প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৫১+৫২+৫৩

0
2430

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আপনার সমস্যা কি বলুন তো??এভাবে সবসময় আমাকে ঘুম থেকে হুটহাট তুলে ফেলে আপনি কি শান্তি খুঁজে পান?
.
অনেক শান্তি পাই,খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করে তোমার এই রাগী লুক দেখলে
.
অসভ্য লোক একটা,কিসের জন্য উঠিয়েছেন সেটা বলুন
.
আমার ঘুম আসছে না
.
তো?আমার তো আসছে
.
কিন্তু আমার তো আসছে না, তাই তুমি আমার সাথে জেগে থাকবা,আমরা গল্পগুজব করবো,নিউলি হ্যাপি ম্যারিড কাপলের মতন
.
তাই বুঝি,তা কি কি টপিক থাকবে তাতে?একটু শুনি
.
এই যে তোমার কোনো রোগ আছে কিনা রোমান্টিক মুডে তোমার থাপড়াইতে মন চায় অলওয়েজ তাই এটা তো একটা রোগ
.
হোয়াট!
.
তাই নয়ত কি!প্রথমবার কিস করতে যাওয়ায় যে চড়টা খেয়েছিলাম জীবনেও তো ভুলবো না আমি
.
ভুলতে বলছি নাকি,ওমন ভাবে স্মরনীয় করে দিসি যাতে জীবনেও না ভুলেন
.
আচ্ছা আচ্ছা,আর আমি যে চড় মেরেছিলাম ভুলে গেছো?
.
হুহ!
সরুন তো,হাত ছাড়ুন,আমি ঘুমাবো
.
তা হচ্ছে না,গল্প করো নয়ত ঝগড়া,আমার ঘুম আসতেছে না
.
আচ্ছা তো আপনি শুরু করেন,আমার মাথায় কিছুই আসতেছে না
.
ওকে তাহলে ছোটবেলায় কি কি করছিলাম ওসব নিয়ে কথা বলি
.
ঠিক আছে
.
আমি যে জামা পরতাম তুমি সেই জামা পরতে চাইতা আর সে কারণে আমাদের সব ফ্যামিলি ফটোতে কেউ তোমাকে আমার পাশে দেখলে বলতো আমার টুইন ভাই
.
আচ্ছা তাই??কিন্তু আম্মু তো আমাকে অন্য কথা বললো
.
কি বললো?
.
বললো আপনি নাকি ইচ্ছে করে আমাকে আপনার জামা পরিয়ে দিতেন,আপনি চাইতেন আমাদের দুজনকে সেম সেম লাগুক
.
কে বলেছে,আন্টি সত্যিটা তাহলে জানে না,সত্যিটা তো আমি জানি
.
ওসব বাদ,এবার বলেন আপনার ঐ ক্রাশের কথা,যে আপনার বিয়ের দিন বিয়ে করেছিলো
.
সে তো ছিলো অত্যন্ত কিউট,অত্যন্ত শয়তান,অত্যন্ত দুষ্টু,অত্যন্ত কিপটা
.
সব অত্যন্ত?
.
শান্ত আহানার থুঁতনি ধরে টেনে বললো”আর সে ছিলো অত্যন্ত মিষ্টি,জাস্ট!!!!!. ”
.
জাস্ট কি?
.
কিছু না,তুমি বুঝবা না
.
কেন বুঝবো না আমি?
.
বুঝার হলে এতদিনে তোমার কোলে আমার বাচ্চা থাকতো
.
আজিব তো,বিয়ে হয়েছে ১২/১৪দিন হয়েছে,এ কদিনে আমি আপনার বাচ্চার মা কেমনে হতাম আবার কোলে নিয়েও বসে থাকতাম?
.
বললাম তো তুমি বুঝবে না তাই তো এসব আর বলতে চাইছি না
.
ওকে তাহলে ওদিকে তাকান
.
শান্ত পিছন ফিরে বারান্দার দিকে তাকালো,কিন্তু কিছুই দেখলো না,তারপর আবার সামনে চেয়ে দেখলো আহানা ভালো মানুষের মতন কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়েছে
.
এই তুমি আমাকে বোকা বানিয়ে আবার শুয়ে পড়লে,উঠো
.
আহানা আদো আদো ভয়েসে বললো”রাত ২টা বাজে,ঘুমান আর আমাকেও ঘুমাতে দিন,”
.
শান্ত আর কি করবে,লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে সে
আহানার দিকে তাকাতে তাকাতে তারও ঘুম এসে গেছে
সকালে যখন সে উঠলো তখন মনে হলো তার যে সে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে
একটা লাল পরী তার সামনে ঘুরঘুর করছে
চোখটা একটু ডলে সে শোয়া থেকে উঠে বসে আড়মোড়া ভেঙ্গে আবারও তাকালো সেদিকে
লাল পরীটা পাশে থাকা আলাদা বেডটায় উঠে দাঁড়িয়ে সেটার সামনের পর্দা সরিয়ে কোমড়ে হাত রেখে নিচের দিকে তাকালো,তারপর লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে সে ব্যাগটা খুললো,কোমড়ে হাত এখনও
চুলগুলো তার নড়াচড়ার সাথে সাথে হেলেদুলে যাচ্ছে
তার থেকে ফোটায় ফোটায় পানি পড়তেছে,একবার ফ্লোরে তো একবার বিছানায় তো একবার শান্তর গায়ে
শান্ত হা করে লাল পরীটাকে দেখে যাচ্ছে,আশেপাশের দিকে তার কোনো মন নেই
লাল পরীটা হলো আহানা,ঘুম থেকে উঠে ভালো লাগছিলো না বলে গোসল করে নিয়েছিলো সে,তারপর লাল নীল আর সবুজের মাঝ থেকে লাল শাড়ীটা বেছে পরে নিয়েছে সে
শান্ত এখনও ওকে দেখছে,কি সুন্দর,এতদিন এই সৌন্দর্য্য কোথায় লুকিয়ে ছিলো নাকি আমিই দেখিনি
.
আহানা একবার এক কাজ করছে,একবার ব্যাগে ইউজ করা শাড়ী ভরছে তো একবার নতুন কি পরবে সেটা বের করছে
তার চুল থেকে পানি পড়তে পড়তে ফ্লোর পিচ্ছিল হয়ে গেছে অলরেডি
আহানা আবারও আরেকটা কাজে বারান্দার দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দুম করে পড়ে গেলো পিচ্ছিল জায়গাটায় পা রেখে
শান্ত এবার তার ক্রাশ খাওয়া থেকে বেরিয়ে এসেছে,এভাবে রোমান্টিক মুডে পড়ে গিয়ে আহানা প্রমাণ করলো সে আসলে কোনো লাল পরী নয় সে হলো মিসেস আহানা
আহানা ব্যাথা পেয়ে কোমড়ে হাত বুলাচ্ছে,হঠাৎ কারোর খিলখিল হাসির আওয়াজে মুখ তুলে সে বিছানার দিকে তাকালো,শান্ত বালিশে হেলান দিয়ে বসতে বসতে হাসতেছে অনবরত
.
আহানা ব্রুটা কুঁচকিয়ে বললো”এটা কেমন কথা??আপনার বিয়ে করা বউ পড়ে গিয়ে কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছে আর আপনি কিনা আমাকে না তুলে হেসেই যাচ্ছেন?এটাতে হাসির কি হলো বুঝলাম না আমি”
.
শান্ত ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকেছে তারপর আহানার কথাটা শুনে বললো”ঢং করে ভেজা চুলের পানি দিয়ে ফ্লোর ভালোই পরিষ্কার করেছো আবার সেটাতে পড়েছো এখন আমি হাসবো না তো কি করবো?”
.
নাচেন!
.
আহানা ফ্লোর থেকে উঠে হনহনিয়ে বাথরুমে গিয়ে হাতটা ধুয়ে আবারও এসে বললো”আজ ঢাকায় ফিরবেন নাকি আজও আমাকে জ্বালানোর জন্য সাজেকেই থেকে যাবেন?”
.
আজই ফিরবো,আমার অফিসে অনেক কাজ
.
তাহলে আমি সব ব্যাগে পুরে নিচ্ছি,নাস্তা কপালে জুটবে নাকি শুধু বাঁশ চা?
.
আরে না না,আমার অত্যন্ত কিউট একটামাত্র বউ,বিরিয়ানি খাওয়াবো,চলো
.
অত্যন্ত বলবেন না,ওটা আপনার প্রেমিকার জন্য রাখা নাম,আমার জন্য না
.
ওহ,জেলাস হচ্ছো নাকি?
.
না তো কিসের জেলাস,সে এখন বিয়ে করে তার স্বামীর সাথে হানিমুনে ইনজয় করছে তাহলে আমার জেলাস হওয়ার প্রশ্নই আসছে না
.
ইনজয়??আর সে??মা গো মা
.
কেন?ইনজয় করবে না তো কি আমার মতন আপনার সাথে ঝগড়া করবে খালি,আমি সিউর উনি এখন তার জামাইকে নিয়ে সুইট মোমেন্ট ইনজয় করছেন
.
হুম হুম বহুত সুইট,লাইভ দেখছি কিনা,সুইট এন্ড সাওয়ার
.
লাইভ মানে?
.
না মানে কই লাইভ,কি উল্টা পাল্টা শুনো,যাও সব প্যাক করে নাও,নাস্তা করে রওনা হবো ঢাকার জন্য
.
আচ্ছা
.
আহানা সব রেডি করে নিয়ে ব্যাগ হাতে নিলো ততক্ষণে শান্ত ও ফ্রেশ হয়ে এসেছে
.
আহানা শান্তর হাতে ব্যাগ বুঝিয়ে দিয়ে চুল গুলো টেনে খোঁপা করতে করতে চুলের কাঠিটা খুঁজতে লাগলো এদিক ওদিক
শান্ত পিছন ফিরে সামান্য মুচকি হেসে বললো”ঐ চুল বেঁধো না,স্বাধীন রেখে দাও”
.
অত্যন্ত সুন্দর না তো!!!
.
আমি কি বলছি সুন্দর?একদম পেত্নির মতন লাগে তোমাকে
.
আহানা রেগে গিয়ে চুলগুলো ভালো করে বেঁধে বেরিয়ে গেলো সোজা
শান্ত ও আসলো পিছু পিছু,দুজনে কোনোরকম নাস্তাটা সেরে কারে এসে বসেছে
আহানা জানালাটা খুলে সাজেকের রিসোর্ট গুলোর দিকে একবার চেয়ে রইলো তারপর বললো”আবারও আনিয়েন আমাকে,জায়গাটা অনেক ভালো”
.
আনবো,সময় করে,এখন আপাতত সময় একদমই নেই বললে চলে
.
আহানা জানালায় হাত রেখে তার উপর মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,সবুজ সব গাছগাছালি দৌড়াচ্ছে নাকি আমাদের গাড়ী??
চিকন পথটা একবার উপরে উঠছে তো একবার নিচে নামছে,এটা ঠিক তখনই বোঝা যায় যখন দূরের পথটার দিকে তাকাই তা না হলে আমরা কত উঁচুতে উঠতেছি আর কত নিচুতে নামছি তা বুঝাই যায় না একেবারে
দুপাশে সবুজ আর সবুজ,এখানে সারাজীবনের জন্য থেকে যেতে পারলে ব্যাপারটা বেশ হতো
.
শান্ত কার ড্রাইভ করতে করতে বাম হাত দিয়ে আহানার হাতের কুনুই ধরে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে বললো”আরও বের হয়ে থাকতা জানালা দিয়ে যেন পাশ দিয়ে কোনো গাড়ী ক্রস করে যাওয়ার সময় বাড়ি দিয়ে মাথাটা সাথে করে নিয়ে যেতে পারে
.
নিবে না,ভালোই লাগছিলো ,দিলেন তো ভালো লাগায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে?
.
বকবক না করে চুপ করে থাকো,এই যে এখান দিয়ে দেখো যত সিনারি দেখার,ওতো রিস্ক নিয়ে দেখতে হবে না
.
আহানা মুখ গোমড়া করে হাত ভাঁজ করে সামনের দিকে চেয়ে থাকলো,পুরোটা সময় শান্ত ওকে নড়তেও দেয়নি,জানালা থেকে মনে হয় এক কিলোমিটার দূরে রেখেছে ওকে,জোর করেই
বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেছে
আহানা আজ প্রথম তার শশুড় বাড়িতে শান্তর বউ হিসেবে থাকবে,তার আলাদা একটা ফিলিংস কাজ করতেছে মনের ভেতর
আহানা কার থেকে নামতেই নিতু দৌড়ে আসলো,আহানা ওকে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেছে
শান্ত ও আসতেছে ফোনে কথা বলতে বলতে
আহানা গিয়ে শান্তি রহমানকে সালাম করলো তারপর জড়িয়ে ধরে উনার পাশে গিয়ে বসলো সে
উনার চোখে মুখে হাসি,খুশি আর ধরে না
নিতু সাজেকে তোলা পিক দেখতে চাচ্ছে,শান্ত বললো সে ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে দিলে তারপর দেখতে পারবে
এদিকে রিপা দৌড়ে এসে বললো শান্ত যেন রুমে না ঢুকে
শান্ত থেমে গিয়ে কপাল কুঁচকে তাকালো রিপার দিকে
রিপা দাঁত কেলিয়ে বললো রুমটায় একটা সারপ্রাইজ আছে আর সেটা যেন শান্ত আহানা দুজনে মিলেই দেখে
আহানা তো সারপ্রাইজের কথা শুনে এক পায়ে খাড়া
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো তার রুমের দিকে
আহানাও চললো সেদিকে
শান্ত দরজা খুলতে যেতেই আহানা তার আগে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো”সারপ্রাইজ আগে আমি দেখবো,লেডিস ফার্স্ট,ওকে?”
.
ওকে ম্যাডাম,দেখেন আবার কি না কি রাখছে,সাবধান বোম টোম থাকতে পারে
.
আহানা দরজা খুলতেই হা করলো,কিছু নাই,পুরো রুম অন্ধকার
শান্ত হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকে লাইটটা অন করতেই যা দেখলো তাতে দুজনেই অবাক
পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো
বেলি আর গোলাপ!
আহানা তো ঘুরে ঘুরে দেখতেছে,রিপা শান্ত আর আমার জন্য বাসর সাজিয়েছে??
.
শান্ত মুখটা বাঁকিয়ে বললো”বিয়ের ১৪দিন পর বাসর?হাউ ফানি!”
.
আহানা মুচকি হেসে বিছানায় বসে বললো”আফসোস এবারও আমরা খালি ঝগড়াই করবো,হুদাই বাসর সাজিয়েছে”
.
রাইট!
.
শান্ত আলমারি খুলে একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেছে
আহানা একটু শুতেই ওর মনে হলো শান্ত বলেছিলো তার আলমারিতে তার প্রেমিকার একটা ছবি আছে
দেরি না করে আহানা আলমারির সামনে গিয়ে হাজির হলো,ওয়াসরুমের দিকে একবার তাকিয়ে পরোক করে নিয়ে আলমারিটা খুললো সে
তন্নতন্ন করে সব তাকেই দেখলো কিন্তু জামা ছাড়া আর একটা ফটো ফ্রেম ছাড়া কিছুই পেলো না
ফটো ফ্রেমটায় তার আর শান্তর ছোটবেলার ছবি,আর এটা সে আরও আগে দেখেছে,তাহলে উনার প্রেমিকার ছবি কই,কোথায় লুকিয়ে রাখছে,পাচ্ছি না কেন?
.
শান্ত ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো আহানা ওর আলমারির ভিতরে ঢুকে কি যেন খুঁজতেছে মন দিল লাগিয়ে
শান্তর আর বুঝতে বাকি নেই যে আহানা তার আর তার প্রেমিকার ছবি খুঁজতেছে
শান্ত হালকা হেসে বুকটা ফুলিয়ে রাগী রাগী একটা ভাব নিয়ে আহানাকে এক ধমক দিলো
আহানা ভয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে তারপর বললো”আসলে আমি আমার শাড়ীগুলো কোথায় রাখবো জায়গা করছিলাম,আর কিছু না”
.
বুঝলাম,কিন্তু আমি তো অলরেডি জায়গা করে রেখেছিলাম
.
তাই বুঝি?দেখলাম না তো,আগেই বলতেন এত করে খুঁজতে হতো না আমাকে
.
কি খুঁজতে হতো না?
.
ইয়ে ঐ যে শাড়ী রাখার জায়গা
.
আচ্ছা,যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর কফি নিয়ে আনো আমার জন্য
.
(চাচার বাড়ির আবদার)
.
কিছু বললে?
.
না তো
.
মামার বাড়ির আবদার শুনেছিলাম,চাচার বাড়ির আবদার এই প্রথম শুনলাম
.
আমার বাবা আপনার বাবার বন্ধু ছিলো,ভাই ভাই
তাহলে আপনার চাচাই তো হলো তাই না?
.
বাপরে বাপ!এত হিসাব?
.
বিছানাটা সম্পূর্ণ বেলি ফুলের মালা দিয়ে সাজানো,আহানা একটা মালা ছিঁড়ে সেটা নিয়ে চলে গেছে ওয়াসরুমে
আর শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দার দিকে গেছে
আহানা জাস্ট মুখটা ধুয়ে চুলগুলো আঁছড়িয়ে খোঁপা বেঁধে তাতে বেলি ফুলের মালাটা লাগিয়ে চললো রান্নাঘরের দিকে
মা উপন্যাস পড়ছেন তার রুমে আর নিতু পড়তে বসেছে,রিপা ডিনার প্রস্তুতিতে বুয়াকে হেল্প করছে
আহানা গিয়ে কফি বানাতে লাগতেই রিপা বললো সে বানিয়ে দিবে
আহানা না করে দিলো,কারণ রিপার হাতে অনেক কাজ,মায়ের জন্য আলাদা করে খাবার তৈরি করতে হয়
তেল কম দিয়ে,ঝাল কম দিয়ে,ভর্তা করে আইটেম বানাতে হয় উনার জন্য
আহানা তাই রিপাকে না করে দিয়ে নিজেই কফি বানিয়ে নিলো,তারপর মায়ের জন্য চা বসিয়ে দিয়ে কফিটা নিয়ে গেলো শান্তকে দিয়ে আসতে
শান্ত ল্যাপটপে ভিডিও কলে একটা ক্লাইন্টের সাথে মিটিং করতেছে
আহানা এসে চুপচাপ কফিটা টেবিলের উপর রেখে যেতেই তার আঁচলে টান খেলো
পিছন ফিরে তাকিয়ে সে দেখতে পেলো শান্ত ধরে রেখেছে ওর আঁচলটা অথচ তার চোখ ল্যাপটপের দিকে
আহানা জোরে কথা বললো না কারণ ক্লাইন্ট শুনে ফেলতে পারে তাই ফিসফিস করে বললো”মায়ের জন্য চা বসিয়েছি,আমাকে জ্বালানো অফ করে নিজের চরকায় তেল দেন,স্টুপিড!”
.
শান্ত শুধু বললো”তুমিও খেয়ে নাও,আর বেলি ফুলটা সুন্দর কিন্তু!
.
অত্যন্ত?
.
হুম অত্যন্ত সুন্দর,তবে শুধু ফুলটা😜
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আমার কোনো গুনই আপনার নজরে পড়ে না তাই না?
.
পড়ে বলেই তো বিয়েটা করে নিয়েছি তাও দুবার করে
.
ঢং করতে হবে না,বাই
.
আহানা চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে,মুখে সামান্য হাসি
রিপা একটা খোঁচা দিয়ে বললো”কি ব্যাপার এত হাসি কিসের?আর একটা কথা এত সুন্দর করে বাসর সাজিয়ে দিলাম তুমি এখানে কি করতেছো?”
.
আহানা কানের পিছনে চুলগুলো সরিয়ে বললো”কিসের বাসর,বিয়ের ১৪দিন চলে,এখন এসব বলে লজ্জা দিচ্ছো কেন?”
.
তাই বুঝি?তার মানে বাসর আগেই গেছে?
.
আহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দৌড়ে মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো
মা একটা উপন্যাস পড়তেছিলেন এতক্ষণ,দরজায় নক হওয়ার আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে পাশে তাকালেন
আহানা মুচকি হেসে উনার কাছে এসে বসলো তারপর হাত থেকে বইটা নিয়ে আরেক হাতে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো”নাও খেয়ে বলো দেখি তোমার পুত্রবধূর হাতের চা কেমন?”
.
মা এক চুমুক দিয়ে ব্রুটা নাচিয়ে হেসে দিলেন তারপর আহানার হাতজোড়া ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরালেন
.
চা খাও,ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তো
.
মা মাথা নাড়িয়ে নিজের হাতের থেকে দুজোড়া বালা খুলে আহানার হাতে পরিয়ে দিলেন
.
আহানা নিতে চাইলো না কিন্তু মা তাও জোর করে ওর হাতে পরিয়ে দিলেন
আহানা বালাগুলোর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো,ওজনে অনেক হালকা তবে দেখতে ভারী মনে হয়,পুরোনো ডিজাইনের তবে যে কেউ দেখলে পাগল হয়ে যাবে এরকম সুন্দর বালাটা
মা চা পুরোটা শেষ করে আবারও বইটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে দিলেন
আহানার কাজ শেষ তাই সে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে গেলো,কাপ রেখে এরপর গেলো শান্তকে তার হাতের বালা দেখাতে
শান্ত সবেমাত্র তার মিটিং শেষ করে বিছানায় এসে বসেছে বিছানার উপরের গোলাপের পাপড়ি সরিয়ে টিভি অন করলো সে
আহানা এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো”দেখুন আমার হাতের বালাগুলো,মা দিয়েছে”
.
সুন্দর
.
সুন্দর মানে?আর কিছু না?
.
আর কি?
.
আহানা গিয়ে শান্তর পাশে দপ করে বসে কিছু বলার আগেই ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো
শান্ত ভাবলো আহানা মজা করতেছে,কিছুক্ষন ওর সাড়া শব্দ না পেয়ে পাশে চেয়ে দেখলো আহানা হাত ধরে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আবার বিছানায় ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা গোলাপের পাপড়ি গুলোর দিকে তাকাচ্ছে,শান্ত কিছুই বুঝতে না পেরে ঘুরে ওর দিকে ফিরে বসলো তারপর বললো”কি হয়েছে?”
.
আপনার জানার দরকার নাই,ব্যাথা পাওয়ার ১৪ঘন্টা পর আসে জিজ্ঞেস করতে যে কি হয়েছে
.
ব্যাথা পেয়েছো?কি করে?আমি ভাবলাম মজা করতেছো
.
ব্যাথা নিয়ে মানুষ কেন মজা করবে,বিছানায় গোলাপ একটা ছিলো কাঁটা সমেত
কথাটা বলে আহানা বিছানা থেকে নেমে চলে গেলো
শান্তর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব
তারপর বিছানায় হাত বুলিয়ে একটা গোলাপ পেলো যেটা গোটা তাও কাঁটা যুক্ত
ওহহহ তার মানে এটা দিয়ে ব্যাথা পেয়েছে?সোজাসুজি বললেই হয়,আমি তো টিভি দেখছিলাম আমার এত দিকে খবর আছে?আবার রাগ ও দেখায়,এই মেয়েটা!!
.
আহানা গেস্ট রুমে এসে গাল ফুলিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে আছে
শান্ত পুরো বাড়ি খুঁজেও ওকে না পেয়ে শেষে গেস্ট রুমে এসে দেখলো আহানা রাগ করে বসে আছে
.
এত রাগ আসে কই থেকে?হুম?
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ওলটপালট করলো কিন্তু কিছুই পেলো না তারপর বললো”কই কাটা গেছে?”
.
রক্ত মুছে ফেলেছি,আমি মানুষকে দেখানোর জন্য রাখি না
দরকার নেই কারোর কেয়ার
.
তুমি হুটহাট এত রাগ করো কেন একটু বলোতো?আমার কি দোষ?এভাবে রাগ করে এই রুমে চলে এসেছো!মা জানতে পারলে কি ভাববে?
.
সেটা আপনার ব্যাপার আমার না,আমার সাথে ভালোমতন বিহেভ করলে তো আমি এই রুমে চলে আসতাম না,তাই না?
.
বুঝলাম,এই মেয়ে আমার কোলে উঠার জন্য আর কি কি করবে কে জানে
শান্ত নিজের হাতের কুনুই ধরে নেড়ে চেড়ে আহানার কাছে এসে ওকে বিছানা থেকে তুলে নিলো
.
আহানা গাল ফুলানো বাদ দিয়ে এবার দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো শান্তর মুখের দিকে
শান্ত ভ্রু কুঁচকে বললো”তুমি এত দুষ্টুমি কি করে করতে পারো?আজীবন জ্বালিয়েছো এবার বাকি রয়েছে বিয়ের পরেরটা??
মাই গড!!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছে,মা ওদের দেখে মুচকি হেসে চেয়ে রইলেন,রিপা পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো”আহানা রাগ করেছিলো আর শান্ত স্যার রাগ ভাঙ্গিয়ে এখন মনে হয় নিয়ে যাচ্ছে”
.
মা হাত দিয়ে রিপাকে চুপ থাকতে বলে ওদের দিকে তাকালেন,দুজনেই ওদের একসাথে দেখে অনেক খুশি হলো তারপর যে যার কাজে চলে গেলো
.
আপনাকে কে বলে আমাকে কোলে তুলতে?তারপর আবার খোঁটাও দেন
শান্ত আহানাকে বিছানায় নামিয়ে ওর ঠোঁটজোড়ার মাঝখানে আঙ্গুল দিয়ে বললো”চুপ!এখন চুপচাপ ঘুমাও,অনেক বেশি দুষ্টুমি হইছে তোমার,, আর না,আমার মাথা ভারী করে ফেলেছো তুমি”
.
এখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে,এসময়ে ঘুমাবো?
.
তাহলে বসে বসে কার্টুন দেখো তাও এরকম বাঁদরামো অফ করো
.
বিছানায় বসে গোলাপের কাঁটা দিয়ে চোট পেলাম সেটা কি ইচ্ছে করে করছি আমি?
.
না,সেটা হলে আমি মলম লাগিয়ে দিতাম,বাট তুমি কি করলা তুমি সোজা রাগ করে গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলা
.
আমার সাথে ভালো বিহেভ না করলে এমনটাই করবো আমি তাও শান্তি আম্মুর সামনে,বলে দিলাম
.
আম্মু ও হয়ে গেলো তোমার?সবার আগে উনি আমার মা
.
তো এখন থেকে উনি আমার মা
.
তুমি অতিরিক্ত করো ইদানিং,আমি তোমার আম্মুর কাছে বিচার দিব,তখন দেখিও কি হয়
.
কচু হবে
.
একটু চুপ থাকো প্লিস
.
আহানা মুচকি হেসে শান্তর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে রিমোটটা নিয়ে গোল হয়ে বসলো,তারপর মটু পাতলু দেখায় গভীর মনোযোগ দিলো
শান্ত আহানার ঐ হাসি দেখে ঝগড়া বিবাদ এক পাশে রেখে সেও চেয়ে রইলো কিছুক্ষন
মাঝে মাঝে আহানার হাসির কারন শান্ত বুঝে উঠতে পারে না
ভালোই লাগে তার এই রহস্যমাখা হাসিগুলো
তবে এই হাসির দেখা সে মাঝে মাঝেই পায়,সবসময় না কিন্তু!
.
আহানা কার্টুন দেখতেছে আর শান্ত গালে হাত দিয়ে সাজানো বাসর ঘরটা দেখছে,পৃথিবীতে হয়ত সেই একমাত্র বর যার বউ কিনা বাসর ঘরে বসে কার্টুন দেখতেছে
এটা কে সৌভাগ্য বলবো নাকি দূর্ভাগ্য বলবো?
.
আহানা খিলখিল করে হাসতেছে কার্টুন দেখতে দেখতে
শান্ত হাত ভাঁজ করে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”নাহ এটা আমার সৌভাগ্যই বটে”
.
শান্ত এবার এগিয়ে এসে বিছানায় বসলো অথচ আহানা টের ও পায়নি,তার চোখ টিভির দিকে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার দুপাশে দুহাত রাখতেই আহানা কিছুটা চমকে ওর মুখের দিকে তাকালো
শান্ত কিছুই বললো না,শুধু আহানার কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠে চলে গেলো
আহানা অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,ছেলেটার হলোটা কি?
একবার বকে তো একবার কেয়ার করে,একবার ঝগড়া করে তো একবার আদর করে
আসলেই সে কি করতে চায় আমি বুঝি না
.
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে তার সূর্যমুখী ফুলের বাগানটায় এসেছে,ফুলগুলোর ঠিকমত যত্ন নেয় কিনা মালি সে বিষয়ে তদারকি করতে হয় মাঝে মাঝে
শান্ত ফুলগুলো দেখতে দেখতে একবার উকি দিয়ে তার রুমের ভেতর দিকে তাকালো,বিছানায় আহানা নেই,টিভিও অফ দেখছি,তাহলে গেলো টা কই?
.
আমি এখানে😎
.
শান্ত পিছন ফিরে দেখলো তার একমাত্র বউ গন্ধরাজ ফুল ২টি নিয়ে মাথায় লাগাতে লাগাতে এদিকে আসতেছে
.
কি ব্যাপার?আবার আমার পিছু পিছু চলে এলে,আজ সারাদিনে কি ঝগড়া কম হয়ে গেছিলো?
.
না তো!আমিও একটু বাগানবিলাস করতে এলাম,বলি আপনার মাথায় কি বুদ্ধি নেই,বেছে বেছে সূর্যমুখীর বাগান করতে গেলেন কি জন্যে?আর ফুল নেই দুনিয়ায়?
.
এটা আমার প্রিয় ফুল
.
আর গন্ধরাজ?
.
না সেটা প্রিয় না,মায়ের প্রিয় বলেই বাগানটা করা হয়েছে,তোমার সাথে মায়ের পছন্দ অপছন্দ অনেকাংশই মিলে যায়
.
তাইতো আমি তার পুত্রবধূ হয়েছি
.
এখন যাও রুমে,কি শীত পড়েছে খবর আছে তোমার?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিতেই হাতের ফোনটা বেজে উঠলো,একটা অাননোউন নাম্বার
আহানা কৌতুহলবশত রিসিভ করলো
ওপাশ থেকে একটা বয়স্ক লোকের আওয়াজ ভেসে এসেছে
উনি বললেন”আমার আহানা কেমন আছে?”
.
আহানা চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো,এটা তো মজনু চাচার ভয়েস,আহানা কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এদিক ওদিক তাকালো তারপর বললো”ভালো আছি,আপনি? ”
.
আমি কেমন আছি বা আমাকে তোমার হাসবেন্ড শাহরিয়ার শান্ত কেমন রেখেছে তা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো
.
আহানা চুপ করে থাকলো
.
তা সবই তো পেয়ে গেলে,আমাকে ভুলে গেলে কেন?আমি বুঝি সম্পর্কে তোমার কিছু লাগি না?
.
চাচা আমি কি সেটা বলেছি একবারও?
.
সে যাই হোক একটা কথা শুনে রাখো এত শত সুখ তোমার আর তোমার মায়ের কপালে ঠিক কতদিন টিকে সেটা আমিও দেখবো বুঝলে?
তোমাদের সেফ করার জন্য যিনি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সে ঠিক কতদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে আমিও দেখবো
কার চালিয়ে অনেকেই মারা যায়,দেখো আবার!
তোমার বাবা,তোমার বাবার একমাত্র বন্ধু মারা গেলো,তোমার মা তোমার শান্তি আন্টি বিধবা হলেন
কে জানে বংশের ধারা তুমি পেয়ে বসো নাকি,তুমিও বিধবা হও নাকি,কি আছে তোমার কপালে কে জানে
.
কলটা কেটে গেলো
.
আহানা হাত থেকে ফোনটা ছেড়ে দিয়ে পিছন ফিরে তাকালো,শান্ত সূর্যমুখী ফুল গাছের গোড়ায় মাটি দিতেছে বালতি করে এনে
আহানা দৌড়ে সেদিকে গেলো,শান্ত বালতিটা নিচে রেখে রেগে রেগে বললো”তুমি এখনও রুমে যাও নাই,আবার আসছো কি জন্যে?যাও ভিতরে”
.
আহানা কেঁদে দিলো হঠাৎ তারপর শান্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে
শান্ত বুঝছে না আহানা কেন এত করে কাঁদতেছে
আহানা শান্তর গায়ের টিশার্টটা টেনে ধরে ওকে আরও ঝাপটে ধরলো
শান্ত আহানার মাথায় হাত দিয়ে বললো”আহানা?কি হয়েছে তোমার??এভাবে কাঁদতেসো কেন?কেউ কিছু বলেছে?আমাকে বলো,আহানা?”
.
আপনি প্লিস আর কার চালাবেন না কোনোদিন,কারে উঠতেও হবে না
.
কেন?কি হবে?
.
না আমি চাই না আপনাকে হারাতে,একবার প্রিয় মানুষের হারিয়ে যাওয়াতে অনেক কষ্টের মুখে পড়তে হয়েছিলো আমাকে
আমি আর চাই না,আর সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই শান্ত
আপনি প্লিস আর কোনোদিন কার চালাবেন না আমাকে কথা দিন”
.
এটা কেমন কথা,কি হলো সেটা তো বলো,আর এভাবে কাঁদতেসোই বা কেন?
.
আহানা কান্নার জন্য কিছু বলে উঠতে পারছে না,বারবার চোখের সামনে ভাসতেছে বাবার লাশের সেই মর্মান্তিক ছবিটা
যতবার ছবিটা আরও সামনে আসতেছে ততবারই আহানা শান্তকে আরও শক্ত করে ধরতেছে
.
শান্ত এবার আহানার দুকাঁধ ধরে ওকে বুক থেকে সরিয়ে সামনে এনে দাঁড় করালো
তারপর ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”কি হয়েছে ক্লিয়ার করে বলো,আর কান্না করা বন্ধ দাও”
.
আপনি প্লিস আমার এই কথাটা রাখুন,কখনও কিছু চাইবো না আপনার থেকে
.
তার আগে আমাকে কারণটা জানতে হবে,তুমি খোলসা করে বলো আমাকে,আগে কান্না থামাও
.
শান্ত হাত দিয়ে আহনার চোখ মুছে দিয়ে ওকে নিয়ে বাগানের একপাশে থাকা চেয়ারে এনে বসালো
.
তারপর সে আহনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো “হুম এবার বলো কি হয়েছে”
.
আসলে মজনু চাচার ফোন এসেছিলো আর উনি আমাকে হুমকি দিয়েছেন,আপনার কোনো ক্ষতি করবে এই নিয়ে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আর তুমি সেটা বিশ্বাস করে বাচ্চাদের মতন এতক্ষণ ধরে কাঁদতেছিলা??
তুমি আসলেই একটা বোকা মেয়ে,আরে মজনুরে আমি কবেই ডোজ খাওয়াইসি এখন নাহয় আরেকটা ডোজ খাইয়ে দিব
এখন কান্না থামিয়ে সব ভুলে যাও রুমে,আমি কিছুক্ষণ পর আসতেছি
.
আহানাও চুপচাপ চেয়ার থেকে উঠে বাসার ভেতর চলে আসলো,মা সোফায় বসে টিভি দেখতেছিলেন,আহানাকে দেখে মুচকি হাসলেন তবে ওর ফ্যাকাসে মুখটা দেখে উনার মুখটাও ছোট হয়ে গেলো,আহানাকে হাত দিয়ে নিজের দিকে ডাকলেন তিনি
আহানা এসে উনার পাশে বসলো,তারপর হঠাৎ করে উনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সোফায়,আজ তার মা থাকলে হয়ত এটাই করতো সে
শান্তি রহমানকে তো সে তার মায়ের মতই ভাবে
শান্তি রহমান ভাবলেন হয়ত শান্তর সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই মুখটা ওমন ফ্যাকাসে করে রেখেছে আহানা
শান্ত আরেক বালতি মাটি এনে গাছের গোড়ায় দিলো,মজনু চাচা কি বললো না বললো তা সে একদমই মাথায় নেয়নি,এরকম হুমকি বিজন্যাস লাইফে সবাইকেই পেতে হয়
আর শান্ত এমন হুমকি এর আগেও পেয়েছে তাই ব্যাপারটা তার কাছে স্বাভাবিক,আহানা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছে,ঐ মজনু আমার কিছু করতে পারবে না বরং ওর ঠ্যাং ভেঙ্গে আমি ওর হাতে ধরিয়ে দিব
গাছগুলোকে পারফেক্টলি সেট করে দিয়েছি আর কোনো কাজ নেই এবার আমি যাই
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো,৮টা বেজে গেছে,এখন আপাতত অফিসের কিছু কাজ করবো ডিনার টাইম অবদি
শান্ত বাসায় ঢুকতেই দেখলো আহানা সোফায় মায়ের কোলে মাথা রেখে চুপ করে টিভির দিকে চেয়ে আছে
.
ওমা একি!
.
আহানা উঠে বসে শান্তর দিকে এমন করে তাকালো যেন শান্ত কোনো বিপদ থেকে বেঁচে এসেছে
.
শান্ত আর কিছু না বলে তার রুমের দিকে চলে গেলো
আহানা উঠে গিয়ে শান্তি রহমানকে বললো তার কিছু কাজ আছে
তারপর রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে সেটা নিয়ে শান্তর রুমের দিকে গেলো সে
শান্ত বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে মনযোগ দিয়ে
আহানা ওর দিকে কফিটা বাড়িয়ে ধরে বললো”কাল অফিসে যাবেন?”
.
একটা ডিলের কাগজপত্র চেক করতে করতে শান্ত বললো”হুম যাব তো”
.
ওহ
.
শান্ত আহানার হাত থেকে কফির মগটা নিতে নিতে একবার ওর মুখের অবস্থা বুঝে নিলো তারপর বললো”কেন?তোমার কিছু লাগবে?”
.
না,কিছু লাগবে না
.
কথাটা বলে আহানা বিছানার আরেক পাশে এসে বসে রইলো থ হয়ে
কিসব নিয়ে খুব ভাবতেছে সে
তারপর একবার শান্তর মুখের দিকে অহসায়ের মতন চেয়ে রইলো
এই লোকটার প্রতি আজ খুব কেয়ার আসতেছে,আজকে এই সংবাদ শুনে মনে হলো আমার কলিজায় কেউ আঘাত দেওয়ার কথা জানালো
আসলেই কি সে আমার এত আপন?
যাকে ছুঁয়ে দেখলাম না সে এক মূহুর্তেই আমার জীবনের সবটা হয়ে গেলো?
আহানা কথাগুলো ভাবছে আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরে যাচ্ছে অনবরত
শান্ত কফি খেতে খেতে একবার আহানার দিকে তাকালো,তাকাতেই আহানা আরেকদিকে মুখটা ঘুরিয়ে চোখগুলো মুছে ফেললো
.
শান্ত আহানার হাত টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”তুমি আবারও ওসব ভাবছো?আরে আমার কিছু হবে না,আর বাবা আর আয়াত আঙ্কেলের এক্সিডেন্টটা একটা ইন্সিডেন্ট ছিলো,আমার সাথে সেমটা ঘটবে কি করে?
কেউ তো আর জেনে শুনে…..
এক মিনিট!
পুলিশ আমাদের বলেছিলো বাবার কারটার ড্রাইভিং সিটে কিছু গণ্ডগোল পেয়েছিলো তারা আর সেটা শত্রুতাও হতে পারে আবার ন্যাচারালি ও হতে পারে
আমরা তখন সেটা ন্যাচারালি ভেবেছিলাম ঘটনাটাকে কারণ তখন বাবার কোনো শত্রু ছিলো না
.
আহানা সোজা হয়ে বসে বললো”কিন্তু আমার বাবার ছিলো”
.
মানে.?কে?
.
মজনু চাচা হতে পারে,উনি বাবার কাছে বারবার বলেছিলেন আমার নামে সম্পত্তি না দিয়ে তার নামে করে দিতে আর বাবা সেটা করেনি বলে এই নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে তাদের মাঝে
.
তার মানে বিষয়টা এবার পরিষ্কার!শত্রুতার জেরে আর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্যই তোমার মজনু চাচা এত বড় খেল খেললো আর সেটা প্রকাশিত হলো এই ৭টা বছর বাদে
আমাদের তখনি বিষয়টা ভালো করে ধরা উচিত ছিলো,কেন ধরলাম না আমি!
তখন এক হাতে নিতুকে সামলিয়েছি আরেক হাতে মাকে
মায়ের জবান বন্ধ হয়ে যাওয়া, মা স্থায়ী প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া,তোমাদের লাপাত্তা হওয়া এসবের ভিতরে আমার মাথায় একদমই ছিলো না যে বাবার আর আয়াত আঙ্কেলের কার এক্সিডেন্টে মরে যাওয়ার পিছনে তোমার মজনু চাচার হাত থাকতে পারে বা অন্য কোনো শত্রু!!
.
শান্ত মাথার চুলগুলো টানতে টানতে বললো”কেন আমি তখন সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারলাম না,কেন!!”
.
আহানা চুপ করে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে শান্তি রহমানের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো
উনি বিছানায় শুয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে
আহানা রুমটার ভিতরে প্রবেশ করলো
পুরো রুম জুড়ে শান্ত আর তার বাবার ছবি,আহানার মনে হলো তার বাবার শত্রুর জন্য তার বাবা আর রিয়াদ আঙ্কেল মারা গেছে
শুধুমাত্র তার বাবার শত্রুর জন্য শান্তদের পরিবারটা ভেঙ্গে গেলো
নিতু তার বাবাকে হারালো,শান্তি আন্টি তার এত সুখের সংসারকে এভাবে কাঁচের মতন ভেঙ্গে যেতে দেখে অবশ হয়ে গেলেন
এই সব কিছুর দায় আহানার পরিবারের
আহানার পরিবারের সাথে শান্তদের পরিবারের যোগাযোগই যদি না থাকতো আজ শান্তর বাবা অন্তত বেঁচে থাকতেন,উনার তো কোনো দোষ ছিলো না
আমার বাবার ও দোষ ছিলো না কিন্তু বাবার শত্রু তার সাথে সাথে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটাকেও মেরে ফেললো
.
আহানার বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে,শান্তর বাবার হাসি মাখা মুখ আর তার বাবার হাসিমাখা মুখের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখে তার আরও কষ্ট হচ্ছে
কেন তারা শাস্তি পেলো, যেখানে তাদের কোনো দোষ ছিলো না
শান্তর ও তো দোষ নেই,ও তো আমার বাবার অবর্তমানে আমার আর মায়ের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে
মজনু চাচা যদি আমার শান্তর কোনো ক্ষতি করে ফেলে?
আমি তো বেঁচে থাকতে পারবো না,আমি কি করে বাঁচবো
একবার বাবাকে হারিয়েছি,এখন আবার….
না এটা হতে পারে না,আমি উনাকে কিছুতেই মরণবাহনে চড়তে দেবো না,ঐ কারে তাকে আমি উঠতে দিব না
আমার মা জানতো না তার আশেপাশে এমন শত্রু আছে যে তার সব সুখ কেড়ে নেবে
কিন্তু আমি তো জানলাম আজ,তাহলে আমি জেনেশুনে এই ভুল করতে পারি না
আহানা পিছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে শান্তর রুমের দিকে যেতে নিতেই থেমে গেলো বাইরে থাকা শান্তর কারটা দেখে
তারপর কারের কাছে এসে দাঁড়ালো সে
বাগান থেকে একটা পেরেক খুঁজে নিয়ে টায়ার পাঞ্চার করে তারপর বাসায় ফিরলো আহানা
শান্তকে কোনোমতেই কারে চড়ে অফিসে যেতে দেবে না সে
তারপর হঠাৎ মনে হলো যদি অন্য উপায়ে মজনু চাচা উনার ক্ষতি করার চেষ্টা করে?তখন আমি কি করবো?
.
শান্ত মিঃলোকমানের সাথে কথা বলতেছে যিনি ৭বছর আগে শান্তর বাবার কার এক্সিডেন্টের সময় তদারকি করতে এসেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন এটা ৬০% মানুষকৃত মার্ডার হওয়ার সম্ভাবনা ময় একটি কেস
.
মিঃলোকমান শান্তর কথা শুনে বললেন”আমি তো আগেই বলেছিলাম এটা একটা ইন্সিডেন্ট ছিলো না,এটা একটা মার্ডার কেস ছিলো”
.
এখন কি কোনোভাবে কেসটা আবার খাড়া করা যেতে পারে?
.
কিভাবে? সেই কারটা তো এখন নেই,আপনার বাবার লাশটাও তো কবর দেওয়া হয়েছে বিগত ৭বছর হয়ে গেছে,ময়নাতদন্ত একদমই পসিবল না
আপনারা তখনই কঠোরভাবে কেসটা হ্যান্ডেল করলে হয়তবা কেসটার আসল রহস্য বেরিয়ে আসতো
.
আমি এখন কি করবো,আমার মনে হলো এই বিষয়টা তাই ফোন করলাম
.
আচ্ছা আমি দেখি কি করা যায়
.
শান্ত ফোন রেখে পিছন ফিরতেই দেখলো আহানা হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারপর সে এগিয়ে এসে বললো”পুলিশ কি জানালো?”
.
ঠিক করে বলতে পারছে না আদৌ কেসটা রিওপেন করা যাবে কি যাবে না,তা হঠাৎ এত খাতিরদারি করছো?শরীর খারাপ নাকি তোমার?
.
আহানা গ্লাসটা শান্তর হাতে দিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো”নাহ শরীর খারাপ নয়,তবে মন খারাপ”
.
কারণটা জানি তাই কিছু বলছি না,কারণ তুমি শুধু শুধু এত চিন্তা করতেছো,ঐ মজনু আমার কিছু করতে পারবে না বুঝলে?
.
আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি কিছু?চুপচাপ বসে থাকেন এখানে,এশার নামাজ পড়েছেন? গিয়ে পড়ে আসেন
.
শান্ত গেলো নামাজ পড়তে
আহানা শান্তর শোয়ার জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেললো,কেন জানি মনে সংশয় হয় উনাকে হারানোর,আর কখনও ঝগড়া করবো না উনার সাথে,ভালোমতন চলবো এখন থেকে
.
আহানা বিছানায় থাকা ফুলগুলোর দিকে চেয়ে আবারও কেঁদে ফেললো
উনার সাথে এখনও ভালোবাসার মূহুর্ত গুলোই কাটালাম না তার আগেই এই দিন দেখতে হচ্ছে আমাকে
.
শান্ত নামাজ পড়ে এসে দেখলো আহানা বিছানা থেকে ফুল নিয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতেছে
.
একি কি করতেসো??এমন করো কেন?কি হলো আবার
.
কিছু হয়নি তো,ঘুমাবেন তাই বিছানা ক্লিন করছি আর কিছু না
.
শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে ওকে আটকালো
.
আহানা ছলছল চোখে চেয়ে থেকে আবারও শান্তর বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো
শান্ত ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো”আরে বোকা মেয়েরে!এতদিন আঁচল কোমড়ে গুজে লড়াই করতা আর আজ কিনা কার না কার হুমকিতে তোমার চোখের পানি থামছেই না?আমাকে এত ভালোবাসো?”
.
আহানা মাথাটা উঠিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো”ককককককে?কে ভালোবাসে আপনাকে? আমি তো বাসি না,এমনিতেই আমার বর আপনি,আপনার কিছু হলে আমি বিধবা হবো তাই কাঁদতেছি,ভালোবাসি কে বললো?
আপনাকে ভালোবাসা যায়??আজ পর্যন্ত আপনাতে প্রেমে পড়ার মতন আহামরি কিছু করেছেন আপনি?বলতে এসেছে আমি নাকি উনাকে ভালোবাসি
কচু বাসি
.
আচ্ছা বাসো তো,ভালো না হোক কচু বাসো ওটাতেই চলবে
এখন আসো ডিনার করবো
.
আহানা চোখের পানি মুছতে মুছতে শান্তর পিছু পিছু আসলো
মা আর নিতু এসে ডাইনিংয়ে বসেছে
আহানা শান্তর পাশে বসলো আজ,নিজ হাতে সব সার্ভ ও করে দিচ্ছে,মা তো এসব দেখে মহাখুশি আর শান্ত সে তো গালে হাত দিয়ে আহানার বদলে যাওয়া দেখছে
যাক মজনু চাচা আমার একটা হেল্প তো করলো জীবনে
আর সেটা হলো আমার ধানিলঙ্কা বউকে সে এখন গোলাপজাম বানিয়ে দিয়েছে,খালি মিষ্টি আর মিষ্টি
ঝাল লাগেই না
তবে ধানিলঙ্কা ফ্লেভারকে মিস করতেছি অনেক,এখন একটু তেজি হলে ডিনারটা জমতো,কেন জানি সব শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে আমার
.
শান্ত টেবিলের নিচ দিয়ে আহানার শাড়ীর আঁচল নিয়ে টানতে লাগলো
আহানা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও না বুঝার ভান করে খাচ্ছে আর নিতুর সাথে কথা বলতেছে
শান্ত যখন দেখলো তার আঁচল টানাতে আহানার বিন্দু মাত্র নড়চড় হলো না তখন সে আহানার কোমড়টা ঝাপটে ধরে এক চামচ সুপ মুখে দিলো
আহানা চোখ বড় করে এবার শান্তর দিকে তাকালো
এমনিতেও মন মেজাজ ভালো না তার উপর এমন একটা সিচুয়েশনে এই লোকটা আমার মেজাজ আরও বিগড়ানোর পিছনে উঠে পড়ে লেগে আছে,হাতের চড় একটা খাওয়ার জন্য এমন করতেছে যা বুঝলাম
মন চাচ্ছে এক চড় মেরে সাদা গালটা লাল করে দিতে কিন্তু নাহ,সামনে আমার শাশুড়ি আর ননদ বসে আছে এদের সামনে এদের কলিজার টুকরাকে টোকা দিলে পরে আমাকে এই বাড়ি ছাড়তে হবে
এরে তো আমি রুমে গিয়ে বুঝাবো যে আহানা একটু কেয়ার করে মানে এই না যে তোমার বাঁদরামিতে চুপ করে থাকবে
এমন মার মারবো না আজ সারারাত খুব ভালো ঘুম হবে কারন কান্নার পরের ঘুমটা ভালো হয়
এমন মারবো যে কাঁদতে কাঁদতে তুমি ঘুমাই যাবা মিঃআউলাঝাউলা!!
.
শান্ত আড় চোখে আহানার দিকে তাকিয়ে যা বুঝলো আহানা মনে মনে তাকে গিলে খাচ্ছে
কি যা তা বলছে সে জানে,বাট আমার মনে হচ্ছে বিশ্রী ভাষায় গালি দিচ্ছে আমাকে,কারণ হাতের কাঁটাচামচটাকে উপর করে ধরে চিকেন লেগপিসে বারবার ছিদ্র করছে মনে হয় লেগ পিসটাকে আমি মনে করে এমন সাঁটাচ্ছে
রুমে গেলে কি হাল করবে কে জানে
কি এমন করছি?জাস্ট কোমড়ই তো ধরেছি
ওর কোমড় ধরলে এরকম তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে কেন সেটা বুঝে উঠতে পারি না আমি
খাওয়া শেষে মা এবার সোফায় এসে বসে খবর চালু করলেন
আহানা তার পাশে এসে বসলো,সাথে সাথে শান্ত ও ওর পাশে এসে বসে পড়লো
অথচ এসময়ে জীবনেও শান্ত টিভি দেখে না
সবসময় সে ডিনার করে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করে রাত ১পর্যন্ত
আহানাও অবাক সাথে মা ও অবাক
মা টিভি মনযোগ দিয়ে দেখছেন,আহানাও মনযোগ দিয়েছিলো তবে শান্তর উৎপাতে এখন সে টিভিতে ভালোমতন মনযোগটা দিতে পারছে না
শান্ত ওর পিঠের উপর দিয়ে হাত নিয়ে সোফায় রেখেছে
হাতের এবং হাতে থাকা মোটা ঘড়িটার খোঁচায় আহানার অস্বস্তিকর লাগছে
উঠতে গিয়েও পারছে না
শান্ত ওর শাড়ীর আঁচলের উপর বসেছে একেবারে,আজ শান্তর কপালে কি ঝাড়ি আছে তার একটু একটু ইঙ্গিত শান্ত পাচ্ছে আহানার চোখের আগুন দেখে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে