প্রেম প্রার্থনা পর্ব-১৪

0
416

#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[১৪]

-‘জানো এখানে আমার একটুও ভালো লাগে না। তুমি এসে খুব ভালো করেছো। যাওয়ার সময় আমাকেও নিয়ে যাবে।’

-‘তোর সুয়ামী গিয়া আনছে আমারে। দাদুভাইয়ের নাকি কী জুরুরী কাজ আছে, দশদিনের লাইগা কুনহানে যাবে।’

-‘কোথায় যাবে? ‘

-‘তা তো কয় নাই মুরে। তয় হুনছি দাদুভাই ভোটে দাঁড়াইবো।’

একথা শুনে স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এত পাগলামি করে কী হলো! না সে কিছু বুঝাতে পারল আর না শুধরাতে পারল।
সবই তো বৃর্থা গেল। যাবেই তো কারণ রুদ্র তো হচ্ছে লাগাম
ছাড়া ঘোড়ার ন্যায়। তাকে এত সহজে বশে আনাও যাবে না।
এজন্যই তাকে দূর্বল করতে হবে পোষ মানাতে হবে। সম্পর্ক গভীর করতে হবে, ভালোবাসা জাগাতে হবে নতুবা এই শক্ত হৃদয়ের মানবকে বশে আনা সম্ভব নয়। এভাবে যেহেতু কাজ হচ্ছে না সেও আর বৃর্থা করবে না। তবে অন্য পন্থা অবলম্বন
করবে, সঙ্গে ওদের সম্পর্ক সহজ করা আপ্রাণ চেষ্টা করবে।
সত্যি সত্যিই তো এভাবে চলতে পারে না। এর সমাপ্তি টানা প্রয়োজন। হয়তো এর আগে এভাবে ভাবে নি, কিন্তু এখন ভাবছে, চিন্তা করছে। মুখ্য কথা, মানুষটা যখন একান্ত তার তার তখন ভাবনাগুলোও তার নিজের। এবার থেকে যা হবে
হাসি মুখে মেনে নিবে৷ জীবনটা আসলেই ছোট। আগামীর কথা ভেবে বর্তমানকে তিক্ত করে ফেলছে সে। যেটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। অথচ এর আগে তার মস্তিষ্কে এটা খেলে নি আজকে দিনটার কাজই ভবিষ্যতের বার্তা বহন করবে। গত
দু’দিন আরো একটা কথা অনেকই কথা ভেবেছে। আর রুদ্র
ঠিকই বলেছে, মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতের খেলা। এখানে কারো হাত থাকে না। যার যেভাবেই মৃত্যু লেখা আছে সে সেভাবেই
মৃত্যু বরণ করবে৷ রুদ্র ছাড়াও পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ আছে যারা রাজনীতিতে পাকাপোক্তভাবে যুক্ত। তাদের প্রিয় মানুষ আছে, আপনজনও আছে। মৃত্যুর ভয়ে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে না, নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে, তবে সে কেন নিবে? কোন যুক্তিতে নিবে? আর রইল ভালোবাসার কথা। যে পাশে থাকা সে সব পরিস্থিতিতে পাশে থাকবে। যার হৃদয়ে নিগূঢ় প্রেমের প্রণয়কুঠুরি থাকে সে রাজনীতির ভয়ে ভালবাসতে ভয় করে না, অজুহাতে দায়ের করে না। এসব কথা ভেবে সে একটাই উত্তর পেয়েছে, নিজে স্বাভাবিক হও বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
স্পর্শীকে অন্যমস্ক হতে দেখে দাদীমা কিছু বলার আগেই সে বলল,

-‘দাদীমা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবা?’

-‘কুন প্রশ্নোর উত্তর, কইয়া ফালা।’

-‘রুদ্র কি সারাজীবন চট্টগ্রামেই থাকার প্ল্যান করেছে?’

-‘ক্যান, দাদুভাই আজবীন এইহানে থাকবো ক্যান? হের কী বাড়িঘর নাইক্কা?’

-‘তাহলে ভোটে দাঁড়াচ্ছে যে? ঢাকা থেকে এসে দাপুটের সঙ্গে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে দলনেতা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে
বাইরের হয়ে মিটিং মিছিল করছে। মারামারি করে। আদেশ করে এর হাত ভেঙে দে, ওর পা ভেঙে দে। মূখ্য কথা, এখানে স্থায়ী দলনেতা নেই? ওর নেতাগিরি এখানকার সবাই মেনেই বা নিচ্ছে কেন?’

-‘ এডা তো জানোস হের নানা বাড়ি এইহানেই। দাদুভাইয়ের নানা- মামারা হক্কলেই রাজনীতির মানুষ। বড় বড় পদে তারা যুক্ত আছে। পাওয়ার তাদের পকেটে। ক’দিন আগে তর ছুডু মামার শশুড়ের উপ্রে হামলা হইছে। বেচারা বোধহয় বাঁচবো না। কেরা জানি মাইরা আধমরা কইরালাইছে। দিন দিন হের অবস্থা খারাপ হইয়া যাইতাছে। ঢাকাতে চিকিৎসা চলতাছে।
বড় বউমা সারাদিন হসপিটালে ভাইয়ের কাছে পইড়া থাকে,
কান্নাকাটি করে। কাইলক্কা দাদুভাই মামারে দেখতে গিয়াই মুরে নিয়া আইছে। হেই কয়েকদিন বাইত থাকবার পারবে না কী কাম আছে। আর কইলি এইহানে থাকবার কথা, তুইই ক কুন সুখের লাইগ্গা হেই এখানে থাকবো? হের মামার অবস্থা দেইখা কেরা কেরা এই আকাম করছে তারে খুঁজনের লাইগা হেই এইখানে আইছে। কাজ শেষ হইলেই ফিইরা যাইবো গা।
তাত্তাড়ি ফিরনোর লাইগাই দিন রাইত পানি কইরা তাগোরে গোরু খুঁজার লাগান খুঁইজ্যা বেড়াইতাছে। দাদুভাইয়ের বড়
মামার লোকজন দাদুভাইয়ের সঙ্গে যুক্ত আছে। তয় এখনো কুনো খবর পাওন যাইনাই। হুনলাম খুব তাড়াতাড়িই পাওয়া যাইব, দেখা যাক কি অয়। আর দাদুভাই এখানে পড়ালেখা করছে মেলাদিন, চিনা পরিচিতি আছে, এইহানে হেই মামার বাড়ি, নানার বাড়ি, তারে তো হক্কলেই চিনবোই। এর লাইগা এখানে আইসাও নেতাগিরি করে, বুঝলি?আর কেডা কইছে হেই এইহানে ভোটে দাঁড়াইব?’

-‘তুমিই কইলা হেই নাকি ভোঁটে দাঁড়াইবো।’

-‘আমি কখন কইছি হেই কথা? বেশি বুঝোনের লাইগ্গাই তর শরীর স্বাস্থ্য বাড়ে না, মাথামুড়া কুনহানকার।’

-‘ওই বুড়ি ফালতু কথা কইবা না কইলাম। আগে সোজাভাবে কইলেই হইতো। নিজে নিজে ত্যানা প্যাঁচাইয়া আমাকে কয় মাথামুডা।’

-‘এই ছেড়ি জন্মের শয়তান।এবার আসিস কিছু কইতে তখন তোরে জাঁতি দিয়া ছেঁইচ্ছা দিমু, বেদ্দপ কুনহারকার।’

একথা বলে দাদীমা রেগে চলে গেলেন। স্পর্শীও মুখ ভেংচি দিয়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। রুদ্র নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো মহারাজ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা
সেরে রাজ্য ভ্রমনে বের হবেন। এছাড়া তো আর কাজ নেই মহারাজের। তবে রুদ্র যেখানেই যাক এই মুহূর্তে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। ভীষণ খুশি খুশি লাগছে। কারণ দাদীমার সঙ্গে কথা বলে বুঝলো রুদ্র এখানে থাকবে না বেশিদিন। হয়তো দশদিনের কাজ সেরেই ঢাকায় ফিরে যাবে। সেখানেই ভোট দাঁড়াবে। আর রুদ্রর সঙ্গে সেও ঢাকায় ফিরে যাবে। পুনরায় আগের মতো চলতে পারবে, ফিরবে পারবে। ওর চেনা বাসা,
চেনা রুম, চেনা মানুষজন। আবারো স্কুলে যেতে পারবে।ইশ! কবে এই দশ দিন শেষ হবে? এই বন্দি জীবন মোটেও ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে মনের সুখে নেচে গেয়ে প্রজাপ্রতির ন্যায় উড়ে, ঘুরে, বেড়াতে। এক আকাশ সমান অভিমার পুষে রেখে আম্মুর সঙ্গেও তেমন কথায় বলে না। বাবার তো কথা বলতে গেলেই কেঁদে ফেলেন। ধুর! তারও বোঝা উচিত ছিল
বাবা-মা খারাপ চান না। এতদিন বেস্ট জিনিসগুলোই তার জন্য আনা হয়, কেনা হয়। জীবনসঙ্গী হিসেবে বেস্ট কাউকে
খুঁজে দিবেন উনারা। মানুষ হিসেবে নিঃসন্দেহে রুদ্র বেস্ট তা বলার অপেক্ষাও রাখে না। তবুও কিছু কিছু মানুষকে যেমন অকারণে ভালো লেগে যায় তেমনি অকারণে খারাপ লাগে, বিরক্ত লাগে। তাদের উপস্থিতি চরম বিরক্তের কারণ হয়েও দাঁড়ায়। আর এই খারাপ লাগাটা কিসের লক্ষণ তারও জানা নেই। নিজের রাগ-অভিমানের বশে বাবা-মাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। এর কষ্টের সমাপ্তি টানা সময় এসেছে। রুদ্র
আগে কি ছিল, কেন ছিল, সেই চ্যাপ্টার কোল্জ। এখন যা হবে ঘটবে, রটবে এটাই মূখ্য বিষয়। এসব ভাবতে ভাবতেই সে বিছানা গুছিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে রুমটাও গুঁছিয়ে ফেললো। রুদ্রর ময়লা জামা-কাপড় ওয়াশিংমেশিনে ধুঁয়ে পানি ঝরাতে দিলো। তারপর কাবার্ড ঘেঁটে মেরুন রঙা শার্ট আর কালো জিন্স বের করে বিছানার উপরে রাখল। শার্টটা দারুণ দেখতে পরলে দারুণ লাগবে। তখন ড্রয়িংরুম থেকে রুমা চেঁচিয়ে নাস্তা করতে ডাকল। সে আসছি বলে রুম ঝাড়ু দিতে উদ্ধত হতেই রুদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হলো। সে হাত দিয়ে ভেজা চুল ঝাড়ছে। পরনে শুভ্র রঙা তোয়ালে। ওর এই অবস্থা দেখে স্পর্শী মুখ ভেংচি দিয়ে কাজে মন দিলো। এমন না যে রুদ্রকে এই প্রথম এ অবস্থা দেখছে। কতবার দেখেছে
তার ইয়াত্তা নেই। এক বাসায় থেকেছে, আপন ভাই- বোনের মতো বড় হয়েছে, দেখাটাই স্বাভাবিক। তাকে রুম ঝাড়ু দিতে
দেখে রুদ্র তার সামনে গিয়ে চুল ঝাড়ল। ভেজা চুলের পানি গিয়ে পড়ল স্পর্শীর চোখে মুখে। তবুও কিছু বলল না দেখে রুদ্র পুনরায় একই কাজ করল।তখন স্পর্শী বিরক্তিকর শব্দ করে বলল,

-‘ফারদার এমন করলে সবাইকে বলে দিবো তোমার ডায়েরি হয়েছে।’

-‘আমার ডায়েরিয়া হয়েছে আমি তো জানি না, তুই জানলি কিভাবে?’

-‘ওয়াশরুম ভ্রমন করে।’

-‘আজ তো ওয়াশরুম ভ্রুমন করিস নি, তবে?’

-‘সেটা তো তুমি আর আমি জানি বাকিরা তো জানে না।’

একথা শুনে রুদ্র ওর নাকটা টেনে সামনে থেকে সরে গেল।
সকালবেলা মান সন্মানের দফা রফা করার ইচ্ছে তার নেই।
স্পর্শী নাকে হাত বুলিয়ে কাজ শেষ করে ঝাঁড়ু রেখে এলো।
এসে দেখে রুদ্র কাবার্ড ঘেটে পোশাক বের করছে। মেজাজ খারাপ হলেও স্বাভাবিকভাবে স্পর্শী ওর পছন্দ করা শার্টটা রুদ্রর মুখের সামনে ধরল। রুদ্র শার্টের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে শার্ট পরে বোতাম না লাগিয়ে প্যান্ট পরে নিলো। মুখ ভঙ্গি স্বাভাবিক দেখে স্পর্শী বেলকনিতে চলে গেল। সেখানে কয়েকটা গাছ আছে যদিও নাম জানে না গাছগুলোর। তবে বিদেশী কোনো ফুলের গাছই হবে। স্পর্শী সেসব গাছে পানি দিয়ে রুমে পা রাখতেই রুদ্র খোঁচা মেরে বলল,

-‘ হাজবেন্ডের শার্ট বের করে দিলেই ভালো বউ হওয়া যায় না। শার্ট বোতামগুলোই লাগিয়ে দিতে হয়।’

স্পর্শী হাতটা মুছে এগিয়ে এসে শার্টের সব বোতাম লাগিয়ে দিয়ে পিছু ঘুরতেই রুদ্র বলল,

-‘শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিলেই হয় না হাজবেন্ডের প্যান্টের চেইন লাগানো কী না, বেল্ট পরেছে কি না, তাও চেক করতে হয়।’

-‘একটু তো লজ্জা করো।’

-‘লজ্জা! সেটা আবার কি? আর লজ্জা করবে কেন? আমি কি মাঝরাস্তায় গিয়ে কোনো মেয়েকে বলেছি, ‘এক্সকিউজ মি আপু, আমার প্যান্টের চেইনটা লাগানো কী না চেক করে দিন প্লিজ!’ শোন যেহেতু বলি নি তাহলে লজ্জা লাগার প্রশ্নই উঠে না। আর যাকে বলেছি সে আমারই বউ, একমাত্র বউ, তাও যেন তেনো বউ না জোর করা কবুল বলিয়ে বিয়ে করা বউ। আর বউকে এসব বলাই যায়।’

এমন কথা শুনে স্পর্শী বিরক্তমুখে দাঁড়িয়ে রইল। রুদ্র সেটা খেয়াল করে এই টপিক চেঞ্জ করতে বডি স্প্রে হাতে নিয়ে পুনরায় বলল,

-‘ ভালো বউ হতে গেলে হাজবেন্ডের শার্টের বোতাম লাগিয়ে কপালে আদর দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে হয়। এতে কী হয় জানিস? হাজবেন্ডের শরীরে ফুল চার্জ হয়। বউকে রেখে
সারাদিন বাইরে থাকলে প্রচুর এনার্জি লস হয়। চিন্তরা ঘিরে ধরে তাই এই চার্জ অত্যান্ত জরুরি।’

একথা শুনে স্পর্শী ধীরে গতিতে রুদ্রর কাছে এগিয়ে এলো ।
তাকে আসতে দেখে রুদ্র নিজেও ঘুরে দাঁড়াল। চোখে চোখে রাখল দু’জন। দূরত্বও কমে গেল। তখন স্পর্শী নিজেই রুদ্রর ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিলো। তার এমন কান্ডে
রুদ্র অনড় হয়ে অপলক তাকিয়েই রইল। ওষ্ঠে কোণে দুষ্টু হাসি। তাকে এভাবে তাকাতে দেখে স্পর্শী লাজুক হেসে এক হাত রাখল রুদ্রর চোখের উপর। তারপর রুদ্রর কানে কানে আদুরে কন্ঠে বলল,

-‘তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আমি না বলা অবধি চোখ খুলবে না, প্লিজ!’

-‘তা আজ কোন দিকে সূর্য উঠেছে?’

-‘রোজ যেদিন ওঠে, সেদিকেই।’

-‘ কাহিনী কি, হুম? তোর মতি গতি লাগছে না।’

-‘এজন্যই ভাল্লাগেনা। আমি স্বাভাবিক হতে চাচ্ছি অথচ….!’

-‘ওকে, ওকে, সরি।’

-‘ চোখ খুলবেনা, আমি এক্ষুণি আসছি, দাঁড়াও।’

একথা শুনে রুদ্র সেভাবেই চোখ বন্ধ দাঁড়িয়ে রইল। একটু পরে স্পর্শী বলল হাতটা বাড়াও। রুদ্র হাতটা বাড়িয়ে দিতেই হাতে কিছু একটা পেলো। রুদ্র চোখ খুলে দেখে হাতে চুনের কৌটা আর তার সামনেই ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছেন দাদীমা। ওদিকে রুদ্রর মুখের অবস্থা দেখে স্পর্শী দরজায় দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল। হাসির চোটে মেঝেতেই বসে পড়েছে সে। দাদীমা কিছু বুঝতে না পেরে একবার রুদ্র তো আরেকবার স্পর্শীর দিকে তাকাচ্ছে। রুদ্র নাকি চুন কী করবে একথা বলে দাদীমাকে ধরে এনে এনেছে স্পর্শী। সেই সঙ্গে সাবধান করে দিয়েছে কথা না বলতে, শব্দ না করতে।
স্পর্শীর কথা শুনে উনি নিঃশব্দে এসে রুদ্রর বাড়িয়ে রাখা হাতের উপরে চুনের কৌটা দিয়েছে। কিন্তু স্পর্শীর হাসি আর রুদ্রর মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে চরম ভুলই করে ফেলেছেন।
এখানকার কাহিনী অন্য কিছু সেটাও আন্দাজ করে নিলেন।
এসব খুনশুঁটির চ্যাপ্টার উনিও পার করে এসেছেন। নিজের চরম ভুল ধরতে পেরে উনি কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। কী বা বলবেন বলার মতো কিছু খুঁজে পেলেন না। বলতে গেলে এটাই প্রমাণিত হবে স্পর্শী দাদী নাতিকেই বোকা বানিয়েছে।
এরচেয়ে চুপ থেকে কেটে পড়া বুদ্ধিমানের কাজ। দাদীমাকে যেতে দেখে স্পর্শী দাদীমার আঁচল ধরে পালাল। তখনো সে মিটিমিটি হাসছিল। ওর হাসি দেখে রুদ্র রেগে গজগজ করে নাস্তা করতে গেল। ফাজিলটার মনে এই ছিল। অথচ সরল মনে ভেবেছিল বউটা বুঝি লাইনে এসেছে। কপালটা বুঝেছি
প্রসন্ন হয়েছে।তারপর নাস্তা সেরে যখন বের হতে যাবে তখন স্পর্শীর সঙ্গে চোখাচোখি হলো। ক্ষণিকের জন্য মনে হলো
স্পর্শীর তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। ততক্ষণে স্পর্শী এঁটো হাত ধুয়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরেছে। রুদ্র দরজা অবধি এগিয়েও
থমকে গিয়ে কাফিকে বলল নিচে গিয়ে দাঁড়াতে সে ওয়ালেট নিয়ে আসছে। কাফি বাধ্য সহকারীর মতো নিচে যেতেই রুদ্র রুমের গিয়ে নিঃশব্দে দরজা ভিজিয়ে দিলো। জানালায় দৃষ্টি ফেলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে স্পর্শী। রুদ্র তার কাছে গিয়ে আচমকা পেছনে থেকে ধরলো। তাতে স্পর্শী নড়লোও না চমকালোও না যেন জানত এমন কিছুই হবে। নীরবে করা আহ্বান রুদ্র ঠিকই বুঝে নিবে। স্পর্শীকে নিশ্চুপ দেখে রুদ্র হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে কাঁধে থুতনী রেখে আমুদে স্বরে বলল,

-‘আমাকে বোকা বানানোর শাস্তি পাওনা রইল। ফিরে এসে দিবো। ততক্ষণ সাবধানে থাকা হয় যেন।’

একথা শুনে স্পর্শী রুদ্রর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুখোমুখি
দাঁড়াল। রুদ্রর শার্টের কলারটা ঠিকঠাক করে মুচকি হাসল।
তারপর রুদ্রর বুকের বাঁ পাশে ঠোঁট ছুঁইয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,

-‘তুমি শুধু দলনেতা নও আরো অনেকের অনেককিছু। তাই যা করবে ধীরে সুস্থে। সাবধানে যেও, আর আমার প্রাপ্য
শাস্তির বদৌলতে সহি সালামতে ফিরে এসো।’

-‘হুম।’

স্পর্শীর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে ভীষণ অবাক হলেও রুদ্র প্রকাশ করলো না। বরং একরাশ ভালো লাগায় ছুঁইয়ে গেল বক্ষপাশ। সুখের দোলা লাগল সারা গা’য়। অতঃপর সে একটা ফোন স্পর্শীর হাতে তুলে দিয়ে স্পর্শীর কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বিদায় নিলো। রুদ্র যাওয়ার আধাঘন্টা পরেই স্পর্শী আর দাদীমার একসঙ্গে শরীর খারাপ হতে শুরু করল। তারা দু’জনেই বমি করে ফ্লোর ভাসিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে তাদের পুরো শরীর অবশ হয়ে এলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দাদীমাও অবচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। কপালে ফেটে র/ক্ত গড়াতে লাগল ধবধবে সাদা টাইলের মেঝেতে।তখন স্পর্শীর চোখজোড়াও বন্ধ হয়ে আসছিল। তখন সামনে এসে দাঁড়াল অতীবও এক সুন্দরী রমনী।চোখ ধাঁধানোর তাহার রুপ এবং
ঐশ্বর্যমার্জিত পোশাক। সেই রুপবতীর ক্রোধপূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দিবে।কে
সেই রুপবতী? এখানে কেন? তবে অপরুপ রুপের সেই মায়া নন্দিনী চোখের চাহনি বড্ডই রোষানলপূর্ণ, ভয়ংকর। তাকে
চেনার আপ্রাণ চেষ্টা করলো স্পর্শী। কিন্তু মস্তিষ্ক সায় দিলো না। স্পর্শী চেতনা ধরে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। তখন কেউ তার পেটে স্বজোরে এক লাথি বসাল। পরপর তিনবার
লাথির চোটে সে পেট চেপে ধরে মা! মা! করে চেঁচিয়ে উঠল।
করুণ সুরের সেই মমতাময়ী ডাক ধাক্কা খেলো ড্রয়িংরুমের
আনাচে কানাচে। অসহ্য ব্যথায় চিৎকার করতে থাকল সে।
তখন পুরুষালী শক্ত হাতের বিশ্রী স্পর্শে তার শরীর গুলিয়ে উঠলো। গলগল করে বমি করে ফেললো কারো ডান হাতের
উপর। তখন সেই অচেনা পুরুষ স্বজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো তার গালে। মনের রাগ মিটাতে শক্ত হাতে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করল। শ্বাস নিতে না পেরে সে কাঁ/টা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগল। হাত পা দাঁপিয়েও কাজ হলো না। তার অবস্থা দেখে কেউ বিশ্রী গালি দিচ্ছিল, লা/থি মা/রছিল তলপেটের উপর। স্পর্শী আর সহ্য করতে পারলো না তার ডাগর ডাগর নেত্র জোড়া আপনাআপনিই বুজে এলো।
তবে আপ্রাণ চেষ্টা করেও মুখে উচ্চারণ করতে না পারলেও
সে মনে মনে একটি কথা একাধিক বার উচ্চারণ করে ফেললো,

-‘রু রু রু..দ্র , বাঁ বাঁ.চাও।’

To be continue…………!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে