বন্ধন পর্ব-৫

0
1316

#বন্ধন
পর্ব-৫
#tani_tass_ritt

“আমার ছোটবেলাটা কেটেছে বেশ অন্যরকম।বাবা মায়ের সাথে আমার তেমন কোনো স্মৃতি নেই।থাকবেই বা কি করে! বুঝ হওয়ার আগেই তো তারা আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে।আমার মায়েরা দুবোন ছিলেন।বাবা মায়ের মৃত্যুর পর খালা খালুই আমাকে তাদের কাছে নিয়ে আসে।ধীরে ধীরে শুরু হয় আমার বড় হওয়া।
প্রথম প্রথম তো বুঝতামই না কিছু।কিন্তু ধীরে ধীরে যখন বড় হতে থাকি তখন বাবা মায়ের জন্য মন কেমন কেমন যেনো করতো।খালা খালু আমাকে যথেষ্ট আদর দিয়েছেন।তারপরও কোথাও একটা শূন্যতা থেকেই গিয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই আমার খুব কাছের মানুষ ছিলো অভ্রদা।ও আমার থেকে ৫ বছরের বড় হলেও আমার সাথে একদম বাচ্চাদের মতো খেলতো।আমাকে ও নিজের পুতুল বলে ডাকতো।”

নুহাশ বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে তিতলির কথা।

“ছোটবেলা থেকেই অভ্রদা আমার জন্য বেশ পসেসিভ ছিলো।প্রথম প্রথম এগুলো না বুঝলেও ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করি।তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।স্কুলে থেকে একবার বাসায় ফিরেছিলাম এক এলাকার ভাইয়ার সাথে।অভ্রদা এটা দেখে সেই কি রাগারাগি।এর পর থেকে সে ই আমাকে নিয়ে যেতো নিয়ে আসতো।আর যেদিন সে না যেতে পারতো খালাকে পাঠাতো।
আমার প্রতি সে প্রচুর কেয়ারিং ছিলো।আমি যখন যা চেয়েছি বলা মাত্রই সে হাজির করে দিয়েছে। এভাবেই চলছিলো আমাদের দিনগুলি।বেশ সুন্দর ছিলো সব।অভ্রদাকে ছাড়া আমি কিছুই বুঝতাম না।

তখন আমি ক্লাশ ১০ এ।একদিন বাসায় রাইমা আপু আসে।এর আগেও রাইমা আপু অনেকবার এসেছে।অভ্রদার থেকে দুবছরের ছোট হওয়ায় তাদের মাঝে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো।কিন্তু রাইমা আপু অভ্রদার সাথে হেসে হেসে কথা বললে আমার যেনো কেমন লাগতো।খুব রাগ হতো।খালি মনে হতো অভ্রদা আমার।তো সেদিন রাইমা আপু বাসায় ঢুকেই অভ্রদাকে জড়িয়ে ধরে।এটা দেখে আমার তো পুরো মাথাই ঘুরে যায়।সেদিন যে কি কান্নাটাই করেছিলাম।মনে হচ্ছিলো এই বুঝি ওকে আমার থেকে কেউ নিয়ে যাবে।সেদিন রাগ করে খাবার ও খাইনি।

রাত তখন ২ টা কি ৩ টা বাজে।অভ্রদা আমার রুমে আসে। আমি তখন বারান্দায় দাড়িয়েছিলাম।সে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে।এই প্রথম সে আমার এতো কাছে এসেছিলো।আমার মনে হচ্ছিলো আমি অন্য কোনো দুনিয়াতে হারিয়ে যাচ্ছে।সেদিন অভ্রদা প্রথম আমায় ভালোবাসি কথাটা বলে।নিমেষেই সব অভিমান যেনো দূর হয়ে যায়।আমি শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরি।”

এতোটুকু বলেই থেমে যায় তিতলি।নুহাশ খুব ভালো করে লক্ষ করছে তিতলিকে।মেয়েটার চোখ আনন্দে চকচক করছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে আজ ও ঐ দিনটা তিতলির জন্য কতটা স্পেশাল।

“সেদিন থেকে আমাদের এক নতুন পথ চলা শুরু হয়।এতোদিন তো যা ছিলো সব মনে মনে।এবার তা প্রকাশ পেতে থাকে।প্রতিটা দিন যেনো আমার জন্য স্বপ্নের মতো ছিলো।খুনশুটি করেই সারাদিন কাটতো আমাদের।কখনো খালা খালুর চোখের আড়ালে রাতে এসে আমার রুমে বসে থাকা।একসাথে গল্প করা। সব কিছু অনেক সুন্দর যাচ্ছিলো।

একদিন আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম।নদীর ধারে হাত ধরে হাটছিলাম। ঐদিন রাইমা আপু আমাদের দেখে ফেলে।তারপর থেকে শুরু হয় সমস্যা।সে এবার বাসায় আসা আরো বাড়িয়ে দিলো।আমাকে তো দুই চোখে দেখতে পারতোনা। উঠতে বসতে আমায় খোটা দিতো।রাইমা আপু খালুর একমাত্র বোনের মেয়ে হওয়ায় আমি চাইলেও কিছু বলতে পারতাম না।তাছাড়া রাইমা আপুর বাবা না থাকায় সবাই তাকে অনেক বেশি আদর করতো।আর এই সুযোগ টা কাজে লাগাতো সে।

যখন তখন এসে অভ্রদার রুমে চলে যেতো। সে রুমে থাকাকালীন আমাকে রুমেও যেতে দিতোনা।অভ্রদা তাকে অনেক কথা শুনিয়েছে এর জন্য। কিন্তু কে শুনে কার কথা। প্রতিদিনই একটা না একটা ঝামেলা পাকাবেই সে।এভাবেই কাটতে থাকে দিনগুলো।

একটা সময় রাইমা আপু নিজের থেকেই চুপ হয়ে যায়।অভ্রদা আর তার মাঝে অনেক বড় একটা ঝামেলা হয়েছিলো তারপর থেকে রাইমা আপু আর আসেনা বাসায়।আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগও করেনা।আমরা আমাদের মতো থাকি।আমাদের মাঝে ভালোবাসার কমতি ছিলোনা কোনোদিনো।খালা খালু ও ব্যাপার টা বুঝতো কিন্তু সরাসরি কিছু বলতোনা।

প্রায় অনেকটা সময় কেটে যায়।আমার পড়ালেখাও শেষের দিকে।আর অভ্রদাও খুব ভালো একটা জব করে।আমরা এবার বিয়ের প্ল্যানিং শুরু করি।

এর মাঝে একদিম খবর আসে রাইমা আপুর বিয়ে মাহাদি ভাইয়ার সাথে।মাহাদি ভাইয়া রাইমা আপুর মায়ের বান্ধুবির ছেলে।রাইমা আপুর বিয়ে শুনে আমি বেশ খুশিই হই।ভেবেছিলাম রাইমা আপুর বিয়ের পর পর ই অভ্রতা খালা খালুকে আমাদের কথা বলবে।”

কিন্ত ভাগ্য যে অন্য কিছুই লিখে রেখেছিলো।রাইমা আপুর বিয়ের ঠিক দুদিন আগের ঘটনা।সেদিন ছিলো প্রচন্ড ঝড়।আমি রুমে বসেছিলাম।আমি তখনো জানতাম না এই ঝর আমার জীবনের ঝর।মনে কেমন যেনো কু ডাকছিলো।অভ্রদাও বাসায় ছিলোনা।বৃষ্টির জন্য বন্ধুর বাসায়ই থেকে গিয়েছিলো।”

তিতলি এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো।তার ঠোঁট কাঁপছে।নুহাশ তিতলির হাতের উপর হাত রাখলো।মেয়েটার এমন কান্না দেখে কষ্ট হচ্ছে নুহাশের।নুহাশের এখন অনেকটা জুড়ে যে তিতলি।

এইদিকে অভ্র খামটা তিতলির টেবিলের উপর রেখে নিজের রুমে যায়।রাইমা তখন কাপড় ভাজ করছিলো।
অভ্রকে দেখেই রাইমা বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে।
অভ্র খুব শান্তভাবে রাইমাকে বলে,”মাহাদির নাম্বার টা আমাকে দাও তো।”
রাইমা হকচকিয়ে যায়।তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।
“মানে কি? মাহাদির নাম্বার কেন লাগবে তোমার?”আমতা আমতা করে বলে রাইমা।

অভ্র আবারো বললো,” মাহাদির নম্বর টা দাও।”
ভয়ে রাইমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।কেনোনা মাহাদি এবং অভ্র মুখোমুখি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

অভ্র টেবিলের উপর থেকে রাইমার ফোনটা নেয়।রাইমা দ্রুত তার ফোনটা নেওয়ার জন্য আসলেও লাভ হয়না।কেনোনা অভ্রের শক্তি রাইমার থেকে অনেক বেশি।অভ্র রাইমার ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

এইদিকে তিতলির কান্না কিছুটা হলেও কমেছে।সে আবারো বলতে শুরু করে।
“সেদিন রাতে খালু আমার রুমে আসে।খালুকে দেখে কেমন যেনো বিদ্ধস্ত লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো এই তার উপর দিয়ে খুব বড় একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে।”
চলবে……

(কেমন হয়েছে জানাবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে