#প্রেম_তুমি
#part:9
#Mishmi_muntaha_moon
অর্নিল আর ওর ফ্রেন্ড রা আনন্দ করতে করতেই সারা রাস্তা পাড় করলো। অর্নিল ফ্রেন্ড দের সাথে আনন্দ করলেও মাথায় আয়রার কথাই ঘুরছিল।হোটেলে পৌছে ওরা সবাই নামে।অর্নিল নেমেই আয়রাকে খুজতে লাগে রিমুকে একটা মেয়ের সাথে বসে থাকতে দেখে সেখানে যায়।
–হেই রিমু।
রিমু অর্নিলকে দেখে দাঁড়িয়ে হেসে বলল
–অর্নিল ভাইয়া।আপনি এখানে?কিছু বলবেন?
অর্নিল ব্রু চুলকে বলল
–আয়রা কোথায় তোমার সাথে নেই?
রিমু আয়রার নাম শুনে নিচু স্বরে বলল
–না ভাইয়া ও তো আসে নি হয়তো।আমাদের বাসে দেখি নি।
আয়রা আসে নি শুনে অর্নিলের রাগ লাগছে এতো করে বলল তবুও আসল না।সাথে চিন্তা ও লাগছে কোনো সমস্যায় পড়ে যায় নি তো?অর্নিল শিউর হতে পুরো হোটেল খুজে আর সকল স্যারদের ও জিজ্ঞেস করে কিন্তু সকলের একই কথা আয়রা আসে নি।অর্নিল মেজাজ খারাপ নিয়ে ফারহার কাছে গেলো। তুশার ফারহা রোহান জেবা সকলে একসাথে বসে বিভিন্ন কথা বলছে কোথায় ঘুরবে কি করবে।অর্নিল রুমে ঢুকেই ফারহার হাত ধরে দার করায় তারপর বলে
–তুই মিথ্যা কেনো বললি?
ফারহা অর্নিলের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল
–আমি আবার কি মিথ্যা বললাম?
অর্নিল রাগ কন্ট্রোল করে দাতে দাত চেপে বলল
–আয়রাকে তুই বাসে উঠতে দেখছিলি?
অর্নিলের এমন রাগ মাখা প্রশ্নে ফারহা শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রোহান বলল
–কি হয়েছে তোর এমন রাগ দেখাচ্ছিস কেনো?
অর্নিল রোহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল
–তোরা ফারহা আর আমার মাঝে কথা বলবি না।
ফারহা তো ভয়ে চুপসে আছে।ফারহার এইটা ভেবে ভয় পাচ্ছে যে অর্নিল ওর ফ্রেন্ডদের সাথে এভাবে রেগে কথা বলছে ওকে আবার চড় টড় দিয়ে দিবে নাকি?
অর্নিল আবারও ফারহাকে বলল
–দেখ ফারহা আমাকে আর রাগাস না। যা জিজ্ঞাসা করেছি বল।
ফারহা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল
–আসলে আমি আয়রাকে দেখিই নি আমিতো এভাবেই বলে দিয়েছি।সরি অর্নিল।
ফারহার কথা শুনে অর্নিলের মেজাজ আগের থেকেও বেশি বিগড়ে গেলো। অর্নিল কে এভাবে রাগতে দেখে তুশার অর্নিলের কাছে এসে কাধে হাত রেখে বলল
–কাম ডাইন অর্নিল।
অর্নিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
অর্নিল কে বেরোতে দেখে ফারহা কাদো কাদো মুখ করে বলে উঠলো
–ওই মেয়েটার জন্য অর্নিল আর আমাদের মাঝে এতো দূরত্ব হয়ে গেছে।যেদিন ওই মেয়েটা ভার্সিটিতে ফার্স্ট এসেছিল সেই দিনটা আমার লাইফের সব থেকে খারাপ দিন ছিলো।
অর্নিল ওর রুমের বারান্দায় গিয়ে আয়রাকে ফোন দিলো কিন্তু কয়েকবার রিং বেজে আবার কেটে যাচ্ছে রিসিভ করছে না।অর্নিলের খুব খারাপ লাগছে এতোবার বলার পরও এলো না আর কেনো এলোনা তার কারণ টাও বলার প্রয়োজন বোধ করলো না।অর্নিল রুম থেকে বেরিয়ে কবির স্যারের রুমে গিয়ে নক দিলো। স্যার অর্নিল কে দেখে হেসে বলল
—অর্নিল আসো ভিতরে আসো।
অর্নিল রুমে ঢুকে স্যারের উদ্দেশ্যে বলল
–স্যার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো।
অর্নিলের কথা শুনে কবির স্যার চিন্তিত স্বরে বলল
–হুম বল কোনো সমস্যা হয়েছে?
অর্নিল সামনের চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে বলল
–না স্যার এখানে সব ঠিকঠাক আছে।আমি বলতে এসেছিলাম যে আমার আজ বাড়িতে যেতে হবে একটা ইমার্জেন্সি কাজ আছে।
অর্নিলের কথায় স্যার ব্রু কুচকে বলল
–তোমার বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো?
–বাড়ির সবাই ঠিক আছে। কিন্তু আমার আজই যেতে হবে।
স্যারের থেকে পারমিশন নিয়ে অর্নিল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে।
–
আয়রা বিকেল দিক দিয়ে ওদের গ্রামে পৌছাল। আয়রা বাড়িতে ঢুকেই দেখে ওর মা উনার রুমের এক কিনারায় বসে আছে আর আয়রার ছোট বোন আয়শা ওর মার পাশেই চুপ করে বসে আছে।আয়রার মা জুহি বেগম আয়রাকে দেখেই কেদে দিলেন। আয়রা ওর মা কে কাদতে দেখে গিয়ে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো। জুহি বেগম কাদতে কাদতে বলতে লাগলো
–তোর বাবা একদম ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু ওইদিন সকালে উঠে দেখি,,
বলে আবারও কাদতে লাগল।আয়রা কেদে বলল
–আমার জন্যই সব হয়েছে।আমাকে মাফ করে দাও মা।
–না তোর জন্য কিছুই হয় নি।আল্লাহ সকলের মৃত্যু আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন আমরা কি করতে পারি।
আয়রা আবারও নিশ্চুপ চোখের জল ফেলে বলল
–বাবাকে শেষ বার দেখতেও পারলাম না।কত অভাগা মেয়ে আমি।
আয়রার কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেছে। জুহি বেগম তারাতারি পানি এনে আয়রাকে খাওয়াতে আয়রা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল।
–যা তুই তোর রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।
আয়রা উঠে যেতে নিতেই আয়শা মৃদুস্বরে বলল
–আপু এতোদিন তুমি কোথায় ছিলে?সবাই বলে বাবা মরে গেছে মা অনেক কেদেছিল।আর রাতে আমার অনেক ভয় লাগতো।তুমি কোথায় গিয়েছিলে আমাদের রেখে।
আয়শার কথা শুনে আয়রা বলার মত কিছু খুজে পেল না।জুহি বেগম বলে উঠলো
–আপু একটা কাজে গিয়েছিলো।
আয়রা বসা থেকে উঠে ওর রুমে গিয়ে রুমের দরজা অফ করে দিলো। তারপর খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাদতে লাগল।নিজের মধ্যে কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করছে।আয়রা অস্থির হয়ে মৃদু স্বরে বলতে লাগল
–কত কষ্ট দিলাম বাবাকে কিন্তু শেষ বারের মত মাফ চাওয়া হলো না।
আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। বুকটা কেমন ভাড় লাগছে।
–
অর্নিল একরাশ ক্লান্তি নিয়ে আয়রা যেখানে থাকতো সেই বিল্ডিং এর নিচে দারিয়ে আছে।আয়রাকে একের পর এক ফোন দিচ্ছে কিন্তু রিসিভড হচ্ছে না।অর্নিল হোটেল থেকে সোজা এখানে এসেছে। রাত ৮ টা বাজে।অর্নিল আর দাঁড়িয়ে না থেকে আয়রা যেই ফ্লেটে থাকে সেই ফ্লেটে গিয়ে বেল বাজাতেই একটা মহিলা দরজা খুলে। অর্নিল কে দেখে ব্রু কুচকে বলে
–জ্বি কে আপনি?
অর্নিল কিছুটা বিব্রত হয়ে প্রশ্ন করল
–আয়রা আছে?
–নাহ উনি তো আজ সকালেই চলে গেছে এখান থেকে।
মহিলাটির কথা শুনে অর্নিল অবাক হয়ে গেলো। চলে গেছে মানে?অর্নিল ব্রু কুচকে মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করল
–কোথায় চলে গেছে?
–জানি না কিন্তু উনি উনার সব জিনিসপত্র নিয়েই গেছে।
অর্নিল ঘাড় চুলকে চলে গেলো।
বাসায় যেতেই সকলে প্রশ্ন করতে লাগলো এতো রাতে এসে পরল কেনো?অর্নিল সকলের কথা উপেক্ষা করে রুমে চলে গেলো।
অর্নিল কাধের ব্যাগটা রেখে বিছানায় বসে হাতের সোজা পিঠ দিয়ে মুখ চেপে ধরে ।কাধে হাতের স্পর্ষ পেয়ে ঘাড় ফিরে তাকালো।
–কি হয়েছে? তোদের তো কাল আসার কথা ছিলো তাহলে আজ এতো রাতে কেনো?
অর্নবের কথায় অর্নিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আয়রা চলে গেছে আর আমাকে কিছুই বলল না।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)