বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-২২(শেষ পর্ব)

0
1407

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ২২
#পরিসমাপ্তি

“রাত্রি ক্লান্ত হয়ে শুয়ে তার মায়ের কাছে ফোন দিলো তিনি বললেন প্রেগন্যান্সির কিট এনে চেক করে নিতে কথা মতো রাত্রি প্রেগন্যান্সি কিট আনিয়ে চেক করলো পজিটিভ এলো, রাত্রি মহা খুশি হয়েছে। বেচারির এতো দিনের স্বপ্ন পূরন হতে চলেছে। খুশিতে রাত্রি সারাদিন পাইচারি করেছে কখন আবির বাসায় আসবে।”

“সন্ধ্যায় আবির বাসায় ফিরে কলিং বেল চাপ দিলো। রাত্রি দরজা খুলে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো।”

“এই পাগলি কি হয়েছে! এতো খুশি লাগছে কেনো আজ? আর আমায় জড়িয়ে ধরলে যে? ”

“তারপর রাত্রি আবিরকে বলল, আগে ফ্রেশ হয়ে নিন তারপর বলছি।”

“ফ্রেশ হয়ে আবির বেডে শুয়ে পড়লো আর ডাক দিলো পাগলি এদিকে এসো। ”

“আসছি এক মিনিট। তারপর রাত্রি রুমে এসে আবিরকে কফি দিলো আর সাথে প্রেগন্যান্সির কিট টা হাতে দিলো।”

“আবির কিট টা দেখে একটু না অনেকটা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। আর বলল, কু কুইন সত্যি তুমি মা হবে!”

“রাত্রি মাথা ঝাকিয়ে হুম বলল।”

“আবির জড়িয়ে ধরলো রাত্রিকে আর বলল, থ্যাংক ইউ পাগলি। আমি যে এতো তাড়াতাড়ি বাবা হওয়ার সংবাদ পাবো ভাবিনি সত্যি!”

“হুহ আপনি তো চাইছিলেন ই না আবার খুশি হয়েছেন বলছেন!”

“সরি পাগলি ভুল হয়ে গেছে। এখন থেকে তুমি যা বলবে তাই করবো কেমন! ”

“হুম মনে থাকে যেনো।”

“আজ রাত্রির ডেলিভারি পেইন উঠেছে আবির অনেকটা ঘাবড়ে গেছে দ্রুত রাত্রিকে নিয়ে হসপিটালে এডমিট করালো। ”

“করিডোরে আবির পাইচারি করছে আর রাত্রির জন্য আকুল হয়ে উঠেছে। কিছুক্ষন পর একজন নার্স বেড়িয়ে আসলো ওটি থেকে। তার কুলে তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো এক শিশু। নার্স টি বলল পেশেন্ট এর বাসার লোক কোথায়? আবির এগিয়ে আসলো। নার্সটি বাচ্চাটিকে আবিরের কুলে দিয়ে বলল, কংগ্রাচুলেশন আপনার মেয়ে বেবি হয়েছে। আবির বলল, আমার ওয়াইফ কেমন আছে? নার্সটি বলল, তিনি সুস্থ আছেন একটু পরেই দেখা করতে পারবেন। বলে নার্স টি চলে গেলো।”

“আবির মেয়েকে একটু পর পর দেখছে আর রাত্রির কথা ভাবছে। কিছুক্ষন পর আবির রাত্রির কাছে গেলো। গিয়ে দেখলো রাত্রি শুয়ে আছে। আবির পাশে বসলো আর বলল, এখন কেমন আছো পাগলি।”

“রাত্রি মুচকি হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। ”

“আমাদের মেয়েকে দেখেছো? বলেছিলাম না একদম তোমার মতো আমার একটা প্রিন্সেস হবে! তাই হয়েছে একদম তোমার মতো।”

“তাই! তারপর রাত্রি উঠে হেলান দিয়ে বসলো। আবির রাত্রির কুলে বেবিকে দিয়ে বলল, আজ থেকে ওর নাম হলো রশ্নি খান। তারপর রাত্রির কপালে চুমু দিলো।”

—–
*এক বছর পর*

“ওইদিকে ইভার এস এস সি পরিক্ষা শেষ হলো। পাত্র পক্ষ ইভাকে আজ দেখতে এসেছিলো। তারা বলে গেছেন সামনের সপ্তাহে বিয়ে পড়াবে। ইভার পড়ালেখা শেষে উঠাই নিবে। রাতে ইভা ফয়সাল কে কল দিলো কান্না করতে করতে বলল, ফ ফয়সাল ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সামনের শুক্রবারেই আমার বিয়ে। আমি মানা করেছি কেও আমার আমার কথা শুনিছেনা। আমি যে বিয়ে করতে চাইনা কাওকে। আমি যে আপনাকে কথা দিয়েছি আমি আপনাকে ছাড়া কাওকে বিয়ে করবোনা। আমি থাকতে পারবোনা আপনাকে ছাড়া। প্লীজ কিছু একটা করুন। আমি আপনার কথা বাসায় বলেছি আম্মু আমাকে মে’রেছে অনেক। আমাকে কোথাও বের হতে দিচ্ছেনা। ম’রে যাবো আমি। কান্না করতে থাকলো ”

“ইভা শান্ত হও রিল্যাক্স! কান্না করবেনা একদম। তুমি না আমার মিষ্টি পাখি। কেও আমাদের আলাদা করতে পারবেনা। তুমি শুধু আমার।কেও তোমাকে বিয়ে করতে পারবেনা আমি ছাড়া বুঝলে। একদম নিশ্চিন্তে থাকো পাখি। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো একদম স্বাভাবিক চলাফেরা করো। আমি আছিতো সব সমাধান করে দিবো কথা দিচ্ছি আমি।”

“সত্যি তো!”

“হুম সত্যি।”

“চলে এলো শুক্রবার আজ ইভার বিয়ে। ইভা অনবরত কান্না করে যাচ্ছে। একটু পরেই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে। ৫ দিন ধরে ফয়সালের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেনা ইভা। ইভার ফোন নিয়ে নিয়েছে তার মা। ইভা মনে মনে বলছে, ফয়সাল আপনি কোথায়? আপনি তো বলেছিলেন আমি শুধু আপনার। আমি যে আর পারছিনা প্লীজ আমার কাছে আসুন একবার প্লীজ। ভাবছে আর কান্না করছে।”

“একটু পরে ইভা শুনতে পেলো লিভিং রুমের চিল্লা’চিল্লির শব্দ। ইভা বেরোতে চাইলে ইভার মামাতো বোনেরা তাকে আটকে রাখলো। ”

“ব্লেক জিন্স, হুয়াইট শার্ট, ব্লেক ব্লেজার পরিহিত এক লম্বা যুবক দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে বাদল আহমেদ আবির রাত আর পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর লোকজন। হ্যাঁ যুবক টি আর কেও নই ফয়সাল। ফয়সাল জোরে ডাক দিলো ইভা বলে। ইভা কোথায় তুমি বেরিয়ে এসো। দেখো আমি এসেছি তোমার ফয়সাল ফিরে এসেছে ইভা তুমি বেরিয়ে এসো।”

“ফ ফয়সাল এসেছে আ আমার ফয়সাল এসেছে ছাড়ো তোমরা আমায়। বলেই ইভা ঝারি মেরে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। দৌড়ে লিভিং রুমে আসলো। ফয়সাল কে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে ফয়সাল কে জড়িয়ে ধরলো আর কান্না করতে থাকলো।”

“ফয়সাল ইভাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে থাকলো। এই মিষ্টি পাখি একদম কান্না করবেনা। আমি এসেছি তো দেখো। আমি কথা দিয়েছি না তোমায় যে আমি সব ঠিক করে দিবো। শান্ত হও এখুনি আমাদের বিয়ে হবে কিছুক্ষন অপেক্ষা করো। সবাই তাকিয়ে আছে তুমি উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াও পাখি। ইভা তৎক্ষনাৎ সোজা হয়ে ফয়সালের পাশেই দাঁড়িয়ে রইলো। বাদল আহমেদ বললেন কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। ”

“একি বলছেন এসব কি হচ্ছে। আমি এ বিয়ে পড়াতে পারবোনা।”

“আপনি কি বিয়ে পড়াবেন নাকি ছেলে পক্ষের সাথে আপনাকেও শায়েস্তা করতে হবে। ফয়সাল বলল।”

“ইভা তুই যদি এই বিয়ে করিস খুব খারাপ হবে কিন্তু। তীর জন্য এ বাড়ির দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। ইভার বাবা বলল। আর ইভার মা কান্না করতে ব্যাস্ত।”

“আপনারা যা খুশি করে দেখান। দরজা বন্ধ করে দিলে কি ও ম’রে যাবে নাকি। ও আজ থেকে আমার অস্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকবে সো আপনাদের
এতো ইন্টারফেয়ার করতে হবেনা। ফয়সাল বলল।”

“খালামণি আপনারা যেহেতু সোজা কথা মানেন নি আমাদের এই ব্যবস্থা করতে হয়েছে। যদি ইভার কথা টুকু মেনে নিতেন তাহলে আজকে এতো হিস্ট্রি হতোনা। আবির বলল। ”

“আবির ঠিক বলেছে খালামণি তুমিই ভুল করেছো। রাত বলল।

“বিয়ে পরিপূর্ণ হলো। ফয়সাল রা চলে গেলো ইভাকে নিয়ে। অবশেষে তারা ফয়সালদের বাসায় পৌছায়। সেখানে গিয়ে দেখে ইভা, রাত্রি তার মেয়ে, আভা তার ছেলে, মানে আত্মীয়স্বজন সবাই উপস্থিত সেখানে। ইভা খুশি হলো তারপর আবার মন খারাপ করে ফেলল। রাত্রি এসে জিজ্ঞাসা করলো কি মন খারাপ করে আছিস কেনো? ত’লে ত’লে প্রেম করে বিয়ে করে ফেলেছিস তো আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করিস নি। এখন মুখটা এমন শুকনো করে রেখেছিস কেনো?”

“ইভা নিশ্চুপ থেকে রাত্রি কে জড়িয়ে ধরলো।”

“রাতে ইভাকে বাসর ঘরে বসিয়ে রাত্রি আভা চলে এসেছে । ”

“ফয়সাল রুমে ঢুকে ইভার পাশে বসলো। ইভার হাতে একটা চেক দিয়ে বলল, এটাতে দেন মোহরের টাকা পুরোটা দেওয়া আছে এটা তোমার তুমি রাখো। ”

“আমি টাকা দিয়ে কি করবো।”

“যা খুশি করে নিও এটা তোমার অধিকার বুঝলে। এটা তোমার প্রাপ্য টাকা তুমি তোমার ইচ্ছে মতো যা ইচ্ছা কিরে নিও এই টাকা দিয়ে৷”

“মুচকি হেসে ইভা চেক টা নিয়ে পাশে রেখে দিলো। আর চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো।”

“ফয়সাল ইভাকে টেনে কুলে বসিয়ে বলল, এই মিষ্টি পাখি মন খারাপ কেনো এখনো? খুশি হওনি আমি বিয়ে করেছি বলে?”

“তা কেনো হবে। ”

“তাহলে! বাসার জন্য মন খারাপ করছে?”

“হুম।”

“ধৈর্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“তাই যেনো হয়।”

“ভয় পাচ্ছো তুমি? ”

“ন না।”

“তাহলে এমন কুকড়ে যাচ্ছো কেনো নাকি লজ্জা পাচ্ছো?”

“নিশ্চুপ ইভা।”

“শুনো মিষ্টি পাখি ভয় লজ্জা একদম করবেনা কেমন। আমি জানি তুমি এডাল্ট নও আমি কিছু করবোনা তোমাকে। আমি তোমার হাজবেন্ড সো এতো লজ্জা ভয় পেতে হবেনা। আর তুমি পড়াশুনা কন্টিনিউ করবে কেমন আমি আবার চলে যাবো আব্বুর সাথে ১ মাস পরে। ইইমার্জেন্সি ছুটিতে আব্বু কে নিয়ে দেশে এসেছি শুধু মাত্র তোমার জন্য পাখি। ইভার দুই গালে হাত রেখে বলল।”

“তাহলে আবার চলে যাবেন কেনো?”

“পড়াশুনা শেষ করে ভালো চাকরি করতে হবেনা! তারপর একবারে তোমাকে নিয়ে যাবো আমার কাছে। তুমিও ততোদিনে খুব ভালো করে পড়ো কেমন। আর হ্যাঁ একদম সংকোচ বোধ করবেনা আজ থেকে এটা তোমার পরিবার বুঝলে।”

“হুম ঠিক আছে। কিন্তু এখন আমার একটা জিনিস লাগবে সেটা আপনাকে দিতেই হবে না করতে পারবেন না প্রমিস করুন।”

“আচ্ছা প্রমিস করলাম বলো।”

“লিপ কিস লাগবে আমার।”

“ওরে বাবা এতো দুষ্টুমি জানো কিভাবে হুম।”

“এমনেই জানি আমি মুভিতে দেখেছি তো জি এফ বি এফ কিস করে। কিন্তু আমরা তো স্বামী স্ত্রী হয়ে গেছি এখন আমরা তো করতেই পারি তাই না।”

“যেহেতু প্রমিস করেছি দিবো। কিন্তু তুমিও কথা দাও আমাকে এখন থেকে তুমি বলে ডাকবে আর আপনি চলবেনা।”

“ওকে।”

“তারপর ফয়সাল ইভাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ সময় ঠোঁট এ ঠোঁট চেপে রাখলো।”

“হইতো তাদের ভালোবাসা পুরোপুরি পূর্ণতা পাইনি যখন সময় হবে সেদিন না হয় তাদের ভালোবাসা ও পুরোপুরি পূর্ণতা পাবে।”

“অন্যদিকে আবির আর রাত্রি ও বেশ সুখে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মেয়ে বড় হতে লাগলো।”

—–

৪ বছর পর

“মাম্মাম কোতায় তুমি এদিকে আসো দেখো পাপা কোথায় লুকিয়েছে আমি খুঁজে পাচ্ছিনা তুমি খুঁজে দাওনা প্লীজ। রশ্নি আবিরকে খুজছে। ”

“আবির তুমি কোথায় দেখছো মেয়েটা ঘেমে গেছে আর তুমি এখনো খেলছো ওর সাথে! রাত্রি বলল।”

“আবির দ্রুত বেলকনি থেকে বেরিয়ে এসে বলল, কি হয়েছে আমার মা এর দেখি এদিকে এসো পাপা ফ্রেশ করিয়ে দেই।”

“রাতে রশ্নি ঘুমিয়ে পড়েছে আবির রাত্রির পাশে শুয়ে রাত্রির কানে ফিস ফিস করে বলছে, আমাদের প্রিন্সেস তো অনেক বড় হয়ে গেলো এখন তো তার জন্য আরেকজন খেলার সাথি নিয়ে আসা উচিত তাই না। ডাক্তার গিরি না হয় এখন থেকে তিনজনের উপর ফলাবে কি বলো।”

“রাত্রি মুচকি হেসে বলল, হুম আই ডু। সাথে সাথে আবির রাত্রি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুম্বন করলো। হারিয়ে গেলো দুজনে অজানা নগরীতে। ”

“ফয়সাল আজ দেশে ফিরেছে। ইভা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। ”

“ফয়সাল ইভার জন্য রুমে অপেক্ষা করছে। রাত ১২ টা বাজতে চলল মেয়েটা এখনো কোথায় কি করছে। এরই মধ্যে ইভা রুমে আসলো। ভীষন লজ্জা পাচ্ছে ইভা। এডাল্ট হয়েছে বুঝতে শিখেছে সব কিছু লজ্জা পাওয়ারই তো কথা।”

“ফয়সাল রাত্রিকে কুলে তুলে বলল, আজকে লজ্জা পেলে কাজ হবেনা। অনেক সাধনা করে আসছি। এই দিনটার অপেক্ষা করেছি ৪ টা বছর ধরে। তুমি লজ্জা পেলেও আজ তোমাকে ছাড়া ছাড়ি নেই। খুব তাড়াতাড়ি আমার একটা বেবি চাই দিবে আমায় সেই অধিকার। পাখি!”

“পুরো আমি টাই তো আপনার অস্তিত্বের তাহলে অধিকার তো আগেই পেয়ে গেছেন নতুন করে চাওয়ার কি আছে জনাব।”

“তারপর ইভাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পরম আবেশের ছোয়া দিলো ফয়সাল। এক অনন্ত সুখের দারে পৌঁছে গেলো দুজনে। সেই অপূর্ণতা ভালোবাসা আজ পরিপূর্ণ হলো।”

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে