#ফিরে এসো ভালবাসা❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১০
শুভ্র গালে হাত দিয়ে রোজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর নিজেও বেরিয়ে চলে গেলো। ভার্সিটির সেই পুকুরটার পাড়ে বসে আছে শুভ্র। রোজের বলা কথাগুলো ভেবে হেসে বললো।”
—-” তোমার ভালবাসা পেতে আমি কাঁদবো? কিন্তুু কি করে কাঁদবো আমি? কখনোই আমি তোমাকে পেতে কাঁদবো না। কারন আমি তোমাকে ভালই বাসি না। সেখানে কাঁদার প্রশ্নই আসে না,
নিরব সবটা শুনলো পিছনে দাড়িয়ে। সবটা শুনে টেনে শুভ্রকে দাড় করালো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” তুই এখানে?”
নিরব শান্তভাবে বললো,
—-” এমন কেন করলি তুই?”
শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।”
—-” কি করেছি আমি?”
নিরব এবার চেঁচিয়ে বললো,
—-” রোজকে কেন ঠকালি তুই? তুই জানিস মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে? কি করে পারলি ওর মন নিয়ে খেলতে? এতটা নিচ কি করে হতে পারিস ভাইয়া?”
শুভ্র আলসেমি ঝেড়ে বললো।”
—-” শোন ও মিথ্যে বলেছিলো। অলওয়েজ আমার আর রাহির মাঝে ঝামেলা হতো ওর জন্য। ওর জন্য রাহি আমাকে ভুল বুজতো। ওর জন্য রাহি অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই ওকে একটা শিক্ষা দেয়ার ছিলো আমি দিয়েছি। তোর এত বাধছে কেন রে? তুই আমার ভাই ভুলে যাস না,
নিরব তাচ্ছিল্য হেসে বললো।”
—-” আপন ভাই না চাচাতো ভাই,
শুভ্র রেগে বললো।”
—-” নিরব,
নিরব হাত দিয়ে থামিয়ে বললো।”
—-” ডোন্ট সাউন্ড, চেঁচাবি না। বিশ্বাস তো তুই আমাকেও করিসনি। আমি যে তোকে ভিডিও দেখালাম। রাহির নোংরামি সামনাসামনি দেখালাম। তবুও তুই আমাকেও বিশ্বাস করলি না?”
শুভ্র শান্ত ভয়েজে বললো,
—-” রাহি বলেছে ওই ছেলেটাই খারাপ। ও রাহির মাথাটা বিগড়ে দিয়েছিলো।”
নিরব আবারো হেসে বললো,
—-” আর রাহি তোর মাথা বিগড়ে দিয়েছে।”
শুভ্র রাগী সুরে বললো,
—-” রাহির নামে আজেবাজে কথা বলবি না।”
নিরব অবাক হয়ে গেলো। একটু চুপ থেকে বললো,
—-” গুড বাই, ভুলে যাস নিরব নামে কেউ তোর ভাই ছিলো। ওপস চাচাতো ভাই ছিলো।”
বলে নিরব হনহন করে চলে গেলো। আজকেও রোজ নিরবকে সব বলেছে। তাই নিরব এসেছিলো শুভ্রকে বোঝাতে। কিন্তুু এসে এসব শুনলো। নিরব যাওয়ার পর শুভ্র আবার বসে রইলো,
এদিকে রোজ বাড়ি এসে শুভ্রর সব ছবি ছিড়ে ফেলেছে। রোজের কাছে শুভ্রর অনেকগুলো ছবি ছিলো। সবগুলো আজকে ছিড়ে ফেললো। শুভ্রর দেয়া যা, যা ছিলো সব ফেলে দিয়ে বসে পড়লো। এরপর চোখের পানি মুছে বললো।”
—-” আজকের পর আপনাকে ভুলে যাবো। কখনো ভাবিনি যাকে আমি ভালবাসি সে এত নিচ। জানিনা কোন ভুলের শাস্তি দিলেন। তবে হ্যা ভুলতো আমি করেছি। আপনাকে ভালবাসা আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। না, না কাউকে ভালবাসা ভুল না। তবে তাকে অন্ধ বিশ্বাস করাটা ভুল। আর সেই ভুল আমি করেছি। তাই তো এত বড় প্রতারণা পেলাম শাস্তি হিসেবে। আমি কি পারবো আপনাকে ভুলতে?”
আসলেই কি রোজ ভুলতে পারবে? সত্যিকারের ভালবাসা কি কখনো ভোলা যায়? রোজ হয়তো বোঝাতে পারবে যে ও শুভ্রকে ভুলে গিয়েছে। কিন্তুু রোজ নিজেও জানে। ও কোনদিনও শুভ্রকে ভুলতে পারবে না। রোজের আবার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। একটা মেডিসিন খেয়ে ব্যালকনিতে বসে রইলো,
শুভ্র বিকেল ৩টার দিকে বাড়ি এলো। রুমে এসে একটা মেডিসিন খাবে বলে হাতে নিলো। এক দৃষ্টিতে কতক্ষণ মেডিসিনটা দেখলো। এরপর সেটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। শুভ্রর মা শুভ্রকে ডাকতে এসে দেখলো শুভ্র ঘুমিয়ে পড়েছে। উনি আর না ডেকে চলে গেলো। শুভ্রর ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার দিকে। শুভ্র ভেবেছিলো মাথা ব্যথা কিছুটা কম হবে। কিন্তুু না এখন মনে হচ্ছে মাথাটা ব্যথায় ছিড়ে যাবে। শুভ্র দু হাতে মাথা চেপে বসে রইলো। কিছুতেই ব্যথাটা কমছে না। শুভ্র দরজা দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। অনেকক্ষণ নিজের মাথায় নিজেই পানি ঢাললো। পানি ঢালার পর কিছুটা বেটার ফিল করছে। শুভ্র নিচে গিয়ে এক কাপ কফি নিয়ে এলো। শুভ্রর মা ভেজা চুল দেখে বললো।”
—-” শুভ্র এই সন্ধ্যায় শাওয়ার নিয়েছিস?”
শুভ্র রুমে যেতে, যেতে বললো,
—-” না আম্মু এমনি ব্যাস।”
কফি নিয়ে এসে শুভ্র ব্যালকনিতে চলে গেলো,
________________
কফি শেষ করার পর রাহি ফোন করলো। শুভ্র রাহির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিচে গেলো। গিয়ে ওর মাকে ডেকে সোফায় বসালো। শুভ্রর মা হালকা হেসে বললো।”
—-” কিছু বলবি শুভ্র?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” হ্যা আম্মু।”
শুভ্রর মা ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” লজ্জা পাচ্ছিস নাকি?”
শুভ্র একটু হেসে বললো।”
—-” আম্মু আমি বিয়ে করবো,
শুভ্রর মা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।”
—-” মেয়েটা কি রোজ?”
শুভ্র মুখে রাগ ফুটিয়ে বললো,
—-” রোজ কেন হবে? আমি রাহিকে বিয়ে করবো।”
শুভ্রর মা অবাক হয়ে বললো,
—-” এসব কি বলছিস?”
শুভ্র বিরক্তিকর ফেস করে বললো।”
—-” ঠিকই বলছি আর বিয়েটা আমি ১সপ্তাহর মধ্যে করবো,
শুভ্রর মা কাঁদো, কাঁদো ফেস করে বললো।”
—-” তুই রোজকে ভালবাসিস না? আর এই রাহিটা কে?”
শুভ্র সোফা থেকে উঠে বললো,
—-” রাহি সে যাকে আমি বিয়ে করবো। আর আমি তোমার ভাগ্নিকে ভালবাসি না। বিয়ের সব শুরু করে দাও। আই মিন সবাইকে জানাও আমি বিয়ে করছি। আগামীকাল আমরা শপিং করবো। এরপর বিয়ের কার্ড ছাপাতে দিয়ে আসবো। তুমি বাবাইকে বলে দিয়ো আম্মু।”
বলে শুভ্র রুমে চলে গেলো। শুভ্রর মা মুখ কালো করে বসে রইলো। উনি ভেবেছিলো রোজকে শুভ্রর বউ করবে। কিন্তুু শুভ্র যা বলে গেলো সেটা হবে বলে মনে হয় না। শুভ্রর বাবা অফিস থেকে আসার পর সব জানালো। উনি শুভ্রকে ডেকে পাঠালেন,
—-” শুভ্র তোর মা কি বললো?”
শুভ্র বসতে, বসতে বললো।”
—-” সব শুনেছোই তো বাবাই। আমি রাহিকে বিয়ে করছি। রাহি অনেক ভাল মেয়ে। ওর পরিবারও ভাল তাই তোমাদের অপছন্দ হবে না,
শুভ্রর বাবা একটু চুপ থেকে বললো।”
—-” এটাই তোর শেষ কথা?”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” জ্বি বাবাই।”
শুভ্রর বাবা শুভ্রর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” তাহলে আর কি করবে? ছেলে যাতে খুশী থাকবে সেটাই করো। শুভ্র রাহির বাড়ির ঠিকানাটা দিস।”
শুভ্র ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” থ্যাংক ইউ বাবাই।”
শুভ্র ঠিকানা দিয়ে চলে গেলো। পরেরদিন সকালে শুভ্রর বাবা রাহিদের বাড়ি গেলো। রাহি লক্ষী মেয়ের মতো ওনাকে সালাম করলো। শুভ্রর বাবা রাহির বাবা, মায়ের সাথে কথা বললো। ওনারাও বললো মেয়ে খুশী থাকলেই ওনারা খুশী। শুভ্রর কথামত ১সপ্তাহ পরই বিয়ে ঠিক হলো। রাহি চুপচাপ সবটা দেখছে। শুভ্রর বাবা রাহিকে দোয়া করে ১০হাজার টাকা দিলো। এরপর উনি অফিসে চলে গেলো। উনি শুভ্রর মাকে সবটা জানালো। শুভ্রর মা গাল ফুলিয়ে সবাইকে এই নিউজ দিচ্ছে। এবার ফোন করে জানালো রোজের মাকে। রোজের মা সব শুনে বললো,
—-” কি বলছিস আপু?”
শুভ্রর মা নাক ফুলিয়ে বললো।”
—-” হ্যা রে রাজিয়া,
এবার রোজের মাও কাঁদো, কাঁদো হয়ে বললো।”
—-” তাহলে আমরা যেটা ভাবলাম সেটা?”
রোজ সবটা দেখে বললো,
—-” কি হয়েছে আম্মু?”
রোজের মা মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” ১সপ্তাহ পর শুভ্রর বিয়ে,
রোজের চোখ ভরে এলো। তবুও নিজেকে সামলে হালকা হেসে বললো।”
—-” এটাতো ভাল খবর,
রোজের মা ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” তুই শুভ্রকে ভালবাসিস না?”
রোজ পাগলের মতো হেসে বললো,
—-” আমি কেন ওনাকে ভালবাসবো?”
রোজের মা রেগে বললো।”
—-” বুঝলি আপু? আমরাই বোকা এরা ভালবাসে না কেউ কাউকে। অথচ আমরা কতকিছু ভেবে রেখেছি। আচ্ছা মাকে বলেছিস?”
শুভ্রর মা মিনমিন করে বললো,
—-” এখন বলবো না জানি মা কি বলে।”
রোজ চোখ মুছে উপরে চলে গেলো। শুভ্রর মা নানুমনিকে জানালো। উনি প্রথমে রেগে গিয়েছিলো। পরে শুভ্রর মা সবটা বুঝিয়ে বলায় আর কিছু বলেনি। রাতে শুভ্র আর রাহি একাই শপিং মলে এলো। রাহি মনমতো শপিং করেছে। শুভ্র অবাক হয়ে বললো,
—-” এত শপিং করছো কেন?”
রাহি গদগদ ভাবে বললো।”
—-” আরে বিয়ে বলে কথা,
শুভ্র রেগে বললো।”
—-” তুমি কি ভুলে গেলে সব?”
রাহি এবার মন খারাপ করে বললো,
—-” না শুভ্র ভুলিনি তুমি যা চাও তাই হবে।”
শপিং শেষে শুভ্র রাহিকে বাড়ি পৌছে দিলো। কিন্তুু নিজে গেলো না। নিজে গাড়ি নিয়ে কাঁচপুর ব্রিজে চলে এলো। এই ব্রিজ শুভ্ররা যেখানে থাকে সেখান থেকে অনেক দুরে। এখানে আসতে, আসতে রাত ১১টা বেজে গিয়েছে। শুভ্র গাড়ি থামিয়ে ব্রিজের উপর গিয়ে দাড়ালো। এই ব্রিজে কয়েকদিন আগেও শুভ্র এসেছিলো। এটা ভেবে শুভ্রর চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো,
__________________
রোদ আজকে দেরী করে বাড়ি ফিরেছে। কারণ আজকে অফিসে মিটিং ছিলো। সেটাও রাত ৮টায় মিটিং শেষ করে রোদ এলো। রোদ আসতেই তনয়া এসে বললো।”
—-” রোদ শুভ্র ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে,
রোদ টাই খুলতে, খুলতে বললো।”
—-” কার সাথে ঠিক হলো?”
তনয়া মুখ গোমরা করে বললো,
—-” রাহি বলে একটা মেয়ের সাথে।”
রোদ একটু অবাক হয়ে বললো,
—-” হোয়াট?”
তখনি রোজ এলো চকলেট খেতে, খেতে। রোদের পাশে বসে মুচকি হেসে বললো।”
—-” হ্যা ভাইয়া ৬দিন পরই বিয়ে,
রোদ একটু ইতস্তত করে বললো।”
—-” তুই আর শুভ্র একে অপরকে ভালবাসিস না?”
রোজ হাসতে, হাসতে বললো,
—-” আমরা কেন একে অপরকে ভালবাসবো?”
বলে রোজ গুনগুন করতে, করতে রুমে এলো। রুমে এসেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা পানি। অনেক কষ্টে নিজেকে স্ট্রং রাখতে চাইছে। কিন্তুু চাইলেই কি সেটা সম্ভব?”
এদিকে ব্রিজের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে শুভ্র। কখনো কল্পনাও করেনি জীবনে এমন একটা দিন আসবে। যেদিন কি না না চাওয়া স্বত্বেও রোজকে তার কষ্ট দিতে হচ্ছে। শুভ্র বাম হাত দিয়ে ব্রিজে ঘুষি মেরে বললো।”
—-” আমাকে ক্ষমা করে দিও রেড রোজ। আমি পারিনি আমার কথা রাখতে। আমি বলেছিলাম জীবনে আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট দেবো না। কিন্তুু সেই আমিই আবার তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। এখনো কষ্ট দিয়েই যাচ্ছি। আমি যে হেল্পলেস তোমার আমাকে ঘৃনা করতেই হবে। আমাকে ভুলে নতুন করে সবটা শুরু করতে হবে। আমি কোনদিনও তোমাকে শান্তি দিতে পারবো না। এখন মনে হচ্ছে আমার জন্মই হয়েছে তোমাকে কষ্ট দিতে। তাইতো না চাইলেও তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। সারাজীবন কষ্ট পাওয়ার থেকে ভাল এখন ক্ষণিকের কষ্ট পাও। আমি যখন থাকবো না তখন ঠিকই আমাকে ভুলে যাবে। আমি যে আর কয়েকদিনের অতিথি এই পৃথিবীতে,
শুভ্র ভাবতে লাগলো ১০দিন আগের কথা। শুভ্রর মাথা ব্যথাটা খুব বেশী হচ্ছিলো। একেবারে অতিরিক্ত যাকে বলা হয়। এর জন্য হসপিটাল থেকে মেডিসিনও এনেছিলো। কিন্তুু মেডিসিন খাওয়ার পর ব্যথা কমতো না বরং বাড়তো। তাই শুভ্র ঠিক করে ও ডক্টরের কাছে আবার যাবে। ডক্টরকে গিয়ে সব বলার পর উনি কয়েকটা টেস্ট দেয়। আর টেস্টে যা আসে সেটা দেখে ডক্টর চুপ করে থাকে। শুভ্র হালকা হেসে বলে।”
—-” ডক্টর এভ্রিথিং ইজ ফাইন না?”
ডক্টর আমতা, আমতা করে বলে,
—-” আপনার মাথা ব্যথাটা কতদিনের?”
শুভ্র একটু অবাক হয়ে বলে।”
—-” মাঝে, মাঝেই ব্যথা করে,
ডক্টর একটু চুপ থেকে বলে।”
—-” আসলে আপনার মাথা ব্যথায় কারণ আপনার,
শুভ্র তারআগেই বলে ওঠে।”
—-” আমার কি হয়েছে ডক্টর?”
ডক্টর ঘাম মুছে বলে,
—-” আপনার ব্রেইন ক্যান্সার।”
শুভ্র ধপ করে দাড়িয়ে পড়ে। নিজের কানকেও আজকে বিশ্বাস হচ্ছে না। হাত, পা যেন অবশ হয়ে আসছে। নিজেকে সামলে কাঁপা, কাঁপা গলায় বলে,
—-” এর ট্রিটমেন্ট আছে তো ডক্টর।”
ডক্টর রিপোর্ট রেখে বলে,
—-” আছে কিন্তুু আপনি লাস্ট স্টেজে আছেন।”
শুভ্র চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
—-” মিথ্যে কথা আমি বিশ্বাস করি না। এই রিপোর্ট মিথ্যে সব মিথ্যে।”
ডক্টর শুভ্রর কাঁধে হাত রেখে বললো,
—-” আপনি একটু শান্ত হন। আমিও এটা বিশ্বাস করতে চাইনি। এত কম বয়সে এত বড় একটা রোগ কি করে হতে পারে? আমি বারবার চেক করেছি বারবারই একই রিপোর্ট এসেছে।”
শুভ্রর মনে পড়ে গেলো রোজের কথা। শুভ্র ধপ করে নিচে বসে পড়ে বললো,
—-” আমি বাঁচতে চাই ডক্টর প্লিজ। প্লিজ আমাকে ভাল করে দিন। ডক্টর আমি আমার জন্য না আমার রেড রোজের জন্য বাঁচতে চাই ডক্টর। ও যদি এসব জানে ভেঙে পড়বে। আমি ওকে কথা দিয়েছি ওকে আর কষ্ট দেবো না। এটা শুনলে সেই আমার জন্য ও কষ্ট পাবে। প্লিজ আমাকে ঠিক করে দিন ডক্টর।”
ডক্টর হতবাক হয়ে গিয়েছে। তবুও নিজেকে সামলে বললো,
—-” আই এম সরি মিস্টার শুভ্র। এখন আর আমার বা কোন ডক্টরের কিছু করার নেই। এখন আপনার মৃত্যু সময়ের অপেক্ষা। যে কোন সময়ে আপনার মৃত্যু হতে পারে।”
শুভ্র চোখের পানি মুছে বললো,
—-” এটা যেন আর কেউ না জানে ডক্টর।”
বলে শুভ্র বের হয়ে চলে এলো। শুভ্র কাঁচপুর ব্রিজটাতে চলে এলো। এখানে এসে জোড়ে একটা চিৎকার করে উঠলো। কাঁদতে, কাঁদতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আমিতো কোন পাপ করিনি। তবে তুমি কেন আমাকে এত বড় শাস্তি দিলে? কেন আমাকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে? এখনোতো আমার জীবনের সুন্দর দিনগুলো শুরুই হয়নি। এই সুন্দর পৃথিবীর অনেককিছুই আমার শোনার বাকী অনেককিছুই দেখার বাকী। আমি এত তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবো কেন? আমি আমার রোজকে কষ্ট দিতে পারবো না। যদি এটাই হওয়ার ছিলো। তাহলে ওর প্রতি আমার মনে ভালবাসার সৃষ্টি করলে কেন? যখন সৃষ্টি করলেই তখন কেন আমাকে নিতে চাইছো? মানি না, আমি মানি না, আমি তোমার এই বিচার মানি না।”
শুভ্র ব্রিজের উপর বসে পড়লো। শুভ্রর এই চিৎকারে যেন আকাশ, বাতাসও কেঁপে উঠছে। চোখের পানি কোনভাবেই থামছে না,
#চলবে…