বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-১৮+১৯

0
934

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১৮+১৯

“অবশেষে আবির রা রাত্রির বাসায় পৌঁছালো। আবির এর আম্মু আব্বু আভা আগে রাত্রির রুমে ঢুকলো। আবির সবার শেষে রুমে ঢুকলো রাত কে নিয়ে।”

“এই পরি এখন কেমন আছো? কেমন লাগছে শরীর এখন? আভা বলল। সব সময় রাত্রিকে আভা পরি বলেই ডাকে।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভাবি। ”

“এতো টেনশন কিসের তোমার। আবিরের মা বলল। খাবে ঘুড়বে ফিরবে। এতো পড়াশুনা করতে হবেনা। রাত বাবা বুঝি তোমাকে এতো পড়ায় তাইনা! আবির ও বকা দেয় পড়ার জন্য! আর পড়া লেখায় করতে হবেনা তোমাকে। এই টুকু মেয়েটাকে এতো প্রেশার দেই কেও মেয়েটা একদম শুকিয়ে গেছে।”

“মামনী একদম পড়তে হবেনা তোমাকে আমরা জোর করে তোমাকে পড়াবোনা যত টুকু নিতে পারবে তত টুকুই পড়ো। কেও তোমাকে বকা দিলে আমি আছি তো আমাকে বলবে একদম ওদের বকে দিবো। আবিরের বাবা বলল।”

“রাত্রি শুধু মুচকি হাসলো। একবার ও আবিরের দিকে তাকালো না। বড্ড অভিমান হয়েছে আবিরের উপর আজ আবিরকে নিয়ে ভাবতে গিয়েই রাত্রির জ্বর এ বেহাল অবস্থা। আর এইদিকে আবির করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাত্রির দিকে আর ভাবছে। জানি অভিমান করে আছো কিন্তু কেনো? দেখা হয়নি বলে এতোদিন! কিন্তু কথা গুলো মনে মনে বলায় আবির কোনো উত্তর পেলোনা।”

“কাল রাত থেকে রায়াফ একটু ও সরেনি বোনের কাছ থেকে। এখন অব্দি এখানেই বসা। আজ রায়াফ ও আবিরের সাথে কথা বলছেনা। রায়াফ বুঝতে পেরেছে তার আপুর কেনো টেনশনে জ্বর আসলো।”

“আচ্ছা আপনারা আসুন আগে নাস্তা করে নিবেন। রাত্রির আম্মু বলল।”

“না না বেয়ান আমরা নাস্তা করেই এসেছি। আবিরের বাবা বলল।”

“বললেই হলো নাকি চলুন তো আসুন। বলেই রাত্রির আম্মু আভা আর তার মা বাবা কে নিয়ে গেলো। আবিরকে বাবা চলো এসো।”

“না আন্টি আমি কিছু খাবোনা খিদে নেই আমার। মুখ টা মলিন করে রাত্রির দিকে তাকিয়ে বলল। আবির।”

“আভা রাত্রির আম্মুকে ইশারা করে নিয়ে চলে গেলো আর বলল, ভাইয়া অভিমান হয়েছে নিশ্চয় দেখে নিও। রায়াফ আসো তুমিও নাস্তা করবে।”

“না ভাবি আমি খেয়েছি তোমরা খেয়ে নাও।”

“আচ্ছা আসো আমার পাশে বসে থেকো খেতে হবেনা বোন কে তো সারা রাত পাহাড়া দিয়েছো এবার আমাকে দিবে চলো।”

“আচ্ছা তুমি যাও আমি এক্ষুনি আসছি।”

“আচ্ছা এসো। ”

“চ্যাম্পিয়ন তোমার কি হয়েছে কথা বলছোনা কেনো আমার সাথে। আবির রায়াফ এর হাত ধরে বলল।”

