#বধূবরণ- শেষ পর্ব
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
‘ভাই, হৈমী ভাবিকে ওই মা ছু গন্ডার লোকেরা তুলে নিয়ে একটা গোডাউনে রাখছে। গ্রামের পূর্ব দিকের গোডাউন।’
রাজীবের ছোট ভাই হারুন বড্ড সাবধানে ফিসফিস করে কথাটা বলল ফোনের ওপাশে থাকা সাঈদকে। সাঈদ শুনে চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস টানে নিজের মধ্যে। তারপর লাল চোখে চেয়ে জানায়,
‘তুই সাবধানে থাকিস, ওরা যেনো তোকে না দেখে। আমি আসছি। তুই গোডাউনের দিকে নজর রাখিস। ফোনের লোকেশন অন করে রাখ, আমি ট্রেস করছি।’
সাঈদ ফোন রেখে পকেটে পুড়ে। সাইদের পাশে শাহেদ, হৈমীর আম্মা এবং রয়েছে পুরো চেয়ারম্যান বংশ। সাঈদ ফোন রেখে পাশে থাকা তার বড় ভাই সুবাসের দিকে তাকাল। তীব্র জেদ মাখা গলায় সরাসরি বললো,
‘আমি হৈমীকে আনতে যাচ্ছি। আমার আসার আগে বিয়ের সব ব্যবস্থা করে রাখো। আজকেই আমি হৈমীকে ঘরে তুলব, এন্ড দ্যাটস ফাইনাল।’
চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ কিকবু বলতে এগুলেন,
‘এভাবে এত হুট করে-‘
‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। হুট করেই সবকিছু হবে এখন থেকে। তোমাদের জন্যে, ঠিক তোমাদের জন্যে হৈমীর আজকে এই অবস্থা। আই উইল নট ডেফিনিটলি ডু অ্যানি মার্চি অন অঅ্যানিওয়ান ফ্রম নাও, স্পেশালি যখন সেটা হৈমীর ব্যপারে। আজকে যা হচ্ছে সব-‘
সাঈদ চিৎকার করে কথাগুলো বলে থেমে যায়। চোখ বন্ধ করে জোরেজোরে শ্বাস ফেলতে থাকে।সাহেদ এ ব্যাপারে কিছু বলতে চান, তবে সঙ্গেসঙ্গে আটকে ফেলে সাঈদ। বড্ড নরম থাকার চেষ্টা করে বলে,
‘আঙ্কেল, হৈমী আমার বউ। এটা আপনার যাই করেন না কেন, কোনভাবেই মিথ্যা করতে পারবেন না। আইন অনুসারে এখন হৈমীর প্রতি তার স্বামীর সবচেয়ে বেশি অধিকার।আমি যখন বলেছি হৈমী আমার কাছে সেইফ থাকবে, মানে থাকবে। সেটা দুনিয়া উল্টে গেলেও ওকে সেইফ রাখবো আমি সাঈদ। আমি এ ব্যাপারে কোনো না শুনতে চাইনা, আর না কেউ না বললে আমি শুনবো। দরকার হলে আমার বউ আমি তুলে নিয়ে আসার ক্ষমতা রাখি। কিন্তু আমি এটা চায়নি দেখে এতোদিন কিছুই করিনি। কিন্তু আজকের পর নো মোর ভালমানুষী।’
শাহেদ কিছু বলবেন তার আগে চেয়ারম্যান বললেন,
‘ভাইজান, ছেলেটা আগে হৈমীকে নিয়ে আসুক, আমরা বসে এ ব্যাপারে কথা বলছি।’
সাঈদ লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে ঘুরে বাড়ির বাইরে যেতে যেতে চেচিয়ে বলে গেল,
‘আমি ফিরে আসার আগে যেন সব ব্যাবস্থা করে রাখো, ভাইয়া।’
_______________
হারুনের লোকেশন ট্রেস করে করে এগুচ্ছে সাঈদ। হারুন এক পর্যায়ে কল করে প্রায় কেঁদেই বলে ফেললো,
‘ভাই, ওরা বোধহয় ভাবির সাথে খারাপ কিছু করতে চাইছে। গোডাউনের ভেতর থেকে ভাবির চিৎকার শুনতে পাচ্ছি।’
সাঈদ কথাটা শুনে লোম অব্দি দাঁড়িয়ে গেলো। বুকের ভেতর জঘন্যভাবে ধড়াস ধড়াস করতে লাগল। গাড়ির স্পিড দ্বিগুণ বাড়িয়ে সাঈদ বললো,
‘তুই থাক হারুন ওখানে। ভেতরে গিয়ে একা কিছুই করতে পারবি না তুই। আমি আসছি।’
একটু থেমে,
‘ওরা ওকে কিছুই করবে না হারুন , আমি করতে দেবো না। ওর সমস্ত কিছুর উপর আমার অধিকার, ওই জা নো য়া রের বা চ্চা দের নয়।’
