প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫

0
2481

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫
#Writer_Afnan_Lara
?
ম্যামের কাছে আসতেই ম্যাম টি-শার্টটা দিয়ে বললো এটা কাল যে ড্রেসই পরুক না কেন তার উপর দিয়ে পরতে
আহানা বললো ঠিক আছে
.
হুহ আরেকটা জামা কেন পরবো,শুধু টি-শার্ট পরলেই হয় তাই না বেব,আমি তো শুধু টি শার্ট আর জিন্স পরে আসবো
.
শান্ত এলিনার কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না
রাগি লুকে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে সে,তার মন আহানার দিকে
আহানা শার্টটা নিয়ে শান্তর দিকে না তাকিয়েই চলে গেলো ভার্সিটি থেকে
.
ওকে গাইজ আমি আজ বাসায় যাই আমার অনেক কাজ আছে
এটা বলেই শান্ত পকেট থেকে চাবি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাইক স্টার্ট করে বেরিয়ে গেলো
.
বেব রাতে কল করলে রিসিভ করিও!
.

শান্ত মনে মনে ভাবলো ফোন অফ করে রাখবে
তাই ভেবে হেসে দিলো সে
.
আহানা হেঁটে টিয়াদের বাসার দিকে যাচ্ছে,শান্ত বাইক নিয়ে একদম আহানার সামনে পথ আটকিয়ে ব্রেক করলো
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো কি সমস্যা আপনার?এরকম করেন কেন?আমার পথ থেকে সরুন,আমার আপনার মত এমন ফালতু কাজ নাই
.
শান্ত বাইক থেকে নেমে আহানার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো কি বললে তুমি?ফালতু কাজ?
.
তাই নয়তো কি আমি আমার কাজে যাচ্ছি আর আপনি আমার পথ আটকে রেখেছেন!এত ডিস্টার্ব করেন কেন আমাকে?
.
কে তোমাকে ডিস্টার্ব করতেসে?যাও না আমি তো তোমার হাত ধরে রাখিনি
আহানা চোখ বাঁকিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ধরলো
শান্ত আহানার সামনে গিয়ে আবারও পথ আটকালো
.
কি হলো যাও?
.
আপনি আমার পথ আটকে রাখলে যাবো কি করে?
.
সাহস থাকলে গিয়ে দেখাও
.
আপনি চান টা কি?একটু খোলসা করে বলুন
.
তুমি আমাকে দেখলে এত ভাব দেখাও কেন,তখন টি শার্ট নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমাকে দেখেও না দেখার ভান করসো কেন?
.
আজব তো!আমি কোন দিকে তাকাবো আর কোনদিকে তাকাবো না সেটা আপনাকে জিজ্ঞেস করবো?আপনার অনুমতি নিবো?আর আপনার মধ্যে তাকানোর আহামরি কিছু তো আমি দেখতেসি না
.
কি বললে?আমার জন্য ভার্সিটির সব মেয়ে পাগল আর তুমি আমাকে বলো আমার মধ্যে আছে টা কি?
.
হ্যাঁ পাগল বলেই,কোনো ভালো মানুষ আপনাকে পছন্দ করবে না,আপানকে নায়ক কম গুন্ডা বেশি মনে হয়
.
শান্ত খুব রেগে যাচ্ছে,এই মেয়েটা কেন এত বাজে বিহেভ করতেসে আমার সাথে
কি সমস্যা তোমার?একবার চড় মারো এখন আবার বড় বড় কথা বলতেসো!লজ্জা করে না তোমার?
.
আমি চড়ের জন্য মাফ চেয়েছি তাই বলে এই নয় যে আজীবন আপনার পা ধরে বসে থাকবো,আমার সময় নষ্ট করবেন না,পথ থেকে সরুন,আমার অনেক কাজ আছে
.
শান্ত একটু এগিয়ে গিয়ে বললো কি কাজ?কিসের কাজ?ছুটির পর তোমার আর কি কাজ থাকতে পারে?
ওহ হ্যাঁ বিএফের সাথে এক্সট্রা ক্লাস থাকতেই পারে
.
আপনার যা খুশি তাই ভাবুন,আমাকে যেতে দিন প্লিস
.
শান্ত কিছু না বলেই সানগ্লাসটা পরে নিয়ে বাইকে উঠে চলে গেলো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অসভ্য একটা লোক,হুদাই আমার পিছে লেগে থাকে,বেয়াদব,উগান্ডা কোথাকার!
আহানার মনে পড়ে গেলো ৩টা বেজে এসেছে,তাড়াতাড়ি করে দৌড় মারলো সে,টিয়াদের বাসায় যেতে আজ দেরি হয়ে যাবে শুধুমাত্র এই বেয়াদবটার জন্য

শান্ত বেডে বসে একটা বল নিয়ে দেয়ালে মারতেসে,আবার বলটা ব্যাক করে শান্তর দিকে আসতেছে,শান্ত সেটা ক্যাচ নিয়ে আবারও মারতেসে
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার,মাঝে মাঝে বল মারার গতিটা বাড়িয়ে দেয় সে,যার কারনে বল দেয়ালে বাড়ি খেয়ে খুব জোরে শান্তর দিকে ব্যাক আসলো
শান্ত ক্যাচ করতে পারলো না,বলটা গিয়ে ওর হাতে আঘাত হানলো,শান্তর গায়ে কিছু ছিল না,আঘাতে লাল দাগ হয়ে গেছে হাতের উপরিভাগে,শান্তর রাগ আরও বেড়ে গেলো বলটা নিয়ে আরও জোরে মারলো সে
.
লাইফে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে এমনটা করে নি,এমন বিহেভ করে নাই আমার সাথে,আমার একটা চাহনিতেই মেয়েরা পাগল হয়ে যায় আর সেখানে এই মেয়েটা এত ভাব দেখাচ্ছে আমাকে?
ফোনে vibration দেওয়া,সেই কখন থেকে বাজতেসে
শান্ত বলটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখলো এলিনার কল
একটু বিরক্তি নিয়ে নওশাদকে ডাক দিলো
.
নওশাদ?এই নওশাদ! একটু এদিকে আয় তো
.
কি হইসে বল
.
এলিনার ফোন,একটু handle কর,আমার মুড নাই ওর ন্যাকা কথা শুনার
.
নওশাদ ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে বললো
.
আপনার ডায়াল কৃত নাম্বারটি এই মুহুূর্তে বন্ধ আছে,একটু পর আবার ডায়াল করুন,টুট টুট টুট
.
শান্ত হেসে দিয়ে নওশাদের দিকে তাকালো
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো তোরে বাঁচাইতে যত উপরে যাওয়া লাগে যাবো,ওকে বাই এখন আমার গফ কল দিসে পরে কথা হবে
.
শান্ত ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিয়ে আবারও বলটা দেয়ালে মারায় মন দিলো

জামা ধোয়ার সময় আহানা ভাবলো এরকম বেয়াদব ছেলে আমি আর ২টা দেখি নাই,মানে মুখ দিয়ে সুন্দর কথাই তার বেরই হয় না,কোন জন্মের শত্রু ছিলাম তার কে জানে!আমি চড় মেরে একদম ঠিক করসিলাম,দরকার হলে ফিউচারে আরও মারবো বেয়াদবটাকে
.
পরেরদিন ভোরেই আহানা রেডি হয়ে নিলো ভালো করে,তার নীল জামাটার উপরে টি শার্টটা পরে নিয়ে পাশে একটা নীল ওড়না ঝুলিয়ে বের হলো,একটা সাইড ব্যাগ নিলো তাতে ফোন,রুমাল আর এক বোতল পানি,টাকা তো লাগবে না তাই আর টাকা নিলো না
ভোর বেলা হেঁটে যেতে ভয় করছে আহানার,কিছু করার নাই হেঁটেই যেতে হবে ভার্সিটিতে,সব জায়গায় হেঁটে গিয়েই টাকা বাঁচায় আহানা,মাঝে মাঝে ক্লান্তি বেশি লাগলে রিকসা নেয় তাও অনেক দিন পর পর,ঘনঘন আহানাকে রিকসায় দেখা যায় না কখনও
.
ভোর ৫টা বাজে তখন
রোডে কোনো লোকজন নেই,কেমন একটা ভয় ভয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে,এ সময়ে আহানা কোনোদিন বের হয়নি আগে,আল্লাহর নাম নিয়ে বের হয়েছে সে
পাখিদের কিচিরমিচির শুরু হয়ে গেছে,এখন এমন শূন্য রোডে তাদের ডাকাডাকি টাই ভরসা
আবছা আবছা আলো চারিদিকে,পা দ্রুত চালিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আহানা,এদিক ওদিক তাকানোর সময় নেই,তাকাতে গেলেই চোখে পড়বে কিছু বখাটে,শুধু শুধু ভয় পাওয়ার চেয়ে না তাকানোই ভালো
অবশেষে ভার্সিটিতে এসে পোঁছালো সে,৩টা বাস দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির গেটের সামনে
সবাই এক এক করে বাসে উঠতেসে,আহানার চোখ গেলো শান্তর দিকে,ম্যামের দেওয়া টি শার্টটা পরে তার উপর দিয়ে পেস্ট কালারের একটা জ্যাকেট পরেছে সে,মাথায় কালো টুপি
চিল্লাই চিল্লাই বলতেসে ফার্স্ট ইয়ারের সবাইকে বাসে উঠতে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেদিকে
শান্ত এবার আহানাকে খেয়াল করলো
আরও জোরে চিল্লাই বললো এতটা irresponsible কি করে হতে পারো তোমরা?এত লেট করো কেন?তোমাদের জন্য কি আমরা সবাই লেট হবো?৫টায় আসতে বলা হয়েছে!এখন কয়টা বাজে?এতই লেট করার হলে বাপের গাড়ী করে যাইতা বাসের কি দরকার ছিল!
.
কথাগুলো আমাকে বললো বেয়াদবটা
আহানা রাগে ফুলতে ফুলতে বাসে উঠলো
রুপা দৌড়ে দৌড়ে আসতেসে
এই দাঁড়ান শান্ত ভাইয়া,আমার জন্য দাঁড়ান!
.
ওয়েট!বাস ফুল,তুমি সেকেন্ড ইয়ারের বাসে যাও
.
কিন্তু শান্ত ভাইয়া আমার বান্ধুবী তো এই বাসে আর আমিও তো ফার্স্ট ইয়ারের,সে হিসেবে তো আমার এখন এই বাসে উঠার কথা
.
তো?আর একটা সিট খালি আছে মাত্র,সেটা তোমাকে দিলে তোমার জন্য কি আমি বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাব?
লেট করসো কেন তাহলে?এখন আর জায়গা নেই বাসে
.
রুপা মন খারাপ করে চলে গেলো আরেক বাসে
শান্ত বাসে উঠে তার সিটের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে দাঁত কেলিয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে,তাদের দাঁত কেলানোর মানেটা হলো তারা বিএফ জিএফ একসাথে টাইম স্পেন্ড করতে চায় শান্ত যেনো পিছনে গিয়ে বসে
শান্ত ব্রু কুঁচকে পিছনের দিকে চলে গেলো
আহানা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত দেখলো শুধু আহানার পাশের সিটটাই খালি
.
উফ এখন এই মেয়েটার সাথেই বসতে হবে আমাকে!
বাস এক টান দিতেই শান্ত গিয়ে আহানার গায়ে পড়লো
আহানা চমকে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ওর নাক বরাবর
দুহাত দুপাশে রেখে নিজেকে সামলিয়েছে শান্ত নাহলে আহানার মুখের সাথে লেগেই যেতো একটুর জন্য
আহানা চোখ বড় করে বললো আপনি!এখানে?
শান্ত আহানার কথায় কান না দিয়ে ঠিক হয়ে ওর পাশের সিটে বসে গেলো
.
আমি আপনার সাথে বসবো না,উঠুন আমি আরেক সিটে গিয়ে বসবো
.
শুনো অন্য সিট খালি হলে আমি তোমার সাথে এখন বসতে আসতাম না,ঢং!
.
আহানা মাথা উঁচু করে সামনের সিটগুলো দেখলো সব ফুল
তারপর বিড়বিড় করে একটু চেপে গিয়ে বসলো
.
শান্ত নিজের ফোন নিয়ে গান প্লে করে হেডফোনটা কানে গুজে নিলো
আহানা জানালা দিয়ে ভোরের ঢাকা দেখতেসে,কি সুন্দর,তেমন কোনো গাড়ী নেই,নেই কোনো যানজট,কি ভালো লাগতেসে আহানার,কতদিন পর ঘুরতে বের হয়েছে সে,একজন দুজন লোক রোড পরিষ্কার করতেসে
একটা গাছ থেকে কতগুলো পাখি কিচিরমিচির করতে করতে আরেকটা গাছে গিয়ে বসতেসে,আহানা সেটা দেখে হাসতেসে
শান্ত চোখ বন্ধ করে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলো
সেতু থেকে নামতে গিয়ে বাস একটা ব্রেক করতেই
আহানা গিয়ে সামনের সিটের সাথে জোরে একটা বাড়ি গেলো
.
আহহহ!!
.
শান্ত শব্দ পেয়ে জেগে চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো,তারপর মাথাটা একটু বের করে সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো বাস থেমে আছে সামনে কিছু লোক জড়ো হয়ে বাসের ড্রাইভারের সাথে ঝগড়া করতেসে,আর খারাপ ভাষায় গালি গালাজ করতেসে
শান্ত আবার কানে হেড ফোন গুজতে গুজতে পাশে তাকাতেই দেখলো আহানা মাথা ঘষতেছে হাত দিয়ে
.
বাসে চড়তে পারে না আবার পিকনিকে যায়,ঢং যত্তসব!
.
কথাটা শুনে আহানা রেগে পাশে তাকালে শান্তর দিকে
কি সমস্যা আপনার?আমি কি বলেছি আমার মাথায় মলম লাগাই দেন?
শান্ত আহানার কথা উপেক্ষা করে আবারও চোখ বন্ধ করে গান শুনায় মন দিলো
আহানা মনে মনে শান্তকে বকে বাইরের দিকে তাকালো
বেশ লাগতেসে,হালকা হালকা রোদ উঠতেছে
রোডের দোকানপাট নজরে আসতেসে স্পষ্ট,কেউ কেউ দোকান খুলতেসে,কেউ বা খুলে ফেলেছে,আবার অনেকেই খোলে নি
মনে হয় আরেকটা সেতু আসতেসে,আহানা ভয় পেয়ে শক্ত করে বাস ধরে রেখেছে আগে থেকেই
তাও বিরাট আরেকটা ধাক্কাই আহানার হাত স্লিপ খেয়ে আবারও সামনের সিটের সাথে বাড়ি খাওয়া ধরতেই সে
চোখ বন্ধ করে ফেললো সাথে সাথে
কিন্তু কই ব্যাথা তো পেলাম না
আহানা চোখ খুলে দেখলো একটা হাত এসে ওর সামনে দিয়ে গিয়ে জানালা ছুঁয়ে রেখেছে,এই হাতের জন্যই সে ব্যাথা পায়নি,হাতটা শান্তর
আহানা ব্যাথা পাবে বলে শান্ত তখন সাথে সাথে তার হাত দিয়ে দিছিলো আহানার সামনে
শান্তর হাতের কারণে আহানা আর সামনে সিট পর্যন্ত যায়নি,ব্যাথাও পায়নি
আহানা পাশে তাকাতেই শান্ত সাথে সাথে তার হাতটা সরিয়ে ফেললো
.
উফ কেন যে এসব uncultured মেয়েদের সাথে বাসে উঠলাম!
.
আপনাকে আমি ধরে রেখেছি নাকি,গিয়ে আরেক সিটে বসেন যান,আর সিট না পেলে এক কাজ করেন একটা মেয়েকে উঠিয়ে সিট বদল করেন,তার সিটে আপনি বসেন তাকে এনে এখানে বসান
.
তোমার কথায় চলবো আমি?এখানে সব কাপল বসেছে,নাহলে তোমার সাথে বসার কোনো ইচ্ছা নাই আমার,এত বকবক করে আমার মাথা খাবা না একদম
.
আহানা আবারও বিড়বিড় করে জানালার দিকে ঘুরে বসলো,বাতাসে ঘুম এসে যাচ্ছে তার
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে