#প্রেমের_নাম_বেদনা?
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat
আরিয়ান ভিতরে ভিতরে ভয় পেতে লাগলো অর্নি আরিয়ানকে দিবে বলে।অর্নি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“কি রে তুই কি নিবি?”
“ডেয়ার।”
“তুই গিয়ে রাস্তা যে মেয়েকে প্রথম দেখবি ওরে প্রপোজ করবি সাথে আমরাও যাবো।আর প্রপোজ জোরে করবি যাতে রাস্তার সবাই শুনতে পায়।”
“একবার তো তোরে করছি এখন আবার অন্য কাউকে করতে হবে!!আচ্ছা চল।”
সবাই পিছনে পিছনে হাটছে আর আরিয়ান আগে আগে হাটছে।একটা মেয়েকে আসতে দেখা গেলো।অর্নি পিছন থেকে বলল
“শুরু কর।”
আরিয়ান আস্তে আস্ত সামনে এগুচ্ছে আর মেয়েটাও আসছে।কাছাকাছি আসতেই দেখা গেলো মেয়েটা টেরা।আরিয়ান পিছনে তাকিয়ে বলল
“এটা তো টেরা।”
“টেরা হইছে তো কি হইছে?মেয়ে তো!!যা প্রপোজ কর।”
আরিয়ান মনে মনে অর্নিকে গালি দিতে দিতে সামনে এগুচ্ছে আর পিছনে ওদের হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে।আরিয়ান মেয়েটার সামনে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল
“I love you.”
তারপর চোখ খুলে দেখে মেয়েটা হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ান মনে মনে বলল ‘আমি তো ওর সামনে ও অন্যদিকে তাকাচ্ছে কেনো!!মেয়েটা যে টেরা এটা মনে পড়তেই বুঝলো যে মেয়েটা অন্যদিকে নয় ওর দিকেই তাকিয়ে হাসছে।আরিয়ান মেয়েটাকে বলল
“আপু আসলে ফ্রেন্ড ডেয়ার দিয়েছিলো তাই এটা পূরণ করেছি।”
কে শুনে কার কথা মেয়েটা আরিয়ানের হাত ধরে বলে
“আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি।”
আরিয়ান কি করবে বুঝতে পারছে না।আর ওরা পিছনে ইচ্ছামতো হাসছে।মেয়েটা কিছুতেই ওর হাত ছাড়ছে না।অর্নি আরিয়ানের পাশাপাশি দাড়িয়ে মেয়েটিকে বলল
“আপু এই ছেলেটা বিবাহিত তাই প্লিজ ওর হাতটা ছেড়ে দিন।”
অর্নির কথা শুনে সবার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।সবচেয়ে অবাক হলো রাদিফ আর রিমন ওরা ভাবছে ও কিভাবে জানলো!!
অর্নির কথা শুনে মেয়েটা আমসিপানা মুখ করে চলে গেলো।তারপর অর্নি হাসতে হাসতে বলল
“সরি রে তোর বিয়ে না হতেই তোকে বিবাহিত বানিয়ে দিলাম।”
“তোর জন্যই তো এটা হলো।(আরিয়ান)
” ডেয়ার ইজ ডেয়ার।আচ্ছা চল বাসায় চল।”
অর্নির কথায় রাদিফ আর রিমন স্বস্তি পেলো।তারপর সবাই মিলে আবার ছাদে চলে গেলো এবার রাদিফ দিবে অর্নিকে।রাদিফ বলল
“কি নিবা?”
“ডেয়ার।”
“ওকে তাহলে হলুদে কাপল ডান্স দিতে হবে উইথ আরিয়ান।আরিয়ান লাফিয়ে বলে উঠলো
“না না আমি করবো না।”
অর্নিও বলল
“না অন্য কিছু দাও।”
রাদিফ মিটমিটিয়ে হেসে বলল
“ডেয়ার ইজ ডেয়ার।করতে হবে।”
অর্নি মুখ বাঁকা করে বলল
“ওকে করবো।আরিয়ান ডান্সই তো করতে বলছে বিয়েতো করতে বলে নাই।আর তোকে যখন রিমন ডেয়ার দিয়েছিলো তখন কিন্তু আমি তোর সাথে ডুয়েট গাইছিলাম সো এখন তোরও ও আমার সাথে ডান্স করতে হবে।”
আরিয়ান উদাস ভঙ্গিতে বলল
“আচ্ছা করবো।”
খেলা শেষে সবাই উঠে পড়লো।যে যার যার ঘরে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।একটুপর সবাইকে খাওয়া দাওয়ার জন্য ডাকা হলো।সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করলো।খাওয়া শেষে শিউলী,আইরিন,রুমি ওরা আরিশা কে পার্লারে নিয়ে গেলো।অর্নিকে ওদের সাথে যেতে বলল কিন্তু অর্নি গেলো না ওর পার্লারে যেতে ভালো লাগে না।এদিকে রাদিফ,রিমন আর আরিয়ান ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছে। তো তিনজন গাড়িতে ওঠার পর রাদিফ হুট করে বলল
“গাড়িটা স্টার্ট দিস না আমি আসছি।”
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি
আসিস।” (আরিয়ান)
রাদিফ বাসায় গিয়ে অর্নি রুমে গিয়ে দেখলো ও বসে বসে একটা উপন্যাস পড়ছে।রাদিফ ওর সামনে এসে বলল
“অর্নি ঘুরতে যাবা?”
অর্নি বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে ভ্রু কুচকে বলল
“কোথায়?”
“এদিকে কাছে কোথায় একটা মেলা হচ্ছে।আমরা তিনজন যাচ্ছি।তুমি যাবে?”
“আচ্ছা চলো।ওরা তো পার্লারে গেছে আর তোমরাও বের হবে আমি একা একা বোর হয়ে যাবে তার চেয়ে বরং গিয়ে ঘুরে আসি।”
“আচ্ছা চলো।”
“তুমি বাইরে গিয়ে দাড়াও আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।”
“ওকে।”
রাদিফ বাইরে গিয়ে দাড়ালো।একটু পর অর্নি আসতেই ওকে নিয়ে গাড়ির সামনে এসে বলল
“ও একা বাসায় বসে কি করবে তাই ওকে ও নিয়ে এসেছি।”
রাদিফ এটা বলে রিমনকে চোখ মারে।রিমন রাদিফের চাল বুঝতে পেরে বলে
“হ্যাঁ একদম ঠিক কাজ করেছিস।নাহলে ও ঘরে থেকে বোর হয়ে যেতো।”
এদিকে অর্নিকে দেখে আরিয়ান মুড পুরো খারাপ হয়ে গেলো।ভেবেছিলো পিছনে দুই সিটে আরাম করে বসবে কিন্তু তা আর হলো কই!!অর্নি এসে আরিয়ানের পাশে বসলো।রিমন গাড়ি স্টার্ট দিলো।দশ পনেরো মিনিট পর একটা মেলার সামনে এসে গাড়ি দাড় করালো।মেলায় অনেক মানুষ গিজগিজ করছে।ওরা চারজন গাড়ি থেকে নানলো।আর মানুষজন ঠেলেঠুলে ভিতরে গেলো।রাদিফ নাগরদোলা দেখে বলল
“নাগরদোলায় চড়বি?”
রিমন বলল
“আমিতো চড়বোই।আরিয়ান তুই?”
“আমিও আছি।”
অর্নি মুখ কালো করে বলল
“আমি পারবো না আমার ভয় করে।”
রাদিফ হেসে বলল
“প্রথম প্রথম একটু ভয় করে কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যায়।সো চলো তোমাকেও চড়তে হবে।”
প্রথমে অর্নি আর আরিয়ান উঠলো।আরিয়ান অর্নির সাথে উঠতে চায় নি কিন্তু রিমন আর রাদিফ জোর করে উঠিয়েছে।নাগরদোলা ঘোরানো শুরু করতেই অর্নি চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে আরিয়ানের শার্ট খামছে ধরে ওকে জড়িয়ে ধরলো।বেচারা আরিয়ান ওকে শান্ত করতে বলল
“চোখ খোল ভয় করবে না।”
“না না আমি পারবো না পড়ে যাবো।”
যতক্ষণ নাগরদোলা চলল ততক্ষণ অর্নি আরিয়ান কে গলা জড়িয়ে রেখেছিলো।আর এটা রিমন খুব সুন্দর করে ভিডিও করে রাখলো।তারপর ওরা নামারপর রাদিফ আর রিমন চড়লো।
এদিকে অর্নি ফুচকা দেখে সেদিকেই দৌড় দিলো এটা আবার ওরা কেউ ই খেয়াল করে নি।অর্নি দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো।আর আরিয়ান, রিমন,রাদিফ তিনজন মিলে ওকে খুজছিলো।হঠাৎ আরিয়ানের নজর পড়লো ফুচকাওয়ালার দোকানে।অর্নি ওখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মনের সুখে ফুচকা খাচ্ছে।আরিয়ান রেগে ওকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্নি একটা ফুচকা আরিয়ানের মুখের সামনে ধরলো।ও কিছুই বলতে পারলো না টুপ করে ফুচকা টা অর্নির হাত থেকে খেয়ে নিলো।এটা রাদিফ দেখে চুপিচুপি ওর ফোনে ভিডিও করলো।তারপর ওরা দুজন ওদের কাছে গেলো এবং চারজনই ফুচকা খেতে শুরু করলো।সব থেকে বেশি অর্নি খেয়েছে।ওদের ফুচকা খাওয়া শেষে পুরো মেলাটা ঘুরতে লাগলো।অর্নি একটা কসমেটিকসের দোকানের সামনে দাড়ালো চুড়ি কিনবে এই জন্য কিন্তু ওর এক সেট চুড়ি ও পছন্দ হচ্ছে না।হঠাৎ আরিয়ান অর্নিকে সোজা ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল
“এভাবে একটু দাড়া।”
“কেনো?”
“দাড়াতে বলছি দাড়া।”
আরিয়ান একটা ছোটো সাদা নাক ফুল অর্নির নাকে পরিয়ে দিলো।তারপর হেসে বলল
“অর্নি তোকে এই নাকফুলে অনেক সুন্দর লাগছে।”
অর্নি আয়ানায় নিজেকে দেখে মনে মনে বলল আসলেই সুন্দর লাগছে।তারপর মুচকি হেসে বলল
“থ্যাংকিউ ইয়ার।”
তারপর ওরা ওই নাকফুল টা কিনে নিলো কিন্তু অর্নির আর চুড়ি কেনা হলো না।
আরো কিছুক্ষণ থেকে ওরা বাসায় রওনা হলো।
চলবে….