#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[১৫]
রুমা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রান্নাঘরে মাংস কষতে ব্যস্ত। আজকে সে হরিণের মাংস রান্না করছে। সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ। চিত্রা হরিণের দেখতে যেমন নজরকাড়া মাংসও তেমন সুস্বাদু। সে মাস খানিক আগে খেলেও স্বাদ যেন মুখে লেগে আছে। আজ বিশেষ অতিথি এসেছে সে নিজের হাতে হরিণের মাংস রান্না করে তাদের খাওয়াবে। এসব ভেবে তার মুখে হাসি ফুটল। রান্নার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। মনে হচ্ছে রান্নাটা দারুণ টেস্টি হবে! যদিও তার রান্না খেয়ে কেউ খুঁত বের করতে পারে না, পাক্কা শেফ কি না তাই! সে মাঝারি আঁচে মাংস কষিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢেকে মাংস সেদ্ধ করতে দিলো। তারপর অন্য চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে ড্রয়িংরুমে উঁকি মেরে এলো।
ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হেসে দুইকাপ চা বানিয়ে সেদিকে পা বাড়াল। মুখভর্তি হাসি তার। শ্যামবর্ণের মুখশ্রী খুশিতে ঝলমল করছে। আসন্ন সুখবরে ষোড়শী কিশোরীর ন্যায় চঞ্চল তার মনপ্রাণ। ড্রয়িংরুমে গিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর চায়ের কাপটা রাখল। মুখে তৃপ্তির হাসি। কতদিন পর ছোটো ভাইকে দেখছে। বোনকে দেখে মাশুম একগাল হেসে কুশল বিনিময় করে জড়িয়ে ধরল। ইচ্ছে থাকলেও সে এসে বোনকে দেখে যেতে পারে না। কারণ এই না পারার পিছনে মস্ত বড় হেতু রয়েছে। নিজ নিজ স্বার্থ লুকায়িত। আর স্বার্থ
হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।তারা দুই ভাইবোন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরিকল্পনামাফিক এখানে এসেছে। যদিও একথা কেউ জানে না। আটমাস আগে টাকার বিনিময়ে এক
একটা দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তাদের উপর। মাশুমের দায়িত্ব রুদ্রর প্রতি নজর রাখা আর রুমার দায়িত্ব কাফিকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করা। রুমা সেই কাজ দায়িত্বের সাথেই সম্পূর্ণ করেছে।নিজেকে এতিমের পরিচয় দিয়ে সত্য গোপন
কাফির বিশ্বাস অর্জন করেছে। রুদ্রর কাছে ভালো মানুষের মুখোশ পরে এই অবধি এসেছে। কিন্তু মাশুম রুদ্রর উপরে নজর রাখতে গিয়ে খোঁজ পায় স্পর্শীর। ঠিক পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটার বাঁকানো শরীরটা প্রবলভাবে তাকে আকৃষ্ট করে। কাম স্পৃহা জেগে ওঠে। মরিয়া হয়ে যায় পুতুলটাকে
একবার হলেও ছুঁয়ে দেখার। দিনে দিনে তার মনোবাসনা দৃঢ় হতে থাকে। কিন্তু ছুঁতে গেলে রুদ্রর মুখোমুখি হতে হবে আর রুদ্রর নজরে পড়া মানে তার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া। তার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া মানেই প্রাণ খোয়ানো। তাই মিথ্যা কথায় রস ঢেলে কৌশলে সে স্পর্শীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিল।
উদেশ্যে হাসিলের অনেকখানি পথ এগিয়েওছিল কিন্তু রুদ্র এসে সব বানচাল করে দিলো। সেদিন যদি আর কিছুক্ষণ পর রুদ্রের আগমন ঘটতো তাহলে সে উদ্দেশ্যে সফল করে ফেলতো। আর পরিকল্পনামাফিক পরদিন সকালে জনপ্রিয় পত্রিকার পাতায় বড় করে ছাপা হতো, ‘তুখর রাজনীতি বিদ রুদ্র রাজের বোন ধর্ষণ।’ কিন্তু আফসোস সেসব কিছুই হলো না। পূর্বের কথা ভেবে মাশুম চায়ের কাপ নিয়ে আশেপাশে তাকাল। বিলাশ বহুল ফ্ল্যাটটা বেশ বড়, নজরকাড়াও বটে।
ফ্ল্যাটের ডেকোরেশন দেখে মনে হচ্ছে নামীদামী লোক থাকে এখানে। হঠাৎই তার মনে হলো ড্রয়িংরুমে আরেকজন নেই।
অপরুপ সৌন্দর্যের রমনী অনুপস্থিত এখানে। মাশুম সামনে এগিয়ে দেখে সেই রমণী রুদ্রর বেডরুমে কীসব খুঁজাখুঁজি করেছে। কিন্তু যেটাতে হাত দিচ্ছে শব্দ করে সাইরেন বেজে উঠছে নতুবা পার্স চাচ্ছে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে বিরক্ত হয়ে, বাংলা ইংলিশ মিলে গালি ছুঁড়ছে সেই রমণী। এত কষ্ট করে এসে যদি কাজের কাজ না’ই হয় তাহলে কেমন লাগে!
রুদ্র ভীষণ চতুর বলে এই ব্যবস্থা করেছে যাতে প্রয়োজনীয় ডকোমেন্ট হাতবদল হতে না পারে। একথা ভেবে উনি ছোট্র ড্রয়ারে হাত রাখতেই পুনরায় সাইরেন বেজে উঠল। এভাবে সাইরেন বাজতে দেখে মাশুম রুমে প্রবেশ বলল,
-‘ম্যম, সাইরেন বেজে উঠছে যেহেতু আর টাচ্ করিয়েন না।’
-‘কেন?’
-‘আশেপাশের কেউ শুনে ফেললে বিপদে পড়ে যাবো।’
মাশুমের কথা শুনে সেই রমনীর মেজাজটা বিগড়ে গেল। সে বি/শ্রী গালি দিয়ে বসলো মাশুমকে। এই অর্কমাটাকে রুদ্রর রুমের রুমের সব পার্স জানতে বলেছিল অথচ দু’জন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একজন রান্নাঘরে পড়ে আছে আর আরেকজন স্পর্শীর শরীর হাতাতে ব্যস্ত।যেন ওদেরকে এসব করতে মোটা অংকের টাকা দেওয়া হয়। নিজের রাগ সামলাতে না পেরে উনি হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারলেন। সেটা গিয়ে লাগল রুমার কপালে। সে আহ! শব্দ করে কপাল চেপে ধরে সেখানেই বসে পড়ল। মাশুম জলদি
ফাস্ট এইডের বক্স খুঁজে এনে বোনের কপালে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। তবে মাশুম মনে মনে এর প্রতিশোধ নেওয়ার ওয়াদা করে ফেলেছে। এই মহিলা মানুষ মনে করে না তাদের। যখন তখন জঘন্য ভাষায় দূর্ব্যবহার করে। ম্যম রেগে আছে দেখে রুমা ভয়ে ভয়েই জিজ্ঞাসা করল,
-‘স্পর্শীরা কি ড্রয়িংরুমেই পড়ে থাকবে ম্যম? কেউ আসলে সন্দেহ করতে পারে।’
-‘এক কাজ করো বুড়িকে কেঁ/টে টুকরো করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দাও। আর মাশুম স্পর্শীকে রেপ করে ছাদে নিয়ে গিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দাও। এদের বাঁচিয়ে রাখা মানেই ঘোর বিপদ।
তাছাড়া কোথায় যেন শুনেছিলাম শত্রুর শেষ রাখতে নেই।’
-‘ওদের যা অবস্থা কয়েকঘন্টা এভাবে পড়ে থাকলে এমনিই মা/রা যাবে।’
-‘উহুম! মেয়ে মানুষের জান কৈ মাছের প্রাণ, তোমার মতো গাধীর কথা শুনে বিপদে ডাকতে পারব না আমি। আর এত কথা না বলে যা বললাম করো। তোমার আজাইরা বকবক
শোনার জন্য মাসে মাসে এত টাকা দেওয়া হয় না।’
উনি উক্ত কথার রাশ টানতেই উনার ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। সেইভ নাম্বারের নাম দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইল।
মেয়েটা চরম বেয়াদব; দলের খাতিরে সম্ভবত দুইবার কথা হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কল দেখে ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে খুব।
উনি ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বিরক্তির সাথে কল রিসিভ করল,
তখন কারো অট্টহাসি গানে এসে বিঁধল। তার বিরক্তির ক্ষীণ
মাত্রা তড়তড় করে বেড়ে গেল। সে কলটা কেটে দিতে উদ্যত হতেই অপর পাশ থেকে সে বলে উঠল,
-‘এমিলিয়া খান উরফে এমিলি বলছি মামী সাহেবা। আহারে
এবারেও আপনার প্ল্যানে ধাপ্পা, হা হা হা।’
-‘কিছু বলার থাকলে বলো নয়তো ফোন রাখো।’
-‘আপনার যমদূত দোর গোড়ায় পৌঁছে গেছে। প্রাণে বাঁচতে চাইলে পালিয়ে যান।’
-‘মানে?’
-‘রুদ্র গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার দিকেই আসছে বাঁচতে চাইলে গাঁ ঢাকা দেন। নয়তো কী হবে আশা করি বলে দিতে হবে না, হা হা হা।’
একথা বলে এমিলি কল কেটে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
এমন কাঁচা কাজ এই মহিলার দ্বারাই সম্ভব। এমিলি মিথ্যা বলছে বলে মনে হলো না তাই সেই রমণী মাশুমকে কথাটা জানাতেই তারা বেড়িয়ে পড়তে উদ্যত হলো। রুমার কপালে ব্যান্ডেজ দেখে রুদ্র সন্দেহ করতে পারে তাই রুমাকেও সঙ্গে যেতে বললো। রুমা মেয়েটা যা ভীতু রুদ্রর ভয়ে সব গড়বর করে দেওয়া সম্ভবনা আছে। মোদ্দাকথা, রুদ্রর সন্দেহ হলে পেট কথা বের করেই ক্ষান্ত হবে, সেটা যে কোনো উপায়েই।
আপাতত রুদ্র থেকে বাঁচতে রুমাকে সঙ্গে নেওয়া শ্রেয়। ওরা বের হয়ে লিফট উপরে উঠছে দেখে না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়েই নিচে নেমে গেল। তারপর মুখ লুকিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। রুমাকে দেখে দারোয়ানও খুব একটা গুরুত্ব দিলো না আরামসে বসে ডাল পরোটা খেতে মগ্ন হয়ে গেলেন। নিচ তলার ভাবির যা রান্না করে না, পুরাই অমৃত! মাশুমের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই রুদ্রর গাড়ি এসে থামল গেটের কাছে। রুদ্রর গাড়ি দেখে দারোয়ান দৌড়ে বেরিয়েও এসেছেন। কিন্তু কিছু বলার আগেই রুদ্র আর কাফি গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে লিফটে প্রবেশ করেছে। লিফট’ও তরতর করে উপরে উঠতে শুরু করেছে। দারোয়ান বিরক্ত হয়ে পুনরায় খেতে বসলেন।
এদের জ্বালায় খেতে বসেও শান্তি নেই রাজনীতি লোক বলে ভয় কিছু বলাও যায় না। যদি শুনে এসব বলেছে তবে সুন্দর করে পেছনের ছাল ছাড়িয়ে উল্টো ঝুলিয়ে শুকনো মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিবে। কি দরকার শুধু শুধু নিজের বিপদকে নিমন্ত্রণ জানানো। এমনিতেই একমাত্র বউ বন্ধুর সঙ্গে ভেগে যাওয়াতে দুঃখের শেষ নেই। যতটুকু সম্বল ছিল বউটা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। একথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশ পানে তাকিয়ে রইলেন। তারপর গলা পাকানো কান্না গিলে ফেলে
আফসোসের সুরে বলল,, হায়রে জীবন! হায়রে বন্ধু! শালা
আর মেয়ে পেলি না, আমার বউটাকে নিয়েই ভাগতে হলো তোর!’
ওদিকে রুদ্র আর কাফি লিফট থেকে বেরিয়ে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে থমকে গেল। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা।স্পর্শী আর দাদীমা মেঝেতে পড়ে আছে। এখানে স্পর্শী আর দাদীমা, রুমা কই?
দেড়ঘন্টা আগে তাদের তিনজনকেই রেখে গিয়েছিল। কাফি রুমাকে না দেখে দুরুদুরু বুকে নাম ধরে ডেকে খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু পুরো ফ্ল্যাট তন্নতন্ন করে খুঁজেও রুমাকে পেল না। বাসার অবস্থা যাচ্ছে তাইই। এখানে অপরিচিত কারোর আগমন ঘটেছ তাতে সন্দেহ নেই। কারণ ড্রয়িরুমের সোফায় সিগারেট-সহ লাইটার পড়ে আছে। সেন্টার টেবিলের উপরে পুরুষদের প্যান্টের বেল্ট রাখা। বেল্টের মাঝ বরাবর স্টার।
এমন বেল্ট রুদ্র অথবা কাফি কেউ ব্যবহার করে না। এসব সচারচর বখাটেরা ব্যবহার করে। কোমরের অনেকটা নিচে প্যান্ট পরে স্টার আকৃতির ডিজাইনের জায়গায় টি-শার্টটা কিঞ্চিৎ গুঁজে রাখে। এর দ্বারা প্রমাণিত এখানে এক পুরুষ এসেছিল। রুদ্র তার হিসাব মিলাতে মিলাতে স্পর্শীর কোলে তুলে নিয়েছে। ওর দেখাদেখি দেখি কাফি দাদীমাকে কোলে নিয়ে সোজা হাঁটা ধরেছে। রুদ্র স্পর্শীকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে দরজায় নতুন লক সেট করলো। তারপর তারা দু’জনে নিচে নেমে গাড়িতে উঠতেই দারোয়ান দ্রুতই এগিয়ে এলো।
বিশেষ করে তাদের কোলের দিকে খেয়াল করে। উনি এসে
আতংকে গড়গড় করে বলে ফেললেন তাদের আসার দু’তিন মিনিট আগে রুমা বেরিয়ে গেছে তার সঙ্গে আরো দুইজন ছিল। একজন মহিলা আর একজন পুরুষ। মুখে মাক্স ছিল বিধায় চেহারাটা দেখা যায় নি। তবে রুমার কপালে ব্যান্ডেজ করা ছিল। একথা শুনে কাফির মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গেল।
অজানা ভয়ে কলিজাখানা মোচড় দিয়ে উঠল। থরথর করে কাঁপছে তার পুরো শরীর। নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেল যেন।
তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র ধমকে দ্রুত গাড়িতে উঠতে বলে। ধমক খেয়ে সে দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে ড্রাইভ করে পুরো পথ পাড়ি দিয়ে হসপিটালে পৌঁছালো। রুদ্রকে দেখেই নার্সরা সেবার প্রদানে তৎপর হয়ে গেল এবং রুদ্রর আগমনের কথা আশিককে জানিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও করে ফেললো।
রুদ্র কিংবা কাফি কাউকেই আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে হলো না। তারপর ওটিতে দাদীমা আর স্পর্শীকে একসঙ্গে ঢুকিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হলো।
রুদ্র পকেট থেকে ফোন বের করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফোনের স্কিণের দিকে। পরপর অনেকগুলো নোটিফিকেশন এসেছে তার ফোনে। এই নোটিফিকেশনগুলো আসা মানেই কেউ তার রুমে প্রবেশ করে জরুরি ডকোমেন্ট খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছে। যদি স্পর্শী ভুলেও সেসবস্থানে হাত দিতোও তাও নোটিফিকেশন আসতো না। কারণ স্পর্শীর টাচ্ সেইভ করা আছে। তারমানে এখানে অপরিচিত কারোর হাত লেগেছে, কে সে? কার এত স্পৃহা?এসব ভেবে রুদ্র দৃষ্টি তুলে কাফির দিকে তাকালো। বেচারার মুখ শুকিয়ে এইকটুন হয়ে গেছে। রুদ্র কিছু বলছে না দেখে কাফি এবার নিজেই বলল,
-‘তদন্ত করে এই ঘটনার পেছনে আমার নামটা উঠে আসলে নিজেই নিজেকে শুট করবো আমি। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না, স্যার।’
একথা বলে সে মাথা নত করে কিছু কথা ভাবলো। তারপর কিয়ৎক্ষণ থম মেরে কম্পিত কন্ঠে পুনরায় বলল,
-‘ যদি রুমাও এসবের সঙ্গে জড়িত থাকে তাও নিজের হাতে শাস্তি দিবো। প্রিয় মানুষটাকে আপনার হাতে ম/রতে দেখলে আমার খুব কষ্ট হবে স্যার। এরচেয়ে আমিই নাহয়…….!’
কাফির কথা শুনে রুদ্র কোনো জবাব দিলো না। তার বিশ্বস্ত আঠারোজন ছেলেকে চারদিকে ছড়িয়ে দিলো। তার বাসার রাস্তায় থাকা সিসি টিভি ফুটেজটা কালেক্ট করে সেই গাড়ির নাম্বার সংগ্রহ করতে বলল। আর নাম্বার পেয়ে গেলে গাড়ির মালিক কে টেনে হিঁড়টে তার সামনে হাজির করতে বলল।
ছেলেগুলো আদেশ পেয়ে আদেশকৃত কাজে লেগে পড়লো।
কাফিকে আলাদা করে কিছু বলতে হলো সেও বেরিয়ে গেল
অন্য কাজে। সবাই চলে গেলে রুদ্র ওটির সামনে দাঁড়ালো।
ভেতরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে, সে দরজায় হাত দিয়ে নিজের বাহুতে মুখ লুকাতেই কাঁধে কারো স্পর্শ পেল। ঘুরে দেখে আশিক দৌড়ে আসায় বড় বড় শ্বাস ফেলে হাঁপাচ্ছে। আশিক ওটির দরজা নক করতেই একজন নার্স দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। আশিক আদেশ করলো সে যেন রুদ্রকে এক্ষুণি ওটির ভেতরে নিয়ে যায়। আশিকের এই আদেশ পাওয়া মাত্রই নার্স রুদ্রকে ওটিতে ঢুকিয়ে দরজাটা আঁটকে দিলো। দাদীমার কপালে ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেছে।
ওটির মধ্যে দুটো দল রয়েছে, একদল দাদীমার পেট থেকে বিষ তুলছে আরেকদল স্পর্শীর। ইশ! কী করুণ সেই দৃশ্য! রুদ্র আর দেখতে পারলো না দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো। হাতের মুঠো শক্ত করে চেপে আছে। বুকটা অসহ্য ব্যথায় জর্জরিত হয়ে আছে। স্পর্শীর মুখের দিকে তাকালেই সেই ব্যথা তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে।
সে ছলছল চোখে একবার দাদীমার দিকে তো একবার স্পর্শীর দিকে তাকাল। তারপর বিরবির করে বলল,
-‘চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যদি অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে না পারি, তবে আমি রুদ্র রাজনীতি ছেড়ে দিবো, ওয়াদা করলাম।’
To be continue……!!