#প্রেম
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana
পুরো বাড়িটা সাজানো হয়েছে। মেহমান গিজগিজ করছে। পার্লারের মেয়েরা মিষ্টিকে সাজাচ্ছে। একটু পরেই মিষ্টির গায়ে হলুদ। মায়া ছায়া আর রনি মিষ্টির কাছে আসে
“মিষ্টি (মায়া)
মিষ্টি পেছনে তাকায়। তারপর মায়াকে জরিয়ে ধরে কেঁদে বলে
” আমি বিয়ে টা করবো না। জীমকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। প্লিজ কিছু করো তোমরা।
রনি মিষ্টির মাথায় হাত বুলায়
“কৃশ প্রচন্ড জেদি। ও যখন বলেছে তোমায় বিয়ে করবে তখন করবেই। কারো কথা শুনবে না। আমি তোমার বোন অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু কাজ হয় নি (রনি)
” কৃশ ভালো ছেলে মিষ্টি। দেখ সবাই খুশি। সবার খুশির জন্য তুই নিজের খুশিটা বিসর্জন দিতে পারবি না(মায়া)
মিষ্টি ওদের সাথে আর কথা বলে না। দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বাবার রুমে গিয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে
“বাবা প্লিজ। আমি জীমকে প্রচন্ড ভালোবাসি। ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না
” তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও
বাবার এরকম কথায় মিষ্টি বাবার পা ছেড়ে দেয়।মিষ্টি বুঝে যায় ওর বাবা পাষাণ হয়ে গেছে ওর চোখের পানি ওর বাবাকে গলাতে পারবে না। মিষ্টি উঠে দাঁড়ায় চোখের পানি মুছে বলে
“আমি তোমাদের দুজনকেই ছেড়ে দেবো।
মিষ্টি চলে যায়। মিষ্টির এই কথার অর্থ ওর বাবা বুঝে না। মাথাও ঘামায় না।
হলুদ অনুষ্ঠান শেষে মিষ্টি জীমকে ফোন করে বাড়ির পেছনে ডাকে। জীম আসে। সামনা সামনি দাঁড়িয়ে আছে জীম মিষ্টি। কেউ কোনো কথা বলছে না। শুধু দেখছে। কতোদিন দুজন দুজনকে দেখে না তাই আজ মনের শ্বাদ মিটিয়ে দেখছে। দুজনের চোখেই পানি।
মিষ্টি জীমকে জড়িয়ে ধরে
” আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। খুব। পারবো আপনাকে ছাড়া বাঁচতে।
জীম কিছু বলছে না শুধু শুনছে। কি বলবে ও
“মিষ্টি চলো না পালিয়ে যায়
” তা হয় না জীম৷ বাবাকে আমি ঠকাতে পারবো না
“আর আমি
” ভালোবাসার মানেই তো বিয়ে করা না। আর সব ভালোবাসা তো পূর্নতা পায় না। আমাদের ভালোবাসা নাই বা পূর্নতা পেলো। জীম আর মিষ্টি আলাদা না। ওদের শরীর দুটো কিন্তু মন একটাই।
আবার দুজনেই চুপ
“জীম আসছি
” আর একটু থাকো না প্লিজ
“কেউ দেখে ফেলবে
শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে চলে যায় মিষ্টি।
পাঁচবছর পরে
” আমার মধ্যে থাকা অনেক কথার একটু আজ শেয়ার করবো সবার সাথে। রাইয়ান রহমান জীম তার একটা ফুলটুসি ছিলো। ভীষণ লম্বা চুল ছিলো তার যা আমাকে পাগল করে দিতো। তার হাসি কথা বলা বকা দেওয়া রাগ করে তাকানো সব কিছুই ছিলো অসাধারণ। সেছিলো বই আর বাবা ভক্ত। সারাক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকতো। সে যখন ছিলো তখন সিগারটার যত্ন ছিলো খুব। কত রাত কত গান। এখন আর গিটারের তার গুলো বদলানো হয় না। তখন ওর আমি কেন্দ্রীক চিন্তা ভাবনা গুলো ওর কলেজের রেজাল্ট টাকেই খারাপ করে দিতো। এখন আর রেজাল্ট খারাপের ভয় নেই। এখন কেউ আর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার বায়না করে না। কেউ বলে না তোমার সাথে থাকতেই ভালো লাগছে থাকি না আর একটু
মিষ্টি বাবা মা জীমের এই শো টা দেখছিলো। জীমের বলা কথা শুনে কেঁদে ফেলে
“এতো ভালোবাসতো ছেলেটা আমার মিষ্টিকে। আর আমি ওদের আলাদা করে দিলাম (কেঁদে বলে মিষ্টির বাবা)
মিষ্টি মাও আচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে।
পাঁচবছর আগে জীমের সাথে দেখা করে এসে মিষ্টি সুইসাইড করে ছিলো। কারণ ও কিছুতেই কৃশকে বিয়ে করবে না। মিষ্টি জীমের স্ত্রী। মরে যাওয়ার আগে মিষ্টি বাবাকে একটা চিঠি দিয়েছিলো
” বাবা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমার তুমি আর জীম দুজনকেই চাই। আমি যেমন জীমকে ছাড়া বাঁচবো না তেম তোমাকে ছাড়াও বাঁচবো না। তোমাদের সবার পবলেম আমি তাই আমি চলে যাচ্ছি। আমার লাশ দেখে তুমি কেঁদো না বাবা কারণ তোমার জেদ আজ তোমার মেয়ের মৃত্যুর কারণ। ভালো থেকো। মা আর ভাইয়ের খেয়াল রেখো
বিয়ে বাড়িটা পুরো শশান হয়ে গেছিলো। কৃশ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু মিষ্টি হারিয়ে যাওয়ার পরে।
জীমকে ছায়া ফোন করে বলেছিলো। জীমও সুইসাইড করতে গেছিলো কিন্তু কপালের জোরে বেঁচে গেছে। এক বছর কোমায় ছিলো। জীমের বাবার অনুরোধে মিষ্টিকে জীমদের বাড়ির সামনে কবর দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে
মিষ্টির কবরের পাশে বসে আছে জীম হাতে গিটার। পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে
“জীম তুমি সব সময় এখানে কেনো বসে থাকো?
” কারণ এখানে আমার #প্রেম শুয়ে আছে। আমার বউ, ভালোবাসা।
“জীম তোমার সব কিছু নতুন করে শুরু করা উচিৎ। মিষ্টি চলে গেছে আর কখনো ফিরবে না। জীবন তো কারো জন্য থেমে থাকে না
” হুম জীবন কখনো থেমে থাকে না। কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলো থেমে গেছে। আমার ভালো থাকার দিন গুলো থেমে গেছে। #প্রেম করো না। #প্রেম মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। আমার মিষ্টি খুব সার্থপর। আমাকে রেখে চলে গেছে। একবারও ভাবলো না জীম কি করে বাঁচবে। মিষ্টিকে ছাড়া জীম শুন্য এটা আমার মিষ্টি বুঝলো না।
জীম চোখ মুছে গিটারটা হাতে নেয়। এটাই জীমের একমাত্র কাজ প্রতিদিন মিষ্টিকে গান শুনানো। কারণ মিষ্টি যে জীমের গান খুব পছন্দ করতো
“আকাশে অনেক তারার ভিরে আমি তারে খুইজা পাইলাম নারে
অবেদন খোদার দরবারে আখিরাতে পাই যেনো তারে
_______________সমাপ্ত ____________