#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১
“বেলকনিতে কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি হটাৎ চোখ নিচে পড়তেই দেখলাম ব্লেক জিন্স আর হোয়াইট কালার ইন করা শার্ট পরিহিত এক যুবক তার প্রাইভেট কার এর পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একমনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মুচকি হাসি। এই হাসি দেখে যে কোনো মেয়ে পাগল যায়। তাকে চিনতে আমার বেশি মাথা ঘামাতে হলোনা। কারন তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে অবাক হচ্ছি যে ওনি এতো রাতে আমার বাসার নিচে কি করছেন? এখানে কেনোই বা এসেছেন? অনেক গুলো প্রশ্ন মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। এতোকিছু না ভেবে বেলকনি ছেড়ে রুমে চলে আসলাম। সাত পাঁচ না ভেবে কফি টা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ”
★চলুন ঘুমের মধ্যে আমার পরিচয় টা দিয়ে দেয়। আমি হলাম রাত্রি এহমাত। শাহীন এহমাত এবং তাছমিন বেগম এর একমাত্র মেয়ে। আমার বড় ভাইয়া আছেন যার নাম রাত এহমাত। ছোট ভাই আছে নাম রায়াফ এহমাত। বড় ভাইয়া বিজনেস করে আব্বুর সাথে। আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ি সাইন্স এর স্টুডেন্ট। ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। আমরা তিন ভাই বোনের মধ্যে সবাই বদ*মেজাজী। আমি একটু বেশি জেদি আর রগ বাকা। ছোট ভাই ও আমার মতোই। বড় ভাইয়া এতোটা নয় তবে রাগি। আমরা যতই নিজেকে সাহসী ভাবিনা কেনো ভাইয়া কে প্রচুর ভয় পাই দুই ভাই বোন। চলুন এবার জেনে নেই কে বেলকনির দিকে তাকিয়ে ছিলো? ওনি হলেন আমার বড় ভাইয়ার বন্ধু আবির খান। দুলাল খান আর মমতাজ বেগম এর বড় ছেলে। তাদের ছোট মেয়ের নাম হলো আভা খান। আপুটা এবার অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। আর বাকী সব কিছু না হয় গল্পে জেনে নিবেন আস্তে আস্তে। গুড নাইট★
“সকাল এ ঘুম থেকে উঠায় লেট হয়ে গেলো যদিও এলার্ম দিয়েছিলাম! কিন্তু ওটার বিরক্তি তে নিজেই সকালে বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ডাইনিং এ গিয়ে দেখি সবার খাওয়া শেষ আমিই বাকী। ”
“আম্মু বলে উঠলো, নবাবের বেটি এতক্ষন এ আসছে খাবার খেতে। পরের বাড়ি যখন যাবি না তখন কেও এভাবে খেতে দিবেনা খু*ন্তি হাতে গরম ছে*কা দিবে। বলছি কি একটু নবাবী টা কমিয়ে কিছু তো অন্তত শিখে নে যাতে করে পরের বাড়িতে গিয়ে আমাকে কথা না শুনতে হয়। বড্ড তেজী গলায় আম্মু এক নাগারে কথা গুলো বললো।”
“আম্মু তুমিও না এতো কিছু আমি করতে পারবোনা। আর যার বাড়িতে নিবে সে আমাকে কাজ করেই খাওয়াবে নইতো নিবেনা। আমি আগে থেকে বলেই যাবো যে আমি কিছু পারিনা হই বিয়ে করবেন না হয় চলে যাবেন। বলেই ন্যাকা ভেঙছি দিলাম মুখ। ”
“আহ কত শখ মেয়ের তুমিতো জমিদার এর কন্যা যে তোমাকে ওইভাবে নিয়ে গিয়ে খাটে বসিয়ে খাওয়াবে। ”
“আম্মু বেশি বেশি হচ্ছে খাবার দাও। এর মাঝেই ভাইয়া এলো। ”
“কিরে তুই এতক্ষন এ নাস্তা করছিস কলেজ যাবি কখন? ক্লাস মিস করার ধান্দা করছিস নাকি? ”
“না ভাইয়া ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে তাই আর কি। ”
“আচ্ছা শুন আমার আজ একটু তাড়া আছে অফিসের। আমি চলে যাচ্ছি কার নিয়ে। অফিস থেকে কাওকে পাঠিয়ে দিবো কার নিয়ে কলেজ দিয়ে আসবে তোকে। একদম একা যাওয়ার ফন্দি আট*বিনা।”
“আমি পরোটা চি’বাতে চি’বাতে বললাম, ভাইয়া আমি বলছিলাম কি তুমি চলে যাও কার পাঠাতে হবেনা। আমি চলে যেতে পারবো তো।”
“একদম চুপ। আর একদিন বলবি তো তোর খ’বর আছে। যা বলেছি আমি তাই হবে। বলেই ভাইয়া চলে গেলো।”
“আমি দু:খ ভারা’ক্রান্ত মন নিয়ে ঠোঁট উলটে খাবার ফিনিশ করলাম। টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবো ওমনি দেখি রায়াফ আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। ওর হাসি দেখে আমার শরীর রা’গে ফেটে যাচ্ছে। কিরে হাসছিস কেনো।”
“আপু তুমি যতই ভাইয়ার কবল থেকে ছুটতে চাওনা কেনো পারবেনা। হি হি! তুমি যে খুব উড়ন’চন্ডি ভাইয়া সেটা জানে। তাইতো তোমাকে এটে রাখে। বলেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো রায়াফ।”
“তাই না! দাঁড়া আজকে তোকে মে’রেই ফেলবো। বলেই ছুটা ছুটি করতে লাগলাম। পরে আম্মুর বকোনি শুনে রেডি হয়ে গেলাম কলেজ যাবো বলে। ”
“আব্বু বিজনেস এর ডিল ফাইনাল করতে আমেরিকায় গেছেন। তাই বাসায় বেশি কিছু করিনা। কারন আব্বুই আমার একমাত্র সম্বল যিনি আমাকে সব সময় আম্মুর মারা আর ব’কোনির হাত থেকে বাঁচায়। যাই হোক ভাইয়া গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তাই তাড়াতাড়ি করে আমি আর রায়াফ গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আমি আর রায়াফ একই সাথে পড়ি। স্কুল এন্ড কলেজ বিদাই আমরা একই সাথে পড়ি আসা যাওয়া করি। এই রয়াফ হলো আমার এক নাম্বার শ’ত্রু ওর জন্য কলেজে নিজ ইচ্ছা মতো কিছু করতে পারিনা। সিকিউরিটির দায়িত্ব পালনে বেশ পটু রায়াফ। যাদের বাসায় এই ছোট ই’দুর চেলা’পেলা আছে এক মাত্র তারাই জানে যে এসব কতোটা ভ’য়ানক। যাই হোক কলেজ এ চলে এসেছি। গাড়িও চলে গেছে। রায়াফ কে ক্লাসে দিয়ে আমি নিজের ক্লাসে চলে গেলাম। ”
“কেমিস্ট্রি ক্লাস চলছে এখন । বিরক্তিকর সাবজেক্ট মনে হয় আমার কাছে। যদি ক্লাস না করে কমন রুমে গিয়ে বসে থাকি। তাহলে তো স্যার সোজা ভাইয়ার কাছে বিচার দিবে। এই ভয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ৪৫ টা মিনিট পার করলাম। আর রয়েছে আমার এক বেস্টু ইতি। ওর তো পুরো ক্লাসে ধ্যানই ছিলোনা ওর বি এফ এর সাথে চেটিং এ বিজি ছিলো। ওর প্রেম আলাপ শুনলে মনে হয় আমি মঙ্গল গ্রহের উপজাতি। এ জীবনে কি করিলাম। ভাইয়ার ভয়ে ছোট ভাই এর প্যারায় জীবনটা আমার অতিষ্ট। না পারি ফ্রেন্ডদের সাথে কোথাও ঘুড়তে যেতে। আর না পারি একটা রিলেশন করতে।”
“কিরে তোর কি জামাই মা’রা গেছে নাকি এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে কি ভাবছিস? ইতি বললো। ”
“জামাই যদি থাকতো রে ইতু তাইলে তো ভালোই ছিলো। তোর মতো প্রেম ও করতে পারিনা। ভাইয়া আব্বু বিয়ে ও দেয়না। খালি পড়া আর পড়া আর ভালো লাগেনা। ইচ্ছে করে কি! আলাদীনের চেরাগের খুঁজ করি। হইতো ওই জিনি আমাকে এই মহা রু’গ মানে ভাইয়ার কবল থেকে বাঁচাতে পারে। ”
“আহারে কি দু:খ আমার বেস্টুর। আচ্ছা শুন না তুই রিলেশন করবি?”
“কীহ! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ইতির দিকে। আমার কীহ শুনে ও ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। আমি বললাম, তোর কি মাথা খারাপ ইতু। তুই কি আমার এই মূলার জীবন সম্পর্কে জানিস না। এই মূলার সাথে কেও প্রেম করবে! ভাইয়ার ভয়ে কেও তো আমার ধারে’কাছেই আসতে চাইনা। আর তুই বলছিস প্রেম! আমার মনে হয় কি ভাইয়া আমার আসে পাশে মূলার পারফিউম দিয়ে রাখে। তাই হইতো এই মূলার বিচ্ছিরি গন্ধে কেও আমার পাশে আসতে চাইনা! তর্জনী আঙ্গুল ডান গালে ঠোকা দিয়ে বলতে লাগলাম কথা গুলো। আর রইলো আমার সিকিউরিটি গার্ড রায়াফ তুই তো ওরে খুব ভালো করে চিনিস কিছু হলেই ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া। ভেঙ্গিয়ে বললাম। ভাইয়া করে করেই ওর জান যাই যাই। যাত শ’ত্রু ও আমার। সব কিছুতেই ভেজাল করে। ”
“আরে বেস্টু এতো চিন্তা করিস কেনো? আমি তো আছি। কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আর তুই এতো ভয় পেলে চলবে নাকি। যদি পড়ে যাওয়ার ভয়ে উঠে না দাঁড়াস তাহলে তো তোর হাঁটায় হবেনা। এতো চিন্তা করিস না মেনেজ করে নিবো ঠিক। তার আগে তোর পিচ্চি ভাই টার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ইতি এক নাগারে কথা গুলো বললো।”
“টিফিন টাইমে ক্যান্টিন এ গিয়ে বসলাম। খাবার খাওয়ার সময় দেখলাম সেকেন্ড ইয়ার এর এক সিনিয়র ভাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ঠিক কার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বুঝতে পারলাম না। আমার দিকে নাকি ইতির দিকে। ইতিকে ইশারা দিলাম চোখে। ইতি চোখ ঘুড়াতেই বুঝতে পারলো ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর খাবার শেষ করে ক্যান্টিন থেকে উঠে চলে আসলাম। ক্লাসের শুরু আরও ১৫ মিনিট পর। তাই ইতিকে নিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছ টার নিচে একটা বেঞ্চ পাতানো আছে ওইটাই বসলাম। আমি পড়ে থাকা কিছু ফুল হাতে নিয়ে তার থেকে সবুজ অংশগুলো ছাড়িয়ে নিলাম৷ যেগুলো আমরা ছোট বেলায় নোখ হিসেবে লাগাতাম । আজও তাই করলাম ৫ টা নোখে লাগাইলাম। ইতির ফোন আসলো। মানে আর কি ওর বি এফ ফোন করেছে ও কথা বলতে লাগলো। আমি জন্মের সিঙ্গেল মানুষ তাই ওকে বিরক্ত না করে অন্য দিকে হাঁটতে লাগলাম। ডান পাশে ফিরতেই দেখলাম ক্যান্টিনে থাকা সেই সিনিয়র ভাইটা আমার দিকে তাকিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলছে আর হাসছে। আমার বিরক্তিকর লাগলো বিষয়টা। এড়িয়ে চলে গেলাম আবার গাছের নিচে। গিয়ে দেখি ইতি নেই। কোথায় গেলো মেয়েটা? তারপর দেখি ও দুই নম্বর ফ্লোর থেকে আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করছে উপরে যেতে। আমিও চলে গেলাম উপরে। তারপর ক্লাস শুরু হলো। জীববিজ্ঞান ক্লাস চলছিলো তখন। স্যার পড়াচ্ছিলেন এই সময় খেয়াল করলাম আমার চোখে কোনোকিছুর রশ্নি এসে পড়ছে। সেই রশ্নি খেয়াল করতেই দেখলাম সেই সিনিয়র ভাইয়া টা তার ওয়াচ এর গ্লাস দিয়ে সূর্যের রশ্নির বিকিরন ছাপ দিচ্ছে আমার উপর। (আপনারা কখনো এমনটা করবেন না এতে চোখের ক্ষতি হয়।)
আমি সেই দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ক্লাসে মনযোগ দিলাম। কলেজ ছুটির পর ক্যাম্পাস এ রায়াফ এর জন্য বসে আছি কারন ওর ক্লাস হতে আরও ১০ মিনিট বাকী আছে। একা একাই বসে ছিলাম। তখন দেখি সিনিয়র সেই ভাইয়া টা আমার দিকে হেঁটে আসছে, তৎক্ষনাৎ আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তখনই রায়াফ চলে আসলো। রায়াফ আমার দিকে কি রকম একটা ভঙ্গিতে যেনো তাকালো। এর মানে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। গাড়ি আসলে আমি রায়াফ গাড়িতে উঠে পড়ি। সব সময় ভাইয়া নিতে আসে আমাদের আবার দিয়েও যায়। কিন্তু আজ ভাইয়ার কাজ আছে বিদাই আসতে পারেনি হইতো। গাড়িতে রায়াফ একটা কথাও বলেনি নাক ফুলিয়ে বিসে ছিলো হাত বুকে গুজে। যে ছেলে বক বক করে আমার মাথা খেতো এর আজ হলো কি?ভাবতে ভাবতেই গাড়ি বাসার সামনে থামলো। বাসায় গিয়ে গোসল করে বেলকনিতে চলে গেলাম চুল ঝাড়তে ঝাড়তে। বেশ লম্বা চুল হওয়ায় শুকাতে সময় লাগে তাই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা উপন্যাস বই নিয়ে গেছিলাম। পড়তে পড়তে সন্ধ্যা হয়ে গেলো খেয়াল করিনি। ভাইয়া বাসায় এসে ডাক দিলো সন্ধ্যা তখন ৭ টা বাজে। ”
“কিরে আজকে কোনো রকম সমস্যা হয়নি তো আমি না থাকায়? ”
“না ভাইয়া কিছু হয়নি। আমার কথা রায়াফ আড়চোখে আমার দিকে চোখ বড় করে তাকালো। আমি সেটা খেয়াল করেছি ঠিকি কিন্তু আজকে ওর এমন অঙ্গি ভঙ্গি আমি ঠিক কোনো কিছু আন্দাজ করতে পারলাম না। ”
“রাতে পড়তে বসলাম হটাৎ কারেন্ট চলে গেলো। তাই ছোট ছোট প্রহর হেঁটে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজকে। দেখতে ভীষন ভালো লাগছে। আনমনে চাঁদের দিকে চেয়ে রইলাম আর ভাবতে থাকলাম। এই সময় যদি কেও আমার পাশে থেকে চন্দ্র বিলাশ করতো কতোই না ভালো লাগতো। আমার সেই সঙ্গীকে নিয়ে আমি এই চাঁদ টাকে উপভোগ করতাম আর একটু মনোরঞ্জন করে। ভাবনার মাঝেই আম্মুর ডাক পড়লো। আম্মু তোমার আর আসার সময় ছিলোনা। এতো সুন্দর একটা ভাবনা জগতে ছিলাম তুমি সব ভেস্তে দিলা ধূর। বির বির করে বলেই চলে গেলাম দরজার দিকে। ”
“কিরে দরজা খুল অন্ধকারে কি করছিস। ”
“দরজা খুলে দিলাম আম্মু ক্যান্ডেল টা আমার হাতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। ”
চলবে,,