প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-১০

0
2828

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১০

১১.
সকালে ফাহা জিরিশাকে ফোন করে বলে হাঁটতে যাবে বিকালে।জিরিশাও রাজি হয়ে যায়।জিরিশা রেডি হয়ে নেয়।কালো হিজাব আর সাদা টপস পরে।জিরিশা পার্স নিয়ে বেরিয়ে পরে।ফাহাদের বাড়ির সামনে এসে ওকে ফোন দেয়।ফাহা নিচে আসতেই ওরা সামনের কলোনিতে যায়।কলোনিটায় এখন মানুষজন থাকে না তেমন।সবাই হাঁটতে আসে এইখানে বিকালে।

জিরিশা আর ফাহাও হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছিলো।ফাহা বিভিন্ন ভাবে জিরিশাকে হাসাচ্ছিল আর জিরিশা খিলখিল করে হাসছিলো।কিছুদূর যেতে জিরিশা দেখতে পায় নিহান নামের ছেলেটাকে।নিহান তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।জিরিশা চমকে উঠে। জিরিশা ভয়ে ফাহার হাত খামচে ধরে।ফাহা বুঝতে পারে জিরিশা ভয় পাচ্ছে।ও জিরিশাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।ওরা ওদের পাশ কাটিয়ে আসতে চায় কিন্তু নিহান জিরিশার পথ আগলে দাঁড়ায়।

নিহান বলে,,,”দেখো জিরিশা আমি অনেক চেষ্টা করেছি নিজেকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে কিন্তু এখন কিছুতেই পারছি না।প্লিজ আমাকে একসেপ্ট করে নাও প্লিজ!”

জিরিশা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,,
“দেখুন আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে।তাই আমাকে না জ্বালালে আমি ভীষণ খুশি হবো।”

নিহান ছেলেটা কথা শোনার পরে কেমন করতে থাকে।জিরিশার অদ্ভুত লাগে।সাইকো সাইকো লাগছে তার কাছে নিহান নামের ছেলেটাকে।নিহান হঠাৎ জিরিশার হাত ধরে ফেলল।জিরিশা চমকে উঠলো!ফাহা আর জিরিশা মিলে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু পারে না।নিহান করুন কন্ঠে বলে,,,
“প্লিজ জিরিশা আমার হয়ে যাও। আমি ছাড়া অন্যকারো হতে দেবো না তোমাকে”

কেউ একজন এসে ঝটকা মেরে জিরিশার হাত ছাড়িয়ে নেয়।জিরিশা সামনে তাকাতেই মাহাজকে দেখে।মাহাজকে দেখে তার কলিজায় পানি আসে।জিরিশা ভয়তে জড়িয়ে ধরে।আর বিড়বিড় করে বলতে থাকে,,,
“ছাড়বেন না আমায় এই সাইকোটা আমার হাত ধরেছে প্লিজ আমায় ছেড়ে যাবেন”

নিহান রেগে যায় জিরিশার মাহাজকে জড়িয়ে ধরতে দেখে।সে জিরিশাকে মাহাজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় কিন্তু মাহাজের মতো লম্বা মানুষের সাথে পেরে উঠে না।জিরিশার মাহাজ জিরিশাকে এক হাতে আগলে নিয়ে বলে,,,
“আমার বউয়ের দিকে ফারদার হাত বাড়ানোর,না তাকানোর চেষ্টা করলে তোকে আমি কি করবো তা নিজেও জানি না”

নিহান চিল্লিয়ে বলে,,,
“জিরিশা শুধু আমার ওর দিকে তাকাবো আমি।ও শুধু এই নিহানের।”

মাহাজ রেগে থাপ্পড় মারলো।নিহান থাপ্পড় খেয়ে মাটিতে পরে যায়।নিহানের চাচাতো ভাই ওকে ধরে উঠায়।আর মাহাজকে বলে,,,
“ভাই ওকে মাইরেন না।ওর মাথায় একটু সমস্যা হইছে।আগে কখনো এমন আচরণ করেনি দুঃখিত ভাই ও আর আপনার বউয়ের দিকে তাকাবে না।”

ছেলেটা নিহানকে টেনে নিয়ে চলে যায়।জিরিশা ভয়ে কাঁপছে।মাহাজ ওকে কোলে তুলে নেয়।কোলে নিয়ে একটা জায়গায় বসায়।ফাহা দোকান থেকে পানি কিনে আনতে যায়।যেহেতু কলোনিতে কেউ থাকে না তাই দোকানও নেই।ফাহা কিছুদূর গিয়ে একটা ছোটো ছেলেকে পানি কিনে আনতে পাঠায়।ছেলেটার কাছে সাইকেল ছিলো।ফাহা মাহাজ আর জিরিশার কাছে যায়।ফাহা জিরিশাদের কাছাকাছি আসতেই দেকে জিরিশা মাহাজকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।ফাহা তাই আর যায় না ওদের কাছে।

জিরিশা মাহাজের শার্ট খামচে ধরে বুকে মাথা রেখে বসে আছে।মাহাজ জিরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মাহাজ জিরিশাকে নরম গলায় বলে,,
“জিরিশা দেখো কেউ নেয় এখানে।শুধু আমি আর তুমি।আমি থাকতে কেউ তোমার কিছু করতে পারবে না”

জিরিশা মাহাজকে শক্ত করে ধরে বলে,,
“না না ও..ই ছে..লেটা আ.বা..র আ..সবে।আ..পনি আমাকে ছাড়বেন না,প্লিজ।”

মাহাজ জিরিশাকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বলে,,,
“দেখো কেউ নেই আশেপাশে।চোখ খুলো,এতো ভয় পেলে হবে সাহসি হতে হবে তো”

জিরিশা মাহাজের কথায় পিটপিট করে চোখ খুলে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে।তার মাথায় আসে সে কি করছে।সে মাহাজের কাছ থেকে সরে আসতে চায়।কিন্তু মাহাজ দেয় না।ফাহা পানি নিয়ে আসতেই মাহাজ জিরিশাকে পানি খাওয়ায় সাথে মুখেও পানি দেয়।জিরিশার ভীষণ লজ্জা লাগে।সে কি করে বসেছে।মাহাজকে জড়িয়ে ধরার কথা মনে পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

জিরিশাকে যখন মাহাজ পানি খাওয়াচ্ছিল তখন ওদের সামনে দিয়ে একটা কাপল যাচ্ছিল।মেয়েটা ওদের দেখে ছেলেটাকে বলছিলো,,
“দেখো ভাইয়াটা কতো কেয়ারিং আপুটার প্রতি আর তুমি আমাকে ভালোই বাসোনা মোটে”

জিরিশা কথাটা শুনে মাহাজের আড়ালে হেসেছিলো।আসলেই তো মাহাজ কেনো তার এতো কেয়ার করছে।মাহাজ জিরিশাকে কোমল গলায় বলে,,
“তুৃমি কি এখন ঠিক আছো”

জিরিশা মাথা নাড়ায়।মাহাজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।আবার জিরিশাকে বলে,,
“বাসায় হেটে যেতে পারবে”

জিরিশা মাথা নাড়িয়ে বলে,,”হু”

মাহাজ আর ফাহা মিলে জিরিশাকে ওর বাসায় দিয়ে আসে।মাহাজ ফাহাকে সাথে করে নিয়ে যায়।গলিতে ঢোকার সময় মাহাজ নিহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।ও ওকে দেখে জিরিশাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।হুট করে এমন হওয়ায় জিরিশা ভড়কে গেলো।সাথে লজ্জাও পেলো ভীষণ। জিরিশাকে বিল্ডিংয়ের সামনে দিয়ে চলে যায় ওরা।জিরিশা বাসায় যেতে বললেও ওরা যায় না।

১২.
আজকে জিরিশা-মাহাজ আর ফাহা যাবে জিরিশার বড়ো খালামনিদের বাসায় হুমাইরার বিয়ে উপলক্ষে।জিরিশা সব কিছু গুছিয়ে বেরিয়ে পরে।গলির মাথায় আসতেই দেখে মাহাজ আর ফাহা তার জন্য অপেক্ষা করছে।জিরিশা ওদের দেখে এগিয়ে যায় ওদের কাছে।ওরা ওখান থেকে একটা অটোতে করে নদীর ঘাটে চলে আসে।খেয়া পাড় হয় তিনজন মিলে।অতঃপর তিনজন একটা সিএনজি ভাড়া করে উঠে পরে।

জিরিশা বলেছিলো লেগুনায় যেতে কিন্তু মাহাজ বাইরের লোকের সাথে যাবেনা তার জন্য সিএনজি ভাড়া করেছে।ফাহা জোড় করে জিরিশাকে মাহাজের পাশে বসিয়েছে।জিরিশার অস্বস্তি হচ্ছে।সিএনজি চলতে শুরু করে।জিরিশা আর ফাহা নিজেদের মতো গল্প করতে থাকে।মাহাজ নিজের মতো ফোন টিপতে থাকে।রাস্তা ভলো না হওয়ায় ঝাঁকি হচ্ছিল।জিরিশা মাহাজের গায়ের উপর পরছিলো।যা তাকে বিব্রত করছিলো।

মাহাজ জিরিশা আর ফাহাকে ধরে রাখে।ওদের পৌঁছাতে দেড় ঘন্টা লাগে।ওরা সিএনজি থেকে নেমে ভ্যানে উঠে।মাহাজ সামনে বসে, জিরিশা আর ফাহা পেছনে।ওদের ভ্যানে ১০ মিনিট লাগে জিরিশার খালা বাড়ি পৌঁছাতে।ভ্যান থেকে নামতেই সবাই দৌড়ে আসে।সবার সাথে কুশল বিনিময় করে জিরিশা ফাহা মাহাজ বাড়ির ভেতর ঢোকে।

তিশা মাহাজকে একটা রুম দেখিয়ে দেয়।আর জিরিশা আর ফাহা হুমাইরার রুমে যায়।হুমাইরা তখন ফোনে কথা বলছে আর হসছে।জিরিশারা যে ওর রুমে এসেছে ও তা টেরই পায়নি।ও ওর মতো কথা বলেই যাচ্ছে।জিরিশা ওর পেছনে গিয়ে বলে,,,”ভাউউউউউউ”

হুমাইরা লাফিয়ে ওঠে।জিরিশা আর ফাহা খিলখিল করে হাসতে থাকে।হুমাইরা পরে কথা বলবে বলে ফোন কেটে জিরিশার দিকে তেড়ে যায়।জিরিশা হাসতে হাসতে বলে,,,
“কিরে হুমাইরা সিলেটি ফুয়ার সাথে কথা বলছিলি।ডিস্টার্ব করে ফেললাম নাকি”

#চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে