প্রেম প্রার্থনা পর্ব-১৬

0
420

#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[১৬]

-‘চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যদি অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে না পারি, তবে আমি রুদ্র রাজনীতি ছেড়ে দিবো, ওয়াদা করলাম।’

একথা বলে রুদ্র সেখান থেকে বেরিয়ে কাউকে কল করল।
মুখভঙ্গি থমথমে। রাগে ফুলে আছে নাকের পাটা। টেনশনে
কপাল বেয়ে ঝরছে সরু ঘাম। সে পায়চারি করা অবস্থাতেই কলে আলোচনা সারলো, আদেশ করলো, আদেশকৃত কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করার। এখন এক সেকেন্ডের গুরত্ব অপরিসীম তাই প্রতিটা সেকেন্ডকে কাজে লাগাতে হবে। কার এত স্পৃহা সেও দেখতে চায়। কোন অপরাধে তার প্রিয় মানুষের সঙ্গে এরুপ হামলা করা হলো তার জবাব চাই-ই চাই। তারপর সে
কল কেটে কাফিকে কল করে তার ফ্ল্যাটে চলে যেতে বলল।
কাফির মনের অবস্থা বুঝে রুদ্র কথা বাড়ালো না শুধু গম্ভীর স্বরে দরজার নিউ পিন আর ফ্ল্যাটের কোথায় কোথায় কোন
ক্যামেরা আছে বলে দিলো। যাতে সেসব ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে এই মুহূর্তে ইমেইল করতে পারে। কাফি মনযোগ সহকারে রুদ্রর কথা শুনে একবার লালনের দিকে তাকালো, লালন তার বলা কাজে মগ্ন। কাফি হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এসেছে লালনের কাছে। লালন তাদের ট্রিমেরই সদস্য। তার কাজ লোকেশন ট্র্যাক্ট করা। সে এখন রুমার ফোনের লাস্ট লোকেশন খোঁজার চেষ্টা করছে। তখন কিছু একটা পেয়ে কাফির দিকে তাকালো। রুমার ফোনের লাস্ট লোকেশন শো করছে এক নির্জন জঙ্গলে। হয়তো সেও বুঝে গিয়েছিল তার ফোন ট্র্যাক হতে পারে এজন্য আগেই ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
একথা শুনে কাফি দু’জনকে পাঠালো ফোন খুঁজে বের করে আনার জন্য। তারপর সে রুদ্রর কথামতো ফ্ল্যাটে চলে গেল, একে একে খুঁজে বের করলো গোপন ক্যামেরাগুলো। ওদের
ফ্ল্যাটের মেইন দরজা থেকে দশহাত দূরের পেইটিংয়ের সঙ্গে হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে, ড্রয়িংরুমের শোভাবর্ধনের
জন্য লাগানো ঝাড়বাতির ঠিক মাঝখানে আরেকটা হিডেন ক্যামেরা, রুদ্রর রুমের বাম দেওয়াল ঘেষে ল্যাম্প স্টানের
বিপরীতে থাকা ফুলদানীর ফুলের মধ্যে আরেকটা ক্যামেরা,
কাফি খুঁজে খুঁজে ক্যামেরাগুলো বের করে ওর লেপটপ অন করে ফুটেজগুলো চেক করতে বসলো। একে একে ফুটেজ দেখে তার মুখের ভাষা হারিয়ে গেল। হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল স্কিণে ভাসা মানুষগুলোকে। মৃদুভাবে কাঁপতে থাকল তার পুরো শরীর। স্পর্শীকে র্নিমমভাবে লাথি মা/রার দৃশ্যটা দেখে ওর পুরো পৃথিবীটাই যেন নড়ে উঠল। স্পর্শীর ওহ মা! মাগো! বলে করুণ আর্তনাদ যে কারোর হৃদয় নাড়িয়ে দিবে।
ইশ! অসহ্য ব্যথায় কীভাবে কাতরাচ্ছে মেয়েটা। এমন করুণ অবস্থা দেখে রুদ্র মাশুমের কী যে করবে ভাবতে পারছে না সে। তাছাড় রুমা সব জেনেও কেন এই বোকামি’টা করলো?
সে তো রুদ্রর রাগ সম্পর্কে জানে, এমনকি নিজের চোখেও দেখছে অনেককিছু। তারপরেও এসব করার সাহস করলো কীভাবে? ওর কী বুক কাঁপে নি? রুদ্রর কথা নাহয় বাদ ওর কথা ভাবে নি? বিয়ের পর একটা মেয়ের কাছে কাছে তার স্বামীই নাকি সব। একথা তো রুমা নিজের মুখেই বলেছিল,
অথচ সে অপরাধ করে স্বামীকেই অপরাধীর তকমা লাগিয়ে
পালিয়ে গেল। ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস একনিমিয়েই সব মিথ্যা করে দিলো অথচ তার ভালোবাসায় কোনো খাত ছিল না, ছলনা ছিল না। এতিম জেনে কখনো হেলা করো নি বরং
অসীম ভালোবাসায় মুড়িয়ে রেখেছিল রুমাকে, কখনো উঁচু স্বরে কথা বলেও নি আর না তার না কোনো আবদার অপূ্র্ণ রেখেছে। তবুও বেলাশেষে এমন নিষ্ঠুর প্রাপ্তি! এমন ছলনা না করলেও পারতো। সে আর ভাবতে পারলো না দুইহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠল। রুমার ছলনা মানতে পারছে না সে। মনে হচ্ছে কষ্টে বুকপাঁজর ভেঙে আসছে। পরিস্থিতি এমন ঘোলাটে সে সে চাইলেও রুমাকে বাঁচাতে পারবে না এতে রুদ্রর সঙ্গে বে/ইমানি করা হবে। বেঁচে থাকতে রুদ্রর সঙ্গে বে/ইমানি করার কথাও ভাবতেপারে না সে। এরচেয়ে মৃত্যুবরণ অনেক সহজ। এসব ভেবে অনেক কষ্টে নিজেকে
নিজেকে সামলে কাঁপা কাঁপা হাতে ফুটেজ পাঠিয়ে দিলো রুদ্রর ইমেইলে। রুদ্র সঙ্গে সঙ্গেই সেটা সিন করে আশিকের দিকে তাকালো, চোখে চোখে দু’জনের কথা হলো তারপর রুদ্র বেরিয়ে গেল নিজের উদ্দেশ্যে হাসিলের লক্ষ্যে। রুদ্র যাওয়ার আধা ঘন্টা পর কাফিও হসপিটালে উপস্থিত হলো। আশিক আর কাফি স্পর্শীদের নিরাপত্তার জন্য হসপিটালেই থেকে গেল।

ঘড়ির কাঁটা নিজ গতিতে ঘুরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অতিবাহিত হচ্ছে সময়ের চাকা। চার ঘন্টা পেরিয়ে গেছে রুদ্র ফিরে নি।
আর না কারো ফোন রিসিভ করেছে। নিভু নিভু সন্ধ্যা ঘনিয়ে
রাত নেমে এসেছে৷ কর্মব্যস্ত মানুষফিরে যাচ্ছে আপন নীড়ে।
হসপিটালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। যার যার পেশেন্ট নিয়ে ব্যস্ত আপন জনরা। অনেকক্ষণ আগে স্পর্শীদের পাশাপাশি কেবিনে রাখা হয়েছে। ওরা এখন বিপদমুক্ত। জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ হলো। তবে জ্ঞান ফেরার পর থেকে স্পর্শী টু শব্দ করে নি। শুধু নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে, কেউ কিছু বললে নির্বাক হয়ে শুনেছে। কিছুক্ষণ আগে আশিক এসে স্পর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে, দুষ্টু মিষ্টি কথায় হাসানোর চেষ্টাও করেছে
কিন্তু স্পর্শী নিজের ভাবনায় মগ্ন। এত মগ্ন হয়ে কী ভাবছে, কে জানে! পরিশেষে আশিক ব্যর্থ হয়ে বেরিয়ে গেছে তখনই হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে প্রবেশ করে মরিয়ম বেগম। কলিজার
টুকরো মেয়ের অবস্থা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠেন। মেয়েটা ব্যথা পাবে বলে আলতো করে জড়িয়ে ধরেন বুকে। উনাকে কাঁদতে দেখে স্পর্শী কথাও বললো না, বিচলিতও হলো না।
পূর্বের মতো অপলক সিলিংয়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখল।মেয়ের নীরাবতা সহ্য করতে পারছেন না মরিয়ম বেগম, ওর গায়ে, মাথায় হাত বুলি ডুঁকরে কেঁদে যাচ্ছেন। সেইভ থাকার জন্য স্পর্শীকে এতদূরে পাঠিয়েছিলেন তিনি, অথচ আজ..!
দুপুরের দিকে রুদ্রর বাবা মাকে হন্তদন্ত হয়ে বের হতে দেখে
উনার সন্দেহ হচ্ছিল। যদিও প্রথমে জানাতে চান নি তারাও, পরে মন কু ডাকছিল বিধায় চেপে ধরায় উনারা বলতে বাধ্য হোন।

মেয়ের ভালোর জন্য এতদিন বুকে পাথর চেপে ছিলেন। দিন নেই, রাত নেই, মেয়ের অনুপস্থিতে নীরবে কেঁদেছেন, একা একা তড়পাচ্ছিলেন। মেয়েটা অভিমান করে কথাও বলতো না, রাগ করে ফোনই রিসিভ করতো না। তবুও হাল ছাড়েন নি প্রতিনিয়ত রুদ্রর থেকে খোঁজ খবর নিয়েছে। রুদ্র উনার মন রক্ষার্থে গুঁটিকয়েক মিথ্যা বলতো সব বুঝেও হাসি মুখে মেনে নিতেন। কিঞ্চিৎ আশা ছিল সব ঠিক হয়ে যাবে, আজ যা হলো তারপর সেই আশাটুকুও নিভে গেল। যত যাই হোক
এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না এবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। দুই দু’বার মেয়েটা ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেল, বারবার ভাগ্য প্রসন্ন থাকবে তা তো নয়। রুদ্রর সঙ্গে এবার সরাসরি
কথা বলতে হবে।মাকে কাঁদতে স্পর্শী চাইলেও টু শব্দ করতে পারছে না। মনে হচ্ছে গলা থেকে পেট অবধি কুঁপিয়ে ফালা ফালা করে দিয়েছে। অসহ্য ব্যথায় জর্জরিত পুরো শরীর। মাথা ব্যথায় চোখজোড়া আপনাআপনি বুজে আসছে। তবে মায়ের উপস্থিতিতে খুশি হয়েছে। এজন্য ঠোঁটে ফুটে উঠেছে মলিন হাসি। ছলছল চোখ। সেই সঙ্গে আরেকটা শব্দ কানে বারবার প্রতিধ্বণি হচ্ছে ‘ রুদ্র ভালো ছেলে, মুখ বুজে সব মেনে নাও।’
মেনে নিয়েছে বলেই এই দশা। রুদ্র যতদিন এসব থেকে সরে না আসবে এসব চলতেই থাকবে। আর মায়ের বলা আদেশ অনুযায়ী তাকেও সব মেনে নিতে হবে।

রুদ্রর বাবা-মা আসার পরপর কাফিও বেরিয়ে গেছে। রুদ্র কোথায় আছে, কী করছে, জানা দরকার। বেশ কয়েকবার কল করার পর রুদ্র কল কেটে একটা ঠিকানা মেসেজ করে দিলো। কাফি লোকেশন জেনে অবিলম্বে ছুট দিলো সেখানে।
লোকেশন হচ্ছে রুদ্রর বড় মামার বাসা, এখানে থেকে আধা ঘন্টার পথ। কাফি সেখানে পৌঁছে দেখে রুদ্র বসে আছে তার বড় মামার সামনে।লেপটপে চলছে স্পর্শীকে মারার ফুটেজ।
কাফি ভয়ে ভয়ে একবার রুদ্রর দিকে তাকালো তবে রুদ্রকে আজকে খুব শান্ত দেখাচ্ছে। এত শান্ত থাকার কারণ বুঝতে পারছে না সে। এটা বোধহয় ঝড় আসার আগের পূর্বাভাস।
পুরো ফুটেজ শেষ হতেই রুদ্র শান্ত কন্ঠে বড় মামাকে বলল,

-‘ আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি, কারণ আপনি আমার মায়ের আর্দশ। সেই শ্রদ্ধা বজায় রেখে এখনো বিনয়ীভাবে জানতে চাচ্ছি, রুদাশা কোথায় মামা? আপনি কি তার খোঁজ দিতে পারবেন নাকি আমি খুঁজে নিবো? যদি আমাকে খুঁজে নিতে হয় তাহলে ভুলে যাবো সে আমার মামাতো বোন।’

-‘সে তোমাকে ভালোবাসে তা তো তুমি জানোই বাবা। ছোট থেকে তোমার জন্য কত পাগলামি করে।শুধু তোমার মায়ের কথা রাখতে জোর করে বিয়েও দিলাম যাতে তোমাকে ভুলে যায় কিন্তু মেয়েটা সংসার করলো না। তাকে মেরে ধরে জোর করেও শশুড়বাড়ি পাঠাতে পারি নি। এমনকি মন্ত্রীর পুত্রবধূ
এমিলির তোমাকে পছন্দ করে জেনে এমিলিকেও অপদস্ত করার কম চেষ্টা করে নি। সে তোমার ভাগ কাউকে দিতে চায় না তাই এসব পাগলামি করে।’

-‘এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়। কে কাকে ভালোবাসে এর হিসাব পরে করবো। এখন যা জানতে চাচ্ছি আপনি শুধু এইটুকু বলুন।’

-‘এবারের মতো মাফ করা যায় না বাবা? সে মানসিকভাবে
অসুস্থ তার চিকিৎসাও চলছে এসবও তোমার অজানা নয়।
তাছাড়া সকালে বেরিয়ে সে এখনো বাসাতেই ফিরে নি।’

-‘কোন অপরাধটা মাফ করার কথা বলছেন? ছোটো মামা ওকে থাপ্পড় মেরেছিল বিধায় লোক লাগিয়ে ছোটো মামার এই অবস্থা করার অপরাধটা? নাকি স্পর্শীর উপরে হামলা করার ব্যাপারটা? তাও কিন্তু একবার নয় পরপর দুই দু’বার।
ওকে এই দুটোও নাহয় বাদ, স্পাই হিসেবে রুমা নামের সেই
মেয়েটা, যাকে টাকার বিনিময়ে আমার সহকারীর পেছনে লাগিয়েছিল। বিশ্বাস অর্জন করে কাফির বউ বানিয়ে শেষে নিজের উদ্দেশ্যে হাসিল করতে চেয়েছিল। রুমা তার কথায় এসব করেছে। কিন্তু আজ আপনার মেয়ে ব্যবহারিত টিস্যুর ন্যায় কাজ শেষে মেয়েটাকে ছুঁড়ে ফেলেছে। মেয়েটার নিথর দেহ পাওয়া গেছে জঙ্গলের রাস্তার পাশে। ফোন ট্র্যাক করে ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে লা/শ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো বলবেন তাকে মাফ করতে? হ্যাঁ, বলতেও পারেন কারণ যা দেখছি আপনার বিবেক লোপ পেয়েছে। আপনি আজকাল সত্য মিথ্যা পরখ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন।’

-‘রুদ্র!’

-‘উসস! আস্তে মামা এখনি এত হাইপার হলে চলবে? ছোটো মামার এই অবস্থা কে করেছে তার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। দিবো নাকি এসপির কাছে পাঠিয়ে?’

-‘আমি যখন জেনেছি এসবের পেছনে রুদাশা আছে তখন আমার কিছু করার ছিল না। আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো। এদিকে সন্মান অন্যদিকে একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ।’

-‘সেসব কেচ্ছা শুনে আমার লাভ নেই। এখন বলুন রুদাশা কোথায়? এটাই কিন্তু লাস্ট বার জিজ্ঞাসা করছি। ‘

বড় মামা চিন্তিত মুখে রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
কি বলবে বুঝতেও পারছেন না তিনি। তখন কাফির ফোন বেজে উঠল। ফোন পিক করছে না দেখে রুদ্রর ঘাড় ঘুরিয়ে কাফির দিকে তাকালো। ছেলেটা দেওয়ালে দেলান দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয় পোড়া অশ্রু
অঝরে ঝরে যাচ্ছে। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস উঠে কিছু বলার আগেই রুদ্রর ফোনে রিংটোন বেজে উঠল। সে কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,

-‘স্যার রুদাশারে পাওয়া গেছে। এয়ারপোর্টে আইসা বইয়া রইছে। আর একটু হইলে হাত ফসকে বিদ্যাশ চইলা যাইতো। এরে এহন কী করুম?’

-‘গুড জব রামু! তোমার কাজে আমি খুশি হয়েছি, বলো কি চাও?’

রুদ্রর কথায় রামু লাজুক হেসে লজ্জিত স্বরে জানাল তার বউয়ের একটা টাচ্ ফোনের খুব শখ। রুদ্র যদি কমা দামের একটা টার্চ ফোন কিনে দিতো অনেক খুশি হতো। রুদ্র সঙ্গে সঙ্গে রামুর একাউন্টে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে কিনে নিতে বললো। আর সে এসপিকে মেসেজ করে রুদাশার আদরযত্ন
করার সু-ব্যবস্থা করতে বলল। তার মামাতো বোন বলে যেন
ছাড় দেওয়া নাহয়। তার প্রতিটা অপকর্মের প্রমাণ একটুপর
পাঠিয়ে দিবে। তারপর সে কাফির কাঁধ জড়িয়ে ধরে বেরিয়ে এলো। বড় মামা এত করে ডাকলেও সাড়া দিলো না। রুমার ব্যবস্থা হলো, রুদাশার আপাতত ব্যবস্থা হলো এবার সোহাগ চাঁদ মাশুমের পালা।রুদ্র ফোনে সময় দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আশিক প্রতিনিয়ত তাকে স্পর্শীর খবর জানাচ্ছে। দাদীমাও এখন ঠিক আছে, ছেলে ছেলের বউদের সঙ্গে গল্প করছেন।
তবে মরিয়ম বেগম থম মেরে আছে। বাইরের ঝামেলা শেষ করে নতুন ঝামেলার মুখোমুখি হতে হবে বুঝতে বাকি নেই তার। সকালে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রুমাকে খুঁজতে বের হয়েছিল। কারণ যে গাড়িতে করে বের হয়েছিল তারা, সেটা ভাড়া করা ছিল। সেখান থেকে কে কখন ভাড়া করেছিল তা খুঁজে বের করেছিল। এরমধ্যে জানতে পারে রুমার ফোনটা খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে রুমার নিথর দেহ। একথা তখন কাফিকে জানাতে নিষেধ করো। রুমার লাশ তাদের গোপন আস্তানায় পাঠাতে বলে সে রুদাশাকে খুঁজতে থাকে। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে অনেক জায়গায় খুঁজে না পেয়ে বুঝেছিল
এখানে বড় মামার হাত আছে।তারপর প্ল্যান করে বড় মামার বাসায় গিয়েছিল। বড় মামার ফোনে কল আসে উনি চোরা চোখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘সমস্যা নেই, চলে যাও, বাকিটা আমি সামলে নিবো।’

একথা শুনে সে সিওর হয়ে যায়। ততক্ষণে লালন পেয়ে যায় রুদাশার খবর। ব্যস! প্ল্যানও সাকসেস হয়ে যায়। মনে মনে এসব ভেবে রুদ্র গাড়ির কাছে এগিয়ে যায়। কিন্তু গাড়িতে না
উঠে আচমকা কাফিকে জড়িয়ে ধরে। ছেলেটা গুঁমড়ে যাচ্ছে একা একা। কাঁদতে পারছিল না। কিন্তু রুদ্রর জড়িয়ে ধরাতে
কাফি আর নিজেকে সামলাতে পারলো না স্থান কাল ভুলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। ওর কান্না দেখে রুদ্রর চোখও ছলছল করে উঠল। রুমাকে বোনের নজরে দেখতে সে। খুব স্নেহ করতো। স্পর্শীর জন্য কিছু কিনলে রুমার জন্যও কিছু না কিছু কিনতো। কাফি মুখে না না করলেও মনে মনে ভীষণ খুশি হতো। আর সেই খুশি ভেসে উঠতো তার চোখজোড়ায়।
কাফিকে এভাবে কাঁদতে দেখে রুদ্র তার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

-‘পুরুষদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা বোঝার ক্ষমতা যদি প্রতিটা নারীর মাঝে থাকতো তবে পৃথিবীর বুকে বিচ্ছেদ বলে কোনো শব্দ থাকত না।’

To be continue………..!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে