প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
2422

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে এক পা এক পা করে
কিছুদূর পিছিয়ে যেতেই কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো,আহানা মনে হয় ভয়ে এবার মরেই যাবে,না জানি রামিমের মা নাকি ফুফু এসে পড়েছেন!
চোখ বড় করে পিছন ফিরতেই আহানা দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছে
কালো রঙের জ্যাকেট পরা একজন সুদর্শন পুরুষ,এবং তার চোখ মাটিতে মরার মতন পড়ে থাকা রামিমের উপর
.
আপনি??এখানে?আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম
.
আরে আসলাম দেখতে তুমি ঠিকমত বিয়ে ভাঙ্গতে পারো কিনা সেটা দেখার জন্য
তুমি না বলেছিলে জাস্ট গায়ে ঢালবা জুস??তাহলে?
দেখে তো মনে হচ্ছে জুসটা তার পেটে গেছে
.
আরে ঐ গাধাটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পুরোটা গিলে ফেলেছে, আমি কি করবো?ওর মা আর ফুফু বাসার ভেতর,এখন এরে কি করা যায়
.
ওয়েট দেখতেছি মরে গেছে নাকি সেন্সলেস
.
শান্ত হাঁটু গেড়ে নিচে বসে রামিমের হাত নিয়ে নাড়ি চেক করলো,সব ঠিকঠাক তার মানে সেন্সলেস হয়েছে
আহানা শাড়ীর আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বারবার
আর শুধু বাগানে হাঁটা হাঁটি করছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না
এদিকে শান্ত রামিমের চশমা নিয়ে ফান করতেছে
আহানা বিরক্ত হয়ে বললো”সমস্যার সমাধান না করে আপনি মজা করতেছেন?এর জ্ঞান ফিরাবো কি করে?আজব!”
.
আরে মরে নাই তো,এমনিতেই জ্ঞান ফিরবে,ওয়েট করো একটু
.
আহানা ওয়েট করার ধৈর্য পাচ্ছে না,শেষে চেয়ার টেনে বসে গালে হাত দিয়ে রামিমের দিকে চেয়ে রইলো তারপর বললো”আহারে বলদটা!!!ওর তো কোনো দোষ নেই”
.
শান্ত অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো”দোষ নেই মানে?তোমার কি দরদ হচ্ছে নাকি ওর প্রতি?”
.
আহানা মুখটা বাঁকিয়ে বললো”এই কেয়ামতের সময় আপনার জেলাসি ফিল হচ্ছে?আর সময় পেলেন না?যাই হোক এটা বলেন শান্তি আন্টি কিছু রিয়েকশান দেখালো?”
.
সেই আরেক বিপদ,মা ভেবে নিয়েছে আমি বিয়ে তো করেছি বাট অন্য একটা মেয়েকে,তোমাকে না,তাই তো আমার দিকে তাকাচ্ছেও না,মুখে কিছু তুলছেও না,আমি তাই আসলাম তোমাকে আর আন্টিকে নিয়ে যেতে
.
আপনি বলেন নাই আমার সাথে বিয়ে হয়েছে আপনার?
.
আরে ধুর!মা তো দরজা বন্ধ করে ফেলেছে,আর মিউজিক প্লেয়ারে ভজন চালু করছে,আমি একশোবার “আহানাকে বিয়ে করেছি” কথাটা রিপিট করেছি,না মা শুনেছে!!!না নিতু শুনেছে,না রিপা শুনেছে
.
রাগ হলে মানুষ ভজন শোনে?
.
আমার মা আগে নানারকম গান শুনতো,এ কয় বছর ভজন শোনে
.
আচ্ছা,তো আমরা গেলে তখনও যদি ভজনই শুনতে থাকেন তখন কি হবে?
.
আরে ততক্ষণে ভজন অফ হবে সমস্যা নাই,দেখো দেখো রামিম নড়তেছে
.
আহানা নড়েচড়ে বসলো
.
রামিম চোখ ডলে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”কে আপনি?আহানা উনি কে??জুসটা খাওয়ার পর কি হয়েছিলো?
.
শান্ত জ্যাকেটটা টেনে আহানার দিকে তাকালো তারপর রামিমের দিকে চেয়ে বললো”শুনো রামিম ভাই!আমরা বিবাহিত, বুঝছো??তুমি ওকে বিয়ে করবা না ব্যস”
.
হ্যাঁ,উনাকে আমি এমনিতেও বিয়ে করবো না,জাস্ট দেখতে এসেছিলাম আর আজকেই আমাকে কাঁচামরিচের জুস খাওয়ালো,আমি তো মায়ের কাছে বিচার দিব এই মেয়ের নামে,ইরিটিয়েট
.
আহানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো”কি বললি?আমি ইরিটিয়েট??তুই যে বলদ সেটা জানিস তুই?তোরে কে বিয়ে করবে?তুই আহানার হাতের তৈরি কিছু খেয়েছিস এটাও তোর ভাগ্য,চশমা আলা বলদা কোথাকার,যা বের হ আমার বাসা থেকে,বান্দর হয়ে মুক্তার মালা গলায় দেবে,সাধ কত!”
.
রামিম চশমা পরতে পরতে বললো”তুমি কি জানো?তুমি একটা শাঁকচুন্নি! তোমার এই স্বামী তোমাকে কালই ডিভোর্স দিবে”
.
আহানা রেগে গ্লাসে যেটুকু জুস তলায় অবশিষ্ট ছিলো সেটা নিয়ে রামিমের মুখে মেরে দিয়ে বললো”বের হবি নাকি মরিচ ডলে তোকে বের করবো?
ভবিষ্যতে আমার আর শান্তর বাচ্চা যতগুলা হবে তোরে ফোন দিয়ে দিয়ে জানাবো আমি মনে রাখিস,এখন বের হ আমার বাসা থেকে,নাহলে চেয়ারপেটা করে বের করবো
.
শান্ত আহানার গালিগালাজ শুনতে শুনতে হাসতেছে এক পাশে দাঁড়িয়ে
রামিম শান্তর সামনে গিয়ে বললো”ভাই,আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইউর ফিলিংস,এরকম একটা মেয়েকে বিয়ে করে তোমার জীবন যে তেজপাতা,সরি পাঁচফোড়ন হয়ে গেছে আমি তা বুঝতেছি,তোমার সাথেও তো এমন করে তাই না?আহারে,পিটি অন ইউ!!পারলে এরে ছাইড়া দিওও,বেঁচে যাবা
.
আহানা চেয়ার হাতে নিলো ছুঁড়ে মারার জন্য
শান্ত হেসে বললো”ভাই!আহানা ট্যারাব্যাকা হোক,তবুও আমার”
.
আহানা চেয়ারটা রেখে দিয়ে গালে হাত দিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে বললো”এত প্রেম!”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”খুশিতে এত ফুলতে হবে না,একটা কথা তো বলতে ভুলেই গেসি রামিমকে,তুমি আসলেই আমাকে জ্বালাও”
.
হুহ!আমি বুঝি আপনার জ্বালানো সহ্য করি না??অন্য কেউ হলে কবেই ছেড়ে চলে যেতো
.
আমার মা বিয়ের ৮বছর পরে এই কথা বাবাকে বলেছিলো আমার মনে আছে,আর তুমি কিনা বিয়ের ১সপ্তাহ না হতেই বলে দিলা আমাকে?
.
যাক গে,চলুন মায়ের কাছে যাই
.
আহানা আর শান্ত বাসার ভিতর আসতে আসতে দেখলো রামিম আর তার মা,ফুফু চলে যাচ্ছেন
মা হন্তদন্ত করে এসে বললেন”রামিম কিছু না বলেই সবাইকে নিয়ে কেন চলে যাচ্ছে
একি শান্ত?? কখন এলে?”
.
আন্টি আমার সাথে চলুন,একটা সমস্যা হয়েছে,মা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে
.
ওমা সেকি,কি হয়েছে আবার?
.
চলুন প্লিস
.
আহানা আর ওর মাকে নিয়ে শান্ত তাদের বাসায় ফিরে আসলো
মা দরজা খুলেছেন,রিপা তাকে কিছু খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতেছে বারবার,তিনি শুনতেছেন না,চুপচাপ টিভি দেখতেছেন
আহানার মা উনার পাশে এসে বসে বললেন”কি হয়েছে বুবু?তুমি নাকি খাওয়া দাওয়া করছো না,কি হয়েছে আমাকে বলো,সব ঠিক আছে তো?”
.
শান্তি রহমান রাগী রাগী চোখে শান্তর দিকে তাকালেন
শান্ত আহানার হাত ধরে ওদের দুজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর বুকটা ফুলিয়ে বললো”মা শুনো,আমি যাকে বিয়ে করেছি সে আর কেউ না,সে আহানা”
.
কথাটা শুনে শান্তি রহমান আর আহানার মা চোখ বড় করে তাকালেন
আহানা তো ভয়ে কাঁপতেছে, কি হবে কে জানে,ধুমধাম কিছু তো হবে, না জানি বাড়ি থেকে বের করে দেয় আমাদের
.
আহানার মা সোফা থেকে উঠে আহানার সামনে এসে বললো”কিরে?শান্ত এসব কি বলছে?তোরা বিয়ে করেছিস?কবে?কখন?কোথায়?
.
আহানা বোকার মতন চেয়ে থেকে বললো”৫/৬দিন আগে”
.
আমাদের না জানিয়ে কেন করেছিস?আমাদের বললে কি আমরা বাধা দিতাম?
.
আসলে আন্টি একটা সিচুয়েশনে পড়ে তৎক্ষনাৎ বিয়ে করতে হয়েছিলো,জানানোর সুযোগ ছিল না তখন
.
সেটা তো বুঝলাম,তা এতদিন কেন লুকিয়ে রেখেছো তোমরা?বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন এত লুকোচুরির কি আছে?
.
ভাবলাম তোমরা রাগ করবা!
.
আহানার মা আবার গিয়ে বুবুর পাশে বসে পড়লেন,দুজনে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে
নিতু কোথা থেকে দৌড়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরে ঘুরতে ঘুরতে বললো”ও আপু এখন থেকে তুমি আমার ভাবী,ইয়ে”
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করতেছে এবার কি হবে
.
শান্ত ও চুপচাপ দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
শান্তি রহমান নিজের হুইল চেয়ার নিজে চালাতে চালাতে আহানার মাকে সাথে করে রুমে চলে গেলেন,দরজাও লাগালেন
আহানা আর শান্ত সোফায় বসে অপেক্ষা করছে নেক্সট বিস্ফোরকের
কি হতে যাচ্ছে,টানটান উত্তেজনা,কোন দল জিতবে!
.
আহানা কপাল কুঁচকে শান্তর গায়ে দুম করে কিল বসিয়ে বললো”আপনার কারণে হয়েছে সব”
.
মানে?আমি কি করসি?
.
আপনাকে কে বলছিলো আমাকে জোর করে বিয়ে করতে?কই রতন আর সাইমন তো ধাওয়া করতে আসলো না
.
যেদিন আসবে সেদিন বুঝবা,চুপ থাকো এখন,কি হতে পারে এখন সেটা ভাবো আপাতত,বিয়ে তো হয়েই গেছে এখন এসব বলে লাভ আছে?
.
লাভ আছে মানে?এমন ভাবে বলতেছেন যেন আমি বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করেন,নিজে জোর করে বিয়ে করে এখন দোষ দিচ্ছে আমাকে
.
শান্ত আহানার আঁচল ধরে টান দিয়ে বললো”একটু চুপ থাকতে পারো না,অলটাইম তোমাকে ঝগড়া করতে হবে?এমনি থাকা যায় না?
.
না যায় না,আপনি নিজের দোষ স্বীকার কেন করছেন না
.
করবো কেন যেখানে আমার কোনো দোষই নাই
.
ও তাহলে দোষ আমার??আমি বলেছিলাম প্লিস শান্ত মেরি মি,প্লিস!

তুমি থামবা নাকি মুখে কসটিভ লাগাবো তোমার?
.
আমার সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়া না করে ভাবুন আন্টিকে সামলাবেন কি করে
.
সেটাই তো ভাবতেছি,তুমি তো ভাবতেও দিচ্ছো না,কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতেছো সেই কখন থেকে
.
রিপা এসে চা দু কাপ দিয়ে চলে গেলো
শান্ত চা পেয়ে সাথে সাথে কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো
.
একটা কথা বলুন তো!আপনি কি ঐদিন ক্লাবে বলেছিলেন”আহানা শুধু আমার?”
.
কথাটা শুনে শান্তর কাশি উঠে গেছে,কাশতে কাশতে বললো”নিজেকে কি মনে করো?আমি এটা বলবো?জীবনেও না,আমি তো তোমাকে লাইক ও করি না তাহলে তুমি এটা ভাবলা কি করে,আবার জিজ্ঞেস ও করতেছো”
.
হুম,আমিও তো তাই ভাবতেছি,নওমি আপুর এই কথায় আমি বিশ্বাস করিনি
.
হুম,বিশ্বাস করার হলে তো করবা

আহানা মা আর শান্তর মা অনবরত হাসতেছেন
হাই ফাইভ দিতেছেন একজন আরেকজনকে,কি খুশি তারা আজ
লুকিয়ে হলেও বিয়েটা অন্তত শান্ত আহানা করে নিয়েছে এই ভেবে তারা তো মহা খুশি
তারা তো জাস্ট ওদের মিলানোর জন্য আরেক জায়গায় বিয়ের কথা উঠিয়েছিলো এর ভিতর ওরা যে বিয়ে করে নেবে তা কল্পনার বাইরে ছিলো
যাই হোক যা করেছে একদম ঠিক করেছে,অবশেষে আমাদের প্ল্যান সফল হলো,তা বুবু এবার কি করবো?
.
শান্তি রহমান হেসে দুহাত এক করে দেখালেন
.
বুবু আমি বলি কি,ওদের তো বিয়ে হয়েছে তাহলে না হয় বৌভাতের অনুষ্ঠানটা আমরা ধুমধাম করে দিয়ে দিই?
.
শান্তি রহমান মাথা নাড়ালেন
.
দরজা খুললো রুমের,দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে শান্ত আর আহানা দাঁড়িয়ে পড়লো সোফা থেকে উঠে
আহানার মা এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বললেন”শুনো তোমরা দুজন!যেহেতু বিয়েটা করেই ফেলছো আমি আর বুবু মিলে ঠিক করেছি তোমাদের বৌভাতটা ধুমধাম করে হবে,কি বলো?”
.
শান্ত আর আহানা তো রীতিমত শকড,তারা সব নেগেটিভ ভেবেছিলো এতক্ষণ আর এখন তো দেখি পজিটিভ রেসাল্ট
আহানা হেসে দিলো কিন্তু শান্ত হাসলো না,সোজা খাবারের প্লেটটা নিয়ে মায়ের রুমের দিকে গেলো
তার মা আজ সারাদিন কিছু মুখে তুলেননি,আগে সেসব
.
আহানার মা আহানার কান টেনে বললেন”ভিতরে ভিতরে এতদূর??? আর কি করেছিস??”
.
না কিছু করিনি আর
.
তোকে চিনতে আমার এত ভুল হলো!তুই আমার থেকে এত বড় সত্যি লুকালি?কিভাবে পেটে রাখলি কথাটা?
.
আহানা কানে হাত দিয়ে বললো”সরি,আর হবে না”
.
আর হবে না মানে?আবার বিয়ে করবি নাকি,যেভাবে বলতেছিস
.
না সেটা না,বললাম আর কিছু লুকাবো না
.
নিতু তো নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে তার ভাইয়ার বৌভাত,খুশি আর ধরে না তার
শান্ত নিজের হাতে মাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে এরই মাঝে মা হঠাৎ শান্তকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন
শান্ত কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তারপর বললো”মা,তুমি খুশি তো?সবটা তোমার খুশির জন্যই করা”
.
মা মাথা নাড়লেন,শান্তর মনে হলো সে তার মাকে অবশেষে খুশি করতে পেরেছে,এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে
.
ওদিকে মা আহানাকে টেনে বাসার দিকে নিয়ে গেছে,বৌভাতের অনেক কাজ বাকি,খালাকে ফোন করে দিলো আসার জন্য,একা সব করা সম্ভব না
.
শান্ত মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে আহানাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে রিপাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো আহানা আর তার মা চলে গেছে তাদের বাসায়
শান্ত তাই নিজের রুমে ফেরত আসলো,আলমারি খুলে তোয়ালে নিলো ফ্রেশ হতে যাবে তাই তারপর হঠাৎ মনে হলো বৌভাত হয়ে গেলে আহানা এখন থেকে তার রুমেই থাকবে,এই আলমারিতেও তার জামাকাপড় থাকবে
শান্ত তাই জায়গা করে নিলো আলমারিতে, তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলো
আহানা বসে বসে টিভি দেখতেছে,তার যে সামনের বুধবারে বৌভাত মানে আর কদিন পর সেদিকে তার খবর নেই,ওদিকে মা আর খালা পাগল প্রায়ই
শান্ত ফোন করে জানিয়েছে ব্যাংকে সে টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছে,মায়ের ইচ্ছা বৌভাতটা হোক আর আহানার মায়ের কাছে সেরকম টাকা নেই যে অনুষ্ঠানটা ধুমধাম করবে তাই শান্ত টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে
টাকা পেয়ে মা আর খালা তো অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সব ঠিকঠাক করতে
আহানা মনমত টিভি দেখেই যাচ্ছে,খালা তো এসে কালো টিকা লাগিয়ে দিয়েছে আহানাকে,নজর যেন না লাগে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা টিভি অফ করে নিজের রুমে ফেরত এসেছে
তারপর বিছানায় দুম করে শুয়ে পড়তেই মাথায় আসলো এখন থেকে তাকে শান্তর সাথে এক ঘরে একই রুমে থাকতে হবে, এই ভেবে আহানা মুখ বাঁকিয়ে আবারও বসে পড়লো
বিয়ে বিয়ে করে সে এটাই ভুলে গেছে যে শান্ত তার শত্রু
এই শত্রুর সাথে কিনা এখন থেকে আমাকে এক সাথে থাকতে হবে?
অবশ্য আমাকে যে টাচ করবে না এটা সিউর,তার পরেও ওর মুখ দেখলেই ঝগড়া এসে আমাকে বলে”আমি কি বাইরে বের হবো?”
প্রতিটা দিন ডিস্টার্ব করবে আমাকে,উফ!কোথায় নিজের রুমে নিজের বাসায় সুখ করবো তা আর হলো না,সারাদিন জ্বালাবে আমাকে! এটা একদমই ভাবিনি,ভেবে কি লাভ হবে,সেদিন তো জোর করে বিয়েটা সেরে নিয়েছিলো,রতন আর সাইমন নাকি আমাকে কিডন্যাপ করবে,কচু করবে
.
আহানা পাশে তাকাতেই দেখলো ফোন জ্বলতেছে,শান্তর ফোন
বিরক্তি নিয়ে আহানা কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শান্ত বলে উঠলো”ওকে গাইস আজকে আমি যে গানটা গাইবো সেটা আমার সামওয়ান স্পেশালের জন্য!ইয়েস আই এম মেরিড,এবং এই গানটা আমার ওয়াইফের জন্য”
.
আহানা বুঝলো না শান্তর কথাগুলো, কাকে বলছে,তাও কানে ধরে রাখলো ফোনটা
শান্ত ল্যাপটপটা সেট করে টেবিলে রেখে গিটার নিয়ে বিনব্যাগে বসলো বারান্দাতে

কথা হবে দেখা হবে প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবেনা,,,
চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালো বাসা বাসি আর হবেনা,,,,

শত রাত জাগা হবে থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না,,,
হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙ্গে যাবে জানো না,,,

আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,

ভুলভাল ভালোবাসি কান্নায় কাছে আসি
ঘৃনা হয়ে চলে যাই থাকিনা,,,
কথা বলি একা একা সেধে এসে খেয়ে ছেঁকা
কেনো গাল দাও আবার বুঝিনা,,,,

খুব কালো কোন কোনে গান শোনাবো গোপনে
দেখো যেনো আর কেও শোনেনা,,,,
গান গেয়ে চলে যাবো বদনাম হয়ে যাবো
সুনাম তোমার হবে হোকনা,,,,

আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,

যদি তুমি ভালোবাসো ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনো খানে রবে না,,,,
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ গলে না,,,,,

আমি গলা বেঁচে খাবো কানের আসে পাশে রব
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কথা হবে না,,,
কারো একদিন হবো কারো একরাত হবো
এর বেশি কারো রুচি হবে না,,,,

আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,
.
আহানা মুগ্ধ হয়ে শান্তর গাওয়া গানটা শুনলো,এত ভালো লাগলো বলে বুঝানো যাবে না,যেন গানটা তার জন্যই
.
শান্ত লাইভ শো অফ করে পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরে বললো”কি ম্যাডাম??শুনেছেন?কেমন লাগলো,ফিডব্যাক দিলেন না”
.
ভালো হয়েছে
.
শুধু ভালো?
.
আয় এই খুশিতে তোরে আবার বিয়ে করি
.
শান্ত হেসে ফেললো,গিটারটা রাখতে রাখতে বললো”চলো আবার বিয়ে করি,ভালোই লাগে এতবার বিয়ে করতে”
.
শুধু কি বিয়ে করতে করতেই বুড়ো হবো?জীবনে আর কিছু নাই?
.
আছে তো,ঐ যে বছরে বছরে বাচ্চা হলে রামিমকে কল করে জানাবা,সেটা আছে
.
আহানা ফিক করে হেসে দিলো,শান্ত এত হাসায় ওকে বলার বাইরে,চাইলেও মন খারাপ করে থাকতে পারে না সে
.
শুনো
.
কি?
.
বৌভাতে গোলাপি শাড়ী পরিও,গোলাপিতে তোমাকে বউ বউ লাগে
.
আমি তো বউই,আবার বউ বউ লাগার কি আছে?
.
আরে এত কথা না বলে যেটা বলছি সেটা করবা,আমি সবাইকে দাওয়াত দেওয়ায় বিজি থাকবো তাই এখন একটু ফ্রি বলে তোমাকে কল করলাম আর একটা লাইভ শো ও করে নিলাম
.
ভালো
.
তোমার কি হয়েছে বলোতো?
.
কি আর হবে?যার সাথে বিয়ে দুবার করে সেই বিয়ে বাঁচানোর জন্য এতদিন এত কষ্ট করলাম এখন মাথায় আসলো সেই লোকটা আমার জন্মের শত্রু
.
সেটা আমারও মনে আছে,তোমার মতন ধানিলঙ্কাকে বিয়ে করেছি প্রতি দিন এর শোধ আমাকে দিতে হবে
.
কাকে দেবেন?
.
আমাকে,আর কাকে?,আমি আমাকে শোধ দিব,আহারে শান্ত তোর জীবন যৌবন সব শেষ করে দিলি এই মেয়ের জন্য,আহারে আহারে
.
আহানা রেগে লাইনই কেটে দিলো,অসভ্য একটা,কখনও মুখ ফুটে আমার ভালো বলবে না খালি দোষ খুঁজতে দাও সেটা পারবে,আমাকে এখন থেকে এর জ্বালানো ভোগ করার অভ্যাস তৈরি করে ফেলতে হবে
.
আহানা আলমারির কাছে গিয়ে একটা গোলাপি শাড়ী নিলো,রিয়াজের আম্মু দিয়েছিলো এটা সেই শাড়ী
আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো সে
সত্যি তো!আমাকে তো জোস লাগতেছে
এই ছেলেটার টেস্ট তো অনেক ভালো,অবশ্য আমার টেস্ট ও খারাপ না,উনি তো কম সুন্দর না বরং আমার চেয়েও সুন্দর,একদিন জিগাবো মুখে কি মাখে,আমার মুখে ২/১ব্রন উঠলেও উনার মুখে একটা গোটাও দেখলাম না,কিছু মাখলে তো সাইড এফেক্ট হিসেবে ব্রন উঠার কথা,তাহলে ব্যাপারটা কি?
নিশ্চয় বয়েজ পার্লারে যায়,সময় করে সব জেনে নিব একদিন
.
আহানা বিছানাটা ভালো করে গুছিয়ে নিচে গেলো ডিনার করার জন্য,মা কিসব প্যাকেট রেডি করতে করতে বললেন”আহানা আজ ডিনার তৈরি করিনি,আলু দুটো ভেজে খেয়ে নে,আমাদের অনেক কাজ,আমরা কাজ শেষ হলে রুটি বানিয়ে ডিম ভেজে খাবো”
.
আহানা তাই সোজা গেলো আলু নিতে রান্নাঘরে,রান্নাঘরের জানালায় শব্দ করে একটা কঙ্কর এসে পড়লো
আহানা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো তারপর জানালার কাছে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,অন্ধকারে দেখা যায় না কিছু,তারপর জানালা আটকাতে যেতেই তার চোখ পড়লো বাউন্ডারির ওপাশে শান্ত দাঁড়িয়ে হাত নাড়াচ্ছে
আহানা প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না,পরে চোখ ডলে আবারও তাকিয়ে শান্তকেই দেখলো,তড়িগড়ি করে সে রান্নাঘরের থেকে বেরিয়ে বাসার বাইরে চলে গেলো,গেট খুলতেই শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো”তোমাকে কতবার কল করেছি?ফোন নিজের কাছে রাখতে পারো না সবসময়?”
.
কি জন্য কল করেছেন?আর গেটে এসে কলিংবেল চাপ দিলেই হতো!
.
আরে দিসি আমি,মেবি নষ্ট
.
ওহ,কি কারণে এসেছেন বলেন সেটা
.
আমি আসলে একটা গিফট কিনবো তোমার আম্মু আর তোমার খালার জন্যে,আর গিফট চয়েস করতে একটু ঢিলা আমি
তুমি চয়েস করে দিও,মাকে তো আর যেখানে সেখানে নেওয়া যায় না,জানোই তো হুইলচেয়ারে বসে থাকে সারাদিন
.
পারবো না,আমি এমনিতেও খিধায় মরে যাচ্ছি,হেঁটে হেঁটে শপিং করার শক্তি নাই আমার
.
আচ্ছা তাহলে তোমাকে খাওয়াবো,তাহলে চলবা তো?
.
হুমম,ভাবতে দিন
.
কষিয়ে একটা চড় মেরে ভাব ছুটিয়ে দিব,কাকে ভাব দেখাও,তুমি জানো তোমার চুল আর কান টেনে তোমাকে আমি নিয়ে যেতে পারি?সময় নষ্ট করবা না একদম,চলো আমার সাথে
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,আহানা বললো “মাকেও তো বলে যেতে হবে তা না হলে টেনসন করবেন উনি”
.
আরে সেটা কল করে জানিয়ে দিব,এত কিছুর সময় নেই,চলো এখন
.
গাড়ীতে বসে আহানা পেটে হাত দিয়ে বললো”আমি ঝালমুড়ি খাবো,তারপর চটপটি,তারপর ফুচকা,সবার শেষে আইস্ক্রিম,ব্যস বেশি কিছু খাবো না,রাতে বেশি খেতে পারি না আমি”
.
এটা কম নাকি?
.
খাওয়ার খোঁটা দিলেন?ঠিক আছে খাবো না আমি
.
খোঁটা কই দিলাম,তোমাকে ফুচকার দোকান কিনে দিতে পারি আমি,খোঁটা কেন দিব,এসব কোথায় পাওয়া যাবে?
.
এহহহ,ঢং দেখলে বাঁচি না,জানেন না এগুলা কোথায় থাকে?আমার মাথায় থাকে
সব খানেই পাবেন, দেখলেই গাড়ী থামাবেন
.
শুনো আহানা,কাল বাদে পরশু আমাদের বৌভাত,উল্টাপাল্টা কিছু খেয়ে অনুষ্ঠানটা মাটি করো না
.
এগুলা খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার,আমাকে খাওয়াতে চান না সেটা বলেন
.
আমি তোমাকে নিয়ে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি,সেখানে যা ইচ্ছা খাবা,ওকে?
.
না ওকে না,আমি এসবই খাবো
.
ঠিক আছে,চুপ থাকো,এত চেঁচাতে হবে না
.
রোডের পাশে ফুচকাআলা দেখতে পেয়ে শান্ত কার থামিয়েছে
আহানা ফুচকা নিয়ে গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে
শান্ত পাশেই একটা টুলে বসে আহানার মাকে কল করে জানিয়েছে সে আহানাকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে
আহানা একটা ফুচকা সাধলো শান্তকে,শান্ত ফুচকার সাথে দেওয়া সালাদ মুখে দিয়ে চিবাচ্ছে,আহানা তাই মুখ বাঁকিয়ে খালি ফুচকাটা খেয়ে নিলো
শান্ত পুরো তার উল্টো
যাই হোক সব খাবার এক এক করে আহানা খেয়ে পেট পুরিয়ে এখন শান্তর বাম হাত ধরে ঝুলে ঝুলে হেলেদুলে শপিংমলে হাঁটতেছে,তার হাত পা চলতেছে না
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সাথে সাথে আহানার ঘুম চলে আসে চোখে,তখন তার পক্ষে হাঁটা হাঁটি একদম সম্ভব হয় না
আশেপাশের মানুষ আহানাকে এমন করে হাঁটতে দেখে চেয়ে রয়েছে এক দৃষ্টিতে
শান্ত বললো”আসলে আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট তো তাই এমন করে হাঁটতেছে”
.
কথাটা শুনো আহানার চোখের ঘুম বাপের বাড়ি চলে গেলো
খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে সে চোখ বড়বড় করে তাকালো শান্তর দিকে,তারপর সোজা হাঁটা শুরু করলো,শান্ত ইচ্ছা করে এটা বলেছে যাতে আমি উনার গায়ে ভর দিয়ে না হাঁটি,স্টুপিড!
মায়ের জন্য একটা শাড়ী আর খালার জন্য একটা শাড়ী কেনা হলো তো বটে তবে আপাতত আহানা এখন পা গুটিয়ে কারের ফ্রন্ট সিটে ঘুমিয়ে গেছে, জানালায় হেলান দিয়ে
শান্ত ওদের বাসার কাছে এসে দেখলো আহানা এখনও ঘুমে
ফিল্মের নায়কদের মতন কোলে নিয়ে হাঁটার মতন ছেলে শান্ত না,এ তো আমার মহা শত্রু,এরে তো শত্রুতামি করেই উঠাবো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার কাছে মুখ নিয়ে ওর কানে কানে বললো”কিরে আহানা যাবি নাকি আমার লগে?”
.
আহানা হকচকিয়ে চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকালো,মনে হচ্ছে রতনের কন্ঠর মতন লাগলো,ঘেমেও গেছে আহানা,ওড়না দিয়ে সারামুখ মুছে শান্তর দিকে চেয়ে বললো”রররররততততন,এসেছিলো?”
.
না তো!তবে মনে হয় শান্ত এসেছিলো
.
আহানা এবার পুরো ব্যাপারটা বুঝলো,দাঁতে দাঁত চেপে শান্তকে বকতে বকতে কার থেকে নেমে প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো সে
.
আমার ঘুমের ১২টা বাজাতে মনে হয় ডিগ্রি পাস করে রেখেছেন উনি,কখনও হাত ধরে টেনে তুলে তো কখনও আমার পাগল প্রেমিকদের কণ্ঠ শুনিয়ে ভয় দেখিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গায়,না জানি উনাদের বাসায় থাকতে গেলে আর কি কি করবে
খোদা!!!!
.
কিরে আহানা এলি??কি কিনলি দেখি
.
আমি কিনি নাই,শান্ত ভাইয়া কিনেছে,তোমার আর খালার জন্য শাড়ী
.
শান্ত ভাইয়া কি আবার?তোর স্বামী হয়
.
ওহ তাই তো!
.
আহানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে উপরের রুমে চলে গেলো সিঁড়ি বেয়ে
খালা এসে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললেন”এই মেয়ে এসব কি বলে?জামাই বাবাজি ভাইয়া ডাক শুনলে কিন্তু রাগ করবে অনেক”
.
আরে তুমি জানো না,এই মেয়ে শান্তকে প্রচুর জ্বালায়,আমার তো বিশ্বাস হয় না শান্ত ওকে কেন বিয়ে করেছে,এরে আমি এতবছর ধরে সামলিয়েছি এবার শান্ত সামলাবে
.
ছেলেটা আহানাকে পছন্দ করে তা নাহলে এরকম স্বভাব জেনেও বিয়ে করে নিতো না
.
সেটা আর বলতে,ওরা দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতেই পারে না শুধু বাহির থেকে দেখে বোঝা যায় না এই আর কি
ছোটবেলায় ও এরকম ঝগড়া করত,আমি তো ভেবেছিলাম বড় হয়ে সব ভুলে গেছে,তবে এখন দেখি সব মনে আছে,বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে
.
হুমমম,ঝগড়া এরকম থাকাই ভালো,ভালোবাসা বাড়ে
আবার পানসে পানসে সম্পর্ক ভালো লাগে না আমার,এরকম ঝগড়ার ভিতরে ভলোবাসা লুকানো থাকে বুঝলে
.
হুম

আহানা বারান্দার পর্দা টেনে বিছানা ঘুমাতে গিয়ে টের পেলো তার প্রচণ্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে
পেটে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতেছে সে
শান্ত বার বার মানা করেছিলো একসাথে সবকিছু না খেতে,আমি শুনলাম না,এখন মনে হচ্ছে উনি ঠিক ছিলেন
মাঝখান দিয়ে আমি বেশি খেয়ে ফেললাম,এখন এই খবর কিছুতেই মাকে জানানো যাবে না,মা সোজা উনাকে জানাবেন তারপর উনি হাসবেন আমাকে নিয়ে হুহ!
.
শান্ত ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে সূর্যমুখীর বাগানটার দিকে তাকিয়ে আছে,আহানাকে মনে পড়তেছে বারবার,অথচ ঘণ্টা খানেক আগেই আমি ওর সাথে ছিলাম
এত মিস করতেছি কেন?কান জ্বালাফালা করে রাখে সারাদিন তার পরেও ওকে ভাল্লাগে,ওকে কেন ভাল্লাগে তার কারণ আমার কাছে নেই,তবে ভাল্লাগে
মোটকথা এই ধানিলঙ্কাকে নিয়ে আমি সারাজীবন কাটাতে পারবো,আমাকে যে ছেড়ে যাবে না সেটা ১০১% নিশ্চিত
ঝগড়া করেই যাবে তাও ছাড়বে না
কিছু কিছু মানুষকে ভালো লাগতে আসলেই কারণ প্রয়োজন হয় না,তার এত এত গুনের মাঝে আমার কাছে তার ঝগড়াটাই ভালো লাগে,এই ঝগড়াটা না করলে আসলেই চিনতাম না এটা সেই আহানা যে ছোটবেলায় হাতের কাছে যা পেতো তা আমার মুখে মাখিয়ে দিতো,আফসোস আমাদের গায়ে হলুদ হলো না,গায়ে হলুদটা হলে ওর গালে ইচ্ছামত হলুদ মাখাতাম আমি,সব শোধ তুলতাম
ছোটবেলায় অনেক জ্বালিয়েছে,এবার আমার পালা মিসেস শাহরিয়ার আহানা!!
কি করবা তুমি??তোমাকে ২৪ঘন্টা জ্বালাবো
তোমার কল্পনার বাহিরে থাকবে সব,তুমি কি ভাবো তুমি পারো ঝগড়া করতে আর জ্বালাতে?
এবার শান্ত তোমাকে দেখাবে ঝগড়া আর জ্বালানো বিস্তারিত
বৌভাতের রাতে আমার সাথেই তো ঘুমাবা তাই না??
তোমার শোয়ার জায়গাটায় আমি চুলকানির পাউডার ফেলবো,ঘুমানো দেখিও দিব সেদিন

আহানা ঘুমানোর আগে ভাবলো সে বৌভাতের দিন রাতে কি করবে
“আমি সেদিন উনার বালিশের তলায় চিনি ফেলবো ভালো করে,এত পিপড়া আসবে শান্তিতে ঘুমাতেই পারবেন না উনি
হাহাহা,আমার সাথে ঘুমানো দেখিয়ে দিব”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
পরেরদিন সকাল সকাল ব্যস্ততা আরও বেড়ে গেছে,আহানাদের আত্নীয় বলতে কেউই নেই যার কারণে যারা আসবে- যাবে বৌভাতের রাতে তারা সব শান্তদের ফ্যামিলি থেকেই আসবে আর সেটার জন্যই এত আয়োজন
আহানা আজ শান্তিতে এখনও ঘুমিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ মা এসে বললো একটা মেয়ে এসেছে মেহেদি লাগিয়ে দিতে,শান্তি আন্টি নাকি পাঠিয়েছে ওকে
আহানা ভাবলো আজ সারাদিন ঘুমাবে তা আর হলো কই,এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে গেলো
তারপর হাতে বিসকিট নিয়ে মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলো সোফায়
মেয়েটা সুন্দর করে মেহেদি লাগিয়ে শান্ত নামটাও লিখে দিলো ওর হাতে
আহানা দুহাত ভর্তি মেহেদি নিয়ে বারান্দায় একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে সেই আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে
যখন সে চোখ খুলেছে তখন সম্ভবত বেলা ১২টা বাজে
আহানা চেয়ার থেকে নেমে হাতের দিকে তাকালো,মেহেদি শুকিয়ে কাঠ,তাড়াতাড়ি ধুতে হবে
এই ভেবে সে আয়নার সামনে দিয়ে ওয়াসরুমে যেতে নিয়ে থেমো গেলো,আবার আয়নার সামনে ফেরত আসলো সে
সারা গায়ে তার হলুদ মাখানো,নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে এক চিৎকার করলো আহানা,মা আর খালা দৌড়ে আসলেন ওর চিৎকার শুনে
আহানা গালে হাত দিয়ে বললো”শান্ত ভাইয়া এসেছিলো?”
.
না তো,ও কেন আসবে?
.
তাহলে আমার এই অবস্থা করছে কে?কখন করছে?বাসায় আর কে এসেছিলো?
.
কেউ তো আসেনি,গেট ও তো বন্ধ
.
আহানা ১০০%সিউর এটা শান্তরই কাজ,রেগে সে ফোন হাতে নিয়ে শান্তকে কল করলো,শান্ত সেই সময়ে নওশাদকে কল করেছে
.
হ্যালো নওশাদ!ভাই কাল বৌভাত হবে,হালকা ধুমধাম তুই রুপাকে নিয়ে চলে আসিস কেমন?
.
মাই গড!এত জলদি?আন্টিকে ম্যানেজ করে ফেললি?
.
মা তো শুরু থেকেই আহানাকে পছন্দ করে,এটা আর নতুন কি,অবশ্য আমি ভয় পেয়েছিলাম বিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে যে কি রিয়েক্ট করে মা,পরে সব পজিটিভ হলো,কেউ বকলো না
.
ওকে ডান,আমি রুপাকে নিয়ে চলে আসবো
.
শান্ত এবার এক এক করে রিয়াজ আর সূর্যকেও জানিয়ে দিলো
আজ সকাল সকাল সে আহানাদের বাসায় গিয়েছিলো আহানাকে হলুদ দিয়ে ভূত বানাতে,এতদিনের শখ সে আজ পূরণ করলো,অবশ্য এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছিলো বৈকি!
বাউন্ডারি পেরিয়ে,বারান্দায় পিলার বেয়ে উঠতে হয়েছিলো তাকে,কাজটা এমনভাবে সম্পন্ন করেছে সে আহানা যেন কোনো সূত্র না পায়
ওদিকে আহানা বারান্দার সব খানে তন্নতন্ন করেও কিছু পেলো না,তার ভয় হতে লাগলো রতন কিংবা সাইমনের কাজ নয়ত এটা এই ভেবে
পরে ভাবলো না তারা কেন হতে যাবে,তারা হলে এই কাজ করত না
.
যাই হোক আহানা আপাতত ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে বসেছে,শান্তর সাথে ওকে কথা বলতেই হবে,এটা নির্ঘাত শান্তরই কাজ আমি সিউর!
কিন্তু কথা হলো শান্ত ফোনই তো ধরছে না আজব!
শান্ত ইচ্ছে করেই ফোন ধরছে না
আজকের দিনটা কোনোরকমে কেটে গেছে,সকাল সকাল আহানাকে তৈরি হয়ে শান্তদের বাসায় যেতে হবে কারণ বৌভাতটা ওদের বাসাতেই হবে আর তারপর শান্ত আর আহানা এই বাড়িতে আবার ফেরত আসবে
তো আজ সারাদিন শান্ত আহানার ফোন ধরেনি একবারও,আহানা ভেবেছিলো জাস্ট বালিশের তলায় চিনি ঢালবে এখন তো রাগে ক্ষোভে সে ঠিক করেছে আরও অনেক কিছু করবে শান্তকে টাইট করতে,কত বড় সাহস,আজ সারাদিন আমার সাথে কথা বললো না,তোরে ছাড়মু না আমি মনে রাখিস তুই
.
পরেরদিনের সকালটাও এসে গেলো যথাযথ সময়ে
আহানাকে তার খালা আর ২টি পার্লারের মেয়ে মিলে তৈরি করছে,শান্তদের বাসা থেকে শাড়ী গয়না এসে গেছে,মনে হয় আজ বৌভাত নয় আজ বিয়ে
.
নওশাদ আর রিয়াজ মিলে শান্তকে তৈরি করছে,সূর্য ভিডিও করতেছে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করবে তাই
শাহরিয়ার শান্তর বিয়ের কথা শুনলে ভিউ এমনিতেই আসবে,খুশি আর ধরে কই তার
.
আহানাকে সাজানো হয়ে গেছে,ঘাড়ো রঙের একটি গোলাপি শাড়ী পরেছে সে,শাড়ীটা জর্জেটের
আহানা শাড়ীটা পরার পর থেকে গাল ফুলিয়ে রেখেছে,এই শাড়ীটা পরে নাকি তাকে আজ সারাদিন কাটাতে হবে
গলা ঢাকা যায় এমন একটা সেট পরেছে সে
চুলগুলোকে খোঁপা করে দিয়েছে মেয়েগুলো
আহানা এখন রোবটের মতন হেঁটে হেঁটে গিয়ে কারে বসেছে,খালা আর মা ও তৈরি হয়েছে,তবে সাথে যাবে শুধু খালা
মা বাড়িতেই থাকবে কারণ শান্ত আর আহানা দুপুরে আবার ফেরত আসবে
বাড়িতে অনেক কাজ থাকায় মা রয়ে গেলেন,আহানার সাথে খালাই গেলেন আপাতত
শান্তদের পুরো বাড়িটা নীল রঙের ঝিলিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে
এটা দেখে আহানার মনটা একটু হলেও ভালো হয়ে গেলো
সে কার থেকে নামতেই নিতু আর রিপা এসে হাজির হয়েছে
তারা তো শুরুতেই বললো”ঝাক্কাস”
.
আহানা মুচকি হেসে খালার সাথে বাসার ভিতরের দিকে গেলো
শান্ত তৈরি হয়ে সোফায় বসে আছে সেই কখন থেকে
মেহমানরা খালি একটাই প্রশ্ন করতেছে আর সেটা হলো”বিয়েটা কবে হলো,আর লুকিয়ে কেন হলো?”
.
শান্ত বললো”একটা সমস্যা ছিলো”আর কিছু বললো না সে
.
আহানা বাসার ভিতর ঢুকতেই শান্তকে দেখলো সবার আগে
মন চাচ্ছে এখনই কাঁচা গিলে ফেলি কিন্তু নাহ সময় হোক,তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে আজ
শান্ত আজকে গোলাপি রঙের একটা শেরওয়ানি পরেছে
একটা ভাব নিয়ে সে সোফায় বসে আছে যেন আহানাকে সে দেখতেই পায়নি
আহানা এগিয়ে যেতেই সামনে এসে পড়লেন শান্তি আন্টি,হুইলচেয়ারে করে,রিপা নিয়ে এসেছেন উনাকে
আহানা তাকে দেখে হেসে সালাম করলো,তারপর কথা আরেকদিকে ঘুরে গেলো
কিছুক্ষণ পর সবাই বাসার সামনের বাগানের পাশে খোলা জায়গায় তৈরি করা স্টেজ টাতে আসলো,সেখানে শান্ত আর আহানাকে বসানো হবে
আহানাকে রুপা নিয়ে সেখানে বসিয়ে দিয়েছে
আর নওশাদ,রিয়াজ,সূর্য মিলে শান্তকে নিয়ে এদিকেই আসতেছে
শান্ত সিটে বসে এখনও আহানার সাথে কথা বলতেছে না,আহানা মনে হয় ফেটে যাবে ঠুস করে,এত এত রাগ সে কি করে সামলাবে
হাত মুঠো করে বারবার সে শান্তর দিকে তাকাচ্ছে
শান্ত সামনের দিকে চেয়ে নরমালি বললো”সুন্দরই লাগছে মোটামুটি ”
.
জিগাই নাই তোরে,আজ তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে,তুই আমার ফোন ধরিস কেন?
.
আস্তে আস্তে,মানুষ কি বলবে,একটু সম্মান দিয়ে কথা বলো
.
কিসের সম্মান,তুই আয় আমার সাথে এক রুমে,তোর হাড্ডি ভাঙ্গবো আজ আমি
.
আর আমি তোমায় ছেড়ে দিব?
.
কেন?আমি কি করছি যে তুইও আমার পিছে লাগবি,বরং তুই করছিস,আমার ফোন ধরিসনি
.
আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম,তোমার বুঝা উচিত ছিলো এটা,আর ফোন আমার কাছে ছিলো না,এত মানুষকে আমি একা ইনবাইট করেছি,তোমাকে দিলে তো ১মাস লাগাইতা
.
যাই হোক বাহানা দিতে হবে না,আর একটা কথা আপনি আমার গায়ে এত হলুদ মেখেছিলেন কেন?
.
কে?আমি?না তো
.
একদম মিথ্যা বলবেন না
.
কিরে শান্ত এত কথা কিসের?তর সয় না?
.
চুপ থাক নওশাদ,আগে বল তোরা বিয়ে করবি কবে?
.
আমি তো আরেকটু দেরিতে করবো,সূর্যকে জিজ্ঞেস কর আমাকে না করে
.
আমি এখনও ছোট,আমি এখন বিয়ে করবো না সরি
.
তুই ছোট??আমার বাচ্চা হলে তোকে নানাভাই ডাকবে
.
শান্ত আর রিয়াজ ফিক করে হেসে দিলো নওশাদের কথা শুনে
সূর্য জিভে কামড় দিয়ে ছবি তোলায় মনোযোগ দিলো আর হঠাৎ করেই ধাক্কা খেলো রিপার সাথে
.
রিপা হা করে সূ্র্যর দিকে চেয়ে রইলো,সূর্য সরি বলে আরেক পাশে চলো গেছে সাথেসাথে
.
দুপুরে মেহমানদের খাওয়া দাওয়া শেষে এবার শান্ত আর আহানার বাড়ি ফেরার পালা,আহানাদের বাসায় যাবে শান্ত এখন
মাকে বিদায় জানিয়ে কারে উঠে বসলো দুজনে
আহানা পা তুলে বসে এক এক করে মাথার টিকলি,হাতের চুড়ি খুলতেছে
শান্ত কার ড্রাইভ করতে করতে বললো”রাত হয়নি এখনও”
.
আমার জাস্ট বিরক্তি লাগতেছে এই সাজে,বাড়ি ফিরে শাড়ীটাও পালটে নিব,তারপর আপনাকে টাইট দিব
.
আমি কি করলাম আবার?
.
কি করেন নাই সেটা বলেন,আমাকে কাল সারাদিন টেনসনে রাখছেন আপনি,এলবার কল ধরলে কি মরে যেতেন?মনে রাখবেন আমাকে ২বার বিয়ে করেছেন আপনি,হুহ!
.
আর মনে করাতে হবে না,জানি আমি

বাসায় ফিরে আহানা নিজের রুমে গেলো চেঞ্জ করতে,মা সাথে সাথে কোথা থেকে এসে বললেন”খবরদার চেঞ্জ করবি না,তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দিব,শান্তর সাথে ওর কিছু রিলেটিভ আসতেছে তারা কি বলবে?”
.
আহানা তাই গাপটি মেরে আবার বিছানায় বসে পড়েছে
সত্যি সত্যি শান্তর ১৪গুষ্টি আসলো আহানাদের বাসায়,সবাইকে মা আর খালা মিলে নাস্তা খাওয়াইছে
সন্ধ্যা ৭টা বাজতেই যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে
এখন আপাতত বাসায় আছে মা,খালা,শান্ত আর আহানা,আরও কজন আছে মনে হয়
শান্ত আহানার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাহসিনের সাথে কথা বলতেছে অফিসের কাজ নিয়ে
আর আহানা দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখতেছে সবাই গেলো কিনা,তারপর পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো,শান্ত ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত
আহানা শাড়ী চেঞ্জ না করে আগে কাজে লেগে পড়লো শান্তকে হেনস্তা করতে,শান্তর বালিশে ইচ্ছেমত চিনি ছিটিয়ে দিলো সে
কোমড়ে কাগজ মুড়িয়ে চিনি রেখেছিলো সেটা
তারপর শান্ত যে তোয়ালে ইউজ করবে সেটাতে লোশন ঢেলে দিয়ে চুপচাপ বিছানায় একপাশে গিয়ে বসলো সে
শান্ত কথা বলা শেষ করে বিছানায় এসে বসলো
আহানার হঠাৎ করে হাত পা চুলকাচ্ছে,চুলকাতে চুলকাতে সে বিছানা থেকে নেমে পড়লো,তারপর দৌড়ে বাথরুমের দিকে গেলো
শান্ত খিলখিল করে হাসতেছে,তার প্ল্যান সাকসেসফুল
এবার সে ফোন নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফেসবুকে ঢুকেছে
১০মিনিট পর আহানা বের হলো শাড়ী ওলটপালট করে,মনে হয় ওর উপর দিয়ে টর্নেডো গেছে
শান্ত মুখ টিপে হাসতেছে
আহানা এখনও বুঝেনি চুলকানির পাউডার ছিল তার জায়গায় আর এটা শান্তরই কাজ ছিল
আহানা আলমারি খুললো নিজের একটা থ্রি পিস বের করতে
তখন ঠাস ঠুস আওয়াজ আসলো পাশ থেকে
আহানা উঁকি দিয়ে দেখলো শান্ত ওর হাতে পায়ে থাবড় মারতে মারতে বিছানা থেকে নেমে বললো”মাই গড!এত পিপড়া কোথা থেকে আসলো”
.
আহানা মুখ টিপে হাসতেছে এবার
শান্ত হাত পা ঝাড়তে ঝাড়তে বাথরুমের দিকে চলে গেছে
আহানা এবার আলমারির দিকে চেয়ে দেখলো তার সব জামা উধাও,শান্তর একটা শার্ট আর প্যান্ট ঝুলতেছে শুধু,যেগুলো শান্ত সাথে করে এনেছিলো ব্যাগে করে
আহানা সোজা গেলো মায়ের কাছে, মা জানালো আহানা যাতে শাড়ী না চেঞ্জ করে তাই ওর সব জামা তিনি লুকিয়ে ফেলেছেন
.
সবাই তো চলে গেছে এবার তো দাও
.
না কে বলেছে গেছে?শান্তর কিছু ফ্রেন্ড আর ওর ফুফু আছেন দেখোস না?
.
তো কতক্ষণ এটা পরে থাকবো?
.
যতক্ষন এরা না যাচ্ছে,ধর এই চায়ের কাপ,তুই আর শান্ত খেয়ে নে
.
আহানা ট্রেটা হাতে করে আবার রুমে ফেরত আসলো,এসে দেখলো শান্ত সোফায় পা উঠিয়ে বসে বিছানার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
আহানা বিছানায় বসতে গিয়ে ওর মনে পড়লো চুলকানির কথা,শেষে সেও গিয়ে শান্তর পাশে বসে পড়লো
২মিনিট নিরবতা পালন করে তারা চা শেষ করেছে
তারপর দুজন দুজনের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে চেঁচিয়ে বললো”এটা তোমার কাজ”
.
আমি কি করছি?জাস্ট চিনি ছিঁটিয়ে দিয়েছিলাম
.
আমিও তো জাস্ট চুলকানোর পাউডার ঢেলে দিয়েছিলাম
.
কেন করলেন এমন?
.
তুমি কেন করলে?
.
আমি তো করেছি আপনি আমার ফোন ধরেননি কাল সারাদিন সেই ক্ষোভে,আর আপনি কেন করলেন সেটাই বুঝলাম না
.
তুমি আমাকে সবসময় জ্বালাও বলে আমি এই দিনে শোধ নিতে চেয়েছিলাম
.
হইছে তো?এবার বিছানায় ঘুমাবেন কি করে,আপনার জন্য আমার ঘুমটাও গেলো
.
তোমার জন্য ও আমার ঘুমটা গেলো
.
আমি আগে থেকে বলে রাখছি আমি সোফায় ঘুমাবো
.
আর আমি ফ্লোরে??এত সুখ কেন দিব তোমাকে?
আমি সোফায় ঘুমাবো ব্যস!
.
আমি সোফায় ঘুমাবো ব্যস
.
ওপাশ থেকে নওশাদ,সূর্য মিলে বলে উঠলো”যেখানেই ঘুমাস না কেন,এই রুমেই থাক তোরা,ওকে বাই”
এটা বলে ওরা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে পালালো
শান্ত আর আহানা ছুটে এসে দরজা অনেক ধাক্কালো কিন্তু লাভ হলো না
.
শান্ত আহানার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো”সব তোমার দোষে হয়েছে”
.
আমি কি করলাম,বরং আপনার দোষে হয়েছে,আমার অন্তত এরকম বিচ্ছু বন্ধুবান্ধব নেই,একেবারে দরজাটাই লক করে পালালো,কোথায় ভাবলাম অন্য একটা রুমে ঘুমানো যাবে,এখন কি করবো?
.
আমি সোফায় ঘুমাবো
.
শান্তর কথা শুনে আহানা দৌড়ে গিয়ে সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে শান্ত যাওয়ার আগেই
শান্ত হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
আহানা নাক ডাকার একটিং করতেছে,যেন সে গভীর ঘুমে আছে
শান্ত শয়তানি করে বিছানার চাদরটা নিয়ে আহানার গায়ে লেপটে দিতেই আহানা চিৎকার করে বললো”এটা কোন ধরনের শত্রুতামি!অসভ্য লোক কোথাকার”
আহানা গা চুলকাতে চুলকাতে চাদরটা নিয়ে এবার শান্তর গায়ে মুড়িয়ে দিলো
দুজন মিলে এবার গা চুলকাচ্ছে
একজন আরেকজনের চুল টানাটানি ও শুরু করে দিয়েছে
এমন করে ১০মিনিট কেটে গেলো
এখন আপাতত দুজনে ফ্লোরে বসে আছে
দুজনকে আফ্রিকার জঙ্গলের জন্তুর মতন লাগছে
আহানা ফিক করে হেসে বললো”আপনাকে সত্যি মিঃআউলাঝাউলার মতন লাগছে এখন”
.
তোমাকেও!হাহা
.
দুজনে হাসলো,তারপর হাসা থামিয়ে গাল ফুলিয়ে আবারও একজন আরেকজনেকে দোষারোপ করা শুরু করে দিলো
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে