ফিরে এসো ভালবাসা❤ পর্ব-০৬

0
1233

#ফিরে এসো ভালবাসা❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৬

শুভ্র রোজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। যেন ছেড়ে দিলেই রোজ হারিয়ে যাবে। দুজনেই চুপ করে আছে। শুভ্র চোখ বন্ধ করে সময়টা ধরে রাখতে চাইছে। রোজ ব্যস্ত আছে শুভ্রর হার্টবিট শুনতে। নিরবতা ভেঙে শুভ্র বলে উঠলো।”

—-” যেদিন থেকে রিয়েলাইজ করেছি। যে আমি তোমাকে ভালবাসি। সেদিন থেকে আমার হার্টবিট চলে তোমার নামে। আমার প্রতিটা রক্তের কনায় তুমি মিশে গিয়েছো। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস চলে তোমার নামে,

রোজ শুভ্রর বুক থেকে মাথা তুলে বললো।”

—-” এত ভালবাসো আমাকে?”

শুভ্র হাসলো রোজ দুষ্টুমি করে বললো,

—-” আচ্ছা কতটা ভালবাসো আমাকে?”

শুভ্র রোজকে জড়িয়ে ধরেই বললো।”

—-” ভালবাসার কোন পরিমাপ হয় না। তবুও যদি কোনদিন ভালবাসার পরিমাপ নিতে মাপকাঠি তৈরি হয়। তাহলে সেই মাপকাঠি দিয়েও আমার ভালবাসার পরিমাপ বের করা যাবে না। আমি ভুলে গিয়েছি আমার অতীতে কি ছিলো। এখন আমার বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব তুমি,

রোজ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”

—-” ম্যাডাম বাড়ি যাবো না আমরা?”

রোজ হেসে বললো,

—-” চলুন স্যার।”

এরপরে ওরা দুজন গাড়িতে উঠে বসলো। সারা রাস্তা রোজ শুভ্রর কাঁধে মাথা দিয়ে ছিলো। শুভ্র রোজকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি গেলো। আজকে দুজনেই শান্তি পাচ্ছে। শুভ্র বাড়ি গিয়ে নিজের রুমে এলো। রোজও রুমে এসেই ডায়েরি নিয়ে বসে গেলো। রোজ টাইম পেলেই ডায়েরি নিয়ে বসে যায়। সারাদিন যা, যা হয় সেগুলো লিখে রাখে। তবে এই ডায়েরিতে শুভ্রকে নিয়েই বেশী লেখা। আজকের ঘটনাও লিখে রাখলো ডায়েরিতে। ডায়েরিতে লিখতে গিয়ে মুচকি, মুচকি হাসছে। এদিকে রোদ সব দেখছে দরজায় দাড়িয়ে। রোদ গলা খাকারী দিয়ে উঠলো। রোজ চমকে উঠে ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” তুই এখানে কি করিস?”

রোদ হুট করে বললো।”

—-” প্রেমে পড়েছিস?”

রোজ চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে বললো,

—-” মানে?”

রোদ এবার রুমে এসে বললো।”

—-” ডায়েরিতে কি লেখলি?”

রোজ ডায়েরি ধরে রেখে বললো,

—-” তোকে কেন বলবো?”

রোদ দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” রোজমনি প্রেমে পড়েছো?”

রোজ আমতা, আমতা করে বললো,

—-” এসব কি বলছিস হ্যা?”

রোদ বেডে বসে মুখ বাঁকিয়ে বললো।”

—-” তাহলে তুই হাসলি কেন?”

রোজ ভেংচি কেটে বললো,

—-” আমার মুখ দিয়ে আমি হেসেছি তাতে তোর কি?”

রোদ ডায়েরি নিতে গেলে রোজ সরিয়ে বললো।”

—-” তুই এখানে কেন এসেছিস?”

রোদ মুখে লজ্জা ভাব ফুটিয়ে বললো,

—-” ১সপ্তাহ পর তোর ভাইয়ার বিয়ে।”

রোজ ভাবুকভাবে বললো,

—-” কোন ভাইয়ার?”

রোদ রোজের পিঠে চর মেরে বললো।”

—-” আরে গাধী আমার। বাবাই বললো ১সপ্তাহ পরই বিয়ের ডেট দিয়েছে,

রোজ বেডে বসে বললো।”

—-” তো আমি কি করবো?”

রোদ এবার রেগে বললো,

—-” শপিং করবি না নাকি?”

রোজ হু হা করে হেসে দিয়ে রোদকে জড়িয়ে ধরে বললো।”

—-” কংগ্রাচুলেশনস ভাইয়া,

রোদও হেসে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো।”

—-” থ্যাংক ইউ মাই সুইট সিস্টার। শোন সন্ধ্যায় আমরা বের হবো ওকে?”

রোজ মাথা নেড়ে ওকে বললো। রোদ ওর রুমে চলে গেলো। আজকে থেকেই বাড়িতে বিয়ে, বিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে হবে। আজকে থেকেই রিলেটিভরা আসতে শুরু করেছে। রোজ আরো কয়েক পেজ লিখে রেখে দিলো,

_________________

ডায়েরি রাখতেই শুভ্র রোজকে ফোন করলো। রোজ মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করলো। ফোন রিসিভ করতেই শুভ্র বললো।”

—-” রেড রোজ সন্ধ্যায় তো শপিং করতে যাবে তাই না? তুমি কিন্তুু আজকে রেড কালার চুরিদার পড়বে। এখন থেকে আর শার্ট, প্যান্ট পড়বে না ওকে?”

রোজ শুভ্রকে রাগাতে বললো,

—-” কিন্তুু আমি এগুলোই পড়বো। এন্ড আমি এগুলো পড়েই অভ্যস্ত, ইউ নো না?”

শুভ্র রেগে বলে উঠলো।”

—-” আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে,

রোজ এবার জোড়ে হেসে বললো।”

—-” ওকে, ওকে আমিতো মজা করছিলাম,

দুজনে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। রোজ ফোন রেখে নিচে নেমে এলো। রোজের নানুমনি এসেছে রোজ দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলো।”

—-” নানুমনি কেমন আছো তুমি?”

রোজের নানুমনি রোজকে ধরে বললো,

—-” ভালো সোনা, তুই কেমন আছিস?”

এমন সময় রোজের কাজিন নুসরাত আর ঝিনুক বলে উঠলো।”

—-” রোজ আপু,

রোজ দৌড়ে ওদের জড়িয়ে ধরে বললো।”

—-” আর কেউ আসেনি? ইশান ভাইয়া রিক ভাইয়া কোথায়?”

ওরা সোফায় বসতে, বসতে বললো,

—-” ওরা পরে আসবে।”

রোজ সবার সাথে গল্প করতে শুরু করলো। দেখতে, দেখতে বিকেল হয়ে গেলো। শুভ্র আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে। একটা হোয়াইট কালার প্যান্ট পড়েছে। হোয়াইট কালার টি শার্ট। তার উপরে ব্লাক কালার জ্যাকেট। জ্যাকেটের সামনের চেইন খোলা। চুলগুলো নরমাল আছে কিছু লাগায়নি। অতিরিক্ত সিল্কি হওয়ায় বারবার কপালে এসে পড়ছে। চোখে ব্লাক সাইন গ্লাস। হাতে ব্রান্ডের ব্লাক ঘড়ি। গাড়ির চাবি নিয়ে শুভ্র বেরিয়ে গেলো। শুভ্রর মা ২দিন পর যাবে বলেছে। শুভ্র ৪টার দিকে রোজদের বাড়ি চলে এলো। রোজ তখন গল্প করছিলো সবার সাথে। শুভ্রকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। নুসরাত আর ঝিনুক ও তাকিয়ে আছে। শুভ্র তো দৌড়ে গিয়ে ওর নানুমনিকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—-” ওহ ডার্লিং তুমি কেমন আছো?”

নানুমনি মুখটা বাঁকিয়ে বললো।”

—-” ছাড় ঢং করতে হবে না। এখানে আসার পর তোদের ভাই, বোনের ঢং দেখছি হু,

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” কেন ডার্লিং কি হলো?”

নানুমনি রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” এই রোদ আর রোজও এখানে আসার পর ভালবাসা দেখাচ্ছে আর তুইও। বলি নানুমনিকে তো ভুলেই গিয়েছিস। মনে পড়লে তো যেতিই গ্রামে।”

মুখ ফসকে রোজ বলে ফেললো,

—-” নানুমনি তুমি তো জানোই। তোমাদের ওদিক আমাদের ভাল লাগে না।”

শুভ্র চোখ গরম করে তাকালো। রোজ হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। নানুমনি কাঁদো, কাঁদো হয়ে বললো,

—-” তা ভাল লাগবে কেন? শহরের হাওয়া তোদের গায়ে পড়ে যে তাই।”

রোদ মিনমিন করে বললো,

—-” আসলে নানুমনি রোজ ওটা বলতে চায়নি।”

নানুমনি ভেংচি কেটে বললো,

—-” চুপ কর।”

রোদ আর শুভ্র নানুমনিকে মানালো অনেক কষ্টে। তবে কথা হলো গিয়ে ওদের গ্রামে যেতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। রোজ আমতা, আমতা করে হ্যা বললো। সন্ধ্যায় সবাই শপিং মলে এলো। রোজ শুভ্রর কথামত রেড কালার চুরিদার পড়েছে। একহাতে রেড কালার চুরি। আরেক হাতে রেড কালার ঘড়ি। ঠোটে হালকা রেড কালার লিপস্টিক। চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। রোদ, তনয়া, নিরব, শুভ্র, রোজ। আর নুসরাত, ঝিনুক এসেছে। তনয়ার কয়েকটা কাজিনও এসেছে। ওরা সবাই শপিং করছে। তবে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই কয়েকটা ছেলে রোজকে বাজে নজরে দেখছে। শুভ্রর চোখ এড়ালো না সেটা। শুভ্র হাত মুঠ করে রেখেছে রাগে। সবার শপিং শেষে ওরা নিচের ফ্লোরে এলো। নিচের ফ্লোরে আসতেই সুযোগ বুঝে একটা ছেলে। রোজের ওড়না টেনে ধরলো। এবার আর শুভ্রর সহ্য হলো না। শুভ্র ছেলেটার নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিলো। সাথে, সাথে ছেলেটার নাক দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো। ছেলেটাকে ঘুষি দেওয়ায় আরো কয়েকটা ছেলে এগিয়ে এলো। শুভ্র ওদেরও মারতে শুরু করলো। পাগলের মতো সবগুলোকে মারছে। মারতে, মারতে সবার অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। আর যেই ছেলেটা রোজের ওড়না ধরেছিলো। ওটাকে ইচ্ছেমতো মারছে। সবাই ছাড়ানোর চেষ্টা করছে শুভ্র কিছুতেই ছাড়ছে না। মারতে, মারতে চেঁচিয়ে বললো,

—-” তোর সাহস হলো কি করে? আমার সামনে ওর ওড়না ধরার? আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। এই হাত দিয়ে ওড়না ধরেছিলি না? এই হাতটাই আমি ভেঙে ফেলবো।”

বলে ছেলেটার হাত মোচর দিলো। সত্যিই ছেলেটার হাত ভেঙে গেলো। রোজ ভয়ে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে আছে। শুভ্রর চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝড়ছে। এরমাঝে একটা ছেলে রোজকে ধাক্কা দিলো। রোজ গিয়ে শিরির সাথে ধাক্কা খেলো। আর মাথায়ও আঘাত পেয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলো। শুভ্র রোজ বলে চিৎকার করে উঠলো। রোজ নিচে পড়ার আগেই শুভ্র ধরে ফেললো। যেই ছেলেটা রোজকে ধাক্কা দিয়েছে। সেই ছেলের বুক বরাবর লাথি দিলো। ছেলেটা দুম করে নিচে পড়ে গেলো। শুভ্র রোজকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। শুভ্রর সাথে সবাই বেরিয়ে এলো,

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে