#ফিরে এসো ভালবাসা❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৭
শুভ্র রোজকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। শুভ্রর সাথে সবাই চলে এলো। শুভ্র রোজকে নিয়ে গাড়িতে বসে বললো।”
—-” রোদ হসপিটালে চল,
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিরব একটু সাহস নিয়ে বললো।”
—-” ভাইয়া হসপিটালে কেন?”
শুভ্র রাগী সুরে বললো,
—-” হসপিটালে কেন মানে? তুই দেখতে পাচ্ছিস না রোজের অবস্থা। নিরব ও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।”
নিরব মিনমিন করে বললো,
—-” ভাইয়া ওর চোট বেশী না। তুই নিজেই দেখ জাস্ট একটু কেটে গিয়েছে। বোতল থেকে পানি নিয়ে ছিটিয়ে দে ওর সেন্স আসবে তাহলে।”
শুভ্র এবার প্রচুর রেগে বললো,
—-” তোরা যাবি নাকি আমি একাই চলে যাবো?”
রোদ একটু ভেবে বললো।”
—-” ওকে আমরা যাবো। তনয়া বরং ওর কাজিনদের নিয়ে বাড়ি চলে যাক,
নিরব রোদকে বললো।”
—-” আচ্ছা তাহলে চল,
তনয়ারা বাড়ি চলে গেলো। আর ওরা রোজকে নিয়ে হসপিটালে গেলো। শুভ্র রোজকে কোলে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেলো। শুভ্রর ডাক শুনে ডক্টর এসে বললো।”
—-” ওনার কি হয়েছে?”
শুভ্র উত্তেজিত হয়ে বললো,
—-” ডক্টর ওর চোট লেগেছে।”
ডক্টরও অবাক হয়ে বললো,
—-” কিন্তুু ওনার চোটতো সামান্য।”
শুভ্র এক ধমক দিয়ে বললো,
—-” সেটা আপনার দেখতে হবে না। আপনি ট্রিটমেন্ট করুন ফাস্ট।”
ডক্টর মুচকি হেসে বললো,
—-” ওকে ওনাকে আমার কেবিনে নিয়ে আসুন।”
শুভ্র রোজকে নিয়ে ডক্টরের কেবিনে গেলো। ডক্টর রোজের মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিলো। আর ব্যথা যাতে না হয় তার জন্য ইনজেকশন দিলো। কতক্ষণ পর রোজের সেন্স এলো। শুভ্র রোজকে ধরে বললো,
—-” রেড রোজ আর ইউ ওকে?”
রোজ চারদিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” এটা কোথায়?”
শুভ্র রোজকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে বললো,
—-” এটা হসপিটাল।”
রোজ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” হসপিটালে কেন?”
ডক্টর হেসে দিয়ে বললো।”
—-” খুব ভালবাসে আপনার স্বামী আপনাকে,
রোদ পাশ থেকে বললো।”
—-” স্বামী মানে?”
ডক্টর শুভ্র আর রোজকে দেখিয়ে বললো,
—-” ওনারা হাসবেন্ড, ওয়াইফ না?”
রোজ আর শুভ্র হাসলো। নিরব হেসে দিয়ে বললো।”
—-” না ডক্টর ওরা কাজিন হয়,
ডক্টর এবার বেশ অবাক হলো। নিজের মনে, মনে বললো।”
—-” আমি সিওর ছেলেটা মেয়েটাকে অনেক ভালবাসে,
ওরা ডক্টরের বিল দিয়ে চলে এলো। রোজ বাইরে এসে বললো।”
—-” সামান্য চোট ছিলো। হসপিটালে কেন আনতে গেলে আমাকে?”
রোজের কাজিন নুসরাত বললো,
—-” শুভ্র ভাইয়া জোড় করে এনেছে।”
রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
—-” শুভ্র ভাই আপনি?”
শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।”
—-” হ্যা আমি তোমার সেন্স আসছিলো না,
নুসরাত, ঝিনুক আর রোদ একসাথে বললো।”
—-” ওহহহহহ তুমি?”
শুভ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। রোজ আমতা, আমতা করছে। নিরব তো সব জানে নিরব মিটিমিটি হাসছে। শুভ্র মিনমিন করে বললো,
—-” আরে ও বড় হয়েছে না? এখন কি তুই বলা যায় নাকি?”
রোদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সেটা দেখে শুভ্র বললো।”
—-” আরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?”
রোদ দাত কেলিয়ে বললো,
—-” রহস্যর গন্ধ পাচ্ছি।”
রোজ রোদকে বললো,
—-” তোর এই পচা নাকে তুই কতকিছুর গন্ধ পাবি। চল এখন বাড়ি যাবো ভাল লাগছে না।”
এরপর সবাই বাড়ি চলে এলো। রোজের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়লো। পরে শুভ্র সবাইকে সাতপাঁচ বুঝিয়ে দিলো। নাহলে অযথা সবাই টেনশন করতো। শপিং মলের ঘটনাটা সবার থেকে চেপে গেলো। কিন্তুু ওটা নিয়ে শুভ্র এখনো রেগে আছে। আর মনে, মনে পণ করে রেখেছে। ওদের আবার যেখানে পাবে সেখানেই মারবে,
_________________
রাতে ডিনার কম্পিলিট করে সবাই রুমে চলে গেলো। রোজ বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। এদিকে শুভ্র রুম দিয়ে পায়চারী করছে। রোদও রাত জেগে তনয়ার সাথে কথা বলছে। শুভ্র একবার ব্যালকনিতে যাচ্ছে। তো একবার ব্যালকনি থেকে রুমে আসছে। এবার আর না পেরে রোজের রুমে চলে এলো। রোজ ভেতর থেকে রুম লক করে রেখেছে। শুভ্র দাত কিড়মিড় করে বললো।”
—-” উফ এই মেয়েটা কি যে করে। এখন দরজায় বারি দিলে যদি কেউ জেগে যায়,
কিছু একটা ভেবে শুভ্রর চোখ চকচক করে উঠলো। শুভ্র রোজের নাম্বারে কল দিলো। কিন্তুু রোজ ওয়াসরুমে থাকায় কল রিসিভ হলো না। শুভ্র দাতে দাত চেপে আবার কল দিলো। এভাবে ৩বার কল দিলো বাট রিসিভ হলো না। শুভ্র মুখটা কালো করে নিজেই বললো।”
—-” রোজ কি ঘুমিয়ে গিয়েছে?”
এমন সময় রোদ দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। উদ্দেশ্য ছাদে গিয়ে কথা বলবে। তখনি দেখলো শুভ্র রোজের রুমের সামনে দাড়িয়ে। চোরের মত এদিক, ওদিক তাকাচ্ছে। রোদ দাত কেলিয়ে এগিয়ে এসে বললো,
—-” কি রে এখানে কি করছিস?”
শুভ্র চমকে মিনমিন করে বললো।”
—-” তুই এখানে?”
রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” আগে বল তুই এখানে কি করছিস?”
শুভ্র হুট করেই বললো।”
—-” রোজের কাছে এসেছিলাম,
বলে মুখে হাত দিলো। রোদের প্রচুর হাসি পাচ্ছে। শুভ্র অসহায় ফেস করে বললো।”
—-” কাউকে বলিস না প্লিজ,
রোদ একটা গম্ভীর ভাব নিয়ে বললো।”
—-” কাউকে বলবো না কেন?”
শুভ্র আমতা, আমতা করে বললো,
—-” কি বলবি সবাইকে?”
রোদ মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” বলবো তুই এই রাতের বেলায়। রোজের রুমের সামনে উকিঝুকি মারছিস,
রোজ ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে কারো কথা শুনলো। তাই পা টিপে, টিপে দরজা খুললো। দরজা খুলে শুভ্র আর রোদকে দেখে বললো।”
—-” তোরা এখানে?”
রোদ হেসে বললো,
—-” শুভ্র নাকি তোর কাছে এসেছিলো।”
রোজ চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে বললো,
—-” কিহহহ?”
রোদ দাত সবগুলো বের করে বললো।”
—-” হ্যা রে ব্লাক রোজ,
রোজ রাগী চোখে তাকালো। সেটা দেখে শুভ্র ঢোক গিলে বললো।”
—-” আমি রুমে যাই ঘুমাবো,
শুভ্র যেতে গেলেই রোদ আটকে বললো।”
—-” সেকি রে তোর না কি দরকার আছে?”
শুভ্র এবার চোখ গরম দিয়ে বললো,
—-” শালা চুপ কর।”
শুভ্র একবার রোজকে দেখে চলে গেলো। আসলে শুভ্র দেখতে চেয়েছিলো রোজ ঠিক আছে কি না। এখন রোজকে দেখা হয়ে গেলো। এখন সে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। ব্যাপারটা রোজও বুঝতে পারলো। রোজ মুচকি হেসে দরজা আটকে শুয়ে পড়লো। ওদের ব্যাপারটা রোদ বুঝে হালকা হাসলো। এরপর সে ছাদে চলে গেলো,
__________________
২দিন পর শুভ্রর মা ও চলে এলো। সেই সাথে প্রায় রিলেটিভরাও চলে এসেছে। ইশান আর রিক ও চলে এসেছে। পুরো বাড়িতে আনন্দ মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মাঝে শুভ্র পড়েছে ফ্যাসাদে। কারন রোজকে কোনভাবেই একা পাচ্ছে না। রোজও সবার সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত আছে। আজকে থেকেই বাড়ি সাজানো হচ্ছে। ২দিন আগে যেহেতু কমিউনিটি সেন্টারে যাবে। সেহেতু হাতে বেশী টাইম নেই। রোজ রুমে এসেছে নিজের ফোন নিতে। শুভ্র সেটা দেখে চুপি চুপি রোজের রুমে চলে এলো। রোজ ফোন নিয়ে বের হতে গেলেই শুভ্র দরজা আটকে দিলো। রোজ সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি হলো? দরজা আটকালে কেন?”
শুভ্র এসে রোজের মুখ চেপে ধরলো। রোজ চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে আছে। শুভ্রর চোখদুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। রোজ বুঝলো শুভ্র রেগে আছে। রোজ কিছু বলার আগে শুভ্র বললো,
—-” হোয়াটস রং উইথ ইউ? আমাকে তোমার ভালবাসার জালে আটকে দিয়ে। এখন তুমিই দুরে, দুরে থাকছো কেন?”
রোজ শুভ্রর হাত সরিয়ে বললো।”
—-” আসলে শুভ্র,
শুভ্র ধমক দিয়ে বললো।”
—-” আসলে শুভ্র কি হ্যা?”
রোজ আমতা, আমতা করে বললো,
—-” সবার সাথে কথা বলতে গিয়ে।”
রোজকে থামিয়ে শুভ্র বললো,
—-” সবার সাথে তুমি এতই ব্যস্ত যে আমাকে ভুলে গিয়েছো। শুভ্র নামের কোন এক প্রানী যে তোমার জন্য ছটফট করছে। এটা দেখার টাইমও তোমার নেই।”
রোজ কি বলবে বুঝতে পারছে না। আসলেই এই ২দিন শুভ্রর সাথে সেভাবে কথা বলেনি তাই চুপ করে আছে,
—-” এখন কিছু বলছো না কেন?”
গলা খাকারী দিয়ে বললো শুভ্র। রোজ মিনমিন করে বললো।”
—-” সরি আর এমন হবে না,
শুভ্র দেয়ালে হাত ঘুষি দিয়ে বললো।”
—-” সরি মাই ফুট,
রোজ এবার কেঁপে উঠলো। শুভ্র কতক্ষণ বড়, বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললো।”
—-” আমি এটাও জানতে পারিনি এখন তুমি ঠিক আছো কি না? তোমার কাটা জায়গায় ব্যথা আছে কি না? জানো কতটা অস্থির লেগেছে আমার। হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড রেড রোজ? আমি তোমাকে ভালবাসি। আমার কাছে এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তুমি। তোমার স্বপ্ন দিয়ে তোমাকে দিয়ে আমি আমার স্বপ্ন সত্যি করতে চাই। তোমাকে হ্যাপি রাখার জন্য বেঁচে থাকতে চাই,
রোজকে কাঁদতে দেখে শুভ্র রোজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।”
—-” হিসসস কাঁদবে না। তুমি জানো তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না। তোমার ভয়েস আমার কাছে মিউজিক হয়ে গিয়েছে। আর তোমার হাসি হয়েছে পৃথিবীর সবথেকে সেরা সৌন্দর্য্য। তাই তুমি কাঁদলে ঠিক এখানটায় লাগে,
বুকের বাম পাশ দেখিয়ে বললো। রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্র আলতো হাতে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো।”
—-” আমি রাগ করেছি বলে কাঁদছো? বাট তোমার কষ্ট হবে বলেই তো রাগ করলাম। তুমি তো মেডিসিনগুলোও ঠিকমত নাওনি,
রোজ শুকনো ঢোক গিলে বললো।”
—-” তুমি কি করে জানো?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” আমি সব জানি মাই রেড রোজ।”
এরপর রোজকে বেডে বসিয়ে। নিজেই রোজকে মেডিসিন ধরিয়ে দিলো হাতে। বেডের পাশ থেকে পানি দিলো। রোজও লক্ষী মেয়ের মতো মেডিসিন খেয়ে নিলো। মেডিসিন খাওয়া শেষে দুজনে একসাথেই নিচে গেলো,
#চলবে..”