বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০৪+০৫

0
1104

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ৪+৫

“তুমি বুঝবা কি করে। তোমার মাথায় তো গো’বর পোড়া। সবার বকোনি খেতে খেতে তোমার মাথা টা চলে গেছে। একটু তো আমার মতো লিজেন্ট হও আপু। বলেই রায়াফ গাড়ির বাইরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে।”

“এই ভাই বল না কি ভাবছিস?”

“আরে আপু আমার মনে হয় কি ভাইয়া আর আভা আপু দুজন দুজনকে পছন্দ করে। এই কথা বলেই রায়াফ দাঁত বের করে শব্দ ছাড়া হাসতে লাগলো। ”

“সে কি কথা ভাই সত্যি নাকি! আচ্ছা তুই কি করে বুঝলি? আর এটা তো সত্যি না ও হতে পারে। আবির ভাইয়া আর রাত ভাইয়া বেস্ট ফ্রেন্ড। সেহেতু আভা আপু আবির ভাইয়ার বোন। সেই হিসেবে সম্মাননা করে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতেই পারে। এতে করে তুই এমন কথা কিভাবে বলতে পারিস।”

“চুপ করো তো আপু। তুমি এসব বুঝবেনা। এরই মধ্যে ভাইয়া চলে এলো। রায়াফ চুপ করে বাইরের পরিবেশ দেখা শুরু করলো। আমিও চুপ করে বসে রইলাম। তারপর আমরা বাসায় পৌঁছে গেলাম কিছুক্ষনের মধ্যে। বাসায় এসে প্রতি দিনকার মতো শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। আজকে বৃষ্টির দিন ছিলো বিদাই বিকেলের পরিবেশ টা শীতল আবহাওয়ার কারনে অনেকটা সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে। তাই আমি চট করে আম্মুকে গিয়ে বললাম, আম্মু আমাকে কফি দাও তো এক মগ। তারপর কিচেন থেকে রুমা আপু বলে উঠলো, খালাম্মা রে কেন কই’তাছেন আমারে কই’লেই তো হয় তো হয়। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে যাও। রুমা আপু হচ্ছে আমাদের বাসার সার্ভেন্ট। খুব ভালো মেয়েটা। আমার ১ বছরের বড়। যাই হোক তারপর আমি লিভিং রুমে গিয়ে সোফা তে বসে পড়লাম। পায়ের উপর পা তুলে ঝু’লাতে লাগলাম। ”

“এই ল’ন আপনের কফি। রুমা আপু আমাকে কফিটা হাতে দিয়ে বলল। তারপর আমি কফির মগটা হাতে নিয়ে আমার রুমে গিয়ে বেলকনিতে দোলনায় বসে পড়লাম৷ কফিতে একের পর এক চুমুক দিচ্ছি আর ঠান্ডা বাতাশ টা অনুভব করছি। কফিটা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তারপর রুমে চলে এসে একটা উপন্যাস বই পড়তে বসে গেলাম। বইটা অর্ধেক পড়া শেষ করতেই মাগরিব এর আযান দিয়ে দিলো। তারপর উঠে কিছুক্ষন হাঁটা হাঁটি করলাম। সন্ধ্যায় লিভিং রুমে আমি আম্মু রাত ভাইয়া আর রায়াফ বসে আছি। রুমা আপু আমাদের চা বিস্কিট দিয়ে গেছেন। আমি চা পছন্দ করিনা সেটা রুমা আপু জানে তাও আমাকে চা দিলো। আমি সেটা রুমা আপুকে দিয়ে বললাম, তুমি খাও ভালো লাগবে। জানোই তো আমি চা পছন্দ করিনা৷ মুচকি হেসে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিলাম রুমা আপুর হাতে৷ রুমা আপু কাপটা নিয়ে আমাদের সাথেই বসে পড়লো। ”

“রায়াফ আম্মুকে বললো, আম্মু আমার না বিয়ে খেতে খুব ইচ্ছে করছে। তুমি ভাইয়া কে একটা বিয়ে করিয়ে দাও নইলে আপুকে বিয়ে দিয়ে দাও। ”

“আম্মু বলল, বা’দর ছেলে এতো কথা বলিস কেনো।”

“ভাইয়া কে বলছিস বল না! আমাকে নিয়ে পড়েছিস কেনো। হুহ! আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি? ভাইয়া কে দেখ। ভাইয়া তো এত্তো বড় হয়ে গেছে কইদিন পর বুড়ো হয়ে যাবে। ভাইয়াই এখনো বিয়ে করেনি৷”

“এই তোরা আমার বিয়ে করা নিয়ে পড়েছিস কেনো। হুম! আর রাত্রি তুই বলছিস আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। কোন দিক থেকে আমাকে বুড়ো মনে হয় হ্যাঁ সবে মাত্র ২৬ বছর চলছে। কিছুটা ভাব দেখিয়েই ভাইয়া কথা টা বললো।”

“ভাইয়া ২৬ বছর কি কম নাকি। ২ দিন পরই তো আরও বয়স হয়ে যাবে। তখন তোমাকে কেও বিয়ে করবেনা৷ মেয়েরা তোমাকে দেখলে বলবে বুড়ো জামাইকে বিয়ে করবোনা। তারপর দেখা যাবে আমরা আমাদের কিউট ভাইয়ার জন্য আর বউ খুঁজে পাচ্ছিনা। তখন তো আমাদেরই কষ্ট হবে তাই না। কি রে আপু বল না আমি সত্যি বলিনি? ”

“হ্যাঁ হ্যাঁ রায়াফ তো ঠিকি বলেছে। আম্মু তুমি বরং একটা মিষ্টি মেয়ে দেখে আমাদের ভাইয়ার বউ করে নিয়ে এসো। তখন আমরাও আর একটা সঙ্গী পেয়ে যাবো। তাই না। ”

“আম্মু বলল, আচ্ছা তাই নাকি। ঠিক আছে তাহলে তোদের আব্বু আসুক এই বছরেই তোদের ভাইয়ার জন্য একটা বউ নিয়ে আসবো কি বলিস। ”

“আম্মুর কথা যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাই আমি রায়াফ জুড়ে বলে উঠলাম সত্যিই! ”

“হ্যাঁ সত্যি।”

“ভাইয়া বলল, আম্মু তুমিও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে বলা শুরু করেছো। আমি এখন বিয়ে সাদি করতে পারবোনা। আরও বছর দেড় এক চলে যাক না। তারপর না হয় কিছু ভাবা যাবে। ”

“আম্মু বলল, উহুম একদম না। আমার ও তো একটা বউ মা লাগবে৷ তোরা চলে গেলে বাসায় একা থাকি কতো ভালো লাগে একা থাকা। তাই তো তোর বউ আনার ব্যবস্থা করবো। যাতে আমাকে বাসায় একা থাকতে না হয়৷ ”

“তোমাদের সাথে আর পারিনা আমি৷ আব্বু আসুক তারপর যা খুশি করো ঠিক আছে৷ বলেই ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেলো। ”

“আমি আম্মু রায়াফ একসাথে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলাম। রুমা আপু ও হাসলো৷ তারপর যে যার রুমে চলে গেলো। আমি রুমে এসে পড়তে বসলাম। পড়তে পড়তে ঘড়ির কাটা ১০ঃ৪৫ ছোয়ালো। তারপর আমি উঠে গেলাম টেবিল ছেড়ে। ঘুম ঘুম লাগছিলো চোখে তাই বেসিন থেকে মুখ টা ধুয়ে এসে বেলকনিতে গেলাম। আজকে চাঁদ তারা কিছুই নেই আকাশে। মেঘ গুলো তার আবরন দ্বারা পরিবেষ্টিত করে রেখেছে পুরো আকাশ৷ আকাশ টা কে একদম বিষন্ন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো একটু পর কান্না করে দিবে। তারপর হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগলো । তাই আমি রুমে এসে বেলকনির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে একেবারে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পড়লাম। দেখলাম রুমা আপু টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে৷ হইতো কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের ডাকা হতো। যাক ভালোই করেছি আগে আগে এসে। একে একে সবাই চলে এলো। তারপর খাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে গেলাম। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম। কারন ঘুম যখন এসেছিলো তখন ঘুমাতে পারিনি। তাই এখন ঘুম উধাও হয়ে গেছে। এটা আমার খুব বা’জে হেবিট’স গুলোর মধ্যে একটা। রাত প্রায় ২ টা বেজে গেলো তাও আমার ঘুম আসছেনা। কাল যেহেতু শুক্রবার তাই বেশি প্যারা ও নিচ্ছিনা। খুব কষ্টে ঘুমিয়েছি রাত টা পার করেছি কোনোভাবে । সকাল তখন কইটা বাজে জানা নেই এলার্ম দেয়নি। কারন ঘুম থেকে এতো তাড়াতাড়ি উঠার দরকার নেই। আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই দেখলাম ১০ টা বেজে গেছে। এই রে আম্মু এখনো আমাকে ডাকেনি। আল্লাহই জানে কি পি’টানি দেয় আমাকে৷ ভাইয়া ও বাসায় আজ তাহলে তো ভাইয়া ও বকা দিবে। ভয় পেয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি উড়না টা গায়ে জড়িয়ে এক প্রকার দৌড়ে লিভিং রুমে চলে গেলাম। আমাদের লিভিং রুম ডাইনিং রুম একই সাথে শুধু মাঝ খানে খানিকটা পাশ দেয়াল আর স্টোন এর মারবেল সেট করা দুই পাশে। এই দৌড়ে আসার কারনে মারবেল গুলোতে হাত লেগে শব্দ হতে শুরু করলো৷ আমি বেশ বিরক্ত হলাম এটার শব্দে যদিও বা এটা আমার দ্বারাই হয়েছে৷ তখনই দেখি সোফায় বসে থাকা একজন ব্যক্তি আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। যদিও বা কাওকে দেখে কখনো এমন হয়না। বা লজ্জা বোধ ও করিনা ওই সব ন্যাকা শ’ষ্টি লজ্জা আমার দ্বারা হয়না৷ সোফায় বসে থাকা ব্যক্তিটি আর কেও না আবির ভাইয়া। সোফায় ভাইয়া আম্মু রায়াফ আর আবির ভাইয়া হইতো বসে গল্প করছে। আমার কিছুটা খারাপ লাগলো এই ভেবে যে, তারা আমাকে না ডেকে একা একা গল্প করছে। ধীরে ধীরে আম্মুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আসসালামু আলাইকুম আবির ভাইয়া। কেমন আছেন।”

“হুম আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো। ”

“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। তো আপনি কি একাই এসেছেন নাকি?”

“হুম রাত সকাল সকাল ফোন করলো চলে আসতে আর আন্টিও খুব করে বললো, তাই আমি এসেছি৷ যেহেতু আজ শুক্রবার তাই আমাদের অফিসে তেমন কাজ নেই। ভাবলাম যে কিছুক্ষন সময় কাটাবো দুই বন্ধু। ”

“ওহ আচ্ছা খুব ভালো করেছেন। আভা আপু আন্টি আংকেল কে নিয়ে আসলে আরও ভালো হতো। ”

“আভা এসেছে তো! আবির ভাইয়া বলল।”

“কোথায় দেখছিনা যে! ”

“ও কোথাও একটা গেছে হইতো। ”

“ওহ আচ্ছা আমি দেখছি। বলেই আভা আপুকে খুঁজতে লাগলাম কোথায় গেলো৷ হাঁটতে হাঁটতে ভাইয়ার রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি আভা আপু ভাইয়ার ড্রেসিং টেবিল এ রাখা ফ্রেমের ছবিটা হাতে নিয়ে খুব চাহনী দিয়ে দেখছে। আমি পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আভা আপুকে। ”

“ক কে কে? ভয় পেয়ে বললো আভা আপু।তাড়াতাড়ি করে ফ্রেম টা যায়গায় রেখে দিলো।”

“সামনে যেয়ে বললাম আপু কেমন আছো৷ কখন এসেছো আমাকে ডাকোনি পর্যন্ত। খুব অভিমান করেছি আমি৷ ”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এইতো খানিক্ষন আগেই এসেছি। তুমিতো ঘুমাচ্ছিলে। আমি একবার ডাকতে গিয়েছিলাম তখন আবির ভাইয়া বলল না ডাকতে। তাই আর যায়নি। তো কখন উঠলে তুমি।”

“এইতো মাত্রই উঠেছি৷ ”

“চলো আগে নাস্তা করে এসো তারপর জমিয়ে আড্ডা দিবো। ঘুড়তে বের হবো। ”

“সত্যি! খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম”

“হুম সত্যি। ”

“কিন্তু রাত ভাইয়া তো মনে হয় আমাকে নিবেনা। ব’কা দিবে। মন খারাপ করে বললাম। কারন ভাইয়া আমাদের কখনো ঘুড়তে নিয়ে যায়না। অন্য কারও সাথে যেতেও দেয়না। ”

“কে বলেছে নিবেনা । আলবাত নিবে। তোমার ভাইয়া নিবে ওর ঘা’ড় নিবে। চলো আগে নাস্তা করো।”

“তারপর আমি আভা আপুকে নিয়ে আবার লিভিং রুমে চলে আসলাম। আভা আপু রায়াফ এর পাশে গিয়ে বসেছে। আমি এই ফাকে টেবিলে এসে বসে পড়লাম। রুমা আপুকে ডেকে খাবার দিতে বললাম। রুমা আপু স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিলো তাড়াতাড়ি করে। আমি টেবিল এ বসে আরামছে খাচ্ছি। আবির ভাইয়া যে আমার মুখোমুখি বসা আমার সেদিকে খেয়ালই নেই। গালে চেপে খাবার খেয়েই যাচ্ছি। হটাৎ সামনে চোখ পড়তেই দেখলাম রায়াফ আর আবির ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এটা দেখে আমি বোকা বনে গেলাম। কি বেপার ওরা হাসছে কেনো৷ ভেবেই ব্রু কুচকে তাকালাম ওদের দিকে। তখন আবির ভাইয়া আমাকে ইশারা দিলো যে আমার ঠোঁট এ খাবারের অংশ লেগে আছে। তারপর আমি টিসু নিয়ে মুখ টা মুছে আবার খাওয়ায় মন দিলাম।খাবার শেষ করে সোফায় তাদের সাথে গিয়ে বসলাম। আম্মু সেখান থেকে উঠে চলে গেলো রুমে৷ আব্বু ফোন করেছে মনে হয় রিং বাজছে ফোন এ। তাই আম্মু উঠে চলে গেলো। আভা আপু আবির ভাইয়া আর রায়াফ হাসছে কি কথা নিয়ে যেনো। আমি নিরব দর্শক হয়ে তা দেখছি। হটাৎ আবির ভাইয়ার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেলো। আমি চোখ সরিয়ে আগের মতো তাদের কথা শুনছি। তারপর সেখানে আম্মু এলো ফোন নিয়ে আর বললো, নে তোর আব্বু কথা বলবে তোর সাথে। আমি ফোন টা নিয়ে ডিভানে বসলাম তাদের থেকে একটু দূরে। তারপর…

“আমি আব্বুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলতেছি। আব্বুকে বললাম, আব্বু তুমি কবে আসবে দেশে? তুমি নেই আমার একটু ও ভালো লাগেনা। ভাইয়া আম্মু রায়াফ সবাই আমাকে ব’কা দেই। প্লীজ তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। মন খারাপ করে রইলাম কথা গুলো বলে।”

“মামনী মন খারাপ করেনা। আব্বু আর দুইদিন পরই বেক করবো বাংলাদেশে। তখন আমি সবাইকে ব’কে দিবো কেমন। একদম মনম’রা হয়ে থাকবেনা। আমার মেয়েকে হাসি খুশিই বেশি সুন্দর লাগে কেমন।”

“সত্যি তুমি দুইদিন পর চলে আসবে। ”

“হ্যাঁ। ”

“এহ আমাকে ফেলে তোমরা কথা বলছো। আমি কি নদীর ঢেউ এ ভেসে আসছি নাকি। রায়াফ দৌড়ে এসে কথাটা বললো।”

“তুই স’র এখান থেকে এটা তোর আব্বু না আমার আব্বু। যা ভা’গ! বলেই রায়াফ কে সরিয়ে দিলাম।”

“তুমি বললেই হলো। আব্বু দেখেছো আপু আমাকে অপমান করছে কিন্তু।তুমি কিছু বলবেনা।”

“আরে তোমরা সবাই তো আমার রাজকন্যা আর রাজপুত্র। তাই বলে ঝ’গড়া করবে নাকি। এটা কিন্তু মোটেও ভালো না কেমন।”

“ওকে আব্বু তুমি কিন্তু আপুর জন্য ওখান থেকে কিছু নিয়ে আসবেনা। সব কিছু আমার জন্য আনবে।”

“হুহ আনবে তোর জন্য তাই না! ভেঙছি কে’টে বললাম রায়াফ কে।রায়াফ ও আমাকে ভেঙছি দিয়ে আবার আভা আপুর পাশে গিয়ে বসলো। আমি ওইদিক তাকাতেই দেখলাম আবির ভাইয়া খুব মনযোগ দিয়ে আমাদের দেখছিলো হইতো। আমার তাকানো দেখে তিনি চোখ সরিয়ে নিলেন। আমিও আরও কিছুক্ষন কথা বলে আব্বুর সাথে তারপর ফোন টা আম্মুকে দিয়ে দিলাম।”

“আমি সেখান থেকে আমার রুমে চলে এলাম। আভা আপুকে বলে এসেছি আমার রুমে আসতে।আমি রুমে এসে বেলকনিতে বসে আছি আর আমার গোলাপ ফুলের গাছ গুলো কে হাত দিয়ে না’ড়াচ্ছি।কিছুক্ষন পরেই রায়াফ আমার রুমে ঢুকেই বললো, আপু আসবো। ”

“তুই তো এসেই পড়েছিস তাহলে আবার পারমিশন নি’চ্ছিস কেনো। বে’য়াদব ছেলে, রুমে এসে বলে কিনা আপু আসবো। ভেঙিয়ে বললাম কথাটা।”

“আপু তুমি ওখান ত্থেকে চলে এলে কেনো। আমরা তো মজা করছি অনেক আসো তুমি।”

“নাহ ওখানে বড়রা সবাই কথা বলছে আমি যাবো কেনো।”

“তাতে কি চলো।”

“নাহ তুই যা আমি যাবোনা।”

“আমি গেলাম না। এরই মাঝে আভা আপু আমাকে জুড়ে ডাক দিলো। রাত্রি এদিকে এসো তো কথা আছে। ”

“তারপর সেখানে গেলাম। সোফায় টেনে বসালো আভা আপু। তারপর বললো, রাত ভাইয়া আমরা ঘুড়তে যাবো ভেবেছিলাম কিন্তু এই বৃষ্টিতে তো ঘুড়তে যাওয়া যাবেনা। তাই আমি ভাবছিলাম যে আমাদের আব্বু আর আংকেল দেশে আসলে তারপর আমরা ট্যুরে যাবো। কি বলো সবাই।”

“রায়াফ খুশিতে নেচে উঠলো। আমিও সম্মতি দিলাম। আবির ভাইয়া ও বললো ঠিক আছে। রাত ভাইয়া কিছুক্ষন মুখটা গম্ভীর রেখে ব্রু কুচকে আভা আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। এইভাবে তাকালো কেনো বুঝলাম না। আমাদের নিয়ে যাবে ভেবে কি আভা আপুর দিকে এভাবে তাকালো। নাকি অন্য কোনো কারন। তারপর ভাইয়া বললো, আচ্ছা সময় হোক দেখা যাবে। এই বলেও কিছুটা নাক ফু’লিয়ে আভা আপুর দিকে তাকালো। রায়াফ কে ইশারা করলাম দেখনা একবার ভাইয়ার মুখটা।”

“রায়াফ তাকিয়ে কি যেনো একটা ভাবলো তারপর ফিক করে হেসে দিলো। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রায়াফ এর হাসির শব্দ শুনে রাত ভাইয়া হুর’মোর করে রায়াফ এর দিকে তাকালো। মনে হয় ভাইয়া ধ্যা’নে ছিলো।”

“কিরে তুই হু’দায় হাসছিস কেনো? আমি বললাম।”

“এমনি ও তুমি বুঝবেনা। বলেছিলাম না কালকে গাড়িতে। আমার কানে কানে ফিস ফিস করে বললো রায়াফ।আমি কিছুই বুঝলাম না। তারপর রাত ভাইয়া উঠে তার রুমে চলে যেতে নিলে আভা বললো, ভাইয়া চলে যাচ্ছো কেনো।রাত ভাইয়া আবার রেগে তাকালো।তারপর চলে গেলো। আমি শুধু চেয়ে দেখতে লাগলাম ওদের কাহিনী। কিন্তু হিসাব টা মেলাতে পারলাম না । ”

“আভা আপু বললো কি হলো চলে গেলো কেনো? ”

“আবির ভাইয়া বললো, হইতো কাজ করতে গেছে রুমে চলে আসবে। আচ্ছা রায়াফ চলো আমি তোমার সাথে আড্ডা দিবো এসো তোমার রুমে যাই।বলেই আবির ভাইয়া রায়াফ কে নিয়ে চলে গেলো।”

“আভা আপু বললো আমরা কি করবো যে যার মতো চলে গেলো। আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি দেখে আসি রাত ভাইয়া কি করছে।”

“আচ্ছা যাও। আর আমি সিঙ্গেল ব্যক্তি একা বসে রইলাম।”

“আসবো রাত ভাইয়া। আভা আপু ভাইয়ার রুমে গিয়ে বললো।”

“রাত ভাইয়া আভা আপুকে টেনে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে বললো, আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া হুম।সেই তখন থেকে ভাইয়া ভাইয়া করে চি’ল্লাচ্ছো যে।”

“আভা আপু ভাইয়ার শার্ট এর কলার দুইহাতে ধরে আস্তে আস্তে বললো, সবার সামনে কি তোমাকে অন্য কিছু বলা যাবে নাকি। তাইতো ভাইয়া বলেছি। এতো রাগ করো কেনো। ”

“তাই না! তাহলে শা’স্তি পেতে হবে।বলো যা শা’স্তি দিবো তাই মাথা পেতে নিবে।”

“ঠিক আছে বলো।”

“এক্ষুনি আমাকে কি’স করবে তাও লি’প এ। বলো রাজি। ”

“ওহ এই শাস্তি। এ আর তেমন কি। ”

“তাহলে করে ফেলো।”

“এইরে সেরেছে কি বলে ফেললাম। এখন কি করবো। মনে মনে আভা আপু বললো। তারপর আস্তে আস্তে মুখ টা ভাইয়ার মুখের কাছে নিলো। ভাইয়া আভা আপুর দিকে ঝু’কে রইলো।”

“রায়াফ তোর ভাইয়া কে বল তো আম্মু ডাকছি।”

“আচ্ছা আম্মু যাচ্ছি। এই বলে রায়াফ ভাইয়ার রুমের দিকে গেলো। দরজায় দাঁড়িয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো রায়াফ। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো, ভাইয়া তোমাকে আম্মু ডাকছে তাড়াতাড়ি যাও। ”

“রাত ভাইয়া আর আভা আপু ছিটকে সরে গেলো। তাদের আর রোমান্স করা হলোনা রায়াফ ১২ টা বাজিয়ে দিলো। রাত ভাইয়া রায়াফ কে হাত চেপে ধরলো তারপর রুমে নিয়ে বললো, কিরে যাচ্ছিস কোথায় এদিকে আয়। ”

“আ আ ভাইয়া আমি কিছু দেখিনি সত্যি কথা। আমি কিচ্ছু দেখিনি। ছেড়ে দাও আমাকে। ”

“মিথ্যে বলবিনা একদম। ”

“রায়াফ তুমি তো আমার গুড বিগ ব্রাদার তাই না। আশা করি তুমি আমার ভালোবাসা উপেক্ষা করোনা ।তাই বলছি কি যেটাই দেখেছো ওইটা যেনো আমাদের মধ্যে থাকে হুম। এটা অন্য কেও জানলে তো লজ্জার বিষয় তাইনা। তাই আমরা এটাকে সিক্রেট রাখবো। প্রমিস করো। আভা আপু বললো।”

“তাহলে ভাইয়া কে বলে দাও আমাকে যেনো আর না বকে। সব সময় যেনো চকোলেট আইস্ক্রিম এসব কিনে দেই।”

“আচ্ছা রে ভাই আমার ঠিক আছে। এখন বল কেনো এসেছিস।”

“আম্মু ডাকে তোমাকে। তাই ডাকতে এসেছিলাম। চলো। তারপর ভাইয়া রায়াফ কে নিয়ে আম্মুর রুমে চলে গেলো। আভা আপু ভাইয়ার রুমে বসেই কাগজ পত্র দেখছিলো।”

“আমি সোফা থেকে উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে আমার রুমে যেতে লাগলাম। হটাৎ কারও সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলাম। আহ, কে দেখে হাঁটতে পারোনা।বলেই উপরে তাকালাম। আ আবির ভাইয়া আপনি। স সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ”

“ইট’স ওকে। তো মুখটা এমন করে রেখেছো কেনো। তোমাকে তো হাসলে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। ”

“না মানে আসলে কিছুনা এমনি। ”

“ওহ আচ্ছা এমনি তাই না! আচ্ছা ঠিক আছে। তো এভাবে ছুটে যাচ্ছিলে কোথায়।”

“রুমে যাচ্ছিলাম আর কি।”

“এরই মাঝে রায়াফ এসে বললো, তোমরা এখানে কি করছো। ”

“আমরা তোমার আপুর সাথে কথা বলছি। মুচকি হেসে আবির ভাইয়া বললো।”

“এই আবির ভাইয়া চলো আপুর রুমে যাই ওর বেলকনিতে অনেক ভালো লাগে চলো নিয়ে যাই তোমাকে। ”

“আবির ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমিও তাকিয়ে রইলাম। ভাইয়ার চোখ দুটো খুব সুন্দর। তার চোখের দিকে তাকালে কেমন যেনো একটা নে’শাক্ত ভাব অনুভব হয়। আমার ভাইয়ার বন্ধু না হলে আমি নিশ্চিত তার সাথে প্রেম করা শুরু করে দিতাম। বলেই মনে মনে হাসলাম। তারপর বললাম ভাইয়া চলুন।”

“আমার বেলকনিতে গিয়ে রায়াফ আবির ভাইয়া কে আমার দোলনা টায় বসিয়ে দিলো। আর রায়াফ নিজেও আবির ভাইয়ার কুলে বসে পড়লো। ”

“এই রায়াফ এদিকে আয়। রাত ভাইয়া রায়াফ কে ডাক দিলো। রায়াফ উঠে চলে গেলো। ”

“আমি গিয়ে আবির ভাইয়ার পাশে দাঁড়ালাম। আবির ভাইয়া উঠে দাঁড়ালো আর বলল,

এই বৃষ্টির নেশাতে মন চায় হাড়াতে।
সব সীমা ছাড়িয়ে মন চাই শুধু তোমাকে।

” বলেই আবির ভাইয়া আমার দিকে আবার তাকালো। সেই নে’শাতুর চোখ দুটো দিয়ে। ”

“আমিও তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাইয়া আপনি তো খুব সুন্দর করে ছন্দ সাজাতে পারেন। আপনাকে কবি বললেও কোনো দিকে ভুল বলা হবেনা।”

“তা জানিনা। তবে আমার এগুলো ছন্দ নয়। ”

“তবে কি? ”

“যদি বলি এগুলো আমার মনের কথা। যে টা আমি চাইলেই সেই মানুষ টাকে স্ব-চোক্ষে সম্মুখে বলতে পারিনা। বলেই ভাইয়া বৃষ্টির পানে তাকিয়ে রইলো। ”

“বাহ এতো গুছিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারেন। আচ্ছা ভাইয়া সেই মানুষ টা কে আমি কি শুনতে পারি। ”

“আছে কেও একজন সময় হলে তুমিই বুঝে যাবে। আমাকে বলতে হবেনা। মনে করো যে তোমারই ব্যক্তিত্বের অধিকারী সে।”

“এতো কঠিন কথা আমি বুঝিনা ভাইয়া। যাই হোক আপনার সমস্যা হলে বলার দরকার নেই।”

“ভাইয়া মুচকি হেসে আবারও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।”

“আচ্ছা ভাইয়া আপনার চোখে কি এলকোহল মেশানো আছে? ”

“আবির ভাইয়া ব্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে।বলল, মানেহ।”

“না মানে কিছুনা এমনি বলেছি। বলেই আমি বৃষ্টির পানে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলাম বৃষ্টির সেই ফোঁটা পানি গুলোকে। আর মনে মনে বললাম, স্বাদে কি আর বলেছি মি. আমিতো আপনার চোখ দুটোর নে’শায় মা’তাল হয়ে পড়েছি৷ ”

“এভাবে অনেকটা সময় আমরা গল্প করেছি। ”

“লাঞ্চ এর টাইম হয়ে গেলে আম্মু আমাদের সবাই কে ডেকে পাঠালো খাবার খাওয়ার জন্য।”

“রাত ভাইয়া আবির ভাইয়া রায়াফ এক পাশে বসেছে টেবিলে। আমি আভা আপু আম্মু এক পাশে। আভা আপুর সামনে রাত ভাইয়া বসা। আমার সামনে আবির ভাইয়া। খাবার খাওয়ার সময় আমি আবার আমার পা গুলো ঠিক যায়গায় রাখতে রাখতে পারিনা। তাই নড়া চড়া করতে গিয়ে হটাৎ…

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে