ফুলগুলো ভুল হলো পর্ব-০৫

0
168

#ফুলগুলো_ভুল_হলো — ৫

পরবর্তী দুটো দিন ইমরান কাজে অতিব্যস্ত হয়ে থাকল, সারাদিন ওকে ল্যাপটপে খুটুরমুটুর করতে দেখা গেল আর রাতটা দুজনে একসাথে একঘরে থাকলেও, অনিকে একেবারেই এড়িয়ে চলল ও।

অনিতে আটকে গেলে, ওর সারাজীবনের তপস্যা ভেঙে যাবে। উপরে, আরও উপরে, সবার উপরে ওঠার যে স্বপ্নটা ওর তা অধরাই হয়ে থাকবে।

টপ পজিশনে চাকরি করে, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ইনকাম করাটাই ওর লক্ষ্য নয় শুধুমাত্র, নতুন নতুন বিজনেস স্ট্রাটেজি, নতুন ক্যাম্পেইন আইডিয়া, একেবারেই ভিন্ন মার্কেটিং মডেল আবিস্কার করে মার্কেটিং গুরুদের নামের পাশে নিজের নামটা লিখে দিতে চায় ও। চলার পথের অতি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ও পার হয়ে এসেছে, এখন চূড়ায় ওঠার সময়। তালগাছের শেষ আড়াইহাত বেয়ে ওঠা যেমন কষ্টের তেমনি সাফল্যটা চোখে দেখা দূরত্বে থাকলেও এই রাস্তাটুকুই সবচেয়ে কঠিন আর শ্রমসাধ্য।

এই চলার পথে অনি এখন শুধুমাত্র একটা ব্যারিয়ার ইমরানের কাছে, যাতে পা বেধে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। মুখ থুবড়ে পড়াটাও অসম্ভব না।

পুরো পৃথিবী যখন দৌঁড়োচ্ছে, অনির আঁচলে আটকে গেলে ওকে পেছনে ফেলে অন্য সবাই এগিয়ে যাবে, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না ওর।

তাই তালাক বাতিলের কথা কিছুই জানালো না ও অনিকে। আগে দেশ ছাড়তে হবে। আর অনি তো থাকলই। কোথাও চলে তো যাচ্ছে না।

নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করেই না হয়, অনির সাথে সবকিছু মিটিয়ে নেওয়া যাবে। ততদিন যেমন চলছে সব, চলুক।

এই দুটোদিন ইমরান নিঃশ্বাস বন্ধ করে ছিলো এইভেবে যে, এই না অনি সবাইকে সবকিছু বলে দেয়। এই না ইমরানের মা এসে ওকে চেপে ধরে। অনির মা, চাচা বা ভাই না জানি কী গন্ডগোল করে। কিন্তু কিছুই যখন হলো না, তখন নিশ্চিন্ত হলো ও, অনি কাউকেই কিছু বলেনি আর বলবেও না।

বুকের আলোড়নটা একটি কমল। অনি থাকুক। আরেকটু বড় হোক। নিজেকে সাজিয়ে নিক আর ইমরান নিজেও নিজের স্বপ্নগুলো গুছিয়ে ফেলুক। তাড়াতাড়ির তো কিছুই নেই।

এই মূহুর্তে অনিতে আটকে যাওয়া যাবে না, অনির ফাঁদে গলা বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না!

*****

অনির বাবা এনায়েত শিকদার বুদ্ধিমান আর পরিশ্রমি মানুষ ছিলেন। ছিলেন পরিবার অন্তপ্রাণ মানুষ। জমিজমা যা ছিলো তা চারভাইয়ের সপরিবার অন্নসংস্থানের জন্য যথেষ্ট হলেও, উন্নত জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত ছিলো না। এনায়েত শিকদার ছিলেন উচ্চাভিলাষী মানুষ। কীভাবে কীভাবে মিশরের একটা তেলের পাম্পে চাকরি জুটিয়ে ফেলেন আর দূরদেশে পাড়ি জমান। পাঁচবছরের পরিশ্রমের টাকায়, পলাশডাঙায় দোতলা মার্কেটভবন করেছেন আর চারভাই মিলে গরুর ফার্ম করেছেন। শুরুতে ছোটো করে শুরু করলেও সেই ফার্ম এখন বিশাল, প্রায় তিনশো গরু আছে এখন। এনায়েত শিকদার শুরু করে গেলেও শেষটা দেখে যেতে পারেননি। অনির বয়স এগারো আর অলি মাত্র নয়, সবার বড় পরশকে সতেরো বছরের রেখে স্ট্রোক করেন। ভাইয়েরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছিল, সুস্থ করতে কিন্তু আয়ু যার ফুরায় তাকে কি আর কোনো চেষ্টাতেই রাখা যায়?

বাবা মরে গেলে সবার আদর কদর কমে গেলেও অনি, পরশ আর অলির বেলায় তা হয়নি। চাচারা তাদের ভাইকে খুব ভালবাসত।

অনির বাবা মরে যাওয়ায় সেই ভালোবাসা যেন বহুগুণে বেড়ে গেল। এতটাই যে মৃত ভাইয়ের বাচ্চাগুলোকে শাসন করার গুরুতর কারণ থাকলেও, চোখ পাকিয়ে কথা বলতেই মনে সায় দেয় না। সারাক্ষণ শুধু মনে হয়, ‘আহারে বাপমরা বাচ্চাগুলো!’

এই না শাসনে ক্ষতিটা হয়েছে অনির বেশি। পড়াশুনা, চালচলন, রাঁধাবাড়া, সেলাইফোঁড়াই কিছুই শেখেনি, সারাগ্রামে টইটই করে এর ওর ঘরের খবর নিয়ে, সারাগ্রামের মানুষের ঘরের লোক হয়ে উঠেছে যেমন তেমনি একেবারে অবাধ্য বুনোলতার মতো গেঁয়ো আর চঞ্চল হয়ে উঠেছে।

কোনোদিন তাকে দেখা যায় মালা কাকির বাড়ি, তার সাথে বসে, গোবর দিয়ে উঠোন লেপতে, জরিফুফুর মাচায় লাকড়ি উঠিয়ে দিতে, আলতাফের মায়ের হাঁসের বাচ্চা খুঁজে আনতে, বুড়োর মা দাদির সাথে রাস্তার পাশের খাদায় নেমে হেলেঞ্চা শাক তুলতে, অনাবৃষ্টির দিনে, মাটিতে পানি দিয়ে কাদা তৈরি করে, বাচ্চাদের সাথে সেই কাদায় গড়াগড়ি দিতে!

পাড়ায় কার চালে কুমড়ো পেকেছে, কার পেয়ারা ডাসা, কার গাছের বরই চুকা, কার বাড়ির পেছনে ঢেঁকি শাকের আস্তানা, কার খোপের মুরগি তা দিতে বসেছে – এসব তথ্য ওর নখদর্পনে।
রমিজ কাকা নেশা করে এসে কোন রাতে কাকিকে পেটায়, সকালে কাকির মুখ দেখে বুঝে যায় ও। পিয়ালির শশুরবাড়ি থেকে যৌতুকের চাপে ওর স্বামী ওকে বের করে দিয়েছে, অনিই আগে খবর পায়।
হামিদ কাকার বউ তার বুড়ো মাকে খেতে দেয় না। জরিফুফুর ভাই দুটো খেতে দেওয়ার বিনিময়ে উদয়অস্ত পরিশ্রম করিয়ে নেয় তাকে দিয়ে।
মিশুর খুব ভালো বিয়ে হয়েছে- বর রাত্রে খুব আদর করে।
সোনামণির বর কত কত গয়না-শাড়ি কিনে দেয়!
এ সমস্ত সালিশ বা নিষিদ্ধ গল্পের কমন শ্রোতা অনি।

জরি ফুফুর এক চোখ নষ্ট, জন্ম থেকেই। বিয়ে দেওয়ার সময় তার বাবা খাট,তোষক, হাড়ি-পাতিল তো দিয়েছিলোই, নতুন একটা ঘর তুলে দিয়েছিল, আর মেয়ে-জামাইকে একটা সাইকেলও কিনে দিয়েছিল। কানা বউকে তাই কদরও করত সবাই শশুর বাড়িতে। বছর ঘুরতেই বাবা মরল, ভাইরা কিছু দেওয়া কমিয়ে দিলো আর জরিফুফুরও কপাল পুড়ল।

বাবা মরার ছয় মাস যেতে না যেতেই যে ঘর তার বাবার টাকায় উঠেছিল, সেই ঘর থেকে বিতাড়িত হলো সে। বাবার বাড়ি তখন ভাইবউদের বাড়ি। বড়ঘরে জায়গা হলো না তার। এককোণায় গোয়ালঘরের সাথে একটা একচালার কোণে পড়ে থাকে।

লাকড়ি বানানো, গরুর দেখাশোনা, ধানের কাজ, নদী পর্যন্ত হেঁটে বাচ্চাদের গু-মুতের ত্যানা ধুয়ে আনা, উঠোন-ঘর লেপা – সব কাজ তার কাঁধে। ভেতর বাড়ির কাজে যেমন তাকে কেউ ডাকে না, তেমনি গ্রামের কোনো শুভ অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি নিষিদ্ধ। ভাইদের যে ছেলেমেয়েগুলোকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন তাদের বিয়ে-আনন্দতেও উঁকি মারার অধিকার নেই জরিফুফুর। বিয়েশাদিতে চোখের পানি ফেলা অমঙ্গল, তাই ওইদিন জরিফুফু কাঁদেন না। বিয়ের পরেরদিন ফুলে ফুলে কাঁদতে দেখা যায় তাকে। জরিফুফুর চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে আসা সেই চোখের পানি আর গোঙানির শব্দ মিলেমিশে অনিকে ভয় দেখাতে লাগল।
পরশের বিয়েতে জি বাংলার নায়িকাদের মতো করে সাজতে পারবে না, অলির বিয়েতেও কেউ ওকে ডাকবে না! সীমা আপা আর রিমার বিয়েতে ও মেলানি যেতে পারবে না!
জরি ফুফুর ভাগ্য আর অনির ভাগ্যও তো মিলে-মিশে গেল। তাও জরি ফুফু যখন তখন কাঁদে শব্দ করে, অনি তো তাও পারছে না!
একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে ইমরান যখন নিজের ফিউচার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে, অনিও ঠিক তাই। নিজের ভবিষ্যৎ ভাবছে।
গ্রামের কোণায় পড়ে থাকা জরি ফুফুর কষ্টের কথা মনে পড়ে অনিরনকান্নাও পাচ্ছে!

*****

ইমরান চলে যাচ্ছে আজ। বিকেলের ফ্লাইট। দু’ঘন্টা আগে চেকইন করতে হবে। দুপুরের খাবার বারোটার ভেতর দিতে বলেছেন ইমরানের বাবা। কিন্তু ইমরানের মা সাইদার কোনো হেলদোল নেই। থম মেরে আছেন। রাতভর কেঁদেছেন। এখনো একটু বাদেই নাক মুছছেন ওড়নায়।
ইমরানের বাবা এসে ডাকলেন তাকে ‘কী করছ, ইমরানের মা?’
সাইদা ওড়নার আঁচলে মুখ ঢেকে নিলেন। তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে, কান্নার দমকে।

আব্দুল মজিদ সাহেব এবারে স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে ডাকলেন ‘ইমরানের মা, এমন করছ তুমি, মনে হচ্ছে ছেলেমেয়ে কারো কোনোদিন দূরে যায় না। কেউ মেয়ে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠায় না। কারো ছেলে দূরে পড়তে যায় না। শুধু তোমার ছেলেই যেন বিদেশ যাচ্ছে।’

সাইদা উঠে বসলেন। মজিদ সাহেবের কাঁধে মাথা রাখলেন। তারপর নাক টানতে টানতে বললেন ‘ইমরানের বাবা, আমার ইমাকেও তো বিয়ে দিয়ে দূর করেছি, এমন তো লাগেনি। এমন বুকফাটা কষ্ট তো হয়নি।’

‘নিজেকে সামলাও, ছেলে বড় হওয়ার আশায় বিদেশ যাচ্ছে, অনেক উন্নতি করবে। কত গর্বের কথা বলো তো?’

‘ইমাকে শ্বশুরঘরে পাঠাতেও আমার কলিজা কেঁদেছে, কিন্তু এমন করে কাটেনি তো! এই ছেলেটাই যেন কেমন! কারো প্রতি টান নেই, কেউ নেই মহব্বতের। তাই খুব ভয় করছে, আর ফিরবে তো! কাউকেই তো ও ভালোবাসে না।’

‘ইমরান স্বার্থপর, সেটা বলতে চাচ্ছ?’

‘না, না। দূর থেকে কেউ ওরকম ভাবতেই পারে। আমার ছেলে মোটেও স্বার্থপর না। ও কারো জন্য কিছু করে না, কারো কাছ থেকে কিছু আশাও করে না। কিছু যেমন দেয় না কাউকে, কিছু নেয়ও তো না। ইমরান সাধু সন্ন্যাসীদের মতো, সবকিছুতেই বড় অরুচি, উদাসীনতা, চাহিদাহীনতা। তাই ভয় হচ্ছে, আতঙ্ক হচ্ছে। আর যদি ফিরে না আসে?’

‘আসবে। এই তো বিয়ে দিয়ে বউ এনে দিলে। তার টানে আসবে, তোমার মায়ায় আসবে।’

‘কথা দিচ্ছ, ইমরানের বাবা? ছেলে ফিরে আসলে তুমি যা চাইবে আমি তাই দেবো।’ কান্না বন্ধ হয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সাইদার চোখমুখ!

‘যা চাইব তাই দিবা? কথা দিলে? ইমরানের মা?’

মাছ ধরার নেশা প্রবল আব্দুল মজিদ সাহেবের। গ্রামে গেলে তো বটেই, ঢাকাতেও প্রায়ই দলবল জুটিয়ে বিভিন্ন পুকুরে টিকিট কেটে মাছ ধরতে যেতে দেখা যেত তাকে। নানারকম টোপের ব্যবহার তার মতো ভালো করে কেউ পারে না। পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে, ভাজা মেথি গুঁড়ো করে অদ্ভুত রকম টোপ বানান তিনি, অব্যর্থ! একেক মাছের জন্য একেক রকমের টোপ। পুকুরের পানি দেখেই তিনি বলে দিতে পারেন কোন টোপ খাটবে, কোন প্রজাতির মাছ খাবি খাচ্ছে। তিনবছর আগে এরকম মাছ ধরতে গিয়ে তীব্র গরমে সানস্ট্রোক হতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাছ ধরতে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। দুষ্প্রাপ্য সব টোপ ফেলে দেওয়া হয়েছে, ফিশিং হুইল স্টোরে, নানারকম হুক সেরদরে ভাঙ্গারিকে বেচে দেওয়া সারা!

মজিদ সাহেব শুধু সুযোগ খোঁজের কীভাবে স্ত্রীকে রাজি করানো যায়, কিন্তু সাইদা সেই টোপ গিললেন না। মজিদ সাহেবকে পাশ কাটিয়ে ছেলের খবর নিতে বেরোলেন।

ইমরানের ঘরে এসে দরজায় নক করলেন। ওই আলতো চাপেই দরজা খুলে গেল। ইমরান একটা চেয়ার পেতে ব্যালকনির দিকে মুখ দিয়ে বসে আছে। অনি এইপাশে খাটের উপর বসে মোবাইলে মুখ গোঁজা। সাইদা প্রথমে বিরক্ত হলেন দরজা খুলে রাখায়। নতুন বর-বউ দরজা খুলে রাখবে কেন? আর তারপরে রেগে গেলেন অনির উপরে। কী এমন মহাকাজ করছে মোবাইলে। ওইতো দুই অক্ষর পেটে! সিনেমা নাটক দেখা ছাড়া মোবাইলে ওর কী? তা সেই সিনেমা নাটক করার জন্যই তো ওকে এনেছেন সাইদা। ইমরানের সাথে করুক না রঙ ঢঙ! আরেকটুখানি সময়ই তো আছে ছেলেটা। ছেলেটা যাক না, এই মেয়েকে কীভাবে সোজা করতে হয় দেখে নেবেন উনি!

ইমরানের মাথায় হাত রাখলেন নিঃশব্দে। ছেলেটা তাকালো। মিষ্টি করে হাসল মায়ের দিকে তাকিয়ে। সাইদার বুকের মাঝে কেমন করে উঠল! এতো সুন্দর কেন তার ছেলেটা? এমন বুক ছিঁড়ে নেওয়া হাসি কীভাবে হাসে?

সাইদা ফুলে ফুলে কেঁদে দিলেন আবার। ইমরান বিরক্ত হলো। উঠে দাঁড়িয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল ‘আম্মু কান্না কোরো না তো!’
সাইদা অনেক কষ্টে কান্না চাপলেন।
তারপর বললেন ‘আব্বা, ওই দেশে নাকি অনেক ভালো ফ্যান পাওয়া যায়। আমার জন্য একটা আইনো, বুঝছ? গরমে রান্নাঘরে কাজ করতে আমার কষ্ট হয়।’
‘আব্বুকে বলব একজস্ট ফ্যান লাগিয়ে দিতে।’
‘না তুমি আনবা, ওইদেশ থেকে।’
‘এই দেশেই এখন জাপানের সব পাওয়া যায়, আম্মু।’
‘আসলগুলা পাওয়া যায় না। চায়নারটা দিয়ে দেয়। তুমি সাথে করে আনলে আর সন্দেহ থাকবে না।’
‘আচ্ছা।’
‘আর সাকুরা না কী যেন একটা গাছ আছে ওই গাছের একটা চারা আনবা। আর একটা চেরি ফুলের গাছের চারা। আনবা না?’
‘আমি আসার আগে তুমি ফোন করে বলে দিও কী কী লাগবে।’
‘তাড়াতাড়িই তো আসবা তাই না আব্বা?’
‘আম্মু তিন বছরের আগে কীভাবে আসব?’
‘একবার আসলা, আটদিন দশদিনের ছুটি নিয়ে আসে না মানুষ? কতজন তো আসে! বছর বছর আসে। বৌমা আছে, ওর বাড়ির লোক কী ভাববে? আসলা একবার?’
ইমরান আড়চোখে তাকালো অনির দিকে। সাইদার আগমনে মোবাইল সরিয়ে পাশে রেখে দিয়েছে। এদিকেই তাকিয়ে আছে, কপালভরা বড় বড় চোখ নিয়ে।
‘আচ্ছা আম্মু, চেষ্টা করব। পড়ার চাপ না থাকলে আসব। তুমি কান্নাকাটি কোরো না।’
ইমরানের মুখ যা বলছে চোখ তাতে সায় দিচ্ছে না। এই ছেলে খুবই ডিটারমাইন্ড। নিজের রাস্তা থেকে একটুও নড়বে না। মাকে স্বান্তনা দিলো শুধু। সাইদা বুঝলেন। কিন্তু কথা বাড়ালেন না। আরেকটু সময় আছে ছেলেটা। বউয়ের সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটাক।
কিন্তু এই বৌ তা বুঝলে তো!
ঘরে ঢুকেই তো দেখলেন দুজন দুদিকে!
‘আচ্ছা আব্বা, আমি তোমার খাবার দেই, তুমি আসো আস্তে আস্তে।’ বলতে বলতে চোখ মুছলেন সাইদা আর বেরোতে বেরোতে অনির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলেন আর ইশারা করলেন ইমরানের কাছে যেতে। বলার সুযোগ হলে আর অশালীনতা না হলে হয়তো আরও অনেক অন্যায় ইচ্ছের কথাই প্রকাশ করে ফেলতেন তিনি…

******

অনি কী করবে বুঝতে পারছে না। ইমরানের যা যা করেছে ওর সাথে, তাতে ও বিব্রত হয়েছে, দেরিতে হলেও অপমানিত বোধ করছে এখন।

আর ইমরানও ভয়ে ভয়ে আছে, কোনোভাবে ওর সংকল্প না টলে যায়। ও ভেবে দেখেছে, ইমা যা বলেছে তাই সঠিক।

আসলেই অনির কাছে মন আটকে গেছে ওর। গতদুইদিন সারারাত জেগে ও অনির নিঃশ্বাস গুণেছে।

মাঝে মাঝেই খেয়াল জেগেছে, সব বাদ দিয়ে অনির হৃদয়ের স্পন্দন গুণতে, মিনিটে কতগুলো বিট পড়ে নিজের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে।

প্রাণপণে নিজেকে আটকেছে সেইসব ভয়ংকর ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার থেকে।

সাইদা চলে যাওয়ার পরে ইমরান তাই তাকালো না অনির চোখে আর অনিও এড়িয়ে গেল ওকে।

আর তো কয়েকটা ঘন্টা মাত্র। দুজনের মনের ভেতরেই কয়েকটা ঘন্টার অপেক্ষা এখন। ইমরান অপেক্ষা করছে, কখন এই টেনে নেওয়া চোরাবালি থেকে দূরে সরবে ও আর অনি অপেক্ষা করে আছে নিজের মুক্ত হওয়ার গল্পটা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য।

*****

শেষ কয়েকটা দিন ছেলের কাছাকাছি থাকার ইচ্ছে থাকলেও নিজের অদম্য স্নেহকে দমিয়ে রেখেছিলেন সাইদা, ইমরান আর অনিকে একান্ত সান্নিধ্যে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিতে। তা যে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে সেই সংবাদ ভদ্রমহিলা না পেলেও শেষ কয়েকটা ঘন্টা পুত্রের কাছ থেকে নড়লেন না।

অজস্র চুমু দিয়ে ইমরানকে বিব্রত করলেন, এয়ারপোর্টে গিয়েও কেঁদেকেঁদে কয়েকবার মুর্ছা গেলেন। বারবার কথা আদায় করে নিলেন, খুব তাড়াতাড়ি যেন ফিরে আসে।

সুমনাও ইমরানকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ পেলেন না। পরশ এগিয়ে গিয়ে আলিঙ্গন করল ইমরানের সাথে। কাছাকাছি বয়স দুজনের। প্রথমদিন হাল্কা কথাবার্তা হলেও সংকোচে দুজন দুজনের সাথে আর মেলামেশা হয়নি।

ইমরানকে তো একেবারেই বোবাদের দলেই ফেলে দেওয়া যায়। আর ইমরানের চোখে বিয়েবিতৃষ্ণাটা যেন পরিস্কার দেখতে পেত পরশ।

আবার আত্মিয়বাড়ি, এখানে ভগ্নীজামাতা নিজে এগিয়ে না এলে তার সাথে যেচে কথা বলাটা যথেষ্ট সংকোচের।

সেই দিক থেকে ইকরামের সাথে একটা দারুণ সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে পরশের। বেয়াই-বেয়াই ঠাট্টা-তামাশা থেকে হৃদ্যতায় গড়িয়েছে। আব্দুল মজিদ সাহেবও খুব সুহৃদ আর আন্তরিক। আর ইমা, দুদিনেই ওর পছন্দের মানুষের তালিকায় ঢুকে গেছে। মেহমানদারিতে এতটা আন্তরিক, পরশ যে অনির ভাই, সেটা যেন বোঝায় যায় না ইমার আচরণে। ইমরান বা ইকরামের মতো পরশও যেন এই ঘরেরই ছেলে, ইমার আরেকটা ভাই।

এই পরিবারটাকেও দারুণ লাগলেও সাইদা আর ইমরানকেই কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না পরশ। সাইদাকে ওর ভীষণ স্বার্থপর আর দাম্ভিক মনে হয় আর ইমরানকে দেখলেই অস্বস্তি হয়।

আজকে ঠিক যাওয়ার আগমূহুর্তে ও সব সংকোচ দূরে রেখে এগিয়ে গেল।

বোনের ভাই হওয়াটা সবচেয়ে কষ্টের, অপছন্দের মানুষটাকেও ভালোবাসতে হয়, নিদেনপক্ষে ভালোবাসার অভিনয় করতে হয়। আলিঙ্গনে বেঁধে পরশ ইমরানকে বলল ‘ভাই, অনি কোনো ভুলভ্রান্তি করলে মাফ করে দিয়েন, মনে কষ্ট রাখবেন না।’

ইমরান শুধু আস্তে করে বলল ‘না, না, না। অনি কোনো দোষ করেনি তো! মাফ করার প্রসঙ্গ কেন আসছে?’

‘ছোটোমানুষ তো? সবকিছু বুঝতে পারে না। আস্তে আস্তে বুদ্ধিসুদ্ধি হয়ে যাবে।’

‘ছোটোমানুষ জানেন যখন বিয়ে দিলেন কেন?’

বোনের জন্য স্নেহ আছে সীমানা ছাড়িয়ে কিন্তু অভিভাবকসুলভ অভিজ্ঞতাতে একেবারেই আনাড়ি পরশ। হঠাৎ করে বুঝতে পারল না, ইমরান অভিযোগ করল নাকি শ্লেষ!

প্রসঙ্গ পালটে তাড়াতাড়ি বলল ‘সাবধানে যাবেন ভাই। আল্লাহ ভরসা।’

‘আচ্ছা, দোয়া করবেন আমার জন্য।’ ইমরানও এড়িয়ে গেল পরশকে।

সাইদা আবার চোখ মুছতে মুছতে ইমরানকে জড়িয়ে ধরলেন। ‘আব্বা, আল্লাহ হাজির নাজির। আল্লাহর নামে সঁপে দিলাম। আব্বা, প্রতিদিন একবার ফোন কোরো কিন্তু।’

‘প্রতিদিন কি ফোন দেওয়া যায়?’

‘খাবার নিয়ে বসবা যখন, তখন ভিডিও কল দিও৷ কথা বলতে হবে না, শুধু দেখব তোমাকে।’

‘আচ্ছা আম্মু।’

‘আব্বা, বছর শেষেই একবার আসবা কিন্তু। কথা দিয়েছ তুমি আমাকে।’

ইমরান স্মিত হাসল। ও জানে, পড়াশোনার চাপে ঘাড় ঘোরানোর সময় পাবে না।

ইকরাম আর ইমাও কেঁদে ফেলে বড়ভাইকে জড়িয়ে ধরল। নিষ্ঠুর, নিরাসক্ত, আবেগহীন ইমরানের চোখের কোণেও যেন জলবিন্দু চিকচিক করে উঠল!

ইমিগ্রেশনে ঢুকে যেতে যেতে যতক্ষণ ওকে দেখা গেল সাইদা চোখ পেতে থাকলেন, আর ইমরান অদৃশ্য হতেই আবার সেন্সলেস হয়ে দড়াম দিয়ে পড়ে গেলেন এয়ারপোর্টের শক্ত ফ্লোরে!

*****

বাসায় ফিরেই বোমটা ফাটালো অনি।

সাইদার শরীর আর মন দুটোই ক্লান্ত খুব। অন্যরা যখন বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে তখন তিনি রেগে ক্ষেপে উঠলেন একেবারে। তীব্র কন্ঠে অনির কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী? ইমরান কী করেছে? আবার বলো?’

‘তালাক দিয়া গেছে আমারে।’

‘চোপ অশিক্ষিত, মূর্খ মেয়ে একটা।’ সাইদার রোখ চেপে গেছে। আব্দুল মজিদ সাহেব তাড়াতাড়ি এসে স্ত্রীকে ধরলেন ‘আহা কী করছ কী? শুনতে দাও সবটা।’

‘কী শুনব সব? কী শুনব? ফাজিল মেয়ে! কী না জানি করেছে আমার ছেলেটার সাথে, ছেলেটা রেগে মুখে মুখে তালাক বলেছে। এখন এই মেয়ে বড়গলা করে বলে বেড়াচ্ছে আবার! ঘেন্নাও নেই? দুটো দিন মোটে – ছেলেটাকে খুশী রাখতে পারলি না!’

‘আহ! ইমরানের মা। মেহমানরা বাসায়। মেয়েটা কী বলছে, শুনতে দাও সব।’

অনি কেঁদে ফেলেছে। পরশ স্তব্ধ। অনির বড়চাচি এসে ওর হাত ধরল ‘কী হইছে অনি? কী করছ মা? ঠিক কইরা কও তো?’

‘আমি কিছছু করিনাই চাচি। আমার কোনো দোষ নেই।’ কান্নার দমকে অনির গলা দিয়ে আর কথা বেরোয় না।

‘অনি কান্না থামা। ঠিক কইরা ক, কী হইছে।’ সুমনা অস্থির হতে হতে বলে ওঠেন।

‘আমার কোনো দোষ নাই মা। আমারে নিয়া গেল না সেইদিন? নিয়া গেছে বিয়া পড়ানির অফিসে। সেইখানে নিয়া গিয়া কয়, তোরে আমি তালাক দিলাম। তারপর কাগজ দিলো। আমারে বলল সই দিতে।’ ফোঁপাতে ফোপাঁতে অনি যা বলল তাতে সবাই এতটুকুই বুঝল।

সাইদা হতভম্ব। বললেন ‘আর তুমি সই করে দিলে?’

অনি ভয় পেয়ে যাচ্ছে সবার চোখমুখ দেখে। আবার আরো খানিকক্ষণ কাঁদল। কেঁদেকেঁদেই বলল, ‘সবাই যে বলে দেলো, স্বামীর কথা সব মান্য করতে হয়।’

‘এসব তুমি আগে কেন বলোনি?’

‘সে তো বলেই দেছিলো, সে গেলে তারপর যেন কই?’

ইমা এসে অনির হাত ধরে টেনে নিয়ে আড়ালে গিয়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল ‘ইমরানের তোমার সাথে থাকেনাই একসাথে?’

অনি ঠিকঠাক বুঝল না প্রশ্নটা। ভুল উত্তর দিলো। ‘এক খাটেই তো ঘুমাইছি।’

‘ইমরান আদর করেছে?’ মরিয়া হলো ইমা।

উত্তরে ডানেবামে জোরে জোরে মাথা নাড়ল অনি।

সাইদার সপ্রশ্ন দৃষ্টির সামনে ইমা ইশারায় মাথা নাড়ল। সবার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। ইমরান ধোঁকা দিয়েছে। মায়ের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি!

সুমনা মুখে কাপড়চাপা দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। পরশ যেন এইমাত্রই বুঝল সবটা। ক্রুদ্ধ হলো মায়ের উপর ‘বুঝছ মা, লোভ। লোভ সব শেষ করে দেয়। বড়লোক জামাই, বিদ্বান জামাই, বিদেশি জামাই – লোভটা ছাড়তেই পারলে না। আমার বোনটার জীবন শেষ করে দিলে?’

‘আমার ভাগ্যই হলো আমার মেয়েটার। সাইদা আপা, আমার কপাল পোড়া আপনি জানেন। অনির বাবা বিদেশ গিয়েই আমার কপাল পুড়ল। আমি কত অসহায় আপনি জানেন। আমি বললাম, আপা, বিদেশ যাবে ছেলে, শুনলে আমার ভয় করে। আপনি বললেন, ভয় নাই। ছেলে আপনার খুব ভালো। আপা, এই আপনার ভালো ছেলে? আপনার ভালো ছেলে দিয়ে আপনি আমার এমন সর্বনাশটা করালেন আমার?’

তলে তলে যে এতটা ভেবে রেখেছে ইমরান, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি সাইদা। তার ছেলে, তার পেটের ছেলে, মা বাবার উপর এমন প্রতিশোধ নিলো? সাইদা আর ভাবতে পারছেন না। কাকে কী বলবেন? অনির উপর রাগ হলো।

অনিকে রাক্ষসী, সর্বখাকী বলে মনে মনেই গাল দিলেন কিছুক্ষণ।

এত ছোটো মেয়ে বউ করে আনা উচিত হয়নি একেবারেই। আরেকটু বয়স্কা মেয়ে হলে, নিজেরটা ঠিকই আদায় করে নিতে পারত। অনির জন্যই তার এমন সর্বনাশটা হলো!

অনির কতটা ক্ষতি হলো সেটা মাপতে গেলে তিনি ঠাঁই পেতেন না, তাই নিজের কতটা ক্ষতি হলো তাই মাপতে বসলেন!

সব অপরাধের দায় অনির ছোট্ট মাথায় উঠিয়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করলেন আর সিদ্ধান্ত নিলেন, ইমরানকে এসব কিছুই জানাবেন না। কোনো প্রশ্নও করবেন না। একদম স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিন বছর পরে হলেও ছেলে ফিরবে, কিন্তু এসব নিয়ে অভিযোগ করলে, জবাবদিহি চাইলে, আর ফিরবেই না কোনোদিন, হয়তো আর ফোনও করবে না।

ছেলে হারিয়ে ফেলার দুঃখে শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন একেবারে।

অনির চাচারা আর পরশ বেশ হম্বিতম্বি করল কিছুক্ষণ, তারপরে বুঝে গেল কিছুই আসলে করার নেই।

ইমরান দুটো পরিবারকেই ঠকিয়ে গেছে। ইমরানকে পেলেই কিছু করা যেত, তাছাড়া আর কিছুই করার নেই। বোকা অনির উপরেও রেগে গেল পরশ ‘আমাকে অন্তত বলতি।’

‘তুমি এমন করেই চিল্লাতে থাকতা ভাইয়া। আর সেও আমাকে মানা করে দেছিলো।’

‘ওই সে লোকটার কথা আর কখনো মনেও আনবি না তুই।’

বেলায়েত শিকদার বললেন ‘ঠান্ডা মাথায় বস পরশ। কী করব সেটা ভাব। এইভাবে তো গ্রামেও যাওয়া যাবে না এখন। মেয়ের বিয়ে দিতে এসে তালাক নিয়ে যাচ্ছি। মুখ দেখাতে পারব? সীমা, রিমা আর অলিরে ভালোমতো বুঝা, পলাশডাঙা গিয়ে কাউরে যেন কিছু না কয়। আমরা বলব, জামাই বিদেশ গেছে, আমরা মেয়ে নিয়ে আসছি। জামাই ফিরলে ধুমধামে অনুষ্ঠান করে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাব। ঠিক আছে?’

‘না বড়চাচা। আমি ভাবছি, আমরা ঢাকাতেই থেকে যাব।’

‘ঢাকা? কেন?’

‘অনিরে আমি যোগ্য বানায়ে ছাড়ব। যে ওরে এত অপমান করল সে একদিন পস্তাবে, সে কী হারাইলো জানবে যেদিন!’

‘এইগুলা ছেলেমানুষী কথা বাবা। এইগুলো সিনেমাতে হয়। বাস্তব কত কঠিন দেখতেছ? তোমার আব্বা হঠাৎ চলে গেলে তোমাদের নিয়ে এমনই অকূল পাথারে পড়েছিলাম। কাটাই উঠছি না? ইনশাআল্লাহ এইটাও কাটায় উঠব, বাবা আমার। মাথা ঠান্ডা করো। তুমি বড় না?’

শেষ পর্যন্ত পরশের জেদের কাছে ওর চাচারা পরাজিত হলেন। ঢাকাতে নিজেদের ঠিকানা বানিয়ে নিলো পরশ আর বোনেদের জীবনটা নতুন করে গড়ে দেওয়ার শপথ নিলো।

সামনে অনির একটা নতুন জীবন…

আর অন্যদিকে জাপানের আকাশে উড়ে যাওয়া প্লেনে বসে অনির কথা মনে আসতেই আতঙ্কিত হলো ইমরান! সত্যিই কি ও অনির খেয়ালে থাকবে সারাক্ষণ? দিনরাত ওকেই ভাববে? ওকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে? তাহলে নিজের আজীবন লালন করা স্বপ্নটার কী হবে? আজ থেকেই অনি চ্যাপ্টার পুরোপুরি ক্লোজড। মুখে তো আনবেই না অনির নাম, মনে না আনারও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাবে। সামনে শুধুই ইমরানের স্বপ্নপূরণ…

চলবে

Afsana Asha

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে