প্রেমের আটফোড়ন পর্ব-০২

0
1847

#প্রেমের আটফোড়ন 🍁🍁
পর্ব :২
writer : arshiya shidratul falak
.
.
.

ক্লাসে রেহানা আর অধরা পাশাপাশি বসেছে,। রেহানা ক্লাশে বেশ মনযোগ দিয়ে আছে,, স্যার জীববিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করছে। কিন্তু অধরা পড়ে আছে তার সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাকে নিয়ে, বেচারি বেশ ভয়ে আছে।

অধরার এমন ভাবনার মাঝে ডুবে থাকা রেহানার পছন্দনা।তাই রেহানা অধরাকে ডাকতে লাগলো,,,,

অধরা এই অধরা কি হইছে তর এভাবে বসে আছিস,, স্যার তো কেলাবে তকে,,,

আরে সে কিছু আসলে মাথাটা একটু ধরেছে এই আরকি।

হোয়াট কি বলছিস তুই। তাহলে চল ডাক্তারের কাছে যাই,,,,

ডাক্তারের নাম শুনে তো অধরা মুখটা মলিন করে ফেলে,,, কারন তার হাতে এখন টাকা নেই,, যা টাকা ছিল, সব বাসা বাড়া দিয়ে দিয়েছে, ৩টা টিউশনি করে আর কি টাকা পাবে,, পাশের বাসার ভাবি আছে বলেই আজ অধরা টিউশনির টাকায় নিজের খরচ এবং পড়ালেখার খরচ চালাতে পারেন। ভাবিটা বড্ড ভালো যখন যা চায় তাই পায় ,, অধরা জোর পূর্বক হাসি টেনে বলল,,,

পাগল হইছেন আপনি???

অধরার মুখে শব্দটা শুনে রেহানার ভীষন রাগ হতে লাগলো,,,

এই মেয়ে তুই আমাকে আপনি করে বললি কেন, বন্ধুত্বের মাঝে কখনো আপনি করে বলাটা কোন উপন্যাস কিংবা ডিকশনারিতে পেলি বল তো,,,????

আসলে আপনি অনেক বড়লোক বড় মনের মানুষ। আমার সাথে যে ফ্রেন্ডশীপ করছেন সেটাই হয়তো ভাগ্য। কারন আপনি কোথায় আর আমি কোথায়।

অধরা এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে,, আমি তোকে একটা কথা বলি। আমাদের মাথার সবগুলো চুল কিন্তু এক সমান না কিন্তু তবুও সব চুল একসাথে থাকে, সো ধনী গরিব এসব বাদ দিন শেষে তোরা যেমন মানুষ আমরাও তেমনই,, সব চেয়ে বড় কথা বলো আমাদের বাবা আমাদের কখনো সেই শিক্ষা দেয়নি ,,,,

রেহানা এগুলো কি বলল এসব কিছুই মাথায় গেল না অধরার তবে শেষের কথাটা বেশ বুঝলো, তাদের বাবা তাদের এমন শিক্ষা দেয় নি,,, নিজের অজান্তেই তাকে স্যালুট জানাতে ইচ্ছে করছে অধরার। কত বড় মনের মানুষ হতে পারে রেহানার বাবা ।।

এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাস শেষ হল পড়ায় আর মনোযোগ বসাতে পারলনা,,,

_____________________

ভার্সিটি শেষে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হতে যায়,, তখনই রেহানা পেছন থেকে ডাক মারে

অধরা এই অধরা দাড়া একমিনিট।

অধরা দাড়িয়ে রইল তারপর রেহানা দৌড়ে আসলো এসেই বলল তর নোট আমার কাছে নিয়ে গেলাম, কাল দিয়ে দেব। আসলে কিছু ইম্পোটেন্ট লিখা আমি তুলি নাই। কিছু মনে করিস না কাল দিয়ে দেব,,,

আচ্ছে ঠিক আছে।
তারপর বলল বাড়িতে যাচ্ছিস,,,???
হুম!!!
তাহলে চল তোকে ড্রাইভ করে আমি বাসায় যাব।।

না রে দোস্ত আমি হেটেই যেতে পারব, তুই বরং যা আমার লেট হবে একটু।।

কি বললি হেটে যাবি এত দূর, পাগল হলি নাকি এত দূর হেটে যাওয়া কি সম্ভব,,,

দোস্ত আমার একটা টিউশনি আছে এখন তুই যা । আমি পারব আমার অভ্যাস আছে।।

অনেক রিকোয়েস্টের পর রেহানা বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো নিজের গন্তব্য অধরা একা একা হেটে চলেছে রাস্তার পাশ দিয়ে, কিছু দূর যাওয়ার পর দেখতে পেল একটা ছেলে বাইক নিয়ে এগিয়ে আসছে অধরার দিকে ,, অধরা বেশ বুঝতে পেরেছে এই ছেলেটি সেই ছেলটি কিন্তু কি যেন নাম……
ও হে রিহান চৌধুরি। আলু ঢেরশের বর্তা,, আমার পিছন এভাবে লেগে আছে কেন আমি কিছু করেছি তাকে,, তাকে আমি চুমো দিছে পরিবর্তে যে আমার গাল ছোয়েছে তার সাথে,, আর চুমোটাকে কি আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে দিছি নাকি বিপদে পড়ে দিছি ,, আমার পিছন এভাবে লালগো কেন সব তো সমান সমানই,,,,

অধরার ভাবনার মাঝেই রিহান এসে বলে

মিস কি যেন নাম……

অধরা বিনতে যাবা

ও রিয়েলি অধরা বিনতে সাবা তা আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন,,, আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে এভাবে তাকাবেন আমারও তো লজ্জা আছে নাকি,,,,

অধরা মনে মনে বলে এএএ কোথাকার কোন গুন্ডাপান্ডা আইছে ভাব দেখাইতে,,, নিজের প্রসংশা নিজে করে,,,
আদরা তকে শক্ত হতে হবে।। শক্ত হ শক্ত হ ভয় পেলে চলবে না নিজে নিজেই বলে

এই মেয়ে এভাবে তাকাবেন না,, জানি ক্রাশ খাইছেন ইনফেক্ট সব ভার্সিটির সব মেয়েই আমার উপর ক্রাশ সেখানে আপনি তো……..

থামুন অনেক বলছেন এবার থামুন,,,,, 😡
কি বল্লেন ক্রাশ তাও আপনাকে দেখে হাস্যকর বিষয়। আপনার এই গুনধর চেহারার ক্রাশ খাওয়ার চেয়ে হিরো আলমকে দেখা অনেক বেটার মনে করি আমি।।

রিহান গেল এবার রেগে,,

কি বললেন আপনি। আপনি আমার সাথে হিরো আলমের তুলনা করতে গেছেন,,,

তা নয়তো কি নায়ক সালমান খানের সাথে তুলনা করব নাকি!!!!!!

অধরার কথা শুনে রিহান বেশ অভাক হয়। যেখানে রিহানের সাথে কথা বলার জন্য মেয়েরা সারিবব্দ ভাবে দাড়িয়ে থাকে,, এমন কি যুদ্ধও লেগে যায় সেখানে তাকে এই মেয়ে হিরো আলমের সাথে তুলনা করল,, এই মেয়েকে তো ছাড়া যায় না।।

এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলেন । আপনাকে কিন্তু সম্মান দিয়ে কথা বলতাছি।।

আজিব মুখ আবার সামলাবো কি করে,,, অধরা কি পাগল হইছিস নাকি মাঝ রাস্তায় কোথাকার কোন উগান্ডার সাথে কথা বলছিস,,, তর না টিউশনি আছে যা বাগ,,, নিজে নিজেই বলতে বলতে চলে গেল।।

এই মেয়ে আমাকে কি বলল উগান্ডা আমি। আবার হিরো আলমও।

এই মেয়ে দাড়ান বলছি দাড়ান কে শুনে কার কথা অধরা হেটে চলেই যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর আর ডাকলো না রিহান কারন তার ফোনে তার বাবার কল, তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে তাই আর থামলো না। তবে হিসবা তোলা রইল।।।।।।।।।।

বাসায় গিয়ে দেখতে পেল বাবা একদিক ফিরে বসে আছে, আর বোন একদিকে,, বোনটা আর কেউ না অধরার বন্ধুবী রেহানাই রিহানের একমাত্র আদরের ছোট বোন,,,,,,

তাদের মুখের এমন অবস্হা দেখে রিহান ফিক করে হেসে দিল,,,, তার রেহেনাকে উদ্দেশ্যে করে বলতে লাগলো,,,,,

কি রে তেতুল গাছের শাকচুন্নি এভাবে মুখটাকে বাংলা পেচার মতো করে আছিস কেন,????

কি বলল তুমি,,, আমি শাকচু্ন্নি আর কি বলল পেচা 😡তাহলে তুমি কি ভাইয়া,,

আমি হলাম রিহান চৌধুরি,,, 😎😎

এএএ আইছে রিহান চৌধুরি। তোমাকে তো দেখে নিব আমি, আগে যাও তোমার গুনধর বাবাকে বুঝাও মিষ্টি জিনিসটা একটু কম খেতে। কত করে বলছি সুগারে তোমার সমস্যা বেশি সুগার করো না তা তো না ওনি উল্টাই আমাকে জ্ঞান দিতে আসে,,, আমার সব জ্বালা একদিকে গুধর ভাই, আরেক দিকে বাবা ওফ আর পারছিনা,, কবে যে এই ঘরে বৌ আসবে আল্লাহ জানে। আর যে বৌ আসে তাকে নির্ঘাত পাগল হতে হবে। আমি এখন সিক সো পরে কথা বলব রুমে গেলাম।

রেহানা হন হনিয়ে চলে গেল।রিহান বোকার মতো তাকিয়েই আছে। বোনের চলে যাওয়ার দিকে। তারপর ধ্যান ভেঙ্গে বাবার কাছে যায়।।

বাবা আজকেও তুমি মিষ্টি খাইছো,??

আরিফ চৌধুরি এবার একটু নার্ভাস হয়ে যায়,, অসহায়ত্ব ফেস নিয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,,,

আসলে তোরা কেউ তো বাসায় ছিলিনা। আর রহিমাকেও(কাজের মেয়ে) তো দুইদিনের ছুটি দিয়েছি তার বাবা অসুস্থতা দেখে। তাই ভাবলাম ঘর যেহেতু ফাকা একটু তো খাওয়া যেতেই যা ভাবা তাই কাজ। ফ্রিজ খোলে একটু মিষ্টি নিলাম প্লেটে মুখে দিতেই কি না দিতে তোর বোন সামনে হাজির,,, তবে এবার হাজির হইছে হাতে লাঠি নিয়ে। তারপর আরো কত কি ।।

হইছে থামো এবার। তোমার কি আমাদের জন্য মায়া হয়না জানো না আমি রেহানা তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তুমি তো জানো সুগারে তোমার প্রবলেম তাহলে কেন বার বার এসব খেতে যাও,,

হয়েছে আর বলতে হবে না, তবে তোর কাছে একটা রিকোয়েস্ট আছে আমার!!!

হুম বলল কি বলবা,????

রাখবি তো?? ৷

আগে বলেই দেখনো,,, আমি কি তোমার কোনো রিকোয়েস্ট অমান্য করেছি নাকি।

সেটা ঠিক তবে আজকের টা ভিন্ন

আচ্ছা বল।।

বয়সো অনেক হলো এবার তো একটা বিয়ে করা দরকার।।।

বাবার মুখে এমন কথা শুনে রিহান যেন আকাশ থেকে পড়লো,,

কি বলল বাবা বিয়ে। তাও এই বয়সে পাগল হইছো। এই বয়সে কে আসবে তোমাকে বিয়ে করতে????

আরে বোকা ছেলে আমার জন্য না তো তোর কথা বলছি আমি।।

রিহান নিজের কথা শুনে কিছু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,,,

বাবা ছেলে যখন হয়েছি বিয়ে একদিন করতেই হবে সো এখন এসব বিষয়ে জড়াতে চাই না। সময় আসোক তারপর দেখা যাবে।

বাবাও ছেলের কথার উপর আর কিছু বলল না। মুখটাকে গোমরা করে চলে গেলেন।

রিহানও এসব আর পাত্তা দিলেন না চলে গেলেন রুমে,,, ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে বন্ধুদের আড্ডায়,,,,,,,,,,,

____________________________

এদিকে অধরা টিউশনি করে বাসায় ফিরে। বিকেল ৫টায় আরেকটা টিউশনি আছে,, এসব ভাবার মাঝেই ভাবী আসলেন,,,

অধরা আসবো???

জি ভাবী আসেন। বসুন এখানে,,,

অদরা খেয়াল করলো ভাবী হাতে টিফিন নিয়ে দাড়িছে আছে।

কি হলো,, ভাবি বসুন

না অধরা আজকে বসবো না , অন্য একদিন আড্ডা দিব। নাও ভাবি আব্রাহামের (ভাবির ছেলের) জুরাজুরিতে একটু বিরিয়ানি রান্না করছিলাম তুমি তো জানো ছেলেটা কেমন নাছোর বান্দা। তাই বাবলাম তোমাকেও একটু দিয়ে আসি,,,

তা কি দরকার ছিল ভাবী। আমি তো এখন রান্না করতামই।

রান্না করতে অনেক সময় লেগে যাবে তোমার তাই একটু খেয়ে নাও। তারপর রান্না বসাও।।

ভাবির জুরাজুরিতে অধরা খেয়ে নিল,, ভাবিও চলে গেলেন,, তারপর রান্না বান্না সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন সারাদিন অনেক খাটাখাটি করলেন তাই চোখেন অনেক ঘুম।। কখন যে সেই নিদ্রায় তলিয়ে গেলেন বুঝতেই পারেন নি

________________

এই আকাশ দেখ আমাদের হিরো সাহেব এভাবে ক্ষেপে আছে কেন রে,,,

তুই যেখানে আমারও সেখানে।

এই তুর্য তুই জানিস কিছু???

আজিব আমি করে জানবো 🤨🤨

তাহলে রৌদ্দুর নিশ্চয়ই জানবে,, কি রে রৌদ্দুর তুই কিছু জানিস।

কই নাতো।

তারপর সবাই আগ্রহস্বরে বলতে লাগলো,,

কি রে রিহান কি হইছে তর।। রৌদ্দুর প্রশ্ন করল, ,

আকাশ, তুর্য, হিমেল, রৌদ্দুর, এরা হলো রিহানের ভার্সিটির প্রান প্রিয় বন্ধু,, তবে সবার থেকে রৌদ্দরকে একটু আপন ভাবে, াপনাদের তো বলাই হয়নি রিহান আর তার বন্ধরা এবার মাস্টার্স ১বর্ষে আছে।

রিহান কিছুই বলল না ,, তারপর আকাশ রৌদ্দর কে ইশারা করলেন কাছে গিয়ে বলতে।
তারপর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন

কি রে কি হইছে তর???

তারপর রিহানের সাতে ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া সব বলল,, সব কিছু শুনে তো সবাই হাসাহাসি করতে করতে লুটোপুটি খাচ্ছে ,,,, হিমেল তো বললেই ফেলল,,

মেয়ে কেস মামা, মেয়ে কেস,,

তাদের হাসি দেখে রিহান রাগের চরম সিমায় পৌছে , সেখানে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ববাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়,,

এদিকে অধরা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ে টিউশনির গন্তব্য। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার মাঝ কিনারে বাইকের সাথে এক্সিডেন হয়।

তারপর সেখান থেকে ওঠে রাগে ফুসতে ফুসতে লোকটার কাছে আসে। লোকটাকে দেখে তো রাগ আরো মাথায় ওঠলো।।।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে