প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-০৪

0
3420

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

৬.
আজকে শুক্রবার।তাই জিরিশা ঘুমাচ্ছে বেলা দশটা পর্যন্ত।জিরিশা সপ্ন দেখছে আর ঘুমের ঘোরেই হাসছে মুচকি মুচকি হঠাৎ করে তার মা এসে তাকে ডাকতে ডাকতে বলল,,,
“জিরিশা তাড়াতাড়ি উঠ।বেলা দশ’টা বেজে গিয়েছে”

জিরিশা ধড়ফরিয়ে উঠে বসলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একবার পরক্ষ করে নিলো কয়টা বাজে।ঘড়িতে সকাল আট’টা দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকালো জিরিশা।জিরিশা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“আম্মু মাত্র আটটা বাজে আর তুমি আমাকে শুধু শুধুই উঠালে”

তাশুরা ইসলাম রুম থেকে বের হতে হতে বলেন,,,
“তোকে কি আর সত্য কথা বললে উঠানো যেতো নাকি!আজকে বাসায় মেহমান আসবে তাই দ্রুত নিজের রুম গুছিয়েনে”

তাশুরা কথাটা বলেই চলে যান।জিরিশা নাক মুখ কুচকে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের রুম গোছাতে থাকে।গোছানো শেষ করতে করতে তার ১০টা বেজে যায়।তার হঠাৎ মাথায় প্রশ্ন আসে আসলে আসবে কারা বাসায়।সে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে তাশুরার কাছে যায়।দেখে তাশুরা রান্না করছে।জিরিশা মায়ের কাছে গিয়ে বলে,,
“আম্মু কারা আসবে বাসায় যে তুমি এতো তোড়জোড় করে রান্নাবান্না করছো”

তাশুরা ইসলাম মেয়েকে ধমক দিয়ে বলেন,,
“যেই আসবে না কেনো আসলেই তো দেখতে পাবি এখন যা এখান থেকে আমায় কাজ করতে দে”

জিরিশা মায়ের ধমক খেয়ে চলে আসে রুমে।বেলকনিতে যেতেই সে মাহাজের শার্টটা দেখতে পায়।সে তো এই কয়দিনে বেলকনিতে আসার সময়ই পায়নি।তাই শার্টটার কথা ভুলে গিয়েছিলো।সে তাড়াতাড়ি করে শার্টটা উঠিয়ে রাখে।তার আম্মু যে দেখেনি তাতেই অনেক।সে খেতে আবার যায় ড্রইংরুমে।দেখে তার বাবা পেপার পরছে।

সে তার বাবার পাশে গিয়ে বসে বলে,,,
“বাবা কোথায় গিয়েছিলে তুমি?জানো তোমার জল্লাদ মার্কা বউ কি করেছে আমার সাথে”

সাহিদ ইসলাম মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,,,
“আমি তো মার্কেটে গিয়েছিলাম বাজার করতে।তা মামনি কি করেছে আমার জল্লাদ বউ”

জিরিশা অভিযোগের সুরে তার বাবাকে বলে,,,
“আমাকে সকাল আটটার সময় দশটা বলে উঠিয়েছে বাবা কিছু বলো”

সাহিদ ইসলাম হাসেন।সে মেয়েকে কোনো মতে বুঝ দিয়ে খাইয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয়।সাহিদ ইসলাম একজন প্রাইমারি স্কুলের টিচার।কিছুসময় পর এসে তাশুরা ইসলাম জিরিশাকে গোসল করতে পাঠিয়ে দেন।জিরিশা প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।কে এমন আসবে যে এতো কিছু করছে সবাই।গোসল করে এসে বসে থাকে সে।কিছু সময়ের পর দেখে বাড়িতে তার মামা,ছোট চাচা,বড় খালামনি আর ছোট খালামনিরা হাজির।সে তো ভীষণ খুশি হয় তার ভাই বোনদের দেখে।১টা বাজার কিছু সময় আগে জিরিশার খালাতো বোন হুমাইরা এসে ওকে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে যায়।জিরিশার বিরক্তির পরিমান আকাশ ছুয়ে যায়।এসেছে তো শুধু মামা চাচা খালামনিরা তাহলে শাড়ি কেনো পড়ানো হচ্ছে তাকে।

কিছুসময় পর তাকে তার আম্মু নিয়ে ড্রইংরুমে আসে।সে চোখ তুলে তাকাতেই চমকে যায়।বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকায়।তাকে দেখে শিরিন সুলতানা হেসে পাশে বসায়।সে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।সে ভাবতেও পারেনি আজকে তার সাথে এমন কিছু হবে।তার কাঁদতে ইচ্ছা করছে তার বাবাও তাকে কিছু বলল না।সে মাহাজের বাবা মিহাজ খানকে বলে,,,
“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল ভালো আছেন”

মিহাজ খান মুচকি হেসে বলেন,,,
“ভালো আছি মামনি তুমি কেমন আছো”

জিরিশা জোরপূর্বক হেসে বলে,,,
“আলহামদুলিল্লাহ আঙ্কেল ভালো আছি”

মিহাজ জিরিশাকে বলে,,,
“মামনি যাও তো মাহাজকে নিয়ে তোমার রুমটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসো তো”

জিরিশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।জিরিশা উঠে আসে ওখান থেকে নিজের ঘরে।মাহাজও জিরিশার পেছনে পেছনে ওর রুমে আসে।জিরিশা অস্বস্থি নিয়ে মাহাজকে কাপা কাপা কন্ঠে বলে,,,
“আ..পনি কেনো বি..য়েতে রা..জি হ.য়ে..ছেন মা..হা…জ ভা..ইয়া”

মাহাজ ফোন দেখছিলো।ও ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে জিরিশার দিকে তাকায়।জিরিশা এখনো মাহাজের দিকে তাকায়নি।মাহাজ বাঁকা হেসে জিরিশার দিকে আগাতে থাকে।জিরিশা মাহাজকে এগোতে দেখে ভয়ে ভয়ে পেছাতে থাকে।পিছনে যেতে যেতে হুট করে শাড়িতে পা আঁটকে পরে যেতে নেয়।মাহাজ দ্রুত তাকে আগলে নেয় তার বলিষ্ঠহাত দিয়ে। জিরিশা হতভম্ব হয়ে মাহাজের বুকের সাথে মিশে থাকে।জিরিশার শরীরে বিদ্যুত খেলে গেলো।কিছু সময় পর তার হুশ আসলেই সে মাহাজকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সরিয়ে ফেলে।

পেছনে ঘুরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে বুকে হাত দিয়ে।মাহাজ তা দেখে রহস্যময় হাসি দেয়।জিরিশার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল যখন মাহাজের বুকের সাথে মিশে ছিলো সে।এই অনুভূতি তো আগে কখনো হয়নি তার।তাহলে সে কি মাহাজকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। তা তো অসম্ভব। জিরিশা নিজেকে নিজেই গালি দেয় এইসব উদ্ভুত চিন্তা মাথায় আনার জন্য।মাহাজ হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
“মিস.জিরিশা ইসলাম আপনি মিসেস মাহাজ খান হতে রাজি তো”

জিরিশা কিছু বলতে যাবে তার আগে ফাহা এসে হাজির।ফাহা এসেই বলে,,,
“বাবা তোমাকে ডাকছে ভাইয়া”

মাহাজ একবার জিরিশার দিকে তাকিয়ে চলে যায়।জিরিশা ফাহার কাছে গিয়ে ওকে পিঠে চড় মারতে মারতে বলে,,,
“সয়তান কুত্তি তুইও আমার সাথে বেইমানি করলি”

ফাহা পিঠে হাত দিয়ে বলে,,,
“আরে ভাই আমি জানলে তো তোকে বলবো।আমি তো জানতামই না!আসার একটু আগে আম্মু আমাকে বলে যে যা একটা ভালো জামা পরে আয় আমি কোথায় যাবো জিজ্ঞেস করতেই বলে,গেলেই দেখতে পাবি।তারপর দেখি তোদের বাসায় আসছে আজকেই তোদের এনগেজমেন্ট হবে”

জিরিশা ধপ করে বিছানায় বসে পরে।সে আর কোনো ভাবেই বিয়েটা আটকাতে পারবে না নাকি।ওর খালাতো বোন লিসা আসে তার ভেতর।লিসা ওর কাছে আসতেই জিরিশা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
“আপু আমি বিয়েটা করতে পারবো না প্লিজ বিয়েটা আটকানোর চেষ্টা করো”

লিসা জিরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,
“কেনো তুই কি কাউকে ভালোবাসিস জিরিশা?আমার জানা মতে তুই তো ছেলেদের থেকে দূরে থাকিস”

জিরিশা মাথা তুলে লিসার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“আপু তুমি তো জানো উনি কেমন তার পরও কিভাবে বলছো”

লিসা হেসে বলে,,
“শোন বিয়ের আগে তো সবাই একটু আধটু প্রেম করে তার উপর মাহাজ সুদর্শন দেখতে এবার তোদের কলেজেরই নতুন প্রফেসর হয়ে জয়ন করবে তাহলে এতে সমস্যা কোথায়।আচরন ও ভালো শুধু একটু প্রেম করত এখন তো মনে হয় করে না তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়।তোর শিহাব ভাইয়াও তো বিয়ের আগে কতো কি করলো”

জিরিশা বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো লিসার দিকে।সে কখনো ভাবেনি লিসা এমন বলবে।সে ভেবেছিলো লিসা হয়তো বুঝবে তাকে।তার ভেতরেই আবার তার ডাক পরলো।ফাহা বুঝতে পারছে জিরিশার মনের ভেতরে ঝড় বইছে কিন্তু সেও কিছু করতে পারবে না।জিরিশাকে নিয়ে মাহাজের পাশে বসানো হলো।জিরিশা ঘোরের ভেতরে আছে এখনো।সে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।শিরিন সুলতানা মাহাজের হাতে একটা একটা রিং দিয়ে বলেন,,
“এটা পরিয়ে দাও মাহাজ জিরিশাকে”

মাহাজও রিংটা নিয়ে জিরিশার হাত ধরে জিরিশা তখনও মাথা নিচু করে বসে আছে।চোখে পানি টলমল করছে।মাহাজ জিরিশাকে রিংটা পরিয়ে দেয়।ফাহা এখনও কিছু ছবি তুলে নিলো।তাশুরা মেয়ের হাতে রিং দিয়ে বলে,,
“নে মা মাহাজকে পরিয়ে দে”

জিরিশা রিংটা নিয়ে একবার বাবার দিকে তাকায়।সাহিদ ইসলাম মাথা নেড়ে মেয়েকে বুঝায় পরিয়ে দিতে।জিরিশা কাঁপা কাঁপা হাতে পরিয়ে দেয়।সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে।ফাহাও ভীষণ খুশি হয় যে জিরিশা সারাজীবন তাদের সাথে থাকবে এই ভেবে।ওদের বিয়ে হবে জিরিশার এইচএসসি পরীক্ষার পর।জিরিশাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।সাহিদ ইসলামও জিরিশার কাছে আসেন।জিরিশা তখন কাঁদছিলো বসে বসে।সে জিরিশার মাথায় হাত দেন গিয়ে।জিরিশা বাবাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

#চলবে..!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে