বন্ধন পর্ব-৪

0
1113

বন্ধন
পর্ব-৪
#tani_tass_ritt

অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিতলির দিকে।তার কেমন যেনো ঘোর কাজ করছে।অভ্র আলতো করে তিতলির চুলগুলো তার কানের পেছনে গুজে দিলো।অভ্রের স্পর্শে তিতলি কেঁপে উঠলো।
তিতলি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,”তুমি এগুলো কি করছো? প্লিজ এখান থেকে যাও।তা না হলে আমি…”
অভ্র তিতলির মুখে চেপে ধরলো।
“চুপ একদম চুপ।তোরা সবাই অনেক বলেছিস। এবার আমি বলবো।তোরা পেয়েছিস টা কি হ্যা?যার যা ইচ্ছে তাই করে যাবি।আমাকে কি তোদের পাপেট পেয়েছিস? আমার ফিলিংস এর কি কোনো মূল্য নেই তোদের কাছে? বাকি সবার কথা আমি বাদ দিলাম।তুই আমার সাথে এটা কিভাবে করলি?কি ভেবেছিলি আমি কিছু জানবো না? তুইতো সবটা জানতি তাইনা? তাও কেন এমনটা করলি?তোদের এইসব প্ল্যানিং এর মাঝে আমার জীবনটা শেষ করে দিলি রে!”
তিতলি চুপ করে দাড়িয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে।সে চাইলেও অভ্রের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।
অভ্র তিতলির দু গালে হাত দিয়ে বললো,”আমার সাথে এমন কেন করলিরে বল না!তোর কি একটুও বুক কাঁপে নি।”
তিতলি চুপ করে আছে।অভ্রের রাগ এবার আরো বেড়ে গেলো।সে সজোরে দেয়ালে ঘুষি দিতে লাগলো।অভ্রকে থামাতে চেষ্টা করছে তিতলি।কিন্তু অভ্রের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।আর উপায় না পেয়ে তিতলি অভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো,”প্লিজ তুমি পাগলামি করোনা।তুমি একটু বুঝতে চেষ্টা করলো।”
অভ্র তিতলিকে নিজের কাছ থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখলো রাইমা দাঁড়িয়ে আছে।রাইমার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের রুমে যেয়ে দরজা আটকে দিলো।
তিতলি তখনো মেঝেতে বসে আছে।কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে।তার পাগল পাগল লাগছে।মনে হচ্ছে মরে মরে গেলে সে রেহাই পেতো।সেই ছোটবেলা থেকে সব কিছু হারাতে হারাতে এখন সে ক্লান্ত।এখন হারানোর কিছুই নেই আর।

রাইমা তিতলির সামনে যেয়ে বসতে বসতে বললো, “তুমি প্লিজ আমার আর অভ্রের মাঝ থেকে চলে যাও।”
তিতলি রাইমার দিকে না তাকিয়ে বললো,”কে কার মাঝে এসেছে আশা করি এটা তোমার অজানা নয়।”তিতলি রাইমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

★★★★★★
ঘড়িতে রাত ১ টা বেজে বিশ মিনিট।রাইমার চোখে ঘুম নেই।এমনিতেও সোফায় শুলে তার ঘুম হয় না।অভ্র আজকে বিছানায় ঘুমিয়ে পরেছে।রাইমাও ডাকেনি।থাক একটু ঘুমোক।হঠাৎ রাইমা গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেলো।শব্দটা অভ্রের কাছ থেকেই আসছে।রাইমা অভ্রের কাছে গিয়ে দেখলো সে ঘুমের মাঝে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে।রাইমা আলতো করে অভ্রকে ধাক্কা দিতে গিয়ে টের পেলো অভ্রের শরীর গরম।অস্বাভাবিক গরম।রাইমা ভয় পেয়ে গেলো।বৃষ্টিতে ভিজলেই অভ্রের ভয়ানক জর আসে।এর আগেও এমন হয়েছে।রাইমা জলদি করে ঠান্ডা পানি আর একটা রুমাল নিয়ে এলো অভ্রকে জল পট্টি দেওয়ার জন্য।অভ্রের পাশে বসে তার কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো।কিন্তু জ্বর কমাছেই না।এইদিকে অভ্র বিড়বিড় করে কিসব বলেই যাচ্ছে।রাইমা অভ্রের দিকে একটু ঝুকে শুনতে চেষ্টা করলো।
“তুই এমন কেন করলি?তুই এমন কেন করলি?”
অভ্র বার বার একটা কথাই বলে যাচ্ছে।রাইমা বুঝতে পারছে না অভ্র কার কথা কি বলছে।রাইমা আস্তে করে বললো,”তুমি কি বলছো এগুলো।উঠো প্লিজ।”
অভ্র চোখ খুলে একবার রাইমার দিকে তাকালো।তারপর আচমকাই রাইমার হাত ধরে টান দিয়ে তার বুকে টেনে নিলো।অভ্রের শরীরে জ্বর এতো বেশি রাইমার মনে হচ্ছে তার পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছে।তবুও তার অদ্ভুত এক শান্তি লাগছে।কেনোনা অভ্র এই প্রথম তাকে নিজ থেকে কাছে টেনেছে।
“তুই কোথাও যাবিনা।সব সময় আমার কাছে থাকবি। ”
রাইমা অভ্রকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,”কখনো আমি তোমায় ছেড়ে যাবোনা।”
“তোরা সব এমন বেইমান কেন রে?কেন আমার সাথে বেইমানি করলি?বলনারে পুতুল।”

অভ্রের মুখে শেষ শব্দটা শুনে রাইমা পুরো চুপ হয়ে গেলো।কেনোনা পুতুল সে তিতলিকে ডাকে।তার মানে অভ্র এতোক্ষন তিতলি ভেবেই তাকে জড়িয়ে ধরেছে।কষ্টে তার ভেতরটা তোলপার হয়ে যাচ্ছে।নিজের ভালোবাসার মানুষ নিজের স্বামীর মুখে অন্য কোনো মেয়ের নাম শুনে রাইমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

রাইমা ধীরে ধীরে অভ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।অভ্রের গায়ে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এই রুমে থাকতেই তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এই সব কিছু অন্য কারো।সে এখানে জোর করে নিজের অধিকার জমাতে এসেছে।

রাইমা গেস্টরুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।মাহাদির নম্বর ডায়াল করলো।একবার রিং বাজতেই মাহাদি ফোন রিসিভ করে ফেললো।সে যেনো রাইমার ফোনের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।

“আমি হেরে গিয়েছি মাহাদি।”
মাহাদি শব্দ করে হাসলো।
“বলেছিলাম না তুমি জিতে গিয়েও হেরে যাবে।”
রাইমা এবার কাঁদতে শুরু করলো।
মাহাদি কখনোই রাইমার কান্না নিতে পারতোনা।কিন্তু আজ কেনো যেনো তার খারাপ লাগছেনা।রাইমা যে কাঁদছে এতে তার কষ্টও হচ্ছে না।হয়তোবা তার মনটাই পাথর হয়ে গিয়েছে।
“এইসব কান্নাকাটি শুনাতে আমাকে ফোন দিয়েছো? তোমার জামাই কোথায় তার কাছে যেয়ে কান্না করো।”
রাইমা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।তার নিজেকে বড্ড তুচ্ছ্য লাগছে।
“এখন এভাবে ন্যাকামি করা কান্না তোমাকে মানায় না। তোমার এইসব কান্নাকাটি শুনলে এখন বিরক্ত লাগে।”
বলেই ফোনটা কেটে দিলো মাহাদি।
এই নিয়ে মাহাদি ২০ টা সিগারেট শেষ করেছে।রাইমা কল দিয়ে তাকে সিগারেট খাওয়ার নেশা টা আরো বাড়িয়ে দিলো।কিন্তু আফসোস আর একটা সিগারেটও অবশিষ্ট নেই।

★★★★★★★★★
নুহাশ, তিতলি মুখোমুখি বসে আছে রেস্টুরেন্টে। তিতলি বার বার পানি কাচ্ছে।সে বাসা থেকেই ভেবে এসেছিলো কি বলবে।কিন্তু এখন সব কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে।
তিতলির এমন বার বার পানি খাওয়া দেখে নুহাশের হাসি পাচ্ছে।মেয়েটা এতো নার্ভাস কেনো এটাই বুঝতে পারছেনা।
“আচ্ছা আমাকে দেখে কি বাঘ মনে হয়?”
নুহাশের কথায় তিতলি তার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালো।
“বাঘ মনে না হলে তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?”
তিতলি হেসে ফেললো।নুহাশ তিতলির এই হাসিতে আরেক দফা খুন হলো।

এইদিকে অভ্র আজ অফিসে যায়নি।জ্ব না থাকলেও এখন শরীর বেশ দুর্বল তার।ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছে।এমন সময় কলিং বেইল বেজে উঠলো।
অভ্র দরজা খুলতেই দেখলো একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হাতে খাম নিয়ে।ছেলেটি বললো,”এখানে তিতলি আছে? ওনার জন্য একটা লেটার এসেছে।”
অভ্র বুঝতে পারোনা এটা কিসের লেটার।
“তিতলি তো এখন বাসায় নেই।আপনি আমাকে দেন।”
“জি আচ্ছা।আপনি এখানে সাইন করে দেন।” বলেই একটা কাগজ আর কলম দিলো।
অভ্র সাইন করে দিয়ে ছেলেটিকে বিদায় দিয়ে দরজা আটকে দিলো।অভ্র বুঝতে পারছেনা সে লেটারটা দেখবে নাকি।তিতলির পারমিশন না নিয়ে দেখাটাও ঠিক হবেনা।আবার তার বেশ কৌতূহল ও হচ্ছে।অভ্র খাম টা খুলেই ফেললো।লেটার টা দেখে সে থম মেরে গেলো।এমনিতে শরীর দুর্বল। লেটার টা নিয়েই সে মেঝেতে বসে পরলো।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে