প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৫

0
2294

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩৫
#Writer_Afnan_Lara
?
এসব কি বলতেসে বাবা??মানে টা কি
আর বাবা এভাবে চলে গেলেন কেন??
তোমরা কি বলেছো বাবাকে?
.
শান্ত কিসব ভাবতে ভাবতে সোফায় বসে পড়লো
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো আমি তোর বাবাকে বলে দিসি তুই প্রেগন্যান্ট ?
.
হোয়াট!!তোর মাথা ঠিক আছে তো?কি বলিস এসব
.
এমন করিস কেন, আজ নাহয় কাল তো প্রেগন্যান্ট হবিই তাহলে এত টেনসন কিসের আর তুই এ তো বলছিস রুমডেট করছস তাহলে তো প্রেগন্যান্ট হয়ে যাওয়ার চান্স আছে
.
মানে টা কি,এটা বলার আগে একবারও আমাকে জিগাইছোস তুই?
নওশাদ আমাকে ৭২ঘন্টার ইমারজেন্সি একটা পিল এনে দিসিলো,ওটা খাইসি আমি,আমি প্রেগন্যান্ট হবো না
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর পাশে বসে গেলো
.
হলো তো?হুদাই এত বড় মিথ্যা বললে তুমি
.
তোরে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আমাকে বলিস নি কেন?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কি করে বলবো,বাবা আমার ফোন নিয়ে গেছে
পরে মায়ের ফোন থেকে লুকিয়ে নওশাদকে বলেছি আমি
.
শান্ত আহানার কাঁধ ঝাঁকিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো এখন কি করবা?
.
প্রেগন্যান্ট হয়নি তো হয়ে যাবে
.
মানেহহহহ!
.
মানে আবার রুমডেট কর তোরা তাহলেই হবে,আপাতত আমি তুই নওশাদ আর শান্ত ভাইয়া সত্যিটা জানবো আর কেউ না,সবাই জানবে তুই প্রেগন্যান্ট
.
এক মিনিট আমি তোমার ভাইয়া না ওকে?
.
তো কি?
.
পাতানো বর
.
মানে?পাতানো কি আবার?তোরা কি বলিস এসব??
.
আমাকে আর কোনোদিন ভাইয়া ডাকবা না,নাহলে তোমার চুল ছিঁড়ে ফেলবো আমি
.
আপনি আমাকে পাতানো বউ ডাকবেন না একদম নাহলে আপনার গাল টেনে ছিঁড়ে আপনার হাতে ধরাই দিব আমি
.
কি বললে!!
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার চুল এলোমেলো করে দিলো
আহানা রেগে শান্তর গাল ধরে টেনে ওকে বাঁকিয়ে ফেলে সোফার সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
শুরু হলো মারামারি হানাহানি
.
রুপা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বক্সিং শো দেখতেসে,শেষে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো,ল্যান্ডলাইন থেকে নওশাদকে কল দিলো
.
হ্যালো রুপা?শান্ত সব সামলিয়েছে তো?
.
তুমি আর কাউকে পেলে না আমার বাসায় পাঠানোর জন্য?শুধু শান্ত ভাইয়া হলেও এক কথা ছিল,সাথে আহানাও আসছে এখন দুজন মিলে মারামারি করতেসে,আমার বিয়ে কি আটকাবে তাদের ঝগড়া কেমনে আটকাবো আমি সেটাই ভাবতেসি এখন
.
দাঁড়াও আমি আসতেসি,তুমি ওদের দুজনকে একটা রুমে লক করে রাখো নাহলে আমাদের আর এ জীবনে বিয়ে করা হবে না
.
আচ্ছা
.
আহানা!!শান্ত ভাইয়া!!
.
কি?
.
তোমরা চলো আমার রুমে কথা আছে
.
রুপা দুজনকে টেনে হিঁচড়ে ধাক্কা মেরে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দিলো
.
এই রুপা তুই দরজা আটকাইছিস কেন বেয়াদব!!দরজা খোল,রুপা!!
.
রুপা??তুমি দরজা লাগাইসো কেন?
.
সরি শান্ত ভাইয়া,নওশাদ বলসে আপনাদের খাঁচায় বন্দি রাখতে নাহলে দুজন একসাথে একজন আরেকজনকে মারতে মারতে আশেপাশের জনগণরেও ধরি পিটাবেন
.
আহানা!সব তোমার কারণে হইসে
.
আজব তো আমি কি করসি,আপনিই তো আগে আমার চুল টেনে দিসেন,নাহলে কি আমি দিতাম?
.
চুল টানছি তো কি হয়েছে,তোমার সাহস হয় কেমনে আমাকে ভাইয়া বলার
.
তো আপনি ভাইয়া নয়ত কি,চাচা জেঠা??
.
এই খবরদার আমাকে চাচা ডাকবা না
.
আপনি আমার চুল না টানলে এত কিছু হতো না
.
চুল টানসি বলে তুমি পাল্টা আমার গাল টানছো কেন?

নওশাদ প্লিস তাড়াতাড়ি আসো,ওরা আমার রুমকে উল্টায় ফেলতেসে,মারামারি করতে করতে সব ধুমধাম করতেসে.জলদি চলে আসো প্লিস
.
আমি আসতেসি,তুমি এক কাজ করো ঐ রুমের লাইট অফ করে দাও,অন্ধকারে তো আর মারামারি করবে না
.
রাইট!বাট লাইট অফ করতে হলে তো রুমের ভিতরে ঢুকতে হবে,এখন কি করবো?
.
তুমি বাসার কারেন্টের মেইন লাইট অফ করে দাও তাহলেই হবে
.
আচ্ছা ভালো বুদ্ধি
রুপা গিয়ে মেইন সুইচ অফ করে দিলো
আহানা শান্তর চুল টানতেছিলো আর শান্ত আহানার কান টানতেছিলো কারেন্ট চলে যাওয়ায় দুজনে ২০সেকেন্ড চুপ করে থাকলো
.
যাক বাবা দুজনে ঝগড়া থামিয়েছে,বাঁচলাম!!
.
সব আপনার কারণে হচ্ছে
না আপনি আমাকে এখানে আনতেন না এত কিছু হতো
.
এই শুনো,সব তোমার বেস্টুকে বাঁচাতে করতে হচ্ছে
.
নওশাদ ভাইয়া আপনার বেস্টু না?
.
তো,আগে তোমার বেস্টু রুপা
.
না আগে নওশাদ ভাইয়া
.
খোদা!!!অন্ধকারেও মানুষ কেমনে ঝগড়া করতে পারে!!নওশাদটা কখন আসবে,আমার তো মনে হচ্ছে এটম বোম ব্লাস্ট হতে আর বেশি দেরি নাই
.
বাসার পাশ দিয়ে দুটো বিড়াল হেঁটে যাচ্ছিলো,আহানা শান্তর মত তারাও একে অপরের সাথে ঝগড়া করতেসে
তাদের চেঁচামেচিতে আহানা ভয় পেয়ে শান্তর চুল টানা রেখে ওরে চেপে ধরলো
.
হিহি,আহানা ম্যাডাম আপনার ভয় লাগছে বুঝি?
.
ওটা কিসের আওয়াজ?
.
আহানা আর শান্তর বিড়াল ভার্সন?
.
ওহহ?
.
আহানা পা টা একটু পিছতেই নিচে থাকা একটা কার্পেটে তার পা লাগলো,এমনিতেও মনের মধ্যে ভয় কাজ করতেসিলো বিড়ালের চিৎকার চেঁচামেচিতে
হঠাৎ পায়ে কার্পেট লাগায় ভয় পেয়ে পড়ে যাওয়ার সময় আহানা শান্তর জ্যাকেট টেনে ধরলো
.
শান্ত অন্ধকারে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না,দুম করে আহানাকে নিয়ে বেডের উপর গিয়ে পড়লো
.
আহানা যখন বুঝতে পারলো শান্ত তার গায়ের উপর তখনই চিৎকার করতে যেতেই শান্ত ওর মুখ চেপে ধরলো
.
শুনো,তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওকে?তুমি পড়ে যাওয়ার সময় আমাকে ধরতে গেসো কেন,পড়লে তো আর মরে যেতে না
.
কি বললেন?আপনাকে ধরসি আপনি আমাকে সেভ না করে উল্টা আমার গায়ে পড়লেন,আপনার মনে মনে শয়তানি জানি আমি!
.
কি বললে তুমি,নিজে আমাকে নিয়ে বেডে পড়ে এখন আমাকেই দোষ দিচ্ছো?
.
আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাইট জ্বলে উঠলো
দুজনে দুজনকে এমন অবস্থায় দেখে শান্ত স্বাভাবিক ভাবে রিয়েক্ট করলেও আহানা ইয়া বড় এক চিৎকার দিলো
.
শান্ত সাথে সাথে কানে হাত দিয়ে উঠে গেলো বিছানা থেকে
.
আহানা চোখ বড় করে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
এত চেঁচাও কেন তুমি?
.
আপনার লজ্জা করে না এতক্ষন এই অবস্থায় থাকার পরেও?
.
কেন লজ্জা করবে,আমি কি তোমাকে টাচ করসি?একবারও?
.
দরজা খুলে নওশাদ আর রুপা ঢুকলো তখনই
.
কিরে শান্ত তুই কি বাচ্চা?এমন ঝগড়ুটে তো তুই ছিলি না,এখন এত ঝগড়া তোর আসে কই থেকে?
আহানা নাহয় ছোট তাই ঝগড়া করে আর তুই?তোর ঝগড়া করা খাটে না
রুপা পাগল হয়ে তোদের রুমে বন্ধ করসে,এমন করিস কেন?তোকে এ জন্যে পাঠিয়েছি আমি?
.
শুন,আমি সুন্দর করে হ্যান্ডেল করসিলাম ব্যাপারটা আহানা মাঝখানে দিয়ে বলে দিলো রুপা প্রেগন্যান্ট!
.
যা বলসে ভালো বলসে,এতে করে আঙ্কেল কোনো উপায় না পেয়ে রাজি হবেই
আহানা থ্যাংকস
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো হুহহহ সবাই তো সব কিছু পারে না,এসব শিখার জন্য ম্যাচুরিটি থাকা লাগে,কিছু কিছু বুইড়া খাটাশ এসব পারে নাহ
.
কি বললে?আমি বুইড়া খাটাশ??
শান্ত এগিয়ে গেলো আহানার চুল টানতে নওশাদ ওরে সামলিয়ে বাইরের দিকে টেনে নিয়ে গেলো
.
আহানা তোমারে ছাড়বো না আমি
.
ছাড়িয়েন না
.
এই আহানা চুপ কর,এত বড় একটা ছেলের সাথে সারাদিন ঝগড়া করতে তোর শরম করে না,ভয় করে না?
.
বাদ দে,উনি হুদাই এমন করে সবসময়,আমি কিছু করি না
.
জানি আপনি কি করেন আর না করেন,এখন চলেন

আচ্ছা আঙ্কেল আপনি নওশাদকে ১টা মাস টাইম দেন,নওশাদ একটা ভালো জব পেয়েই রুপাকে বিয়ে করে নিবে
.
রুপার বাবা চুপ করে থেকে বললেন পরের সপ্তাহে নওশাদ যেন তার ফ্যামিলিকে নিয়ে আসে
.
নওশাদ তো খুব খুশি,হ্যাঁ বলে দিলো
.
বাসা থেকে বেরিয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো সে
.
থ্যাংকস ভাই,বোন তোমাদের কারণে আমি রুপাকে আমার করে পাবো,থ্যাংকস এ লট
.
আহানা সেই কখন থেকে বাইকে উঠে বসে আছে,শান্ত নওশাদের সাথে কথা বলতেসে দূরে দাঁড়িয়ে
রুপাদের বাসাটা সুন্দর,রুপার বাবা রুপাকে কত ভালোবাসে,ওদের ভালোবাসাটা মেনে নিয়েছে,বিয়েও দিবে বলসে
ওদের এখন বিয়ে হবে,কত খুশি রুপা
আহানা আকাশের দিকে তাকালো,আমার বিয়ে হবে কিনা আমি সেটাই জানি না,বিয়ে দিতেও তো একটা পরিবার লাগে,বাবা মা ভাইবোন লাগে,আর আমার তো!
তার মানে আমার বিয়ে হবে না কোনোদিন,,হবে না কি বলছি আমাকে কে বিয়ে করবে??একটা অনাথ মেয়েকে
যার না আছে রুপ না আছে টাকা পয়সা না আছে যোগ্যতা,অবশ্য বিয়ে ছাড়াও জীবন কাটানো যায়,আমি নাহয় আজীবন কুমারি থেকে যাবো
একটা দিনের কথা মনে পড়ে গেলো,মীম আপুদের বাসার সকল বাজার,সব কাজ করে একটা ছেলে,নাম রাকিব,তার সাথে আমার বিয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল মীম আপু,তার মতে আমার আর সেই ছেলেটার পারফেক্ট ম্যাচ হবে
দুনিয়ায় যত ভালো ভালো পরিবার আছে তারা ভালো পরিবারের মেয়ের সাথেই তাদের ছেলের বিয়ে দেয়,তাই আমার জন্য মীম আপু সেই ছেলেটাকেই ভালো মনে করেছিল হয়ত,আমিও গরীব,সেও গরীব
মাঝে মাঝে হাসি পায় এই ভেবে যে মানুষ আমার জন্য কত ভাবে,তাদের ভাবনা শুনে হাসি পায়,কি দরকার এত ভাবার,আমি তো ভালো আছি,বিয়ে ছাড়াও একা জীবনে ভালো থাকা যায়
এবার বেতন পেলে তারেক আঙ্কেলকে মাসের বেতন দিব আর একটা পাঞ্জাবি কিনে দিব,আমার প্রথম সেলারি,অনেক খুশি হবেন,মীম আপু আর কনিকা আপুকে তো জামা কিনে দেওয়ার সাধ্য নেই,তাদের ছোটখাটো কিছু গিফট কিনে দিব,মাসের সদাই করতে হবে,আর ২টা জামা আর একটা শাড়ী কিনবো,রুপার বিয়েতে পরার জন্য,তার পরেও কিছু সঞ্চয় থেকে যাবে,ওগুলা জমা রেখে দিব,একদিন জমাতে জমাতে অনেক টাকা হবে,আমি একটা নিজের বাড়ি বানাবো,টিনের হলেও চলবে সেটা শুধু আমার বাড়ি হবে,২টো রুম থাকবে,একটায় আমি ঘুমাবো আরেকটায় রান্না করবো,একটা টিভি ও কিনবো,আমার টিভি দেখার শখ অনেক,বাজারের দোকানগুলোতে টিভি দেখলে মন চায় একটু গিয়ে দেখি কিন্তু!
থাক একদিন আমিও টিভি কিনবো

ওকে তুই বাসায় যা আমি আহানাকে ওর বাসায় দিয়ে এসে বাসায় ফিরবো
.
ঠিক আছে,বাই
.
শান্ত নওশাদকে বিদায় দিয়ে পকেট থেকে বাইকের চাবি নিয়ে আসতে আসতে দেখলো আহানা আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছতেসে
.
শান্ত থেমে গেলো,এসময়ে কাঁদতেসে কেন মেয়েটা,আমি তো কিছু বলি নাই,আগেও তেমন কিছু বলিনি তাহলে কাঁদে কেন!
এখন জিজ্ঞেস করলে কিছু বলবেও না,থাক অজানাই থাক
শান্ত বাইকে বসতেই আহানা চমকে কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে ঠিক হয়ে বসলো
.
শান্ত চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে,কিছু বলছে না,আহানাও বলছে না
বাইকের আয়নায় দেখা যাচ্ছে আহানা আকাশের দিকে চেয়ে আছে
.
আহানা জানো?
.
কি?
.
আমি আগে ভাবতাম আমি হাঁটলে আকাশের তারা চাঁদ ও হাঁটে আমার সাথে আর আমি থেমে গেলে তারাও থেমে যায়
.
আমিও সেটাই ভাবতাম
.
আমি এখনও ভাবি,ছোটবেলার কিছু কিছু ভুলধারনা ভুলেই থাকতে ভালো লাগে
আবার জানো আমি ভাবতাম টিভিতে যে শো দেখাতো সেখানের নায়ক নায়িকারা একটা জামার ভিতরে আরেকটা জামা পরে থাকতো,৫সেকেন্ডে তারা যেন জামা বদলাতে পারে,আমি বোকা জানতামই না যে ভিডিও কাট করা যায় ওরা জামা চেঞ্জ করার সময়টা কাট করে ভিডিও এডিট করা হতো
.
আহানা হেসে দিলো
.
শান্ত ও মুচকি হাসলো,আহানাকে সে হাসাতে পেরেছে
আহানাকে সব কিছুতে মানায় কিন্তু কান্নায় মানায় না,আহানাকে কাঁদতে দেখলে শান্তর বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়,সে সহ্য করতে পারে না আহানার চোখের পানি
সেদিন মোহনগঞ্জে রাতের বেলায় আহানার কান্নায় শান্ত নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়েছিল শুধুমাত্র আহানাকে সামলানোর জন্য,কারণ সে নিজেও কাঁদলে আহানাকে সামলানো যেতো না
.
তোমার বাসা এসে গেছে
.
আহানা বাইক থেকে নেমে শান্তকে বাই বলে হেসে দিয়ে চলে গেলো বাসার ভেতর
.
কান্নার পরেও যে এমন হাসতে পারে তার মত কঠিন মানুষ আর নেই
আমি কান্নার পর হাসতে জানি না আর এই মেয়েটা জানে,একদিন শিখে নিব,ওর থেকে শেখার অনেক কিছু আছে
কিভাবে হাতে টাকা না থাকলেও গায়ের অলংকার বেচে চাল কেনা যায়,কিভাবে শুধু ভাত নুন খেয়ে মাস কাটানো যায়,কিভাবে ২টো জামা দিয়ে বছর কাটানো যায়,একটা ধুয়ে আরেকটা পরে
আয়না না কিনে লেকের পানিতে নিজেকে দেখার বুদ্ধি
মেকআপ না করেও মুখে হাসি নিয়ে নিজেকে সুন্দর রাখা যায়
মা বাবা ছাড়া নিজেকে নিজেই আঁকড়ে ধরে কিভাবে বাঁচা যায়
আমি তো মাকে ছাড়া অচল আর এই মেয়েটা কিনা মা বাবা ছাড়া দিন অতিবাহিত করছে হয়ত তাই সে কান্নার পরেও হেসে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে
শান্ত জ্যামে বসে এসবই ভাবতেছে,আহানা extraordinary একটা মেয়ে!!
একটা ফেরিওয়ালা পাশ দিয়ে যাচ্ছে,তার কাছে হরেক রকমের আয়না
শান্ত লোকটাকে থামতে বলে একটা আয়না পছন্দ করে কিনলো
এটা আহানাকে দিব,কিন্তু ও তো এমনি দিলে জীবনেও নিবে না,কি করা যায়!
.
পরেরদিন সকালে আহানা মিষ্টিকে পড়াচ্ছে,মিষ্টি বললো মিস আমি তোমাকে একটা জিনিস দিব তুমি নিবা?
.
আহানা হেসে বললো কি?
.
মিষ্টি তার পিছন থেকে লুকানো একটা আয়না বের করে আহানাকে দিলো
.
আহানা চমকে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে,এটা তো সেই আয়না যেটা সে ঐদিন পছন্দ করেছিল,টাকার জন্য কিনতে পারে নাই
.
তুমি এটা পেলে কই,আর আমাকে কেন দিচ্ছো?
.
মিস প্লিস এটা নাও,আমার তরফ থেকে গিফট
.
কিন্তু এটা

নাও না প্লিস,নাহলে আমি কেঁদে দিব কিন্তু
.
আহানা মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে আয়নাটা নিলো
.
মিষ্টি মুচকি হেসে চেয়ে আছে,শান্ত ওকে যা যা বলতে বলেছে ও ঠিক তেমন করেই বলেছে
.
আহানা বাসা থেকে বের হতেই শান্ত লুকিয়ে আহানার হাতের দিকে তাকালো,হাতে আয়না দেখতে পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো সে
আহানা আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকালো,শান্তর বাসার দরজা খোলা
.
শান্ত দরজার পিছনে লুকিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আহানা কাউকে দেখতে না পেয়ে চলে গেলো বাসা থেকে,আজ ভার্সিটি অফ,শুক্রবার বলে
কিন্তু অফিস তো খোলা,১টা থেকে
.
আহানা বাসায় ফিরে সব পরিষ্কার করে নিলো,হাঁড়ি পাতিল মেজে রুমে আসলো হাত মোছার জন্য
তখনই আয়নার দিকে চোখ গেলো তার,এই প্রথম তার নিজের একটা আয়না হলো,নিজেকে আয়নার কাছে এসে দেখতেসে সে
কপালে পাতিলের কালি লেগে আছে,হাত দিয়ে মুছতে মুছতে ভাবলো পাতিল মাজার সময় লেগেছে হয়ত!
খুশি হয়ে আয়নাটা টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখলো,কি ভালো লাগতেসে আহানার,মিষ্টি খুব ভালো একটা মেয়ে,আমাকে গিফট করেছে তাও আমার পছন্দের একটা জিনিস,যেটার খুব দরকার ছিল আমার
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে