভিজে যাচ্ছে মায়া সাথে ভিজছে ওর চোখ।আকাশের জল আর চোখের জল এক হয়ে যাচ্ছে।মায়ার আর্তনাদে যেনো ধরনীও চিৎকার দিয়ে বলছে “আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা!তুমি ভেঙে গেছো!তুমি টুকরো টুকরো হয়ে গেছো!তুমি জোড়া লাগলেও তোমার গায়ে দাগগুলো আজীবন লেগে থাকবে চাইলেও পারবেনা ভুলতে!”
তারপর মায়া অজ্ঞান হয়ে যায়।বৃষ্টি কমলে কিছু লোক ওকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়।হাসপাতালে গিয়ে জ্ঞান ফিরলে ওর পরিবারের সবাইকে আসতে বলা হয়।ওকে বাসায় নিয়ে যান তারা।কিন্তু ওর তীব্র জ্বর আসে।সেই জ্বর স্থায়ী ছিলো পুরো একটি মাস! জ্বর থেকে উঠে মায়া ওর ফোন হাতে নিয়ে দেখে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিয়েছে।সিমটাও পালটে ফেলেছে।এমনকি শহর ও ছেড়ে দিয়েছে।ওর বন্ধুরাও ব্লক করে দিয়েছে মায়াকে।এরপর মায়া আরো ভেঙে পড়ে।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো।চুপটি করে থাকতো একটা টু শব্দও করতোনা।সারাক্ষণ ফ্লোরের দিকে নয়তো আকাশের দিকে চেয়ে থাকতো।ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।ভিটামিনের অভাবে চুল গুলো পড়তে থাকে।চোখের নিচে কালি পড়ে যায়।বেশিরভাগ ই ওর চোখ দুটো ভিজা আর লাল ও ফুলে থাকতো।নাক লাল হয়ে থাকতো।মাঝেমাঝে এত ফুলে যেতো লাল হতো যে মনে হয় এখনি চোখ বেরিয়ে পড়বে।
মায়া শুয়ে ছিলো বিছানায় চোখ বন্ধ করে আর এসব ভেবে চোখের কার্নিশ বেয়ে পড়া পানি মুছছিলো।তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।ঐখানে একটা দোলনা ছিলো।ওর ভাই মায়ান ওর জন্য বানিয়েছে।মায়া দোলনায় দুলতে দুলতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
To be continued…