প্রেমের নাম বেদনা পর্বঃ১৮

0
1186

#প্রেমের_নাম_বেদনা?
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat

এভাবেই দিন যাচ্ছে।অর্নি একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।কারো সাথেই কথা বলে না।কেউ কিছু জিগ্যেস করলে হ্যাঁ না করে উত্তর দেয়।আরিয়ানও ওকে স্বাভাবিক করতে পারছে না।এর মধ্যে মাস্টার্সের ক্লাসে ভর্তি হলো কিন্তু ক্লাস করে না।আরিয়ান সব রকমে চেষ্টা করছে ওকে ঠিক করার কিন্তু পেরে উঠছে না।

নেহালের মৃত্যুর ৪ মাস হয়ে গেলো।আজ সকালে আরিয়ান অর্নি দের বাসায় গেলো।এটা নতুন না প্রতিদিনই যায়।আজ যাওয়ার পর অর্নির মাকে সালাম দিয়ে ওপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।অর্নির মা পেছন থেকে ডেকে বলল

“আরিয়ান একটু বলবে মেয়েটার কি করবো?ওকে এভাবে দেখতে ভাল্লাগছে না।তুমি কিছু একটা করো প্লিজ।এভাবেই আধমরা দেখার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।”

আরিয়ান ওপরে না গিয়ে অর্নির মায়ের সামবে এসে বলল

“আচ্ছা আন্টি দেখছি কি করা যায়।আপনি চিন্তা কইরেন না। ও ঠিক হয়ে যাবে।”

অর্নির মা শুধু চোখ থেকে পানি ফেললো কিন্তু কিছু বলল না।আরিয়ান অর্নির ঘরে গিয়ে দেখে ও বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।আরিয়ান পিছন থেকে এসে ওর পাশাপাশি দাড়িয়ে বলল

“কি রে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

“…….”

“কিছু তো বল।আচ্ছা চল একটু হেটে আসি।”

“…..”

“আরে চল তো ঘরে ঘরে বসে বসে একদম মুটকি হয়ে যাচ্ছিস।”

এই কথাটা অর্নি গায়ে লাগলো।ও আরিয়ানকে টেনে ঘর থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো।আরিয়ান কিছুই বুঝতে পারলো না কেনো এমন করলো।একটুপর জগিং স্যুট পরে বেরিয়ে এসে বলল

“চল।”

আরিয়ান মনে মনে খুশী হলো।তারপর দুজনই হাটতে গেলো। হাটতে হাটতে আরিয়ান বকবক করেই চললো কিন্তু অর্নি বোবার মতো হাটছে।হাটা শেষে দুজনে বাসায় এলো।আরিয়ান সোফায় বসতে বসতে বলল

“আমি নয়টায় আসবো তুই রেডি থাকিস আজ ক্লাসে যাবো।”

অর্নি কিছুই বলল না সোজা ওপরে চলে গেলো।আরিয়ানও ওর বাসায় চলে গেলো।

নয়টায় রেডি হয়ে আরিয়ান ওর বাসায় এসে দেখলো অর্নি ঘুমাচ্ছে।ওকে অনেক কষ্টে ডেকে তুললো তারপর বলল

“ঘুমাচ্ছিস কেনো?তোকে বললাম না ক্লাসে যাবো।রেডি হস নি কেনো?”

“আমি যাবো না।”

“মাইর চিনিস?মাইর দিবো।দাড়া এমনে কাজ হবে না একটা লাঠি নিয়ে আসি।”

অর্নি আরিয়ানের কথার সাথে না পেরে বলল

“আচ্ছা তুই নিচে যা আমি আসছি।”

“হুম দশমিনিটের মধ্যে আসবি।”

অর্নি রেডি হয়ে নিচে আসতেই আরিয়ান বলল

“খেতে বস।”

“ভালো লাগছে না।”

“ভালো না লাগলেও খেতে হবে।

আরিয়ান জোর করে ওকে টেবিলে বসালো তারপর খাইয়ে ওকে নিয়ে ভার্সিটিতে গেলো।অনেকদিন পর ভার্সিটিতে আসায় বর্ষা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল

” কেমন আছিস?”

“এইতো।তুই?”

“ভালো।চল বসি।”

দুজনে একসাথে বসলো আর আরিয়ান রিমনের সাথে বসলো।ক্লাস চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বর্ষা বলল

“তোদের কি ডিভোর্স হয়েছে?”

“মানে?”

“আরিয়ান আর তোর কি ডিভোর্স হয়েছে?”

“না।”

“তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দে কারণ তুই তো ওকে ভালোবাসবি না।তাহলে ওকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি এর চেয়ে ভালো ছেলেটাকে শান্তি দে।”

অর্নি কিছুই বলল না।ক্লাস শেষে আরিয়ান অর্নিকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে নিলেই অর্নি বলল

“শোন তোর সাথে কথা আছে।আমার রুমে আয়।”

আরিয়ান ভ্রু কুচকে ভাবলো কি এমন কথা যে রুমে ডেকে বলতে হবে।আরিয়ান কিছু না বলে ওর পিছনে পিছনে গেলো।অর্নি ব্যাগ রেখে বিছানায় বসলো তারপর বলল

“আমি এখন যা বলবো মনযোগ দিয়ে শুনবি।”

“আচ্ছা বল।”

“আমি ডিভোর্স চাই।”

আরিয়ান আৎকে উঠে বলল

“কি বলছিস?”

“হ্যাঁ নেহালের মৃত্যুর আগেই কিন্তু আমাদের মধ্যে এই কথা হয়েছিলো।তাহলে কথা মতো তুই আমাকে ডিভোর্স দিবি।”

“হ্যাঁ কিন্তু এখনতো নেহাল নেই আর নেহালও বলেছে আমি যেনো তোর খেয়াল রাখি তাহলে ডিভোর্স আসছে কোথা থেকে?”

“তুই জানিস আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলেই তো হয়।”

আরিয়ান আর কিছুই বলল না সোজা বসা থেকে উঠে গেলো তারপর অর্নির সামনে গিয়ে ওকে বসা থেকে দাড় করিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে কানে কানে বলল

“ডিভোর্সের নাম আর কখনো মুখে আনবি না।আমি তোকে ভালোবাসি।এটাতেই চলবে তোর ভালোবাসা লাগবে না।”

অর্নি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো আরিয়ান আবার ওর কাছে এসে বলল

“আবার বললাম শুনে রাখ আমি তোকে ডিভোর্স দিচ্ছি না।আর এখন থেকে তুই এই বাসায় থাকবি না।আমার সাথে চল।আমর ঘরে থাকবি।”

“আমি যাবো না।”

“তুই যাবি তোর ঘাড়ও যাবে।চল।”

এই বলে ওকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো অর্নি আরিয়ানকে কিল ঘুসি দিচ্ছে কিন্তু আরিয়ানের কোনো রিয়েক্ট নেই।ও অর্নির মাকে বলে ওলে গাড়িতে বসালো তারপর নিজে ওর পাশে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।অর্নি রেগে বলল

“বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু।

“এখনো করি নাই কিন্তু এখন থেকে বাড়াবাড়ি করবো।বাড়াবাড়ি কাকে বলে তুই দেখবি শুধু।”

“আরিয়ান ভালো হচ্ছে না।”

“ভালো না হলে নাই আমার ভালোর দরকার নাই।এখন তুই চুপ কর।”

“আমি যাবো না জোর করছিস কেনো?”

“ওইতো বাড়াবাড়ি কতো প্রকার এটা বোঝাচ্ছি।”

অর্নি আর কিছু বলল না অন্যদিকে চেয়ে রইলো।আরিয়ান বাকা হেসে মনে মনে বলল ‘বাড়াবাড়ি না করলে তুই কখনো ঠিক হবি না।’

#চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে