বাড়িওয়ালার ছেলে পর্ব-০২

0
586

#বাড়িওয়ালার ছেলে
__ফাহিমা ফাইজা
#পর্ব –২
আমি ওকে পাস কা’টিয়ে চলে যেতে চাইলেও ও আমার হাত ধরে বসে। ভ’য়ে আমার রূহ কে’পে গেল। তারপর কানে কানে বলল, “তোমাকে ভালো’বা’সি আয়শা কেন বোঝ না?”
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত চ’ড়ের প্রতি’শো’ধ নিবে। কিন্তু তবুও আমার ভ’য় কাটছে না। ও উত্তর না পেয়ে বলল,“ আমি জানি তোমার মন খা’রা’প,ওই গাধাটার জন্য!”
আমি মাথা উচু করে ওর দিকে তাকালে থতমত খেয়ে বলে,“ না মানে.. ওই ছেলেটার জন্য। কিন্তু আমাকে কি একবার সুযোগ দেওয়া যায় না? আমি সারাজীবন অনেক ভালো’বাস’ব। সত্যি বলছি। ”
আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম, “ দেখুন, আপনার ওই ঘাড়ের ট্যাটু দেখলেই আমার মেজাজ গর’ম হয়ে যায়। আমার হাত ছাড়ুন। আর এসব ফা’ল’তু বকে লাভ নেই। ”
আসলে ওর আউটলুক টা ছিল অনেকটা এরকম যে বুক খোলা শার্ট আর ঘাড় থেকে বুক পর্যন্ত এবং দুহাত ভর্তি ফুটবল প্লেয়ারদের মত ট্যাটু। যেটা আমার একদমই পছন্দ না।তাই খো’চা মে’রে আমি ওকে এই কথা বলি।
যাই হোক ট্যাটুর কথা শুনে আদনান আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকল। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমার হাত ছেড়ে বলল,
– এটা কি বললে, এই ট্যাটু আমার কত প্রিয় জানো?
– আমার থেকেও?(আমি মুচকি হেসে বললাম)
–না মানে… তুমি যেমন এগুলাও তেমন।
–মানে বুঝলাম না?
– মানে বোঝার বয়স হয়নি তোমার বে’বি!
– আজব তো! ( রেগে গিয়ে) আমি এখনি আপনার আব্বুকে ফোন দিব!
– ফোন দেও মিস্টার রায়হানকে, তিনি জানেন তার ছেলে ফিরবে না বুঝলে। ( আসলে তার বাবা এই আশা বহু আগেই এই আশা ছেড়ে দিয়েছেন যে তার ছেলে মানুষ হবে। তাই তিনি তার মত থাকেন,ছেলে তার মত থাকে!)
– আপনি সত্যিই একটা থা’র্ড ক্লাস লোক!
– কি করব বল। তোমার পিছনে ঘুরতে ঘুরতে আমি এমন হয়ে গেছি।
–ব্যাস অনেক হয়েছে। আমি যাচ্ছি।
বলেই আমি গেটের দিক হাটতে লাগলাম রাফাদের নিয়ে আসার জন্য।
তো ওইদিন অনেক বলে কয়ে চাচাকে রাজি করালাম রাফা দের ঢুকতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি বললেন এরপর থেকে আর ঢুকতে দিবেন না। তাই আমি ওদের দেরি করে আসতে মানা করলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। পরের দিন আবারও ওরা একই কান্ড ঘটায়। তবে এ কাহিনি আমি জানতাম না। কারন আমি ১১ টার দিকে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। সকালে কলেজ যাওয়ার সময় দারোয়ান চাচা আমাকে বললেন। তার কথামতে যা বুঝলাম তা হলো আদনান ওদেরকে ঢুকতে দিয়েছে। আদনান না বললে তিনি ওদেরকে ঢুকতে দিতেন না। শুনে আমি খুব অবাক হলাম।

তো সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি রাফা আর এশা বাসায়। আমি বললাম,“ কিরে তোরা,এত তাড়াতাড়ি আজ? ব্যাপার কি?”
রাফা এশার দিকে একবার তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,“ আরে.. আমরা..কি আগে আসতে পারি না.. নাকি!”
এশাও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,“সেইতো আমরা আজ আগে আগেই চলে এসেছি। এতে অবাক হওয়ার কি?”
শায়লা হাতে করে পিজ্জা নিয়ে আসল আর জোরে হেসে দিয়ে বলল,“ অবাক হওয়ার অনেক কিছুই বাকিরে দোস্ত! দেখ ওদের মত কি’পটা আজ পিজ্জা নিয়ে এসেছে। নিশ্চয়ই কোনো কাহিনি আছে! আর তার সাথে তোর জন্য অনেক গিফটও এনেছে।”
শায়লার কথা শুনে আমার সন্দেহ হলো। কেননা যারা কিনা বাসা ভাড়ার টাকাটা দিতে যেয়ে হাজার বাহানা করে তারা এগুলা কেন আনতে যাবে? তাও আবার আমার জন্য। কিন্তু আমি মানুষ হিসেবে অত চালাক নই। আমার চেহারার মত আমিও মোটামুটি বুদ্ধিমতি। কিন্তু নিখুত বুদ্ধি আমার নেই। তাই চট করে কিছু বুঝে উঠতে পারিনা। তো পিজ্জা খাওয়ার পর আমরা সোফার রুমে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। বহুদিন পর আড্ডা দেওয়া হচ্ছে। কথা হচ্ছিলো আমার জন্য আনা গিফট গুলো নিয়ে,পড়াশোনা নিয়ে,পরিবার নিয়ে ইত্যাদি। কথা বলতে বলতে রাফা বয়’ফ্রেন্ড এর কথা উঠায়। আমাদের মধ্যে শুধু শায়লারই কোনো প্রে’মিক ছিল না। তাই এ বিষয়ে সে শুধু একটু মুচকি হাসি ছাড়া তেমন প্রতিউত্তর করে না। আর রাফা আর এশার ন্যাকামি দেখে মাঝে মাঝে স’জো’রে হাসে। হঠাৎই রাফা ইউসুফের কথা উঠায়। ওর নামে নানা দূ’র্নাম করতে থাকে এই আরকি। ওদের কথা শুনে আমার মনটা খা’রা’প হতে শুরু করে। তাই শায়লা বুঝতে পেরে ওদেরকে চোখ দিয়ে ইশারা করে থামতে বলে। ওরা চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ওরা আদনানের প্রসংশা করতে শুরু করে।
রাফা– আরে দোস্ত যা বলব,আদনান ভাইয়া যে কি ভালো। হ্যা একটু ব’খা’টে তবে ব্যাবহারটা সেই।
এশা– হ্যারে রাফা ঠিক বলেছে। ভাইয়ার চেহারাটাও কিন্তু সেই। আচ্ছা আয়শা তুই ওনার সাথে রিলে’শ’নে কেন যাচ্ছিস না? এত বড়লোকের ছেলে, তোর জন্য পুরো পা’গ’ল! ভাই আমরা হলে কবে শুরু করে দিতাম!
রাফা– একদম ঠিক ভাই। তুই আর কোনো কথা না ভেবে রিলে’শ’নে চলে যা। বাই দা ওয়ে ভাইয়ার চয়েস কিন্তু ভালো বল এশা। শাড়িটা কিন্তু সেই হয়েছে।
এশা রাফার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়। যেন রাফা গোপন কথা বলে ফেলেছে। এবার আমার সন্দেহের তী’র একদম ঠিক নিশানায় লাগলো। আমি যা ভেবেছিলাম তাই। আমি বসা থেকে উঠে বললাম, “আমি জানতাম, তোরা নিশ্চয়ই কোনো ফন্দি এটেছিস। তবে তোদের যে সব দোষ তা না। ওই আদনান, হ্যা ওই আদনানের বাচ্চা তোদের এই কাজ করতে বলছে তাই না? ”
ওরা দুজন দুজনের দিকে তাকালো আর জো’রে হেসে ফেলল। আমার রাগ আরও বেড়ে গেল। তাকিয়ে দেখি শায়লাও হাসছে। আমি আবারও বলতে শুরু করলাম,“ খুব বাড় বেড়েছিস তাই না। তোদের আব্বু আম্মুকে ফোন দিতে হবে বুঝেছি।”
এবার রাফা আর এশা হাসি বন্ধ করে সিরিয়াস হয়ে কথা বলল। ওদের কথা অনুযায়ী বুঝতে পারলাম এসব গিফট মানে শাড়ি চুড়ি চকলেট পিজ্জা সব কিছু আদনান পাঠিয়েছে আমার জন্য। আর ওই যে দারোয়ান চাচা বলেছিল ওদেরকে আদনান ঢুকতে দিয়েছিল, আসলে আদনান ওদেরকে এর বিনিময়ে আমাকে রাজি করাতে বলেছিল। কিন্তু ওরা নাকি বলেছিল ওর সাথে আমাকে যায় না। কারণ ও হলো বেকার ব’খা’টে ছেলে আর আমার ফিউচার অনেক ব্রাইট। কিন্তু আদনান ওদের ভয় দেখায় যে যদি আমি রাজি না হই তাহলে ওদের আব্বু আম্মু কে ফোন করে ওরা যে রাতে দেরি করে আসে তা বলে দিবে। এজন্য ভয়ে ওরা এরকম করছিল। এমনকি গিফটও নিতে চায়নি। কিন্তু মা বাবা জানতে পারলেতো ওদের পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দিবে। এজন্য ওরা আদনানকে কথা দেয় যে যেকোনো মূল্যে আমাকে রাজি করিয়ে ছাড়বে। কিন্তু বেচারীরা আমাকে রাজি তো করাতে পারলই না উলটো আরও আমার কাছে ধরা পড়ে গেল। আমি কিছুক্ষণ ওদের কথা শুনে চুপ করে বসে রইলাম আর মেয়েদুটোর বোকামির কথা ভাবতে লাগলাম৷ এর সাথে ভয়ও হতে লাগল। কারণ ওদের দেরি করে আসার সুযোগ নিয়ে আদনান আরও অনেক কিছু করতে পারে। আমি এখন বুঝতে পারছি আমার ফোন নাম্বারটাও ওরাই আদনানকে দিয়েছে। শায়লাও ওদেরকে ব’কতে শুরু করল। কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে আমি রাফাকে বললাম,“ তুই কালই এসব শাড়ি-টারি ওকে ফেরত দিয়ে আসবি। আর পিজ্জার দাম কতরে? যা দাম কাল সেই টাকা ওকে আমি দিয়ে দিব।”
রাফা এবার রেগে গিয়ে বলল,“ এসব কি কথা! আমি ফেরত দিলে উনি তো রে’গে যাবেন। আর আমাদের বাবা মাকে সব বলে দিবে!”
এশাও সুর মিলিয়ে বলল,“ তাইতো, আর এটাতো গিফট। তুই এমন ভাব করছিস যেন ইউসুফের কাছ থেকেও তুই জীবনে কোনোদিন গিফট নিস নাই। ”
আমি চোখ বন্ধ করে হালকা গলায় বললাম,“দেখ, ইউসুফকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু…”
আমাকে থামিয়ে রাফা বলল,“ তো আদনানকেও ভালোবাস? সমস্যা কি? একটা সুযোগ তো দিতে পারিস?”
শায়লা এবার বলল,“ দেখ রাফা, আয়শা একবার বেই’মানির শি’কার হয়েছে। এখন আবারও হবে নাকি? এসব প্রে’মের ফাদে না পড়াই ভালো। সব ছেলেরাই একরকম।”
“কিন্তু শায়লা,আমাদের কি হবে? উনি যদি…”
আমি ওকে থামিয়ে বললাম,“ তুই নিশ্চিন্তে থাক। তুই শুধু ওকে সব ফেরত দিবি। বাকিটা আমি সামলাবো। বলবি আমি ওনার সাথে দেখা করতে চেয়েছি। ঠিকআছে? এবার হ্যাপি?”
রাফা আর এশা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,“ওকে, তুই যা বলছিস তাই করব”
.
পরের দিন আদনান সাহেব হাজির। না না কলেজের সামনে না। আমাদের ফ্লাটের সামনে। বাসায় কেউ ছিল না। আমি সবেমাত্র কলেজ আর টিউশনি শেষ করে এসেছি। ওরা এখনো আসেনি। কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেখি আদনান দেয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম, “ এটা দেখা করার জায়গা? কলেজের সামনে গেলেই হতো।”
“ শাড়ি পছন্দ হয়নি এটা বললেই পারতে, এত কাহিনির কি দরকার ছিল?”
বলেই সে আমার দিকে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল এগিয়ে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দিয়ে বললাম,“ আরে ভাই,আপনি কি পাগল? আমি কখন বললাম যে আমার শাড়ি পছন্দ হয়নি? আমি অন্য কারওর কাছ থেকে বিনা কারণে উপহার নেই না।”
– তো ফুল গুলো নাও।
– না,এটাও উপহারের মধ্যে পড়ে।
– তুমি এত বেশি বুঝো কেন এত কম বয়সে?
– কম বয়স হয়নি। ঢাকায় আছি আজ দুই বছর হলো। আর এখানে বেশি বুঝার কি?
– হাহাহা, মাত্র দুই বছর! আর আমি যে ছোট বেলা থেকে আছি।
– এজন্যই তো এই অবস্থা!
– কী অবস্থা?
আমি আর কথা না বাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে গেলাম। উনি হাত দিয়ে আটকে দিয়ে বললেন,“ এটা কি বেয়া’দবি, আমার কথার উত্তর না দিয়ে পালাচ্ছো কেন?”
– কিসের উত্তর?
– ওই যে?
– কি?
– আই লা’ভ ইউ!
– ধ্যা’ৎ!
বলে আবারও দরজা বন্ধ করে দিতে গেলে সে আবারো দরজা আটকে ধরল। এরকম ৭-৮ বার হলো। উফ এই ছেলে কি রে ভাই! একটুও বি’র’ক্ত হয় না! উপায় না পেয়ে ফুলগুলো নিয়ে মুচকি হেসে বললাম,“ পাগ’ল!”
– হুম,তোমার জন্য।
বলে সে দরজা থেকে হাত সরিয়ে নিল। আমি এবার দরজা আটকে দিলাম। সে বাইরে থেকে বলল,“ তোমাকে একদিন হ্যা বলেতেই হবে,আয়শা। তুমি লিখে রাখ”
পাগ’ল’টার পাগ’লামি শেষে আমি ভিতরে ঢুকলাম। মনে হয় ১০০ এরও বেশি গোলাপ হবে। আপন মনে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলাম। কিন্তু হাসতে হাসতে হঠাৎ কোথাও যেন হারিয়ে যাই। গোলাপ গুলো দেখে ইউসুফ এর কথা মনে পড়ে যায়। আমি মাথায় চা’টি মেরে ওকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের ব্রেনের কাজ তো মনে রাখা, ভুলে যাওয়া নয়। সেটাই সমস্যা। ফুলগুলো নিয়ে বেডরুমে যেতেই দেখি ফোনে অনেকগুলো মিসড কল। ব্যাক করতেই অচেনা মেয়েলি কণ্ঠস্বর ভেসে আসল। মেয়েটির পরিচয় জেনে আমি চমকে উঠলাম। মেয়েটি ছিল….
(চলবে..)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে