#বন্ধন
পর্ব-৬
#tani_tass_ritt
ফ্ল্যাশব্যাক
আফজাল সাহেব তিতলির রুমে এসে চেয়ারটা টান দিয়ে বসলেন।সে ভেবে পাচ্ছেন না কিভাবে তিতলিকে কথা গুলো বলবেন।
তিতলি কিছুটা অবাক হয়ে বললো,”খালু,আপনার শরীর টা কি খারাপ?”
আফজাল সাহেব না বোধক ইশারা দিলেন।
আফজাল সাহেব কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন,”মা একটু এইদিকে আয় তো।”
তিতলি আফজাল সাহেবের পায়ের কাছে গিয়ে বসলো।তিতলির কেন যেনো মনে হচ্ছে খুব বড় কিছু হতে চলছে।এমনিতেও আজকের দিনটা যেনো কেমন লাগছে তার।
“আমি কি তোর বাবার মতো না?”
তিতলি বললো,”এমা এটা কেমন কথা? আপনি আমার বাবার থেকেও বেশি।”
আফজাল সাহেব তিতলির মাথায় হাত রাখলেন।
“তোর এই বুড়ো বাবাটা যদি আজ তোর কাছে কিছু চায় তুই দিবি?”
আফজাল সাহেবের বিনীত অনুরোধ শুনে তিতলির বুকটা ভয়ে ধক করে উঠলো।নানান কথা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।
তিতলি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,”অবশ্যই খালু।আপনার পুরো অধিকার আছে।আমি যদি আপনার জন্য কিছু করতে পারি নিজেকে ধন্য মনে করবো।”
আফজাল সাহেব কিছুক্ষন তিতলির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।এই নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে তিনি এতো বড় অন্যায় কিভাবে করবেন!আল্লাহ তাকে কোনো দিন ও মাফ করবেন না।কিন্তু সে যে নিরুপায়।
“একটু আগে রুবি ফোন দিয়েছিলো।”
তিতলি বললো,”ফুপি কল দিয়েছিলো।তো কি বললো?”
আফজাল সাহেবের চোখে পানি।
“মা রে মাহাদি বিয়ের জন্য না করে দিয়েছে।”
তিতলি আৎকে উঠলো।
“মানে খালু এগুলো কি বলছেন?”
“হ্যা রে মা। আমিও প্রথমে বিশ্বাস করিনি।আর মাত্র দুদিন বাকি বিয়ের।সবাইকে দাওয়াত দেওয়া শেষ।একটা মেয়ের বিয়ে ভাঙা মানে তো মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে যাওয়া রে!
তিতলির প্রচন্ড খারাপ লাগছে।সে রাইমাকে পছন্দ না করলেও হাজার হোক সে ও তো একজন মেয়ে।
” খালু আপনি প্লিজ শান্ত হন।আমরা কোনো না কোনো উপায় বের করবোই।আমি এক্ষুনি আপনার ছেলেকে ফোন দিচ্ছি।আর তাছাড়া আমি নিজে মাহাদি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।মাহাদি ভাইয়া তো আপুকে অনেক ভালোনাসে। সে ঠিক বুঝবে।”
“মাহাদির ফোন অফ।আমি নিজে ফোন দিয়েছিলাম।একমাত্র তুই পারিস এই অবস্থা থেকে সবাইকে উদ্ধার করতে।”
তিতলি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,”আমি কিভাবে করবো?”
আফজাল সাহেব বলতে গিয়েও থেমে গেলেন।তিনি নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললেন,” তিতলি মা তুই অভ্র কে বল না রাইমাকে বিয়ে করতে?তুই যদি না পারিস আমি বলবো।কিন্তু প্লিজ তুই আমাকে সাহায্য কর না অভ্রকে রাজি করাতে।”
মূহুর্তেই তিতলির সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। সে স্তব্ধ হয়ে গেলো।খালু এগুলো কি বলছেন! এর থেকে ভালো হতো সে তিতলিকে তার জান টাই দিয়ে দিতে বলতো।
তিতলি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,”মানে! ”
“হ্যা রে মা। এছাড়া যে আর কোনো রাস্তা নেই।বিয়ে ভাঙা তো একটা মেয়ের জন্য অনেক বড় অপমানের এবং পরিবারের জন্য ও।তুই আমাদের পরিবার টাকে বাচা।তুই ই পারবি অভ্রকে রাজি করাতে।আমি তো তোকে সবসময় বাবার মতো আদর দিয়েছিরে।তুই তোর বাবার জন্য এতোটুকু উপকার কর মা।”
তিতলি, আফজাল সাহেবের কাছ থেকে সরে বসলো।তার মাথা ঝিম ঝিম করছে। সে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা।সে কিভাবে এটা করবে।
“মারে তোর বাবা যদি আজ পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য কিছু চাইতো তুই দিতি না রে? আমাদের উদ্ধার কর!”
তিতলি চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।তার ভেতরে কি চলছে উপর দিয়ে বোঝার ক্ষমতা কারো নেই।আফজাল সাহেব বুক ভরা আশা নিয়ে তিতলির দিকে চেয়ে আছে।এই বুঝি তিতলি হ্যা বলবে।
“ঠিক আছে খালু।আপনি যা বলবেন তাই হবে।”
আফজাল সাহেবর চোখ খুশিতে চকচক করতে লাগলো।
“তোর এই ঋন আমি কোনো দিনও শোধ করতে পারবোনারে।”
তিতলি মলিন হাসি দিয়ে বললো,”আশা করি আমি তোমাদের ঋণ শোধ করে ফেলতে পারবো।” বলেই ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।
তিতলি ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অভ্রের মিসকল। তিতলি সজোরে ফোনটা আছার মারলো।তার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।তার বুকে কেমন যেনো চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।শ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।এই বুঝি জানটা বের হয়ে যাবে।তার মনে হচ্ছে এখন মরে গেলেই সে বাচতে পারবে।অভ্রের সাথে অন্য কারো কথা ভাবতেও সে পারে না।আর আজ তাকেই বলা হচ্ছে সে যেনো অভ্রকে দিয়ে দেয়।তার নিজেকে জোকার মনে হচ্ছে।সে আর থাকতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।রুমের দরজা আটকানো ছিলো বলে কেউ তিতলির কান্না বাহিরে থেকে শুনতে পেলোনা।
বর্তমান
তিতলি আরো কিছু বলতে যাবে কিন্তু নুহাশ তাকে থামিয়ে দিলো।তার যা বুঝার বুঝা হয়ে গিয়েছে। এর আগে সে আর শুনতে চায়না।
“তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।আমি সব বুঝে গিয়েছি।”
তিতলি চোখ মুছতে মুছতে বললো,”এর পর যে আরো অনেক কিছু হয়েছে।”
“হলে হয়েছে।তোমাকে ওগুলো মনে করে কষ্ট পেতে হবে না। তোমার উচিৎ এগুলো ভুলে যাওয়া।”
তিতলি একটু হেসে বললো,”ভাববেন না এখন আমি কষ্টে মরে যাচ্ছি।আমার তো মনে হচ্ছে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন।”
নুহাশ আমতা আমতা করে বললো,”না মানে আসলে। আপনি অন্য কারো জন্য কাঁদছেন আমার কেমন যেনো জ্বলছে।”
তিতলি এবার শব্দ করে হেসে ফেললো।
“আপনি আসলেই একটা কিউট।তবে ধন্যবাদ।”
“ধন্যবাদ কেনো?”
“আপনি আমাকে জীবনের মানে বুঝিয়েছেন।এখন আমি ক্লিয়ার আমি কি করবো।”
নুহাশ হাসলো।
তারা উঠে দাড়ালো। যে যার যার গন্তব্যে যাওয়ার সময় এসে গিয়েছে।তিতলি হুট করেই নুহাশকে জড়িয়ে ধরলো।নুহাশ তিতলিকে ধরলোনা।তার চোখের কোনায় জল চিকচিক করছে।তিতলি নুহাশ কে ছেড়ে তাকে বিদায় জানিয়ে সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।নুহাশ তিতলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
নুহাশ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,”আল্লাহ তোমার লিলা খেলাটা আমার সাথেই খেলতে হলো।”
এইদিকে অভ্র বাসা থেকে বেরুনোর পর রাইমা ফোনটা হাতে পেয়েছে।সে মাহাদিকে কলের উপর কল দিয়েই যাচ্ছে।কিন্তু মাহাদি ফোন রিসিভ করছেনা।মাহাদি যদি অভ্রকে সব সত্তিটা বলে দেয় তাহলে! রাইমা আর ভাবতে পারছে না।
তিতলি বাসায় আসার পর লেটার টা নিজের রুমে দেখে বেশ খুশি হয়েছে।তার আজ মন বেশ ফুরফুরে। অনেক্ষন যাবৎই সে অভ্রকে খুঁজছে।কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।তিতলি অভ্রকে না পেয়ে সালমা বেগমের রুমে গেলো।
সালমা বেগম তখন পান চিবুচ্ছিলেন।তিতলিকে দেখে বললেন,”আরে তিতলি মা। আমার কাছে আয়।”
তিতলি যেয়ে সালমা বেগমের কোলে মাথা রাখলো।
সালমা বেগম তিতলির মাথায় হাত বুলোচ্ছেন।
“খালামনি তুমি তোমার বলেছো? খালু যে আমায় বলেছিলো আমি যাতে তোমার ছেলেকে রাজি করাই রাইমা আপুকে বিয়ে করতে?”
সালমা বেগম কোনো উত্তর দিলেন না।
তিতলিও আর কথা বাড়ালো না এটা নিয়ে।
“খালামনি আজ যদি আমি তোমার কাছে কিছু চাই তুমি দিবে?”
“হ্যা বল। তোর কি লাগবে?”
তিতলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”যদি বলি আমার তোমার ছেলেকে চাই।”
সালমা বেগম স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
চলবে….
(কেমন লাগছে আপনাদের জানাবেন।