#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১৪
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
সেদিনের পর কেটে গেছে দুদিন। নুহাশ এখন আগের থেকে স্বাভাবিক। নুহাশকে যখন বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় নাহার বেগম প্রায় এক ঘন্টা ছেলেকে বুকে জরিয়ে ছিলেন।নুহাশ তার খুব যত্নের। নুহাশকে তিনি মনে প্রানে নিজের বড় সন্তান ভাবেন।তাই তো দিনের অর্ধেক সময় ছেলের অপেক্ষাতেই কাটে তার।
সেদিনই লুবনা বেগম ও ফিরে এসেছেন ছোয়াকে কিছু না জানিয়েই।তবে এতে ছোয়া কিছুই বলেনি।সেও মাকে খুব মিস করছিলো।
এরশাদ শিকদারের দুই বছর কারাদণ্ড এবং দুই বছর পর ফাঁসির রায় দিছে আদালত।এতে অনেকটাই ভেঙ্গে পরেছেন তিনি।শামসুল শিকদারের ১০ বছর জেল এবং তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এই সব অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকার জন্য।যদিও ছোয়া এই রায়ে মনে মনে খুশি নয়।সে চেয়েছিল বাবার খুনিকে নিজের হাতে শাস্তি দিতে।তবে নুহাশের জন্য সেটা আর করেনি।
অনেকদিন পর চৌধুরী বাড়িতে যেন প্রান ফিরে এলো।নুর আগের মতো চঞ্চল হয়ে গেছে।রোহিতের সঙ্গ পেলে মেয়েটা সব অতীত ভুলে যায় মুহুর্তেই।
“আচ্ছা আপনি তো বললেন না এরশাদ শিকদারের নারী পাচারের খবর আপনি কোথা থেকে পেলেন? আর এসব ওই মুহূর্তে কেই বা আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলো? আমি সেদিন শুধু ফোনটাই দেখেছিলাম সাথে যে আরো কিছু ছিলো খেয়ালই করিনি।ভাগ্যিস মিলি সেটা দেখেছিলো।
” ম্যাজিক মেডাম।তুমি এখনো অনেক কিছুই জানো না।
“আচ্ছা আরো কিছু জানার বাকি আছে বুঝি?
” হ্যাঁ। চলো আমরা বেরুবো।
“কিন্তু কোথায়?
” চলোই না দেখতেই পাবে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ছোয়া দেখলো তাদের গাড়িটা কারাগারে সামনে এসে থামলো।ছোয়ার জানা মনে এটা সেই কারাগার যেখানে এরশাদ শিকদার এবং শামসুল আছে।
“আমরা এখানে কেন এলাম নুহাশ?
” বললাম না তোমাকে কিছু জানানোর আছে।এখন কথা কম শুধু আমাকে ফলো করো।
গাড়ি থেকে নেমেই ইন্সপেক্টর সাব্বির কে দেখা গেলো।তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে সাব্বির। নুহাশের সাথে হাত মেলালো।
“এসে গেছিস। তোদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
” হুম।সব ব্যবস্থা আছে তো।কোনো সমস্যা হবে না?
“একদম না।তার জন্য তো আমি আছি।তবে হ্যাঁ যত দ্রুত সম্ভব কথা শেষ করতে হবে।বুঝতেই পারছিস বিষয় টা।
“বেশি সময় লাগবে না।চিন্তা করিস না।চলো ছোয়া।
একটা রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে এরশাদ শিকদারকে।মাথার উপরে বড় একটা লাইট ঝুলে আছে।সামনে একটা কাঠের টেবিল আর দুটো চেয়ার ছাড়া কিছুই নেই তেমন।দরজা ঠেকে ভেতরে প্রবেশ করে নুহাশ সাথে ছোয়া।শিকদার কে দেখে ছোয়া ভ্রু কুচকে তাকায় নুহাশের পানে।তার চোখমুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।আর তারা এখানেই বা কেন এলো।নুহাশ ছোয়ার অবস্থা বুঝে ফিসফিস করে বললো-
” এখনই সব বুঝতে পারবে।একটু অপেক্ষা করো।
“কেমন আছেন বাবা!
কারো বাবা ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকায় এরশাদ শিকদার। তার মানে নুহাশ সব জেনে গেছে?তাকে জানতে দিবে না বলেই তো আলহাজ্ব চৌধুরীকে খুন করেছিলো সে।যদিও সোলাইমানের বিষয় টাও সে জানতো তবে এই সত্যি টা নুহাশ জানতে পারুক সেটা তিনি চাননি। এরশাদ শিকদারের ভাবনার মধ্যেই নুহাশ ছোয়াকে নিয়ে সামনের চেয়ারে বসে পরলো।
” কি ঝটকা লাগলো?
আমারও লেগেছিলো।যখন আমি জানতে পেরেছিলাম আপনার মতো নোংরা লোকটা আমার জন্মদাতা।
“তুমি!
” সব জানি।বিশ্বাস করুন আমার একটুও খারাপ লাগেনি আপনাকে এই অবস্থায় দেখে।আপনি আমার সব কিছু কেরে নিয়েছেন।আমার বাবাকে।আমার সুন্দর একটা জীবনকে।এমনকি আমার জন্মদাত্রী মাকেও।
“কিন্তু তোমার মাকে আমি মারিনি।সে নিজেই সু*ই*সা*ই*ড করেছে।
” হ্যাঁ। কিন্তু তার জন্য দায়ি ছিলেন আপনি।আপনি যদি আমার মাকে মেনে নিতেন আমাকে মেনে নিতেন তাহলে আমার মা এভাবে নিজেকে শেষ করতো না।কি ভাবছেন এতো কিছু জেনেও কেন আমি এতোদিন কিছু বলিনি আর সেদিন কোর্টেও কেন এই বিষয় টা সামনে আসেনি তাই তো?কারণ আমি চাইনি আমাকে আপনার ছেলে হিসেবে কেউ চিনুক এবং আমার মায়ের সম্মন্ধে কেউ খারাপ ধারণা করুক।এখন কি করবেন? যে সত্য প্রকাশ এর ভয়ে আপনি এতোগুলো খুন করলেন সেই সত্যি তো সবাই জেনে গেছে।
“কিন্তু আমার সহপাঠীদের আমি মারিনি। এর পিছনে তুমিই আছো তাই না?
” আমরা আছি।কিন্তু এতে তো কোনো লাভ নেই।কারন আপনার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
একবার ভেবেছিলেন সদ্য জন্ম নেয়া একটা শিশু ওই বৃষ্টির রাতে ওভাবে যদি মরে যেত,যদি কোনো কুকুর বেড়াল খেয়ে নিতো।কিভাবে পারলেন এমনটা করতে।আরে মেনে না নিয়েছেন একটা এতিম খানায় রেখে আসতেন।কিন্তু আপনি কি করলেন সোজা ডাস্টবিন!আমার মাকে তো ভালোবেসেই কাছে টেনেছিলেন তাহলে আমার বেলায় তিক্ততা কেন? এখন থেকে যতদিন এখানে থাকবেন মরার আগ পর্যন্ত এই সত্যি টা আপনাকে কুরে কুরে খাবে।
নুহাশ ছোয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে।ছোয়া এখনো একটা ঘোরে আছে।তার মানে নুহাশের আসল বাবা এরশাদ শিকদার। নুহাশ এটা জানতো।সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু ইন্সপেক্টর সাব্বির! সে কি নুহাশের আপন কেউ?
“আচ্ছা নুহাশ-
” আমি জানি তুমি কি জানতে চাও।সাব্বিরের সাথে আমার কি সম্পর্ক তাই তো?
“হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন?
” আমি তোমার সবকিছুই বুঝতে পারি।সাব্বির আমার ছোট বেলার বন্ধু।তাছাড়া সাব্বিরের বাবার সাথে আমার বাবার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো।সাব্বিরের মা ছিলো না।ও ওর বাবাকে নিয়ে দেশের বাইরে থাকতো।আংকেল একদিন স্ট্রোক করে আর তারপর থেকে বাবাই ওর সব দায়িত্ব নিয়ে ওর লেখাপড়ার খরচ চালায়।এতোদিন দেশের বাইরেই ছিলো।বছর খানেক হলো বাংলাদেশ এসে এখানে জয়েন করেছে সেটাও আমি চেয়েছিলাম বলে।এই যে তোমার এতো ইনফরমেশন, এসবকিছুই সাব্বির মেনেজ করতে হেল্প করেছে।তাছাড়া আমার সমস্ত গোপনীয় কাজ সাব্বিরই করে দেয়।বুঝলে?
“তার মানে সেদিন এরশাদ শিকদারের বাংলো থেকে আসার সময় আমার পিছু যে করছিলো সেটা উনিই ছিলো।
” হ্যাঁ ভাবি আমিই ছিলাম।
“আপনারা যে এতো দুরন্ত আগে বুঝতে পারিনি।
” আমরাও বুঝিনি আপনি এতোটা বুদ্ধিমতি।
★
সেদিন কারাগার থেকে ফেরার পর এরশাদ শিকদার অনেক সময় নিয়ে সেই রুমে বসে ছিলেন।অনেক সমীকরণ মিলিয়ে শেষে একটাই সমাধান তা হলো তার পাশে কেউ নেই।যেই সুখের জন্য যাদের জন্য তিনি এতো কিছু করেছেন তারা তার এই দুঃসময়ে তার পাশে নেই।পাশে থাকা তো দূর তার সাথে কেউ দেখাও করেনি এখনো। এতোদিন সত্যি না জানলেও এবার নুহাশের জন্য একটা কষ্ট অনুভব করলো শিকদার সাহেব।
নুহাশের মা রেবেকা সম্পর্কে এরশাদের ক্লাসমেট ছিল। এরশাদ শিকদারকে খুব ভালোবাসতেন তিনি।কিন্তু এরশাদ শিকদার তার স্ত্রী লুসিকে ভালোবাসত।
লুসি একজন খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে।বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।অন্যদিকে রেবেকা খুব সাধারণ ঘরের মেয়ে।টাকার লোভে রেবেকাকে প্রায় পায়ে ঠেলেছিলেন এরশাদ। লুসি এই বিষয় এখনো জানে না।কিন্তু রেবেকাকে ভোগ করার লোভ বরাবরই ছিলো এরশাদের।সেটা সে পেয়েও গেছে।লুসিকে বিয়ের এক সপ্তাহ পর জানতে পারে রেবেগা প্রেগন্যান্ট। তখন থেকেই রেবেকার সঙ্গে দুরত্ব বাড়ায়।রেবেকা স্ত্রীর অধিকার চায়নি।শুধু নুহাশের জন্য একটা আশ্রয় চেয়েছিলো সেটাও দেয়নি।যখন শুনলো তার তিনদিনের শিশুকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে রেবেকা সেটা মেনে নিতে পারেনি।সমাজের লোকজনের গালমন্দ তো ছিলোই সেই সাথে সন্তান হারানোর শোক মেনে নিতে না পেরেই আত্ন*হ*ত্যার পথ বেছে নেন।ঘটনার অনেক বছর কেটে গেছে কিন্তু রেবেকাকে এখনো ভুলতে পারেনি এরশাদ।আজ এতোগুলো বছর পর মনে হচ্ছে লুসি নয় রেবেকাই তাকে সত্যিকারের ভালোবাসত।কিন্তু এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।নুহাশের চোখে তার জন্য সে ঘৃনা দেখেছে।তাই নুহাশরা চলে যাওয়ার পর তিনিও আত্নহত্যা করেন।
পরের দিন খবরের কাগজে এই খবর পড়ে নুহাশ।একটু তো খারাপ লাগেই কিন্তু সেটা ভেতরেই রয়ে যায়।ছোয়া বুঝতে পারে নুহাশের কষ্ট কিন্তু বাবা হারানোর শোক সেও ভোগ করেছে।আর যার জন্য সে বাবাকে হারিয়েছে তার মৃত্যুতে একটুও খারাপ লাগেনি ছোয়ার।
ছোয়ার প্রেগ্ন্যাসির ৯ মাস চলছে। নুরের পরিক্ষা শেষ। কথা অনুযায়ী নুর এবং রোহিতের বিয়ে হবার কথা নুরের পরিক্ষার পরে।তাই বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।এই সপ্তাহেই নুরের বিয়ে। বাড়ির বড় বউ হিসেবে ছোয়ার অনেক কাজ সাথে যোগ দিয়েছে মিলিও। ইদানীং মিলি কেমন যেন মন মরা হয়ে থাকে।বিষয়টা ছোয়া খেয়াল করলেও কখনো জিগ্যেস করতে পারেনি। মিলি সবসয় এড়িয়ে গেছে বিষয় টা। আজ ছোয়া জিগ্যেস করেই ফেললো।
“কোনো সমস্যা মিলি তোমাকে বেশ কিছুদিন ধরেই কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছে।কি হয়েছে বলো আমায়।
” কি..কিছু না ম্যাম ওই একটু প্রেশার যাচ্ছে তো তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।আসলে এসব তো আগে কখনো করিনি।
“মিথ্যে বলো না তো।তোমাকে আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি কখনো কোনোকিছুতে তোমাকে টায়ার্ড হতে দেখিনি।সত্যি করে বলো মিলি কি হয়েছে।
” আসলে ম্যাম শিহাবের সাথে একটু সমস্যা হয়েছে তাই।
“শিহাব তোমার ওই বয়ফ্রেন্ড?
” হ্যাঁ।
“কি সমস্যা শুনি?
” ওর বিয়ে ঠিক করেছে পরিবার।মেয়ে অনেক ধনি পরিবারের। শুনেছি তারা মোটা অংকের যৌতুক দিবে সাথে বাইক।আমি যদি এই বিয়েটা আটকাতে চাই তাহলে যেন এক কোটি টাকা দেই।কিন্তু ম্যাম বিশ্বাস করুন আমার কাছে এতো টাকা নেই।থাকলে আমি একবারও ভাবতাম না।ও জানে যেই ফ্ল্যাটে আমি থাকি সেটা আমার নামে আর এটাই ও চাইছে ওর নামে করে নিতে।কিন্তু এই ফ্ল্যাট টা আমার বাবা অনেক কষ্টের টাকায় কেনা। আমার নামে ঠিকই কিন্তু আমি এটা কাউকে দিতে পারি না।
“হুম বুঝলাম।দেখো মিলি যেই ছেলে তোমার কাছে ভালোবাসা পেতে অপশন রাখে এবং কোনো ডিমান্ড করে সেই ছেলে আর যাই হোক কখনোই ভালোবাসেনি।তাই বলবো যা করবে ভেবে করবে।তুমি আমার ছোট বোনের মতো।মতো কেন বলছি আমার মা তোমাকে কতটা ভালোবাসে তা তো জানই তুমি আমার ছোট বোন।নুর আমার কাছে যেমন সত্যি বলতে তুমিও তেমনই।তাই আমি বলবো এমন ছেলে তুমি ডিসার্ভ করো না।তাই যে যেতে চায় তাকে যেতে দাও।দেখবে সঠিক সময়ে তোমার যোগ্য কেউ ঠিক তোমার কাছে চলে আসবে।
” বুঝতে পেরেছি ম্যাম।থ্যাঙ্কিউ। আসলেই আপনি আমার বড় বোন।আই লাভ ইউ ম্যাম।
“আরে আস্তে আমার বউ ব্যাথা পাবে তো এভাবে কেউ জরিয়ে ধরে।
নুহাশের কথায় দুজনেই তার দিকে ফিরে তাকালো।মিলি ভ্রু কুচকে বললো।
” বিয়ের আগে আপনার বউকে আমিই আগলে রেখেছি ভাইয়া।আমি সারাক্ষণ আপনার বউ এর আশেপাশে থেকেছি।এমনকি আপনার বউয়ের বেড রুমেও।
“হুম এবার দাঁড়াও তোমার বেড রুমে বিপরী কারোর থাকার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি।আর এই যে বউ তখন থেকে তো এদিক সেদিল খেয়াল রাখছো বিয়ের এখনো চার দিন বাকি।তাই এতো কিছু দেখতে হবে না।সবকিছু দেখতে গিয়ে যে নিজের খেয়াল রাখছো না। খেয়েছো সকালে?
” ভুলেই গেছিলাম।আপনিও তো খাননি চলুন আমি খাবার দিচ্ছি।
“আমাকে নিয়ে ভাবার সময় তোমার আছে?যাই হোক তোমাকে এখন কিছুই কিরতে হবে না।ঘরে চলো আমি খাবার রেখে এসেছি এখনই খেয়ে নিবে।
ছোয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ঘরে নিয়ে গেলো।নিজের হাতেই খাইয়ে দিলো ছোয়াকে।বিকেলে সবাই গেলো শপিং করতে।নাহার বেগম আর নুহাশ থেকে গেলো।বিপুলকে পাঠানো হলো নুরের সাথে। সাথে অবশ্য নুরের কাজিনরা,মিলি,সাব্বিরও আছে।সাব্বির মুলত যাচ্ছে মিলির জন্যই।শুরু থেকেই মিলিকে সাব্বিরের পছন্দ। আগে কোর্টে, থানায় বিভিন্ন কাজের জন্য ছোয়ার সাথে দেখা যেত মিলিকে।মিলির রেগে রেগে চোখমুখ কুচকে কথা বলা সাব্বিরের খুব ভালো লাগে।কিন্তু মিলির বয়ফ্রেন্ড আছে যেনে সেদিকে আর পাত্তা দেয়নি সাব্বির। তবে আজ মিলির মন খারাপ দেখে ওর কেমন যেন লাগছে।তাই না চাইতেও মিলির দিকে বার বার দেখছে।একসময় মিলি খেয়াল করলো সাব্বির ওকে দেখছে।
” কিছু বলবেন সাব্বির ভাই?
“না তো।
” ঠিক আছে।
শপিং এ সবার জন্যই কেনাকাটা করা হলো।কিন্তু মিলি কিছুই নিলো না।সাব্বির সবার আড়ালে মিলির জন্য একটা শাড়ি নিলো।সাথে প্রয়োজনীয় সবকিছুই। এটা ছোয়াকে দিয়েই মিলিকে দিবে। সাব্বির খুব ভালো করেই জানে তার থেকে মিলি এটা নিবে না।
“সবার কেনাকাটাই তো হলো।গায়ে হলুদের শাড়ি কেনা বাকি।আচ্ছা মিলি আমার রিসিপশনের জন্য কি নিই বলতো শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা?
” তুমি যেটাতে কম্ফোর্ট হও সেটাই নাও নুর আপু।
“তা বললে হবে।আচ্ছা তুমি কোনটাতে কম্ফোর্ট হও?
” আমার বরাবরই শাড়ি পছন্দ। তাহলে চলো শাড়িই নেবো।আর আমি তুমি একই রকমের শাড়ি নিবো বুঝলে।ভাবির জন্য ভাইয়া নিজেই ড্রেস নিবে তাই আমি আলাদা নিতে চাই না।
“আমি কেন।আমার কিছু লাগবে না নুর আপু।আমার অনেক ড্রেস আছে যেগুলো এখনো পড়া হয়নি।তুমি নিজের জন্যই নাও না।
” মামা এই মেরুন রঙের শাড়ি দুটো প্যাক করে দিন তো।আর ওই যে গোল্ডেন কাজ করা লেহেঙ্গা সেটাও দিবেন।শাড়িটা ভাইয়ার তরফ থেকে আর লেহেঙ্গা আমার তরফ থেকে।
“এসবের দরকার ছিলো না নুর আপু!
” খুব দরকার ছিলো। আচ্ছা তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে ছাড়াই আমি আনন্দ করবো? তুমি তো আমার পরিবারের একজন তাই না।আর আমি না তোমার বড়। বড়দের কথা মানতে হয় বুঝলে।
খুশিতে মিলি নুরকে জরিয়ে ধরলো।আসলে এই পরিবার দুটোর মানুষগুলো তার আপনই মনে হয়।এদের মধ্যে থাকলে কখনো মনেই হয় না ও বাইরের কেউ।
বিয়ের তোরজোর চলছে পুরো দমে।সাব্বিরকে এতোদিন সবাই সেভাবে না চিনলেও ওর পুরো পরিচয় দেয়ার পর সবাই খুব সহজেই মেনে নিয়েছে।ছোট বেলায় সাব্বিরকে নাহার বেগন দেখলেও সেটা অনেক আগের কথা।তাই প্রথম দেখায় চিনতে পারেনি।
আজ বাদে কাল বিয়ে।আজ গায়ে হলুদ।এদিকে সাব্বির মিলির জন্য আনা শাড়িটা এখনো দিতে না পেরে কেমন অস্থির করছে।নুহাশ সাব্বিরকে জিগ্যেস করলো এমন কেন করছে।এতোদিন লুকিয়ে রাখা ভালোবাসা সাব্বির আজ নুহাশের কাছে প্রকাশ করে দিলো।সব শুনে নুহাশ একটা হতাশার নিশ্বাস নিলো।
“ভাই তুই এমন একটা মেয়ের প্রেমে পরেছিস না যে সারাজীবন তোকে জালিয়ে মারবে।যাই হোক ছোয়ার থেকে শুনেছি মিলি যাকে ভালোবাসত তার বিয়ে অন্য কোথাও ঠিক হয়েছে।মিলিও এখন তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে না।সবকিছু মিলিয়ে বেচারির মন খারাপ।তুই কেন তোর অনুভূতির কথা ওকে বলছিস না?
” পাগল যে মেয়ে দেখা গেলো এই অপরাধে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিলো অথবা গুলি করে মারলো।
এখন এই শাড়িটা কিভাবে দেবো সেটাই বুঝতে পারছি না।তুই ভাবিকে দিয়ে দেয়া না প্লিজ।
“আমি কেন দিতে যাবো তুই দে না।ভালোবাসিস তুই আমি আমার বউ কোনো হেল্প করতে পারবো না।
” তুই না আমার বন্ধু প্লিজ এই উপকারটা কর আমার।আমি চাই আজ এটা মিলি পরুক প্লিজ।
“আচ্ছা ঠিক আছে। আর ভাব নিতে হবে না।
” থ্যাঙ্কিউ ভাই।
চলবে