প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-০৫

0
3269

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫

মেয়েকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে দেখে হাসেন সাহিদ।সে জানে তার মেয়ে প্রচুর অভিমানি।সে মেয়ের পাশে বসে মেয়ের চোখ মুছে দিয়ে বলে,,”বাবাকে ভরসা করো তো”

জিরিশা মাথা নাড়ায়।সাহিদ বলে,,
“আমার তোর কাছে শোনা উচিত ছিলো কিন্তু মা আমি জানি তুই আমার কথা কখনো ফেলবি না।আর মাহাজও ভদ্র নম্র সুদর্শন একটা ছেলে ভালো চাকরিও পেয়েছে তাহলে আমি না করি কিভাবে।আবার তোকে ফাহার আম্মুও অনেক ভালোবাসে,সবাইকে চিনিস জানিস ওই পরিবারে যেয়ে তোর বেশি সমস্যা হবে না মা।বাবা তোর ভালোর জন্য করছে মা”

সাহিদ ইসলাম মেয়ের মাথায় কিছু সময় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যান।জিরিশা বাবার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।সে বুঝেছে হয়তো কোনো কারণ আছেই মাহাজের সাথে তার বিয়ে দেওয়ার।তার বাবা কখনো কোনো কারণ ছাড়া কিছু করে না।হাতের রিংটার দিকে তাকালো।খুব সুন্দর একটা রিং।জিরিশা বুঝতে পারলো তাদের বিয়ের কথা অনেক আগে থেকেই চলছিলো নাহলে এতো তাড়াতাড়ি এতো সুন্দর রিং পাওয়া যাবে না। বিয়ের কথা সে কিছুতেই জানতে পারলো না।

সবাই মিলে গল্প করতে থাকে বড়রা।বিকালের দিকে ছোটরা মিলে সবাই ছাদে বসে আড্ডা দিতে যায়।জিরিশাী কাজিন তিশা তাকে জোড় করে মাহাজের পাশে বসিয়ে দেয়।সবাই হাসি ঠাট্টা করতে থাকে।লিসা,লিসার স্বামী শিহাব,তিশা,হুমাইরা মিলে জিরিশাকে লজ্জা দিতে থাকে।জিরিশা বেচারি অস্বস্তি আর লজ্জায় ওখান থেকে উঠে চলে যায়।যা দেখে মাহাজ বাদে সবাই হেসে ফেলে।মাহাজ তখনো মুখটা গম্ভীর করে ফোন ঘাটছিলো

ফাহা ভাইয়ের এমন ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকা মোটেও ভালো লাগে না।সে জানে যে মাহাজ গম্ভীর বদমেজাজি টাইপের কিন্তু হবু বউয়ের বাড়িতে এসে এমন করবে ভাবেনি ফাহা।তার উপর জিরিশার খালাতো বোনের একজনের স্বামীও সাথে আছে।সে ভাইয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,,
“প্লিজ ভাইয়া ফোনটা রাখো।এখানে জিরিশার খালাতো বড় বোন আছে আর লিসা আপুর হাসবেন্ড ও আছে। একটু সম্মান দাও।হেসে কথা বলো”

মাহাজ তার মুঠোফোনটা বন্ধ করে পকেটে গুঁজে রাখে।তারপর সবার সাথে সৌজন্যে মূলক কথা বলতে থাকে।ফাহা হাসে তার ভাইয়া যে তার কথা শুনেছে এই ডের।বাসায় হলে তো ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিতো।সেও হাসি ঠাট্টায় মজে যায়।

৭.
জিরিশা-মাহাজের এনগেজমেন্টের সাতদিন পার হলো।জিরিশার মন খারাপ ছিলো ওইদিনের পর থেকে।সকালে জিরিশাকে ফোন দিয়ে শিরিন সুলতানা যেতে বলেছে।জিরিশার যেতে লজ্জা লাগছে কেনো জানি।সে শিরিনকে বলেছে না গেলে হয় না।শিটিন ধমক দিয়ে বলেছেন যেতে।জিরিশাও রাজি হয়ে যায়।জিরিশা একটা লাল রঙের থ্রিপিছের সাথে লাল রঙের হিজাব বেঁধে নেয়।

জিরিশা তাশুরার কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরে মাহাজদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।রিকশা থেকে নেমে টাকা দেয় রিকশাওয়ালাকে।জিরিশা এতোটা অস্বস্তি হচ্ছে যা সে কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না!সে দাঁড়িয়ে আছে।

“ভাউউউউউউ”

জিরিশা লাফিয়ে ওঠে ভয়ে। পেছন থেকে কেউ হুট করে কথাটা বলে।পেছনে ফিরে দেখে সাজিদ হাসছে।জিরিশা সাজিদের কান টেনে দিয়ে বলে,,,
“ফাজিল এভাবে কেউ ভয় দেখায়।”

সাজিদ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে,,,
“ভাবি একটু তো দেখাতেই হয়।আগে আপু ছিলে এখন দা ভাইয়ের বউ হয়ে যাচ্ছো ভাবির সাথে তো একটু ফাজলামি করা যেতেই পারে।”

জিরিশা রাগি চোখে তাকিয়ে সাজিদকে ধরতে যেয়ে বলে,,
“তবেরে ফাজিল।”

সাজিদ তো সেখান থেকে ততক্ষণে কেটে পরেছে।জিরিশা হাসে ছেলেটা এতো চঞ্চল।তার ভাইয়ের সাথেই পরে।ফাহার ছোট চাচ্চুর ছেলে।আরো একটা ছেলে আছে নাম শাফিন।ছেলেটা ৯ম শ্রেনীতে পরে।জিরিশার কাছে শাফিনকে ভালো লাগে প্রচুর।জিরিশা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে।তার মাঝেই শাফিন,খাদিজা,আশরা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।জিরিশাকে দেখে শাফিন হাসি দিয়ে বলে,,
“আসসালামু আলাইকুম বড়ভাবি না না ভাবিপু”

জিরিশা বিরক্ত হয় ভাবি ডাকা নিয়ে।যেখানে আগে সবাই তাকে জিরিশা আপু বলে ডাকতো।সে বিরক্ততে নাক মুখ কুঁচকায়।যা দেখে খাদিজা আর আশরা হাডে মিটমিট করে।শাফিন হুট করে জিরিশাকে ধাক্কা মারে।জিরিশা পরে যাওয়ার আগেই তাকে কেউ কোমড় জড়িয়ে ধরে বাঁচিয়ে নেয়।সে ভয়তে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়।মাহাজ জিরিশাকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিয়ে বলে,,
“আর ইউ ওকে মিস.জিরিশা”

জিরিশা চোখ খোলে।সামনে মাহাজকে দেখে ভড়কে যায়।সাথে লজ্জাও পায় কারণ তার যতবারই মাহাজের সাথে দেখা হয়েছে ততবারই সে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরেছে।সে মাথা নিচু করে মাথা নাড়ায় অর্থাৎ সে ঠিক আছে।মাহাজ তাকে পাশ কাটিয়ে উপরে চলে যায়।সবাই দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে।জিরিশা বুঝে যায় পেছনে মাহাজকে দেখেই শাফিন তাকে ধাক্কা মেরেছে।সে শাফিনের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে আসে।

ফাহাদের ফ্লাটের সামনে এসে দেখে দরজা খোলা। তার মনে পরে মাত্রই মাহাজ এসেছে।সেও ধীর পায়ে ভেতরে ঢোকে।ভেতরে ঢুকতেই মাহাজের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় জিরিশার।জিরিশা দ্রুত চোখ নামিয়ে শিরিন সুলতানার কাছে যায়।শিরিন তখন রান্না করছিলো।সে শিরিনের কাছে গিয়ে বলে,,
“আন্টি আসসালামু আলাইকুম।”

শিরিনও জিরিশাকে দেখে মিষ্টি হেসে সালামের উত্তর দেয়।তারপর বলে,,
“এতো দেরি করলি কেনো জিরিশা ফাহা এতো সময় তোর জন্য অপেক্ষা করে মাত্র গোসলে ঢুকলো।”

জিরিশাও হেসে বলে,,
“আন্টি আমারও গোসল করে আসতে হয়েছে তাই একটু লেট হয়েছে।আর তুমি মশলা বাটছো কেনো তোমার হাতে তো সমস্যা দাও আমি বেটে দিচ্ছি।”

শিরিন মানা করলেও জিরিশা শোনে না।জিরিশা জোড় করে বাটতে থাকে।শিরিন হাসে।মেয়েটা আসলেই খুব ভদ্র একটা মেয়ে।দেখতেও সুন্দর শুধু বেশি লম্বা না তাতে কারোরই সমস্যা নেই ওদের পরিবারের।শিরিনের ভাবনার মাঝেই জিরিশার মশলা বাটা হয়ে যায়।হাত ধুয়ে শিরিনকে বলে,
“আন্টি আর কিছু করা লাগবে লাগলে বলো করে দিচ্ছি”

শিরিন মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলে,
“সর তো বিয়ের আগে আর কাজ করতে হবে না বিয়ের পর এটা তোর সংসারই হবে তখন সব কাজ তোরই করতে হবে আমি তখন শুয়ে বসে কাটাবো”

জিরিশা লজ্জা পেয়ে চলে যায় ফাহার রুমে।ফাহা মাত্র গোসল করে বের হয়েছে।জিরিশাকে দেখে ফাহা বলে,
“ওই কুত্তি এতো লেট কেনো করলি”

জিরিশা বিরক্তি নিয়ে মবলে,
“দূর বা** আগে সবাই কি সুন্দর আপু বলে ডাকতো আর এখন ভাবি ভাবি বলে কান ফাটিয়ে দিচ্ছে।”

ফাহা কথাটা শুনে ফিক করে হেসে দেয়।জিরিশা চোখ পাকিয়ে তাকায়।ফাহা হাসতে হাসতে বলে,,
“ভালো লাগছে না শাফিন সাজিদ খাদিজা আশরার মুখে ভাবি শুনতে আমার একমাত্র ভাবি”

জিরিশা ফাহার দিকে বালিশ ছুড়ে মেরে বলে,,
“তুইও ওদের মতো শুরু করলি”

ফাহা জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে।ফাহার বাবা মানে জিরিশার হবু শ্বশুর মশাই মিহান খান একটা কোম্পানির ম্যানেজার।অফিস দূরে হওয়ায় তাকে সেখাখেই থাকতে হয়।জিরিশা-ফাহার কথার মাঝে শিরিন সুলতানা ডাক দেন।ওরা খেতে বসে সবাই একসাথে।জিরিশার অস্বস্তি হয় মাহাজের সাথে খেতে বসে।আগে জিরিশা কখনো মাহাজের সামনে বসে খাইনি তাই অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরেছে।মাহাজ মুখটা গম্ভীর করেই খেয়ে চলেছে।জিরিশা সবার আড়ালে ভেংচি কাটে মাহাজকে।মাহাজ তা দেখে নেয়।জিরিশা তো বোঝে না যে মাহাজ তাকে ভেংচি কাটতে দেখে ফেলেছে।

চলবে……!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে