#বন্ধন
পর্ব-৩
#tani_tass_ritt
তিতলি এবং নুহাশ ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তিতলির দৃষ্টি আকাশের দিকে হলেও নুহাশ তিতলির দিকেই তাকিয়ে আছে।নুহাশ এক মুহূর্তের জন্যও যেনো চোখ সরাতে পারছে না।শ্যাম বর্ণের মেয়েরা অনেক বেশি মায়াবি হয়। তিতলি কে না দেখলে সে বুঝতেই পারতোনা।বিশেষ করে তিতলির খোলা চুল গুলো।তিতলির সৌন্দর্য যেনো আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।নুহাশ মনে মনে ভাবছে সে যদি কবি হতো তাহলে তিতলির চুল নিয়ে হাজার টা কবিতা লিখে ফেলতো।আফসোস সে একজন ইঞ্জিনিয়ার। কোনোদিন কবিতার ধারের কাছেও যায়নি।ভাবতেই তার একটু খারাপ লাগলো।
তিতলির প্রচন্ড অস্বস্তি কাজ করছে।অপরিচিত একটি ছেলে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে তার।এমন কোনো দিন ও তার জীবনে আসবে সে কল্পনাও করেনি।সত্যিই মানুষের সব স্বপ্ন সত্যি হয়না।মানুষ নিজের জল্পনা কল্পনা দিয়ে নিজের জগৎ টাকে সাজাতে চায়। হয়তোবা ভাগ্য অন্য কিছুই ভেবে রেখেছে।ভাবতেই তিতলির চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। সাথে সাথে তিতলি হাত দিয়ে জলটা মুছে ফেললো যাতে নুহাশ না দেখে ফেলে।
নুহাশ নিরবতা ভেঙে বললো,”মিস তিতলি আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না যে? আমি কি দেখতে এতো খারাপ? আমার জানামতে তো আমি সুদর্শন একজন ছেলে।”
নুহাশের কথায় তিতলি হেসে দিয়ে তার দিকে তাকালো।
কোনো ছেলেকে পাগল করার জন্য এই হাসি ই যথেষ্ট বলে মনে করলো নুহাশ।
“বাহ আপনাকে হাসলে তো দারুন লাগে।সব সময় হাসলেই তো পারেন।এমন মুখ গোমড়া করে থাকেন কেনো?”
তিতলির হাসি যেনো নিমেষেই উড়ে গেলো।তার হাসির প্রশংসা সে একজনের মুখে শুনতেই অভ্যস্ত। অন্য কারো মুখে শুনে কেমন যেনো লাগছে।
তিতলি নুহাশ কে ছোট করে ধন্যবাদ জানালো।
কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই নুহাশ বললো,”দেখুন আমি সোজা সাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারিনা।আমার আপনার কাছে কি প্রশ্ন ছিলো।”
“জি বলুন।”
“তুমি কি নিজের থেকে বিয়ে করতে চাচ্ছো? নাকি তোমাকে ফ্যামিলির জন্য করছো?”
নুহাশের কথার কোনো উত্তর তিতলি খুঁজে পাচ্ছে না।সত্যিই তো এখন সে বিয়ে কেন করছে!নিজেকে বাচাঁতে নাকি অন্যদের বাঁচাতে! নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো তিতলি।
নুহাশ তিতলির হাবভাব দেখে বোঝার চেষ্টা করছে যে মেয়েটা কি বলতে চাচ্ছে।
তিতলি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,”আমার পরিবার যা ভালো মনে করবে আমার জন্য আমি তাতেই রাজি। আর তাছাড়া আমার বাবা মা মারা যাবার পর আমি ৫ বছর বয়স থেকে এবাসায় থাকি।তারা কখনো আমাকে বাবা মায়ের থেকে কম আদর করেনি।নিজের বাবা মায়ের আদর বুঝে উঠার আগেই তারা আমাকে ছেড়ে চলে যায়।খালা খালুই আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর করে বড় করেছেন।তারা আমার ভালোটাই চান।”
নুহাশ খুব মনোযোগ দিয়ে তিতলির কথা গুলো শুনলো।
“তুমি অনেক ভালো মেয়ে। কিন্তু আমি অতোটাও ভালো নই।বাবা মা নিশ্চই সন্তানের ভালো চান।কিন্তু তাই বলে এটা নয় যে তাদের ডিসিশন তারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিবে এবং আমাদের তা মেনে নিতেই হবে। যেমন ধরো আজ তুমি কাউকে পছন্দ করলে কিন্তু তোমার বাবা মায়ের পছন্দ অন্য কেউ।তুমি কি করলে নিজের পছন্দকে বিসর্জন দিয়ে তাদের পছন্দের বিয়ে করলে।কিন্তু জীবনটা তো তোমার।সংসার করবে তুমি।আমি মনে করি প্রতিটা বাবা মায়ের উচিৎ তাদের সন্তানের উপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দেয়া।সন্তানের পছন্দকে মূল্যায়ন করা।তা না হলে সাময়িকের জন্য ভালো হলেও সারা জীবন সাফার করবে তার সন্তানই।তাই আমি চাই তুমি তোমার মনের কথা শুনো।তোমার যদি আমাকে ভালো লাগে অথবা তোমার যদি আরো সময় প্রয়োজন অবশ্যই তুমি তা নিবে।কারো কথায় রাজি হবেনা।কেনোনা সংসার আমরা করবো।আমি এমন কাউকে বিয়ে করতে চাইনা যে তার ফ্যামিলির কথায় রাজি হয়ে আমাকে বিয়ে করবে।বিয়ের বন্ধনে একবার আবদ্ধ হলে এটার থেকে বের হওয়া এতো সহজ নয়।ভেবে চিনতে ডিসিশন নিবে। ”
তিতলি মন্ত্র মুগ্ধের মতো নুশাহের কথা শুনছে।একটা মানুষ এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা কিভাবে বলতে পারে।
“তবে আমার কিন্তু তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে।”বলেই এক চোখ টিপ দিলো।
তিতলি হেসে ফেললো।
” তাহলে চলুন নিচে যাওয়া যাক।”
“আচ্ছা।”
তিতলি নুহাশ নিচে নামতেই সবাই তাদের দিকে তাকালো।সবার মাঝে অভ্র ও উপস্থিত। দুজনকে বেশ মানিয়েছে।সেদিনের মতো নুহাশ এবং তার পরিবার তিতলিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
অভ্র রুমে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন।চোখ মুখ কেমন যেনো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। রাইমা ৫ মিনিট যাবৎ রুমে এসেছে।এইদিকে অভ্রের কোনো খেয়াল ই নেই।রাইমা অভ্রের কষ্ট টা বুঝতে পারলেও আজ তার খুব আনন্দ হচ্ছে।সে যা চেয়েছিলো তাই হচ্ছে।ফাইনালি তার জীবনের কাটা দূর হবে।যে করেই হোক সে এই বিয়েটা করিয়েই ছাড়বে।মাইশা অভ্রের সামনে এসে দাড়ালো।
“তোমার কি শরীর খারাপ।”
অভ্র রাইমার দিকে না তাকিয়েই হুট করেই তার কোমোর আকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলো।রাইমা এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।এই প্রথম অভ্র তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে।মাইশার পুরো শরীর কাঁপছে।অভ্রকে রাইমা কোনোদিনো কাঁদতে দেখেনি। অভ্রকে এভাবে কাঁদতে দেখে তারভেতরটা তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে।
হঠাৎই অভ্রের কি হলো সে রাইমাকে ধাক্কা মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো।রাইমা তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো।
রাত প্রায় ১০টা। অভ্র আজ রাতে খাবারও খায়নি।তার রুমের দরজাও আটকানো। তিতলি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বুঝতে পারছেনা যে নক করবে নাকি করবে না।অভ্রের বিয়ের পর সে আর এই রুমে আসেনি।তার চিরচেনা রুম টা কিছু মূহুর্তেই অচেনা হয়ে গিয়েছে।আগে এই রুমে আসতে তার কোনো অস্বস্তি ছিলোনা।এমনকি কারো কাছে পারমিশন নেয়ার প্রয়োজনও পরেনি করখনো।সময়ের ব্যাবধানে সব পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।তিতলি আর নক না করে নিজের রুমে চলে গেলো।
সকালের নাস্তা শেষ করে সালমা বেগম তিতলির রুমে বসতে বসতে বললেন,
“কি করিসরে মা?”
“কিছুনা খালা।”
সালমা বেগম কিভাবে কথাটা বলবেন বুঝতে পারছেন না।সে চুপ করে আছেন।তিতলি বুঝতে পারলো তার খালা তাকে কি বলতে এসেছে।
তাই তিতলি নিজেই বললো,”আমি আমার মত দেয়ার আগে আরেকবার নুহাশের সাথে দেখা করতে চাই।”
তিতলির কথা শুনে সালমা বেগমের চোখ ছল ছল করে উঠলো।বাবা মা মরা মেয়েটাকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে তারা।সালমা বেগম তিতলিকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো।অন্যসময় হলে হয়তো তিতলিও তার সাথে তার মিলিয়ে কাঁদতো।কিন্তু এখন তার আর কান্না পায়না।কথায় আছে না মানুষ অল্প শোকে কাতর এবং অধিক শোকে পাথর।তিতলিরও ঠিক একই অবস্থা।আফজাল সাহেব দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছে।সারা জীবনই তিনি ছিলেন এক রোখা।তার সিদ্ধান্তই সবার উপর চাপিয়ে দিতেন।কিন্তু আজ তার মনে হচ্ছে সে বড্ড ভুল করেছেন।কিন্তু আফসোস এই ভুল সুধরাবার সুযোগ যে তার কাছে নেই।
★★★★
আজ সারাদিন বাহিরে বৃষ্টি পরছে।হালকা ঠান্ডা পরেছে।চারিদিকের পরিবেশ ঠান্ডা। দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলো তিতলি।চোখ খুলতেই খেয়াল করলো অভ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে।অভ্রের চাহনি বেশ অস্বাভাবিক।তার শরীর ভিজে একাকার।তিতলি জলদি করে উঠে দাড়ালো। অভ্র তিতলির দিকে এগুচ্ছে তিতলি পেছাচ্ছে।একটা সময় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো তিতলির।
চলবে…….
(আপনাদের কেমন লাগছে জানাবেন)