#প্রেমের_নাম_বেদনা?
#পর্বঃ১৭
#Arshi_Ayat
অর্নির পিছনে পিছনে আরিয়ানও গেলো।অর্নি গাড়িতে উঠলো পাশে আরিয়ানও বসলো।আরিয়ান এখনো বুঝতে পারছে না কি হয়েছে!!ও দেখছে অর্নি কাঁদছে।আরিয়ান কাপা কাপা কন্ঠে বলল
“ক.কি হয়েছে?কাদছিস কেন?”
“নেহাল এক্সিডেন্ট করেছে।কয়েকজন পুলিশ মিলে ওকে হসপিটাল নিয়ে গেছে।
“ও মাই গড।তুই এপাশে বস আমি গাড়ি ড্রাইভ করছি।
আরিয়ান আর অর্নি সিট চেঞ্জ করলো।আরিয়ান যতো দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালাচ্ছিলো।প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পর ওরা হসপিটালে গেলো।অর্নি পাগলের মতো ছুটতে লাগলো পিছনে আরিয়ানও ছিলো।রিসিপশনে নেহালের নাম বলতেই ওরা আইসিউ দেখিয়ে দিলো।অর্নি আইসিইউর সামনে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো।আরিয়ান গিয়ে ওকে ধরে উঠালো
” কাদিস না প্লিজ।ওর কিচ্ছু হবে না দেখিস।”
আরিয়ানের পাশে একটা পুলিশ এসে দাড়ালো তারপর বলল
“উনি রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা ট্রাক ওনাকে ধাক্কা দেওয়ায় গুরুতর ভাবে যখম হন।কেউই ওনাকে হসপিটালে নিচ্ছিলো না পরে ট্রাফিক পুলিশ আমাদের খবর দেয়।আমরা গিয়ে দেখে মৃত ভেবেছিলাম কিন্তু পালস চেক করার পর দেখলাম এখনো বেঁচে আছে।তাই হসপিটালে নিয়ে এলাম।আর উনার কল লিস্টের ওপরে অর্নি নাম থাকায় আমরা তাকে কল করি।
পুলিশ অফিসার টা কথা বলতে বলতে ডাক্তার বেরিয়ে এলেন।অর্নি দৌড়ে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে কান্না করতে করতে বলল
” ও..ও ঠি..ঠিকাছে তো?”
“শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে আর মারাত্মক ইনজুরি হয়েছে আমরা দেখছি কি করা যায়।”
এটা বলেই ডাক্তার চলে গেলেন।অর্নি কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই বসে পড়লো আরিয়ান বার বার ওকে শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।এর মধ্যেই নেহালের বাবা মা আর ফ্রেন্ড রা চলে এলো।অর্নি তখনো কাদছে।হসপিটালের পরিবেশ ভারী হয়ে গেলো।অর্নি,নেহালের বাবা,মা বোন সবাই কাদছে।বন্ধুদের চোখেও পানি।
রাত ৯.০০ টা
ডাক্তার আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এলেই ওর মা অর্নি আর আরিয়ান ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ডাক্তার বলল
“কন্ডিশন খুব খারাপ।আপনাদের মধ্যে আরিয়ান,অর্নি আর ওনার মা বাবা এই চারজনকে ভেতরে যেতে বলেছেন।”
তারপর ডাক্তার চলে গেলো।ওরা চারজন ভেতরে যেতেই দেখলো নেহাল চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে দুইপা ব্যন্ডেজ বুকেও ব্যান্ডেজ করা।হাতে স্যালাইনের নল লাগানো।মাথায় ব্যান্ডেজ করা।ওরা কাছে আসতেই নেহাল চোখ খুললো।তারপর মা’কে বলল
“মা আমার আর সময় নেই তুমি বাবার আর নিরার খেয়াল রেখো।নিরারকে বকা দিয়ো না।আর নিজের যত্ন নিয়ো।”
নেহাল মা কিছুই বলল না শুধু কান্না করেই চলছে।নেহাল থেমে আবার বলল
“বাবা তোমাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি সবসময় বেস্ট বাবা ছিলে।তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি আমি কিন্তু কি করবো বলো!সবই নিয়তি!”
নেহালের বাবা মা দুজনই কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো এখানে দাড়ানোর শক্তি দুজনের কারোরই নেই।এবার নেহাল অর্নির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল
“কেদো না! তোমার মুখে কান্না মানায় না।হাসবে সবসময় আমার কথা মনে পড়লে একদমন মন খারাপ করবে না।মনে রাখবে আমি তোমার সাথেই আছি।”
অর্নি কাদতে কাদতে বলল
“তুমি এমন কেনো বলছো?তোমার কিচ্ছু হবে না দেখো।তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।”
নেহাল আবার ও হাসলো তারপর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
“তোমার আগে থেকেই আমি ওকে ভালোবাসতাম কিন্তু আফসোস ও আমার কপালে ভালোবাসা নেই।যাইহোক তুমি ওকে ভালো রাখবে একজন মৃত্যু পথযাত্রী হিসেবে আমার এই ইচ্ছেটা তুমি অবশ্যই রাখবে।আরিয়ান,অর্নি তোমরা দুজন একটু আমার কাছে আসবে?”
নেহালের কথা শুনে দুজনই এলো।নেহাল আরিয়ানের হাতের ওপর অর্নির হাত দিয়ে বলল
“আরিয়ান তুমি এই হাতের হেফাজত করো আমার ভালোবাসা তোমায় দিয়ে…
আর কিছুই বলতে পারলো না তার আগেই খুব বড়ো একটা নিশ্বাস ছেড়ে দিলো।আর সাথে সাথেই রুহ শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেলো।অর্নি নেহালকে ধরে জোরে জোরে কান্না শুরু করে দিলো আর কান্না মিশ্রিত গলায় বলতে লাগলো
” এ..এই ওঠো না।এভাবে শুয়ে আছো কেনো?আমাকে কেনো এভাবে ছেড়ে চলে গেলে বলো?”
কাঁদতে কাঁদতে অনেক কিছুই বলছে কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।আরিয়ান ওকে সামলাতে পারছে না।আরিয়ানেরও কান্না আসছে কিন্তু অর্নির কান্না দেখে আর কাদতে পারছে না।সবাই কাঁদছে।
নেহাল মারা গেছে দুদিন হলো।ওকে কবর দেওয়ার পর আর ঘরের থেকে একনজরের জন্যও বের হয় নি অর্নি।আরিয়ানসহ সবাই ডেকেছে কিন্তু কেউ ওকে বের করতে পারে নি।
আজ তৃতীয় দিন..
আরিয়ান আজও খাবার নিয়ে অর্নিকে ডাকছে কিন্তু ও দরজা খুলছে না।এভাবে কিছু হবে না ভেবে আরিয়ান মই দিয়ে বারান্দায় এসে দেখলো অর্নি হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে।আরিয়ান কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত দিতেই অর্নি আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিলো।আরিয়ান ওর পাশে বসে বলল
“কিছু খেয়ে নে।দুদিন হয়ে গেলে কিছু খাচ্ছিস না।এভাবেতো চলবে না।”
“….৳”
“আচ্ছা কারো জন্য না নেহালের জন্য খা।তুই জানিস না তুই না খেলে ও রাগ করে।তুই চাস ও রাগ করুক?”
অর্নি কিছুই বলছে না শুধু কাদছে।আরিয়ান খাবার নিয়ে এসে ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো।খাওয়া শেষ হতেই অর্নি বলল
“আমাকে একটু নেহালের কবরের সামনে নিয়ে যাবি।দুদিন হয়ে গেলো একবারও দেখি না।
এটা বলেই আবার কান্না করে দিলো।অর্নির কান্না আরিয়ানের মনও ভারী করে তুললো।ও অর্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
” কাদবি না একদন।নেহাল কি বলেছিলো মনে নেই?তোর মুখে হাসি মানায়।তোকে ও কাঁদতে মানা করেছে কিন্তু তুই এখনো কাদছিস।”
অর্নি ভেজা চোখ আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার কেঁদে ফেললো।কিছুতেই চোখের পানিগুলো বাঁধ মানছে না।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান আর অর্নি নেহালের কবরের সামনে গেলো।আরিয়ান আর অর্নি কবর জিয়ারত করলো তারপর অর্নি চুপচাপ নেহালের কবরের সামনে দাড়িয়ে রইলো।
তারপর বলতে শুরু করলো
“ভালো আছো?জানো দুদিন খুব কষ্ট হয়েছে তোমাকে দেখতে পারি নি বলে।এখন আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু না আমি কাদবো না কারণ তুমিতো কাদতে মানা করেছো।তাই কাঁদবো না।তুমি ভালো থেকো।ভালোবাসি।”
আর কিছু বলতে পারেনি অর্নি চোখ থেকে পানি পড়া শুরু হলো।চোখ মুছে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)