#বসন্তের_আগমনে💛🌸
#পর্ব_০৮
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
আরহান চলে যেতে ঈশা ভ্রু কুচকে বললো,
“কি ব্যাপার উনি তো একবারও বিয়ের কথা কিছু বললেন নাহ্!আর কি লোক রে বাবা।হবু বউকে এভাবে রেখে চলে যায়।কোথায় একটু সুন্দর করে কথা বলবে তা না চলে গেলো।উনাকে দিয়ে এর চেয়ে বেশি আর কি বা আশা করা যায়।উনি যখন বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না সো আমিও বলবো নাহ্।যাকগে এখন আগে ভালো করে পরীক্ষা দিতে হবে।”
ঈশা কথাটা বলে কলেজে চলে গেলো।
আরহান অফিসে এসে তার কেবিনে বসে কাজ করছে।হঠাৎ তার টেবিলের সামনে একজন এসে দাঁড়ালো।আরহান তাকিয়ে দেখলো হিয়া দাঁড়িয়ে আছে।আর হিয়াকে দেখেই ভ্রু জোড় কুচকে ফেললো।তারপরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“নক না করে আমার কেবিনে ঢোকার সাহস হয় কিভাবে আপনার?আর আপনি এই অফিসে এসেছেন কেনো?কতবার বারণ করেছি আপনাকে।আপনার কি একটুও লজ্জা নেই!”
হিয়া কিছু না বলে মুচকি হেসে চেয়ারে বসলো।তারপরে বললো,
“দেখো আরহান অনেক ক্যাচ করে আলভির দায়িত্ব তুমি নিয়েছো।আমাকে নিতে দেওনি।এই নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নেই।আলভি আমার কাছে না থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না।আমার তো শুধু তোমাকে লাগবে।”
আরহান রাগের কারণে দেয়ালে তার হাত ঘুষি মারলো।যার কারণে তার হাত বেশখানিকটা কেটে গেছে।আরহানের রাগে কাঁপছে।যা দেখে হিয়া ভয় পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।আরহানের হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।আরহান একটা টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে হিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে অফিসের বাইরে নিয়ে আসলো।অফিসের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আরহান হিয়াকে রাস্তায় দাঁড়া করিয়ে বললো,
“এরপরে আরেকদিন আমার অফিসে আসলে আপনার যে কি হবে তা আপনি নিজেও জানেন নাহ্!”
আরহান কথাটা বলে গাড়ি নিয়ে অফিস থেকে চলে গেলো।হিয়াও লজ্জায় তাড়াতাড়ি আরহান অফিসের সামনে থেকে চলে গেলো।আরহান গাড়িতে চালাতে চালাতে হঠাৎ দেখলো ঈশা আলভিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আরহান গাড়ি থামালো।গাড়ি থেকে নেমে ঈশার সামনে গিয়ে বললো,
“আপনি আলভিকে কোথায় পেলেন?”
ঈশা আরহানকে দেখে বললো,
“আরে আপনি!আরিশার ভার্সিটিতে নাকি কি াকজ আছে।তাই ও আলভিকে ছুটির পরে নিয়ে যেতে পারবে নাহ্।তাই আন্টিকে আমাকে বললো। আলভিকে একটা বাসায় পৌঁছে দিতে।”
“আপনাকে বলার কি দরকার আমি আছি তো!”
“আপনার নাকি অফিসে জরুরি মিটিং আছে।”
“হ্যাঁ আছে।তবে আজকে মিটিং অ্যাটেন্ড করার মুড নাই।”
ঈশা হঠাৎ আরহানের হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।সে দেখলো আরহানের হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে।ঈশা আলভিকে কোল থেকে নামিয়ে আরহানের হাত ধরে বললো,
“আরে হাতটা তো অনেকখানি কেটে গেছে।কিভাবে রক্ত বের হচ্ছে।কিভাবে কাটলো?”
“তেমন কিছু হয়নি।জাস্ট একটু কেটে গেছে।”
“একটু কেটে গেলে এতো রক্ত বের হয় নাকি!আচ্ছা ওয়েট।”
ঈশা তার কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে আরহানের হাতে বাঁধতে গেলে আরহান বাধা দিয়ে বললো,
“আরে এটা আপনার ব্যাপার করা রুমাল।এটা নোংরা তো।”
“এটা মোটেও নোংরা নাহ্।এটা আমি একটু আগেই কিনছি।আলভি জিজ্ঞেস করেন।”
“থাক আলভিকে জিজ্ঞেস করতে হবে না।আপনার কথাই আমার বিশ্বাস হয়েছে।যা খুশি করেন।খালি বেশি বকবক করবেন নাহ্!”
ঈশা আর কিছু না বলে মুখ ভেঙচি দিয়ে রুমাল দিয়ে আরহানের হাত বেঁধে দিলো।
“বাসায় গিয়ে হাতে মলম লাগিয়ে নিবেন।নাহলে প্রবলেম হতে পারে।”
আরহান ঈশার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
“আপনি কি ডক্টর নাকি?”
“না আপনার হব…….”
ঈশা এটুকু বলে থেমে গেলো।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,
“হব?এটার মানে কি?”
“এটার মানে আপনার মাথা।এখন বেশি কথা বাদ দিয়ে আলভিকে নিয়ে বাসায় যান।আমিও বাসায় যাই।”
ঈশা চলে যেতে গেলে আরহান পিছন থেকে ঈশার হাত ধরে ফেললো।ঈশা ভ্রু কুচকে পিছনে তাকালো।আরহান ঈশার হাত ছেড়ে বললো,
“আপনার কাস্টার্ডটা কালকে অনেক মজা হয়ে ছিলো।”
“তাই নাকি!”
“হুম।”
“আমিও শুনলাম আপনি নাকি কাস্টার্ড খুব পছন্দ করেন।তাই ভাবলাম আপনার নাম মি.অভদ্র বাদ দিয়ে মি.কাস্টার্ড রাখবো!”
“আমার নাম রাখা বাদ দিয়ে।আপনার বরের নাম রাখেন।”
ঈশা বিড়বিড় করে বললো,
“আমার বরের নামই তো রাখতেছি।”
আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিছু বললেন?”
ঈশা হাসি দিয়ে বললো,
“নাহ্।”
“আচ্ছা চলেন।”
“ঈশা অবাক হয়ে বললো,
” কোথায় যাবো?”
“আপনাকে ফুচকা খাওয়াবো।”
“আপনি জানলেন কিভাবে আমি ফুচকা পছন্দ করি?”
“এটা তো সিম্পল।সব মেয়েরাই ফুচকা পছন্দ করে।সেই হিসেবেই বলেছি।”
আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ঈশা এসে তার পাশে দাঁড়ালো।ঈশা ফুচকা অর্ডার দিলো।
ঈশা আরহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি ফুচকা খান?”
“হুম তবে বেশি ভালো লাগে নাহ্।”
“দেখেন আর যাই বলেন ফুচকা ভালো লাগে না এটা বলবেন নাহ্।”
“ওকে মিস.বকবকানি।আমি আর ফুচকা নিয়ে কোনো কথা বলবো নাহ্।”
ঈশা ভ্রু কুচকে বললো,
“কি ব্যাপার আজকে যে এতো ভালো বিয়েইভ করছেন?”
“কালকেও তো ভালো ব্যবহার করেছিলাম।তবে আজকে একটু বেশিই ভালো ব্যবহার করছি।কারণ সামনে আপনার বিয়ে।এখন আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করা ঠিক নাহ্।”
ঈশা মনে মনে বললো,
“ইশ্!উনার সাথে যে বিয়ে সেটা বলছেন নাহ্।তবে ভাবে ঠিকই বুঝিয়ে দিচ্ছে।যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটা খারাপও নাহ্।”
আলভি আরহানকে বললো,
“বাবাই আমি আইসক্রিম খাবো।”
“ওকে পাপাই চলো।কিনে দিচ্ছি।আচ্ছা মিস.বকবকানি আপনি ফুচকা খেতে শুরু করেন আমি আইসক্রিম নিয়ে আসতেছি।”
ঈশা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।ঈশা এক বেঞ্চে গিয়ে বসলো।ঈশা বসে বসে ফুচকা খাচ্ছে।হঠাৎ একটা ছেলে এসে তার পাশে বসলো।ঈশা দেখলো ছেলেটা আর কেউ না রুশান।রুশানকে দেখেই ঈশার রাগ উঠে গেলো।
ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,
“তুই এখানে কি করতেছিস?”
“তোকে দেখলাম একা একা বসে থাকতে।তাই আমি এসে তোর পাশে বসলাম।”
“তোকে এসে কেউ আমার পাশে বসতে বলেনি।আমার হবু বর আছে আমার পাশে বসার জন্য।সো তুই এখান থেকে চলে যা।”
“ওহ্ তার মানে জিজু এখানে আছে।আচ্ছা জিজুকে তাহলে দেখেই যাই।”
ঈশা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“থাপ্পড় দিয়ে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিবো।যা এখান থেকে।”
ঈশার চিৎকার শুনে আশেপাশের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান আলভিকে নিয়ে আইসক্রিম কিনে আনতে গিয়ে ঈশার চিৎকার শুনলো।সে মাঝপথে দাঁড়িয়ে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো ঈশা একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপছে।আরহান আলভির হাতে আইসক্রিম দিয়ে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“কি হয়েছে মিস.ঈশা?”
ঈশা কিছু বলার আগেই রুশান বললো,
“ওয়াও!জিজু তো দেখছি অনেক হ্যান্ডসাম।”
ঈশা রুশানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।রুশান দৌড় তাদের সামনে থেকে চলে গেলো।আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“উনি কি আমাকে জিজু বললেন?”
“হ্যাঁ আপনাকেই বলেছে।ওর বুঝতে ভুল হয়েছে।”
ঈশা কথাটা বলে ফুচকা খেতে বসলো।আর বিড়বিড় করে বললো,
“ন্যাকামি শুরু করেছে।এমন ভাব যে উনি জানেনই না উনার সাথে আমার বিয়ে।”
আরহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান হাসি দিয়ে,
“আপনারা নিজেদের খাবার খান।উনার দিকে তাকিয়ে থাকার দরকার নেই।”
ঈশা আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
“এই পাব্লিকগুলার কোনো কাজ নাই।কিছু হলেই মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।”
“আপনি যেভাবে চিৎকার করেছে দুই মাইল দূরে থেকেও শোনা যাবে।”
“মোটেও নাহ্।”
আলভি এসে ঈশার হাতে আইসক্রিম দিয়ে বললো,
“আন্টি এটা কাও।তুমাল মাথা টাড্ডা হয়ে যাবে।”
আলভির কথায় ঈশা হেসে দিলো।তারপরে আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,
“মাথা টাড্ডা হয়ে যাবে!”
#চলবে………………….
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]