#প্রেম_তুমি
#part :13
#Mishmi_muntaha_moon
গায়ে হলুদ শেষ,, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।একটু পর আবার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
অর্নিল ওর রুমের বারান্দার রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে বিয়ারের বোতল একটু পর পর ওটাতেই চুমুক দিচ্ছে।ছাদে ডেকোরেশন করা হয়েছে।অলরেডি গান বাজনা ও শুরু হয়ে গেছে।ছাদ থেকে ফুল সাউন্ডে গান বাজছে।তুলির ফেমিলি রাও আজ সকালেই এসে পরেছে অর্নিল দের বাড়ি।একসাথেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়েছে বিয়েটাও একসাথেই হবে।
–অর্নিল,,, তুই এখানে কি করছিস?
অর্নবের আওয়াজ পেয়ে অর্নিল বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে পিছন ফিরে অর্নবের কাছে যেতে যেতে বলল
–তুলি কে একা রেখে তুই এখানে কেনো?
–আর তুই ভাইয়ের বিয়েতে ভাই কে একা রেখে এখানে কেনো?আর তুই রেডি ও হোস নি এখনো?
অর্নিল অর্নবের কাধে হাত দিয়ে রুম থেকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে বলল
–তুই যা আমি আসছি।
অর্নব অর্নিলের কপালে হাত দিয়ে বলে
–ওয়েট তোর শরীর এতো গরম কেনো জ্বর এসেছে নাকি?
অর্নিল অর্নবের হাত কপাল থেকে সরিয়ে বলে
–আরে নাহ আমার কিছুই হয় নি আমি একদম ঠিক আছি। তুই যা আমি ইন্সট্যান্ট রেডি হয়ে আসছি যা।
অর্নব অনেক জিজ্ঞাসা করার পরও অর্নিল জিদ করায় অর্নব চলে যায়। অর্নব চলে যেতেই অর্নিল ছাই রঙের পাঞ্জাবি পরে হাতে ঘড়ি পরে ছাদে যায়।অনুষ্ঠানে যেতে ইচ্ছে করছে শরীর খারাপ লাগছে তবুও যেতে তো হবেই।অর্নিল ছাদে গিয়ে দেখে সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত।অর্নিল এগিয়ে গিয়ে গেস্ট দের খাবার সার্ভ করতে সাহায্য করতে লাগে। কিছুটা হেল্প করে তুশার আর রোহান কে দেখে ওদের কাছে যায়।
–এসেছিস তোরা।জেবা আসে নি?
অর্নিলের কথা শুনে রোহান বলল
–নাহ ওর বাবা পারমিশন দেয় নি আসার।
রোহানের কথা শুনে অর্নিল ছোট করে বলল
–ওহ।
তুশার আশেপাশে কিছুক্ষন চোখ বুলিয়ে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল
–ফারহা কে কি ইনভাইট করিস নি?
অর্নিল ও একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলল
–তোদের সবাইকেই ইনভাইট দিয়েছি। তোরা যেমন আমার ফ্রেন্ড ফারহা ও আমার ফ্রেন্ড তাহলে ওকে কেনো দিবো না?কাল একটু ঝামেলা হয়েছিলো তাই হয়তো আসে নি।
–কেমন ঝামেলা?
–কাল রাতে ও ওর মা বাবা নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো আর আম্মু কে বলল আমার আর ওর সম্পর্ক ছিলো।
অর্নিলের কথায় রোহান ভিষণ উৎসাহ নিয়ে বলল
–তারপর?
অর্নিল রোহানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
–তারপর কি আবার আমি ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।কাল এভাবেই মেজাজ ভালো ছিলো না তার ওপর ফারহা এমন সিন ক্রিয়েট করায় মাথা ঠিক ছিলো না।
–
আয়রা রান্নাঘরে রান্না করছে।অবশেষে সব জিনিসপত্র গুছানো শেষ হয়েছে। সারাদিন এতো এতো কাজ করে ক্ষিদায় পেট জ্বালা করছে তাই একটু টুকটাক রান্না করতে এসেছে।আয়শা না খেয়েই ঘুমিয়ে আছে।আর জুহি বেগম ভাত আর তরকারি রান্না করছে আর আয়রা নুডুলস বানাচ্ছে। জুহি বেগম সবজি কাটতে কাটতে আয়রাকে বলল
–তুই আবার নুডুলস কেনো রান্না করছিস ভাত খাবি না?
জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা নুডুলস এর দিকেই চোখ রেখে বলল
–আপাতত অনেক ক্ষুদা লেগেছে তোমার ভাত তরকারি কখন হবে কে জানে এতোক্ষন ক্ষুদার্ত থাকতে পারবোনা সরি।
আয়রা নুডুলস বানিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে আয়শা কে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাইয়ে দিলো সাথে নিজেও খেয়ে নিলো। আয়শা খেয়ে আবারও ঘুমিয়ে পরল। জুহি বেগম তরকারি চুলাতে বসিয়ে রুমে এসে বসে তারপর আয়রার উদ্দেশ্যে বলে
–তুই একটা ছেলের কথা বলেছিলি না? ওই ছেলেটাকে বলেছিস?
–নাহ কাল কলেজে যাবো তখন তো দেখা হবেই।তখন একে একে সব বলবো।আচ্ছা মা আমি আমার রুমে যাই ঘুম পাচ্ছে।
আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম ব্রু কুচকে বলল
–ভাত খাবি না?
–না মা আর কিছু খাবো না।
আয়রা ওর রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দেয়।ওর থাকার রুমে একটা বারান্দা আছে।আয়রা চুল গুলো বিনুনি করে বারান্দায় গিয়ে দারালো।অর্নিলের কথা মাথায় ঘুরছে।এতোদিন পর মার সাথে দেখা হওয়ায় আর এতো বড় একটা ঘটনা ঘটায় অর্নিলের কথা মাথায় আসে নি বেশি।
❝উনি হয়তো আমার জন্য অনেক চিন্তিত হয়ে আছে।আবার রেগে যায় নি তো? উফ কে জানে।
আচ্ছা উনি যখন শুনেছে আমি গ্রামে চলে গেছি উনার কি।মন খারাপ হয়েছিলো আমাকে খুজার চেষ্টা করেছিলো? কেনো করবে না আমি তো উনার গার্লফ্রেন্ড হই।❞
আয়রা মাথা চেপে ধরে তারাতারি রুমে চলে গেলো কি সব ভাবছে!রুমে আসতেই হঠাৎ অর্নিলের দেওয়া শাড়ির কথা মনে পরে। শাড়ির কথা মনে আসতেই আয়রা ওর মার রুমে ছুটে যায়।জুহি বেগমের রুমে গিয়ে দারিয়ে জোরে শ্বাস নেই।জুহি বেগম বিছানা ঠিক করছিলেন আয়রাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে ব্রু কুচকে তাকিয়ে বলে
–কি হলো এভাবে ছুটে এলি কেনো।কিছু লাগবে?
জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা অস্থির হয়ে বলল
–না শুনো আমি একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলাম সেইটা নিয়ে আসতে ভুলে গেছি।
–শান্ত হ আমি নিয়ে এসেছি।তোর জিনিসপত্রের সাথে ব্যাগটা দেখেছিলাম তাই ওইটাও নিয়ে এসেছি।
জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলো। তারপর আবার নিজের রুমে চলে গেলো।
–
আয়রা সকালে তারাতারি উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ভার্সিটি তে যায়।স্যারের সাথেও কথা বলতে হবে কতদিন মিস হয়েছে।
কলেজে এসে ভিতরে ঢুকতেই মাঠের কর্নারে চোখ যায়।
সেখানে তাকাতেই দেখে রোহান তুশার আর জেবা চমকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আয়রা অর্নিল কে দেখতে না পেয়ে ক্লাসে যায়।অনেক দিন পর আসায় কেমন যেনো লাগছে।
অর্নিল ঘুম থেকে উঠে টাইম দেখতেই চমকে উঠে ১২ টা বেজে গেছে অর্নিল তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যেতেই দেখে তুলি শাড়ি পরে সোফায় বসে আছে আর তাকে ঘিরে আরও মানুষ বসে আছে।সবাই কথা বলছে। অর্নিল কে দেখেই ওর মামা উনাদের সাথে বসতে বললো। অর্নিল না চাওয়া সত্ত্বেও সবার সাথে বসে টুকটাক কথা বলল। অনেকক্ষন বসে থেকে হাতের ঘড়ি তে তাকাতেই দেখে ১ টা বেজে গেছে।অর্নিল বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরতেই সকলে আবারও অর্নিলের দিকে তাকায়।
সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে অর্নিল হাল্কা হেসে বলল
–আমার খুব জরুরি একটা কাজ আছে।
বলে তারাহুরো বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যেতে লাগল।
ভার্সিটি তে গিয়ে রোহান তুশার আর জেবার কাছে যায়।
অর্নিল কে দেখে তুশার রোহান জেবা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে অর্নিলের দিকে তাকায়।
অর্নিল কিছু বলতে নিবে কিন্তু ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুচকে বলে
–তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
–না কিছু না।
–
আয়রা ক্লাস শেষ হতেই হাতের নোট গুলো দেখতে দেখতে হাটতে লাগলো হঠাৎ কেউ শক্ত করে জরিয়ে ধরাতে হচকচিয়ে যায়।কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে থাকতেই বুঝতে পারে আসলে কে?অর্নিল আয়রাকে ছাড়তেই আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে তারাহুরো করে বলল
–সরি আপনাকে যাওয়ার আগে ইনফর্ম করতে পারি নি।মা হঠাৎ ফোন করে বলল বাবা আর নেই এটা শুনে আমার হুশ ছিলো না অন্য কোথাও।আপনার কল দেখেছিলাম আমিও দিয়েছিলাম নট রিচেবেল বলছিলো।
অর্নিল স্থির দৃষ্টিতে আয়রার দিকে তাকিয়ে থেকে আয়রার হাত টেনে বাইক বসিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।
–
অর্নিল ওর প্রেকটিস করার বাড়িতে আয়িরাকে নিয়ে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।আয়রা তো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্নিলের দিকে কি করতে চাচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে না। অর্নিল রুমের ভিতরে এসে আয়রার হাত ছেড়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে দারায়।আয়রা ব্রু কুচকে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে থেমে থেমে বলল
–এখানে কেনো নিয়ে এলেন?আর আপনার দেখি জ্বর?
–এতোদিন কত খুজেছি তোমায় হেভ ইউ এনি আইডিয়া?
অর্নিলের কথা শুনে আয়রা কিছুটা চুপ থাকতেই অর্নিল আবারও বলল
–আই ফল ইন লাভ উইত ইউ আয়ু।
চলবে,,,