#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১০
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
“ভাবছো কি করে জানলাম তাই তো?আমিই বলছি তুমি যে ডক্টর দেখিয়েছো তোমার রিপোর্টে স্বামীর যায়গায় আমার নাম দেখেই উনি আমাকে ফোন করেছিলেন ওটা আমিই কিনা।আর উনি আমার বন্ধুর ওয়াইফ।তার থেকেই সবটা শুনেছি।
কি করে এই খবর টা আমার থেকে লুকোলে ছোয়া।আমার কি নিজের অনাগত সন্তানের কথা জানার অধিকার নেই?
” আপনি যেমন ভাবছেন বিষয় টা তেমন নয়।আমি আসলে এটা নিয়ে দিধায় ছিলাম। আর সত্যি বলতে বাচ্চার কথা জানলে আপনি আমাকে আরো কড়া নজরে রাখতেন যেটা এই মুহুর্তে আমি চাইনি।তাহলে যে আমি আমার কাজ করতে পারতাম না।
“সেটা তুমি এমনিতেও পারবে না।কারন আমি তোমাকে আর কারো জীবন নিতে দিবো না।আইন আছে ওদের তারাই শান্তি দিবে।আমি চাই না আমার সন্তানের মা কারো জীবন নাশের কারন হোক।
” কি বলছেন!আমি তো বাবাকে কথা দিয়েছি নিজ হাতে ওদের শান্তি দেবো।আর ওই নরপিশাচ গুলো কে না মারা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।
“কে বললো শাস্তি দেবো না?ওরা শাস্তি পাবে কিন্তু অন্যভাবে।
” মানে?
“সেটা না হয় সময় বলবে।তবে ওরা যেহেতু একবার ভেবেই নিয়েছে আমার ক্ষতি করবে তার মানে করবেই।কিন্তু ঠিক কি করবে সেটা বুঝতে পারছি না।আমাদের সতর্ক থাকতে হবে ছোয়া।তুমি এখন থেকে সাবধানে থাকবে।আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে ওরা ওদের দোষ শিকার করে নেয়।
” কিন্তু সেটা কি ভাবে?
“সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না জান।এক কাজ করো মা-কে কাল তোমার মামার কাছে পাঠিয়ে দাও।আমার কেন যেন মনে হচ্ছে শিকদার এবার তোমাকে খুজে বের করার চেষ্টা করবে।আর তোমাকে খুজতে গিয়ে যদি তোমার মায়ের খোজ পেয়ে যায় ভাবতে পারছো কি হবে?
” কিন্তু আমাকে কেন খুজবে স?
“বা রে।তুমি তার সঙ্গীকে মেরেছো সে কি তোমাকে ছেড়ে দিবে?হ্যাঁ যদিও খুনির কোনো খোজ কেউ পায়নি কিন্তু সাবধানের তো মার নেই তাই না।
“না মায়ের কিছু হতে দেয়া যাবে না।আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই।
” ভয় নেই এবার তুমি একা নও আমি আছি তোমার পাশে।
“সত্যি বলতে এতোদিন আমার কোনো ভয় কাজ করেনি কিন্তু আজ কেন যেন খুব ভয় হচ্ছে।আমি এমন জীবন চাইনি নুহাশ।
” আমি তোমায় সাহায্য করবো এখান থেকে বেরিয়ে আসার।কিন্তু তীরে এসে তরি ডুবলে হবে না।আমারও এখনো অনেক হিসেব নিকাশ বাকি আছে।
“কিসের হিসাব নিকাশ!
আচ্ছা পুলিশ কেন এখনো রহিমের বডি পেলো না?
এই প্রশ্নটা আমায় খুব ভাবাচ্ছে।কোনো ভাবে বেঁচে যায়নি তো?
” এসব নিয়ে আর ভেবো না।ঘুমিয়ে পরো।অনেক রাত হয়েছে।
“আপনি আমায় ভুল বুঝেন নি তো নুহাশ?আপনার ঘৃনা হচ্ছে না আমার ওপর?
নুহাশ আলতো করে ছোয়াকে বুকে জরিয়ে নিলো।ছোয়া যতই নিজেকে কঠোর দেখাক না কেন কোথাও না কোথাও সেও একজন নারী। আর নারীর মন কোমল।
” কেন বলতো?
“এই যে আমি মানুষ মেরেছি তার জন্য?
” না।এবার চুপ করো ঘুমোও।
তোমাকে দিয়েই আমি প্রতিশোধ শেষ করবো ছোয়া তবে তোমার প্রতিশোধ এবং আমার প্রতিশোধ হবে একদম আলাদা।যাকে বলে শাপ ও মরবে না আর লাঠিও ভাঙবে না।প্রতিশোধ আমি তোমাকে দিয়েই নিবো কিন্তু তোমার মতো করে নয় আমার মতো করে।তুমি ঠিকই বলেছো রহিম মারা যায়নি কিন্তু যাবে।আমিই ওকে বাঁচিয়েছিলাম সেদিন।তোমার হাত কাটার জন্য তুমি ঠিকভাবে কাজ করতে পারোনি।তবে চিন্তা করো না।ওর শাস্তি ও নিজেই দিবে।সেই ব্যাবস্থা আমি করে এসেছি।
★
পরদিন ছোয়ার মামা এসে লুবনা বেগমকে সাথে করে নিয়ে গেছে।মেয়ের সুখবর শুনে যেতে চাননি তিনি।কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েই যেতে হলো তাকে।
“আমি বুঝতে পারছি না ছোয়া আমাকে তুই কেন পাঠাতে চাইছিস।আমার মেয়ের এই অবস্থা আর তাকে নাকি এভাবে রেখে আমি ভাইয়ের কাছে গিয়ে থাকবো।এটা হয়?
” মা কারন আছে বলেই তো যাচ্ছো। আর আমি কেবল দু মাসের গর্ভবতী এতে এমন কোনো অসুবিধা নেই।
অগত্যা তাকে যেতেই হলো।লুবনা বেগমকে পাঠানোর আরো একটা কারণ তিনি যদি শিকদার সম্পর্কে কিছু দেখেন বা জানেন এটা তার জন্য মোটেও ভালো হবে না।যদিও শিকদারের মুখ তিনিও দেখেন নি কিন্তু বাবার খুন নিয়ে যখন কোট কাচালি হবে তখন তো তিনি সবটাই দেখবেন,শুনবেন।তখন হিতে বিপরীত হতে পারে।যা ছোয়া একেবারেই চাইছে না।এছাড়াও শিকদার যদি কোনো ভাবে মায়ের খোজ পায় তাহলে হয়তো এবার মাকে মেরেই ফেলবে।মাকে যত সেফলি রাখা যায় তাই ছোয়া নুহাশের কথায় রাজি হয়ে গেলো।
সময় তখন রাত ৮টা।নুহাশ বাড়িতেই ছিলো। এমন সময় বিপুল ছুটে এলো।
“কি হয়েছে এভাবে ছূটছিস কেন বিপুল?
” ভাই টিভি দেখেন। নিউজ করছে আপনারে নিয়া।
“কি বলছিস বুঝতে পারছি না।
” আপনি আগে টিভি চালু করেন ভাই।আমিই চালাই।
-“এই মুহুর্তের বড় খবর।দেশের এক তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণায় যার নাম সবার মুখে।যে প্রতিটি তরুনের অনুকরণীয়। সেই এমপি নুহাশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমরা পেয়েছি চাঞ্চল্যকর এক তথ্য।যা শুনলে থমকে যাবেন আপনিও।”
আর কিছু শুনার আগেই নুহাশ টিভি টা বন্ধ করে দেয়।
“এসব কি!আমার বিরুদ্ধে এই তথ্য কে দিয়েছে।আর মামলা কিসের কে করেছে সব জানতে চাই আমি।
” ভাই এটা নিশ্চয়ই ওই শামসুল এর কাজ।
ভাই পুলিশ।
বলতে বলতে বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ইন্সপেক্টর সাব্বির এর দিকে চোখ যায় নুহাশের।বুঝায় যাচ্ছে অনুমতির জন্যই অপেক্ষা করছে।
“আসুন ইন্সপেক্টর।
” আসলে স্যার আমি কোনোদিন ভাবিনি এভাবে আপনার বাড়িতে আমায় পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসতে হবে।নিউজ টা নিশ্চয়ই দেখেছেন।আসলে আমি অপারগ। উপর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আপনাকে এরেস্ট করার।তাছাড়া আপনার বিরুদ্ধে স্মাগলার, ইয়াবা ব্যাবসা এবং আরো কিছু অভিযোগ এসেছে।বুঝতেই পারছেন আপনাকে কেউ বাজে ভাবে ফাঁসিয়েছে।আচ্ছা আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?কে করেছে?
অফিসারের কথায় নুহাশ হেসে ফেললো।
“সেটা তো আপনার খুজে বের করার কথা অফিসার।
” হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক।
“কি ব্যাপার বাড়িতে পুলিশ কেন আব্বা?
” আম্মা আপনি শান্ত হোন।
“শান্ত হবে মানে? কি হচ্ছে এখানে নুহাশ।ওনারা কেন এসেছে?
” আরে আপনি এডভোকেট ছোয়া তো!
“হ্যাঁ। তো?
” কিন্তু আপনি এখানে কেন?
“কারন উনি আমার স্ত্রী। আমরা বিয়ে করেছি।আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে যাওয়ার আগে আমি আর স্ত্রীর সাথে একটি আলাদা কথা বলতে চাই।
” জি অবশ্যই।
“এসব কি হচ্ছে নুহাশ। নিউজ এ আপনাকে নিয়ে খবর বেরিয়েছে। এখন পুলিশ। আপনি বলছেন যাওয়ার আগে।মানে এসব কি হচ্ছে?
” শুনো ছোয়া যা হচ্ছে হতে দাও।আমি খুব ভালো করে জানি এটা কারা করেছে।তবে চিন্তা করো না আমার কিছুই হবে না।কিন্তু তোমাকে একটু কষ্ট করতেই হবে।
“কিন্তু আপনি না থাকলে আমি একা এই লড়াই টা করতে পারবো না নুহাশ।
” পারতে হবে।ওরা আমাকে যেভাবে ফাঁসিয়েছে তাতে খুব সহজে জামিন আমি পাবো না।আমার অনুপস্থিতিতে আম্মা নুরের দায়িত্ব তোমার। আর হ্যাঁ ভয় পাবে না।নিজের যত্ন নিও আর আমাদের প্রিন্সেস এর ও।
“কিন্তু এবার আমি কি করবো?
” কাল সকাল অব্দি অপেক্ষা করো। সব বলবো।আসছি।
“নুহাশ!
চলবে