#প্রেমময় #তৃষ্ণা
#Writer-#TaNiA[🖤]
#part-16
শুভ রিমান্ড রুমে বসে আছে,অসম্ভব রাগ উঠছে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটার উপর।আরুশী কে পুলিশে দেবার পর মার খাওয়ার ভয়ে নিজের সঙ্গীর নাম বলে দেয়।আর একে শুভ চিনে,শুধু চিনে বললে ভুল হবে,খুব ভালো করে চিনে,একসময় শুভর কলেজ ফ্রেন্ড ছিলো।খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো তাদের।এর পর কলেজ শেষে শুভর সাথেই এতো বছর রাজনীতির সাথে জরিত ছিলো,শুভ দল থেকে পদত্যাগ করার সময় নিজের জায়গাটা এই ব্যক্তিটা কে দিয়ে গিয়েছিলো।এতোটাই ভরসা করতো বলে,কিন্তু শুভ ভেবে উঠতে পারছে না,কেনো এমন করলো।
||
||
কেনো করলি রুদ্র, এসব করার কারন টা কি।যতোটুকু আমার মনে আছে,আমি কখনো তোর সাথে কোনও বিষয় ঝগড়া বা মারামারি করিনি,দলে থাকা অবস্থায় ও তোর সাথে আমার কখনো কোনও ঝামেলা হয়নি,তাহলে……।এখন আবার এটা বলিস না পদের জন্য।আমি আমার পদটাও তোকে দিয়ে দিলাম।তাহলে তুই কিসের প্রতিশোধ নিতে এসব করেছিস।
||
||
রুদ্র হা হা করে হাসতে থাকে,প্রতিশোধ!! তুই ঠিকই বলছিস প্রতিশোধ নেবার জন্যই এমন করেছি।তোর মনে নেই তুই কি করেছিস।তাহলে আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি, শোন ভালো করে।_____মেঘার কথা মনে আছে তোর।_____কোন মেঘা(শুভ)।___বাহ নামটাও ভুলে গেলি।______আমাদের কলেজে পরতো ঐ মেগার কথা বলছিস।শুভর জন্য পাগল ছিলো যে মেয়েটা।।(ফাহিম)
____শুভ একটু মনে করার চেস্টা করছে।___আরে শুভ তোর মনে নেই,ঐ মেয়েটা যে উঠতে বসতে তোকে শুধু বলতো আই লাভ ইউ,নিজের রক্ত দিয়ে যে একদিন লাভ লেটার লিখে তোকে দিলো,আর তার জন্য তুই ওকে অনেক বকেও ছিলি।_____উমমম,মনে পড়েছে।ওই মেয়েটাতো একটা সাইকো ছিলো।দিন দিন ওর পাগলামো গুলো বেড়েই চলছিলো।
||
||
____খবরদার শুভ,আমার বোনকে পাগল বলবিনা।ও পাগল না, ও মন থেকে তোকে অনেক ভালোবাসতো।
কিন্তু তুই ওকে সব সময় অপমান করতি,ওর ভালোবাসাকে তাচ্ছিল্য করতি।তোর কারনে আমার বোন দিন দিন ডিপ্রেশন এ চলে যাচ্ছিলো।চোখের সামনে বোনের এমন অবস্থা দেখেও কিছুই করতে পারছিলাম না,কারন তখন আমি জানতামই না ও তোকে ভালোবেসে এসব করছে।
||
||
বাবা মা আমি সারাদিন ওকো নিয়েই টেনশনে থাকতাম।কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।ওকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার জন্য বাবা মা ওর বিয়ের ব্যবস্থা করলো,কিন্তু ও বিয়ের দিনই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো,আমরা অনেক খুঁজার পরও যখন পেলাম না তখন নিরাশ হয়ে বাসায় এসে পরি।আর কিছুক্ষন পরই এম্বুলেন্স এ আমার বোনের লাশ ঘরে আসে।বিয়ের শাড়ী পরে যে বোন বিদায় নেওয়ার কথা ছিলো সে বোন আমার কাফনের কাপড় পরে বিদায় নিয়েছে। নিজের আদরের মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে বাবা সহ্য করতে পারেনি,তাই সেও চলে গেলো না ফেরার দেশে।বুকে পাথর রেখে আমার আদরের বোনকে আর বাবাকে এই হাতে কবর দিয়েছি একই দিনে।বাবা আর মেঘাকে হারিয়ে শোকে মাও প্রায়ই পাগল হয়ে গিয়েছে।এক মুহুর্তে আমি সব কিছু হারিয়ে এতিম হয়ে গিয়েছি।আর এসব তোর কারনে হয়েছে শুভ, শুধু তোর কারনে।সেদিন আমার বোন তোর সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলো।আর তোর কারনে ও এতোই কস্ট পেয়েছে যে নিজের জীবন নিতে এক মুহুর্তেও চিন্তা করেনি।এসব বলেই রুদ্র কেঁদে দিলো।
||
||
রুদ্র তুই ভুল বুঝছিস আমায়,তুই হয়তো জানিস না মেঘার আচরন গুলো স্বাভাবিক ছিলো না,ও কথায় কথায় আত্মহত্যার হুমকি দিতো আমায়,আমার সাথে কাউকে সহ্যও করতো না,যাকে তাকে অপমান করতো ওর এসব পাগলামি গুলো সহ্য করতাম ও মেয়ে বলে।ওকে অনেকবার আমি বুঝিয়েছি কিন্তু ও কোনো কথা শুনতেই চায়নি,আমি জানতাম না ও সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করবে,আর এও জানতাম না মেঘা তোর বোন,মেঘা কখনো বলেই নি।যদি জানতাম তাহলে তোকেই বলতাম ওকে বুঝাবার জন্য।
||
||
সেদিন ও হঠাৎ বিয়ের সাজগোজে আমার সামনে হাজির হলো,হয়েই বলে ___শুভ চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি,তা না হলে আমার পরিবার আমাকে অন্য কোথায়ও বিয়ে দিয়ে দেবে।___কি যা তা বলছো মেঘা,আর তুমি এসব পোষাকে এখানে কি করছো।____শুভ আজ আমার বিয়ে,আমি ওখান থেকে পালিয়ে আসছি,আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।প্লিস চলো। ____জাস্ট সেট আপ মেঘা,তোমার অনেক পাগলামি সহ্য করেছি আর না।জাস্ট গেট আউট।____শুভ প্লিস আমাকে একসেপ্ট করে নেও।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।আই রিয়েলি লাভ ইউ।
মেঘা এটা কখনো সম্ভব না…চিল্লিয়ে। ____কেনো সম্ভব না শুভ।___কারন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।___তুমি মিথ্যা বলছো।তুমি কাউকে ভালোবাসবে আর আমি জানবো না এ হতেই পারেনা।____দেখো মেঘা,আমি এ কথা কাউকে বলেনি,আমি সত্যিই বলছি,আমি কলিকে ভালোবাসি,ও আমার প্রথম ভালোবাসা,আর ওই আমার শেষ ভালোবাসা,ভালোবাসা জোড় করে হয় না,তুমি আমার জীবনে আসার বহুত আগ থেকেই ওকে আমি ভালোবাসি,ও আমাদের কলেজর না, তাই তুমি ওকে কখনো আমার সাথে দেখো নেই।কিন্তু আমি সত্যি বলছি।
____না না না,আমি কিছুই শুনতে চাইনা,কিছু না,তুমি শুধু আমার,চলো আমার সাথে(শুভর হাত ধরে টেনে নিতে চাইলো)একবার আমাকে বিয়ে করো,আমি এতো ভালোবাসা দেবো,তুমি ওই কলিবলিকে ভুলে যাবে।চলো….।
এবার শুভর ধৈর্যেরবান শেষ হয়ে গেলো,আর মেঘাকে কষে একটা থাপ্পড় মারলো,বেয়াদব মেয়ে কখন থেকে এক কথা বলছি কানেই যায় না,এই তুই এতো বেহায়া কেনো বলতো,বেহায়া মেয়েদের আমার একদম পছন্দ না,দূর হো আমার চোখের সামনে থেকে,আর কখনো আমার সামনে আসার চেস্টা করবি না,আমি তোর মরা মুখও দেখতে চাই না…এর পরও যদি আসিস আমি নিজেই তোকে মেরে ফেলবো।
||
||
এর পর মেঘা ওখান থেকে চলে যায়।আমিও একসময় এসব ভুলে যাই।আমি যদি জানতাম ও সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করবে,তাহলে ওকে একা জেতেই দিতাম না রুদ্র। আমি মেঘাকে ভালোবাসি না তাই বলে এটা চাই নি।এর পর ও যদি তোর মনে হয় এতে আমারি দোষ তাহলে আমাকে শাস্তি দিতি,কলির পিছে কেনো লাগলি।ওতো তোর কোনও ক্ষতি করেনি।কেনো একটা নিরিহ মেয়েকে মারতে চাইছিলি।
||
||
নিরিহ, হা হা হা করে রুদ্র হেসে উঠলো।ওর সব থেকে বড় দোষ হলো,ও শুভ চৌধুরী কে ভালোবাসে।
আমি মেঘার ডাইরি পরে জানতে পরেছিলাম ও তোকে ভালোবাসে,এর পর আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না ওর সাথে এতোদিন যা হচ্ছিলো তোর কারনে,তুই ওর ভালোবাসাকে দাম দিছ নাই,তাই আমিও তোর থেকে তোর সবথেকে প্রিয় মানুষটি তোর ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলাম।
আর আমার এ কাজ সহয করে দিয়েছিলো আরুশী, আমি আরুশীর মাধ্যমে তোর প্রেমকাহিনী শুনেছি,আর সেদিন থেকেই প্লান করে এসছিলাম,যে আমি তোকে এমন শাস্তি দেবো,যাতে তুই বেঁচে থেকেও মরে যাস।আমি এমন একটা সুযোগের জন্যই তোর সাথে ছায়ার মতো লেগেছিলাম।রাজনীতিতে যোগ দেয়ার প্রধান লক্ষ্যই ছিলো তোর থেকে কিভাবে প্রতিশোধ নেওয়া যায়।আমি যখন কিছুই করতে পারছিলাম না তখন আরুশীকে আল্লাহ আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়।আরুশী ও তার অপমানের বদলা নিতে চাইছিলো, তাই দুজন মিলে কলিকে মারার প্লানিং করি,কিন্তু আমি চেয়েছিলাম তুই কলির মৃত্যু নিজ চোখে দেখ,তাইতো শিকার এতো কাছে থাকা সত্যও শিকার করেনি।
কিন্তু হঠাৎ তুই বদলে যেতে লাগলি,কলি থেকে দূরে সরে জেতে লাগলি,তাই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।আর ঐ স্টোপিট গার্ল আরুশী বিয়ে বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আর এ দিক দিয়ে আমার সব প্লান নস্ট হতে লাগলো।আমি বুজতে পারলাম তুই হয়তো সব কিছু বুঝে গিয়েছিস।এতোটা বোকা তুই না।তাই হয়তো কলিকে সেভ করতে নিজে কলি থেকে দূরে সরে গিয়েছিস। কিন্তু দেখ ভাগ্য এবারও
আমার সাথে ছিলো,তাইতো কলি সেদিন পালিয়ে এসে,তোর সাথে দেখা করতে চলে এলো।আর এই সুযোগেই ছিলাম আমি।কিন্তু আফসোস এতো বড় দূর্ঘটনার পরও ও মরেনি।
চলবে………