সাঈদ গাড়ির স্পিড আরও বাড়াল। ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলো পুর্ব দিকের গোডাউনে। সাঈদকে দেখে হারুন সাঈদের পেছনে এসে দাঁড়াল। সাঈদ গাড়ি থেকে নেমে এক দৌঁড়ে গোডাউনের সামনে চলে এলো। দরজা ভেতর থেকে লকড। সাঈদ সাতপাচ চিন্তা না করে এক লা থি দিয়ে দরজা ভেঙে দিলো। সঙ্গেশঙ্গে দৃষ্টিগোচর হলো, হৈমীর ক্লান্ত মুখের ছবি। হৈমীর উপরে শুয়ে ধস্তাধস্তি করছে মাছু। হৈমীর চোখেমুখে কান্নার ফোয়ারা বইছে। বারবার বাঁচার জন্যে মাছুর গায়ে থা প্প ড়, কি ল ঘু ষি দিচ্ছে। সাঈদ আর ভাবতে পারলো না। দ্রুত দৌঁড়ে গিয়ে হৈমীর উপর থেকে মাছু কে তুলে কু ত্তা র মতো মারতে লাগল। হৈমী ছাড়া পেতেই গায়ে খুলে ফেলা শাড়ি জড়িয়ে হাটু গেড়ে দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। কান্নার কারণে রীতিমত শ্বাসকষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকভাবে নিশ্বাসটাও নিতে পারছে না। সাঈদ মা রতে মা রতে সবগুলোকে প্রায় আধাম রা করে ফেলেছে।তারপরও থামে হৈমীর মৃদু স্বরের আওয়াজ শুনে,
‘সা ঈ দ, থা মুন।’
সঙ্গেসঙ্গে সাইদের হাত থেমে যায়। চোখ ঘুরিয়ে পাশে চায়। হৈমীর শাড়ি গায়ে এলোমেলো জড়ানো। শরীরের অনেক নিষিদ্ধ অঙ্গ দৃশ্যমান। সাঈদ পেছনে তাকাল। হারুন এতোক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছিল। সাইদের এমন তাকানো দেখে সে বুঝতে পারল কিছু। মাথা নত করে বললো,
‘আমি বাইরে আছি ভাই। দরকার পড়লে ডাইকেন।’
কথাটা বলে মাথা না তুলেই চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো হারুণ। সাঈদ হাতে ধরে থাকা মাছুর কলার ছেড়ে দিল। মাছু লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। কুকিয়ে উঠল ব্য থায়। একপর্যায়ে ব্য থায় জ্ঞান হারালো। সাঈদ ধীর পায়ে এগিয়ে এলো। তার লাল চোখ হৈমীর দিকে কাতর হয়ে চেয়ে আছে। হৈমী মাথা হালকা কাত করে কান্নামাখা চোখে চেয়ে রইল সাঈদের দিকে। সাঈদ অবশ দেহের ন্যায় হাঁটু গেড়ে বসে পরে হৈমীর ঠিক সামনে। শরীরে জ খম অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গিয়ে হৈমীর কপালে চুমু বসায়। হৈমী সঙ্গেসঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ডান চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়ায়। হৈমী চোখ বন্ধ অবস্থায় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। সাঈদ সঙ্গেসঙ্গে হৈমীর গায়ে তার শার্ট খুলে জড়িয়ে দিয়ে বুকে চেপে ধরে। হৈমী চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। সাঈদের কান্না আসছে হৈমীর এহেন অসহায় অবস্থা দেখে।সে ঠোঁটে দাঁত চেপে হৈমীর পিঠে হাত বুলাতে থাকে। হৈমী কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করে শুধু,
‘আমি অপবিত্র হয়ে যেতাম সাঈদ।আমার আজ সব শেষ হয়ে যেতে পারত। ওরা-ওরা আমাকে কেমনে এসব। আমার গায়ে ওদের ছোয়া। আমার ঘেন্না হচ্ছে সাঈদ। সাঈদ, আমি আমি অপবিত্র -‘
সাঈদ আর শুনে না। শুনতে চায়ও না কিছু। জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে হৈমীর মুখ দুহাতে তুলে চুমু বসায় ঠোঁটে। হৈমীর চোখের জল নাক গড়িয়ে ঠোঁটে আসতেই সাঈদের ঠোঁটের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে আবার। হৈমী একপর্যায়ে নিজেই মোহিত হয়ে গেলো। আজকে যা ঘটেছে ভুলার জন্যে, সাইদের গলা জড়িয়ে কিছুটা উঁচু হয়ে নিজেই পাগলের মত চুমু খেতে থাকে ঠোঁটে। সাঈদ ব্যা থা পায়, তবুও মুখ বুজে সহ্য করে নেয়।একটা দুটো ব্য থা হোক না, বউটা তো ওরই।
________________________
হৈমী নিজে বড্ড অবাক হয়েছ। গোডাউন থেকে সোজা চেয়ারম্যান বাড়ি ফিরেছে তারা। দু পরিবারের সকল মানুষকে নিজের সামনে দেখে ভয়ে, আতঙ্কে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সাঈদের পেছনে লুকায়। সাঈদ টান দিয়ে হৈমীকে সবার সামনে আনে। জোর গলায় পরিচয় করায় হৈমীকে সবার সঙ্গে,
‘আমার বউ, হৈমী বিনতে শাহেদ।সবাই থাকুন, ও ফ্রেশ হয়ে আসুক। আমাদের বিয়ে খেয়ে তারপর যাবেন।’
হৈমীকে নিয়ে দ্রুত সাইদের ঘরে ছুটে গেলো অনন্যা। দ্রুত বিয়ের শাড়ি গহনা পড়িয়ে নিচে নিয়ে আসলো।
কাজী এলেন। বিয়ে পড়ানো হলো বড্ড তাড়াহুরোয়। হৈমীকে কবুল বলতে এটুকু সময় দেওয়া হয়নি। কবুল বলার সঙ্গেসঙ্গে সবাই আলহামদুল্লাহ বলে উঠেন। হৈমী কী হলো কিছুই বুঝতে পারলো না। যা হলো, যেমন কোনো ঝড়! মুহূর্তেই হৈমীর জীবন পাল্টে গেলো।এখন থেকে সে সাঈদের বউ, স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনী। ভাবতেই শিহরণে কেপে উঠছে বারবার হৈমী।
বাসর ঘরেও ঢুকে গেলো খুব দ্রুতই কেমন করে। ফুলে সজ্জিত বিছানায় হৈমী হাটু গেড়ে বসে আছে। সাঈদ আর তার ভাই-বোন, কাজিনের কথা শোনা যাচ্ছে বাইরে। সাঈদকে তারা কোনমতেই বাসর ঘরে ঢুকতে দেবে না। আগে পঞ্চাশ হাজার টাকা, তারপর বাসর। সাঈদ বলল,
‘ক্যাশ নাই এতো। ভাগ।’
ভিড়ের মধ্যে অনন্যা উকি দিয়ে বললো,
‘ক্যাশ নাই, কার্ড আছে তো। ওটাই দাও।আমরা নিয়ে নেব নিজেদের টাকা।’
সাঈদ না পেরে শেষ অব্দি কার্ড দিল। তারপর চোখ পাকিয়ে বললো,
‘পঞ্চাশ এর উপরে এক টাকা খরচ হলে তোদের একটাকেও আর আস্ত রাখব না। মনে থাকে যেনো।’
ভাই বোনেরে হৈ হল্লোর করে কার্ড নিয়ে গেল। সাঈদকে তারপর বাসর ঘরে ঢুকার অনুমতি দেওয়া হল।
দরজা লাগানোর শব্দে হৈমী আড়চোখে তাকাল সাঈদের দিকে। সাঈদ আজ সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। হিরো লাগছে একদম তাকে। হৈমী বিছানা থেকে উঠে সালাম করল সাঈদকে। সাঈদ হৈমীকে নিচে থেকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। হৈমী সাঈদের বুকে নিশ্চিন্তে পরে থাকল। একপর্যায়ে সাঈদ হৈমীর চুলে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,
‘তুই তৈরি হৈমন্তী? ক্যান আই লাভ ইউ?’
হৈমীর গা যেমন শিরশির করে উঠল। সম্মতিস্বরূপ জোরে সাইডের পিঠে আঁচড় কাটল। সাঈদ মৃদু হাসলো। হৈমীকে কোলে তুলে বিছানার দিকে এগোতে এগোতে বলল,
‘আজ আর তুই আস্ত থাকবি না হৈমন্তী।কা মড়ে-কু মড়ে তোকে আজ শেষ করে দেওয়া হবে। আমার এতদিনের ধৈর্য্য আর সহ্য হচ্ছে না।একদম না।’
#সমাপ্ত