“তুমি পঁচা আবির ভাইয়া। রাগ করেছি তোমার সাথে। তোমার জন্যই চিন্তা করেছে আপু রাতে তাই তো জ্বর এসেছে। আপু অসুস্থ হলো তোমার জন্য তাই আমি আর কথা বলবোনা তোমার সাথে। ”

“আচ্ছা এই কথা তাই না! আচ্ছা এই যে কান ধরে সরি বলছি। আর তোমার আপুর অসুস্থ হওয়ার কারন হবোনা৷ হ্যাপি।”

“হুম। হ্যাপি। বলেই রায়াফ চলে গেলো আভার কাছে৷ রায়াফ আভা রাত্রি দুজনকেই ভালোবাসে অনেক। রাত্রিকে একটু বেশি ভালোবাসে বোন বলে কথা। আবির এসেছে তাই ও ভদ্র ছেলের মতো আভার কাছে চলে গেলো। ”

“আবির রাত্রির পাশে বসলো। রাত্রি মুখ ঘুড়িয়ে নিলো।”

“কি হয়েছে অভিমান করেছো কেনো? আর রায়াফ যা বলে গেলো তা কি সত্যি৷ ”

“নিশ্চুপ রাত্রি।”

“কুইন চুপ করে আছো কেনো কিছু বলো। অ্যান্সার মি। ”

“জানিনা আমি। ”

“আবির রাত্রির দিকে তাকিয়ে বলল, অভিমান করেছো আমার উপর।”

“না। ”

“তাহলে কথা কথা বলছোনা কেনো?”

“এমনি। এসেছেন কেনো এখন চলে যান। কথা বলবেন না আমার সাথে। ”

“চলে যাবো! সত্যি! আচ্ছা চলে যাচ্ছি ভালো থেকো। বলেই উঠতে গেলো বসা থেকে। ওমনি রাত্রি আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসলো আর ফুপিয়ে কেঁদে দিলো।”

“এই পাগলি আমি যাবোনা তো মজা করছিলাম। তুমি কান্না করছো কেনো হুম। ”

“খুব স্বার্থপর আপনি খুব! এতোদিন কেনো দেখা করেন নি কেনো কথা বলেন নি আমার সাথে। আমার খুব কষ্ট হয়েছে জানেন আপনি! ”

“আচ্ছা তাই না! এই জন্য চিন্তা করে করে জ্বর বাধিয়েছো! পাগলি! প্রমিস করছি আর এমন করবোনা। সব সময় তোমার সাথে কথা বলবো ঠিক আছে কিন্ত মাঝে মধ্যে দেখা হবে কেমন।”

“হুম সত্যি তো! ”

“হুম সত্যি। এবার কান্না বন্ধ করো আমার বাচ্চা বউ।”

“হুহ! আমিতো বাচ্চাই। ”

“পাগলি কুইন আমার। দেখেছো শরীরের অবস্থা কি করেছে। গা এখনো গরম রয়েছে। সকালে নাস্তা করেছো? ঔষধ খেয়েছো?”

“হুম। আপনি খেয়েছেন?”

“আমার বউ টা অসুস্থ আমি কি খেতে পারি ওকে না দেখে।”

“হুহ! আসছে ড্রামা করতে। ”

“আবির মুচকি হেসে বলল, ড্রামা করছিনা কুইন। যখন তোমার কথা আভা বলল তখন আমি ফ্রেশ হয়েই রেডি হয়ে চলে আসছি। খাবার যে মানুষের খেতে হয় এমন টা আমি ভুলেই গেছিলাম। তখন শুধু মনে হয়েছে যে আমি তোমাকে দেখলেই শান্তি পাবো।”

“তার মানে এখনো খান নি। আম্মু ডেকে গেলো গেলেন না কেনো।”

“আমার কুইন এর সাথে কথা বলবো তাই যায়নি। আর আমার খিদেও নেই।”

“বললেই হলো! আগে খেয়ে নিবেন!ভাবি ! জোরে ডাক দিলো রাত্রি আভা কে।”

“হুম পরি আসছি।”

“আভা রুমে আসলো। এসে দেখলো দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। আভা উহুম উহুম করলো।তারপর রাত্রি সরে যেতে চাইলো কিন্তু আবির সরতে দিলোনা। আভা বলল, থাক থাক সমস্যা নেই পরি থাকো না আমার ভাইয়ার বুকে আমার কোনো সমস্যা নেই এতো লজ্জা পেতে হবেনা। বলো কি জন্য ডেকেছো।”

“রাত্রি আরও লজ্জা পেয়ে গেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল, তোমার ভাইয়ার জন্য নাস্তা দিয়ে যাও।”

“আমি খাবোনা বললাম তো! ”

“আপনি খাবেন আপনার বউ ও খাবে আপনার বাচ্চা রা ও খাবে।”

“আচ্ছা ভাইয়া বসো এখানেই তুমি আমি নিয়ে আসছি। নইলে পরি আবার রাগ করবে। বলেই আভা চলে গেলো দরজা আটকে।”

“এই এই আপনি আমাকে ছাড়লেন না কেনো?”

“এমনি।”

“ভাবি কি ভাববে বলুন তো।”

“কিছুনা। শুনলেনা কি বলে গেলো। আমার বোন বলে কথা। ”

“ইশ এখন আর আপনার বোন মানিনা। এখন ও আমাদের ভাবি। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে তোমাদেরই সব। তাও উত্তেজিত হয়োনা নইলে আবার অসুস্থ হয়ে যাবে।”

“আভা কিছুক্ষন পর খাবার নিয়ে হাজির হলো। চলে গেলো খাবার ট্রে টি-টেবিল এর উপর রেখে। রাত্রি আবিরকে নিজে খাইয়ে দিলো। আবির রাত্রিকে খেতে বলল কিন্তু রাত্রি আগে খেয়েছে বিদায় আর কিছু খায়নি।”

“খাওয়া শেষে আবির চুপ করে বসে রইলো তারপর বলল, ফোন কোথায় তোমার দাও।”

“বালিশের নিচ থেকে ফোন টা বের করে দিলো রাত্রি।”

“একদম মাথার কাছে ফোন রাখবেনা লাস্ট এন্ড ফার্স্ট টাইম বলে দিলাম। তারপর আবির তার একটা ফেবু একাউন্ট লগ ইন করে দিলো রাত্রির ফোন এ।আর বলল, এই নাও মেসেঞ্জার এ কথা বলবো সব সময় ঠিক আছে। ”

“রাত্রি খুশিতে ঠোঁট এ হাসি ফুটালো আর বলল হুম ঠিক আছে।”

“আরও কিছুক্ষন থেকে আবির আর তার মা বাবা চলে গেলো আভা আর গেলোনা।”

“অন্যদিকে আজও ফয়সাল ইভা একসাথে পুকুরপাড় বসে আছে। ইভা বলল, ভাইয়া আপনার নাম্বার টা দিবেন যদি খুব বেশি ক্ষতি না হয়।”

“ফয়সাল কিছুক্ষন চুপ থেকে তারপর নাম্বার টা দিয়ে দিলো। যে যার বাসায় চলে গেলো তারপর।”

“এভাবে শেষ পরিক্ষা চলে এলো ফয়সালের শেষ পরিক্ষার দিন ইভা বায়না করলো ভাইয়া চলুন না আমরা কোথাও ঘুরে আসি প্লীজ প্লীজ।”

“আচ্ছা চলো। তারপর ইভা ফয়সালের এক্সাম ফাইল টা তার হাতে নিয়ে নিলো। দুজনে রিক্সা করে কাছেই একটা পার্কে গেলো। এই ১ মাসে দুজনের মধ্যে অনেক ভাব জমে গেছে। পার্কে গিয়ে ইভা ফয়সালের হাত ধরেই হাঁটা হাঁটি করেছে। ফয়সাল যদিও প্রথম প্রথম একটু সংকোচ বোধ করতো কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে ইভার সাথে মিশতে। ফয়সাল ভাইয়া আমাকে ওই বেলুন গুলো এনে দিবেন। ”

“হুম দিচ্ছি বসো তুমি এখানে আমি নিয়ে আসছি।”

“আচ্ছা।”

“ফয়সাল অনেক গুলো লাভ বেলুন এনে দিলো ইভাকে। ইভা খুশি হয়ে গেলো ভীষণ আর নাচতে নাচতে ফয়সাল কে জড়িয়ে ধরলো। ফয়সাল বেচারা ভয় পেয়ে গেলো আর দেখতে পেলো চারদিকে লোকজন তাকিয়ে আছে। ফয়সাল বলল, ইভা ছাড়ো লোকজন দেখছে।”

“দেখুক তাতে আমার কি। ”

“উফ! বুঝার চেষ্টা করো ইভা সিনক্রিয়েট হয়ে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তে ছাড়ো।”

“ইভা ঝারি মেরে সরে দাড়ালো আর বলল, লোকজনের এতো সমস্যা কিসের বুঝিনা বাবা। বলেই ফয়সালের হাত ধরে আবার হাঁটা শুরু করলো। তারপর দুজনে লাঞ্চ করতে গেলো রেস্টুরেন্টে। যেহেতু আজ ফয়সালের প্রাক্টিকেল এক্সাম ছিলো তাড়াতাড়ি এক্সাম শেষ হওয়ায় এই সময় টা ঘুরে আসলো। দুপুর টাইম বিদায় রেস্টুরেন্টে আসলো।খাবার সময় ইভা ফয়সাল কে খাইয়ে দিয়েছে নিজ হাতে৷ কিন্তু ফয়সাল যেনো অস্বস্তি তে পড়ে যাচ্ছে বার বার৷ রেস্টুরেন্টের ওয়েটার গুলো ও তাকিয়ে মুচকি হাসছে৷ ফয়সাল লজ্জা পেলো।আর বলল, ইভা নিজের খাওয়ায় মন দাও আমাকে খাইয়ে দিতে হবেনা। বেচারা ফয়সাল ইভা কে জোরে ধমক ও দিতে পারেনা বাচ্চাদের মতো কান্না করে দেয় ইভা। বড় হচ্ছে ঠিকি কিন্তু ইভা এখনো সমাজ টাকে ভালো করে বুঝতে শিখেনি। এসব ভাবছে আর খাচ্ছে ফয়সাল।”

“ভাইয়া বিল টা আমি পরিশোধ করবো ঠিক আছে। বলতে দেরি হলো আর ফয়সাল ইভার দিকে রক্ত চোখে তাকাতে দেরি হলোনা। ইভা চুপ করে গেলো।”

“বিল মিটিয়ে বকশিস দিয়ে ফয়সাল বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে ইভাকে নিয়ে। ৩ টা বেজে গেছে তাই ইভা আর দেরি করলোনা ফয়সাল কে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। ফয়সাল মনে মনে ভাবছে, মেয়েটা একদম চঞ্চল আর ভালো অনেক৷ সমস্যা একটাই বুঝ কম৷ মাইন্ড নেস বলতে কিছু নেই। পাগলি একটা। তারপর ফয়সাল ও চলে গেলো বাসায়। ”

“আবির আর রাত্রির সময় ও এখন ভালো যাচ্ছে। যখন সময় পাই আবির রাতে তখন ই রাত্রির সাথে কথা বলে। ”

“কে’টে গেলো আরও ১ মাস। ফয়সালের রেজাল্ট বের হয়েছে 4.95 পেয়েছে ফয়সাল। বাসার সবাই খুব খুশি। তবে ফয়সালের একটু মন খারাপ এ+ না আসায়। ফয়সালের আম্মু আবিরদের বাসায় এসে মিষ্টি দিয়ে গেছেন। আভা ও শুনলো খুশির খবর রাত্রিকে ও বলল, রাত্রি খুশি হলো। এভাবেই আজকের দিন টা কে’টে গেলো ফয়সালের বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা ও দিলো। দিন শেষে ভুলেই গেলো ইভার কথা। আজ একবার ও কথা বলেনি ইভার সাথে। ইভা অপেক্ষায় ছিলো যে আজ ফয়সালের রেজাল্ট দিবে ফয়সাল ফোন করে ইভাকে খবর টা জানাবে। কিন্তু না! ফয়সাল ফোন করেনি। সেই জন্য ইভা আজ না খেয়েই রাতে শুয়ে পড়েছে।”

“ফয়সাল হাঁটছে এক পথ ধরে রাস্তার পাশেই একটা চিরকুট দেখতে পেলো সেখানে লিখা, ফয়সাল ভাইয়া আপনি একটু পাহাড়ের দিকে আসুন না কথা আছে। ফয়সাল পাহাড়ের দিকে গেলো গিয়ে দেখলো ইভা পাহাড়ের একদম কিনারে দাঁড়িয়ে আছে আর বলছে, ফয়সাল ভাইয়া আপনি আসছেন ! আমিতো মনে করেছিলাম আপনি আসবেননা। ভাইয়া আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই প্লীজ শুনবেন মন দিয়ে। ভাইয়া আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি কি আমায় ভালোবাসবেন ভাইয়া। উত্তর দিন। ফয়সাল উত্তর দিলো, দেখো ইভা তুমি ছোট মানুষ কিই বা বুঝো এমন পাগলামি করোনা। এভাবে ভালোবাসা হয়না। ইভা বলল, তার মানে আপনার উত্তর হলো ‘না’ ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি আপনার থেকে অনেক দূরে আর আসবোনা ভালোবাসা চাইতে৷ ভালো থাকবেন ভাইয়া। বলেই ইভা পাহাড় থেকে লাফ দিলো। ফয়সাল চিৎকার করে উঠলো ইভা! বলে। ফয়সাল ঘুম থেকে উঠে বসলো। রিতীমত ঘামছে। পাশে থাকা ওয়াটার বটল টা নিয়ে ঢক ঢক পানি খেয়ে নিলো সবটা। ফয়সাল ভাবতে লাগল, এটা কি তাহলে স্বপ্ন ছিলো! ইভা ঠিক আছে তো! মেয়েটার সাথে আজ আমি কথা বলিনি। রাগ করেনি তো আবার। ভেবেই ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো ২ টা বাজে রাত। না এখন ফোন করা যাবেনা এখন হইতো ঘুমাচ্ছে৷ সকালেই না হয় ফোন করবো। ভেবেই আবার শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুম আসলোনা ফয়সালের। ”

“সকালে উঠেই ফয়সাল ইভার নাম্বারে কল দিলো ফোন বন্ধ। ফয়সাল নাস্তা করে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। উদ্দেশ্যে ইভার স্কুল। টিফিন সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু ইভার আসার নাম নেই মাঠে। অবশেষে দেখতে পেলো ইভা একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ফয়সালের মেজাজ টা বিগড়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যেই। জোরে জোরে কদম ফেলে এগিয়ে গেলো ইভার দিকে। ইভার হাত টা শক্ত করে ধরে বলল, কোথায় ছিলে এতক্ষন আর এখানে কি করছো? ও কে হয় তোমার? ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল। ”

“আমার ক্লাস মেট ভাইয়া। ইভার সোজা উত্তর।”

“আচ্ছা চলো এখান থেকে। তারপর জোরপূর্বক নিয়ে গেলো ইভাকে। পুকুরপাড় টায় বসে পড়লো। ফয়সাল বলল, ফোন অফ কেনো তোমার? আর কাল আমাকে ফোন করোনি কেনো?”

“ইভা চুপ করে রইলো।”

“কি হলো চুপ করে আছো কেনো? উত্তর দাও। ”

“আপনার কালকে রেজাল্ট বেরিয়েছে অনেক অপেক্ষা করেছিলাম যে আপনি নিজ ইচ্ছেতে আমাকে ফোন করে জানাবেন রেজাল্ট এর কথা। কিন্তু আপনি ফোন করেননি। আমি ভেবেছি হইতো ফ্রেন্ডস দের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন তাই কল করিনি। কিন্তু যখন রাতেও কল দিলেন না আমি আপনার উপর রাগ করে ফোন টা ওয়াশ রুমের বালতি তে চুবিয়ে রেখেছি। যাতে আম্মু বকা দিতে না পারে৷ ভাংলে তো আম্মু বকা দিবে। তাই আম্মুকে সকালে বলেছি যে ফোন টা হাত ফসকে বালতিতে পড়ে গেছে। আম্মু বলছে যে, ফোন নিয়ে বাত রুমে কি করিস। আমি বলেছি, লাইট টা ডিস্টার্ব করছিলো ওয়াশ রুমের তাই তো মোবাইল টা নিয়ে গেছিলাম। হুম আরেকটা কাজ করেছি সাথে ওয়াশরুমের লাইট টা নষ্ট করে ফেলেছি। ”

” ফয়সাল এর যেনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। ”

“আপনি হাসছেন কেনো? ব্রু কুচকে বলল ইভা।”

“এতো কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছো আমি ফোন না দেওয়ায়! এতো রাগ কেনো হুম। আর আমি তোমার কে হয় যে আমার সাথে কথা বলতেই হবে।”

“ইভার মুখটা চুপসে গেলো। ইভা বলল, আমার জামাই হন! তাইতো এতো রাগ করে এইসব কান্ড ঘটিয়েছি।”

“কীহ! আমি তোমার হাজবেন্ড! কবে বিয়ে করলাম তোমায়।”

“তা তো জানিনা!”

“তাহলে বললে কেনো? ”

“ইচ্ছে হয়েছে তাই বলেছি।”

“আচ্ছা ভালো করেছো। এখন শুনো আমি লন্ডন চলে যাবো আব্বুর কাছে। ওখানে আমি পড়াশুনা করবো। তোমার সাথে হইতো আর দেখা হবেনা। তবে মাঝে মাঝে কথা হবে ইনশাআল্লাহ। ”

“ইভা চমকে উঠে ফয়সালের দিকে টলমল চোখে তাকালো।”

“এ’কি ইভা তোমার চোখে পানি কেনো?”

“ইভা কিছু না বলে ফয়সাল কে জড়িয়ে ধরে বলল, কোথাও যাবেন না আপনি। আমার সাথে সব সময় দেখা করবেন প্লীজ। আমি ভালো থাকবোনা আপনার সাথে দেখা করা ছাড়া।”

“ফয়সাল জানতো ইভা এমন কিছু করবে তাই ফয়সাল রিয়েক্ট করেনি এভাবে জড়িয়ে ধরাতে। ফয়সাল ইভাকে সোজা করে বলল, কেনো ভালো থাকবেনা শুনি। ”

“জানিনা আমি।”

“না জানলে হবেনা বলতেই হবে বলো।”

“হইতো বুঝতাম না আকর্ষন কি। কিন্তু আপনার সাথে মিশার পর আমি সেটা বুঝেছি। এটাও বুঝেছি যে সব কিছু আবেগ নয় অনেক কিছু সত্যি ও হয়। আর তাই আমার কথা হলো আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ভাইয়া। আমি আপনাকে ছেড়ে দূরে থাকতে পারবোনা। প্লীজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।”

“ফয়সাল ভড়কে গেলো। চোখ গুলো গুল গুল হয়ে গেলো। ফয়সালের স্বপ্ন যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি। স্বপ্নের ধরন অনুযায়ী ফয়সাল ভয় পেয়ে বলল, আচ্ছা আমাকে ভালোবাসো ভালো কথা। তুমি কি করতে পারবে আমার জন্য।”

“যা বলবেন তাই করতে পারবো। ”

“আচ্ছা আমার জন্য কতোদিন অপেক্ষা করতে পারবে? দেখো এখন তো আর তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা। আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। ইনকাম করতে হবে। তাহলেই না তোমাকে বিয়ে করতে পারবো। তার জন্য তো অনেক সময় প্রয়োজন। তুমি কি সেই সময় টা পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে?”

“হুম পারবো। কেনো পারবোনা। অনেক দিন অপেক্ষা করতে পারবো।”

“পারবে আরও ৫ বছর অপেক্ষা করতে?”

“এতোগুলো বছর! ”

“হুম।”

“পারবো ইনশাআল্লাহ। ”

“যদি মোহে পড়া ভালোবাসা হয় তাহলে তো ভুলে যাবে।”

“নাহ ভুলবোনা। দাঁড়ান ১ মিনিট। বলেই ইভা দৌড়ে পুকুরপাড় এর কড়ুই গাছ টার কাছে গেলো সেখানে ইটের কণা দিয়ে আজকের তারিখ টা লিখলো সাথে এফ লিখলো। (10-10-2022-F)। ফয়সাল এর দিকে তাকিয়ে বলল, এই লেখা টা এখানে থাকবে আমি মনে করি। যদি গাছ টা কা’টা পড়ে যায় তাহলে ও মনে থাকবে আশা করি ভুলবোনা আপনাকে। ৫ বছর পর এই যায়গা টায় আমি আবার দেখা করবো আপনার সাথে আসবেন তো!”

“হুম ইনশাআল্লাহ আসবো। ”

“আবারও ইভা ফয়সাল কে জড়িয়ে বলল, আই লাভ ইউ ভাইয়া।”

“ফয়সাল ও এখন জড়িয়ে ধরলো আর বলল, নো ভাইয়া। লাভ ইউ টু পাগলি। অপেক্ষায় থেকো আমার আমি ফিরে আসবো তোমার কাছে প্রমিস করছি।
আজকের সারাদিন ইভা আর ফয়সাল একসাথে কাটিয়েছে। ”

“পরদিন সকালের ফ্লাইটে ফয়সাল লন্ডন পাড়ি জমায়।”

“৫ মাস পেড়িয়ে গেলো একদিন আভা দুপুরে খাবার খাচ্ছিলো হটাৎ তার বমি পেলো। ওয়াশ রুমে গিয়ে বমি করে দিলো। রাত এর আম্মু টেনশনে পড়ে গেলেন। এই সময় কেও বাসায় নেই। রুমা আভা আর রাত এর আম্মু বাসায়। রাত এর আম্মু সি এনজি তে করে আভা কে নিয়ে হসপিটালে চলে গেলো। রিপোর্ট আসলে জানতে পারলো আভা প্রেগন্যান্ট। রাত এর আম্মু ভীষণ খুশি হলো। অবশেষে বাসায় ফিরলো। কিন্তু কাউকে কিছু বলেনি। বাসায় সবাই একসাথে হলেই বলবে। ”

“সন্ধ্যা বেলা রাত দের বাসায় আভার আম্মু আব্বু আর আবিরকে ইনভাইট করেছেন রাত এর আম্মু। তারা সবাই বাসায় এলো। লিভিং রুমে রুমা সবাইকে নাস্তা দিয়ে গেলো। নাস্তা খেতে খেতে রাত এর আম্মু সবাইকে বলল যে, আভা প্রেগন্যান্ট। সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো এমন একটা সংবাদ শুনে। ”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে