#প্রেম_তুমি
#part:5
#Mishmi_muntaha_moon
সকলে আয়রার দিকে ভুতের মত তাকিয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ স্বপ্নেও ভাবে নি আয়রা অর্নিলের গার্লফ্রেন্ড হতে পারে।
আয়রা তো চোখ তুলেই তাকাতে পারছে না।আয়রার অনেক রাগ লাগছে।সবার সামনে অসম্মান করে দিলো। মানে কি?
আয়রা রেগে অর্নিলের হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো ক্লাসে।
আয়রা চলে যেতেই ফারহা অর্নিলের সামনে এসে বলল
–মানে কি অর্নিল তুমি সবার সামনে এইটা কেনো বললে?ও না আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হই সবাই কে বলো।
–লিসেন এভ্রিওয়ান আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে সবাইকে দেখা করিয়ে দিলাম।নাও এভ্রিথিং ক্লিয়ার।বায়।
অর্নিল শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়।রোহান আর তুশারের কাছে যেতেই ওরা একের পর এক প্রশ্নের ঝুরি নিয়ে বসে।অর্নিলকে দেখে তুশার বলল।
–ওই লেহেঙ্গা ওয়ালি তোর গার্লফ্রেন্ড ছিলো।তলে তলে এতো কিছু?
তুশারের কথা শেষ হতেই রোহান বলতে লাগলো।
–ওই মেয়েটাকে দেখতে তো অনেক মাসুম মনে হয় কিন্তু রিলেশন ও চালিয়ে গেলো।তাও তোর সাথে।
ওদের দুজনের কথা শুনে অর্নিল বলল।
–তোরা চুপ থাক তো।আয়রা কিছুই আগে থেকে জানে না।আর আমাদের মাঝে রিলেশন টিলেশন কিছুই নেই।
ফারহা অর্নিল হাত টেনে ধরে বলল
–তুমি যতই বলো ওই মেয়েটাই খারাপ,কেরেক্টালেস যত্তসব।আমার অর্নিলের ওপর নজর দেয়।কালকে আমি ওয়ার্নিং ও দিয়েছিলাম।
অর্নিল ফারহার কথায় আরও রেগে গেলো।
–তুই ওকে কি বলেছিস কালকে।
অর্নিলের কথায় ফারহা থতমত খেয়ে যায়।
–না,,মানে আমি তো
–চুপ তোকে আমি বলেছি না ওর থেকে দূরে থাকবি।এখন থেকে যেনো মনে থাকে।
ফারহা রেগে সেখান থেকে চলে যায়।ফারহাকে চলে যেতে দেখে রোহান বলে উঠলো।
–কেনো তুই ওই মেয়েটার জন্য ফারহার সাথে এভাবে কথা বলছিস?
রোহানের কথায় অর্নিল ব্রু উঠিয়ে বলল।
–উফফ তোরা চুপ থাক।আয়রা আমার গার্লফ্রেন্ড না এইটা জাস্ট এক্টিং।ফারহার থেকে পিছু ছুটানোর জন্য।
–
আয়রা ক্লাসে আসার পর থেকেই অন্যমনস্ক হয়ে আছে। রিমু আয়রার সামনে হাত নেড়ে বলল
–শুনছিস আমার কথা?
আয়রা রিমুর দিকে তাকিয়ে বলল।
–কোন কথা?
আয়রার জবাব পেয়ে রিমু বলতে লাগলো।
–অর্নিল ভাইয়া সবার সামনে তোকে আজ গার্লফ্রেন্ড বলল।উফফ কি লাকি তুই আমাকে বললে ভালো হতো।আর তোদের কি আগে থেকেই কোনো সিন চলছিলো?
আয়রা রিমুর কথা শুনে রাগ নিয়ে বলল।
–দেখ তুই আমার ব্যাপারে এই সব ভাবছিস তো বাইরের সবাই কি কি ভাবছে আমার ব্যাপারে।উনি একদম ঠিক করে নি।
–আচ্ছা এই সব বাদ দে কিন্তু অর্নিল ভাইয়া কেনো বলল তোকে সবার সামনে গার্লফ্রেন্ড উনি হয়তো তোকে পছন্দ করে।
রিমুর কথায় আয়রা আড়চোখে রিমুর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলল
–ফালতু কথা বলবি না।এরকম কিছুই না।উনি কেনো আমাকে পছন্দ করতে যাবে।কত সুন্দর মেয়েরা উনার পিছে ঘুরে।আর সবার কথা বাদ দে ফারহা আপু উনারই ফ্রেন্ড উনাকে কত পছন্দ করে সারাদিন লেগেই থাকে।আর দেখেছিস ফারহা আপু কত সুন্দর স্মার্ট।এই সবাইকে ছেড়ে উনি আমাকে পছন্দ করবে হাহ!
আয়রার কথা শুনে রিমু চুপ করে রইল।রিমুকে চুপ থাকতে দেখে আয়রা আবারও বলল
–আচ্ছা বাদ দে এইসব কথা। পড়ায় মনোযোগ দে।
–
ক্লাস শেষ হতেই রিমু বাড়িতে চলে গেলো।আর আয়রা ক্যাফে যেতে লাগলো।
আয়রা হাটছে আর বারবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে অর্নিল আছে কিনা?
আয়রা আশেপাশে তাকিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।আয়রাকে দেখে ডাক দিলো।ছেলেটার ডাক শুনে আয়রা নিজেকে দেখিয়ে বলল
–আমি?
ছেলেটা হ্যা বলতেই আয়রা ঠোঁট কামড়ে ওর কাছে যায়।তারপর বলে
–জ্বী বলুন কি বলবেন?
–তুমি আয়রা না?
ছেলেটার কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে বলে
–জ্বী কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
আয়রার কথা শুনে ছেলেটা হাসলো।তারপর হাত এগিয়ে দিয়ে বলল।
–আমি অর্নব আহমেদ।অর্নিলের ভাই।
অর্নিলের ভাই শুনে আয়রা আরও অবাক হয়।তারপর মুচকি হেসে বলে।
–ওহ।
আয়রা হেন্ডশেক না করায় অর্নব নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে।
–তুমি কি অর্নিলের গার্লফ্রেন্ড।
অর্নবের কথা শুনে আয়রা একনাগাড়ে বলতে লাগে।
–না না এমন কিছুই না ভাইয়া।আমি অর্নিল ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড না।
আয়রাকে এমন ঘাবড়ে যেতে দেখে অর্নব মৃদু হেসে বলে।
–রিলেক্স এতো ঘাবড়াচ্ছো কেনো।বুঝলাম তুমি অর্নিলের গার্লফ্রেন্ড না।
অর্নবের কথা শুনে আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল।অর্নব আবারও বলতে লাগল।
–তুমি কি অর্নিল কে পছন্দ করো না?
অর্নবের কথা শুনে আয়রা বড়বড় চোখ করে বলল।
–না এমন কিছুই আমি উনাকে কেনো পছন্দ করতে যাবো।
–ওহ।
অর্নবকে চুপ থাকতে দেখে আয়রা বলল।
–আচ্ছা ভাইয়া আমি চললাম আমার এটা কাজ আছে।লেট হয়ে যাচ্ছে।
বলেই আয়রা তারাতারি করে চলে যায়।আয়রা চলে যেতেই অর্নব ব্রু কুচকে বলে।
–আজব তো সকালে তো দেখলাম অর্নিল আয়রাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলল।আর আয়রা বলছে ও গার্লফ্রেন্ড না।স্ট্রেঞ্জ!
অর্নিল কলেজ থেকে বের হয়ে অর্নব কে দেখে ব্রু কুচকে ওর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে।
–তুই এখানে কি করছিস?
অর্নব অর্নিলের কাধে হাত রেখে বলে
–তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
অর্নবের কথায় অর্নিল ব্রু কুচকে বলে
–হোয়াট!আমার গার্লফ্রেন্ড আবার কোথা থেকে আসবে।
অর্নব ছোট ছোট চোখ করে বলে
–বড় ভাই থেকে কথা লুকাস।বেরি বেড।আয়রার সাথে কথাও বলেছি আমি।
অর্নিল আয়রার কথা শুনে বুঝতে পারে আসল ঘটনা। তারপর বলে
–তুই সকালেও কলেজে ছিলি।
অর্নব মাথা উপর নিচ নাড়ায়।অর্নিল ওর শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে।
–তুই আমার উপর নজর রাখছিলি।
–একদম।আমার থেকে না লুকালেই পারতি।
অর্নব অর্নিল একসাথে হাটতে লাগে আর বিভিন্ন কথা বলতে লাগে।
–
আয়রা ব্যাগ নিয়ে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে পরে।আজ ৮:৩০ বেজে গেছে।আয়রা ধীর পায়ে হাটছে।হঠাৎ খুব দ্রুত একটা বাইক এসে সামনে থামতেই আয়রা ভয় পেয়ে যায়।তারপর ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে অর্নিল বাইক থেকে নামলো।
আয়রা অর্নিলকে দেখে বুকে থু থু দিলো।
অর্নিল আয়রার সামনে এসে বাকা হেসে বলল।
–হেই মাই গার্ল।
আয়রা অর্নিলের কথা শুনে রেগে বলল।
–দেখুন মুখ সামলে কথা বলুন।মাই গার্ল মানে কি হ্যা?
অর্নিল আয়রার কথা শুনে জোরে হেসে আয়রার কাছে এসে বলল
–বুঝিয়ে বলবো?
আয়রা অর্নিলের এমন অদ্ভুত আচরণে চোখ বুজে অর্নিলের কাধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।
–আপনি এখানে কেনো?
অর্নিল ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল।
–যেখানে আমার গার্লফ্রেন্ড সেখানে আমি।
অর্নিলের কথা শুনে আয়রার খুব রাগ লাগছে।আসার পর থেকেই কি সব কথা বলছে।আয়রা রাগ নিয়ে বলল
–দেখুন ভাইয়া ফাইজলামি বন্ধ করেন।বলুন এখানে কেনো এসেছেন।আর সকালে আপনি একদম ঠিক করেন নি কেনো সবার সামনে বললেন আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড। সবার সামনে আমার কি সম্মান টাই রয়ে গেলো।
অর্নিল আয়রার কথা না শুনের ভান করে বলল বাইকে গিয়ে বসল তারপর আয়রাকে বলল
–বাইকে উঠে বসো।
অর্নিলের কথা শুনে আয়রা বড় বড় চোখ করে অর্নিলের দিকে তাকায়।
আয়রাকে এভাবে তাকাতে দেখে অর্নিল বলে
–হোয়াট? এভাবে আছো কেনো মনে হচ্ছে আমি অসম্ভব কিছু করে ফেলেছি?
–অসম্ভব কিছু করেন নি বলেছেন।আমি কেনো আপনার বাইকে বসবো।আমার কি পা নেই?
অর্নিল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
–এস ইউর উইশ।আমি তাহলে একাই চলে যাই রাত ৯ টার কাছাকাছি তারউপর ঢাকা শহর জানোই তো।এখানে রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন ছেলেরা দারিয়ে থাকে তো কি হইসে তুমি তো সাহসী চলি আমি।
অর্নিলের কথা শুনে আয়রার ভয় লাগছে কিন্তু আয়রা অর্নিলের সামনে প্রকাশ করতে চাইছে না।আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত হয়ে অন্য দিকে ফিরে অর্নিলকে বলল
–আমি যেতে পারবো।
অর্নিল বাইক স্টার্ট দিতেই আয়রা মৃদুস্বরে বলল
–আপনি কি সত্যি চলে যাচ্ছেন।
অর্নিল আয়রার কথা না শুনার ভান করে বলল
–কিছু বললে?
–নাহ।
অর্নিল বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।আয়রা অর্নিলকে চলে যেতে দেখে মনে মনে বলল
–কত খারাপ লোক। আমি বলেছি তো কি হয়েছে একটা মেয়েকে এভাবে একা রেখে চলে গেলো।আরেকবার তো জিজ্ঞেস করতে পারতো।
আয়রা আপনমনে হাটতে লাগলো একটু এগিয়ে কতগুলো ছেলেকে দেখে থেমে গেলো।ঠোঁট কামড়ে মনে মনে আস্তে করে বলল
–উফ এতোগুলো ছেলে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো?
পিছ থেকে চাপা হাসির শব্দে ঘুরে তাকায়।
–যাহ ছেলেগুলোকে দেখে ভয় পেয়ে গেলে।
অর্নিলের এমন খোচা মেরে কথা বলায় আয়রা বলে
–আপনি আবার এখানে কেনো এসেছেন আপনি তো চলে গিয়েছিলেন।
–আমি আবার দুর্বল মেয়েদের একা রাস্তায় রেখে যেতে পারি না।এখন চুপচাপ এসে বাইক এ বসো নাহলে সত্যি চলে যাবো।
আয়রা কিছুক্ষন নিজ মনে অর্নিলকে গালি দিয়ে বাইকে উঠে গিয়ে অর্নিলের থেকে একটু দূরে হাল্কা করে বসে।
–ঠিক করে বসো।
–ঠিক করেই বসেছি আপনি স্টার্ট দিন।
আয়রাকে এমন ত্যারামি করতে দেখে অর্নিল আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দেয়।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই🥰🥰)