#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১১
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
“চলুন অফিসার।এভাবে গেলে হবে তো নাকি হাতকড়া পরিয়ে নিতে চান?
” এভাবে লজ্জা দিবেন না স্যার।আশা করি সব খুব তারাতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
যাওয়ার সময় নুহাশ বিপুলকে ইশারায় কিছু একটা বললো।সেটা অন্য কেউ না বুঝলেও বিপুল ঠিক বুঝেছে।
“এবার কি হবে ভাবি।ভাইয়াকে তো ওরা ধরে নিয়ে গেলো?
” চিন্তা করো না নুর। আমি আছি তো।বিপুল ভাই আছে। তোমার ভাইয়ের কিছু হতে দেবো না আমি।
নাহার বেগম ছেলের জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে।তিনি খাননি বলে বাকিদেরও আর রাতে খাওয়া হলো না।বিপুল আজ থেকে গিয়েছে।বলা তো যায় না শত্রু পক্ষরা কোন দিক দিয়ে আবার আক্রমণ করে।
“আমাদের একটা ভালো উকিল লাগবে ভাবি।ভাইকে তো আর জেলে থাকতে দেয়া যাবে না।আপাতত জামিন টা করিয়ে নিতে হবে।
” হুম আমিও তাই ভাবছি।কিন্তু।
“আবার কিন্তু কি।আপনার তো চেনা জানা অনেক উকিল আছে তো আপনিই এই বিষয় টা দেখুন না।
” কেন ভাবির মতো একজন অভিজ্ঞ উকিল থাকতে অন্য কেউ কেন?ভাবিই যাবে।
“বিষয় টা এতো সহজ নয় নুর।সম্পর্কে আমরা স্বামী স্ত্রী তাই আমাকে এলাও নাও করতে পারে।তবে আমি ইতমধ্যে স্যারকে একটা মেইল পাঠিয়েছি।এখন দেখা যাক কি হয়।
” এই স্যার টা কে?
“উনি একজন জর্জ এবং সেই সাথে আমার শিক্ষক। এই কেসে উনিই বিচারক হবেন যতটুকু জানতে পেরেছি আমি।
কিন্তু তার আগে আমায় নুহাশের সাথে দেখা করতে হবে।আর তার জন্য সকাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
সকাল সকাল রোহিত নুরদের বাড়িতে এসে হাজির।খবর শুনেছে কাল রাতে নুরের থেকে।কেন আরো আগে থেকে জানানো হলো না এই বিষয়ে কথা বলছে ছোয়ার সাথে।
” এতো কিছু মাথায় ছিলো না রোহিত।কিন্তু এবার আমায় একটু বের হতে হবে।মিলির সাথে আমার কিছু কাজ আছে।তাছাড়া আমি এই কেসের জন্য অনুমতি পেয়ে গেছি।নুহাশকে জামিনের জন্য এখন না বেরুলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
“আমরা কি যাবো তোমার সাথে?
” না নুর তুমি আম্মার কাছেই থাকো।আমি বিপুল ভাইকে নিয়ে যাচ্ছি।আর হ্যাঁ প্রয়োজনে তোমাদের হেল্প লাগতে পারে তাই প্রস্তুত থেকো।
চলুন বিপুল ভাই।
“চিন্তা করো না নুর সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি ছোয়াকে যতদূর জানি হেরে যাওয়ার মেয়ে ছোয়া নয়।আর এখানে তো বিষয় টা স্বয়ং নিজের স্বামীর।তবে আমার কি মনে হচ্ছে বলতো জামিন টা হয়তো আজ হবে না।
” কি বলছেন!মাকে তাহলে সামলাবো কি করে।এভাবে বলবেন না।
“আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি এতো ভেবো না।কাল থেকে নিশ্চয়ই কিছু খাওনি চলো আগে খেয়ে নিবে।
যা ভেবেছিলো তাই নুহাশের জামিন হয়নি।তবে নুহাশের কেসটা ছোয়াকে দেয়া হয়েছে।নুহাশকে কোর্টে নেয়ার আগে ছোয়ার সাথে কিছুতেই দেখা করতে দেয়নি।এতে ছোয়া একটু আশাহত হয়।
ছোয়াকে নুহাশের সাথে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে।আপাতত ছোয়া নুহাশের সাথে কথা বলছে।
” আমি সরি নুহাশ আপনার জামিনটা আমি করাতে পারলাম না।আপনাকে ওরা মেরেছে? কিভাবে করলো এটা।
“ভেঙ্গে পরছো কেন।আর এটা তো স্বাভাবিক কোনো কেস নয়। আমাকে এমন কেসে ফাঁসিয়েছে যে।যাই হোক রিমান্ডে এমন মারপিট হয় ছোয়া সেটা তুমিও জানো।তোমাকে একটা কথা বলি যেটা তোমার কাজে আসবে।
” কি কথা?
“তোমার বাবাকে শিকদার খুন করেছে এটা তুমি আমি জানি কিন্তু আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।
” কিন্তু ডকুমেন্টস তো আছে।সেটা দিয়ে তেমন কিছুই প্রমান হবে না।
“হ্যাঁ। কিন্তু তুমি চেষ্টা করলে সেই প্রমাণ জোগাড় করতে পারো।
” কিন্তু কিভাবে!
“বাবা তোমার সাথে কেন দেখা করতে চেয়েছিলো সেটা জানতে চাইছিলে না? তবে শোনো।তোমার বাবার খুনের কথা শিকদার নিজ মুখে শিকার করেছে আর সেই অডিও ক্লিপটাই তোমাকে দিতে চেয়েছিলো বাবা।সেটা বাবার কাছে কিভাবে এলো আমি জানি না।কিন্তু আমি যদি খুব ভুল না হয়ে থাকি তাহলে সেটা এখনো শিকদারের বাংলোতেই আছে।আর যেভাবেই হোক সেটা তোমাকেই আনতে হবে।
” এসব আপনি কি বলছেন!কিন্তু সেটা তো বাবা খুনের প্রামান। আপনাকেও তো বাঁচাতে হবে।
“সেটাও.
পুরো কথাটা আর বলা হলো না নুহাশের।তার আগেই তাদের সময় শেষ জানানো হলো বাইরে থেকে।
” আপনি চিন্তা করবেন না নুহাশ আমি সব খুজে বের করবো।আর আপনাকে নির্দোষ প্রমাণিত করবো।
“আমি জানি তুমি পারবে।নিজের খেয়াল রেখো আর নুর আম্মার ও কেমন।
★
নুহাশের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে ফিরছে ছোয়া সাথে আছে মিলি এবং বিপুল ও।ড্রয়িং রুমে আগে থেকেই নুররা বসে ছিলো।রোহিতও আছে।এখানে এই অবস্থা সবাইকে রেখে যেতে চায় না রোহিত।নাহার বেগম ছেলের শোকে পাগল প্রায়।ছোয়ার থেকে সবটা শুনে তিনি আরো কষ্ট পাচ্ছেন।
” আপনি চিন্তা করবেন না আম্মা আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার ছেলেকে আমি ফিরিয়ে আনবো।শুধু একটু অপেক্ষা করুন।
” ম্যাম কিছু ভাবলেন কি করবেন?
“ভেবেছি অনেক কিছু। আমাদের এবার সবাইকে কাজে লেগে পরতে হবে।
” কি রকম কাজ ছোয়?
রোহিত প্রশ্ন করলো।
“রোহিত তোমার মনে আছে বেশ কিছুদিন আগে তুমি একবার শামসুল নামের এক ব্যাক্তিকে দেখিয়ে বলেছিলে তোমার ছোট বেলার স্কুল ফ্রেন্ড?
” হ্যাঁ। তবে সেটা তো অনেক আগের কথা।এখন অবশ্য ওর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।কিন্তু তুমি কেন তার কথা বলছো?
“কারন সেই শামসুলই এই শামসুল শিকদার যে নুহাশকে এমন যায়গায় দাঁড় করিয়েছে। আর ওর চেহারা আমি যেমন দেখেছিলাম তেমন নেই এই জন্যই প্রথমে আমি চিনতে পারিনি।
” কি বলছো!
“হ্যাঁ। তোমার যে এই পরিবারের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে সেটা নিশ্চয়ই ও জানে না তাই না?
” জানার কথা নয়।বললাম তো যোগাযোগ নেই অনেক বছর হলো।
“হ্যাঁ এটাকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
” তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না।
“দেখো এই মুহুর্তে ওদের সবচেয়ে বড় শত্রু নুহাশ।আর নুহাশ এখন জেলে।এই খুশিতে ওরা যে কোনো পার্টির আয়োজন করতেই পারে।আর আমি শিওর আজ ওরা এটা করবেই।তোমাকে এই সুযোগ টা নিতে হবে।যেহেতু ওরা আমাকে আজ দেখে নিয়েছে তাই আমি যেতে পারবো না।কিন্তু তুমি ওর পুরনো বন্ধু তাই তোমাকে ও সন্দেহ করবে না।
” তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলতো।আমাকে কি করতে হবে?
“তুমি আজ যাবে ওদের বাড়িতে আর সাথে নিয়ে যাবে নুরকে কারন আমাদের যে করেই হোক এরশাদ শিকদারের বাংলোতে ঢুকতে হবে আর এই রাস্তা তুমি নুর করে দেবে।
তুমি যাবে শামসুল এর বাড়িতে ছোয়াকে নিয়ে।বলবে তোমার বউ নুর।যেহেতু নুহাশের পরিবারের বিষয় বিশেষ করে নুরের বিষয় তেমন কেউ কিছু জানে না।তাই নুরকে ওরা চিনতে পারবে না।তারপর তুমি নুহাশের সম্পর্কে যা পারো বানিয়ে বলবে।আমি শিওর
আমি যেটা ভাবছি সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে আজই আমরা ওই বাংলোতে ঢুকতে পারবো।
” তার মানে তুমি বলতে চাইছো শামসুল আমাদের ওই বাংলোতে ঢুকার রাস্তা করে দিবে?
“এক্সাক্টলি।
” বাহঃ এতো বুদ্ধি কোথায় রাখো বলতো?
“ওকালতি করতে এটুকু বুদ্ধি তো থাকতেই হয়।তবে সাবধান বিষয় টা কিন্তু এতো সহজও নয়।একবার যদি বুঝতে পারে তাহলে কিন্তু বিপদ।
” আই হোপ সব ঠিকই হবে।এটুকু রিস্ক তো নিতেই হবে।আমি প্রস্তুত।কি বলো নুর?
“একদম আমিও প্রস্তুত।
” আর আমি কি করুম ভাবি?
“আপনার ও কাজ আছে কিন্তু সেটা পরে বিপুল ভাই।
ছোয়ার কথা অনুযায়ী রোহিত নুরকে নিয়ে চলে গেছে।মিলি এখনো ছোয়ার কাছেই আছে।ওরা রাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।এমন সময় একটা মেসেজ এলো ছোয়ার ফোনে।সেখানে লেখা ছিলো ” দরজার সামনে একটা পার্সেল আছে।দ্রুত সেটা রিসিভ করুন।”
মেসেজটা দেখে ছোয়া ভ্রু কুচকে নেয় তবুও এগিয়ে যায় মেইন দরজাএ কাছে।সত্যি সত্যিই সেখানে একটা পার্সেল আছে।দেরি না করে ছোয়া দ্রুত সেটা তুলে নেয়।
“এটা কি ম্যাম?
” আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না।খুলে দেখতে হবে।
খুব আগ্রহ নিয়ে ছোয়া পার্সেলটা খুললো।সেখানে একটা মোবাইল ফোন।
“ফোন!কিন্তু এটা কার ফোন?
” সেটাই তো।দাঁড়াও ওপেন করে দেখি।
“” আমি রহিম। আজ থেকে অনেক বছর আগে সোলাইমান নামের এক উকিলকে খুন করা হয়েছিলো।তার এই খুনের পিছনে যারা ছিলো তার মধ্যে আমিও একজন। অবশ্য আমি একা নই এখানে আরো ১৫ জনের মতো জড়িত ছিলাম আমরা।তাদের মধ্যে দুজন কে কেউ খুন করেছে।এর পিছনে যিনি সবার মাথার ওপরে তিনি আর কেউ নন সাবেক মন্ত্রী এরশাদ শিকদার। এরশাদ শিকদারের অনেক অবৈধ ব্যাবসা ছিলো যা সোলাইমান সাহেব জেনে গিয়েছিলেন।মুলত সে কারনেই তাকে খুন করা হয়।প্রথমে টাকার অফার করা হয়েছিলো।কিন্তু উনি রাজি না হওয়ায় তাকে খুন হতে হয়।আমি এগুলো বলছি এজন্যই আমি আসলে প্রান সংসয় নিয়ে বেঁচে আছি।আমার করা অপরাধ আমাকে আর বাঁচতে দিচ্ছে না।তাই ঠিক করেছি আমি আ*ত্ন*হ*ত্যা করবো।তাই ভাবলাম চলে যাওয়ার আগে সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে যাই।”””
তারপর রহিম গলায় ফাঁ*শ লাগিয়ে সেখানেই আ*ত্ন*হ*ত্যা করেন।
“তার মানে সত্যিই সেদিন রহিম মারা যায়নি।যাক এখন আরো একটা প্রমাণ আমার হাতে এসে গেছে।এবার নুহাশকে ওরা আর আটকে রাখতে পারবে না।কিন্তু এই ভিডিও টা কি করে এলো?
চলবে