বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০৪

0
1800

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_4_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

‘ আকাশ কোথায় যাচ্ছি আমরা? এটা তো আমাদের বাসার রাস্তা নয় তাহলে কোথায় যাচ্ছি?
‘ আর পাচঁমিনিট তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

আকাশ একটা কাজী অফিসের সামনে গাড়ি থামালো বর্ষা অবাক হয়ে বাহিরে তাকিয়ে
‘ আকাশ আমরা এইখানে কেন এসেছি? এটা তো কাজী অফিস।

আকাশ মাথাটা একটু ঝুকে নরম সুরে
‘ হ্যা ডিয়ার আমরা বিয়ে করবো আজ। তাই কাজী অফিসে আসলাম। সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে এখন শুধু আমাদের ভিতরে প্রবেশ বাকি।

বর্ষা অবাক হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কিছু বলতেও পারছে না আকাশ করতে কি চাইছে সেটাও বুঝতে পারছেনা। বিয়ে তো হচ্ছেই সবার মতামত নিয়ে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে। তাহলে এমন লুকিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করার মানে কি? আকাশ এমন কেন ভান করছে যেন আমি পালিয়ে যাবো এখনই বিয়ে না করলে।

‘ কি হলো বর্ষা? কি ভাবছো? নিশ্চয়ই ভাবছো বিয়ে তো হচ্ছে তাহলে এখন কাজী অফিসে বিয়ে করার কি দরকার।

বর্ষা মাথাটা উঁচিয়ে আকাশের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়

‘ তুমি ওইদিন কিভাবে এনগেজমেন্টের দিনে বিয়ে করবেনা বলে না করে দিয়েছিলে মনে আছে? আবার কখন কোন ডিসিশন নাও সেই ভয়ে তো আর আমি থাকতে পারিনা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আগে বিয়ে করে নেবো পরে নাহয় আবার অনুষ্ঠান করা হবে তোমার ইচ্ছে থাকলে। আমার এতো আয়োজন করে বিয়ে আয়োজিত করা একদমই ভালো লাগেনা। তাও রাজি হয়েছি তোমার ইচ্ছেতেই জমকালো আয়োজন করে বিয়ে হবে । এখন তোমার তো আমার ইচ্ছেও পূরণ করতে হবে তাই না?

‘ কিন্তু আকাশ এইভাবে বিয়ে করা ঠিক হবে না। সবাই তো ডেট ফিক্সড করেছেই তাহলে আবার এমন কেন করতে হবে? আব্বু শুনলে ভীষণ কষ্ট পাবে। আব্বুর অনেক শখ আহ্লাদ আছে আমার বিয়ে নিয়ে।

আকাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে চোখ একবার বন্ধ করে আবার খুলে

‘দেখো তুমি এমনিতেই কিসব টেনশন করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছো। এমন ভাবে চলতে থাকলে তো হবে না। বিয়ে হয়ে গেলে তোমার টেনশন কম থাকবে আর আমারো। তুমি কাগজে পত্রে আমার হবে। এখন চলো অনেকক্ষন ধরে সবাই অপেক্ষা করছে।
তোমাকে আমার বানাতে এইটুকু তো করতে হবেই। যার উপর একমাত্র আমার অধিকার থাকবে। ( মনে মনে)

আকাশ আর কিছু না বলে বর্ষার চোখে তীক্ষ্ণভাবে মননিবেশ করলো। বর্ষার চোখ ব্যথিত আর জানার আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।

তনিমা দাঁড়িয়ে আছে বাসায় যাওয়ার জন্য। সকালে কেমিস্ট্রি প্রাইভেটটা পড়া যমালয়ে যাওয়ার মতো লাগে। একে তো কেমিস্ট্রি কিছু মাথায় ঢোকে না দ্বিতীয়তো এতো সকালে উঠে পড়ার জন্য আসতে হিমশিম খেতে হয় হাজারটা। প্রায়শই মিস যায় প্রাইভেট। এখন আবার একটাও রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। হাটতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না। চোখে একরাজ্যের ঘুম। হঠাৎ একটা কার এসে ব্রেক কষে তনিমার কাছে। তনিমা ভয়ে দুইহাত পিছনে চলে যায়। এই বুঝি গাড়ি লাগিয়ে দিলো তনিমার শরীরে। গাড়ি থেকে দাঁত বের করতে করতে বের হয়ে এলো আকাশ যুবারের ছোট ভাই আফিফ যুবায়ের। তনিমা আফিফকে দেখেই রাগে কটমট করছে। আফিফ দাঁত কেলাতে কেলাতে তনিমার কাছে এসে

‘ আরে বেয়াইন সাহেবা যে।

তনিমা চোয়াল শক্ত করে
‘ আপনি কি সাতসকালে আমাকে উপরে পাঠিয়ে দেওয়ার নিয়ত করে বের হয়েছেন?
‘ নাউজুবিল্লাহ কি যে বলেন আপনাকে তো পারলে আমি বেধে রাখি আমার কাছে উপরে কেন পাঠাবো।

‘যেই ভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়েছেন আমার কাছে আপনার নিয়ত যে ভালো ছিলো না স্পষ্ট বোঝা যায়।
‘ আমার গাড়ির হাত খুবই পাকা এতো সহজে কাউকে গাড়ি লাগায় না।

‘ যাই হোক এখানে কি করছেন?

আফিফ এদিক সেদিক তাকিয়ে
‘ আপনাকে পাহাড়া দিতে এসেছি। ( শব্দ করে হেসে) জোক করলাম এই দিকে দিয়েই যাচ্ছিলাম দেখলাম আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, আর একা একটা পিচ্চি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভেবে লিফট দিতে আসলাম ।

এই ছেলেটাকে তনিমার একটু সহ্যও হয় না। তারপরও শুধু তনিমার পিছনে লেগে থাকে। মহোদয় যে এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন না আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তনিমার জন্য তনিমা বেশ ভালোই জানে।

‘ আমি তো আপনার সাথে যাবো না। যেহেতু কোন রুলস নেই আপনার সাথে আমার যেতেই হবে সেহেতু আমি যাবো না।
‘ আপনার তো আমার সাথে যেতেই হবে বেয়াইন সাহেবা। ভাবি হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছে তাই আপনার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা উচিত। আমার উরোজাহাজে উঠুন এখনই বাসায় পৌঁছে দেবো।

‘ আপনার এটা উরোজাহাজ নাকি মরুজাহাজ আমি ভালো করেই জানি। আমি উঠলে তো এটা চলতেই চায়না ঠেলাগাড়ির থেকেও স্লো চলে। পাঁচ মিনিটের রাস্তা দুই ঘন্টায় শেষ হয়। আবার পথে দুইশত বার নামেন।

‘ সেটাই তো আপনি বুঝলেন না বেয়াইন সাহেবা কেন……

‘ হয়েছে এতো প্যাঁচাল পারতে হবেনা চলুন।

তনিমা গাড়িতেই উঠেই ঘুমিয়ে যায় চোখে প্রচুর ঘুম থাকায়। আফিফ রিকশার মতো স্লো করে গাড়ি চালাচ্ছে আর তনিমাকে দেখছে। আসলে স্পিডে চালালে তো সাথে সাথেই পৌঁছে যাবে তনিমাকে আর দেখতেও পারবে না তাই স্লো গাড়ি চালায়।

অল্পকিছুক্ষণ হলো আকাশ আর বর্ষা বাসায় ঢুকে দেখে নাইম সাহেব ড্রয়িংরুমে বসে মেয়ের জন্যই অপেক্ষা করছে। বর্ষার চোখে মুখে অপরাধবোধ কাজ করছে। যে বাবা জন্ম দিয়ে মা ছাড়া একা একা মানুষ করেছে তাকে, সে বিয়ে করে এসেছে বাবাকে না জানিয়েই। একবার ইচ্ছে হচ্ছে বাবাকে জড়িয়ে ধরে সব বলে দিতে আবার বোধগম্য হচ্ছে সে তো বড় হয়ে গিয়েছে এখন কি ছোট বাচ্চার মতো কান্না মানায়?

নাইম সাহেব অশ্রুজড়িত চোখ নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে
‘ মা এখন ভালো আছিস তুই?

বর্ষা মাথা নিচু করে
‘ হ্যা আব্বু। আব্বু তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো।
‘ হ্যা বল।
‘ আব্বু আমরা

বর্ষার কথার মাঝে আফিফ আর তনিমা এসে বাসায় হাজির হয়।
‘ আপু কেমন আছিস এখন?
বর্ষা অল্প হেসে
‘ হ্যা ভালো আছি । আফিফকে কোথায় পেলি?
‘ রাস্তার মাঝে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখনই উনি আমায় দেখে গাড়ি থামালো।

আকাশ নাইম সাহেবের সামনে এসে
‘ আংকেল আমরা বিয়ে করে ফেলেছি কাজী অফিসে গিয়ে।

আকাশের কথা শুনে আফিফ তনিমা আর নাইম সাহেব তিনজনই ঝটকা খেয়েছে মনে হচ্ছে। নাইম সাহেবের চোখ সাধারণের চেয়ে একটু বড় হয়ে গেলো

নাইম সাহেব কপট রাগে
‘ মানে কি?
‘ আংকেল বর্ষা এইভাবে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে একা একা বাসায় থেকে। বিয়ের ডেট আসতে এখনো অনেক বাকি। ও আমাদের বাসায় গেলে সবার সাথে থাকলে সুস্থ আর ভালো থাকবে। তাই আমি হঠাৎ এই ডিসিশন নিলাম আপনাদের কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেললাম।

‘ তাই বলে তুমি বড়দের না জানিয়ে এতো বড় একটা ডিসিশন নিয়ে নেবে? আমার মেয়ে আমার মতামতের প্রয়োজন মনে করোনি?

‘ আংকেল আব্বুও জানে না৷

তনিমা নাইম সাহেবের কাছে গিয়ে
‘ আব্বু রাগ করছো কেন এমনিতেও তো ওদের বিয়ে হতোই। আগে হয়েছে তো কি হয়েছে। আমরা নাহয় একটা রিসেপশন রাখবো।

আফিফ আকাশের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে
‘ ভাইয়া কাউকে না বলেই বিয়ে করে নিলি? যাইহোক ভালোই হয়েছে আমাদের বাড়িতে নতুন মেম্বার যোগ হলো। নতুন ভাবি পেয়ে গেলাম।

আকাশ নাইম সাহেবের চেহারায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কষ্টের ছাপ। আকাশের ভীষণ ভালো লাগছে নাইম সাহেবকে ব্যথিত দেখে। আকাশ নাইম সাহেবকে উদ্দেশ্য করে আবার বলল

‘ আংকেল আমি বর্ষাকে নিয়ে যেতে চাই।
রিসেপশন নাহয় দুদিন পর দেওয়া হবে। আগে
বর্ষা পুরোপুরি সুস্থ হোক৷

🍁🍁🍁🍁🍁

আকাশ যুবায়েরের বাড়িতে বর্ষা পা রাখতেই আফিফ বললো
‘ ওয়েলকাম ভাবি আমাদের বাসায় তোমায় স্বাগতম।

নাইম সাহেব এই বাড়িতে ফোন করে সব বলায় আগেই ব্যপারটা সবাই জেনে যায় তাই নতুন করে আর কেউ অবাক হয়নি। বর্ষা ড্রয়িংরুমে যেতেই আকাশের মা মনিরা বেগম বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে
‘ এখন কেমন আছিস মা? হাসপাতালে যেতে পারিনি আকাশ মানা করেছিলো, আর বলেছিলো সকালে তোকে বাসায় নিয়ে আসবে। কিন্তু বিয়ে করে যে নিয়ে আসবে সেটা বলেনি হারামজাদাটা। যাইহোক তোকে এখানে আর বসাবো না তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে। তোর শশুর মশাই গিয়েছে বাজার করে আনতে তুই আসবি শুনে। আমি তোর পছন্দের খাবার বানাবো আজকে।

আকাশ বর্ষাকে নিজের রুমে নিয়ে যাওয়ার সময় বর্ষা দেখলো একটা রুমের দরজায় লেখা এই রুমে কেউ প্রবেশ করবেন না। বর্ষা একটু অবাক হলো কয়েকজন সদস্যই বাড়িতে কেই বা ঢুকবে? এমন লিখে রাখার মানে কি? লেখা গুলো একটা ছোট বাচ্চার হবে বোঝা যাচ্ছে। রুমের ভিতরেই বা কি আছে ?……….

চলবে……..

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে