প্রেম প্রার্থনা পর্ব-০২

0
470

#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[০২]

স্পর্শী কাঁদতে কাঁদতে তার রুমের দিকে গেলেও রুমে প্রবেশ করল না। আশেপাশে উঁকি মেরে রুদ্রের রুমে প্রবেশ করল।
বরাবরের মতোই পরিপাটি করে সাজানো রুমটা। মহারাজ বোধহয় গোসল সেরে একেবারে রেডি হয়েই বের হয়েছেন।
আজ থাকবে নাকি চলে যাবে কে জানে! জিজ্ঞাসা করলেও তো বলবে না। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। একখন্ড অভিমানী মেঘ এসে বসল মনের উঠান জুড়ে। মিষ্টি হাসি মলিন রুপে ধরা দিলো। চোখ দুটো কেন জানি ছলছল করে উঠল। সেই সঙ্গে সমস্ত মন খারাপ এসে ভর করলো স্নিগ্ধ সরল বদনখানায়। গতকাল রাতে এ রুমে এসে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই তাকে স্বজোরে থাপ্পড় মে/রেছিল রুদ্র। সেই মুহূর্তে অবাক হলেও পরবর্তীতে কারণ বুঝে চুপ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া থাপ্পড়টা সে অকারণেই খাই নি বরং বিশেষ কিছু কারণ জড়িত ছিল। মোদ্দাকথা সেই মুহূর্তে তার মাথা কাজ করছিলো না। ভীষণভাবে দিশেহারা লাগছিল।।
তাই রাগের বশে রুদ্রকে কী বলেছে না বলেছে খেয়াল নেই।
তবে রুদ্র হুটহাট রেগে যাওয়ার ছেলে নয়। যখন সে রাগকে কনট্রোলে আনতেই পারে না ঠিক তখনই কিছু একটা করে।
যেমন,গতরাতে এক থাপ্পড়ে তার মুখের বুলির লাগামে এনে দিয়েছে। মুখ্য কথা, সকলের উচিত কাউকে কিছু বলতে খুব ভেবে চিন্তে বলা। যাতে বিপরীত ব্যক্তির উপর এর প্রভাব না পড়ে। কিন্তু অতিরিক্ত রাগের বশে আমরা এটাই ভুলে যায়।
তাছাড়া উপস্থিতিও তার অনুকূলে ছিল না তাই না চাইতেও
ভুলটা করে ফেলেছে। এসব ভাবতে ভাবতে সে উঠে দাঁড়াল
কয়েক পা এগিয়ে যেতেই সেন্টার টেবিলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তার উপরে রাখা পিংপং বল গড়িয়ে খাটের নিচে চলে গেল। এই যা! এবার কী হবে? এই রুমের একটা জিনিসও এদিক ওদিক হলে রুদ্র তাকে আস্ত রাখবে না। একথা ভেবে দৌড়ে গিয়ে বলটা ধরার আগেই বলটা খাটের নিচে ঢুকে গেল। সে হুমড়ি খেয়ে পড়েও কাজ হলো না। কিন্তু বলটা বের করতেই হবে আর সঠিক স্থানে রাখতেই হবে। এমনিতেই তার উপরে ভীষণ রেগে আছে ক্ষ্যাপা মহারাজ। গতকাল থেকে রাগের চোটে খুব একটা কথাও বলে নি। এখন যদি রুমে এসে তার জিনিস এলোমেলো দেখে তাহলেই শুরু করে দিবে।এরচেয়ে
বলটা ঠিকঠাক জায়গায় রেখে কেটে পড়া উত্তম। মনে মনে
একথা ভেবে খাটের নিচে ঢুকতে চেষ্টা করলো। দেহের জোর খাঁটিয়ে সামান্য একটু ঢুকে আর নড়তে পারল না। নড়তে না পেরে বের হওয়ার চেষ্টা করেও আঁটকে গেল। ডানে বানে এ দিক করেও কাজের কাজ কিছু হলো না। তখন হিমুর কন্ঠ শোনা গেল। ইংলিশ গান গাইতে গাইতে এদিক দিয়ে যাচ্ছে।
হিমু তার ছোট ফুপুর ছেলে। ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র। তার
কাজ বই নিয়ে বসে থাকা। পড়াশোনা চাপ কম তাই বেড়াতে এসেছে কিছুদিন হলো। তার সঙ্গে খুব একটা কথা বলে না সে। কারণ হিমু বাংলার চেয়ে ইংলিশে কথা বলে বেশি। এত দ্রুত ইংলিশে কথা বলে কিছুই বোঝে না। শুধু বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। তবে এটা বুঝতে দেয় না কিছু বোঝে নি সে। বরং এমন ভাব করে যেন সব জানে, বুঝে। তাছাড়া গণিতে পাঁকা হলেও ইংলিশে বড্ড কাঁচা সে । ইংলিশ জিনিস মাথায় ঢুকতেই চায় না। অথচ মানুষ ইংলিশ টুকটাক বুঝলেও ভয় করে গণিতকে। কিন্তু তার বেলায় উল্টো কাহিনি। লজ্জার কথা ইংলিশে মাত্র তেত্রিশ মার্ক তুলতেই তার কাল ঘাম ছুটে যায়। কিছু আগে অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষা হয়েছে। সে জানে সে ফেল করবে। এটা ঠিক ভবিষ্যতে বাণী না, তবে যা হালচাল তাতেই স্পষ্ট। এছাড়া ‘ফেল করব’ একথা গর্ব করে বলাটাও একটা আর্ট। যা ফেলটু স্টুডেন্টদের পরিষ্কার মনের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। এসব ভাবনা সাইডে রেখে স্পর্শী হিমুকে গলা উঁচিয়ে ডাকল।হিমু আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে পা বাড়াতেই পুনরায় তার নাম শুনতে পেল। দু’পা এগিয়ে গিয়ে কৌতুহলবশত রুদ্রর রুমে উঁকি মেরে দেখে স্পর্শী উবু হয়ে মেঝেতে শুয়ে আছে। তার মাথা খাটের নিচে আটঁকে গেছে। তা দেখে সে দৌড়ে গিয়ে বলল,

-‘আরে রে রে তুই আটকালে কীভাবে?’

-‘আগে আমাকে টেনে বের কর। তারপর নতুনভাবে আঁটকা পড়ে তোমাকে প্রথম থেকে দেখাচ্ছি।’

-‘আরে রেগে যাচ্ছিস কেন আমি এমনিই জানতে চাইলাম।’

-‘ভাইয়া কিছু একটা করো প্লিজ। দম বন্ধ লাগছে তাড়াতাড়ি কর। এভাবে আর দু’মিনিট থাকলে আমি চ্যাপা হয়ে যাবো।’

– চ্যাপা না সঠিক শব্দটা হবে চ্যাপ্টা।’

-‘আমি খাঁটের নিচে আটঁকা পড়ে মা/রা যাচ্ছি, আর তুমি কী না আমার কথার ভুল ধরছো? হে সুন্দর পৃথিবী বিদায়! বিদায়।’

একথা শুনে হিমু দ্রুত পেছনে গিয়ে স্পর্শীর পা ধরে টানতে লাগল। তবুও কিছুতেই কিছু হলো না। এত নিচু খাট! এখন
কীভাবে বের হবে? হিমু পা ধরে টানাটানি করেও কাজ হলো না দেখে সে চেঁচিয়ে বাসার সবাইকে ডাকল। তার ডাক শুনে
স্পর্শীর বাবা আর বড় আব্বু ছুঁটে এলেন। উনাদের পেছনে দৌঁড়ে এলেন বাকি মহিলা সদস্যরা। রুদ্র বাসায় নেই। খেয়ে তখনই বেরিয়ে গেছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। স্পর্শীর বাবা খুব চেষ্টা করেও মেয়েকে বের করতে পারলেন না। পরে দুইভাই খাট তুলে ধরে স্পর্শীকে উদ্ধার করলেন। উদ্ধার হয়ে স্পর্শী হাঁটা ধরল নিজের রুমের দিকে। নতুবা প্রতিটা সদস্যই এক এক করে ভাষণ দিতে শুরু করতো। যেটা হজম করাও কষ্ট।
মেয়েকে যেতে দেখে স্পর্শীর বাবা-মা একে অপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বড় মাও আর কথা বাড়ালেন না নীরবে স্থান ত্যাগ করলেন।

বাসের সিটে চোখ বন্ধ করে বসে আছে রুদ্র। মেজাজ তুঙ্গে।
গতরাতে একটু ঘুম হয় নি বিধায় প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে।
চোখ দু’টো জ্বলছে। বাস ছাড়ে নি। হয়তোবা লেট হবে। কেন জানি প্রচুর ঘামছে সে। ঘামে টি-শার্ট টা ভিজে শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। একটুপরে বাস ছাড়ল। জানালা দিয়ে বাতাস
এসে শরীর জুড়িয়ে ঘাম শুকিয়ো দিলো। কিন্তু মন জুড়াতে
ব্যর্থ হলো। অশান্ত মন হয়তো শান্ত হবে কিছুতেই। কিছুদিন বড্ড জ্বালাবে তাকে। চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠল কারো মায়াবী বদনমাখা। অথচ এমন হওয়ার কথা নয়। সে নিজেই বিরক্ত হলো তার অযথা ভাবনার প্রতি। দিনকে দিন শান্তি নামক জিনিস তার জীবন থেকেই উঠে যাচ্ছে। শুন্য জায়গাটা দখল করছে অশান্তিরা।
এইতো গতরাতে তোড়জোড় করে বিয়ে করার কারণই ছিল না। কিন্তু করতে হলো। বাবা-চাচার কথা ফেললে পারল না।
তাছাড়া গাধীটা প্রেম করা শিখেছে মাত্র সাতদিনের পরিচয়ে বখাটের সঙ্গে পালিয়েও যাচ্ছিল। বখাটে বেকার। তবে তার
রসে টইটম্বুর মার্কা প্রেমবাক্যে স্পর্শী গলে গদগদ। সে ভাবে সেই বখাটে তাকে খুব ভালোবাসে। ভালোবাসার প্রেম তরঙ্গ শুধু বখাটের নিকটে। আর সেই বখাটে ওর ব্রেণ ওয়াশ করে এটা বুঝিয়েছে, ‘ ভালোবাসা থাকলে গাছ তলায় গিয়ে থাকা যায়।’ ব্যস তারপর দু’জনে গাছতলায় থাকতে রাজি। অথচ স্পর্শী সেই বখাটের বাবার নাম তো দূর তার বাসার ঠিকানা অবধি জানে না। এমনকি কোন জেলার ছেলে তাও জানে না। শুধু জানে তাকে ভালোবাসে। সুন্দরী মেয়েদের বুদ্ধি যে হাঁটুর নিচে এটা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। তারপর তারই এক ফ্রেন্ডের ছোট ভাই স্পর্শীকে স্কুলের উল্টো পথে যেতে দেখে সন্দেহ করে। আর সন্দেহের কারণ পাশে থাকা ছেলেটা। যে স্পর্শীর শরীর বার বার ছুঁইয়ে দিচ্ছিল। আর স্পর্শীর ঠোঁটে ছিল বিরক্তমাখা হাসি। ছেলেটা বুদ্ধি করে রুদ্রকে কল করে
ভিডিও করে দেখায়। পরশুদিন বাসায় এসেছে বিধায় ছোট বাজারের কাছে ছিল সে। পুরো ঘটনাটা দেখে যায় ছেলেটার বলা স্থানে। আর উপস্থিত হয়ে রেগে দু’জনকে দেখে দুথাপ্পড় লাগিয়ে দেয় ছেলেটার দুই গালে। নাক বরাবর একটা ঘুষি দিতেও ভুলে না। একপর্যায়ে রুদ্রর সঙ্গে ছেলেটার হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। তখন সেখানে রুদ্রর বন্ধুরা উপস্থিত হয় আর
উত্তম মাধ্যমে দেয় ছেলেটাকে। রুদ্র তখনো স্পর্শীকে কিছু বলে নি। বরং কল করে ব্যাপারটা স্পর্শীর বাবাকে জানায়।
একথা শুনে অফিস থেকে উনারা চলে আসে এখানে। আর ছেলেটা মার খেয়ে জানায়, নেশার টাকা যোগাড় করতে না পারায় স্পর্শীকে আঁটকে রেখে টাকা হাতানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। এতদিন স্পর্শীই তাকে হাতখরচ দিতো। সেই টাকা দিয়ে সে নেশা করতো। একথা শুনে স্পর্শী কাঁদো কাঁদো হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

-‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না মাশুম? তোমাকে ভালোবেসে বিশ্বাস করে গাছ তলায় থাকতেও চলে এসেছি।’

-‘আমাদের প্রেম পূর্ণতা পাবে না স্পর্শী। আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করো। আর শেষ বিদায় দিতে হাসি মুখে আজকের হাত খরচটা দিয়ে দাও জান। আমার নেশা উঠেছে, দেখো হাত পা কাঁপছে, মাথা ঘুরছে, চোখে ঝাপসা দেখছি।’

-‘কুতাবাসা! গাঁজাখোর! আমার টাকায় নেশা করবি? দাঁড়া তোর নেশা করা ছুটাচ্ছি।’

একথা বলে স্পর্শী মাশুমের উপর হামলে পড়ল। মাশুমের চুল টেনে, খামচি, কিল, ঘুষি, দিতে থাকল একের পর এক। আর মাসুম বলতে থাকল,

-‘আমাকে শুধু গাঁজাখোর বললে ভুল করবে প্রিয়শী। আমি দু’টাকার গাঁজাখোর নয়। আমি চার টাকার ইয়াবা খোরও বটে। নিজের স্বপ্নে পূরণ করতে দু’একবার হিরোইনের টানে
নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না জান। নেশাখোররাও মানুষ, তাদের জানে মনেও প্রেম আছে। আর এই নেশাযুক্ত মন নিয়ে বলছি ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

মাশুমের কথা শুনে রুদ্রু ভ্রু কুঁচকে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাচ্ছিল্যপূর্ণ দৃষ্টি। যার অর্থ পৃথিবীতে ছেলে পেলি না? শেষে কী না এই নেশাখোর! ঠিক তখন মাশুম দুই হাতে তালি বাজিয়ে পেট ধরে হাসতে হাসতে রুদ্রকে বললো,

-‘এসব বললে খুশি হতেন নিশ্চয়ই? এই স্পর্শী, তোমার এই চাচাতো ভাই বহুত চালাক। জানো গতরাতে আমাকে হুমকি
দিতে আমার মেসে গিয়েছিল। উপরোক্ত কথাগুলো বলতে শিখিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে তোমার সঙ্গে ব্রেকআপ করার জন্য
টাকা অফারও করেছে। অথচ এখন দেখো হিরো সেজে দাঁড়িয়ে আছে যেন কিচ্ছু জানে না।’

একথা বলতে দেরি কিন্তু রুদ্র তাকে লাথি মারতে দেরি করে নি। স্পর্শীর বাবা চাচারাও রেগে গেছেন। উনারা কিছু বলার আগেই মাশুম বলল,

-‘আঙ্কেল আমি স্পর্শীকে বিয়ে করতে চাই। তবে বর্তমানে আমার কিছু না থাকলেও ভবিষ্যতে হতে পারে। আপনারা চাইলে আমি ঘরজামাই থাকতেও রাজি। এতে আপনাদের মেয়ে আপনাদের কাছেই রইল। শশুড়বাড়ি কেমন থাকবে না থাকবে ভাবার অবকাশ রইল না।’

একথার উত্তরে স্পর্শীর বাবা বললেন,

-‘আমি কপালপোড়া নই বলেই খারাপ কিছু ঘটার আগেই
ব্যাপারটা জানতে পেরেছি। আর ঠিক বলেছো তুমি, সত্যি সত্যিই আমার মেয়েটাকে ছাড়া থাকতে খুবই কষ্টকর হবে আমার। যদিও এর সলিউশনও পাকাপোক্ত করা রেখেছি।
তুমি জানো না এজন্যই বলছি, ‘রুদ্র হচ্ছে স্পর্শীর উডবি হাজবেন্ড।’ স্পর্শীর আঠারো বছর হলেই বিয়ে সম্পূর্ণ করা হবে।

একথা শুনে স্পর্শী ডুকরে কাঁদতে লাগল। সে কিছুতেই এই বিয়ে করবে না। কোনোভাবেই পছন্দ না রুদ্রকে। বেপরোয়া একটা ছেলেকে স্বামী হিসেবে কল্পনাও করে নি। রুদ্রের সঙ্গে কিছুতেই মানাতে পারবে না নিজেকে। কিন্তু স্পর্ষীর কথাতে স্পর্শীর বাবা গুরুত্ব দিলো না। বরং মাশুমকে হুমকি দিয়ে মেয়েকে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে এলেন। ঝোঁকের বশে বলা কথাটা অনেক ভেবে চিন্তে বড় ভাইকে সরাসরি প্রস্তাব দিলেন। বাড়ির প্রতিটা সদস্য একমত হলেন। তবে রুদ্র কিছু বললো না শুধু তাকিয়ে রইল স্পর্শীর কান্নারত মুখের দিকে। যাতে স্পর্শী এমন ভুল আর না করে এজন্য কাজিকে ডেকে আনলেন। আজ কলেমা পড়ে বিয়ে সম্পূর্ণ হোক। স্পর্শীর আঠারো বছর পূর্ণ হলে রেজ্রিট্রি সমেত অনুষ্ঠান করা হবে।
কাজি ততক্ষণে লেখালেখির কাজ শুরু করেও দিয়েছেন। তখন স্পর্শী চেঁচিয়ে বলল,

-‘আমি রুদ্রকে বিয়ে করবোই না। সে তো আমার বড় বাবার ছেলে নয়। তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। বাবা- মা নেই এমন কাউকে বিয়ে করবো না আমি, এতিম একটা।’

স্পর্শীর এমন কথা শুনে সকলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।
তবে রুদ্রর মধ্যে কোনো প্রকারের প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।
সুন্দর করে উঠে স্পর্শীর হাত ধরে পাশের একটা রুমে নিয়ে গেল। দরজা আস্তে আঁটকে শার্টের হাতা গুটিয়ে পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে বলল,

-‘বিয়ে যদি করতে হয় আমাকেই করবি তুই। সাহস থাকলে বিয়ে আঁটকে দেখা। আর কী বললি তুই আমি এতিম? ওকে হলাম এতিম। মেনে নিলাম আমি এই বাসার দত্তক নেওয়া সন্তান। তো? তো কি হয়েছে সেটা বল?’

-‘কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুললে, সেটা বলো!’

-‘ হাহা হা অধিকার!’

-‘হ্যাঁ অধিকার। আর তুমি শুনতে পাচ্ছো না আমি তোমাকে
বিয়ে করবো না, করবো না, করবো না।’

-‘ছাড় পাবি না, করতেই হবে। তবে আমি নই, বিয়েতে বাধ্য করবে তোর বাবা-মা।’

একথা বলে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বাবা মায়ের কথায় একপ্রকার বাধ্য হয়ে কবুল বলে সে। তারপর রাতে যখন তাকে রুদ্রর রুমে যেতে বলা হয়, সে যায় না। বরং বিশ্রী গালি দিয়ে মনে যা আসে চেঁচিয়ে বলতে থাকে। রুদ্র রুমে বসেই শুনতে পায়
তার বলা কটুবাক্যগুলো। রাগে তার শরীর কাঁপতে থাকে।
তারপর স্পর্শী যখন রুমে আসে রাগ সামলাতে না পেরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় স্পর্শীর গালে।

To be continue……..!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে