বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০১

0
1997

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০১
#লেখনিতেঃনুসরাত

রেস্টুরেন্টে অধীর অপেক্ষায় বসে আছে মায়া কেননা তার প্রিয় মানুষটির সাথে আজ প্রায় ৫ মাস পর দেখা হচ্ছে।কখনো ১ মাসের বেশি সময় যায়নি যে ওরা একে অপরের সাথে দেখা করেনি।কিন্তু এই ৫ মাস হওয়ার পিছনেও একটি বড় কারণ আছে।গত ৬ মাস যাবৎ মায়া তার ভালোবাসার মানুষটির বদলে যাওয়া ব্যবহারগুলো কিছুতেই নিতে পারছিলোনা। খুব কষ্ট দিচ্ছিলো তাকে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছিলোনা “কেনো আমার সাথে এমন করছো?কি করেছি আমি?”। এক সপ্তাহ আগেই সে মায়াকে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে এক সপ্তাহ পর ওর সাথে এই রেস্টুরেন্টে দেখা করবে।মায়া তো আজ ভীষণ খুশি কারন তার প্রিয় মানুষটির সাথে এত মাস পর দেখা হচ্ছে আবার তার অনেক প্রশ্নের জবাব ও চাই।আজ মায়া নিজেকে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটির জন্য তার প্রিয় সাজে সাজাচ্ছে।পরনে আছে নীল শাড়ি হাতে নীল কাচের চুড়ি চুল গুলা খোলা চোখে গাঢ় টানা টানা কাজল আর ঠোটে গোলাপ লিপস্টিক।হাতে পার্সটার মধ্যে মুঠোফোনটা ভরে বেরিয়ে পড়ে তার গন্তব্যে।রিক্সায় চড়ে বসে।বেশ কিছুক্ষণ পর ই রেস্টুরেন্টে পৌছে যায়।গিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট হয়ে আসলো এখনো সে আসছেনা তাই ভাবলো তাকে কল দিবে।ফোন টা বের করেছে এমন সময় এসে পড়লো তার প্রিয় মানুষটি যাকে সে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।পরনে কালো পাঞ্জাবি কালো জিন্স প্যান্ট হাতে কালো ওয়াচ চুলগুলো হাত চিরুনী দিয়ে নরমালি আচড়ানো চোখে তার সেই বিখ্যাত চশমাটি যার নাম মায়া দিয়েছে ‘আরচশমু’। আসলে সে চোখে একটু কম দেখে তাই এই চশমা নেওয়া।চেয়ারে বসে পড়ে।বসার পর চশমাটা ঠিক করে চোখে এটে নেয়।দূর থেকে যখন আসছিলো তার প্রিয়তমাকে একজনর চোখ বুলিয়েই এসেছিলো বিধায় এখন তার দিকে তাকাচ্ছেনা।এত সুন্দর করে শুধু মাত্র তার পছন্দের সাজে এসেছে মায়া আর লোকটি তাকাচ্ছেইনা বলে মায়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়।তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে।সে ওয়েটারকে ডেকে মেনু দেখে দুটো কোল্ড কফি অর্ডার করে।মায়া চুপটি করে বসে আছে।প্রায় ১৫-২০ মিনিট হয়ে আসছে লোকটি মোবাইল ই টিপছে।আর মায়া হাত কচলাচ্ছে যেনো কিছু বলতে চায় তবুও পারছেনা কোনো জড়তা কাজ করছে।লোকটি ফোনটি রেখে দেয়।তারপর কিছুক্ষণ মেঝেতে তাকিয়ে থাকে।তিনিও প্রায় ৫-১০ মিনিট যাবৎ ঘামছে আর রুমাল দিয়ে তা মুছছে।এর ই মাঝে ওয়েটার কফি এনে রাখে।লোকটির জড়তা কাজ করছে কিন্তু কফির একটি গ্লাস তার প্রেয়সীর দিকে এগিয়ে দেয়।যা দেখে মুচকি হাসে মায়া।মুখে সবেমাত্র স্ট্রটি মুখে দিয়েছে আর তখন ই সে বলে,

“আমি তোমার সাথে আর থাকতে পারছিনা মায়া।তোমার সাথে আমার যায়না।”

মায়ার কাশি উঠে যায়।তা দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে লোকটি আর পানি এগিয়ে দেয়।পানি খেয়ে মায়া তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।সে আবার ও মাথা নিচু করে বলে,

“জানি তোমার মানতে কষ্ট হবে তবুও আমি তোমার এসব পাগলামি আর মেনে নিতে পারছিনা।তোমাকে আমার অসহ্য লাগে।আই নিড আ ব্রেকাপ”

ছোট্ট ছেলেটির ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে মায়ার।সে বর্তমানে ফিরে আসে।সামনে তাকিয়ে দেখে তার প্রিয় মানুষটি তার দিকেই চেয়ে আছে চাহুনীতে ছিলোনা আগের মতো ভালোবাসা ছিলো শুধু বিরক্তি।যা দেখে মনটা বিষিয়ে যায় মায়ার।আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগের কথাই ভাবছিলো মায়া।মায়া কলেজ থেকে সবেমাত্র তার ডিউটি শেষ করে বেরিয়েছিলো রাস্তায় রিক্সা নিতে।সেই মুহুর্তে দেখে একটি ছেলে রাস্তার এপাশে আসছে আর তার দিকে ধেয়ে আসছে একটি প্রাইভেট কার।আর তখন ই মায়া দৌড়িয়ে আসে ছেলেটির কাছে আর ছেলেটিকে সরিয়ে তার কাছে আনে।আর ওপাশ থেকে তার সেই ভালোবাসার মানুষটাও দৌড়িয়ে এসে দাড়ায় পিচ্চিটার সামনে।আর যখন ই এই লোকটির দিকে মায়ার চোখ যায় তখন ই মনে পড়ে যায় সেই কালো দিনটির কথা।যেদিন তার সবকিছু হারিয়ে গিয়েছিলো।হারিয়ে গিয়েছিলো তার ভাইয়ুর ছোট্ট চঞ্চল মায়া।তার জীবন উলোটপালোট হয়ে গিয়েছিলো।হেরে গিয়েছিলো তার ভালোবাসা।

“আন্টি আন্টি তুমি কথা বলছোনা কেনো?”

ধ্যান ভাঙে মায়ার।

“হ্যা বাবা বলো”

লোকটি মাঝখানে কথা বলে,
“তুমি আমাকে নিয়ে আসতে পারতে আহান”

“চাচ্চু সরিতো।রাগ করোনা।এই আন্টিটা আমাকে বাচিয়ে দিয়েছে।থ্যাংক ইউ আন্টি”

“থ্যাংক ইউ মিস আমার ভাতিজাকে বাচানোর জন্য”

“না তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি একজন নাগরিক হিসেবে আর মানুষ হিসেবে আমার কর্তব্য পালন করেছি।বাবু তুমি অনেক কিউট কি নাম তোমার?” মায়া আহানের গাল হাত রেখে বলে।

“আহান মিষ্টি আন্টি।তোমার নাম?”

“মায়া।কিউটিপাই” হেসে জবাব দেয়।

“আন্টি তোমার হাসিটা খুব মিষ্টি”

“ওহ তাই?”

“হ্যা” মাথা ঝাকিয়ে জবাব দেয়।

এতক্ষণ তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো তার প্রাক্তনকে সে।মেয়েটা আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে আছে।চুলগুলো ঘন মোটার থেকে হালকা আর পাতলা হয়ে গেছে।যদিও খোপা করা তবুও বুঝা যাচ্ছে।আগে সবসময় চুল খোলাই রাখতো।কেনোনা তার খোলা চুল ভালো লাগতো আর সে ই মায়াকে বলেছিলো সবসময় চুল খোলা রাখতে।কিন্তু আজ মায়ার চুল খোপা করা দেখে হাসলো সে।গলার হাড় দেখা যাচ্ছে মায়ার।মেয়েটা যে এতটা পালটে যাবে ভাবেনি কখনো।আগের মতো সেই মায়াটা এখন আর মায়ার প্রতি জন্মায় না।

“চাচ্চু চাচ্চু আন্টিটার কোলে উঠি?”

“না!” এক প্রকার চিল্লিয়েই বলে সে।

“কিন্তু কেনো?”

“অপরিচিত কারো কোলে উঠতে নেই বাবা।আর তাছাড়া উনি কি মনে করবেন”

“আসো বাবা কোলে আসো তোমায় আমি চকলেট কিনে দেই খাবা?” স্মিত হেসে।

“কিন্তু চাচ্চু?” মাথাটা নিচু করে বলে আহান।

“দেখুন ভাইয়া আমি আপনার ভাতিজাকে খেয়ে ফেলবোনা।তাই নিশ্চিন্তে থাকুন।প্রয়োজন পড়লে আসুন আমাদের সাথে।আসো বাবু” বলেই আহানকে কোলে তুলে নেয় মায়া।

এদিকে মায়ার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌছে যায় সে।মেয়েটা তাকে ভাইয়া ডাকলো কেনো?বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাই?নাকি বিয়ে করে ফেলেছে তাই?কিন্তু নাকে তো কোনো নাকফুল ছিলোনা।ছিলোনা হাতে চুড়ি।তবে কি সে আজও তার অপেক্ষা করে?বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসে?এসব ভাবতে ভাবতেই দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আহানদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে মায়া বাসায়।এতবছর পর কেনো দেখা পেলো আবার?ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে কান্নায় ভেঙে পড়ে মায়া।কেনো আবার ও তাকে কাদাতে তার সামনে এলো?নিজেকে তো শক্ত করেই নিয়েছিলো।আজ সে বড় একজন প্রফেসর।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।১ বছর ডিপ্রশনে ছিলো।১ বছর পর ওর জীবনে নতুন করে আলো ফুটায় ওর প্রিয় বান্ধুবী অহনা।ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।ধীরে ধীরে ওকে ডিপ্রেশন থেকে বের করিয়ে আনে।আর হয়ে উঠে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর জান।এভাবেই চলছিলো ওদের জীবন।তারপর পড়াশুনা শেষ করে জবের জন্য দুজন এপ্লাই করে। আর এক ই কলেজে প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ নেয়।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অহনা ছোট্ট করে একটা মেসেজ দেয় “প্লিজ বাসায় আয়। আই নিড ইউ রাইট নাও”।

মেসেজ দেয়ার পর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলে পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে করে।

অহনা মেসেজ পেয়ে জলদি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে মায়ার বাসার উদ্দেশ্যে।মিনিট বিশেকের পর হাজির হয়ে যায় ওর রুমে।এসে দেখে কপালে হাত গুজে আছে।যেটা দেখে ওর বুকটা ধুক করে উঠে।যখন মায়া ভীষণ কষ্টে থাকে ঠিক এইভাবেই কপালে হাত দিয়ে কাদে।এসব ভেবেই ওর কাছে এসে হাত সরিয়ে দেখে চোখে পানি।অহনাকে দেখে উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে ফেলে।

বিচলিত হয়ে পড়ে অহনা।আর বলে,

” মায়ু মায়ু!রিল্যাক্স।বল আমায় কি হয়েছে?”

মায়া কিছু না বলে কেদেই যাচ্ছে।

“আমায় না বললে আমি বুঝবো কি করে পাগলি?”

মায়া তাও কিছু বলছে।

“মায়া!বলবি তুই?” জোরে ধমক দিয়ে।

“সে এত বছর পর আমার সামনে ছিলো।কথা বলেছে।আমি আমি তাকে দেখেছি।সে কেনো আবার এলো আমার জীবন উলোট পালোট করতে?”

“আরাফ!”

To be continued…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে