বউ Part- 10

0
1741

Story: বউ
Part- 10
writer: #Nur_Nafisa
.
.
২ বছর পর….
(অফিস থেকে ফেরার সময় রায়হান চৌধুরী রেহানকে নিয়ে একটি ফ্ল্যাট দেখতে গেলো।)
.
রায়হান- রেহান, ফ্ল্যাট টা কেমন?
.
রেহান- আব্বু, এটা দেখে কি করবে? আবার কেনার প্ল্যান করছো?
.
রায়হান- হুম।
.
রেহান- এতো বড় বাড়ি রেখে আবার ফ্ল্যাট কিনবে কেন?
.
রায়হান- আমার জন্য না, আমার ফ্রেন্ডের জন্য। আগামী শুক্রবার তারা দেশে আসবে। ফ্যামিলি ছোটই। বলেছে একটা ফ্ল্যাট দেখতে। ৪দিনের মধ্যে ফ্ল্যাট কিনার ব্যবস্থা করলে ভালো হবে।
.
রেহান- মগের মুল্লুক নাকি! ৪দিনে সব ব্যবস্থা করা যায় কিভাবে! আমাদের বাসায় থাকতে বলো, পরে ব্যবস্থা হলে চলে আসবে।
.
রায়হান- তা না হয় বললাম, কিন্তু এখন দেখবি তো…
.
রেহান- ছোট ফ্যামিলি হলে, খারাপ না, এটাই ভালো হবে। ওনারের সাথে কথা বলেছো?
.
রায়হান- হুম, পছন্দ হলে জাস্ট কিনে নিবো।
.
রেহান- যিনি কিনবে ওনাকে ছবি পাঠাও। দেখো কি বলে…
.
রায়হান- পাঠিয়েছি, বলল ভালো লেগেছে, তাও আমি যাতে ভালো ভাবে দেখে নেই।
.
রেহান- সব ব্যবস্থা তো করেই রেখেছো। তাহলে আর কি! কনফার্ম করে দাও।
.
রায়হান- ওকে….
.
.
শুক্রবার সকালে..
রেহান- এতো আয়োজন কেন, আম্মু?
.
রুবিনা- তোর আব্বুর ফ্রেন্ড আসবে আজ, দুপুর ২টার দিকে তারা আসবে। তোর আব্বু বলেছে এয়ারপোর্ট থেকে তোকে রিসিভ করতে।
.
রেহান- আমি কেন! আব্বু কোথায়!
.
রুবিনা- তোর আব্বু ভোরে একটা কাজে বেরিয়েছে। তোকে বলেছে, যেতে তুই যাবি ব্যাস…
.
রেহান- আমি তো তাদের চিনিও না। কিভাবে রিসিভ করবো?
.
রুবিনা- উনারা তোকে চিনে, ছবি দেখেছে তোর। তোর খুজতে হবে না।
.
রেহান- আচ্ছা।
.
রিয়াদ- আম্মু এই অর্ধেক নারিকেল আমার, আমি যাই….
.
রুবিনা- এই রিয়াদ… সকাল সকাল নারিকেল খেলে পেট খারাপ করবে, নিয়ে আয় বলছি…..
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রিয়াদ- নায়ায়ায়া…
.
(রেহান দৌড়ে গিয়ে রিয়াদের কাছ থেকে নারিকেল নিয়ে রুবিনার কাছে দিয়ে দিলো। ওদিকে রিয়াদ কান্না করে বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে)
.
রুবিনা- মেরেছিস?
.
রেহান- তোমার ছেলেকে মারতে হয় আবার!
.
(এমনি ফোনটা বেজে উঠে)
রেহান- হ্যালো আব্বু…
.
রায়হান- রেহান ওরা ২টার দিকে আসবে। তুই একটু আগেই চলে যাস।
.
রেহান- আচ্ছা।
.
(১২টায় রেহান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ১.৫ ঘন্টা জেমে ই আটকে থাকতে হলো। ১:৪২ মিনিটে এয়ারপোর্টে পৌছালো। সেখানে আরো ৩০মিনিটের মতো বসে আছে। কেউ তো আসছে না তার কাছে, আবার বেরিয়ে গেলো না তো! রেহান আবার রায়হান চৌধুরীকে কল করতে যাবে তখনি ফোন পকেট থেকে নিয়েও আবার রেখে দিলো!
এ কাকে দেখছে সে! ভুল দেখছে না তো! রিজোয়ান আহমেদ এসে জড়িয়ে ধরলো রেহানকে। পেছনে আয়েশা আহমেদ ও নাফিসা ও আছে।)
.
রিজোয়ান- হেই ইয়াং ম্যান…. কেমন আছো?
.
রেহান- আসসালামু আলাইকুম।
.
রিজোয়ান- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
.
রেহান- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
.
রিজোয়ান- আলহামদুলিল্লাহ।
.
রেহান- আসসালামু আলাইকুম আন্টি…
.
আয়েশা- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো রেহান?
.
রেহান- আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
.
আয়েশা- আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
.
নাফিসা- আম্মু, হু ইজ হি?
.
আয়েশা- হি ইজ রেহান। ২বছর আগে তুমি তাদের বাসায় ছিলে।
.
নাফিসা- হ্যালো…
.
(রেহানের শরীরের রক্ত সব জমাট বেধে যাচ্ছে রাগে। এতো তারাতাড়ি কিভাবে ভুলে গেছে তাকে! কই সে তো ভুলে যায়নি! মন চাচ্ছে কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগাতে। কিন্তু কোন অধিকারে! তার তো কোন অধিকার নেই! তাই সে নাফিসার কথায় কোন রেসপন্স করলো না। আংকেল আন্টি কে গাড়িতে উঠার জন্য বললো। নাফিসা রেহানের কাছ থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে একটু অবাক হলেও তা নিয়ে আর মাথা ঘামালো না। সারা রাস্তা নাফিসা বকবক করেই যাচ্ছে তার বাবা মায়ের সাথে। রেহান খুব বিরক্ত বোধ করছে। রিজোয়ান আহমেদ রেহানকে কোন প্রশ্ন করলে শুধু তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে রেহান। বাসায় আসার পর….)
.
রিয়াদ- ভাবিইইই!
.
নাফিসা- হু আর ইউ কিউট বয়?
.
রিয়াদ- আই এম রিয়াদ চৌধুরী।
.
নাফিসা- ইন্টেলিজেন্ট বয়। আব্বু আমরা কাদের বাসায় এসেছি?
.
রিজোয়ান- আমার ফ্রেন্ডের বাসায়,
.
নাফিসা- দুবছর আগে কি এ বাসায় এসেছিলাম?
.
রিজোয়ান- হুম।যাও আংকেল আন্টির সাথে কথা বলো….
.
নাফিসা- ওকে।
.
(নাফিসা ও তার বাবা-মা রেহানের বাবা মায়ের সাথে কথা বললো বেশ কিছুক্ষণ।)
রেহান- ( নাফিসার কর্মকাণ্ড দেখে রেহানের মেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র দুবছরে মানুষ এতোটা বদলে যায় কিভাবে! সবকিছু এতো তারাতাড়ি ভুলে যায় কিভাবে! আগে তো শশুর আব্বু, শাশুড়ী আম্মু বলে ডাকতো, এখন আংকেল আন্টি! বাহ! আব্বু আম্মু কিভাবে এই মেয়ের সাথে নরমাল বিহেভ করছে! আমাদের কাউকে তো চিনতেই পারছে না। আগে জানলে কখনো বলতাম না আব্বুকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে! প্রয়োজনে হোটেলে ব্যবস্থা করে দিতাম। আল্লাহ জানে এইসব কতদিন দেখতে হয়! এখন তো ইচ্ছে করছে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। হ্যাঁ আমিই কোথাও চলে যাবো আব্বুকে বলে। তাদের ফ্ল্যাট ঠিক হলে এ বাসা ছেড়ে গেলে আসবো।)
.
(দুপুরের পর থেকে রেহান বাড়ির বাইরেই ছিলো। লাঞ্চ ও করেনি বাসায়। বন্ধুদের উছিলায় বেরিয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরতে হলো। বাবার আদেশ, সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা যাবে না। এসে দেখেছে নাফিসা ড্রয়িং রুমে রিয়াদের সাথে বসে লুডু খেলছে, আর রিয়াদকে নাম ধরেই ডাকছে, আগে তো মটো ছাড়া কথাই বলতো না! রেহানের এসব একটুও ভালো লাগছে না। সে রুমে এসে লাইট অফ করে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। আর ভাবছে কালই ঢাকার বাইরে কোথাও চলে যাবে।
নাফিসা আস্তে আস্তে রেহানের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। তারপর খুব সাবধানে রেহানের খাটের পাশে এসে রেহানের বুকে মাথা রেখে ঝাপটে ধরে শুয়ে পড়লো। রেহান হকচকিয়ে গেল এমন কান্ডে! সে দ্রুত উঠতে গেলো কিন্তু সম্ভব হলো না। হাতটা বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জালালো। নাফিসাকে দেখে তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল। ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইছে কিন্তু পারছে না)
.
রেহান- একি! আপনি এখানে কেন?
.
নাফিসা- দুবছর আগে কি আমি এখানে এভাবে শুয়ে ছিলাম!
.
রেহান- কি হচ্ছে কি এসব! ছাড়ুন…
.
(নাফিসা মাথা তুলে রেহানের দিকে তাকালো)
নাফিসা- ছাড়বো না…. আপনার কি!
.
(রেহান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নাফিসার চেহারা দেখে ইমোশনাল হয়ে গেছে সে। অজান্তে হাত দুটো দিয়ে নাফিসার মুখটা ধরে বলতে লাগলো….)
.
রেহান- নাফিসা, সত্যিই কি তোমার কিছু মনে নেই? এতো সহজে সব ভুলে গেলে কিভাবে!
.
(নাফিসা রেহানকে আরও অবাক করে দিয়ে রেহানের নাকটা টেনে দিয়ে বললো….)
.
নাফিসা- সব মনে আছে রে পাগল…. তোর জন্যই তো আমি এখনো কুমারী।
.
(রেহান স্তম্ভিত হয়ে গেছে, এটা কি বললো নাফিসা! সে ঠিক শুনেছে তো! তার গলা ধাধিয়ে আসছে…মুহূর্তে পাশ ফিরে নাফিসাকে নিচে ফেলে রেহান নাফিসার উপর উঠে পড়লো। )
.
রেহান- কি বলেছো? আবার বলো…
.
নাফিসা- কেন একবারে শুনতে পাও না!
.
রেহান- না, শুনতে পাই না।
.
নাফিসা- ডাক্তার দেখাও…. হিহিহিহি…
.
রেহান- আচ্ছা দেখাবো, আগে বলো আমাকে রেখে চলে গিয়েছিলে কেন?
.
নাফিসা- বা রে! আমার গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হবে না!
.
রেহান- এখন এসেছো কেন?
.
নাফিসা- বিয়ে করতে আর আমার বরের সাথে থাকতে।
.
রেহান- আমাকে কেন বিয়ে করবে?
.
নাফিসা- ভালোবাসি বলে…
.
রেহান- আগে বলোনি কেন? যদি আমি বিয়ে করে ফেলতাম অন্য কাউকে!
.
নাফিসা- সেই সুযোগ তোমাকে দিলে তো!
.
রেহান- তুমি কিভাবে জানতে?
.
নাফিসা- আব্বুর সাথে কি শশুর আব্বুর এমনিতেই ফ্রেন্ডশিপ! দুবছর আগেই তো আব্বু আম্মু শশুর আব্বু আর শাশুড়ী আম্মুর সাথে কথা বলে বিয়ে পাকা করে রেখেছে…. আর আমি তোমার সব খবরই রেখেছি। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট থাকলে তখনই বিয়ে হয়ে যেত…. হিহিহিহি….
.
রেহান- হোয়াট!! তার মানে আমি ছাড়া সবাই সব জানতো!
.
নাফিসা- তুমি আর রিয়াদ ছাড়া সবাই…
.
(নাফিসার গালে রেহান তার গাল ঘষতে ঘষতে)
.
রেহান- এই পাগলী তুমি কতো দুষ্টু তা কি জানো….
.
নাফিসা- আহ!
.
(রেহান মাথা তুলে তাকালো নাফিসার দিকে)
রেহান- কি হলো!
.
নাফিসা- দাড়ির ঘষাতে আমার গালটা মনে হয় ছিলে গেছে! ফেসের কি অবস্থা করেছো! বুড়ো একটা! দেখে মনে হয় দুই বাচ্চার আব্বু হয়ে গেছে!
.
রেহান- হাহাহা…. আমার বয়স মাত্র আটাশ বছর। বুড়ি তো তুমি, মেয়েদের টিনএজ শেষ হয়ে গেলে বুড়ি হয়ে যায়। তোমার তো বিশ হবেই….
.
নাফিসা- হুহ!
.
রেহান- তাছাড়া তুমি দুবছর আগে চলে না গেলে হয়তো আজ দুই বাচ্চার আব্বু থাকতাম।
.
নাফিসা- ইশ! স্টুপিড একটা, যেন বছরে বছরে বাচ্চা জন্ম দিতো….
.
(রেহান “হুম” বলে আবার নাফিসার গলায় মুখ গুজে দিলো। নাফিসা শিউরে উঠলো। নাফিসা আস্তে আস্তে বলতে লাগলো… )
.
নাফিসা- এই কি করছো!আমাদের কিন্তু এখনো বিয়ে হয়নি….
.
(রেহান দ্রুত মাথা তুলে নাফিসাকে বললো…)
.
রেহান- এই #বউ পালিয়ে বিয়ে করবে…?
.
.
চলবে……
.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে