#প্রেম_তুমি
#part:7
#mishmi_muntaha_moon
আয়রা সকালে তারাতারি উঠে পরল।এখন সব পেকিং করে রাখতে হবে।আর আজকেও ক্যাফে থেকে ছুটি নিয়েছে।পনে ৭ টা বাজে।আয়রা পেকিং করতে করতে রিমুর দিকে তাকালো একদম ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে।
আয়রা আস্তে আস্তে সব পেকিং করে এক সাইডে রাখলো তারপর রিমুকে ডাক দিলো।
রিমু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়।হঠাৎ সাইডে রাখা ব্যাগে চোখ যেতেই ব্রু কুচকে আয়রাকে জিজ্ঞেস করল
–আয়রু এই ব্যাগ কিসের।
রিমুর কথা শুনে আয়রা ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে আবার রিমুর দিকে তাকালো তারপর বলল
–আমার সব জিনিসপত্র।আমি একটা রুম দেখেছি সেখানেই শিফট হবো আজ।
আয়রার কথা শুনে রিমুর ব্রু জোরা কুচকে গেলো।রিমু আয়রার কাছে এসে বলল।
–কেনো।এখানে থাকতে কি তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে?
রিমুর কথা শুনে আয়রা মুচকি হেসে রিমুর হাত ধরে বলল
–তোদের এখানে আমার কোনো সমস্যা হয় নি বরং যখন একজনের খুব প্রয়োজন ছিলো তখন তোকে পাশে পেয়েছি তুই আমার জন্য যা যা করেছিস কখনও ভুলতে পারবো না।
–তাহলে কেনো চলে যাচ্ছিস।
রিমুর কথায় আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
–দেখ তুই আমাক ফোর্স করিস না থাকার জন্য প্লিজ।
–আচ্ছা করবনা ফোর্স কিন্তু কেনো যাচ্ছিস এইটা তো বলবি।
আয়রা কলেজের ব্যাগ কাধে নিয়ে বলল।
–কোনো কারণ নেই।আমি এভাবেই চলে যাচ্ছি কতদিন থাকবো তোদের বাড়ি বল?
আয়রার কথা শুনে রিমু কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
–যতই বল আমি জানি তুই বাবার ওই কথাগুলোর জন্য চলে যাচ্ছিস।
আয়রা কিছুটা বিরক্ত দেখিয়ে বলল
–আরে নাহ এমন কিছুই না উনি আমার বাবার মতই উনার কথায় আমি রাগ করব কেনো?আমি এভাবেই যাচ্ছি।তুই এখন এই কথা বাদ দে কলেজে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে চল তারাতারি।আর এমন মুখ ফুলিয়ে রাখবি না বলে দিলাম।
আয়রার কথায় রিমু মনখারাপ থাকার সত্ত্বেও মুচকি হাসলো।
আয়রা আর রিমু খেতে বাহিরে যায়। আয়রা আর রিমু খাবার টেবিলে বসতেই রিমুর মা খাবার দেয়।রিমুর মা আয়রাকে খাবার দিতে নিতেই আয়রা বলে।
–আন্টি আমি একটা রুম ভাড়া নিয়েছি আজই সেখানে শিফট হবো।আপনারা আমার জন্য অনেক করেছেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আয়রার কথা শুনে রিমুর মা বলল
–কেনো হঠাৎ করে বলছো চলে যাবে।কোনো সমস্যা হয়েছে আমাদের এখানে?
আয়রা মুচকি হেসে বলল
–না আন্টি তেমন কিছুই না।তাছাড়া আপনাদের বাসায় তো আমি প্রায়ই আসবো।কোনো সমস্যা হবে না তো?
–না আমাদের কোনো সমস্যা হবে না আমরা তো আরও খুশি হবো।
–জ্বী আন্টি আমি কলেজ থেকে ফিরে আমার জিনিসপত্র এর ব্যাগ নিয়ে যাবো।
আয়রা আর রিমু কলেজে চলে যায়।কলেজে পৌছেই আয়রার চোখ অর্নিল আর ওর ফ্রেন্ডদের দিকে গেলো।
–তুই চলে যাবি। আমার রুম টা খালি হয়ে যাবে।
রিমুর এমন কথায় আয়রা মনখারাপ করে বলল
–আমারও খারাপ লাগবে অনেক
–তাহলে যাস না।
আয়রা রিমুর কথার জবাব দিলো না।
ক্লাস শেষ হতেই আয়রা রিমুর সাথে ওদের বাড়ি গিয়ে ব্যাগ নিয়ে আসলো।তারপর ভাড়া নেওয়া বাড়িতে গিয়ে গেলো।বাড়িতে গিয়ে হলো সমস্যা। আয়রার সাথে কয়েকটা জামাকাপড় আর পড়ার বই ছাড়া কিছুই নেই ঘুমাবে কোথায় আর খাবেই কি?আয়রা ব্যাগ রেখে বারান্দায় গেলো।বারান্দার ডান সাইডে একটা বড় কদম গাছ আছে।গাছটা পুরো কদমে ভরে আছে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
আশেপাশে দেখতে দেখতে হঠাৎ নিচে চোখ যেতেই চমকে উঠলো।
–আমি কি ঠিক দেকছি।না এইটা অর্নিল ভাইয়া কি করে হতে পারে।উনি জানবে কি করে আমি এখানে শিফট হয়েছি।
অর্নিল আয়রাকে বারান্দায় দেখে হাত নারালো।আয়রা অর্নিলকে দেখে তারাতারি রুমের ভিতরে চলে গেলো।
সাথে সাথেই আয়রার ফোনে আননোন নাম্বারে ফোন আসতেই আয়রা কিছুটা অসস্তি নিয়ে ফোন তুললো।কারন এই নাম্বার কেউ জানে না আর আয়রার ফোন দেওয়ার মানুষ ও তো নেই।আয়রা ফোন তুলে সালাম দিলো।
–আসসালামু আলাইকুম কে?
–৫ মিনিটের মধ্যে বাহিরে আসো।নাহলে আমি উপরে আসবো।
অর্নিলের কথা শুনে আয়রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ফোন কেটে দিলো।আয়রা ফোনের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুচকে বলতে লাগলো।
–আজব তো আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।এখন কি করি।কে জানে সত্যি আবার এসে পরবে নাকি।
আয়রা অরনা ঠিক করে পরে নিয়ে নিচে গেলো।তারপর অর্নিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল।
–আপনি এখানে কেনো?আর জানলেন কি করে আমি এখানে শিফট হয়েছি?
–তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড আর গার্লফ্রেন্ডের খবর তো
রাখতেই হয়।
আয়রা বিরক্ত নিয়ে বলল
–দেখুন প্রথমত আমাকে গার্লফ্রেন্ড বলা বন্ধ করুন।আপনি বলেছেন শুধু এক্টিং তাহলে এখন তো কেউ নেই।
অর্নিল আয়রার কথা শুনে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল।
–তা যাই হোক। তুমি চলো আমার সাথে।
অর্নিলের কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে বলল
–আমি আপনার সাথে কেনো যাবো?আর কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন?
–চুপ বেশি কথা বলবে না।চলো আমার সাথে।
অর্নিল আয়রার হাত ধরে বাইকে বসালো তারপর নিজেও উঠে চালাতে লাগলো।
আয়রা কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।অর্নিল কোনো জবাব দেয় না আয়রার কোনো কথার।তারপর একটা এক তালা বিল্ডিং এর সামনে বাইক থামায়।
আয়রা নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগে।
–কোথায় নিয়ে এলেন।
আয়রার কথা শুনে অর্নিল আয়রার হাত টেনে ভিতরে নিয়ে যায়।
আয়রা ভিতরে গিয়ে ব্রু কুচকে আশেপাশে দেখে বসার
কিছু চেয়ার গিটার আরও অনেক কিছুই আছে গান গাওয়ার মত।তারপর ছাদের মত ছোট একটা বারান্দা ও আছে খুব সুন্দর।অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে ওর মুখের অবস্থা দেখে বলে।
–লাইক সিরিয়াসলি তুমি ভয় পাচ্ছো?হায়রে!
আয়রা নিজেকে স্বাভাবিক করে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল
— আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন বলুন?
–কিছু না এভাবেই ভাবলাম আমার ব্যাক্তিগত জায়গাটা তোমাকে দেখাই।এখানে আমি এসে মাঝেমধ্যে সময় কাটাই।আর এখানে আমার পছন্দের সকল কিছুই আছে।
অর্নিলের কথা শুনে আয়রা ভ্রু উচিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলো।গানের সরঞ্জাম, বিভিন্ন আর্ট করা ছবি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।দেখে মন মেজাজ ভালো হয়ে গেলো।আয়রা বারান্দায় গিয়ে ফুল গাছ দেখছে।
অর্নিল পকেট থেকে ফোন বের করে আয়রার অগোচরে ওর কতগুলো ছবি তুলে নিলো।তারপর আয়রা কে ডাক দিলো, অর্নিলের ডাক শুনে আয়রা ওর সামনে দাড়িয়ে বললো।
–কি হলো?
–আমার পাশে দাড়াও কিছু ছবি তুলবো।
অর্নিলের কথায় আয়রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো।
–কেনো আমি আপনার সাথে ছবি তুলবো।
অর্নিল আয়রার কথা কে পাওা না দিয়ে আয়রার হাত ধরে পাশে দাড়া করিয়ে বললো।
–চুপচাপ দাড়াও। ফারহা কে গিয়ে দেখাতে হবে। তাহলে তো এখানে আসাটা কাজে লাগবে।
অর্নিলে কথায় আয়রা কিছুক্ষণ নি শব্দে দাঁড়িয়ে থেকে অর্নিলের মোবাইলের দিকে তাকালো।অর্নিল ছবি তুলে মোবাইল পকেটে রেখে আয়রা কে বললো।
–চলো তাহলে তোমাকে দিয়ে আসি।
অর্নিল বাসা থেকে বের হয়ে বাইকে গিয়ে বসলো আয়রা ও পিছে পিছে গিয়ে অর্নিলের কাধ ধরে বসে।
অর্নিল বাইক চালাতে চালাতে আয়রার উদ্দেশ্যে বললো।
–তুমি অন্য জায়গায় শিফ্ট হলে কেনো?
অর্নিলের কথায় আয়রা চোখে উরে আসা চুল সরিয়ে বললো।
–কারো উপর বোজ হয়ে থাকতে চাই না।
অর্নিল আয়রার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।অর্নিল কে চুপ থাকতে দেখে আয়রা বললো।
–আপনার দেখি সিন্গারদের মতো আলাদা গান গাওয়ার রুম ও আছে।
আয়রার কথায় অর্নিল বললো।
–সিন্গারদের মতো কি আমি তো সিন্গারই।
–ওহহহ
অর্নিলের কথায় আয়রা বিরবির করে ঠোঁট বাকিয়ে বললো।
–হাহ সিন্গার।
অর্নিল আয়রা কে বিরবির করে কথা বলতে দেখে জিগ্যেস করলো।
–কিছু বললে।
–না না আমি কি বলবো আবার আমি কিছুই বলিনি।
অর্নিল আয়রা কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।আয়রা অর্নিলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো।
–কোথা থেকে এসে আবার চলেও গেলো।
চলবে…..
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)