#প্রেমানন্দোল-৩
#তাসনিম_তামান্না
একরাতে স্বাধীনের পরিবর্তনের কারণ চোখে লাগছে। হাইলাইটস হয়ে আছে। স্বচ্ছের ব্যাপারটা বার বার করে ভাবাচ্ছে। স্বাধীনের শান্ত স্বভাব মেনে নিতে পাচ্ছে না যেনো। স্বাধীন শান্ত মানে ঝড়ের পূর্বাভাস। স্বচ্ছ সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে স্বাধীনের রুমের দিকে তাকিয়ে ভাবুক হয়ে বিরবির করে বলল
” স্বাধীন আবার কি নতুন গেম শুরু করছে? না-কি গেম উল্টে দিতে চাইছে? ”
” তুমি এখানে দ্বিধা কই? ”
সাদিয়ার কথায় স্বচ্ছের ভাবনার সুতো কাটলো। একপলক সাদিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে বলল
” স্বাধীন ওপরে নিয়ে গেছেন”
কথাটা শুনে চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে বলল
” একটা কথা রাখবে আমার? ”
স্বচ্ছ ফ্লোরে দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল
” কি? ”
” আর যায় করো আমার ছেলের সংসারে আ-গু-ন লাগিয়ে ও না। এটা আমার আদেশ ভেবে ভুল করো না এটা একটা মায়ের অনুরোধ ”
স্বচ্ছ সাদিয়ার মুখের দিকে তাকালো কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না দৃষ্টি সরালো। সাদিয়ার মুখের দিকে তাকে স্বচ্ছ নিঃপাপ হয়ে যেতে ইচ্ছে হয় আদর পেতে ইচ্ছে হয় মায়ের আদর। স্বচ্ছ প্রতিত্তোর করতে ভুলে গেলো। চুপ করে রইলো। এর উওর তার জানা নেই। তবুও সে জানতে চাই না এর উওর। কিছু জিনিসের উত্তর অজানা থাকা ভালো। সাদিয়া বেগম উত্তরের অপেক্ষা করলেন কিছুক্ষণ উত্তর না পাওয়ায় আশাহত হয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ধীর পায়ে প্রস্থান করলো। সাদিয়ার যাওয়ার দিকে আড়চোখে তাকালো স্বচ্ছ। ফোন বাজলো স্বচ্ছের ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলল ” আসছি ”
বসে না থেকে উঠে চলে গেলো নিজ কাজে।
রাতে খাবার টেবিলে শাহাদাত হোসেন স্বাধীনকে প্রশ্ন করলেন
” বিয়ে করেছ শুনলাম ”
বাবার ওপরের রাগ থাকলেও স্বাধীন শান্ত গম্ভীর হয়ে বলল
” ঠিক শুনেছেন ”
” মেয়েটার ব্যাগ্রাউন্ড তার ফ্যামেলি কেমন? আমাদের ফ্যামেলির সাথে যায় তো? ”
” আমি তার ফ্যামেলিকে বিয়ে করছি না তাই তার ফ্যামেলি সম্পর্কে কোনো ইন্টারেস্ট নাই সে কেমন এটা জানলেও চলবে ”
” তারমানে কি না জেনে বিয়ে করে নিলে? স্ট্যাটাস, সোসাইটি বলে একটা ব্যাপার আছে না-কি? ”
” আপনি আমার পারসোনাল ব্যাপারে ইটারফেয়ার না করলে খুশি হবো ”
শাহাদাত হোসেন চুপ হয়ে গেলেন ছেলের কথার ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে রেগে যাচ্ছে স্বাধীন এখন না ঘেটায় শ্রেয়। ছেলেকে ভয় পায় এমন না ছেলের রাগটাকে ভয় পায়।
স্বাধীনকে একা দেখে সাদিয়া বেগম প্রশ্ন ছুঁড়লেন
” তুই একা কেনো? দ্বিধা কই? ”
স্বাধীন গম্ভীর কন্ঠে বলল
” জ্বর আসছে ”
” সে-কি? ওতো বিকালে ঠিক ছিল। হুট করে জ্বর আসলো কি করে। তোরা খা আমি দেখে আসি মেয়েটাকে ”
সাদিয়াকে বাঁধা দিয়ে বলল
” দ্বিধা ঘুমাচ্ছে আম্মু এতো ব্যাস্ত হওয়ার কিছু নেই। আগে খেয়ে নাও তারপর যেও ”
” মেয়েটা সারারাত না খেয়ে থাকবে?তুই আমাকে আগে জানালি না কেনো? ”
স্বাধীন গা ছাড়া ভাবে উত্তর দিলো
” এমনি ”
সাদিয়া রেগে গেলো।
” এমনি? এমনি মানে কি? আমাকে তোরা কেউ মূল্য দিস না। ”
” ওফ্ফ আম্মু কি শুরু করছ খেতে দাও খুদা লাগছে আর টেনশন করো না ঠিক হয়ে যাবে ”
” তাই বলে আমাকে একটি বার জানাবি না? ”
” আচ্ছা এরপর থেকে জানাবো ”
সাদিয়া রেগে জোরে জোরে শ্বাস ছেলে খাবার সার্ভ করে দিলো। স্বাধীন খাবার খুব একটা খেতে পারলো না। উঠে চলে গেলো সাদিয়া বেগম দেখেও কিছু বলল না। ছেলে তার খুব চাপা স্বাভবের। কেউ না বুঝুক তিনি তো মা সব বুঝেন। রুমে যাওয়ার আগে সাদিয়াকে বলল
” আম্মু ওপরে আসার সময় সুপ নিয়ে এসো তো ”
ছেলের কথায় মুচকি হাসলেন সাদিয়া। শাহাদাত হোসেন বসে বসটা অবলোকন করে কুঞ্চিত ভ্রু নিয়ে প্রশ্ন করলো
” মেয়েটাকে বাসায় আনতে না আনতেই মাথায় উঠিয়ে ফেলছ দেখছি ”
সাদিয়া বেগম স্বামীর কথায় পাত্তা না দিয়ে উঠে গিয়ে সুপ বানানো শুরু করলো।
রুমে এসে স্বাধীন দ্বিধার কপালে হাতের উল্টো পিট দিয়ে টেমপরেজর দেখে দ্বিধাকে দু একবার ডাকলো।
” দ্বিধা! দ্বিধা? শুনছেন? ”
দ্বিধা পিটপিট করে চোখ খুলে স্বাধীনকে দেখে বলল
” হুম? ”
” কিছু খাবেন? ”
” উহুম ”
উত্তর দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো দ্বিধা। স্বাধীন দ্বিধার লাল হয়ে যাওয়া হাতে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো। তখন স্বাধীনের কথা শুনে দ্বিধা চুপ হয়ে অদ্ভুত চোখে স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে ছিল। ক্লিন সেভ করা শ্যামমানবের গম্ভীর মুখে কিছুতো একটা ছিল যার জন্য একটা টান অনুভব হচ্ছিল। একটা মায়া কাজ করছিল।
স্বাধীন বার বার দ্বিধার এক জায়গায় হাত ধৌয়ার ফলে ওখানটায় লাল হয়ে যায়। দ্বিধা একটু ঠান্ডা কাতুরে একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়। দ্বিধার হাঁশির শব্দে স্বাধীন থেমে গিয়ে এরইমধ্যে দ্বিধার ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকালো। স্বাধীনের তাকানোতে দ্বিধা নাক টেনে হেসে বলল
” অন্যর স্পর্শ উঠেছে? ”
“আপনার ঠান্ডা লাগছে? ”
” সমস্যা নাই ”
” আপনি আমাকে আগে বলবেন না? ”
দ্বিধা উত্তর দিলো না চোখে পানি এসে জমছে বার বার। নাকেও সর্দি চলে আসলো। স্বাধীন তারাতাড়ি সাবান পানি রেখে ঔষধ খাইয়ে শুয়ে দিলো দ্বিধাকে।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে সাদিয়া বেগমের ডাকে স্বাধীনের ভাবনায় ছেদ ঘটল। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। সাদিয়া এসে দ্বিধার মাথায় হাত রেখে বলল
“এতো জ্বর কি ভাবে আসলো?”
“জানি না আম্মু ”
স্বাধীনের নিজে অপরাধী মনে হচ্ছে। আজ প্রথম বারের মতো তার মনে হচ্ছে সে একটু বেশি বাড়া বাড়ি করে ফেলছে এমন না না করলে দ্বিধার এতো কষ্ট পেতে হতো না। শাহাদাতের ডাক দেওয়ায় স্বাধীন বলল
” আম্মু তুমি যাও আমি ওর খেয়াল রাখছি টেনশন করো না রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো ”
” আচ্ছা কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিস ”
” আচ্ছা ”
সাদিয়া চলে যেতেই স্বাধীন দ্বিধাকে ডাকলো
” দ্বিধা উঠুন খেয়ে নিন! দ্বিধা? ”
দ্বিধা ঘুম জড়ানো গলায় বলল
” উহুম আমি খাবো না মিস্টার স্বাধীন! ”
দ্বিধার মুখে স্বাধীনের প্রথম নাম শুনে স্বাধীনের মনে মিশ্র অনুভূতি গুলো দলা পাকিয়ে গেলো। পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে দ্বিধাকে ডাকলো আরো কয়েক বার
” দ্বিধা উঠুন না খেলে শরীর আরো খারাপ করবে ”
দ্বিধা না উঠায় স্বাধীন দ্বিধাকে উঠিয়ে জোর করে খাইয়ে দিলো। খওয়া শেষ হতে না হতেই দ্বিধা বমি করে সব খাবার বের করে দিলো। বমি সব স্বাধীনের গায়ে। স্বাধীন অসহায় মুখে তাকালো দ্বিধার ক্লান্ত মুখে। স্বাধীন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দ্বিধাকে পরিষ্কার করে দিয়ে নিয়েও সাওয়ার নি এসে দেখলো। দ্বিধা পিটপিট করে চোখ খুলে আছে স্বাধীন সেটা দেখে বলল
” কিছু লাগবে আপনার? ”
” আপনাকে খুব কষ্ট দিচ্ছি বলুন? ”
” না এটা আমার দায়িত্ব। আপনি অসুস্থ হলে আমি সেবা করে সুস্থ করা এবং আমি অসুস্থ হলে আপনার সেবা করা এটাই নিয়ম। এটাতে ভালোবাসা, দায়িত্ব, মায়া, টান বাড়ে বুঝলেন? ”
দ্বিধা বুঝলো কি না স্বাধীন বুঝতে পারলো না দ্বিধা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। স্বাধীন ভেবে নিলো দ্বিধা ভুল বকছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