#প্রেমানন্দোল-৫
#তাসনিম_তামান্না
পরিবেশটা গুমোট। ইনস্পেক্টর জাহিদ কঠিন্য চোখে তাকিয়ে আছে। স্বচ্ছ পায়ের ওপর পা তুলে বাঁকা হেসে তাকিয়ে জাহিদের ফেস দেখে বলল
” ইনস্পেকটর লজ্জা পাচ্ছেন কেনো? আপনার যত এমাউন্ট লাগে বলুন তবুও এই ভালো মানুষি মুখটা দেখিয়ে পরে এমাউন্ট বাড়ানোর জন্য আবার হাতে পায়ে ধরবেন ”
” মিস্টার. স্বচ্ছ হাতের পাঁচটা আঙ্গুল যেমন সমান নয় ঠিক তেমনি সব পুলিশ ইনস্পেকটর এক নয় ঠিক তেমনি আমিও এক নয়। তাই আমাকে টাকার লোভ দেখিয়েও লাভ নাই।”
স্বচ্ছ নিকোটিন ধরিয়ে ঠোঁট দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো। জাহিদ শক্ত চোখে সবটা দেখলো কিছু বলল না। স্বচ্ছ হেসে বলল
” বাহ! নাইস এ জোকস। ওফ দ্যা ইয়ার আমি ও দেখবো এই সততা কত দিন থাকে।”
জাহিদ এবার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল
” অবশ্যই। এন্ড থ্যাংকিউ আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালোই লাগলো পাখি নিজেই এসে ধরা দিলো”
স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে উঠে দাঁড়ালো। ডান হাতের দু’আঙ্গুল দিয়ে ভ্রুর কাছে চুলকিয়ে বলল
” ওয়েল গুড বাই ওয়াফিস্যার ”
” খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে ”
স্বচ্ছ বাইরে এসে রাগে গাড়িতে উঠে এস্টেয়ারিংয়ে ঘুষি মারলো।
” ড্যামিট! খোঁজ নিয়ে আসা উচিত ছিল। উফফ বারে বারে কেনো এতো ভুল হচ্ছে আমার। ”
স্প্রিডে গাড়ি চালাতে লাগলো। চলন্ত গাড়ি থেকে জ্বলন্তু নিকোটিন সুদূরে ছুঁড়ে মারলো।
পড়ন্ত বিকেল জুলাই মাসের মাঝামাঝি। আকাশে কখনো কালো মেঘে ছেয়ে গিয়ে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি তো কখনো ঝলমলে সোনালী রোদ। পড়ন্তু বিকেলে আকাশ জুড়ে অপূর্ব সুন্দর মেঘের খেলা। খন্ড খন্ড মেঘগুলো এদিক সেদিন দৌড়-ছুটি খেলায় মেতে আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু দূরে গাড়ি ব্রেক কষলো এদিকটা ফাঁকা। মাঝে মাঝে কয়েকটা গাড়ি শো শো করে ছুটে চলছে তাদের গন্তব্যে দিকে। দূরে সুখ বিক্রেতারা রং বেরং এর বেলুন হাতে কোথায় যানি যাচ্ছে। সিটে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলো গাড়ির কাচটা নিচে নামিয়ে দিয়ে ধূমপান করায় খয়েরি রঙের ঠোঁট জোড়ায় আবারও জলন্ত নিকোটিন জ্বালালো। কিছু তেই শান্তি পাচ্ছে না যেনো। স্বচ্ছ চোখ বন্ধ করে নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়ছিলো অশান্ত মনে তখনি খুকখুক করে কাশি দিয়ে সুরেলা কণ্ঠে ঝাঁজ নিয়ে বলে উঠলো
“অসহ্য লোকজন রাস্তায় মেয়ে দেখলেই স্মোকিং করে ধোঁয়া কাছে এসে ছাড়ে তাদের উপস্থিতি জানান দিতে হবে তো ”
কথাগুলো মস্তিষ্কে যেতেই স্বচ্ছের চোখ আপনা-আপনি খুলে গেলো পাশ ফিরে কন্ঠে মালিকের দিকে চাইতেই দৃষ্টি স্থির হয়ে গেলো। মৃধা চোখ মুখ কুচকে আবারও ঝাঁজ মেশালো গলায় বলল
“আজকাল বখাটে গুলো গাড়িতে বসে টিজ করছে। যেনো সহজে পালিয়ে যেতে পারে মার খাওয়ার এতো ভয়? ”
বিথি মৃধার হাত টেনে বলল ” ছাড় না এসব চল। ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ কি? ”
” এদেরকে ছেড়ে দিলে না মাথায় উঠে নাচবে। একটার পর একটা অন্যয় করে যাবে। এদের জন্য আজকাল মেয়েরা স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারে না। এই বখাটে গাড়ি থেকে নামেন আজ আমার এক দিন কি আপনার যে কয় দিন লাগে ”
হালিমা, আঁখি, বিথির চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। আজ সকাল থেকে মৃধার মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। আবার এখন অপরিচিত বখাটে ছেলের সাথে ঝগড়া লাগালো ওরা ভয় পেয়ে গেলো ছেলেটা আবার না কোনো ক্ষতি করে দেয়। তরিঘরি করে আঁখি মৃধার মুখ চেপে ধরলো। হালিমা বলল ” ভাইয়া আপনাকে নামতে হবে না ছোট বোন ভেবে মাফ করে দিবেন প্লিজ ”
বিথি বলল ” হ্যাঁ আসলে ওর না মাথায় একটু সমস্যা আছে। তারপর আবার সকাল থেকে খেপে আছে প্লিজ কিছু মনে করবে না ”
কথাগুলো বলে আর দাড়ালো না কেউ মৃধাকে টানতে টানতে নিয়ে সিএনজিতে উঠালো। সিএনজিতে উঠে যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। মৃধা রাগে তখনো ফোঁস ফোঁস করছে। গলায় তেজ নিয়ে বলল ” তোরা আমাকে নিয়ে আসলি কেনো? বখাটেকে দেখে নিতাম কত বড় সাহস ধোঁয়া মুখের কাছে ছাড়লো ”
” থাক বাদ দে না। ছেলেটার কাছে যদি ব-ন্দু-ক, ছু-রি টাইপ কিছু থাকতো আর রেগে গিয়ে যদি মে-রে দিতো বলা যায় না বাবাহ ”
” তো আমি কি ভয় পায় নাকি? ”
” না তুই কেন ভয় পাবি তুই তো পুলিশের বোন ”
মৃধা রেগে বলল
” সাট আপ ”
________________________________
দ্বিধা কান্নামিশ্রিত গলায় বলল
” আমি তোমাদের খুব মিস করছি ”
” আপি আমি তোকে মোটেও মিস করছি না এখন পুরো বাড়ি আমার রাজত্ব আর আমার রাজত্ব এখন কেউ আর দখল করতে আসে না আমার রাজ্যে এখন শান্তি বিরাজ করছে ”
দ্বিধার আরো কান্না পেয়ে গেলো কান্না মাখা গলায় আদুরে কন্ঠে অভিযোগ করে বলল
” আব্বু দেখো তোমার ছেলে ”
খাইরুল সাহেব ছেলেকে মিছিমিছি ধমক দিয়ে বলল
” দ্বন্দ্ব কি হচ্ছে টা কি? চুপচাপ বসে থাকো ”
আসমা বেগম বলে উঠলো
” দ্বিধা মা কাঁদিস না। এতোক্ষণ যে তোর ভাই এতো ভাষণ দিল না সে-ও না তোর রুমে বসে তোর ছবি ধরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছিলো ”
মায়ের কথা শুনে দ্বিধা না চাইতেও হেসে ফেললো। চোখের পানি মোছার বৃথা চেষ্টা করলো আবারও চোখ ভিজে পানি গড়িয়ে পড়লো বলল
” বেশ হয়েছে ”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন কেটে টি-টেবিলে ফোন রাখতে গিয়ে এতোক্ষণে খেয়াল হলো কেউ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দ্বিধাও তাকিয়ে বলল
” কিছু বলবেন? ”
স্বাধীন টিস্যু এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল
” কাঁদলেও যে আপনাকে ভিষণ মিষ্টি লাগে এটা কি আপনি জানেন? ”
দ্বিধা ভিষণ অবাক হলো বলল ” মানে? ”
” দ্বিধা আপনি কখনোই কারোর সামনে কাঁদবেন না আমার হিংসে হবে ”
দ্বিধা শুকনো ঢোক গিললো। স্বাধীনের দৃষ্টি সহ্য হলো না চোখ সরিয়ে নিলো। স্বাধীন আবার নিজের মতো করে বলল
” কাদলে আপনার চোখ গুলো অল্পতে লাল হয়ে ফুলে যায়। আপনার চোখ দিয়ে যখন পানির ফোটা গুলো পড়ে আপনার গাল ছুঁয়ে মুখের দুপাশ সহ নাক লাল হয়ে যায় তখন আপনাকে খুব আদুরে লাগে। কাদলে আপনার পাতলা ঠোঁট জোড়া তির তির করে কাপে। তখন আমার অসভ্য হতে ইচ্ছে হয় ”
দ্বিধা জমে গেলো। হুট করে স্বাধীন এমন কিছু বলবে দ্বিধার কল্পনার বাহিরে ছিল। লজ্জায়, অসস্তিতে দ্বিধা আর ওখানে বসে থাকতে পারলো না দৌড়ে রুমের বাইরে সিড়ির কাছে এসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। স্বাধীনের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দ্বিধা ব্লাস করতে লাগলো। গালের দু পাশ লাল নিয়ে নিচে চলে আসলো। সাদিয়া বেগম তখন পুরো মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে দ্বিধার দিকে ওতোটাও খেয়াল করে নি করলে হয়ত কিছু একটা বুঝে যেতেন। কলিং বেল বেজে উঠলো সাদিয়া উঠতে নিলে দ্বিধা বলল ” আমি দেখছি আপনি বসুন ”
দরজা খুলতেই একটা সুন্দরী পরিপাটি মেয়েকে লাগেজ হাতে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো দ্বিধা। মেয়েটি দ্বিধাকে দেখে লাগেজ ফেলে একপ্রকার ছুটে এসে দ্বিধাকে জড়িয়ে ধরলো। দ্বিধা অবাক হলো। মনে মনে বলল ” কে এই মেয়ে? আমাকে কি চিনে সে? ”
” ওহ থ্যাংকিউ সো মার্চ ”
দ্বিধা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।
চলবে ইনশাআল্লাহ